জাপান: তেজস্ক্রিয়তার বিপদ

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি
লিখেছেন আনন্দী কল্যাণ (তারিখ: বুধ, ১৬/০৩/২০১১ - ১:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

তেজস্ক্রিয়তার বিপদ

জাপান ভয়াবহ ভূমিকম্প এবং সুনামির পর এখন মোকাবেলা করছে পারমাণবিক বিপর্যয়ের হুমকি। নানা গুজব, মতামত চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনটা সত্যি, কোনটা মিথ্যা নির্ধারণ করা কঠিন। মূলত প্রচারমাধ্যমে আসা তথ্যগুলি একসাথে করে বাংলায় লিখে রাখছি। পোস্টে যারা তথ্য এবং মন্তব্য করে আপডেট জানাচ্ছেন, তাদেরকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

ফুয়েল কি করে সুরক্ষিত থাকেঃ

ফুকুশিমা পাওয়ার প্ল্যান্টে ফুয়েল হিসেবে ইউরেনিয়াম অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। ২৮০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় এই ফুয়েল গলতে পারে। এই ফুয়েল ১ সে. মি. বাই ১ সে. মি. সিলিন্ডার আকারে বানানো হয়। এরপর এই সিলিন্ডার কে রাখা হয় জিরকোনিয়ামের শংকর দিয়ে তৈরি লম্বা টিউবে। এই টিউব ১২০০ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে। এই টিউব কে বলা হয় ফুয়েল রড। এরকম কয়েকশো ফুয়েল রড মিলে তৈরি হয় রিয়াক্টর কোর।

ফুয়েল যাতে পরিবেশে না মিশতে পারে, তার প্রথম প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে ১সে.মি. বাই ১সে.মি. সিলিন্ডারটি। দ্বিতীয় প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে জিরকোনিয়াম শংকর দিয়ে তৈরি টিউবটি। এরপর এই টিউব স্থাপন করা হয় প্রেসার ভেসেলে। আর তৃতীয় প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে এই প্রেসার ভেসেল। এই প্রেসার ভেসেল কাজ করে ৭ মেগাপ্যাস্কেল চাপে এবং দুর্ঘটনার ফলে উৎপন্ন উচ্চ চাপ মোকাবেলা করতে সক্ষম।

এরপর এই প্রেসার ভেসেল, কুলিং পাম্প, পাইপ স্থাপন করা হয় একটি কন্টেইনমেন্ট স্ট্রাকচারে। এই কন্টেইনমেন্ট স্ট্রাকচারটি তৈরি করার উদ্দেশ্য হল, যখন ফুয়েল মেল্ট ডাউন হবে, তখন যেন তা ধারণ করতে পারে। এই স্ট্রাকচারটি স্টিল এবং কংক্রীট দিয়ে তৈরি।এই স্ট্রাকচারটি চতুর্থ প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। প্রথম এই স্ট্রাকচারকে ঘিরে দ্বিতীয় একটি কন্টেইনমেন্ট স্ট্রাকচার কাজ করে পঞ্চম প্রতিরোধক হিসেবে।

এই কন্টেইনমেন্ট স্ট্রাকচার স্থাপন করা হয় রিয়াক্টর বিল্ডিং এ। একে আমরা বলতে পারি ষষ্ঠ প্রতিরোধক।

এই সমস্ত প্রতিরোধক ভেঙে ফুয়েল যখন পরিবেশে মেশা শুরু করে, তখন মূলত তেজস্ক্রিয় ইউরেনিয়াম ভেঙে বিভিন্ন পদার্থের পরমাণু পরিবেশে মেশে। তাদের মাঝে উল্লেখযোগ্য হল, আয়োডিন, সিজিয়াম, স্ট্রোনিয়াম আর আর্গন।

চেরনোবিল রিয়াক্টরে কোনো কন্টেইনমেন্ট স্ট্রাকচার ছিল না।

http://mitnse.com/2011/03/13/why-i-am-not-worried-about-japans-nuclear-reactors/

মেল্টডাউন কি?

জাপানে ভূমিকম্প শুরুর আগেই পাওয়ার প্ল্যান্ট বন্ধ রাখা হয়। কিন্তু, নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরের জ্বালানি তাপ উৎপন্ন করতে থাকে, যতক্ষণ পর্যন্ত না সম্পূর্ণ ঠান্ডা হয়। ব্যাকাপ কুলিং সিস্টেম দিয়ে ঠাণ্ডা করার চেষ্টা চালানো হয়, তা সম্ভব না হলে, তাপমাত্রা ২২০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং জ্বালানি গলা শুরু হতে পারে। যদি সমস্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তখন পরিবেশে তেজস্ক্রিয় পদার্থ ছড়িয়ে পড়বে। ফুকুশিমা প্ল্যান্টে ছয়টি রিয়্যাক্টর আছে, জ্বালানির মেল্ট ডাউন ঠেকাতে জাপান চেষ্টা চালাচ্ছে নিউক্লিয়ার ফুয়েল রডগুলি ঠাণ্ডা রাখতে। যদি ছয়টি রিয়াক্টরেই মেল্ট ডাউন হয়, এবং জ্বালানি প্ল্যান্টের বাইরে ছড়িয়ে পড়ে, তবে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে। জ্বালানি হিসেবে ফুকুশিমা প্ল্যান্টের একটি রিয়াক্টরে (তিন নম্বর) মিক্সড-অক্সাইড ফুয়েল(MOX) ব্যবহার করা হয়, এই ফুয়েলটি প্লুটোনিয়াম এবং বিভিন্ন মাত্রার ইউরেনিয়ামের অক্সাইডের মিশ্রণ। বাকি রিয়াক্টরগুলিতে লো-এনরিচড ইউরেনিয়াম ( LEU) ব্যবহার করা হয়, যা মূলত ইউরেনিয়াম-২৩৫ এবং ইউরেনিয়াম-২৩৮ এর মিশ্রণ।

খবরে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী তিন নম্বর ইউনিটের কোর (MOX জ্বালানি) ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই MOX জ্বালানিটি অধিক বিপদজনক।

মানব-স্বাস্থ্যর উপর তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব?

জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত এই তেজস্ক্রিয় পদার্থগুলি ক্রমাগত ভাঙতে থাকে এবং তৈরি করে নতুন নতুন তেজস্ক্রিয় পরমাণু। একই সাথে উৎপন্ন হয় বিভিন্ন ক্ষতিকর তরঙ্গ যেমন গামা রে এবং এক্স-রে, যা মাত্রা ছাড়ালে শরীরের বিভিন্ন টিস্যুর ক্ষতি করে থাকে। পরিবেশের সংস্পর্শে আসলে এই পরমাণু পানি ও বায়ুর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং জীবজগতের জন্য ভয়াবহ হুমকি হিসেবে কাজ করে। মানবদেহে বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক বন্ধন তখন হুমকির মুখে পড়ে, তেজস্ক্রিয় পদার্থের সৃষ্ট নতুন নানারকম বিক্রিয়ায় অভ্যস্ত হতে পারে না। ফলে নানা ধরনের ক্যান্সার হতে পারে।

তেজস্ক্রিয়তার এক্সপোজার নির্ধারণ করা হয় গ্রে (gray)/ সিভার্ট(sievert) একক দিয়ে। সাধারণত বছর প্রতি ২ মিলিসিভার্ট তেজস্ক্রিয়তার সম্মুখীন আমরা সবাই হই, এই মাত্রা স্বাভাবিক। এক দফায় ১ গ্রে (১০০০ মিলিসিভার্ট) পরিমাণ তেজস্ক্রিয় এক্সপোজার বিভিন্ন অসুস্থতা তৈরি করতে পারে। এক দফায় ৪ গ্রে (৪০০০ মিলিসিভার্ট) পরিমাণ তেজস্ক্রিয় এক্সপোজার মানুষের মৃত্যুর কারণ হতে পারে। জাপানে ফুকিশামা প্ল্যান্ট এলাকায় এখন পর্যন্ত ঘন্টাপ্রতি ৪০০ মিলিসিভার্ট তেজস্ক্রিয়তা সনাক্ত করা হয়েছে। সবাইকে অনুরোধ করছি নিচের লিঙ্কের চার্টটি পড়ে দেখতে।

http://www.bbc.co.uk/news/health-12722435

করণীয়ঃ

আয়োডিন ট্যাবলেট গ্রহণ, শরীরে প্রয়োজনীয় আয়োডিন থাকলে শরীর তেজস্ক্রিয় আয়োডিন গ্রহণ করবে না।

এশিয়ার কোন কোন দেশ ঝুঁকির মুখে?

এখন পর্যন্ত প্ল্যান্টের ২০-৩০ কিমি এলাকার মধ্যে কাউকে না থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে, এই এলাকা কে নো ফ্লাই জোন হিসেবেও ঘোষণা দেয়া হয়েছে। অসমর্থিত সূত্র বলছে, দুটি রিয়াক্টরে মেল্ট ডাউন শুরু হয়েছে। যদি এই জ্বালানি সমস্ত প্রতিরোধক ব্যবস্থা ভেদ করে পরিবেশের সংস্পর্শে আসে, তাহলে তেজস্ক্রিয়তা আরো বেশ কিছু এলাকায় ছড়াবে। বায়ু এবং পানির মাধ্যমেও জাপানের কাছাকাছি এশিয়ার অন্যান্য দেশে বা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আবহাওয়া এক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এছাড়া এই তেজস্ক্রিয়তার প্রভাব খাদ্যচক্রে ঢুকে পড়ে ক্ষতিকর প্রভাব রাখবে। তবে, সেই তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা কী পরিমাণ, তার উপর নির্ভর করছে ক্ষতির পরিমাণ। আর যদি মেল্ট ডাউন ঠেকানো যায়, তাহলে প্ল্যান্টের আশেপাশের পরিবেশ ছাড়া অন্য এলাকায় বিপদের কিছু নেই।

মিডিয়ার ভূমিকা, অযথা প্যানিক ছড়ানো হচ্ছে কি না, জাপান সরকার কতটুকু তথ্য দিচ্ছেন?

প্রচলিত মিডিয়া, ব্লগ, ফেসবুক, টুইটার ইত্যাদির মাধ্যমে নানা তথ্য আমরা পাচ্ছি। অনেক গুজবও ছড়াচ্ছে। গতকাল বিবিসি ফ্ল্যাস নিউজ নামে একটি খবর সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট এবং এসএমএসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে যে ফিলিপাইনে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়বে এবং এসিড বৃষ্টি হবে। বাংলাদেশেও এসিড বৃষ্টির গুজব ছড়িয়ে পড়ে। পরে জানা যায় এসব গুজব। তবে, এটাও ঠিক যে প্রকৃত অবস্থা আর সরকারি ভাষ্যতে অনেক সময়ই গরমিল দেখা যায়।

সবশেষে যেই ৫০ জন কর্মী এতটা ঝুঁকি নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের স্যালুট জানাই।

নিচের গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু সচল যুধিষ্ঠির যোগ করেছেন।

ভবিষ্যতে কি হতে পারে?

ফুকুশিমার রিয়্যাক্টরগুলো GE তৈরি করে, এগুলো বয়লিং ওয়াটার রিয়্যাক্টর। ১৯৭১ সালে তৈরি হয়েছিলো, এবং এগুলোর জীবনকাল ৪০ বছর। স্বাভাবিক অবস্থায় এগুলো গত বছর থেকে নিষ্ক্রিয় করে দেবার কথা ছিলো। কিন্তু সারা পৃথিবীতে নতুন নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টর বানানোর প্রতি একটা অনীহা কাজ করায় এগুলোকে ১০ বছর অপারেটিং এক্সটেনশন দেয়া হয়েছে। আমেরিকা ও ইউরোপেও একই ধরনের রিয়্যাক্টর আছে এবং সেগুলোও এভাবে এক্সটেনশন পেয়েছে। ফুকুশিমায় রিয়্যাক্টরগুলোর কোর গলতে শুরু করেছে, কিন্তু এখনো পুরোপুরি গলে গলিত তরল ম্যাস হয়ে যায়নি। এগুলো এখন মোটামুটি ধীরগতিতেই চুঁইয়ে চুঁইয়ে রিয়াক্টরের কেসিং গলে বাইরে পড়ছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। এগুলো সম্পূর্ণ গলে গেলে (কমপ্লিট মেল্টডাউন) হলে নির্মাতার স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী ৪২% সম্ভাবনা আছে কনটেইনমেণ্ট ফেইলিউর-এর, অর্থাৎ রিয়্যাক্টরের হাউজিং ফেইল করার। কেসিং গলিয়ে তখন ওই তরল মাটিতে চলে যাবে। ওখানকার মাটি এখন সুনামির পানিতে স্যাচুরেটেড বলে ধারণা করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে এগুলো পানির ধারার সাথে ছড়িয়ে পড়তে পারে। সাথে হয়তো বাষ্পীভূত হয়ে বাতাসে মিশে যেয়ে বিস্ফোরণও হতে পারে। সেক্ষেত্রে হয়তো অনেকটা আণবিক বিস্ফোরণের মত ঘটনা ঘটতে পারে। এরকম ঘটনা ফুকুশিমার ৪টা রিয়্যাক্টরেই হতে পারে। একসাথেই ৪টাতে হলে হলে সেটা নরক হবে। তবে পরিস্থিতি এখনও সেরকম হওয়া থেকে অনেক দূরে।

