পত্রিকাওয়ালাদের কাছে বিনীত অনুরোধ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি
লিখেছেন অনার্য সঙ্গীত (তারিখ: শুক্র, ১৩/০৫/২০১১ - ১১:০৭অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একটি চিনামাটির ছোট প্লেটে যদি খুব ছোট এক টুকরো কাগজে আগুন জ্বালিয়ে সেটা একটা কাঁচের গ্লাস উপুড় করে ঢেকে দেয়া হয় তাহলে দেখতে দেখতে সেই কাঁচের গ্লাসটি ধোঁয়ায় ভরে ওঠে। এখন ঠিক তার পাশেই যদি আরেকটি চিনামাটির প্লেট একটি কাঁচের গ্লাস দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় ভেতরে কোনো জ্বলন্ত কাগজ ছাড়াই, আর আগের গ্লাসের ধোঁয়া দৈব উপায়ে পাঠিয়ে দেয়া হয় নতুন গ্লাসটির মধ্যে, তাহলে দর্শকের অবাক না হয়ে উপায় থাকেনা। ব্যাপারটি অদ্ভুত। দুটি চিনামাটির পাত্রে উপুড় করা গ্লাস ছিল পাশাপাশি। যার একটি ছিল ধোঁয়ায় ভরা আর অন্যটি শূন্য। যাদুর শক্তিতে দেখা গেল এক গ্লাসের ধোঁয়া কোন অদৃশ্য পথে চলে গেল অন্য গ্লাসে!

এই যাদুটি দেখানোর জন্য দুটি রাসায়নিকের প্রয়োজন হয়। হাইড্রোক্লোরিক এসিড, এবং অ্যামোনিয়া। কোনো হাত সাফাই অনুশীলন করার প্রয়োজন নেই। কেবল দ্বিতীয় যে গ্লাসটিতে প্রথম গ্লাসের ধোঁয়া পাঠিয়ে দেয়া হবে সেটির মধ্যে দুফোঁটা হাইড্রোক্লোরিক এসিড দিয়ে রাখতে হয় আগে থেকে। আর চিনামাটির পাত্রে মাখিয়ে রাখতে হয় একটুখানি অ্যামোনিয়া। প্রথম গ্লাসে কাগজ পুড়ে তৈরি ধোঁয়া একটু পরে এমনিতেই মিলিয়ে যেতে থাকে। দ্বিতীয় গ্লাসে আসলে প্রথম গ্লাসের ধোঁয়া পাচার করা হয়না। অ্যামোনিয়া মাখানো প্লেট যখন হাইড্রোক্লোরিক এসিড মাখানো গ্লাস দিয়ে ঢেকে দেয়া হয় তখন রসায়নিক বিক্রিয়ার ফলে ধোঁয়া তৈরি হয় সেখানে। দর্শক এতকিছু জানেনা বলে তার মনে হয় প্রথম গ্লাসের ধোঁয়া কোন অদৃশ্য উপায় চলে গেল দ্বিতীয় গ্লাসে!

বিজ্ঞানের এরকম মজার খেলা আছে হাজারো। একটুখানি পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট একটি কাগজে নিয়ে তার উপরে যদি একফোঁটা গ্লিসারিন দেয়া হয় আর তারপর আরেকটা কাগজ দিয়ে সেটাকে ঢেকে দু'আঙুলে জোরে চাপ দিয়ে ছুঁড়ে দেয়া হয় তাহলে সেটি খুব আশ্চর্যজনকভাবে দপ করে জ্বলে ওঠে!

আকাশে আতশবাজির খেলা খুব চমৎকার। কেউ যদি একটুখানি ধাতব সোডিয়াম জোগাড় করতে পারে তাহলে সে এই খেলাটি দেখাতে পারে পানিতেও। কোনো আয়োজনের দরকার নেই, ধাতব সোডিয়াম নিয়ে পানিতে ফেললেই তা আতশ বাজির মতো জ্বলতে থাকে। নিরাপদ দুরত্ব থেকে দেখার জন্য সে খুব চমকপ্রদ দৃশ্য!

ছোটবেলায় এক কবিরাজকে দেখেছিলাম গ্রামে একটি ছেলের জন্ডিসের চিকিৎসা করতে। তার কবিরাজির জন্য আগে থেকে সে চুনের পানি জোগাড় করে রাখতে বলেছিল। অসুস্থ ছেলেটিকে বেশ ঝাড়ফুঁক করে সে যখন চুনের পানিতে তার হাত ধুয়ে ফেলেছিল, তখন টলটলে স্বচ্ছ পানির বদলে তার হাত থেকে বেরিয়েছিল হলুদ রঙের পানি। পানির ওরকম হলুদ রং দেখে আর কারো সন্দেহ ছিলো না যে অসুস্থ ছেলেটির জন্ডিস নিজের হাতে তুলে নিয়ে কবিরাজ ধুয়ে ফেলে দিয়েছে! আমরা বাড়ির নচ্ছারেরা অবশ্য অন্য একটি রহস্য আবিষ্কার করেছিলাম। লুকিয়ে দেখেছিলাম জন্ডিস চিকিৎসার আগে আগে কবিরাজ মশাই বাড়ির বাগানের একটি গাছের পাতা দুহাতে ডলে নিয়েছিল। কবিরাজ চলে গেলে আমি নিজে সেই গাছের পাতা হাতে মেখে চুনের পানি দিয়ে ধুয়ে দেখেছিলাম। কবিরাজি না জানা আমার হাত থেকেও দারুণ হলুদ রং বের হয়েছিল সেদিন!

আশ্চর্যজনক ঘটনায় মানুষের আগ্রহ চিরন্তন। শিশুরা যে চোখ বড় বড় করে রূপকথার গল্প শুনতে চায়, সেটাও এই কারণেই। পুরাণে হিরণ্যকশ্যিপু নামের এক অসুর ছিল। তার দৈবশক্তি ছিল এমন যে, পানিতে বাতাসে অথবা মাটিতে তাকে মারা যাবেনা। দিনে অথবা রাতের বেলায় তাকে মারা যাবেনা। মানুষ অথবা পশুর কেউই তাকে মারতে পারবেনা। এই অসুরের গল্পটি বলে আমি সচলায়তনে আমার একেবারে প্রথমদিককার একটি লেখা লিখেছিলাম। সেই লেখাটি ছিল ভাইরাস নিয়ে। ভাইরাস হিরণ্যকশ্যিপুর চাইতেও ক্ষমতাশালী। জীবদেহের বাইরে থাকলে তার প্রাণ থাকে না, অথচ সুবিধাজনক জীবদেহের ভেতরে যেতে পারলেই সে প্রাণ ফিরে পায়! সে নিশ্বাস নেয় না, খায় না, ঘুমায় না, হাঁটাচলা করেনা, জন্মের পরে আকারে আয়তনে বৃদ্ধি পায়না, অথচ বাচ্চা দেয়! ভাইরাস যখন কোষের ক্ষতি করে তখন সে আসলে কোষের সঙ্গে যুদ্ধ করেনা, কোষের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। কোনো দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করে দৈব ক্ষমতায় সেই দেশের রাষ্ট্রপ্রধান হয়ে যাওয়ার মতো!

