…তো বলছিলাম যে, মানুষ প্রাণিটা যন্ত্রের মতোই। মনুষ্যযন্ত্রের অস্বাভাবিক জটিলতার কারণেই একে রহস্যময় আর অযান্ত্রিক মনে হয়। আধ্যাত্মিক কোনকিছু আসলে মানুষের মধ্যে নেই। মানুষের যা কিছু, সবই তার নীতিমালায় লেখা থাকে। সেই নীতিমালা অমোঘ। সেখানে লেখা থাকে অনার্য সঙ্গীত কখন আরেকটা মানুষকে খুন করবে বা আদৌ করবে কিনা! সেখানে লেখা থাকে কখন কেউ সব নিয়মের ব্যতিক্রম করে কেবল ভালোবাসার জন্য ভালোবেসে ফেলবে আরেকটা মানুষকে। অথবা আদৌ কেউ কাউকে ভালোবাসবে কিনা! সেই নীতিমালার, সেই নিয়মের বাইরে যাওয়ার সাধ্য নেই কারোরই। নিয়মের যে ব্যতিক্রম করে, সেই ব্যতিক্রমটাও তাকে করতে হয় নীতিমালা মেনেই।
মানুষের নীতিমালা লেখা হয় চারটা বর্ণে। একটার নাম ইউরাসিল, একটার নাম থায়ামিন, একটার নাম গুয়ানিন আর একটার নাম সাইটোসিন। মানুষের নীতিমালা লেখার নিয়ম অনন্য। মানুষ তার বর্ণমালায় এক সারিতে লেখে। আর মানুষের নীতিমালা লেখা হয় দুই সারিতে। মানুষ এক সারিতে সে একসারিতেই পড়া যায়, কিন্তু মানুষের নীতিমালা এক সারিতে পড়া হলেও লেখা হয় দুই সারিতে।
উদাহরণ দিয়ে বোঝাই, মানুষের লেখা হয় এক সারিতে এরকম: ---------(প্রতিটি “-”কে একটি বর্ণ ধরে), আর মানুষের নীতিমালা লেখা হয় দুই সারিতে এরকম: ============, মানুষের নীতিমালায় কিন্তু দুই সারিতে দুইরকম লেখা হয়না। দুই সারিতেই থাকে একই লেখা। যদিও সে লেখা একটা সারির থেকে আরেকটা সারিতে থাকে উল্টো ভাবে। তারমানে, মানুষের কোন নীতিমালার উপরের সারির বাম থেকে ডানে (=>) যদি কিছু লেখা থাকে, তাহলে সেই নীতিমালার নিচের সারিতেও লেখা থাকবে একই কথা কিন্তু নিচের সারির ক্ষেত্রে পড়তে হবে উল্টোভাবে, মানে ডান থেকে বামে (<=)। যেমন, উপরের সারিতে যদি লেখা থাকে, “চিত্ত হেথা ভয় শূন্য উচ্চ হেথা শির” তাহলে নিচের সারিতে লেখা থাকবে, “রশি থাহে চ্চউ ন্যশূ য়ভ থাহে ত্তচি”। কথা কিন্তু একই কেবল দুটো লাইন দুই দিক থেকে লেখা।*
কী লেখা থাকে মানুষের নীতিমালায়? কী আবার! মানুষের জন্য সেখানে নিয়ম কানুন লেখা থাকে। আপনার চোখের রং বাদামী কারণ আপনার নীতিমালায় লেখা আছে, “এই ব্যক্তির চোখের রং বাদামী হইবে”। নীতিমালা যেহেতু বলেছি, সেহেতু বুঝতেই পারছেন, অনেক নীতি একসঙ্গে থাকে এখানে। অনেক মানে লাখে লাখে। নীতিগুলো লেখা থাকে একটার পর একটা। যেমন ধরেন, “চোখ বাদামী হবে কান একটু বেশি লম্বা নাক উঁচু পপটকজ কিচকিচ চামড়া কালো চুল বেগুনী ..........” এরকম। এরমধ্যে অনেক অংশ আছে যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে অর্থহীন। যেমন এখানের “পপটকজ কিচকিচ”।
