আমার এই সিরিজটা কেন শুরু করলাম। আসলে আমরা প্রতিদিন কোথাও না কোথাও ঘোরাঘুরি করি কিন্তু বিশেষ আয়োজনে বিশেষ দিনে যে ঘোরাঘুরি তা থাক না স্মৃতি ঘিরে। তাই ‘স্মৃতি তুমি প্রতারক’ এমন উচ্চারণের সাথি না হয়ে বরং বলি স্মৃতি তুমি রোমন্থযোগ্যও।
৩১ জুলাই ২০০৯
গন্তব্য এক হলেও আমাদের যাত্রার স্থল বেশ বৈচিত্রময়। কেউ সেই সাত সকালে উঠেছে পাবনা থেকে বদRule হাসান জূলফিকার। উত্তরথান থেকে গত দিন দুই অথবা তারও বেশী সময় নিয়ে সবাইকে সাজিয়েছে এবং নিজে সেজেছে সে লাবণ্যদি। সবচে কম সময়ে যে আমাদের সাথি হয়েছে সে আমাদের হায়দার পরিবারে ভাগ্নি রাকা। আমি তথৈবচঃ রওনা হলাম আর পৌচ্ছে গেলাম। মন খারাপের জোয়ারে ভাসতে থাকবে আমাদের আর সাথিরা- আমাদের ডাক্তারের শ্যালকের নাম বাবু ও আমাদের এক প্রকার গাইড। প্রান্তিক ও পূর্ণা আমাদের অনুজপ্রতিম ভাই-বোন আর মৌসুমী ভাগ্নী। আমাদের সঙ্গে মা-খালাম্মা-দাদী ভুমিকায় ছিল একজন প্রণম্য অগ্রজা। এই ছিল আমাদের বহর। এই যা কি যেন বলা হলো না.....থাক পরে বলব।
দিনটা গড়িয়ে বেলা বাড়িয়ে সবার রওনা হওয়ার এক নায়কের নাম জুলফিকার। সেই যত রাজ্যের আলসামিতে আমাদের ছুটির দিনটা মাটি করল। কিন্তু পরে আবার বৃষ্টির পানিতে মাটি গলিয়ে নতুন ভাষ্কর্য- তাও সেই তৈরী করেছিল।
সম্মিলিত থুক্কু আংশিক মিলিত রওনা হওয়ার যাত্রা শুরু আজমপুর থেকে কে কে উঠল ওখান থেকে ডাক্তার, লাবণ্যদি, প্রান্তিক, পূর্ণা আর খালাম্মা । আমি, মৌসুমী আর রাকা উঠলাম মালীবাগ থেকে পাবলিক বাসে চেপে ছুটির দিনের মধ্য দুপুরে রিজার্ভ বাসের মজা নিতে নিতে পৌচ্ছে গেলাম চিটাগাং রোড। সেখানেই যোগ দিল আমাদের গাইড। ডাক্তারের শালা। এই যা মনে করলাম গালাগালি করব না হয়ে গেল।
এবার শুরু বাক ও চিন্তার যুদ্ধ কোথায় যাব আগে- তাজমহল নাম্মী টাইলস্ মিস্ত্রির কাজ নাকি প্রাচীন রাজধানীর কারু ও চারু পল্লী সোনারগাঁও? শেষ অবধি প্রথম গন্তব্য নির্ণিত হলো সোনারগাঁও। আমাদের তিন সহযাত্রী ও কন্ডাক্টরের মাঝে ডাক্তারের আনা পাবনার মিষ্টি বিতরণ হল (যদিও উপদেশ বাণি দেই অপরিচিতের দেয়া জিনিস বাসে খাবেন না তবুও নিজে মিষ্টি বাক্সটা তুলে ধরলাম)। তাদের সানন্দ্য অংশ গ্রহণ সত্যিই ধন্যবাদযোগ্য ছিল।
আমাদের গাড়ি গিয়ে থামল মদনপুর সেখান থেকে স্কুটারে/টেম্পু করে মোড়গাপাড়া সেখান থেকে রিক্সা করে সোনারগাঁও যাদুঘর। অনেক দিন আগে একদল জাপানী শিক্ষার্থীর সাথে দেখা হয়েছিল- আমার আর ডাক্তারের ফেরী পথে যমুনা পাড়ি দেয়ার সময়। বাংলাদেশ সম্বন্ধে তাদের বক্তব্যে একটা উল্লেখ্য যোগ্য বাক্য ছিল-এরা খুব আতিথিয়তা পরায়ন আর সাহায্যকারী জাতি। আজ আমাদের এক মহিলা সহযাত্রী বাংলাদেশের সেই রূপ ধরে আমাদের সাহায্যকারী হয়ে পথ দেখাল। স্কুটার ভাড়া থেকে রিক্সার ভাড়া করে দেয়ার প্রাণন্ত চেষ্টায় আমাদের যাতে কেউ না ঠকাতে পারে তারই সাহায্য করা। তার বিদায়ের সুরে ছিল আহ্বান আতিথিয়তা গ্রহণের।
আমরা কারুপল্লী’র প্রথম গেইট এ- খোলা ভ্রমণের স্বাদ নিতেই প্রাইভেট কোন বাহন বাদ সেধেছিল লাবণ্যদি। তাই সুখানুভূতি প্রাপ্তির ধন্যবাদও সেই পায় আমাদের বৈচিত্রময় যাত্রার। আমরা যখন টিকিট কেটে যাদুঘরের ফটক পার হচ্ছি তখন বেলা চারটা। চারিদিকে রোদ আর রোদ। সংগ্রহ শালা ঘোরা শেষ করতে বেশ বেলা গড়িয়ে গেল। যদিও দ্রুত দেখার প্রতিযোগিতার বাঁশি বাজছিল বারংবার। তাই পার পাওয়া, নইলে এযাত্রায়- বুড়ি ছোয়ার আগেই পচ্চা হতে হত।