গবাদিপশুকে ওষুধ খাওয়াতে দেখেছিলাম ছোটবেলায়। একটুখানি ওষুধ অনেকখানি কলাপাতা মুড়ে গরু ছাগলের মুখে পুরে দেয়া হয়। কলাপাতার সঙ্গে গবাদিপশু ওষুধটুকুও খেয়ে ফেলে নিজের অজান্তে। হোমিওপ্যাথি ওষুধও অনেকসময় এই রকম উপায়ে খেতে দেয়া মানুষকে। মিষ্টি মিহিদানায় মাখিয়ে দেয়া হয় ঝাঁঝালো ওষুধ। এতক্ষণ বকবক করে গল্প শোনাবার কারণও অনেকটা এরকম। আমাদের পত্রিকাওয়ালাদের একটা অনুরোধ করা। অনুরোধ শুনতে কারো ভালো লাগে বলে জানা নেই। আচমকা অনুরোধ করে বসলে তাই সেটা না শুনে এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করে সবাই। কিন্তু আমার এই অনুরোধটি আমি শোনাতে চাই। অনুরোধে এতক্ষণ ধরে কলাপাতা মুড়লাম এজন্যেই!

প্রিয় সম্পাদকেরা, আমরা কি একটি পুর্নাঙ্গ বিজ্ঞান পাতা পেতে পারি। অন্তত সপ্তাহে একদিন? বিজ্ঞান রুপকথার চাইতেও চমকপ্রদ। নায়ক নায়িকাদের হেঁসেলের গল্পের চাইতেও কৌতুহলোদ্দীপক! আমার কথা মিথ্যে হলে আপনি এই লাইনটি পড়ছেন না!

বিজ্ঞান কেনো প্রচারের প্রয়োজন সেটি কাউকেই বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন নেই। আমি কেবল বলতে চাইছি, বিজ্ঞানের একটি পাতা হলে সেটি সবাই আগ্রহ নিয়েই পড়বে! বিজ্ঞানের খোলসটি খটমট। (দীর্ঘদিনের চেষ্টায় যারা বিজ্ঞানকে তিতা করে তুলেছেন তাদের কথা এখন বলতে চাইনা)। কেবল বলতে চাই আমাদের দৃষ্টিতে তিতা বিজ্ঞানকে কলাপাতায় মুড়ে উপস্থাপন করা যায়। কলাপাতায় মুড়ে দিলে উঠতি নায়িকার সঙ্গে কার প্রেমের সম্পর্ক হয়েছে, অথবা জমিদখল করতে গিয়ে কোথায় কে কাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে সেসব জানার চাইতে মানুষ বেশি আগ্রহ বোধ করবে বিজ্ঞানে। জেনেটিকসের নাম শুনলেই ছুটে পালাতে ইচ্ছে করে অনেকের। কিন্তু কাউকে যদি নিচের ছবিটি দেখিয়ে বলা হয় এই মাছগুলি অন্ধকারে জ্বলতে থাকে আর এটি করা হয়েছে জেনেটিকসের যাদুতে তাহলে অনেকেই জানতে চাইবেন এটি কিভাবে সম্ভব হয়েছে! (ছবিসূত্র: উইকিপিডিয়া)

অথবা এই লিঙ্কে গিয়ে অন্ধকারে আলো দেয়া তামাক গাছ দেখে আসতে পারেন। জেনেটিকসের বই আপনি কখনো উল্টে না দেখতে পারেন, কিন্তু অন্ধকারে আলো দেয়া গাছ কিভাবে বানানো হলো সেটি আপনার জানতে ইচ্ছে করছে বলে ধারণা করি! [কপিরাইটের সমস্যা আছে বলে আমি ছবিটিকে সরাসরি এখানে জুড়ে দিতে পারলাম না!]

*** *** ***

আমাদের প্রধান প্রধান পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞান পাতার নামে যেটি আছে সেটি কম্পিউটার প্রযুক্তি বিষয়ক একটি পাতা। কম্পিউটার অবশ্যই বিজ্ঞানের সেরা যাদুগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু সেটিতেই বিজ্ঞানের সব যাদু সীমাবদ্ধ নয়। কম্পিউটারের কথা থাকার সঙ্গে সঙ্গে তাই বিজ্ঞানের আর সব যাদুর কথাও লেখা দরকার। কম্পিউটার পাতাতে অবশ্য সত্যিকার বিজ্ঞানের কিছু বলা হয় বলে সচরাচর আমার চোখে পড়েনা। কম্পিউটার সহায়িকার মতো টিপস দেয়া হয় সেখানে! কী করলে কম্পিউটার ভালো থাকবে, কোন সমস্যাটি কিভাবে মেটানো যায় অথবা কোথায় কম্পিউটার বিষয়ক কী কর্মশালা হলো এরকম। পত্রিকাওয়ালারা কি জানেন আমাদের কম্পিউটার পাতাগুলো পড়ে কেউ একটি সফটওয়ার বানাতে আগ্রহী হয়ে ওঠে কিনা! আমাদের কম্পিউটার পাতা পড়ে কেউ কি মার্ক জুকারবার্গ অথবা মেহদী হাসান খান হতে চায়?

আমাদের শিশুরা সুপারম্যান অথবা স্পাইডারম্যান হতে চায়। সিনেমার নায়কদের মতো গায়েবী শক্তির অধিকারী হতে চায়। আমাদের শিশুরা কি আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং হতে চায় কখনো? তারা কি জানে, শ'খানেক সত্যিকারের সুপারম্যান মানুষের যতো কল্যাণ করতে পারত, আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং একা তার হাজার গুণে বেশী করেছেন? আমাদের শিশুরা কি অসুস্থ মানুষের কথা জেনে প্রতিজ্ঞা করে তাদেরকে বাঁচানোর? আমাদের শিশুরা কি প্রশ্ন করতে শিখেছে? তারা কি ভাবতে শিখছে? আমাদের শিশুদের কি প্রশ্ন করার জায়গা আছে?

প্রিয় সম্পাদকেরা, আপনাদের হাতে অনেক ক্ষমতা! আপনারা চাইলেই পারেন একটি শিশুর মনে বিজ্ঞানের স্বপ্ন বুনে দিতে! আপনারা চাইলেই পারেন বুড়োদের মন থেকে কুসংস্কারের অন্ধকার ঝেঁটিয়ে বিদায় করতে! আপনারা চাইলেই পারেন!