তো মানুষের একটা নীতিমালায় এরকম হাজারো নীতি লেখা থাকে। মানুষের একটা আস্ত নীতিমালাকে বলে ডিএনএ (DNA), আর একেকটা নীতিকে বলে জিন (Gene)। মানুষের একটা নীতিমালা অনেক সংকুচিত হয়ে হিস্টোন নামক একধরনের প্রোটিনে জড়িয়ে থাকে। ব্যপারটি জটিল, অতটা আমাদের না জানলেও চলে, কেবল বলে রাখা দরকার যে হিস্টোনে জড়ানো মানুষের একটা নীতিমালা নানাভাবে কুঁচকে গিয়ে প্রায় ১০০০০ গুণ সংকোচিত হয়ে একটা ক্রোমোজোম গঠন করে। ভেবে দেখেন তাইলে মানুষের নীতিমালার সত্যিকারের দৈর্ঘ্য কত! মানুষের একটা কোষে প্রায় দুই মিটার লম্বা নীতিমালা লেখা থাকে। আর মানুষের সারা শরীরে যতো নীতিমালা লেখা থাকে তা পাশাপাশি জোড়া দিয়ে অন্তত ৫০০ বার সূর্য থেকে ঘুরে আবার পৃথিবীতে ফেরত আসা যায়।
তো বলছিলাম যে, একটা নীতিমালা নানাভাবে তালগোল পাকিয়ে একটা ক্রোমোজোম বানিয়ে থাকে। এর পর আবার একই রকমের ক্রোমোজোম দুটি করে জোড়া বেঁধে থাকে কোষের মধ্যে। একই রকমের এই দুটি ক্রোমোজোমের একটি মানুষ পায় বাবার কাছ থেকে আরেকটি পায় মা’র কাছ থেকে। একই রকম ক্রোমোজোম মানে আবার সবকিছু এক ভাববেন না। পার্থক্য আছে। জোড়া বাঁধা ক্রোমোজোমের নীতির বিষয় একই হলেও নীতি একই হবে এমন কোন কথা নেই। বুঝিয়ে বলি, ধরেন একটা ক্রোমোজমের জোড়ার একটাতে নীতি যদি এরকম লেখা থাকে:
“(চোখের রঙের নীতি)(গায়ের রঙের নীতি)(চুলের রঙের নীতি)...”
তাহলে সেই ক্রোমোজোম জোড়ার অপর ক্রোমোজোমটিতেও নীতি থাকবে একই রকম:
“(চোখের রঙের নীতি)(গায়ের রঙের নীতি)(চুলের রঙের নীতি)...”
কিন্তু এইসব নীতি একই হওয়ার কোন বাধ্যবাধকতা নেই, মানে একটাতে যদি লেখা থাকে:
“(চোখের রঙ বাদামী)(গায়ের রঙ কালো)(চুলের রঙ বেগুনী)...”
তাহলে অন্যটাতে লেখা থাকতে পারে এরকম:
“(চোখের রঙ লাল)(গায়ের রঙ নীল)(চুলের রঙ সবুজ)...”
পাশাপাশি থাকা দুটি নীতিমালায় যদি দুরকম লেখা থাকে তাহলে কী হবে? মানে একই জোড়ার দুটি নীতিমালার একটিতে যদি লেখা থাকে, “(চোখের রং হবে সবুজ)” আরেকটিতে যদি লেখা থাকে “(চোখের রং হবে বাদামী)” তাহলে কী হবে? এই কথাটার উত্তর দিয়েছি একেবারে প্রথম লেখায়। পাদ্রী যে কথা শতাব্দী আগে বলে গেছেন। কোন বিষয়ে দুটি দু’রকম নীতি থাকলে একটি প্রকাশিত হবে, আরেকটি প্রকাশিত হবে না। প্রকাশিত হবেনা বলে আবার সেই অপ্রকাশিত নীতিটি উধাও হয়ে যাবে, তা নয়। হয়ত সেই নীতিটি তার সন্তানের মধ্যে গিয়ে প্রকাশিত হবে। হয়ত সেটি তার সন্তানের সন্তানের মধ্যে প্রকাশিত হবে। আবার হয়তো কখনোই প্রকাশিত হবেনা। (এই নিয়মের ব্যতিক্রম আছে, সে বিষয়ে আগেই আলোচনা করেছি।)
মানুষের নীতিমালা থাকে তেইশ জোড়া। মানে মানুষের ক্রোমোজোম তেইশ জোড়া।