রিয়াক্টর ঠাণ্ডা করার প্রক্রিয়াঃ

যেভাবে ঘটনাটা ঘটেছে। ভূমিকম্প শুরুর সাথে সাথে রিয়্যাক্টরগুলো বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। ওগুলো সেভাবেই ডিজাইন করা। কিন্তু এগুলো ঠাণ্ডা হবার প্রক্রিয়া চলার কথা ছিলো ডিজেল ব্যাক-আপ সিস্টেম দিয়ে। সেটা সুনামির আঘাতে ফেইল করে যায়। ব্যাক আপের ব্যাকআপ ছিলো ব্যাটারি ব্যাক-আপ সিস্টেম, কিন্তু সেটির জীবন ছিলো মাত্র ৮ ঘণ্টা, সেটি শেষ হয়ে যাবার পরই মেল্টডাউন শুরু হয়। ইমারজেন্সি সিস্টেমের এই ডিজাইন সম্ভবত যথেষ্ট ছিলো না। এখানে অনেক বিপদের কথা ভাবা হয়েছিলো, তবে সবগুলো (ভূমিকম্প, সুনামি) একসাথে হবার সম্ভাবনা কখনো যাচাই করা হয়নি। তাই এখানে সমুদ্রের পানি আটকানোর সী ওয়ালগুলো যথেষ্ট উঁচু ছিল না। তাছাড়া এরকম রিয়্যাক্টর ভূমিকম্পপ্রবন এলাকায় সমুদ্রের পাশে থাকা উচিৎ কি না - সেটিও এখন বলা হচ্ছে।

সমুদ্রের পানি কুলার হিসেবে ব্যবহারের ফলঃ

টোকিও ইলেকট্রিক অ্যান্ড পাওয়ার কোম্প্যানী (TEPCO) এখন সমুদ্রের পানি দমকলের ট্রাক দিয়ে ছিটিয়ে রিয়্যাক্টর ঠাণ্ডা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এগুলো সাধারণত: করা হয় পাতিত পানি দিয়ে। সমুদ্রের পানি ক্ষয়কারী। তাছাড়া ইমপিউরিটিগুলো কুলিং প্রক্রিয়াকে কম কার্যকর করবে। তাছাড়া লবণ বা ইমপিউরিটিগুলো তেজস্ক্রিয়াকে ছড়িয়ে দেয়ার বাহন হিসেবেও কাজ করতে পারে। সমুদ্রের পানি দিয়ে এমন কাজ আগে কখনো করা হয়নি, এটা সম্পূর্ণ অপরীক্ষিত পদ্ধতি। তাই কেউ জানে না এর ফলাফল কি হতে পারে। তবে এটা ছাড়া এ মুহূর্তে বোধহয় তেমন কিছু করারও নেই।

ব্যবহৃত ফুয়েল সমস্যাঃ

যে সমস্যাটি নিয়ে এখনো কথা বলা হয়নি, সেটা হলো ব্যবহৃত (স্পেণ্ট) ফুয়েল সমস্যা। যেকোনো আনবিক পাওয়ার প্ল্যাণ্টের মতই এগুলো মাসের পর মাস ধরে ঠাণ্ডা করা হয় প্ল্যাণ্টের কাছাকাছি কো্নো জায়গায়। ফুকুশিমাতে এগুলো রিয়্যাক্টরের ছাদের কাছে একটা স্টোরেজে রাখা হয়। ডিজাইনটাই এমন যে বিপদ হলে ওটা ভেঙ্গে নীচে পড়বে। কিন্তু এখন ধারণা করা হচ্ছে যে এগুলো বাতাসে উন্মুক্ত এবং তেজস্ক্রিয়তা বাতাসে চলে যাচ্ছে। কিন্তু এটা নিয়ে হয়তো কারও মাথা ঘামানোর সময় নেই, কারণ রিয়্যাক্টর ঠাণ্ডা করাটাই এখন মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু স্পেণ্ট ফুয়েলের থেকে বিকিরণের মাত্রাও অনেক বেশি এবং বিধ্বংসী হতে পারে, সেটা এর পরিমাণের উপরে নির্ভর করে।

নিউক্লিয়ার প্লান্টের কর্মীরাঃ

যেসব কর্মীরা এখন ফুকুশিমায় কাজ করছেন, তারা সম্ভবত তেজস্ক্রিয়াতে মারাত্মকভাবে এক্সপোজড, হয়তো তাদের জীবনও নিশ্চিত সংকটে। তাঁরা সম্ভবত সেটা জানেন, এবং সেটা জেনেই এখনো রিয়্যাক্টর ঠাণ্ডা করার কাজ করে যাচ্ছেন।

পোস্টটি আপডেট করা হবে নতুন কোন খবর পেলেই।

আপডেটঃ[১]

কর্মীদের প্ল্যান্ট থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে। চার নম্বর রিয়্যাক্টরে আবার আগুন লেগেছে। তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বেড়ে গেছে।

আপডেটঃ [২]

কর্মীরা আবার প্ল্যান্টে ফিরে গেছেন, বর্তমানে ১৮০ জন কর্মী ফুকুশিমা প্ল্যান্টে কাজ করছেন। ওই এলাকার পানির কলে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা পরীক্ষা করা হয়েছে, বলা হচ্ছে তা স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। তবে প্ল্যান্ট থেকে বের হওয়া সাদা ধোঁয়া দেখে ধারণা করা হয়েছিল, সম্ভবত কোন একটি রিয়াক্ট্ররের কন্টেইমেন্ট ভেসেলে ফাটল ধরেছে।

আপডেটঃ [৩]

যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৩৪ জন বিশেষজ্ঞর একটি দল মঙ্গলবার জাপান পৌঁছেছেন। তারা তাদের নিজস্ব পদ্ধতিতে তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা নির্ধারণ করে দেখবেন।

আপডেটঃ [৪]

যুক্তরাষ্ট্রের নিউক্লিয়ার রেগুলেটরি কমিশনের প্রধান জানিয়েছেন চার নম্বর ইউনিটের ব্যবহৃত ফুয়েল রড (স্পেন্ট ফুয়েল রড) পরিবেশের সংস্পর্শে এসেছে এবং এর ফলে উচ্চমাত্রার তেজষ্ক্রিয় বিকিরণ ঘটেছে।

এছাড়া ইউনিট তিনের রিয়াক্টর কোর আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এই তথ্য স্বীকার করা হয়েছে।

জাপান সরকার এবং ইউ এস প্রতিনিধি দল আলাদা আলাদা বিপদসীমা ঘোষণা করেছেন। জাপান সরকার প্ল্যান্টের ২০ মাইলের মাঝে কাউকে না থাকার নির্দেশ দিয়েছেন, অপরদিকে ইউ এস প্রতিনিধি দল ৫০ মাইলের মাঝে কাউকে না থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।

আপডেট: [5]

হেলিকপ্টার থেকে পানি ছিটিয়ে জাপান চেষ্টা চালাচ্ছে রিয়্যাক্টর তিন ঠাণ্ডা করার জন্য। এছাড়া জাপান বলছে ব্যবহৃত ফুয়েল রড স্টোরেজে পানি না থাকার কারণে তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই তথ্য সঠিক নয়।