একটি পাতা ছাপানোর আগে যেটি সবার আগে চিন্তা আসতে পারে সেটি 'পাঠকের পছন্দ'! আমার এই লেখাটি লেখার উদ্দেশ্য আপনাদেরকে বোঝাতে চেষ্টা করা যে, বিজ্ঞানে পাঠকের আগ্রহের কমতি হবেনা কখনো। একটুখানি গল্প করে বিজ্ঞানকে বললেই সেটি রূপকথার চাইতেও লোভনীয় হয়ে উঠবে মানুষের কাছে। মানুষ রূপকথার আশ্চর্য ঘটনা কেবল ভেবে আনন্দ পায়। অথচ বিজ্ঞানের রূপকথা মানুষ নিজে ঘটিয়ে দেখতে পারে, ছুঁতে পারে, উপভোগ করতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা বিজ্ঞানকে জানা জরুরী। বিজ্ঞানের সঙ্গে থাকা জরুরী। পথে ঘাটের ভণ্ড পীর ফকিরেরা কবে জগৎ ধ্বংস হবে তা জানালে পত্রিকায় বড় বড় খবর হয়ে যায়। আমাদের পত্রিকা কি আমাদেরকে জানিয়েছে সুপারবাগের কথা? আমরা কি জানি ভারতে নয়াদিল্লির পানিতে সুপারবাগ পাওয়া গেছে? আমরা কি জানি, অল্প কিছু মহামানব যাঁরা সুপারবাগের বিরুদ্ধে লড়ছেন তাঁরা হেরে গেলে আমরা সত্যি সত্যি ধ্বংস হয়ে যেতে পারি!

প্রিয় সম্পাদকেরা, আপনারা নিশ্চয়ই আমার চাইতে অনেক জ্ঞানী। পত্রিকা, পাঠক, বিজ্ঞান এসব বিষয়ে আপনাদের স্পষ্ট ধারণা আছে। আপনারা স্পষ্ট ধারণা রাখেন মানুষের সম্পর্কেও। আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করলে জাতি হিসেবে আমাদের 'সম্ভাবনা' ছাড়া বস্তুত বিশেষ কিছু নেই। আপনারা নিশ্চয়ই বুঝতে পারেন, সম্ভাবনা আর আশাবাদের মাদকে তৃপ্ত থেকে আমরা আসলে বাস্তবতা থেকে মুখ ফিরিয়ে আছি। বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড়াবার জন্য, সফল এবং সুন্দর মানুষের একটি দেশের নাগরিক হবার জন্য আমাদের মহাশক্তিশালী যাদুকর প্রয়োজন। কে না জানে, বিজ্ঞানের চাইতে বড় যাদু আর হয় না। আপনারা কি আমাদের শিশুদেরকে যাদুকর হতে উৎসাহিত করবেন? আপনারা কি তাদেরকে পরিচয় করিয়ে দেবেন বিজ্ঞানের যাদুর ভুবনটির সঙ্গে? আপনারা কি তাদেরকে জানিয়ে দেবেন যে তারা চাইলেই যাদুকর হয়ে উঠতে পারে, আমাদের দেশটিকে, আমাদের পৃথিবীটিকে তারা চাইলেই বদলে দিতে পারে তাদের যাদুর ছোঁয়ায়?

আপনারা কি আমাদেরকে নিয়মিত একটি পূর্নাঙ্গ বিজ্ঞান পাতা পড়তে দেবেন?


মন্তব্য

সচল জাহিদ এর ছবি

সহমত জানিয়ে গেলাম।


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দৈনিক কালের কণ্ঠের বিজ্ঞান পাতা সন্ধানী, প্রতি মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়।
কালের কণ্ঠে টেক প্রতিদিন নামে প্রযুক্তির ( আসলে কম্পিউটারের ) একটি দৈনিক পাতা এবং টেকবিশ্ব নামে একটি আলাদা সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড প্রকাশিত হয়।
-
সমস্যা হচ্ছে এখন পত্রিকাগুলো মেধাশূন্যতায় ভুগছে। এমনকি নব্বই দশকের গোড়াতেও যে পরিমান মেধাবী তরুণের স্বপ্নের জায়গা ছিল মিডিয়া, এখন এর তিলপরিমান নেই। সেজন্য নতুন আইডিয়াগুলো নিয়ে তেমন কোনো কাজ হচ্ছে না। মৌলিক শেষ আইডিয়া বলতে এখনও বুঝায় সেই ফান ম্যাগাজিন আর পাঠক ফোরাম। পত্রিকা তৈরি হলেই এই দুই 'মাল' সেখানো গুজে দেয়াকে ফরজ মনে করা হয়।

যেখানে আইডিয়ারই মৌলিকত্ব নেই, সেখানে নতুন আইডিয়ার বাস্তবায়ন তো আর কঠিন। বিশেষ করে বিজ্ঞানের পাতা বিষয়ে রাগিবের আশংকাটিই সত্যি হওয়ার সম্ভাবনা প্রকট।
রোকেয়া রহমানরা সব পত্রিকাতেই আছেন, কোথাও তাঁরা অনেক বড় পদেই আছেন; এটাই যা সমস্যা।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সন্ধানী দেখেছি। কিন্তু সেটা আমার একেবারেই যথেষ্ট মনে হয়নি। আর তাছাড়া একা কালের কণ্ঠ নয়, সব পত্রিকাতেই বিনোদন পাতার মতো বিজ্ঞান পাতা থাকা জরুরী বলে মনে করি।

ইচ্ছে থাকলে ভালো একটা বিজ্ঞান পাতা বের করা যায় না তা কিন্তু নয় আরিফ ভাই। সাব-এডিটর বিজ্ঞানের কেউ না হোক সে বিজ্ঞান বোঝে এরকম একজন পার্টটাইম সহকারি রাখলেই পারে। পাতায় লিখলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা, শিক্ষার্থীরা। খবর টাইপের বিষয়গুলো প্রদায়করা লিখে ফেলল। এইগুলো আপনাকে জানানোর কিছু নেই। আপনি অনেক ভালো জানেন। আমি কেবল বলছি, চাইলেই তারা দারুণ একটা পাতা বের করে ফেলতে পারে। অভাবটা সদিচ্ছার। আপনি ঠিকই বলেছেন, সমস্যাটা মেধাশূন্যতা।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

আমাদের পত্রিকাগুলোতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞানসম্পন্ন মানুষেরা কি সংশ্লিষ্ট পাতার দায়িত্বে আছেন? খুব কম কিছু ব্যতিক্রম বাদে বেশির ভাগ পত্রিকার জন্য উত্তরটা হচ্ছে "না"। একই কথা অর্থনীতি, রাজনৈতিক বিশ্লেষণ, ক্রীড়া, সাহিত্য বা শিশুদের পাতাগুলোর জন্য প্রযোজ্য। ছাগল দিয়ে হাল চাষ করাতে গেলে, বা বিশেষজ্ঞের বদলে নামমাত্র টাকা দিয়ে সর্ববিদ্যাবিশারদ লেখক রাখলে হাল এমনটাই হবে। খোদ কতোজন পত্রিকার সম্পাদকের একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক হবার যোগ্যতা আছে?


