লেখকের লাশ ফেরিতে করে আমরা রওয়ানা দিই

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি
লিখেছেন আনন্দী কল্যাণ (তারিখ: সোম, ২২/০৩/২০১০ - ৭:৫৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

লেখকের লাশ ফেরিতে করে আমরা রওয়ানা দিই।
লাশেরা হাসে, কাশে ও ভালবাসে।
আমাদের পকেট উপচানো শ্রদ্ধা
ঝালমুড়ির প্যাকেটে প্যাকেটে বিলি করি অপর যাত্রীদের।
আমাদের কেবিনে কেবিনে নির্বাণ, নির্বাণ।
ধোঁয়া ওঠা ডিমসেদ্ধ ভেঙে এক টুকরো চোখ।
বিজবিজে ফেনায় ফেনায় বাদামখোসা আর ক্যারিকেচার আত্মা।

লাশেরা বলে ফরমালিনের গন্ধে ঘুম আসে না।
লাশেরা লেবুর শরবতের হাউস জানায়।
আমরা তাদের দেখাই কাম ও কলার কাশফুল।
অক্ষর মুছে মুছে মোহর শেখাই।

ছেড়ে যায় পৃথিবীর শেষ ফেরি, শেষ বেচাকেনা শেষে।


মন্তব্য

সাবিহ ওমর এর ছবি

সুন্দর! অনেকটা রেডিওহেডের লিরিকের মত...

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ধন্যবাদ পড়বার জন্য। ভাইরে, রেডিওহেড কি জিনিস? দাঁড়ান গুগল করি...

সাবিহ ওমর এর ছবি

হায় হায় আমাদের সময়ের সেরা ব্যান্ডের নাম শুনেন নাই??? আমরা যখন বুড়া হব তখন এরাই তো হবে আমাদের বীটলস!

সেম্পল লিরিকঃ http://www.azlyrics.com/lyrics/radiohead/fakeplastictrees.html (ফেক প্লাস্টিক ট্রিজ)

তবে এরা একটু বিকল্প ধারার রক কিনা, তাই স্টার্টার হিসেবে এগুলা শুনে দেখতে পারেনঃ Lucky, Fake Plastic Trees, Creep, No surprises, A wolf at the door, High and Dry, Karma Police, All I Need, Nude, Reckoner...আসলে এই লিস্ট বহুত লম্বা হবে, তাই ক্ষান্ত দিলাম...

তবে এখন ভুলেও Paranoid Android, Climbing up the walls, 2+2=5, Kid A বা Airbag শুনতে যাবেন না। খবরদার! মাথা ইয়ে হয়ে যাবে কিন্তু!

জি.এম.তানিম এর ছবি

তীব্র প্রতিবাদ জানাই। আমাদের সময়ের সেরা ব্যান্ড 'পোয়েটস অব দ্য ফল'...

দেঁতো হাসি
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

শরতশিশির এর ছবি

'Radiohead'-এর বদলে বরং 'Gorillaz' শুনো। রেডিওহেড ইজ লাইক 'সিল্ভিয়া প্লাথ' - শুধুই হতাশার নৈরাজ্য! বেশি পেসিমিস্টিক।

'গোরিলাজ'-এর অনেক কাব্যিক লিরিক্স, আর অনেক ভাবায়ও। আর, ওরাও আমাদের মতো নিক নেইম ব্যবহার করে। আর, ভিডিওগুলোও অনেকটা স্টোরি বুকের মতো, বেশ ক্রিয়েটিভ। ইউটিউব-এ সার্চ করলে পাবা অনেক ভাল ভাল গান। হাসি

এখানে একটা দিলাম - "এল মানানা"। জানিয়ো কেমন লাগলো, কেমন? ভাল থেকো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

সাবিহ ওমর এর ছবি

ওহ এল মানানা আমারো খুব প্রিয়।

কিন্তু গরিলাজ অনেক বেশি টেকনো। রেডিওহেডও আজব আজব সাউন্ড তৈরি করে, কিন্তু প্রচলিত/অপ্রচলিত সরঞ্জাম দিয়েই। দু'টো অনেক আলাদা। তাই গরিলাজ হচ্ছে গরিলাজ, রেডিওহেড হচ্ছে রেডিওহেড। রেডিওহেডের সবচেয়ে কাছাকাছি বোধহয় কোল্ডপ্লে, তা-ও খুব একটা না। রেডিওহেড নিজেই প্রায় একটা জানরার মতো। এরকম তো কেউ আগে করে নাই। একটু 'ডার্ক' সত্যি, এজন্য অনেকে পছন্দ করে না (নাকি ভয় পায়? হাহাহা)...