প্ল্যান্ট এলাকায় তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা প্রতি ঘন্টায় ৩.৮ মিলিসিভার্ট, কিন্তু এই মাত্রা ওঠানামা করছে। প্ল্যান্ট থেকে ৮০ কিলোমিটার দূরে তেজস্ক্রিয়তার মাত্রা বলা হচ্ছে প্রতি ঘন্টায় ১২.৫ মাইক্রোসিভার্ট, যা এখনো মানব-স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ নয়। শহরের পানিতে নিউক্লিয়ার মেল্ট-ডাউনের ফলে স্বল্পমাত্রার আয়োডিন পাওয়া গেছে, কিন্তু তা ঝুঁকিপূর্ণ নয়। এদিকে ২০ জন ব্যক্তিকে তেজস্ক্রিয়া জনিত অসুস্থতায় সনাক্ত করা হয়েছে।

নিয়ম হচ্ছে, ব্যবহৃত ফুয়েল রড কে ২৫ ডিগ্রি তাপমাত্রার নিচে পানির মাঝে সংরক্ষণ করা। কিন্তু, ইউনিট ৪, ৫ এবং ৬, তিন জায়গাতেই স্টোরেজের তাপমাত্রা অনেক বেশি। এই উচ্চ তাপমাত্রা পানি কে বাষ্পীভূত করে ফেলতে পারে, এবং জিরকোনিয়ামের আবরণ ভেদ করে ইউরেনিয়াম বাতাসে মিশতে পারে।

কৃতজ্ঞতাঃ স্পর্শ, স্বাধীন, ফারুক হাসান, জি. এম. তানিম.

বানান ও পরিভাষা কৃতজ্ঞতাঃ বুনোহাঁস

তথ্যসূত্রঃ

[১] http://www.bbc.co.uk/news/technology-12745128
[২] http://en.wikipedia.org/wiki/Fukushima_I_Nuclear_Power_Plant
[৩] http://www.bbc.co.uk/news/world-asia-pacific-12749444
[৪] http://www.straitstimes.com/BreakingNews/Asia/Story/STIStory_645204.html
[৫] http://www.reuters.com/article/2011/03/15/japan-quake-russia-nuclear-idUSLDE72E1TJ20110315
[৬] http://www.guardian.co.uk/world/2011/mar/15/japan-nuclear-crisis-tsunami-live
[৭] http://www.nucleartourist.com/events/meltdown.htm
[৮] http://nuclearfissionary.com/2011/03/14/what-does-nuclear-meltdown-mean/?utm_source=rss&utm_medium=rss&utm_campaign=what-does-nuclear-meltdown-mean
[৯] http://www.thestar.com/news/world/article/953503--japan-faces-catastrophic-radiation-leak-warns-people-to-stay-indoors
[১০] http://www.nytimes.com/2011/03/15/world/asia/15nuclear.html?_r=2
[১১] http://www.wbez.org/worldview/2011-03-14
[১২] http://bravenewclimate.com/2011/03/13/fukushima-simple-explanation/


মন্তব্য

মোরশেদ এর ছবি

জাপান এর দুর্যোগ এর পর এশিয়া মহাদেশ এর দেশ গুলো অনেক টা বিপর্যয় এর মধ্যে আছে।

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

এসিড রেইন ব্যাপারটা একটা গুজব, এটা জেনে স্বস্তি পেলাম। কিন্তু এই দুর্যোগটা কতটা ভয়াবহ হতে পারে এটা ভেবে দম বন্ধ হবার জোগাড়। তবে আশা রাখি এমনটি যেনো না হয়।

সবশেষে যেই ৫০ জন কর্মী এতটা ঝুঁকি নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের স্যালুট জানাই।

আমিও স্যালুট জানিয়ে গেলাম। আর আপনাকে ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি নিয়ে লেখার জন্য।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

এখনো পর্যন্ত প্ল্যান্ট এলাকা ছাড়া অন্য এলাকায় বিপদ ছড়ায় নি, অনেক প্যানিক ছড়িয়েছে। তবে ভবিষ্যতে কি হবে বলা যায় না।

যাযাবর ব্যাকপ্যাকার এর ছবি

নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের ফুয়েল কী ধরণের হয়, ফুকুশিমা প্ল্যান্টে কী ধরণের ব্যবহার হয় সংক্ষেপে যুক্ত করে দেয়া গেলে ভালো হয় মনে হয়। নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট বা ইউরেনিয়াম তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে উইকি লিংক রাখা যেতে পারে।
কার্যকর সংবাদ সূত্রগুলির লিংক দিয়ে দিলে ভালো হয়।

চলুক
পোস্ট আপডেট অব্যাহত রেখ।

___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

লিঙ্কগুলি আস্তে আস্তে যোগ করে দেব। আসলে কোন খবর থেকে কি পড়েছি আলাদা করা মুশকিল। লেখার শেষে যোগ করে দেব।

ফুয়েলের ব্যাপারটা পোস্টে যোগ করলাম। ধন্যবাদ।

স্বাধীন এর ছবি

লেখাটির দরকার ছিল। চলুক । কেউ নুতন কোন তথ্য পেলে এখানে জানিয়ে দিলে ভালো হয়।

মূল পোষ্টে ৪ গ্রে এর পাশে বন্ধনীর মাঝে ৪০০০ মিলিসেভার্ট লিখে দিলে ভালো হয়। অথবা সব একক মিলিসেভার্ট হলে ভালো হয়। না হলে কেউ ২ মিলিসাভার্ট পড়ে তারপর ৪ এ মৃত্যু পড়ে ভয় পেয়ে যাবে। আমি পেয়েছি তাই বললাম মন খারাপ

সবশেষে যেই ৫০ জন কর্মী এতটা ঝুঁকি নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের স্যালুট জানাই।

চলুক

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

যোগ করে দিলাম ১০০০ মিলিসেভার্ট। ধন্যবাদ।

কোন রিয়াক্টরে মেল্ট ডাউন শুরু হয়েছে কিনা সেই তথ্য কেউ জানলে পোস্টে জানানোর অনুরোধ করছি।

অতিথি ১ এর ছবি

চলুক

স্বাধীন এর ছবি

তেজষ্ক্রিয়তার মাত্রা বলা হচ্ছে সাত এর মধ্যে ছয়। সাত হচ্ছে সবচেয়ে খারাপ অবস্থা। তার মানে বেশ খারাপই অবস্থা। সুত্রঃ আল জাজিরা

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

চেরনোবিল দুর্ঘটনা কে সাত বলা হয়। দেখা যাক কি হয় শেষ পর্যন্ত।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি
দ্রোহী এর ছবি

চমৎকার তথ্যসমৃদ্ধ লেখা।

ভূতাত্ত্বিক হিসাবে বড় বড় ভূমিকম্পগুলো 'রিটার্ন পিরিয়ড' মেনে ফিরে আসে। ১৮৯৭ সালের ১২ জুন সিলেট-সিলং সীমান্তে ৮ মাত্রার একটি ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছিল। এই মাত্রার ভূমিকম্পের রিটার্ন পিরিয়ড ১০০-১২৫ বছর। সে হিসাবে ২০২০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ একটি ভয়াবহ ভূমিকম্পের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে।

