মোল্লা নাসিরুদ্দিনের একটা গল্প মনে পড়ল,
গ্রামের একটি লোক একদিন হন্তদন্ত হয়ে দৌড়ে এসে মোল্লাকে বলল, "সুখবর আছে মোল্লা সাহেব, আপনার পাশের বাড়িতে পোলাও-মাংস রান্না হচ্ছে"।
- "তাতে আমার কী!" মোল্লার জবাব।
- "আপনাকেও নিশ্চয়ই দাওয়াত করেছে...!"
- "তাতে তোমার কী?"
হাসির গল্প হিসেবে বলা হলেও এই গল্পটা আসলে দারুণ কষ্টের গল্প। ভয়াবহ দৈন্যের গল্প। এই দৈন্যতা মানসিক এবং আর্থিক। আর্থিক এইজন্যে যে, গ্রামের ওই লোকটির ক্ষমতা নেই একবেলা পোলাও-মাংস খাওয়ার। পোলাও-মাংসের সে বোধহয় কেবল নামই শুনেছে জীবনে। ক্ষুধার গ্লানি বলে বেড়ানো তার পাকস্থলি খেতে না পাক আর না পাক পোলাও-মাংসের নাম শুনলেই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। কোথাও তা রান্না হচ্ছে, কেউ তা খাচ্ছে সেটা সেটা ভেবে ভেবে সে পোলাও-মাংসের স্বাদ অনুমান করার চেষ্টা করে।
তবে এই গল্পে গ্রামের ওই লোকটির মানসিক দৈন্য আমাকে বেশি কষ্ট দেয়। কারো বাড়িতে পোলাও রান্না হলে তার কিছু যায় আসে না সেটি বুঝবার মতো মানসিক সক্ষমতা গ্রামের ওই লোকটির নেই। যে দৈন্যতা তার আত্মসম্মান বোধ ঢেকে দিয়েছে, সেই চাদর সরিয়ে একটুখানি মানুষ হয়ে ওঠার মানসিক শক্তি সে অর্জন করতে পারেনি।
গত কয়েকদিনের আমাদের মিডিয়ায় উৎসবের আমেজ আমাকে আমাদের তীব্র মানসিক দৈন্যের কথা মনে করিয়ে দিল। মনে করিয়ে দিল সোভিয়েত ইউনিয়ন সময়ের রাশিয়ান নেতা নিকিতা ক্রুশভ'র একটা উক্তির কথা। তিনি বলেছিলেন, "ঔপনিবেশিক মানসিকতা হচ্ছে পোষা কুকুরের গলার বকলসের মতো। পোষা কুকুরের গলায় দীর্ঘদিন বকলস বেঁধে রাখার পর তা খুলে ফেলা হলেও কুকুর ওই বকলস ছাড়া আর চলাফেরা করতে চায় না"।
ব্রিটিশ রাজপুত্তুরের বিয়ের খবরে আমাদের মিডিয়া উৎফুল্ল। বড় বড় খবর, প্রথম পাতায় খবর, বক্স বানিয়ে খবর, অনলাইনে স্পেশাল ইফেক্ট দিয়ে খবর, বেশিরভাগ তো আমার চোখ এড়িয়ে গেছে বলেই মনে হয়! খবরে রাজপুত্তুর, তার বাগদত্তা এবং তাদের উভয়ের চৌদ্দগোষ্ঠীর সব বিষয় উঠে এসেছে। আমরা জানতে পারিনি কেবল রাজপুত্তুর তার শাহী টয়লেটে (সম্মান দেখিয়ে ল্যাভেটরি অথবা রেস্টরুম বলতে হবে কি?) তার 'শাহী মল' ত্যাগের পর কোন ব্রান্ডের টিস্যু পেপার ব্যাবহার করেন। মিডিয়াকর্মীরা জানার চেষ্টা করেছিল নিশ্চয়ই। তবে কিনা শাহী হাগুখানায় গোলামদের প্রবেশাধিকার নেই বলেই জানি। জানলাম ব্রিটিশ রাজপুত্তুরের বিয়ের অনুষ্ঠান সরাসরি সম্প্রচারিতও হয়েছে আমাদের মিডিয়ায়। তবে এটা নতুন কিছু নয়। এই রাজপুত্তুরের বাবা মায়ের বিয়ের অনুষ্ঠান সম্প্রচার করেছিল আমাদের জাতীয় টিভি চ্যানেল।