শরতশিশির এর ছবি

ওয়েল, 'রেডিওহেড'-এর কাছাকাছি অনেকটা 'গ্রীন ডেইজ' (ইদানিংকার)। আরও পেসিমিস্টিক উদাহরণ হতে পারে, সারাহ ম্যাকলক্লিন, ফিওনা আপেল, টরি এমোস, নাটালি ইমব্রুগলিয়া এবং জুয়েল-ও। আরও আছে। কোল্ডপ্লে, ইউটু - এগুলো অল্টারনেটিভ রক হলেও, স্টাইল অনেক মেইনস্ট্রিমেরই। ওয়েসিস আর ব্লার যখন ব্রিটিশ অল্টারনেটিভ সিনে প্রায় ব্রাজিল-আর্জেন্টিনা অবস্থা তৈরি করে ফেলেছিল, তখন রেডিওহেড মাত্র পথচলা শুরু করে। সেই, ব্লারের লিড ভোকাল 'গরিলাজ'-এ, কাজেই স্ট্যান্ডার্ড অবশ্যই ভাল হবে।

অল্টারনেটিভ টেকনো যদি বলি তো 'ড্যাফট পাঙ্ক' শোনা উচিত। ফ্রেঞ্চরা বেস্ট যেকোন টেকনো মিউজিকে।

রেডিওহেড-এর অনেক গান শুনতাম আগে, যখন প্রথম বেরিয়েছিল। কিন্তু অহেতুক পেসিমিজম বিরক্তিকর, তাই আপ্না-আপ্নি অন্যদিকে কান চলে গেছে। আর, ওদের গানের ধাচও অনেক বদলে গেছে আগের চেয়ে, ফর বেটার অর ফর ওয়ার্স। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

সাবিহ ওমর এর ছবি

কোল্ডপ্লে আর মিউজ কিন্তু খোলাখুলি ভাবেই বলে যে তারা রেডিওহেড-প্রভাবিত। এবং এদের একটা কমন ফ্যানবেজও আছে। ইদানিংকার গ্রিন ডেজ শুনি নাই। আগে যা শুনেছি তাতে অনেকটা পপ লেগেছে, আমি আবার ঠিক পপ-পাব্লিক না। আমি সারাহ ম্যাকলফ্লিনের গলার সাংঘাতিক ভক্ত, কিন্তু মহিলা মূর্তিমান ডিপ্রেশন, কোথায় লাগে রেডিওহেড? খাইছে

আর আমি বোনোকে দুই চক্ষে দেখতে পারি না। কোন স্পেসিফিক কারণে না, আমার বোধহয় ঐ ব্যাটার সাথে জেনেটিক কম্প্যাটিবিলিটি নাই মন খারাপ ড্যাফট পাঙ্কের ওই গান তো সবাই শুনেছে--'লাস্ট নাইট..."। কিন্তু আমার মনে হয়েছে ওদের ঝোল্লায় বেশি কিছু নাই। ব্লারের "উহু!" আমার দারুণ প্রিয় ছিল। ফিফা ৯৮ গেমের সাথে জড়িত থাকায় একটা সুখস্মৃতি হয়ে আছে।

নির্ভানা বাদ দিয়া গেলেন গা যে???

