পেছন ফিরে তাকাইনা কখনোই। হয়তো জেদে, বা হয়তো অসুখে। স্রেফ তাকাই না আরকি। হঠাৎ এ জায়গাটায় আটকে পড়ে মনে হচ্ছে আউট অফ দা ওয়ার্ল্ড কোথাও চলে এসেছি। গভীর দুখে দুখী হয়ে এমন বাদলা দিনেই কি নিজের মুখোমুখি হতে হয়? রবিবুড়ো তো এমনই কিছু একটা বলেছিল, নামাতে পারি যদি মনভার। অচিন দেশের অচিন মানুষদের এমন মাথাখারাপ করা সারল্য দেখে দেখে, পনেরো বছর ধরে জমিয়ে রাখা নিতান্ত সরল সেই প্রশ্নটা এবার করেই ফেলি, নাকী!!
মীরা লিখত না কখনো কিছু। তবে পড়ত ভীষণ। ওদের বাড়িতে একটা বিশাল লাইব্রেরি ছিল। মীরা যখন গভীর মনোযোগে আমার জন্য কোনো বই খুঁজত, কখনো হাঁটু গেড়ে বসে, কখনো একপাশে হেলে, ঠোঁট কামড়াচ্ছে, ওর আশ্চর্য সুন্দর আঙুলে শুধু আমার জন্যই ধুলা লাগাচ্ছে, তারপর খুঁজে পেয়ে যখন হেসে উঠত, আমি আবারো নিশ্চিন্ত হতাম, মীরা শুধু আমারই। মীরা যতক্ষণ আমার পাশে থাকত, মনে হত, আছে, সব আছে। যা হচ্ছে সব ঠিক হচ্ছে, পৃথিবীটা বড় সুন্দর জায়গা বেঁচে থাকার জন্য। আমাদের হেঁটে বেড়াবার রাস্তাগুলো মুখস্থ হয়ে গেছিল, খাবার দোকানের প্লেটের ফুলগুলো, পর্দার রঙ, ক্যাশের লোকটার শনি-সোম-বুধের শার্ট, সব, সব আমাদের জানা হয়ে গিয়েছিল। তারপরও মনে হত কিছুই জানা হয়নি, এই শুরু হল প্রথম পাঠ। আমার প্রতিটা দিন-রাত্রি আমি মীরার ক্রীতদাস হয়ে কাটিয়ে দিতাম। আর লিখছিলাম সেই উপন্যাসটা, যার নাম দেয়া হয়নি। প্রীতিলতা, খালেদ হোসেন, পরাগ, নিখিলেশ দাশ, সুবর্ণরেখা- নির্মাণ করছিলাম ওদের মীরার স্বাদ-ঘাম-রঙ ছেনে ছেনে। নিখিলেশ দাশ কে মীরা বড় ভালবাসত। একদিন চা খেতে বসে নিখিলেশের জন্যও এক কাপ চা বলেছিল, সেদিন আমার চায়ের কাপ উলটে ফেলে মীরা কে একা রেখে বেরিয়ে এসেছিলাম।
মীরার সাথে যেদিন দেখা হত না, সারাদিন কিছু লিখতে পারতাম না, মেসের ম্যানেজারের সাথে বিশ্রি ঝগড়া হত, রাতে কুৎসিত স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙে দেখতাম পাশে রাখা জলের গ্লাসে তেলাপোকা হেঁটে বেড়াচ্ছে।
নয়নার সাথে বিয়ের আগে নয়না কে আমি চিনতাম না। মীরা চলে যাবার পর আমি সব ছেড়ে পালিয়েছিলাম, শহর, দেশ, সব। যাবার আগে উপন্যাসটা ছিঁড়ে কুচি কুচি করে মীরার বাড়ির ঠিকানায় পোস্ট করে গেছিলাম। তারপর আর কখনো কলম ধরিনি। নিজেকে কেটে-ছেঁটে, হাত-পা-মাথা গুঁজে দিব্যি আঁটিয়ে ফেলেছি এখন নয়নার মাপে। বিদেশের প্রথম দিককার ভয়ংকর স্ট্রাগলে নয়না চোখ বুজে আমার পাশে ছিল, আমার অতীত নিয়ে কখনো প্রশ্ন করেনি। নয়না কখনো ভোলেনা আমার বাবা-মার জন্মদিন, নয়নার বিশ্বস্ত হাত আমার ছেলের চুলে সিঁথি কেটে দেয়, নয়নাকে কখনো খালিপায়ে ঘাসের ওপর হাঁটতে দেখিনি। সব ঠিক আছে। শুধু মীরা কে যেমন প্রতি মুহূর্তে হারাবার ভয় করতাম, সেই ভয়টা পাইনা নয়না কে নিয়ে কখনোই। সব ঠিক আছে?