তারপর লেকের ধারে বসে আমাদের শুরু হল ডান হাতের নাচ। ওই যে বলেছিলাম বেশ কয়েক দিন ধরে সাজিয়েছে তার একটা অংশ এবার পরিবেশন হল। ওয়ানটাইম প্লেটা ভরে উঠল সবজি খিচুড়ি, কাকরোল ভাজি, পটল ভাজি আর শশার সালাদে। আরও একটি উপদান ছিল ডিম ভাজি। আমার এবং ডাক্তারের খাদ্য তালিকায় বেশ মিল জন্য ভব্য সমাজের চোখে গরিবি খানার সমাহার ঘটিয়ে ছিল লাবণ্যদি। পরিতৃপ্তির উদার্যতায় রান্না করা খাদ্য ছিল বেশ সুখপাচ্য এবং মুখরোচকও।
খাওয়া সেরে আমি আর খালাম্মা উঠে এলাম কারুপল্লীর বিক্রয় শালায়। একে একে অন্যরা ভিড় করল আমাদের বহরে। কেনা কাটার না বহতায় শেষ হল এই পর্ব। তারপর মেঘকে সাথি করে দৌড়িয়ে পার হলাম এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্ত। ঘুরতে গেলাম পানাম। পুরাতন ইমারতের রাজ্য প্রদক্ষিণ যখন শুরু- তখন বৃষ্টি তার ডানা মেলে আমাদের মাঝে বন্ধন তৈরীর জাল বুনছে। তাই বৃষ্টিকে সাথে নিয়েই পলেস্তরাহীন প্রাচীন ইমারত দেখা শেষ হল। বাসের অপেক্ষার মাঝে আমাদের চা পর্ব শেষ হল, হল পেয়ার পর্বও। অপূর্ণ রয়ে গেল বনবাদাড়ে গড়ে উঠা তাজমহল দেখা। তারচেয়ে অপূর্ণ রয়ে গেল পূর্ণার নৌকা চড়া। এভাবেই পূর্ণ আর অপূর্ণের বৈচিত্রকে সাথে নিয়ে আমরা ফিরছি বন্ধনের স্মৃতি নিয়ে বাঁধন নাম্মী গাড়ীতে করে। বৈচিত্রময় যাত্রা শুরুর বৈচিত্রময়তাকে সাথে নিয়ে আমরা চললাম আমাদের গন্তব্যে। আবার দিন শুরু হবে কাজ আর কাজ; স্মৃতিময় এই শ্রদ্ধা সেহ্ণ আর বন্ধুত্বের বন্ধন রেশ থেকে যাবে অতীতের মনি কোঠায়।
মন্তব্য
আগামী পর্বে ছবি চাই।
হ... ছবি ছাড়া জমে না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
ছবি দিলে আমার লেখা হারিয়ে যায় তাই ভয় পাই। আমারও ইচ্ছে জাগে শাড়ি পরিহিতা দহিতার কপালে একটা সূর্য্য লাল টিপ দিতে। চেষ্টা করব......
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
ছবি হলে ভালো হতো।
...............................
নিসর্গ
লেখা ভালো লাগছে। পানামের ছবি দ্যান। ছবি দেখলে বোঝা যায় কিভাবে আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে পানামের মানচিত্র।
...........................
Every Picture Tells a Story
ধন্যবাদ মুস্তাফিজ ভাই। আপনার মত ছবির হাত হয়নি। তার উপরে যে সব ছবি তোলা হয়েছে তা আবার ম্যানুয়াল ক্যামেরায় আর ওয়াশ হয়নি এখনও। ওয়াশ হলে লাবণ্যদির কাছ থেকে নিয়ে জুড়ে দেব।
জুলফিকার ভায়ের বক্তব্যও ছিল তেমনি বদলে যাচ্ছে ইমারত প্রকৃতি পানামের।
মরণ রে তুহু মম শ্যাম সমান.....
লেখা ভাল্লাগল। ছবি থাকলে আরো ভাল্লাগত।
অভি, “জগতে আনন্দ যজ্ঞে আমার নিমন্ত্রণ” শিল্পী সুবিনয় রায়ের গাওয়া এ রবীন্দ্র সঙ্গীতটি খুব কানে বাজছে। এ জগতে সর্বত্র আনন্দ্র বিরাজমান, শুধু তা এমনি করে কুড়িয়ে নিতে হয়। ভ্রমনে আনন্দ ছিল প্রচুর, অপূর্ণতা ছিল নৌকায় চড়তে না পারায় কিন্তু তার চেয়েও আনন্দিত হয়েছে সবাই তোমার এ লেখায়।
ছবি হলে তোমাকে পাঠাবো।
অভি-নন্দন রইল।
লাবণ্যদি
নতুন মন্তব্য করুন