সেই বয়সটা, যখন কারণ ছাড়া কান্না পেত, মার সাথে ভীষণ ঝগড়া হত, আবার সারাদিনের সব কথা মাকে না বললে অস্বস্তি, অস্বস্তি। নতুন বিল্ডিং উঠবে দেখে কলেজের লাল-জবা গাছটা যখন কেটে ফেলল, ম্যাগাজিনের কাজ করতে গিয়ে, আমার আর সিস্টার শিখা, দুজনেরই চোখ ছলছল। তারপর কাটা পড়ল লাইব্রেরির মাধবীলতার ঝাড়, আর ওড়াউড়ি বাদ দিয়ে আস্তে আস্তে মাটিতে পা রেখে হাঁটা শিখলাম, সে আরেক গল্প।
সবগুলো কবিতাই ২০০১-২০০২ এ লেখা।কবিতাগুলি ছেলেমানুষি আর মাটিতে পা না রাখার দোষে, একশ তে একশ-দশ। ক্লাসনোটের ফাঁকে ফাঁকে লেখা, হারিয়ে ফেলেছিলাম।আমার এক বন্ধুর কাছে ছিল, পাঠাল মেইলে।
মনে হল হাবিজাবি এই কবিতাগুলি ধরে রেখেছে সেই ভূতে পাওয়া বয়স, সেই কাঠবাদাম গাছের লালচে পাতা ঝরে পড়ছে, পড়ছে - সেই ডানে-বায়ে না তাকিয়ে রাস্তা পার হওয়া, সেই বিস্ময় আর অভিমান।
(১)
এই যে আমার মাঝে মাঝে আকাশ কুসুম
বাইরে কিন্তু ভদ্র নিঝুম
কি হবে তার?
অকুল পাথার?
সবাই ভীষণ ব্যস্ত, জানো?
আমিই কেবল একলা হুতুম
মনের মাঝে একলা দুপুর
চোখের মাঝে আকাশ উপুড়
চিন্তারা সব আকাশ কুসুম।
আকাশ যখন নীলে নীল
বুকের মাঝে একটি চিল
কলেজ ক্লাসের হাত এড়িয়ে
সে চিল যখন উড়তে চায়?!
কেউ কি তার নাগাল পায়?
পায় না, তাইতো- মেঘের কোলে স্বপ্নরঙ
যাচ্ছে চিল কালিম্পং
উড়ছি আমি , উড়ছে চিল
আকাশ কুসুম ফুলফিল
(২০০১)
(২)
আমাকে কাঁচকলা দেখিয়ে ঘুমপুরী পুকুরটা চৌচির হয়ে খাঁ খাঁ করে।
বিশ্বাস করো, আমি কোনওদিনও সেই পুকুরটায় নামতে চাইনি
ওর ধারে ছিল লেবুগাছ, কাঁচপোকারা।
সবুজ, নিঝুম, চুপচাপ পুকুরটা রাতদিন ঠোঁট নেড়ে কত কথাই না বলত,
আমি ঘাড় হেলিয়ে শুনে যেতাম
মাঝে মাঝে খুব বাতাস দিলে আমি এবং পুকুর দুজন’ই
তিরতির করে কাঁপতাম।
আমি ঠিকই জানতাম ওর মাঝে আছে প্রাণভোমরা
আমাকে ও সেই ভোমরাটিরই গল্প শোনাত।
তার হীরার মত চোখ, গায়ের রঙ কালো, হরিণের চোখের মত-
কই, আমিতো কোনদিনও লোভ করিনি ছুঁতে
তারপর কী যে হল, কী যে হল...
আমি কাঙালের মত হাত ভিজালাম জলে
শান্ত নিঝঝুম পুকুরটা নিমেষেই অক্লান্ত, অস্থির
সমুদ্র হয়ে কোথায় যে গেল, আমি জানি না।
আমি শুধু দেখলাম একটি মৃত ভোমরা পড়ে আছে, নিঃসাড়।
এবং আমি। মৃত।
(২০০১)
(৩)
একলা একটা মেয়ে
থাকে জলের তলে চেয়ে
দেখে কাঁকড়া হেঁটে যায়
লাল কাঁকড়া ডেকে যায়
ওদের বাড়ির কাছে
এক টুকরো নদী আছে
সেই টুকরো নদীর টুকরো পাড়ে
আলো ও মেয়ে খেলা করে
আলোর সাথে মেয়ে, নাকি মেয়ের সাথে আলো?
কালো নাকি আলোর চেয়েও ভালো?
সেথা ফুল ফোটে, ঢেউ ফোটে
তাতে তিয়াস কি আর মেটে
বল সাগর কোথায় সাগর?
যার অতল তলে ভ্রমর
তার হীরের মত চোখ
আর গায়ের রঙ কালো
কালো নাকি আলোর চেয়েও ভালো?
(২০০২)
মন্তব্য
আমিও লিখতাম। কই? এমন তো হতো না!
---------
|| শব্দালাপ ||
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
হঠাৎ করে হারিয়ে যাওয়া কবিতাগুলা পেয়ে ইচ্ছা হল উঁকি দিয়ে দেখতে সেইসব রাত্রিদিন.....