দোহাইঃ আমার ভাগের পাপোশখানা সাবমিট করলাম। পাঠকদার "ভূটান" কে খুন করায় ক্ষমাপ্রার্থী।
মন্তব্য
আরে খুনটুন করার কথা বলেন কেন। বারোয়ারি লেখায় স্বাদ বদল হবে একেক জন করে লিখতে থাকলে, এটাই তো স্বাভাবিক। যাক, এবার যেন কার পালা?
বাহ...'বারোয়ারি' গল্পের চমক শুরু হয়ে গেছে - কাহিনীর 'বারো'টা বেজে গেছে!
হেহেহে...জাস্ট একটু মজা করলাম......লেখা বেশ ভাল হয়েছে!
তবে সত্যি বলতে, আগের গল্পের সাথে একটু সামঞ্জস্য থাকলে আরেকটু বেশী ভাল লাগত হয়তো।
যাকগে, ব্যাপার না...এখন দেখা যাক, বুনোহাঁস গল্পটাকে কোথায় নিয়ে যায়?
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
পাঠুদা, এবার কি আমার পালা?
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আবার জিগ্স (হেঁ হেঁ একটু সচল স্টাইল মার্লাম), লেখেন লেখেন, শুরু করে দেন।
লিস্টটা আবার সবাইকে একটু মনে করিয়ে দেইঃ
তাহলে নতুন লিস্টি হলো:
১) বুনোহাঁস
২) আনন্দী কল্যাণ
৩) রেনেট
৪) মামুন হক
৫) সাফি
যেহেতু আনন্দী কল্যান লিখে ফেলেছে, তাই বুনোহাঁস এখন ২ নম্বর!
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
==========================
একটাই কমতি ছিল তাজমহলে,
......তোমার ছবিটি লাগিয়ে দিলাম!
আইচ্চা, ধরি তাইলে। কল্যাণাপার কাজ কারবার দেখে সাহস পাচ্ছি। ভূটান না পোষালে না হয় নায়কের মাকে মৃত্যুশয্যায় শুইয়ে দিয়ে নায়ককে ঢাকায় নিয়ে আসব।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
দুই নম্বরি হইলে চইলতনো
...........................
Every Picture Tells a Story
গল্পটা এখন মীরা বা নয়নার পারস্পেক্টিভ থেকেও শুরু হতে পারে,
কে জানে, মীরা হয়ত ঢাকাতেই থাকে
@ কাকুল কায়েশ, সহমত
বহুদিন পর পর সচলে আসি। আজকে এসে এই বারোয়ারি গল্প প্রয়াসে চমকে গেলাম, ভালও লাগলো। চমকে গেলাম কেন জানেন, ঠিক এমন করে একটা গল্প আমরা সাতজনে বসে লিখেছিলাম, একটি ব্লগে।
ভালো লাগলো লেখা।
মধুবন্তী মেঘ
ধন্যবাদ মেঘ, আরও ঘন ঘন আসুন সচলে
একবার ভেবেছিলাম লেখার আগে গল্প কোনদিকে নেব তা নিয়ে পাঠকদার সাথে আলোচনা করে নেই, পরে মনে হল, তাহলে আর বারোয়ারি গল্পের মজা থাকল কী!!!
বারোয়ারি গল্প লেখাটা অনেক কঠিন মনে হল
ভূটান, মাঝবয়সী একজন পুরুষ, প্রবাসী, বাইরে বৃষ্টি ইত্যাদি কিছু হিন্ট ফলো করতেই হবে। একটু হাঁসফাস লাগছিল লিখতে, হাত-পা বাঁধা মনে হচ্ছিল। তবে মজাটা এখানেই, বাক্সের মাঝে বসে বাক্সের বাইরের চিন্তা।
আমার মনে হয়েছে, আমি ঠিকমত লিখতে পারিনি। পাঠকদার শুরুটা চমৎকার ছিল, অন্য কেউ লিখলে নিশ্চই আরো ভাল লিখতেন।
তাও এই রিলে রেস কনসেপ্টটাতে অংশ নেয়ার লোভে পড়ে লিখে
ফেললাম
বুনোপা ইস্টার্ট
চমতকার বারোয়ারি গল্প ...আনন্দীদি'র নায়কের জীবন আর কারো কথা মনে করিয়ে দিল । ভুটান সেইভাবে নেই কিন্তু গল্পের continuity , রিলে রেস এর গতি কমেনি একটু ও । পরের পর্ব গুলি আরো দ্রুতগতিতে চাই...