আমি অনেক ভেবে বের করার চেষ্টা করলাম এই রাজপুত্তুরের বিয়েতে আমাদের কিছুতে কিছু যায় আসে কিনা! দেখলাম, খোদ ব্রিটিশদেরই বিশেষ কিছু যায় আসে না। এ কেবল নামে রাজপুত্তুর। সাধারণ জনগনকে এরা বিনোদন ছাড়া আর বিশেষ কিছু দেয় না। বিরক্তি লাগে এই দেখে যে, একবিংশ শতাব্দীতে এসেও এরা রাজবংশ আর রাজবংশের নিয়ম টিকিয়ে রেখেছে। শুধু রাজার ঔরসে জন্মেছে বলেই বিশেষ ক্ষমতার/সন্মানের অধিকারী সে। সে নিয়ে অবশ্য আমার মাথা ব্যাথা নেই। ব্রিটিশরা রাজার কুকুরকেও সম্মানের চোখে দেখে। রাজার হাগুকে তারা 'শাহী হাগু' বলে মনে করে। করুক! তাদের রাজা, তাদের হাগু তারা যা ইচ্ছে করুক। কিন্তু তাতে আমাদের কী!
আমাদের মিডিয়া এতো উৎফুল্ল কেনো! আমাদের মিডিয়ায় এতো আয়োজন কেনো? রাজপুত্তুর কী তাদেরকে নিমন্ত্রণ করেছে বিয়েতে? অথবা এটা কী এমন কোনো বিষয় যা আমাদের জাতীয় অথবা সামাজিক জীবনে কোনো প্রভাব ফেলে?
তাই বলে রাজপুত্তুরের বিয়ের সংবাদ কি প্রচার হবে না! নিশ্চয়ই হবে। পেরুতে একটা গাধার দুইটা লেজ গজালে সেটা পত্রিকায় আসবে। মানুষ পড়ে আমোদ পাবে, অবাক হবে। কোন মুলুকের রাজা গ্লাসে পানি না খেয়ে বদনায় পানি খায়, এটাও সংবাদে আসবে। পাঠক আমোদিত হবে। কোনো দেশের রাজার বিয়ে হয়ে গেলেও খবর আসবে, ঠিক যেরকম একজন তারকার বিয়ের সংবাদ হয়। কিন্তু আমাদের মিডিয়া যা করছে সেটার কারণ কী! কোনো দেশের 'নামকাওয়াস্তে' রাজপুত্তুরের বিয়েতে আমরা কেনো এতো বেশি উৎফুল্ল! ভিনদেশী রাজপুত্তুরের বিয়েতে আমাদের কী যায় আসে! আমরা তার বিয়েতে কোথায় কী আয়োজন হচ্ছে, কে কী বলল, কে কী করল তা জানতে/দেখতে এতো আগ্রহী কেনো!
মানসিক এই দৈন্যতা আমরা আর কতদিন পুষে চলব? আর কতদিন আমরা প্রমাণ করে চলব, গলার দৃশ্যমান বখলসটা না থাকলেও মনে মনে আমরা ঠিকই বাধা পড়ে আছি গোলামী আর আত্মসম্মানবোধহীনতার এক অদৃশ্য বখলসে!
মন্তব্য
বৌভাতে দাওয়াত পান নাই দেখে না পাওয়ার বেদনা থেকেই আপনি এই ছিদ্রাণ্বেষী ও চরিত্রহননকারী পোস্টটি দিয়ে সরকারের গোপন এজেণ্ডা বাস্তবায়নের ব্রাহ্মণ্যবাদী ষড়যন্ত্র হাসিল করছেন না তো ?
love the life you live. live the life you love.