আর রেডিওহেড ঠিক সকালবেলা উঠে ফুল ভলিউমে শোনার মত গান তো না। আর নিয়মিত ওটা ছেড়ে ড্রাইভ করলে খুব দ্রুতই আপনি কিছু একটা ঘটিয়ে দিবেন সন্দেহ নাই হাহাহা। কিন্তু যখন আপনি মাতাল হতে চাইবেন, তখন থম ইয়র্ক অতি উৎকৃষ্ট শুড়ি (পিঙ্ক ফ্লয়েডেও চলে, কিন্তু রেডিওহেড ইজ সিক, ইউ নো)...মাতালেরাই মাতালের কষ্ট বোঝে হাসি

আর আপনি যদি রেডিওহেডকে ঘুরায় প্যাঁচায় পচা সাব্যস্ত করতে যান, তাহলে আমি থমের মতন মুখ-চোখ শক্ত করে বলব, "হোয়াই ডু ইউ কেয়ার?" খাইছে

শরতশিশির এর ছবি

আমি মোটেও রেডিওহেডকে ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে 'পচা সাব্যস্ত' করতে চাই নি - একবারও। আগের বলা কোন কমেন্টেই তা ছিল না। আমি বলেছি 'ডিপ্রেসিং', 'পেসিমিস্টিক' গান গায় ওরা, যেমন তুমি বললে যে সেটা শোনার একটা স্পেসিফিক সময় লাগে। কাজেই তুমি যদি ''থমের মতন মুখ-চোখ শক্ত করে'' বলোও ''হোয়াই ডু ইউ কেয়ার?'', আই সিম্পলি ডোন্ট কেয়ার এবাউট ইট এনিওয়ে।

আর, ব্রিটিশ ব্যান্ড নিয়ে কথা হচ্ছিলো মূলত, নির্ভানা আমেরিকান।

ভাল থেকো। হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।

সাবিহ ওমর এর ছবি

এত ভদ্রলোকদের দিয়া গিয়াঞ্জাম হয় না। ধুরু...খাইছে

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

৫ দিলাম। অসাধারণ লেগেছে।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

খুব ভাল লাগল জেনে যে আপনার ভাল লেগেছে। কবিতা লিখলেই খালি ভয় হয় কেউ বুঝবে কি বুঝবে না তা নিয়ে।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

বারোটি পংক্তির এই কবিতার প্রথম সাত পংক্তি একটি ভাবের, একটি প্রেক্ষিত থেকে, একটি চিত্রকল্প। এই চিত্রকল্পটি বহু চেনা। তবে তাকে এ'ভাবে আমরা দেখিনা। কারণ, এ'ভাবে দেখতে আমরা স্বস্তিবোধ করিনা। আমাদের সুশীল জীবনাচরণ আমাদেরকে এ'ভাবে অস্বস্তিকর সত্যগুলো থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখে। এই অংশের -
"ধোঁয়া ওঠা ডিমসেদ্ধ ভেঙে এক টুকরো চোখ"
-লাইনটি অসাধারণ বললে কম বলা হয়।

পরের চারটি পংক্তি ভিন্ন ভাব, ভিন্ন চিত্রকল্প ধারণ করে। যদিও কবিতার শুরুর দুই পংক্তির সাথে এই অনুচ্ছেদটার অন্বয় বোঝা যায়। এখানে "হাউস" শব্দটা একটু কানে লাগে। "মোহর" শব্দটাতে অর্থ পরিষ্কার হয়না - অন্ততঃ আমার কাছে।

কবিতার একেবারে শেষ লাইন -
"ছেড়ে যায় পৃথিবীর শেষ ফেরি, শেষ বেচাকেনা শেষে"
-এর সাথে ভাবে একমত হতে পারলাম না। বেচাকেনা অব্যাহত আছে, থাকবে - নতুন নতুন রূপে, নতুন নতুন হাটে। আর ফেরীরাও সার বেঁধে আছে নতুন নতুন লাশের কাফেলা নিয়ে অগ্যস্ত যাত্রার জন্য।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাবিহ ওমর এর ছবি

হু শেষ লাইনটা আরোপিত মনে হল। বুদ্ধিদীপ্ত, ডিসাইসিভ একটা কথা বলার ইচ্ছা থেকে লেখা যেন। নাকি এই লাইনটাই প্রথমে নাজেল হয়েছিল? এরকম হয় হাসি

কিন্তু প্রথম প্যারাটা সেরম...দুর্দান্ত!