ভূমিকম্পটি যদি সত্যিই সংঘটিত হয় তবে উদ্ধার প্রক্রিয়ার দুর্বলতায় কত লোক মারা যাবে তা কেউ বলতে পারে না। হয়তো ‌১ কোটি লোক মারা যাবে। মন খারাপ

আশার কথা হচ্ছে প্রায়শই যে ৪-৫ মাত্রার ভূমিকম্পগুলো হচ্ছে সেগুলো ভূ-অভ্যন্তরে জমে থাকা শক্তি বের করে দেয়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। সে হিসাবে যত বেশি অপেক্ষাকৃত দুর্বল ভূমিকম্পের মুখোমুখি হব আমরা ততবেশি বড় ভূমিকম্পের মুখোমুখি হবার আশংকা কমবে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

দ্রোহী, রিটার্ণ পিরিয়ড কী ডিস্ট্রিবিউশন অনুসরণ করে? এক্সট্রিম ভ্যালু ফ্যামিলির কেউ? ভূমিকম্পের জন্য কি স্পেসিফিক কোনটা ধরা হয়?

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

হুম। উইকির ভুক্তিটাতে আরো কিছু মনে হয় যোগ করা যাবে। আমি অনেকদিন আগে একটা কোর্সে রিটার্ন পিরিয়ড সম্পর্কে কিছু পড়েছিলাম। সেখানে এক্সট্রিম ভ্যালু ডিস্ট্রিবিউশনের কিছু কথাবার্তা ছিল মনে পড়ে। উইকিতে সে বিষয়ে কিছু নাই দেখলাম। যাই হোক, ধন্যবাদ হাসি

ফাহিম হাসান এর ছবি

আরেকটু ব্যাখ্যা করলে খুশি হই। একটা পোস্ট দেন, প্লিজ।

অপছন্দনীয় এর ছবি

আমার কাজিন থাকে ওখানে, খুব বেশী দূরে নয়। ফুকুশিমার ঘটনা জানার পর থেকেই দুশ্চিন্তায় আছি।

সবশেষে যেই ৫০ জন কর্মী এতটা ঝুঁকি নিয়ে এখনো কাজ করে যাচ্ছেন, তাদের স্যালুট জানাই।

যেসব কর্মীরা এখন ফুকুশিমায় কাজ করছেন, তারা সম্ভবত তেজস্ক্রিয়াতে মারাত্মকভাবে এক্সপোজড, হয়তো তাদের জীবনও নিশ্চিত সংকটে। তাঁরা সম্ভবত সেটা জানেন, এবং সেটা জেনেই এখনো রিয়্যাক্টর ঠাণ্ডা করার কাজ করে যাচ্ছেন।

স্যালুট তাঁদের জন্য।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

গুরুত্বপূর্ণ পোস্ট
যারা কষ্ট করে লিখেছেন তাদের অশেষ ধন্যবাদ।
আর যে ৫০ জন কর্মী এতো ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাদের স্যালুট

আশা করছি বড় ধরণের কোনো বিপর্যয় ঘটবে না।

চেরোনোবিল দুর্ঘটনা ও তার প্রতিক্রিয়ার কথা মনে পড়ে।

জাপানের জন্য খুব খারাপ লাগছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা কাটিয়ে দেশটা অবিশ্বাস্যভাবে উঠে এসেছিলো অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে। এই দুর্ঘটনা দেশটাকে বেশ অনেকটাই হয়তো পিছিয়ে দেবে মন খারাপ

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ইশতিয়াক এর ছবি

পাবনার রূপপুরে পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্হাপনের ব্যাপারে সরকার অনেক দূর এগিয়েছে।রাশিয়ার সহয়তায় বাংলাদেশ পারমানবিক শক্তি কমিশন এনিয়ে কাজ করছে। এর নিরাপত্তা নিয়ে এখনি ভাবা দরকার।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

খবরে শুনলাম, ৪ নাম্বারে আগুন লাগছে!
এবং কর্মীদেরকে তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

নাশতারান এর ছবি

পোস্টের লেখক ও গবেষকদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

_____________________

আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।

একজন পাঠক এর ছবি

আগুন নিয়ে খেলার পরিনাম এই হয়।
ইন্ডিয়াতে নাকি ২২ টা রিএক্টটর। কে জানে তাদের সিকুঊরিটি কেমন।
বর্তমান সভ্যতা কিভাবে বিনাশ হবে তার একটা সুত্র বোধহয় পাওয়া গেল।

নৈষাদ এর ছবি

চমৎকার ভাবে এই তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটার জন্য পোস্টের লেখক এবং সহযোগিদের ধন্যবাদ। গতকাল থেকে 'এখানে সেখানে' পড়ে ব্যাপারটা বুঝার চেষ্টায় ছিলাম...।

নুরুজ্জামান মানিক এর ছবি

চমৎকার ও জরুরি এ লেখার জন্য পোস্টের লেখক এবং সহযোগিদের ধন্যবাদ

নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)

পড়ুয়া এর ছবি

জাপানের জন্য খুব খারাপ লাগছে। বাংলাদেশের ঝুঁকি কতটা বুঝতে পারছি না। এছাড়াও দেশে পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করলে ভবিষ্যতে এরকম কোন দুর্ঘটনায় দেশের মানুষের জীবনের নিরাপত্তা থাকবে কতখানি?
ভাবতেও ভয় পাচ্ছি।

সৌরভ এর ছবি

কালকে থেকে বাংলাদেশের গোবরমস্তিষ্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রী, হুজুগের পাব্লিকের কাজকাম দেখে কোন খাটের নীচে ঢুকবো চিন্তা করতেসি। দেশে আমার ভাগ্নের স্কুলে নাকি ক্লাস হয় নাই তেজস্ক্রিয়তার ভয়ে। এক্ষুণি শুনলাম, দেশের মানুষের মাঝে গুজব ছড়াইসে - ৩০ কিমি বেগে বাতাস জাপান থেকে বাংলাদেশের দিকে যাইতেসে এসিড বৃষ্টি নামানোর জন্যে।

১. ওই জায়গায় ছয়টা নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের ৮.২ মাত্রার ভূমিকম্প সহ্য করার মতো করে বানানো হইসে। ভুমিকম্পের মাত্রা ওই জায়গায় ছিল ৮.৭ - যার মানে পাঁচ গুণ বেশি। কাজেই যা ঘটেছে, তাতে কারও হাত নাই।