আমিও দাওয়াত না পাওয়ায় আপনার পোষ্টের সাথে সহমত জানিয়ে গেলাম
love the life you live. live the life you love.
হ। দুলাভাইয়ের বিয়েতে মিডিয়াকর্মীরা দাওয়াত পেলো, আমি কেন পেলাম না! মিডিয়াকর্মী নই বলে কী আমি গোলাম হতে পারি না!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ইটা দেখে কি বুঝলাম?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বেশ মজা পেলাম পড়ে লাইক্স! আসলেই তো কেন আমরা এত লাফাই!
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
এ যুগের রাজপুত্তুররা কে কার ঔরসে জন্মায় তার কি কোন ইয়াত্তা আছে। বলি রাজপুত্তুর 'হরী' কী আসলেই যুবরাজ 'চালশের' ঔরসে জন্মেছিলেন?
এটা অফটপিক। রাজপুত্র আসলেও রাজার ঔরসে জন্মেছে কিনা তাতে কিছু যায় আসেনা।
[ ক্ষমতার অধিকারী বদলে ক্ষমতার/সন্মানের অধিকারী করে দিলাম।]
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
দুনিয়াজোড়া পচুর বিনুদুনের অভাব।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
মিডিয়ার এই আচরণ আমার বিনোদনের অভাব বলে মনে হচ্ছে না। বিনোদনের জন্য/সাধারণ জ্ঞানের জন্য এরকম খবর প্রচার করলে সেটা এতো গুরুত্ব সহকারে, জাঁকজমক করে প্রচার করার কথা নয়! খবর প্রকাশে/প্রচারে আসলে কোনো সমস্যা নেই। সমস্যা হচ্ছে আমাদের মিডিয়ার কাছে ব্যাপারটির গুরুত্বে! জয় অথবা তারেক জিয়ার বিয়েও এরকম গুরুত্ব পেয়েছিল বলে মনে পড়ে না।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
বিনোদন এর কথাটা সারকাজম ছিল।
আমাদের মিডিয়ায় কর্মরত ব্যক্তিদের অধিকাংশের কর্মদক্ষতা ও যোগ্যতা সম্পর্কে আমি অনাস্থা জ্ঞাপন করি।
তারপরও পৃথিবীর সব 'উন্নত' দেশের মিডিয়াও যেখানে ব্রিটিশ রাজপরিবারের কিছু হলেই মাতামাতি শুরু করে, তখন এই বিয়ের অনুষ্ঠান নিয়ে আমাদের মিডিয়ার অতি মাতামাতি দেখে আমার অবাক লাগে না, বরং মনে হয় তাদের দেখে আমাদের মিডিয়া আরো বেশি অনুপ্রাণিত হয়েছে। যেই জিনিস সারা বিশ্বে লাইভ দেখানো হচ্ছে, তা আমাদের টিভি চানেলগুলোও দেখাতে আগ্রহ না দেখাইলেই অবাক হতাম। অনলাইন ও প্রিন্টেড মিডিয়ার বাড়াবাড়ি বেশি দৃষ্টিকটু লাগলো, তার মধ্যে কিছু অসহনীয় ছিল, কিছু সহনীয় মনে হয়েছে। আফসোস যে রাজবধূর পোশাক কেমন হবে, সেই রগরগে খবর ছাড়াও বিবিসি বা সিএনএন বা অন্য আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলো অন্যান্য সংবাদগুলো কীভাবে উপস্থাপন করে সেই সব টেকনিকাল বিষয়গুলো দেখে আমাদের মিডিয়ার কর্মকর্তারা অনুপ্রাণিত হয় বলে মনে হয়না।