নারী আর পুরুষের মধ্যে অবশ্য এক জায়গায় মস্ত ব্যতিক্রম। (তা হবেই বা না কেন )। নারীর আছে তেইশটি ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা (ক্রোমোজোম)। সবগুলো দুটি করে মানে জোড়ায় জোড়ায় থাকে আর মোট ক্রোমোজমের সংখ্যা ছেচল্লিশ। কিন্তু পুরুষের আছে চব্বিশটি** ভিন্ন ভিন্ন নীতিমালা (ক্রোমোজোম)। প্রথম বাইশজোড়া ক্রোমোজোম নারী পুরুষের একই কিন্তু সেক্স ক্রোমোজোমের বেলায় নারী পুরুষ আলাদা। মানে নারীর সেক্স ক্রোমোজোমও অন্য সব ক্রোমোজোমের মতো একই রকম জোড়া (XX) কিন্তু পুরুষের ক্ষেত্রে সেক্স ক্রোমোজোম ভিন্ন রকম জোড়া (XY)। এই কথাটি অবশ্য সবারই জানা।
* আক্ষরিকভাবে সবসময় এটি না মিলতেও পারে। তবে ব্যপারটি এরকমই।
** এই কথাটি ব্লগে আমি এভাবে লিখলেও বিজ্ঞানে এভাবে বলা যায় না!
ভূমিকা: নাহ! এই পর্বটা জুতের হল না। কিন্তু আজকে খুব লিখতে ইচ্ছে করছিল। আর অনেকদিন ধরে একটা জিনিস আধালেখা করে রেখেছি, অসহ্য লাগছিল। এটাকে শেষ করা দরকার। আশা করছি আগামী পর্বে দায়সারা গোছের একটা সমাপ্তি টানতে পারব।
আগের লেখা (পড়তে হবেই এমন কোন কথা নেই ):
মানুষের নীতিমালা: পাদ্রীর গল্প
মন্তব্য
মাটির একটা কেস বানাইয়া
মেশিন দিছে তার ভিতর
রঙ বেরঙের বার্ণিশ করা
দেখতে ঘড়ি কী সুন্দর!!!!!
মন আমার দেহ ঘড়ি সন্ধান করি
বানাইয়াছেন কোন মিস্ত্রী
মন আমার দেহ ঘড়িইইই
দেহ ঘড়ির চৌদ্দ তালা
তার ভিতরে দশটি নালা
নয়টি খোলা একটি বন্ধ
...............
মন আমার দেহ ঘড়িইইই
মানুষের মধ্যে ব্যপক গোলমাল
পরের পর্বের অপেক্ষায়
_________________________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
এই সিরিজ পড়তে গিয়ে বার বার মনে হয়, স্কুল-কলেজের জীববিজ্ঞান বইতে পুরো ব্যাপারটা এভাবে না লিখলেও যদি ভূমিকা কিংবা বর্ণনাগুলো এরকম ভাষায় লেখা হত তাহলে আরো বেশি উৎসাহ নিয়ে পড়তো ছেলে-মেয়েরা।
বার বার দ্বি-সূত্রক DNA-এর ছবিটা ভেসে উঠলো মনে।
ছবিটা দিলেনা ভাইয়া??
চলুক...
----------------------------
জানতে হলে পথেই এসো,
গৃহী হয়ে কে কবে কী পেয়েছে বলো....
-----------------------------------------------------------------------------------------------------
" ছেলেবেলা থেকেই আমি নিজেকে শুধু নষ্ট হতে দিয়েছি, ভেসে যেতে দিয়েছি, উড়িয়ে-পুড়িয়ে দিতে চেয়েছি নিজেকে। দ্বিধা আর শঙ্কা, এই নিয়েই আমি এক বিতিকিচ্ছিরি
গতকালের খবরে দেখলাম যে অবশেষে কৃত্রিম প্রাণের সৃষ্টি সম্ভব হয়েছে । এটি একটি বৈপ্লবিক অগ্রগতি।
বিস্তারিত জানতে নীচের ভিডিওটি দেখুন।
নতুন মন্তব্য করুন