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সমস্যাটা আসলে আরেক জায়গায় আছে। যোগ্য লোকজন কিন্তু মিডিয়ায় আসতে চায় না, কারণ দুনিয়ায় করার মতো অনেক শোভন পেশায় তাঁদের চাহিদা আছে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

যোগ্যরা মাঝেমধ্যে লিখতে পারেন হয়তো। সাব-এডিটররা যোগ্যদের খুঁজে বের করে ধর্না দিয়ে লেখা নিয়ে আসল।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

হাসিব এর ছবি

সমস্যা দুই দিকে। পত্রিকার দিক থেকে সমস্যা হলো ওখানে কাকে দিয়ে কী লেখাতে হবে এই জ্ঞানবিশিষ্ট লোকের অভাব আছে। অন্যদিকে সমস্যা হলো, শুদ্ধ করে দুই পাতা বাংলা লিখতে পারবে এরকম লোকের অভাব। তারা তাদের ফিল্ডে ঠিক আছে। কিন্তু সংবাদপত্রের স্টাইলে দুই পাতা সহজবোধ্য শুদ্ধ বাংলা লেখা কঠিন।

ফাহিম হাসান এর ছবি

খোদ কতোজন পত্রিকার সম্পাদকের একটি জাতীয় দৈনিকের সম্পাদক হবার যোগ্যতা আছে?

চলুক

বিকল্প হিসেবে পাঠকেরা লিখতে পারেন। ফ্রি-ল্যান্স কন্ট্রিবিউটার খুঁজে পাওয়া কঠিন হওয়ার কথা না।

স্বাধীন এর ছবি

আমার মতে প্রয়োজন নেই। পত্রিকাগুলোকে আর ঠেলেঠুলে উন্নত করার প্রয়োজন নেই। বরং ইন্টারনেট ভিক্তিক কিছু করার চিন্তা করেন। আমি পত্রিকার ভবিষ্যত দেখি কেবলি দৈনিক ঘটনাবলীর লিপিকারক হিসেবে, যার মূল্য আজ আছে, কাল নেই। কয়জন পত্রিকা জমিয়ে রাখে বা পুরোনো লেখাগুলো পড়তে চায়। কিন্তু ইন্টারনেট ভিক্তিক হলে যে কোন লেখা সব সময়ের জন্যে থাকছে, এবং চাইলেই গুগলের সাহয্যে খুঁজে নেওয়া যাচ্ছে। তাই আমি বলবো ব্লগগুলোকেই বিজ্ঞানের লেখা দিয়ে পূর্ণ করুন। ব্লগে মেধার অভাবও নেই। চাইলে যে কেউই একটি লেখা দিতে পারেন। সেই সাথে এই ব্লগ, বা ইন্টারেন্টের বিশাল রিসোর্স কিভাবে স্কুলে স্কুলে বা সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দেওয়া সম্ভব সেটা নিয়ে চিন্তা করা উচিত। উইকি প্রযুক্তি নির্ভর বিজ্ঞান বিষয়ক ওয়েব একটি বিকল্প হতে পারে, অথবা সচলেই "বিজ্ঞান" নামক একটি স্থায়ী ট্যাগ হতে পারে। এই সুযোগে বলে যাই সচলে বিষয় ভিক্তিক কিছু ট্যাগ (গল্প, কবিতা, অর্থনীতি, রাজনীতি, বিজ্ঞান, আন্তর্জাতিক ইত্যাদী) বাম পাশের কলামে যুক্ত করা যেতে পারে। তাতে যে কেউ যে কোন বিষয়ের ব্লগগুলোকে এক সাথে দেখতে পারবে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমার প্রস্তাব ছিল দারুণ একটা বিজ্ঞান পত্রিকার। কিন্তু এখন আমাদের নিয়মিত বিজ্ঞান পত্রিকা কিনে পড়ার অভ্যেস নেই। তাই দৈনিকের সঙ্গে পাতা জুড়ে দেয়া।
ব্লগের ব্যাপারটা করা যায়। কিন্তু সেটা সাধারণের কাছে পৌঁছাবে না। আমি বলতে চেয়েছি যেন স্কুলের ছেলেমেয়েরা চিত্রনায়িকা 'ইয়ে'র চেহারা এবং বর্তমান প্রেমিকের নাম জানার সঙ্গে সঙ্গে জেনে যায় কোষের ভেতের জিন বলে একটা জিনিস থাকে সেটা একটুখানি বদলে দিলে কোষটার আচরণও বদলে যায়। অথবা কৃত্রিম কোষ তৈরি করেছে মানুষ...
অন্তত যে শিশুরা সহজাতভাবেই বিজ্ঞানকে জানতে চায় তারা যেন সপ্তাহে একদিন পত্রিকায় তাদের কিছুটা খাবার পায়। আমি নিশ্চিত শিশুদের মধ্যে যারা শিশুপাতা'র অপেক্ষায় থাকে সারা সপ্তাহ তারা অনেকেই বিজ্ঞান পাতারও অপেক্ষায় থাকবে...

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

পৃথ্বী এর ছবি

আমার কাছে স্বাধীন ভাইয়ের প্রস্তাবটাই অধিক যৌক্তিক মনে হচ্ছে। কালের বিবর্তনে ইন্টারনেটের প্রসার ঘটছে, ভবিষ্যতে কাগুজে মিডিয়ার জনপ্রিয়তা কমে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ব্লগোস্ফিয়ারের বিজ্ঞান লেখকরা মিলিত হয়ে যদি একটি ব্লগ খুলে সেটিকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারেন, তাহলে আমার মনে হয় ছেলে-বুড়ো সবাইকেই আকর্ষণ করতে পারবে। ব্লগীয় মাধ্যমের একটা বড় সুবিধা হল যে পাঠকরা পাঠের পরপরই তাদের প্রশ্নগুলো পোষ্ট করে দিতে পারবেন, লেখক এবং পাঠক মিলে বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করতে পারবেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, কাগজের সাদামাটা লেআউটের চেয়ে ব্লগের সৃজনশীল উপস্থাপনাটা বেশি কাজে দিবে। নতুন প্রজন্মকে আকর্ষণ করতে চাইলে ফেসবুকের গ্রুপগুলোতে ব্লগের লিংক পোষ্ট করে এসে খুব সহজেই ব্লগটাকে পাবলিসাইজ করতে পারেন। বলাই বাহুল্য, পত্রিকা মেইনটেইন করার চেয়ে ব্লগ মেইনটেইন করা অনেক সহজ এবং সস্তা। বিজ্ঞান পত্রিকা খোলার সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতার কথা তো ইতিমধ্যে অনেকেই উল্লেখ করেছেন- মেধাশূন্যতা। এটা এমন একটা সমস্যা যার সমাধান খুব দ্রুত করা যাবে বলে মনে হয় না।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ব্লগ ইন্টারনেটে বিজ্ঞান পাতা নিয়ে কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু পত্রিকা যেখানে পৌছায় ইন্টারনেট সেখানে পৌঁছায় না। আমি বলতে চাইছি মফস্বল শহরের বালকটির কথা, বিজ্ঞানের একটি পাতা পড়বার জন্য যে সারা সপ্তাহ অপেক্ষা করবে।