২. যেখানেই যেই বিশেষজ্ঞর কাছে শুনি, মতামত হইলো, মেল্ট-ডাউন হলেও সরাসরি শরীরে প্রভাব ফেলবে তার চারপাশের পাঁচ কিলোমিটার সার্কলের জায়গায়। জাপান সরকার যেসব সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে, সেগুলো যথেষ্ট। পুরো জাপানেই হয়তো খুব সামান্য হলেও রেডিয়েশন ছড়াবে, এমনকি হয়তো সাগরের ওপারে কোরিয়া-চায়নায়ও ধরা পড়বে। কিন্তু এর পরিমাণ খুবই খুবই নগণ্য।
আপনি একবার এক্স-রে করলে যে পরিমাণ রেডিয়েশনের শিকার হন, খুব সম্ভবত একই পরিমাণ রেডিয়েশন হয়তো আপনার ভিতরে ঢুকবে ফুকুশিমার একেবারে ১০ কিমি এলাকায় এক ঘন্টায় থাকলে। এখন পর্যন্ত কোন বিশেষজ্ঞ পাই নাই - যে উল্টা কিছু বলসে।

৩. যারা বাংলাদেশে জাপানের নিউক্লিয়ার রিয়্যাক্টরের প্রভাব নিয়ে চিন্তা করে, তাদের কমেন্ট করার আগে তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গুগলে একটা সার্চ দেবার অনুরোধ জানাই।

৪. ফুকুশিমা চেরনোবিল নয়। কারণ চেরনোবিলে উন্মূক্ত কোর দিনের পর দিন পড়ে ছিলো, সোভিয়েত ইউনিয়ন মানুষকে সময়মতো সরায় নাই, ওই এলাকার তেজস্ক্রিয়তাযুক্ত ফসল দিয়া তারা আবার পরে খাবারও বানাইসে। সেই খাবার অনুন্নত দেশে রপ্তানিও করসে।

৫. ফুকুশিমায় প্রতি মুহূর্তে যা হইতেসে - জনগণ লাইভ দেখতেসে। সরকার প্রতি ঘন্টায় প্রেস ব্রিফ করতেসে, বেসরকারী গবেষণা সংস্থারা গিগা-কাউন্টার নিয়ে প্রত্যেকটা শহরে দাড়াইয়া আছে তেজস্ক্রিয়তা বাড়লো কি না দেখার জন্য।
আগামী কয়েকদিনে কী হবে?
আরও পানি ঢালা হবে। যেভাবে পারা যায়। এখন উদ্দেশ্য হইলো- সব কয়টা চুল্লীরে ঠান্ডা করা। যারে সবাই কইতেসে - কুল ডাউন। দুই সপ্তাহ লাগতে পারে, চার সপ্তাহও। পুরা ঠান্ডা হইতে।

৬. আমরা টোকিওতে কেমন আছি?
ভূমিকম্পের আগে যেমন ছিলাম, তেমনি। খালি সমস্যা হইলো খাবার দাবার মার্কেটে কম। লোকজন ট্রেনের ঝামেলা এড়ানোর জন্যে বাসায় থেকে অফিস করে অনেকে। যেমন - আমি। মাঝে-মাঝে আফটার-শক হয়, নতুন করে ভূমিকম্প হয়, যেগুলান জাপানে থাকলে লাইফে স্বাভাবিক ব্যাপার। কিছু জায়গায় মাঝে মাঝে পরিকল্পিত ভাবে কারেন্ট বন্ধ হয়।
মাঝখান থিকা বাংলাদেশ এমবেসির তেল চকচকে চাচামিয়া কাউন্সেলর আর ফ্রাস্ট সেক্রেটারিরা কোথায় হিরোশিমা-নাগাসাকি গিয়া কষ্ট পাবে, মফস্বল শহরে ম্যালা কষ্ট - সেইটা চাচা মিয়ারা একটু অভিজ্ঞতা অর্জন কইরা আসুক।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অসংখ্য ধন্যবাদ, আপনার আপডেটের জন্য। বাংলাদেশে অহেতুক নানা গুজব ছড়াচ্ছে। মিডিয়া, ফেসবুক, টুইটার, টেক্সট মেসেজ ইত্যাদির মাধ্যমে খবর অনেকটা চেইন রিয়াকশনের মতই ছড়াচ্ছে, এই প্রবণতা বিপদজনক।

ফারুক হাসান এর ছবি

এসিড রেইনের গুজবটা সম্ভবত প্রথম ছড়িয়েছে ফিলিপাইনে। তারপর গতকাল সিঙ্গাপুরেও অনেকের মুঠোফোনে এসএমএসের মাধ্যমে গুজবটা ডালপালা মেলতে শুরু করে। একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে আমার বউয়ের মোবাইলে এসএমএস আসে। আর আমাকে ফরওয়ার্ড করেন সিঙ্গাপুরেই থাকা এক আত্মীয়।

খুব সম্ভবত ফিলিপাইন/সিঙ্গাপুর/মালেয়শিয়া বসবাসরত প্রবাসি বাঙালিদের কাছ থেকেই এসিড রেইনের গুজবটা গতকাল বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে।

পরিস্কারভাবে এটা একটা গুজব। কারণ জাপান থেকে বাংলাদেশের দূরত্ব এত বেশি যে সেখানে জাপানের মেঘ কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বাংলাদেশে পৌছার কোনো সম্ভাবনাই নেই। আরে ভাই, প্লেনে জাপান থেকে বাংলাদেশ যেতেও তো সাত/আট ঘন্টা লাগে! বাংলাদেশের চেয়ে সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুরের চেয়ে ফিলিপাইন জাপানের কাছে। এখন পর্যন্ত এই দেশগুলির কোথায়ো এসিড রেইন হয় নাই। তাহলে বাংলাদেশে হয় কীভাবে?

সবচেয়ে বড় কথা, এই গুজবের বৈজ্ঞানিক কোনো ভিত্তি নেই। এসিড রেইন বলতে আমরা যেটা বুঝি তা হলো, যদি বাতাসে সালফার কিংবা নাইট্রোজেনের কোনো অক্সাইড গ্যাস হিসেবে থাকে তাহলে তাদের একটা সম্ভাবনা থাকে জলীয়বাস্পের সাথে বিক্রিয়া করে সালফিউরিক এসিড কিংবা নাইট্রিক এসিড তৈরি করার। এই এসিড বৃষ্টির সাথে মাটিতে পড়লে তখন আমরা একে বলি এসিড রেইন। প্রশ্ন হলো এই সালফার কিংবা নাইট্রোজেনের অক্সাইডগুলি বায়ুমন্ডলে আসে কীভাবে? এদের প্রধান উৎস হচ্ছে কয়লাচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলি। কয়লাতে প্রাকৃতিকভাবে বিদ্যমান সালফার বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লিতে বাতাসের সাথে বিক্রিয়া করে সালফারডাইওক্সাইডে পরিণত হয়। এই অক্সাইডই যখন চিমনি দিয়ে বের হয়ে বায়ুমন্ডলে মিশে তখনই এসিড রেইনের সম্ভাবনা থাকে।

