দেয়ালে গুলি সেঁটে, রক্ত মুছে গেছে

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি
লিখেছেন আনন্দী কল্যাণ (তারিখ: শনি, ২৬/০২/২০১১ - ৮:২৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

বিপ্লব নিয়ে কবিতা লেখা মানায় না আমাকে।
সুবিধা ও ভোগ, এই দুই বাদের ভোক্তা আমি।
আর অবসরে টিভির পর্দায় ভোক্তা, বিপ্লবের।
তাহরির স্কয়ার, বেনগাজি বা নূর হোসেন স্কয়ারে নিপাত যাওয়া একনায়কেরা
আমার মীমাংসিত দৈনন্দিনে উত্তেজনা দেয় কিছুটা।
এই তো।
না-যুদ্ধ, না-প্রেম, না-তীব্র, টিপটিপ যাপন করা দিনে,
দায়সারা সাবধানী আত্মপ্রেমিকতা।
তবুও হঠাৎ সাবধানের পকেট কেটে বেরিয়ে পড়ে দু-একটা আধুলি ইচ্ছা।

জানি, দেয়ালে গুলি সেঁটে, রক্তেরা মুছে যায়।
একনায়ক, গণতন্ত্রের সাথে হাস্যোজ্জ্বল টি-পার্টি করেন।
তাই রক্তেরা চটপট ফিনাইলে মুখ মুছে, শহীদের নাম ভোলায়।
গুলি থাকে, দাগ থাকে আর থাকে পুনর্মিত্রতা।
থাকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী।

বিপ্লব নিয়ে কবিতা লেখার সমস্ত অযোগ্যতা নিয়েও,
অসাবধানে বলে ফেলি, তাই।
দেখি,
একটা অনন্ত স্কয়ার, অনন্ত বিপ্লব টেনে বার করছে আমাদের সমস্ত সাবধানতা।
একই জমিনে সাদা, কালো, বাদামি খালি পা, রক্তের দাগ না মুছে, মিছিলের যূথবদ্ধতা।

শিরোনাম সৌজন্য: শুভাশীষ দাশ


মন্তব্য

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

গত দুই দশকে গণঅভ্যূত্থান-বিপ্লব নিয়ে যেসব কবিতা লেখা হয়েছে তার বেশির ভাগই ক্লিশে। এই কবিতাটি সেই দোষ থেকে মুক্ত। মানুষের চিন্তাভাবনার ধরন পালটাচ্ছে, কবিদের মননেও তার ছাপ পড়ছে।

গণঅভ্যূত্থান বৈপ্লবিক কাণ্ড তবে তা বিপ্লব নয়। গণঅভ্যূত্থান সাময়িক কর্ম, বিপ্লব ধারাবাহিক ও দীর্ঘমেয়াদী ক্রিয়া - সেখানে ক্ষমতা থেকে দূরাচারকে হঠালেও তার কর্মকাণ্ড থেমে যায় না। গণঅভ্যূত্থান উপরতলায় পরিবর্তন ঘটায় বা সেদিকের কোন একটা লক্ষ্য পূরণ করে; বিপ্লব নিচতলা থেকে শুরু করে উপরতলা পর্যন্ত আমূল পরিবর্তন করে। গণঅভ্যূত্থানের ফল প্রতিপক্ষ অচিরেই হস্তগত করে ফেলতে পারে; সফল বিপ্লবের ফলাফল সহসা বেহাত হতে পারেনা।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

বিপ্লব শব্দটা ব্যবহার নিয়ে সংশয় ছিল। মিশর বা লিবিয়ায় যা হচ্ছে, সেটা আসলেই গণঅভ্যূত্থান, বিপ্লব নয়। কিন্তু কবিতার খাতিরেই এই শব্দ ব্যবহার, সুচারু সমালোচনায় ধরা পড়ব, বুঝছিলাম হাসি

কবিকে তো পাল্টাতেই হবে, মাটিতে পা রেখে চলতে হয় যে, "কাব্য" উড়ে গেছে কবেই, কবিদের এখন শুধু "লক্ষ্মী" কেই ধরবার চিন্তা হাসি

অনেক ধন্যবাদ, পাণ্ডবদা পাঠ ও মন্তব্যর জন্য।

রোমেল চৌধুরী এর ছবি

বস্তুত এই কন্টকিত সময়ে আমরা সবাই 'না প্রেমিক না বিপ্লবী'।
অবিশ্বাস্য সততায় তবু যদি আচমকা সুদীপ্ত স্বপ্নের দল পথ ভুল করে এসে বলে, "এই দেখো হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছি কমলা রঙের কিছু রোদ", আমরা কি আনমনা হবো না?

জানি, দেয়ালে গুলি সেঁটে, রক্তেরা মুছে যায়।
একনায়ক, গণতন্ত্রের সাথে হাস্যোজ্জ্বল টি-পার্টি করেন।
তাই রক্তেরা চটপট ফিনাইলে মুখ মুছে, শহীদের নাম ভোলায়।
গুলি থাকে, দাগ থাকে আর থাকে পুনর্মিত্রতা।
থাকে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী।

তবুও সব ইতিহাস, সব পঙ্কিলতা, সব ছেনালি সখ্যতা, সব বলিদান, সব বিপ্লব, সোনালি দিনের কথা, বদমাশ সততায় বুকে এঁকে রাখে কিছু দুর্বিনীত কবিতা। বোন, তোমার কবিতা সেই সততার স্নান করে শুদ্ধ হয়ে এসে আমাদের ভীষণ নাড়া দিয়ে গেল!

------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

রোমেল ভাই, আপনাদের ভাল লেগেছে জানলে খুব ভাল লাগে। আপনার চমৎকার মন্তব্যটি আরো কিছু দুর্বিনীত, সত্যি কথা লিখতে সাহস দিল, অনেক ধন্যবাদ।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

চলুক

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

সারওয়ার রেজা এর ছবি

ভালো লাগলো হাসি

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

অতিথি লেখক এর ছবি

মনে করিয়ে দিলেন সেই দুঃসহ স্মৃতি মন খারাপ

-অতীত

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

মন খারাপ

নীলকান্ত এর ছবি

কবিতা খুব কম পড়ি, মাঝে মাঝে দু'একটা পড়া হয়।
চমৎকার লাগলো আপু।


অলস সময়

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ওই লাইনটা ঠিকমতো হয় নি লেখা।

ধন্যবাদ পড়ার জন্য হাসি

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

তাহরির স্কয়ার, বেনগাজি বা নূর হোসেন স্কয়ারে নিপাত যাওয়া একনায়কেরা

একটু যেন হোঁচট খেলাম।

তবুও হঠাৎ সাবধানের পকেট কেটে বেরিয়ে পড়ে দু-একটা আধুলি ইচ্ছা

অসাধারণ!!! ঝলসে উঠল পুরো কবিতাটা।

ফুল খেলবার সময় নয় অদ্য ...

অতিথি লেখক এর ছবি

মরে গেলেও এমন লেখা আমার পক্ষে লেখা সম্ভব না। আপনার 'রাজধানীতে রহস্যময় খুন' গল্পটিও পড়েছি, কিন্তু মন্তব্য করা হয়নি। একসাথে জমা রেখে গেলাম অপার বিস্ময়মাখা মুগ্ধতা!

- আয়নামতি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।