যারা সন্দেশের স্বাদ জানে না তাদের মনে সন্দেশের লোভও জাগে না। বিজ্ঞানের স্বাদটা তাই টের পাইয়ে দেয়া দরকার সবার আগে। যার আগ্রহ আর সুযোগ আছে সে খুঁজে পেতে বিজ্ঞান জানার চেষ্টা করতে পারবে। আর সেই আগ্রহ সৃষ্টির জন্য নিয়মিত বিজ্ঞানকে তার সামনে হাজির করতে হবে কলাপাতা মুড়ে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

স্বাধীন এর ছবি

কিন্তু পত্রিকা যেখানে পৌছায় ইন্টারনেট সেখানে পৌঁছায় না।

সে কারণেই আমাদের টার্গেট হওয়া উচিত ইন্টারেন্টকে সেই বালকের কাছে পৌছানো। শুধু মাত্র ইন্টারনেট পৌছালেই তার কাছে বিজ্ঞান থেকে শুরু করে পুরো জগৎটাই মেলে ধরা হয়। ইন্টারনেট কিভাবে সহজ লভ্য করা যায় সেটা নিয়ে চিন্তা করা যায়। দেশে এক সময় মোবাইল অনেক খরচের ব্যাপার ছিল। ইন্টারনেটের অবস্থাও এখন একই। কিন্তু ধীরে ধীরে এটি আরো সহজ লভ্য হবে বলেই বিশ্বাস।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ইন্টারনেট যে সবার কাছে পৌঁছাতে হবে তা নিয়ে আমার কোনো দ্বিমত নেই। কিন্তু আগামী অন্তত ১৫ বছর পত্রিকাগুলোই মানুষের কাছে বিজ্ঞান পৌঁছানোর অন্যতম প্রধান অস্ত্র হয়ে থাকবে বলে আমি মনে করি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

guest_writerকৃত্যদাস এর ছবি

সহমত পোষণ করছি এবং সবাই কে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে অনুরোধ করছি।পুরান ব্যবস্থাকে গালি না দিয়ে আসুন আমরা নতুন কিছু ভাবি।

হাসিব এর ছবি

পত্রিকার মূল্য সম্পর্কে আপনার সাথে একমত না। পত্রিকা একটা চলমান ইতিহাস। এর ঐতিহাসিক মূল্য অবশ্যই আছে।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

পত্রিকাগুলো ঠেকাদেয়া কাজ চালায়। অনেক ক্ষেত্রেই মনে হয় তারা কন্ট্রিবিউশনের উপর নির্ভর করে। তরুণদের কাউকে ভালো বেতনে চাকরি দিবে তারা? দিলেও ঠিকমত বেতন দিবে? এই জামানায় নিজের খেয়ে অন্যের পত্রিকার মানুষ কেন চালাবে, যখন ইচ্ছে করলেই নিজেই পাবলিশ করা যায়।

তরুনদের ফেসবুক থেকে বেরিয়ে এসে ভালো কিছুর জন্য সময় দেয়া দরকার। আমি বলছি তরুণ উদ্যোক্তা হিসেবে আবির্ভুত হতে হবে। দু:খজনক হলেও সেরকম তরুণ আজকাল পাওয়া একটু কঠিন হবে বলে মনে হয়।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সমস্যা হচ্ছে পত্রিকাগুলোই বেশী মানুষের কাছে পৌঁছায়। আমার তো মনে হয় সরকারী/প্রেস কাউন্সিলের নির্দেশনা দেয়া উচিত যে "পত্রিকা বের করলে বিজ্ঞানের প্রসারে অংশ নিতে অনুরোধ করা গেল" দেঁতো হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রাতঃস্মরণীয় এর ছবি

আপনার প্রস্তাবের সাথে এক্কেবারে একমত। আমি বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউণ্ডের মানুষ না হলেও বিজ্ঞানসচেতনতা এবং তথ্যপ্রবাহে গুরুত্বদানে পক্ষপাতি। অনেক কিছুই জানার আছে যা দৈনন্দিন জীবনেও প্রয়োজনীয়।

গ্রামে দেখা একটা বিষয়ের কথা বলি। গরুর খুরা রোগ বা শরীরের ইনফেকশনে পোকা ধরলে হুক্কা টানার পর সেই পানি দেওয়া হতো। কয়েক সেকেণ্ডের মধ্যেই পোকা মরে মরে ঝরে পড়তে থাকতো।

------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

সবাই বিজ্ঞানের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকবে তা কিন্তু নয়। আমি বলতে চাইছি অন্তত সবাই জানবে যে বিজ্ঞান বলে একটা প্রাণি আছে দুনিয়ায়। হাসি

হুঁকার পানির মতো অনেক চিকিৎসাই গ্রামে প্রচলিত ছিল/আছে। সেগুলোর অনেকগুলো আসলেও ভালো/উপকারি। অনেকগুলো ক্ষতিকর। (আমার জানামতে ক্ষুরা রোগ হুঁকার পানিতে সেরে যাওয়ার কথা নয়। ক্ষুরা রোগের পোকা মরে পড়ে থাকতে দেখতে দেখতে পাওয়ারও কথা নয়। ওটা হয়তো কোনো পরজীবি হবে।)

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সজল এর ছবি

এবার কুমিল্লা বোর্ডে মোট এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলো ১১৬,০০০। যার মধ্যে বিজ্ঞান শাখায় ২১,০০০, মানবিকে ২৪,০০০ আর বাণিজ্য বিভাগে ৭৫,০০০। কাছাকাছি পরিসংখ্যান অন্য বোর্ডগুলোর ক্ষেত্রেও হওয়ার কথা। এ থেকেই বুঝা যাচ্ছে বিজ্ঞান, বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি আমাদের আগ্রহ কী হারে কমছে। পত্রিকার তো উদ্যোগ নেয়া দরকারই, তবে এর চেয়েও বেশি কিছু দরকার।