ব্যক্তিগতভাবে পরিচিতদের মাঝে আমি এই বিয়ে বা তার অনুষ্ঠান দেখা নিয়ে মাতামাতি কম দেখলাম, বিরক্তিই বেশি নজরে আসলো।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আচ্ছা, রাজপুত্তুর কি তার কাজ ফেলে পাবলিকের বিয়ে দেখতে বসে যাবে? যদি না দেখে তাইলে পাবলিক অর বিয়ে দেখে ক্যা? পাবলিকের জীবনে কি বিনোদনের এতোই অভাব!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
পত্রিকাগুলোর ট্যাবলামো।
বিয়ের অনুষ্ঠান দুই মিনিট দেখে একটা ব্যাপার বুঝলাম। টাকে চুল কখনও গজায় না...নইলে মিলিয়ন ডলারের কিছু অংশ যুবরাজের ইন্দ্রলুপ্তি ঢাকতে ব্যবহৃত হোত।
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অথবা হইতারে এইটাই দ্য নিউ 'ইন' থিং ইন ফ্যাশন!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
তেমনটা হলে আমার চেয়ে খুশি আর কেউ হবে না।
"দুনিয়াজোড়া পচুর বিনুদুনের অভাব।"
আপনার সাথে আমি একমত।আর শুধু আমাদের দেশের সংবাদমাধ্যমকে দোষ দিয়ে লাভ নাই।আমেরিকার সিএ্নএন পর্যন্ত তাদের ঘূর্ণিঝড়ের খবর বাদ দিয়ে রাজার(!) বিয়ের খবর দেখায়, সেখানে আমাদের সেখানে আর কি বা বলার থাকে।গণতান্ত্রিক শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেও সবাই অতীতের রাজতন্ত্রের কথা ভুলতে পারেনি,তাইত এইসব রাজপুত্রের বিয়ে (র খেলা) মানুষ এত আনন্দ নিয়ে দেখে।
মার্কিন মুলুকের আলাবামা, টেনেসি, জ্যাকসনমিসিসিপিতে টর্নেডো যে তান্ডব দেখিয়েছে; খবরে জানা গেছে বিগত ৪০বছরেও এমনটা ঘটেনি। খোদ প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাও স্বীকার করেছেন তার দেখা সবচে' ধ্বংসাত্নক টর্নডো এটি। তো সিএনএন এই খবর প্রদর্শনের পাশাপাশি রাজকুমার উইলিয়ামের জমকালো বিয়ের ক্লিপ দিনভরই দেখিয়ে গেছে। যার যেটায় মন সে সেটাই দেখবে বা দেখেছে। কিছু মানুষ নিজের দুঃখ ভুলে যদি অন্যের আনন্দে সামিল হয় আমি এতে তেমন দোষ দেখিনা। মাতামাতির ব্যাপারটা যদিও বিরক্তিকর। তবুও কেউ যদি তেমনটা করেই, আমার কী!
আমি দেখি। কেনো দেখি সেটা লেখায় বলেছি। "আনন্দে শামিল" হওয়া ব্যাপারটা নিয়ে কথা বলা যেত, এড়িয়ে গেলাম।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
রাজা বলে কথা। সম্মান দেখাবেন না মানে!!! আপনি ভুল করতে পারেন মিডিয়া করবে কেন????
আরিফ_শ্রাবন
এই আদেখলামো দেখতে খুব বিরক্ত লাগে।
তবে এর কভারিং-এ ফাটিয়ে দিয়েছে আনন্দবাজার। এখানে খুব আবেগাপ্লুত ভাবে তারা প্রয়াত প্রিন্সেস ডায়ানার বিয়ের সঙ্গে এই বিয়ের তুলনা করেছে; সে নিয়ে বিহ্বল হয়ে পড়ে সাংবাদিক (তিনি আবার মহিলা) লিখেছেন, “তাই তো ডায়ানার শেষকৃত্যে গাওয়া ‘হাইমেন’ গাওয়া হল আজকের অনুষ্ঠানেও।”!!! বিয়ের অনুষ্ঠানে hymn এর বদলে hymen নিয়ে আসা, আবাপ ছাড়া সম্ভব নয় বোধহয়...