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

লেখকের লাশ ফেরিতে করে আমরা রওয়ানা দিই

এই লাইনটা প্রথম নাযেল হয়েছিল খাইছে

শেষ লাইনের ব্যাপারে আপত্তিটা বুঝলাম কিন্তু প্রিয় লাইন, বদলাতে অনিচ্ছুক, আশা করি বুঝবেন হাসি

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

পাণ্ডবদা,

"ছেড়ে যায় পৃথিবীর শেষ ফেরি, শেষ বেচাকেনা শেষে"

যেই পৃথিবীতে লেখকদের কেনা শেষ হয়ে যায়, সেখানে আর কোন বেচাকেনা কী বাকি থাকে?

"হাউস" শব্দটা সচেতন ভাবে ব্যাঙ্গার্থেই ব্যবহার করেছি। আত্মা বিক্রি করেও আঁশ মেটেনা সে অর্থে।

"মোহর" এসেছে money কে বোঝাতেই।

আর অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা জানবেন হাসি আপনার মন্তব্য আমাদের সবার ভীষণ উপকারে আসে।

অতিথি লেখক এর ছবি

'হাউস' শুনিনি আগে, 'আউশ' শুনেছি।
কোন এলাকায় এরম বলে?

কবিতা ভালো বুঝিনা,
তবে খোঁচাগুলো টের পেলাম।

মর্ম

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য, মর্ম হাসি

"হাউস" কোন এলাকায় বলে তা তো জানি না। তবে খুব একটা অপ্রচলিত শব্দ নয়, তা জানি।

নাশতারান এর ছবি

প্রথম পাঠে খুব ভালো লাগল। আরো কয়েক দফা পড়ে নিই।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ঠিক আছে পড়ে নাও, সময় দেয়া হল খাইছে

তিথীডোর এর ছবি

কয়েকটা লাইন আজ সারাদিন মাথায় ঘুরে ফিরবে...

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য হাসি

তাসনীম এর ছবি

অসাধারণ।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ তাসনীম ভাই, পড়বার জন্য হাসি

আলমগীর এর ছবি

পুরোপুরি বুঝেছি বলব না, তবে কবিতাটা ভালো লাগছে।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আলমগীর ভাই, পড়বার জন্য।

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

আমি আসলে কবিতা ভালো বুঝি - এরকম দাবি করবো না। কিন্তু আজ পর্যন্ত যত কবিতা আমার ভালো লেগেছে- তাদের প্রত্যেকের মাঝে একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য আছে। সেটা হলো- কবিতার ভেতরে একটা 'গল্প' বলা আছে...

এই কবিতার সেই গল্পটা মনে হয় বুঝতে পেরেছি।

ভালো লেগেছে।

_________________________________________

সেরিওজা

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আমার তো আবার আপনার গল্প পড়লে মনে হয় তার ভেতরে একটা কবিতা আছে খাইছে

অনেক ধন্যবাদ পড়বার জন্য।

পলাশ দত্ত এর ছবি

আমাদের পকেট উপচানো শ্রদ্ধা
ঝালমুড়ির প্যাকেটে প্যাকেটে বিলি করি অপর যাত্রীদের।

ওপরের লাইন দুইটা মিলে কি এইরকম একটাই অর্থ যে আমাদের পকেট থেকে উপচে পড়া শ্রদ্ধা আমরা ঝালমুড়ির প্যাকেটে করে অন্য যাত্রীদের বিলি করি?

নাকি দুই লাইনে দুইটা এম্ফ্যাসিস আছে এইরকম যে (১) আমাদের পকেট থেকে শ্রদ্ধা উপচে পড়তেছে এবং (২) সেই উপচে-পড়া শ্রদ্ধা থেকে আমরা ঝালমুড়ির প্যাকেটে করে অন্য যাত্রীদের বিলি করি?

যদি দুইটা এম্ফ্যাসিস থাকে তাহলে লাইন দুইটা এইরকম হলে ভালো হয়:
আমাদের পকেটে উপচানো শ্রদ্ধ
ঝালমুড়ির প্যাকেটে প্যাকেটে বিলি করি অপর যাত্রীদের।

নইলে এইরকম ভালো :
আমাদের পকেট-উপচানো-শ্রদ্ধা
ঝালমুড়ির প্যাকেটে প্যাকেটে বিলি করি অপর যাত্রীদের।

২.
আমাদের কেবিনে কেবিনে নির্বাণ, নির্বাণ।- এই লাইনটায় প্রথম নির্বাণের পরের কমাটা কি সচেতনভাবে?