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

পত্রিকার উদ্যোগই সব নয় সে বিষয়ে একমত।

বিজ্ঞানের অনাগ্রহের কারণ আমাদের বিজ্ঞান ভীতি বলে মনে করি। আমাদের সময়ে নিয়ম ছিল "ভালো ছাত্রছাত্রীরা" বিজ্ঞান পড়বে "মাঝারি"রা বাণিজ্য এবং "খারাপ ছাত্রছাত্রীরা" পড়বে মানবিক বিষয়গুলো।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

হাসিব এর ছবি

বিজ্ঞান ভীতি কারণ নয়। কারণটা হলো অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। বিজ্ঞান পড়ে বাংলাদেশে প্রকৃত অর্থেই ক্যারিয়ার খুব উজ্জল না। অন্যদিকে বাণিজ্য পড়লে সম্ভাবনা অনেক।

হাসিব এর ছবি

সবাইকে একটা প্রশ্ন করি। পত্রিকা খারাপ বুঝলাম। কিন্তু ব্লগে বিজ্ঞান নিয়ে লেখা নাই কেন। এইটার কারণ কি মনে হয়? এই একই কারণ কি পত্রিকার ক্ষেত্রের প্রভাব ফেলে?

কৌস্তুভ এর ছবি

লেখা নাই কোথায়? এই অনার্য সঙ্গীতই তো নিয়মিত লেখেন, আরো কয়েকজন তো মাঝেমধ্যে লেখেন। তবে আরো বেশি পেলে ভালো হত, এইটা সত্যি।

কিন্তু, ইয়ে, বিজ্ঞান লিখতে গেলে তো আবার একটু রেখেঢেকে লিখতে হবে, নইলে কখন কী বলে ফেললে আবার কাদের মনে আঘাত লাগবে... তাই না কি? মন খারাপ

হাসিব এর ছবি

লেখা আসলে নাই। আপনি একটু গুনে দেখেন দৈনিক ব্লগগুলোতে কয়টা পোস্ট হয়। এরপর পার্সেন্টেজ করে দেখেন কত পার্সেন্ট বিজ্ঞান/টেকনিকাল বিষয়ে লেখা ব্লগ।
আর বিজ্ঞান জিনিসটা তো ছোট বিষয় না। শুধু বিবর্তন আর মহাজাগতিক বিষয় নিয়ে লিখতে হবে বিষয়টা তো এরকম না। আরো একটা কমন পার্সেপশন হলো আমরা সবাই আশা করি যা লেখা হবে সেটা সবার বুঝতে হবে। এই আশাটাও অনেকের লেখার গোড়া থেকে পানি সরায়। আমি এখনও ইলেকট্রনিক্স, গণিত, মেকানিক্স ইত্যাদি নিয়ে টেকনিকাল লেখা দেখার অপেক্ষায় আছি।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ব্লগে আসলেও লেখা আসে না। বোধহয় বিজ্ঞানকে সবাই লেখার বস্তু বলে ভাবে না। তাছাড়া পাঠকও পাওয়া যায় কম। বিজ্ঞানের ব্লগে আড্ডা জমে না। কি জানি! ইয়ে, মানে...

একটা কমন পার্সেপশন হলো আমরা সবাই আশা করি যা লেখা হবে সেটা সবার বুঝতে হবে।

আর সবার কথা জানিনা কিন্তু এই ধারণাটা আমি মাথায় নিয়ে চলি। কারণ প্রথমত আমি টেকনিকাল খুঁটিনাটি জানিনা, লিখতে গেলে ধরা খাবো, তাই "পাঠকের বোঝার সুবিধার্থে" মুলা দেখিয়ে খুঁটিনাটি এড়িয়ে যাওয়া। আর দ্বিতীয়ত আমি মনে করি যাঁরা বিজ্ঞানের টেকনিকাল খুঁটিনাটিতে আগ্রহী তাঁরা সরাসরি বই/জার্নাল/ইন্টারনেট পড়ে ব্লগের থেকে আরো ভালো এবং বিস্তারিত ভাবে জানতে পারেন। এরকম "আমরা" মিলে একটা গ্রুপ আছে যেখানে আমরা টেকনিকাল খুঁটিনাটিওয়ালা বিষয় সরাসরি শেয়ার করি।
অন্যদিকে বিজ্ঞানের হালকা কথাবার্তার ব্লগ যারা টেকনিকাল কথায় আগ্রহী নন এবং যাদের কেবল মূল বিষয়টা জানলেই চলে তাঁদের জন্য। অথবা অন্য সবার জন্য যাঁরা ভিন্ন "ফিল্ডের"। ব্লগ পড়ে আগ্রহ জাগলে আরো বিস্তারিত জানার সুযোগ সবসময়ই থাকছে। তবে এসবই অবশ্যই আমার ব্যক্তিগত চিন্তা।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

হাসিব এর ছবি

তো এই বোঝাবুঝির চিন্তার আল্টিমেট রেজাল্ট হলো লেখা না আসা। নাকি ভুল বুঝতেছি কোথাও? ধরা যাক আমি স্টকাসটিক ক্যালকুলাস নিয়ে একটা লেখা দিলাম। সেইটা বাংলায় পড়ে হয়তো যারা এই বিষয়ে আগ্রহী তারা ঐ জার্নাল বা বইয়ের থেকে সহজে বুঝবে। এখন আমি যদি এরকম একটা স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করাই যে সব লেখা সবার বুঝতে হবে, তাহলে আমার ঐ লেখা আলোয় আসবে না। কারণ ওরকম টেকনিকাল বিষয় হাজারে একজন বুঝবে কিনা সন্দেহ। বেশীরভাগ টেকনিকাল বিষয় একদম গোড়া থেকে শুরু করে লেখা যায় না। এর চেয়ে ব্লগের সুপরিসর স্পেইসটা ব্যবহার করে লেখা প্রস্তুত করা দরকার। সেইটা পাঠকপ্রিয়তা না পেলেও এইটা করতে হবে। নাহলে বিজ্ঞানের ভোকাবলারি দাড়াবে না কোনদিন।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

কোনো সন্দেহ নেই বাংলায় পড়লে পাঠক সহজে বুঝবে। অথবা বাংলায় ইংরেজিতে কোনো পাঠক সমান বুঝলেও বাংলায়/ব্লগে লেখা আসা দরকার।

মন্তব্যে আমি কেবল আমার ব্যক্তিগত চিন্তার কথা বলেছি। বলেছি, আমি নিজে কেন টেকনিকাল লেখা না লিখে সবার জন্য সহজপাচ্য করে লেখার চেষ্টা করি। তারমানে এই নয় যে টেকনিকাল লেখার বিপক্ষে আমি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রুবাইদ ইফতেখার এর ছবি

দারুন লাগলো! টাকা-পয়সা আর রাজনীতির এই যুগে বিজ্ঞান নিয়ে চিন্তাটা খুবই ভালো লাগলো। চলতি প্রজন্ম পিএসথ্রি/মোবাইল, ফেইসবুক নিয়ে খেলতে খেলতে প্লাস্টিকে পরিণত!