তাহলে দেখা যাচ্ছে যে এসিড রেইনের প্রধান কারণ সেইসব বিদ্যুৎকেন্দ্র যারা কয়লা পুড়িয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে। এটা একটা আইরনি যে ফুকুশিমার মত নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টগুলি তৈরির পেছনে একটা কারণ ছিল কয়লা পুড়িয়ে এসিড রেইন যাতে না হয় সেটা ঠ্যাকানো। কারণ নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে সালফার কিংবা নাইট্রোজেনের অক্সাইড গ্যাসের কোনো নির্গমন হয় না। তাই এসিড রেইনের সম্ভাবনাও নেই।

আর আমরা কি বেকুবভাবে ভেবে বসে আছি যে, জাপান থেকে এসিড রেইন ধেয়ে আসছে আমাদের মাথায় পড়ার জন্য।

ফুকুশিমার প্লান্টে দূর্ঘটনার মূল বিপদ হচ্ছে তেজস্ক্রিয় বিকিরণ। প্রথমত, সেটার মাত্রা কত এবং যদি তেজস্ক্রিয় মেঘ ছড়ায় তাহলে কি পরিমাণ ছড়াবে - এগুলোই হচ্ছে এখনকার প্রশ্ন। উপরে সৌরভ যেমন বলেছেন, জাপানের বাইরে সেটা ছড়ানোর সম্ভাবনা আপাতত কমই।

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

মূলত এসিড রেইনের গুজবটা চোখে পড়ার পরই ভাবছিলাম, একটা পোস্ট লেখা উচিৎ। ঢাকায় কয়েকজনের সাথে কথা হচ্ছিলো, কথাবার্তার ধরন থেকে মনে হচ্ছিলো, কেয়ামত চলে আসছে। যা হচ্ছে, সেটাকে হালকাভাবে নেবার কোনো কারণ নেই, আবার অতিরিক্ত প্যানিকড হবারও প্রয়োজন নেই।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ফুকুশিমা জায়গাটি হনসু দ্বীপের পূর্ব উপকূলে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের তীরে অবস্থিত। বিস্ফোরণের জায়গা থেকে তেজষ্ক্রিয় কণাবাহিত জলস্রোত সাগরের পানিতে মিশলে কোন দিকে কীভাবে যেতে পারে সেটা বোঝার জন্য প্রশান্ত মহাসাগরীয় (বিশেষতঃ উত্তরঃপ্রশান্ত মহাসাগরীয়) স্রোত আর ঘূর্ণিগুলোর একটা ছবি দিলাম। ছবিটা পাওয়া যাবে Science Education through Earth Observation for High Schools-দের সাইটে।
তবে একটা কথা, এই স্রোত ও ঘূর্ণিগুলো মূলত "সারফেস কারেন্ট"; "আন্ডারওয়াটার কারেন্ট"গুলোর চরিত্র কেমন আমি নিশ্চিত নই। তাই এতে তেজষ্ক্রিয় কণাবাহিত জল যে ভারত মহাসাগর এলাকায় চলে আসবেনা সেটা বলা যাচ্ছে না। তাছাড়া তেজষ্ক্রিয়তা বহনকারী সামূদ্রিক জীবেরা যে কোন দিকেই চলে যেতে পারে। সুতরাং, তেজষ্ক্রিয়তা একবার মহাসাগরে পৌঁছালে তার প্রতিক্রিয়া হবে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে, দীর্ঘসময় ধরে, অনেক গভীর পর্যন্ত।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

ছবিটা থেকে স্রোতের গতিপ্রবাহ বুঝতে কারো অসুবিধা হলে জানাবেন, ব্যাখ্যা করে দেবো।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

তেজষ্ক্রিয় কণাবাহিত বাতাসের গতিপথ বোঝার জন্য উইকি'র এই চিত্রটা দেখুন।

উত্তর-পূর্ব দিক থেকে প্রবাহিত বাণিজ্য বায়ু এগুলোকে এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের দিকে নিয়ে যাবে। অমন কিছু হলে মূল ঝাপ্টাটা কোরিয় উপদ্বীপ, মেইনল্যান্ড চায়না, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া, ফিলিপাইন, বোর্নিও দ্বীপ (ব্রুনেই, মাওলেশিয়ার সাবাহ-সারওয়াক, ইন্দোনেশিয়ার কালিমন্থন)-এর উপর দিয়ে যাবে বলে মনে হচ্ছে।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

শামীম এর ছবি

বাংলাদেশে আসতে হলে এগুলোকে হিমালয় পর্বতমালা টপকাইতে হবে। অবশ্য সেটা মাত্র ৬-৮ কিমি উঁচু। তার আগেই বৃষ্টি/বরফ হয়ে ঝরে পরার সম্ভাবনা বেশি।

মহাশূণ্য থেকে প্রতিনিয়ত বিকিরণ আসছে যা আবহমণ্ডলে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় আটকে যাচ্ছে; আমার অনুমান বাতাসে ছড়ানো তেজষ্ক্রিয়তাও এভাবে কমে যাবে -- প্রাকৃতিক প্রশমণ ক্ষমতা (natural assimilation capacity) জিন্দাবাদ। চিন্তিত

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

গতকাল বিকেলে পারমানবিক গুজবের মেসেজটা মোবাইল টু মোবাইলে লক্ষ লক্ষ বার ট্রান্সমিট হচ্ছিল, তখন বাংলাদেশের কোন কোন অংশে কালো মেঘ দেখে লোকজন আরো ঘাবড়ে গেল, এই বুঝি এসে গেল ফুকুশিমার মেঘ। ফিলিপাইনের ব্যাপারটা বিবিসি থেকেই ছড়ায়। কিন্তু দেশীয় অতি সচেতন মানুষজন এটায় বাংলাদেশের নাম যুক্ত করে ছেড়ে দেয় বাতাসে।

রেডিয়েশানের বিপদ সবার আগে হতে পারে কোরীয়া চায়নার, কিন্তু ওদের আগে বাংলাদেশে চলে এল গুজবটা আগেভাগে।

কোথায় জানি পড়লাম একটা রিএকটরের মেঝে ফেটে গেছে যা দিয়ে তেজষ্ক্রিয় পদার্থ ভুগর্ভে চলে গিয়ে ভূগর্ভস্থ পানির ও অন্যন্য খনিজের সাথে মিশে দুষনের সৃষ্টি করতে পারে, যার প্রতিক্রিয়া এখনো অনিশ্চিত।

আনন্দী কল্যাণ ও অন্যান্যদের অশেষ ধন্যবাদ তথ্যগুলো আপডেট দেবার জন্য। এই পোষ্টে সবাই চোখ রাখলে আপডেট পাওয়া সহজ হবে।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

বাতাসের প্রবাহ আর পানির প্রবাহ হিসাব করে অনেকে বলছেন, চীনে তেজষ্ক্রিয়তা ছড়ানোর সম্ভবনা নেই।

সবুজ পাহাড়ের রাজা এর ছবি

ধন্যবাদ এই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি নিয়ে লেখার জন্য।

দেবোত্তম দাশ এর ছবি

মন খারাপ

------------------------------------------------------
হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন’রা কি কখনো ফিরে আসে !