ওয়াস্তাগফেরুল্লা!!! শ্রাবণীদি এইটা কী লিখলেন...!!!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
রাজার্পুতে করসে বিয়া
দুনিয়া জুড়া গিয়াঞ্জাম
আমরা হগল হার্পুতে
নাচছি দেখো ফালায় কাম।
সারা দুনিয়ার মানুষ-ই তো লাফাইলো শুধু আমাদের আর দোষ কি!
মিঃ ওবামাও দাওয়াত পান নাই কিন্তু তিনিও তো কম লাফ দিলেন না। আস্ত একখান শুভেচ্ছার ফরমান পাঠায় দিলেন আর আমরাতো........................
রাজার বিয়ে যদি আমাদের কিছু না হয়, অন্য কেউ আনন্দ পেলো দেখে সেই বিয়ে তাতেই বা আমাদের কি?
যেরকম মাসখানেক আগে থেকে মিডিয়া দেখানো শুরু করছিলো আমি ভাবছিলাম বাসর রাত পর্যন্ত লাইভ দেখাবে, দেখাইলো না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মানীদের কোনো মান রাখলা না তোমরা ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
মোহাম্মদ ফায়েদের কোনো নাতিটাতি নাই?
গোটা চল্লিশেক বছর ওয়েট কর। মোহাম্মদ ফায়েদের নাতি না থাকুক, মোহাম্মদ ধুগোর নাতি আরেকটা ইউরো টানেল ট্র্যাজেডি ঘটাইলো বইলা!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমাদের ভূখণ্ড থেকে রাজতন্ত্রের বিলুপ্তির পর রাজা কেবলমাত্র আমাদের শীশ্নাবরণেই ব্যবহ্রত হইতো। দুনিয়া জুইড়া প্রচুর ষড়যন্ত্র। কোত্থেকে প্যানথার, সেনসেশন, আরও কতো কি এসে রাজাকে বাজার থেকে খেদাইয়া ছেড়েছে। এখন আবার রাজার পোলার বিয়ের খাওন না পেয়ে গোস্যা। খালি ষড়যন্ত্র আর ষড়যন্ত্র চারদিকে!
অনার্যের লেখায় সহমত। গোলামীর বাকল্টা আমাদের গলা থেকে খোলা খুবই প্রয়োজন। অর্ধশতকেরও বেশি পার হয়ে গেলো। আর কতোকাল এই অদৃশ্য বাকলে আমরা বাঁধা পড়ে থাকবো?
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
সহমত লেখার সাথে। এই একবিংশ শতাব্দীতেও মানুষের রাজা/রানী নিয়ে লাফালাফি দেখে চরম বিরক্ত।
আসলেই! কী যে বিরক্তিকর এইসব ছ্যাবলামি!
::একাকিত্বের বিলাস আমার অনেকদিনের সাধ::
--------------------------------------------------------
দেয়ালে দেয়ালে মনের খেয়ালে/ লিখি কথা ।
আমি যে বেকার, পেয়েছি লেখার/ স্বাধীনতা ।।
অস্ট্রেলিয়ার বেশিরভাগ চ্যানেলেই সারাদিন ‘রয়্যাল ওয়েডিং’ এর নানা খবরাখবর ছিল, আর রাতে দুইটা চ্যানেলে লাইভ দেখিয়েছে (বাকিগুলো সম্প্রচার-সত্ত্ব কিনতে পারেনি বলে দেখায়নি)। আর আমেরিকাতে তো প্রলয়ংকরি ঘূর্ণিঝড়ের নিউজের মধ্যেও ‘রয়্যাল ওয়েডিং’ ব্যাপক কাভারেজ পেয়েছে সেখানকার মিডিয়াতে। ওরাও কি মানসিক দৈন্যে ভুগছে?