আসমা খান, অটোয়া। এর ছবি

অশেষ ধন্যবাদ প্রস্তাবটির জন্য। দেশে এখোনো সুলভে সংবাদ পত্র প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই রাখা হয়। কোন লেখক যদি বিজ্ঞানকে সুন্দর মোড়কে সংবাদ পত্রে ছাপায়, মানুষ অবশ্যই পড়বে। মেহেদি হাসান খানের আবিস্কারই বা যেকোন আবিস্কার, মানুষের ব্যবহারিক জীবন কত সহজ করেছে সেটা যদি নিয়মিত পত্রিকায় আসে, আমাদের নুতন প্রজন্মের আগ্রহ হবে, মানুষ বিস্মিত হতে চায়, ছোট্ট একটে বাচ্চার হাতে এক বার আইফোন দিলেই প্রমান মিলবে হাতে নাতে। সাধারন মানুষের কছে বিজ্ঞান যাদু, যাদুর পিছনের যুক্তি দিয়ে শিশুর মনের মানচিত্র যদি সমৃদ্ধ করা যায়, সেটা সংবাদ পত্রে বা ইন্টারনেটের ব্লগে, খুব ভালো একটি উদ্যেগ। সাধারন মানুষের মনে বিজ্ঞান সচেতনতা সমকালের পটভুমিতে একটি জরুরি বিষয়। কিন্ত দরকার হচ্ছে আপনার মত লেখকের!!! ধন্যবাদ অনার্য সঙ্গিত!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আপনি যেটা চাইছেন সেটা সম্ভব না। পত্রিকার সম্পাদকেরা একটা পাতা হয়তো খুলে দিতে পারবেন, কিন্তু সেটা চালাবে কে?
তেমন যোগ্য লোক কই? যারা যোগ্য তারা কেউ পত্রিকার চাকরি করবে না।
নাহয় চালানোর লোকও পাওয়া গেলো, কিন্তু লেখবে কে? বিনোদন পাতায় লেখার জন্য একটা শিক্ষিত ছেলে পাওয়া যায় না যে শুদ্ধভাবে বাক্য লিখতে পারে!
আপনি নিশ্চয়ই পত্রিকাগুলার অবস্থা জানেন, সেখানে এই চাহিদা আপনি কিভাবে করেন?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

নজরুল ভাই, যারা যোগ্য তারা কেউ কি সপ্তাহে একদিন এসে দেখে দিতে পারবে না? আপাত বিজ্ঞানমূর্খরা নাহয় সারা সপ্তাহ কম্পোজ/প্রুফ/ট্রেসিং/পেস্টিং দেখল। কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থীরা, পেশাজীবিরা লিখলেন (একজন হয়তো দুমাসে একটা লেখা দিলেন)। নিউজ টাইপ বিষয়গুলো কন্ট্রিবিউটররা লিখল। দুয়েকটা লোক কি আর পাওয়া যাবে না পাতাটা চালিয়ে নেয়ার মতো! ইয়ে, মানে... ঘষে মেজে যেভাবে অন্য পাতাগুলো চলছে সেভাবেই নাহয় বিজ্ঞান পাতাটাও চলুক। কেবল সপ্তাহে একদিন বিজ্ঞান বোঝেন এমন কেউ পাতাগুলোতে একবার নজর বুলিয়ে দেখলেন সব ঠিক আছে কিনা।

আমি বর্তমান অবস্থা জানিনা। জানতাম যে কন্ট্রিবিউটর বাতাসে ওড়ে, ধরলেই হয়। গোটা কয়েকের মধ্যে দুয়েকটা ভালো পাওয়া যায়। এখন কি দেশ আসলেই কন্ট্রিবিউটর শূন্য? অবশ্য সব পত্রিকাওয়ালারই সবচে বড় বাহাদুরী হচ্ছে এইসব বাচ্চা ছেলেপেলেগুলার ঘাম ঝরানো কয়েকশটা টাকা মেরে দেয়া...।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দেশ আসলেই কন্ট্রিবিউটর শূন্য। তবে এর চাইতেও ভয়াবহ হচ্ছে দেশ আসলে সাব-এডিটর শূন্য। মোটামুটি বাংলা টাইপ জানতে পারলেই সাব-এডিটর হওয়া যায় এ যুগে, কারণ চাহিদার তুলনায় যোগান অনেক কম। মেধাবীদের কাছে শতেক অপশন, তাঁরা এই কম পয়সার অনিশ্চয়তাময় পেশায় কেন আসতে চাইবে?

আমি ব্যক্তিগত ভাবে দুইটি পত্রিকার দুইজন সাব-এডিটরকে চিনি যারা গুগুলে সার্চ করতে হয় কীভাবে, এটাও জানে না। রসিকতা নয়, এটাই চরম বাস্তবতা। অধিকাংশ অবশ্য সেটা জানে, তবে কোনটা ফান আর কোনটা সত্যি, সেটা বুঝতে পারে না। 'সূত্র: ইন্টারনেট' হচ্ছে এযুগের সবচাইতে বেশি মুদ্রিত শব্দগুচ্ছ, ওয়েবসাইটের নাম প্রকাশের বোধটুকুও জন্মেনি।

তবে বটম লাইন হচ্ছে, চেষ্টা ও উদ্যম থাকলে চমৎকার বিজ্ঞানের পাতা বানানো ঐ 'সূত্র: ইন্টারনেট' এর সুবাদেই খুব ভালোভাবে করা সম্ভব।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

সাব এডিটর শুধু না, বিখ্যাত জাতিয় দৈনিকের ফিচার এডিটরও আছে এই কোয়ালিটির...