বাবুই
নায়কের জীবন কার কথা মনে করাল?
ধন্যবাদ, পড়বার জন্য
- কাহিনি একটু পশ্চিমে নিয়ে আসা যায় না? মানে বলছিলাম কি, কাহিনিতে গ্রীষ্মকালীন ললনা না থাকলে কি আর জমে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আপনার অনেক লেখাতেই তো কাচের চুড়ির কথা পড়েছি, আপনি আবার পশ্চিমা ললনা চান কেন?
ধুগোদা...
চলেন এক কাম করি, আমরাও এই বারোয়ারি লিস্টে লেখক হিসাবে নাম লেখাই। লগে অবশ্যই মেম্বর সাবরে নেওয়া হবে।
তারপর এই বারোয়ারি গল্পের বারোটা বাজায়ে ছেড়ে দেই... ললনা আর লুল দিয়া ভরে ফেলবো... রাজী থাকলে জায়গায় বইসা আওয়াজ দেন।
আর সিরিয়ালে অবশ্যই লাইন ব্রেক করে আগায়া আসবো আমরা।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মরজ্বালা, এই মন্তব্যখানা দেখলাম চাইর বছর পরে? আমি তো মহাপুরুষ হয়া গেলাম দেখি!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
কল্যাণাপার প্রতি অভিনন্দন। বারোয়ারি গল্পের স্বাদ বদলে গেলো পুরোপুরি। তবে ভূটানীয় পরিবেশ থাকলে আরো ভালো হতো।
বুনোপা'র প্রতি দাবি- এইবার ভূটানের পটভূমিতে নিয়ে যান লাস্যময়ী নায়িকা ববিকে। শুরু করে দিন একটি কালান্তক ব্যাডভেঞ্চার ...
_________________________________________
সেরিওজা
এই গল্পটা হল কফি খেতে খেতে নায়কের চিন্তা-ভাবনা।
কফি খাওয়া শেষ, এখন শুরু হবে ভূটানের পটভূমিতে
আসল গল্প, যেটা বুনোপা লিখছেন.......
আগের পর্ব পড়া ছিলো না। এখন পড়লাম। আমার কাছে ভালোই লাগলো। বারোয়ারি গল্পের মজাই তো এইটা... চলুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
আর আমি ভাবতাম আপনি আমার সব লেখা ভক্তিভরে পড়েন।
আপনার লেখা ভক্তি ভরেই পড়ি, কিন্তু সময়টা যখন অভক্তির হয়, তখন আর কিছুই পড়া হয় না। এই যাহ্....
আগামী মাসে কলকাতায় আসছি, আর আপনি দাদা বিদেশে পড়ে রয়েছেন... এটা হইলো কিছু?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কী আর করি বলেন, আপনি বরং আগামীতে এই মুলুকে চলে আসেন, খাতিরযত্ন যথাসাধ্য হবে। চলে আসেন।
নজরুল ভাই, আপনিও লেখেন একটা পর্ব, আমরা পড়ি
বান্দরের হাতে খুন্তি তুলে দিতে নাই... জানেন না?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
চমৎকার লাগলো বারোয়ারি গল্পপ্রয়াস! দুই পর্বই পড়লাম। পাঠকদার শুরুটা দুর্দান্ত। আপনারটাও ভালো লাগলো আনন্দী। দেখা যাক এর পরের পর্ব কোনদিকে যায় !
আপনার লেখা দেখিনা মনে হয় অনেকদিন...
ধন্যবাদ, পড়বার জন্য
গ্যালারীতে আছি। মাঝে মধ্যে চিরকুট ছুঁড়ে দেব। শিস দিলেও দিতে পারি। হাততালি তো অবশ্যই থাকবে।
এই পর্বটায় এসে চমক ও হতাশা দুটোই পেলাম। চমকে গেছি গল্পের মধ্যে নতুন একটা গল্প ঢুকে যাওয়াতে। হতাশ হয়েছি এই পর্বে ভূটান না থাকাতে। আমি নিজে ভূটান যাইনি কিন্তু গল্পের মধ্যে ভূটান দেখতে চাই। ভূটান নিয়ে আমি কিঞ্চিত রোমান্টিক। বুনোপা কি ভূটান রাখবেন?
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমি নিজেই হতাশ ভূটান নিয়ে লিখতে না পারায়। কিন্তু সাহসে কুলালো না। একদম না গিয়ে কী লিখবো ভূটান নিয়ে , এই ভয়ে লিখিনাই
ধন্যবাদ
ভাল্লাগসে...স্বাদ বদলাতে ভালু পাই!
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
নতুন মন্তব্য করুন