উইলিয়াম-কেট এর বিয়ে নিয়ে বাংলাদেশের মিডিয়ার মাতামাতি আমার কাছে অপ্রত্যাশিত ছিল না, প্রতিদিনকার বীভৎস খবরের ভীড়ে এই মাতামাতি টা খানিকটা অতিরিক্ত মনে হলেও আমি এটাকে নেতিবাচক ভাবে দেখি না।
শাসনক্ষমতায় নেই দুনিয়ার এমন রাজপরিবার গুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রভাবশালী হচ্ছে ব্রিটিশ রাজপরিবার, দেশের সরকারের উপর প্রভাব-প্রতিপত্তির দিক থেকে। জাপানি, থাই আর নেপালি রাজপরিবারও তাঁদের দেশে অনেক ক্ষমতাবান, অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে দেশের প্রধানমন্ত্রীও কোন নির্দেশ দেন না। আর ব্রিটেনে ব্রিটিশ রাজপরিবারের ক্ষমতা-প্রভাব খালি চোখে বোঝা মুশকিল, অনেকটা আমেরিকার ম্যাসোনিক বা ইহুদি গ্রুপগুলোর মতই, কারন তারা উপমহাদেশ বা আফ্রিকার নির্বাচিত/দখলদার রাজা-রানি-রাজপুত্রদের মত যথেচ্ছ ভাবে ক্ষমতার অপব্যাবহার করেন না। তাই বোধ করি, তাঁদের ভূমিকা জনগন কে ‘বিনোদিত’ করার চাইতে বেশী।
বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঔপনিবেশিক প্রজাসুলভ মানসিকতা আছে এটা সত্য। মনে আছে, এক যুগ সময়েরও আগে কলেজে থাকতে যখন বইপড়া উপলক্ষে বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রে যেতাম প্রতি শুক্রবার, তখন একবার শ্রদ্ধেয় আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার বলেছিলেন যে দেড় হাজার বছর পরাধীন থাকার পর আমরা এই বাংলাদেশ অঞ্চলের মানুষ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা পেয়েছি, এই সুদীর্ঘকালের পরাধীনতার শেকল আমাদের মানসিকতায় যে ভীতি-দ্বন্দ্ব-লোভ-প্রতিহিংসার জন্ম দিয়েছে তা অতিক্রমের জন্য তিরিশ-চল্লিশ বছর খুব বেশি সময় নয়।
তাই চারিদিকের এই সামাজিক-অর্থনৈতিক-সামরিক দুর্বৃত্তায়নের মাঝে যদি এক প্রেমিক যুগলের পরিণয় (হোক না কপালগুনে হওয়া রাজপুত্রের সাথে এক সাধারন তরুণীর বিয়ে) কিছু সময়ের জন্যও যদি দেশ-জাতি নির্বিশেষে কিছু মানুষকে আহ্লাদিত করে, তবে আমি নিজে সমপরিমান আহ্লাদিত না হলেও খুব বিরক্তও হই না।
নীল সমুদ্র
আমার কাছে যদি জিজ্ঞাসা করেন তাহলে বলব, হ্যাঁ ভুগছে। তবে আপনার প্রশ্নের জবাবে আমি অন্য একটা ব্যাপারে আপনার দৃষ্টি ফেরাতে চাই। আপনি কি লক্ষ্য করেছের আপনি সহ আরো অনেকেই এই পোস্টের মন্তব্যে বলতে চেয়েছেন, "আমেরিকা/অস্ট্রেলিয়া/উন্নত দেশ/অমুক/ওরা করেছে যখন আমরা করলে দোষ কী!" আপনারা কি ভেবে দেখেছেন যে আপনাদের ভাবনায় ওইসব দেশ/জাতির মানসিকতা আমাদের চাইতে সেরা। তারা যেটা করতে পারে সেটা আমরা করলে কোনো দোষ হয় না। ভাবখানা এমন যেন ওরা কোনো অন্যায়/ছোট কাজ করতে পারে না। নবুয়ত পাইছে নাকি ওরা?