খুবই চমৎকার হয়েছে কল্যাণীদি!! মি লাইকস।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
আবার "কল্যাণীদি"!!!
ধন্যবাদ পড়ার জন্য
মিষ্টি মেয়ের মিষ্টি কবিতা...।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
********************************************************
আমার লেখায় বানান এবং বিরাম চিহ্নের সন্নিবেশনের ভুল থাকলে দয়া করে ধরিয়ে দিন।
বেশি মিষ্টি কবিতা
তাও পেছন ফিরে তাকানোর বিস্ময়েই তাকানো
আরে কে কইছে ভালো হয় নাই?
সুন্দর হইছে... ভূমিকাটা পইড়া যদিও মনে হইছে এখন আরো ভালো লেখবেন আপনে... বর্তমানের কবিতা দেন
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আমি কইছি , নজুভাই
বর্তমানের কবিতা অতীতে দিছি তো
২০০১-২০০২ এ মেয়েটা ভালোই লিখতো!
বলতে দ্বিধা নেই সময় তার লেখার ধার বাড়িয়েছে।
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ধন্যবাদ পড়বার জন্য
একটা সময় চাইলেও আর আমাদের ভূতে ধরে না...
০২
একটু চেক করে নিন
কাচের মাথায় বোধহয় চন্দ্রবিন্দু বসে না
0১
ঠিক, ঠিক
0২
মডু ভাই/ বোন
শিরোনাম টা একটু ঠিক করে দিবেন, প্লীজ? চন্দ্রবিন্দু কে অর্ধচন্দ্র দিতে অনুরোধ করছি।
ধন্যবাদ লীলেনদা আর বুনো'পা কে "কাচ" র জন্য
মেইল করো।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
আমার সেসব দিন ছেড়ে আসার বেশিদিন হয়নি। এখনো সেই ঘোরেই আছি বলা যায়। সেই ঘোরে এই লেখা পড়ে দূর্দান্ত লাগল। এরকম আরো থাকলে এখানে দিন, পড়ি। আপনার স্টাইলটা ভাল লেখার। 'ছিল' বলব কিনা বুঝতে পারছি না, আপনার 'অতীতে' দেয়া 'বর্তমানের' লেখা পড়া নেই কিনা।
ধন্যবাদ, পড়বার জন্য
তাড়াতাড়ি ঘোর কাটুক এই প্রার্থনা করছি, নইলে পস্তাতে হয়
খুব ব্যস্ততার মধ্যে আছি, তারপরেও মুগ্ধতা না জানিয়ে গেলে অন্যায়ই হবে! তখন তো লেখতেই ভাল, এখন তো পুরোপুরি 'পাকা হাত' তোমার। ফ্রেন্ডকে বলো থাকলে আরও পাঠিয়ে দিতে, আমরা মুগ্ধ হয়ে পড়ি আর রোমন্থন করি আমাদের কাঁচা-পাকা বেড়ে ওঠা!
ভাল থেকো।
অটঃ কলেজের জন্য টাইম পেলে লিখে ফেলো, কেমন?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
আমি দেখতে চাই না বন্ধু তুমি
কতখানি হিন্দু আর কতখানি মুসলমান
আমি দেখতে চাই তুমি কতখানি মানুষ।
হুম, সেই কাঁচা-পাকা বেড়ে ওঠা !!!
এত ব্যস্ততার মাঝেও লেখা পড়ার জন্য, ধন্যবাদ
অটঃ লিখে ফেলব আপু, কাল পরশুর মাঝে। এখনো তো দুই
দিন বাকি , আমি আবার শেষ-মুহূর্তের-সাবমিশনে বিশ্বাসী
ঐ সময়টা আসলেই অন্যরকম। এলোমেলো আর অস্থির!
খুব সুন্দর হয়েছে কবিতাগুলো। ২ নং সবচেয়ে ভালো লেগেছে। ঐ বয়স থেকেই এত ভালো লিখতে নাকি?
ধন্যবাদ, পড়বার জন্য
ভালো হয়েছে, বলছেন ?
দারুণ লিখেছেন।
কাঁচে আগে তো চন্দ্রবিন্দু লাগতো বলেই মনে হয়, সব বদলে গিয়ে কেমন নতুন হয়ে যাচ্ছে।
আর, কবিতা তো চমৎকার জিনিস, কিন্তু ভূটানের কথা ভুলবেন না যেন।
যাহ্, আমি এই ভয়টাই করছিলাম
যেখানে ভূটানের ভয়, সেখানেই সন্ধ্যা হয়। এত "চমৎকার" কবিতা
পড়েও আপনি ভূটান ভুললেন না? স্নিগ্ধা দিদিভাই ঠিকই বলেন
এর পরের পোস্ট ভূটান, চোখ রাখুন সচলের পর্দায়
আমিও জানতাম না "কাচ" বানান বদলে গেছে, বাংলা একাডেমীর অভিধানে দেখি "কাঁচ" আর নেই।
লেখা বেশ সুন্দর হইছে
আসলেই বয়স বা সময়
অনেক কিছু জানায়
শুধু মিষ্টি নয় একদম সুন্দর কবিতাগুলো।
লিখুন অথবা অতীত লিখন পড়তে দিন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
সুন্দর।
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
বাহ!
নতুন মন্তব্য করুন