একজন পাঠক এর ছবি
আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। এই লিঙ্কের কিছু তথ্য অনুবাদ করে পোস্টে যোগ করলাম।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কাজের কাজ করতেছ তোমরা ... ধন‌্যবাদ


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

জাপানে বিলি করা একটি জনসচেতনামূলক পিডিএফ ফাইলের লিঙ্ক এই মন্তব্যে যোগ করে দিলাম। আপনারা ডাউনলোড করে পড়তে পারেন। সংক্ষেপে ওই ফাইলের বক্তব্য নিচে লিখে রাখলামঃ

http://ifile.it/0dtaljk

১। নিউক্লিয়ার বিস্ফোরণ ঘটবার কোন সম্ভবনা নাই, কারণ নিউক্লিয়ার রিয়াক্টর বন্ধ।

২। হাইড্রোজেন বিস্ফোরণ হচ্ছে এবং আরো হতে পারে। ফুয়েলের তাপমাত্রা যেহেতু এখনো উত্তপ্ত, তাই মেটাল পাইপে অক্সিডেশন হচ্ছে, আর তা হাইড্রোজেন উৎপন্ন করছে। এই অতিরিক্ত হাইড্রোজেনের কারণে বিস্ফোরণ হচ্ছে। তাপমাত্রা কমিয়ে আনতে পারলে এই বিস্ফোরণ আর হবে না।

৩। এই হাইড্রোজেন বিস্ফোরণের কারণে কিছু তেজস্ক্রিয়তা বাইরে ছড়িয়ে পড়ছে, কিন্তু তা সাময়িক।

৪। তেজস্ক্রিয় পদার্থের সংস্পর্শে আপনি আসলে, তা বিপদজনক, কিন্তু তা তেজস্ক্রিয়তার মাত্রার উপর নির্ভর করে।
এখন পর্যন্ত সেই মাত্রা পাওয়ার প্ল্যান্টের আশেপাশের এলাকা ছাড়া স্বাস্থ্যঝুঁকির অনেক নিচে।

৫। তেজস্ক্রিয় পদার্থ কেউ যদি বাতাস বা পানির মাধ্যমে শরীরের মাঝে ঢোকায়, তা অনেক বেশি বিপদজনক। কিন্তু সঠিক মাস্ক, গ্লাভস এবং পোষাক পরিহিত অবস্থায় আপনি যদি তেজস্ক্রিয় পদার্থ নিয়ে কাজ করেন, তাহলে কোন বিপদ নেই।

ফাহিম হাসান এর ছবি
আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

এই পিডিএফ টা জাপান সরকার প্রচার করছেন সম্ভবত। আমার কাছে বেশ ক্যাজুয়াল মনে হয়েছে। বলা হয়েছে, তোমরা যেভাবে ফিভার থেকে নিজেদের রক্ষা করে, মাস্ক পরে, সেরকম রেডিয়েশন থেকেও বাঁচার জন্য মাস্ক পরে থাকো।

টোকিও থেকে বেশ কিছু দেশ তাদের নাগরিকদের সরিয়ে নিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র টোকিওর কাছাকাছি চারটি বেসক্যাম্প থেকে তার নাগরিকদের ভলান্টারি ইভাকুয়েশন শুরু করেছে।

http://news.blogs.cnn.com/2011/03/17/japan-quake-live-blog-obama-pledges-u-s-support/?hpt=T1

ফাহিম হাসান এর ছবি

বিশাল মন্তব্য হারিয়ে গেল। আপাতত অনেক ধন্যবাদ জানাই এরকম একটা পোস্টের অন্য। একটু পরপরই চোখ রাখছি আপডেটের জন্য।

ওডিন এর ছবি

প্রয়োজনীয় লেখাটার জন্য লেখকদের সবাইকে ধন্যবাদ।

হুজুগে বাঙ্গালী কালকে সারাদিন প্যানিক ছড়াইতেই ব্যস্ত ছিলো, এসেমেস পার হয়ে সোশাল মিডিয়াতেও। একটু খোজখবর করেও কেউ দ্যাখে নাই। তারা এইটা পড়ে অন্ততপক্ষে যদি কিছু বুঝে।

যাঁরা জীবনের ঝুকি নিয়ে রেডিয়েশান কন্ট্রোলের কাজ করে যাচ্ছেন, লিকুইডেটর্স'রা, তাদের জন্য প্রার্থনা থাকলো।

তুলিরেখা এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ আনন্দী। খুব প্রয়োজনীয় লেখা এইসময়ে। লোকে আবার কনস্পিরেসি টরেসি থিওরিও বানাতে শুরু করে দিয়েছে। কী আর বলবো। খুব ভালো হয়েছে এই ক্রমাগত আপডেট হতে থাকা লেখাটা আসায়। আসল কথাগুলো খানিকটা হলেও জানা যাচ্ছে।

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

হ্যাঁ, একটা কন্সপিরেসি থিওরি পড়লাম যে, জাপানে এই ভূমিকম্প আর সুনামি নাকি আম্রিকার কারণে, তারা ওয়েদার উইপেন মেরেছে জাপান তাক করে দেঁতো হাসি

তুলিরেখা এর ছবি

হ, আমিও শুনলাম। আগের হাইতির বেলাতেও নাকি তাই ছিলো। ওটা নাকি ছিলো ট্রায়াল! চিন্তিত
কী আর বলবো! যেখানে যা হয়, সবের পিছনেই নাকি তেনারা! যা কিছু হারায় গিন্নি বলেন কেষ্টা ব্যাটাই চোর! দেঁতো হাসি

-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

কেষ্টা সবসময় চোর না। কিন্তু প্রায়শই চোর।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

গৌতম এর ছবি

জাপানে বেশ কিছু সুহৃদ থাকাতে বিষয়টা নিয়ে খুব আতংকে ছিলাম। এই কদিনে কত যে উল্টাপাল্টা খবর শুনেছি! আপনার লেখাটা অনেক ধারণা পরিষ্কার করলো।

.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ

সাফি এর ছবি

ভাল উদ্যোগ নিয়েছেন আনন্দী। নিশ্চিত বিপদ জেনেও যেসব কর্মী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের স্যালুট

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

পোস্টে কিছু আপডেট দিলাম। পরিস্থিতি মনে হয় আগের চেয়ে খারাপ হচ্ছে, নিয়ন্ত্রণে কি করা যায় জানতে চাইলে ডিপার্টমেন্ট অব এনার্জির একজন প্রাক্তন অফিসিয়াল বলেন,

resulting in a situation that is "very, very serious," he told CNN. He said the next solution may involve nuclear plant workers having to take heroic acts. Asked to be more specific, he said, "This is a situation where people may be called in to sacrifice their lives. ... It's very difficult for me to contemplate that but it's, it may have reached that point."

অতিথি লেখক এর ছবি

চিন্তার বিষয় চিন্তিত

এম এছ নিলয়

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।