এরপরও আমাদের মানসিক দৈন্য কোথায় তা আপনি বুঝতে না পারলে কিছু করার আছে বলে মনে হচ্ছে না।
আমিও সেটাই বলতে চেয়েছিলাম, আমাদের ক্ষুধিত পেট কোথাও পোলাও-মাংস রান্নার খবর শুনেই উৎফুল্ল হয়ে ওঠে। আমরা শুনে/দেখে/গল্প করে সেই পোলাও মাংসের স্বাদ নিতে চাই।
বুঝলাম। তো?
স্যারকে আমি একদিন জিজ্ঞাসা করেছিলাম ('সক্রেটিসের জবানবন্দী' নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল) মাত্র ৩০ বছরে একটা জাতির মানসিকতা বদলে যেতে পারে কিনা! গ্রীসে যেমনটা গিয়েছিল। স্যার বলেছিলেন, যেতে তো পারে অবশ্যই। আমাদের দেশেই দেখো না কেন! ৭১'এ এই জাতির মনোভাব কী ছিল আর মাত্র ৩০ বছর পরে কী হয়েছে!
আপনার কাছে প্রশ্ন, ঠিক কতবছর পরে আমাদের মানসিকতা বদলানো উচিত? যে সময়ে আমাদের হীনমন্যতাকে আমরা নীতিগতভাবে সঠিক বলে দাবী করব না!?
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ঠিক এই মানসিক দৈন্যতার কারনেই এখনো অদৃশ্য রাজতন্ত্রেই কিন্তু চলছে বাংলাদেশে। যেখানে শেখের পো, শেখের নাতি কিংবা জিয়ার স্ত্রী, জিয়ার পো - এরাই আসছে ঘুরে ফিরে। পরিবর্তন নেই, পরিবর্তন হবেনা।
একটা প্রশ্ন- ব্রিটিশ রাজ পরিবার কি কখনো তার সাবেক কলোনী গুলোর ওপর বছরের পর ধরে চালিয়ে যাওয়া অত্যাচার এবং শোষনের জন্য আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চেয়েছে?
লেখকের সাথে আমি পুরোপুরি একমত......একদম মনের কথা লিখেছেন.. .
এই অত্যাচারে গত কয়েকদিন ধরে নিউজ চ্যানেলগুলো দেখার কোনো উপায় নাই।
পোস্টের অনুভূতির সাথে একমত।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আর বইলেন না, ত্যক্ত হয়ে গিয়েছি একেবারে!
ঘূর্ণিঝড়ের বিষয়টা এমন ভাবে চাপা পড়ে গিয়েছে দেখে মন খারাপ হল খুব।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
রবি গুরু কি এমনি কইছে
বাঙালী মো্রা ভদ্র অতি পোষ মানা এ প্রাণ
বোতাম আটা জামার নিচে শান্তিতে শয়ান
একটা ব্যাপার পরিষ্কার করা জরুরী....
আলোচনায় কয়েকবার আসছে আমেরিকা অষ্ট্রেলিয়ার কথা।
কিন্তু এই দেশগুলা আর বাংলাদেশের মধ্যে তফাত আছে।
এই দেশগুলার আদি বাসিন্দারা ধ্বংশ হইছে, বর্তমানে শুধু মাটিটা আমেরিকা বা অষ্ট্রেলিয়ার, মানুষগুলা সব ইউরোপ আগতদের বংশধর
বাংলাদেশ ভারতরে তাই এদের কাতারে ফেলা যায় না
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কী বলেন!
আমেরিকা অস্ট্রেলিয়া নবুয়ত পাইছে জানেন না? এরা যা করবে সেটাই ভালো। ওরা কিছু করলে সেটা আমরাও সুন্নত মনে করে করতে পারবো! আমাদের জাতি/দেশ কোনো কিছু করতে পারবে কিনা তা জানার জন্য আগে দেখতে হবে অন্য কোনো দেশ তা করে বা করতে পারে কিনা!
মানী লোকের মান না রাখতে রাখতে আপনারা মানী দেশের মানও রাখতে চান না ইদানিং!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমিও আপনার কথায় এক মত প্রকাশ করছি।
আমাদের আরো উন্নত হওয়া উচিত।
labin rahman
নতুন মন্তব্য করুন