৩.
ধোঁয়া ওঠা ডিমসেদ্ধ ভেঙে এক টুকরো চোখ।
বিজবিজে ফেনায় ফেনায় বাদামখোসা আর ক্যারিকেচার আত্মা।

ওপরের লাইন দুইটা স্বতস্ফুর্ত মনে হয় নাই। মনে হইছে তৈরি করা।

৪.
আমরা তাদের দেখাই কাম ও কলার কাশফুল।
অক্ষর মুছে মুছে মোহর শেখাই।

ওপরের লাইন দুইটা মিলে আমরা তাদের অক্ষর মুছে মুছে মোহর শেখাই হলো না কেনো জানার আগ্রহ।

৫.
ছেড়ে যায় পৃথিবীর শেষ ফেরি, শেষ বেচাকেনা শেষে।

ওপরের এই লাইনটা এইরকম হলে কবিতা থেকে বিচ্ছিন্ন মনে হয় না :

ছেড়ে যায় লেখকের শেষ ফেরি, শেষ বেচাকেনা শেষে

৬.
কবিতাটা নিয়ে অনেক কথা বলে ফেললাম। কিছু মনে করবেন না। আপনার কবিতার ভাষ এবং টোন আমার কিছুটা আকর্ষণীয় মনে হইছে। কিন্তু পড়তে গিয়ে কিছু জায়গায় হোচট খাইছি। সেগুলিই বললাম বিস্তারে।

শুভেচ্ছা।

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

==========================
পৃথিবীর তাবৎ গ্রাম আজ বসন্তের মতো ক্ষীণায়ু

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

নাকি দুই লাইনে দুইটা এম্ফ্যাসিস আছে এইরকম যে (১) আমাদের পকেট থেকে শ্রদ্ধা উপচে পড়তেছে এবং (২) সেই উপচে-পড়া শ্রদ্ধা থেকে আমরা ঝালমুড়ির প্যাকেটে করে অন্য যাত্রীদের বিলি করি?

আমি এটা বোঝাতে চেয়েছিলাম।

হ্যাঁ, কমা সচেতনভাবেই দিয়েছি।

কবিতা অটোমেটিক রাইটিং, তা মানি। কিন্তু, কিছু লাইনতো আমরা তৈরীও করি, না? এখানে প্রথম লাইন টা কিছু না ভেবেই লিখেছি, দ্বিতীয় লাইন টা মাথা ঘামিয়ে লেখা।

হুম হতে পারত। কেন হল না সেটা আমিও ভাবছি।

ছেড়ে যায় পৃথিবীর শেষ ফেরি, শেষ বেচাকেনা শেষে।

এই লাইনটা বদলে দিলে অর্থ টাই বদলে যাবে। যেই পৃথিবীতে লেখকদের কিনে ফেলা সম্ভব হয়, সেখানে আর কোন কেনাবেচারই আর কোন মানে থাকে না। এবং সেই কিনে ফেলা লেখক তখন মৃত। ব্যক্তি হিসেবে জীবিত, কিন্তু লেখক হিসেবে মৃত।

না না, কিছুই মনে করিনি। ভীষণ কৃতজ্ঞ এতটা মন দিয়ে পড়েছেন দেখে এবং খটকাগুলো জানানোর জন্য।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

ফকির লালন এর ছবি

ভালো লাগছে কবিতা, ক্যামন জানি পরবাস্তব ছবির মতো।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আপনার ভাল লেগেছে জেনে খুব ভাল লাগল।

জি.এম.তানিম এর ছবি

কবিতার মিউজিক ভিডিও হয় না? (ভিডিওগ্রাফি বুঝাইছি খাইছে )
এই কবিতাটা সেরকম একটা ছবি এঁকে দিলো। পরাবাস্তব!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ধন্যবাদ পড়বার জন্য।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।