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধকল সামলাতে না পেরে হার্টফেল করার ইমো!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

guest_writerকৃত্যদাস এর ছবি

আপনার লেখা টা পড়লাম, খুব বেশি নাড়া দিতে পারল না আমাকে। আপনি কি বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি দুটাকে আলাদা ভাবে দেখেছেন? নাকি দুটিকে আপনি এক করে ফেলেছেন? বিজ্ঞান আর প্রযুক্তি কিন্তু আলাদা জিনিস।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

বিজ্ঞান আর প্রযুক্তিকে আমি এক করে দেখি নাকি আলাদা করে দেখি সেটা নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির পার্থক্য নিরুপণ এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। সেজন্য এই বিষয়ক আলোচনায় যাচ্ছি না।

একটি লেখা সব পাঠককে নাড়া দেবে না সেটাই স্বাভাবিক। আপনার যদি আমার প্রস্তাবে কোথাও দ্বিমত থাকে তাহলে জানাতে পারেন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রানা মেহের এর ছবি

ভালো লেখা

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

তাসনীম এর ছবি

সহমত।

ছোটবেলায় এক কবিরাজকে দেখেছিলাম গ্রামে একটি ছেলের জন্ডিসের চিকিৎসা করতে। তার কবিরাজির জন্য আগে থেকে সে চুনের পানি জোগাড় করে রাখতে বলেছিল। অসুস্থ ছেলেটিকে বেশ ঝাড়ফুঁক করে সে যখন চুনের পানিতে তার হাত ধুয়ে ফেলেছিল, তখন টলটলে স্বচ্ছ পানির বদলে তার হাত থেকে বেরিয়েছিল হলুদ রঙের পানি। পানির ওরকম হলুদ রং দেখে আর কারো সন্দেহ ছিলো না যে অসুস্থ ছেলেটির জন্ডিস নিজের হাতে তুলে নিয়ে কবিরাজ ধুয়ে ফেলে দিয়েছে! আমরা বাড়ির নচ্ছারেরা অবশ্য অন্য একটি রহস্য আবিষ্কার করেছিলাম। লুকিয়ে দেখেছিলাম জন্ডিস চিকিৎসার আগে আগে কবিরাজ মশাই বাড়ির বাগানের একটি গাছের পাতা দুহাতে ডলে নিয়েছিল। কবিরাজ চলে গেলে আমি নিজে সেই গাছের পাতা হাতে মেখে চুনের পানি দিয়ে ধুয়ে দেখেছিলাম। কবিরাজি না জানা আমার হাত থেকেও দারুণ হলুদ রং বের হয়েছিল সেদিন!

ক্ষুদে বিজ্ঞান যে বড় হয়ে বড় বিজ্ঞানী হবে সেটা তো জানা কথা। মর্নি শো'জ দ্য ডে।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

কৌস্তুভ এর ছবি

ক্ষুদে বিজ্ঞান যে বড় হয়ে বড় বিজ্ঞানী হবে সেটা তো জানা কথা। মর্নি শো'জ দ্য ডে।

চলুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

তাসনীম ভাই, কৌস্তুভ'দা, আমি ল্যাবরেটরির দারোয়ান। এর বেশী যোগ্যতা নেই। হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

ডুপ্লি...

শাহেনশাহ সিমন এর ছবি

ঠিক!

_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না

অমিত আহমেদ এর ছবি

দৈনিক বিজ্ঞানের পাতা সংবাদপত্রে না থাকাই ভালো। বিজ্ঞান নিয়ে লেখার মতো খুব বেশি লোক নেই। যোগ্য যাঁরা আছেন তাঁরা লেখেন না, কিংবা নিয়মিত লেখেন না। তাদের কাছে ধরনা দিলে কালেভদ্রে কিছু লেখা হয়তো আদায় করা যাবে, তবে নিয়মিত পাতা চালানো যাবে না। তখন তেল ছাড়া/পানি চালিত গাড়ির খবর পাতায় জায়গা করে নেবে। আর সহ সম্পাদককে বিজ্ঞান জানা মানুষ হতেই হবে। না হলে বাথরুম ইন্টারনেট কিংবা ডকস মোশনের মতো কেলেঙ্কারি হতেই থাকবে।

সংবাদপত্র বাদ দিয়ে বিকল্প কিছু ভাবা দরকার।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

তবে কি আমরা কেবল নায়িকার হেঁসেলের খবর আর গুপ্ত'দাই পড়তে পাবো! মন খারাপ

বেশ কিছু আশঙ্কা আছে অবশ্যই কিন্তু সেগুলো ঠেকাতে হবে ধরে নিয়েই শুরু করা দরকার মনে করি। আমাদের পত্রিকার স্ট্যান্ডার্ড খারাপ তাই আমরা পত্রিকা ছেড়ে দেবো নাকি স্ট্যন্ডার্ড'টা ভালো করার চেষ্টা করব। আমাদের ব্লগাররা চাইলেই বিজ্ঞান পাতা চমৎকার লেখায় ভরিয়ে দিতে পারেন বলে মনে করি আমি। একটা পাতা শুরু হলে লেখক বাড়বে বলেও আমার বিশ্বাস।

আসল কথা হচ্ছে বিজ্ঞানের জ্ঞানকে মানুষের দরোজায় পৌঁছানো প্রয়োজন। পত্রিকা/টিভি সেটা করতে পারে। সারা দেশেই একটা বিজ্ঞানের আবহ দরকার।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

সহমত। বিজ্ঞানের পাতা নেই পশ্চিমবঙ্গের কোনো সংবাদপত্রেও। আনন্দমেলায় একটা পাতা বিজ্ঞান থাকে, তবে সেটাও ট্যাবলয়েড-টাইপেরই। পূজাবার্ষিকী আনন্দমেলা-শুকতারা এগুলোয় অবশ্য বিজ্ঞান নিয়ে একাধিক ভালো প্রবন্ধ থাকে।

আনন্দমেলা-টেলিগ্রাফের জনপ্রিয় বিজ্ঞান-লেখক পথিক গুহ-র একটা ইন্টারভিউ নিয়েছিলাম গত বছর। উনিও একই কথা বলছেন, যে বিজ্ঞান-বিষয়ে পত্রিকা সম্পাদকদেরই উৎসাহ কম-

এ কথা সত্যি, বিজ্ঞান-সাংবাদিক হিসাবে লেখালিখির সুযোগ পাওয়া বেশ কঠিন; আমি লিখতে পেরেছি আমার লেখা আনন্দবাজার ছাপিয়েছে বলেই। সংবাদপত্র টি-টোয়েন্টির আলোচনা বা অভি-অ্যাশের প্রেমকাহিনীর মত গরম বিষয়ে যতটা উৎসাহী তার কণিকামাত্রও উৎসাহী নয় সাধারণ একটা বিজ্ঞানবিষয়ক রচনা ছাপতে। কিন্তু মজার ব্যাপার, প্রকাশনার জগতে আবার পরিস্থিতিটা এর উলটো – আজকাল অনেক প্রকাশকই এগিয়ে আসছেন বিজ্ঞান-বিষয়ক বই ছাপতে, যেমন পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ।

জিজ্ঞাসা করেছিলাম, টিভি ইত্যাদি মিডিয়াতেই বা ওনার মত বিজ্ঞান-আলোচকদের বা বিজ্ঞানীদের দেখা যায় না কেন? তাতে যা বললেন, সেটাও খুব দুঃখজনক ভাবেই সত্যি-

আমি আসতেই চাই, কিন্তু টিভি-মিডিয়ায় যেভাবে বিজ্ঞানটা আলোচিত হয় তাতে আমার খুব আগ্রহ নেই। ... কিন্তু মূল কথা এই, যে বিনোদনের বিভিন্ন প্রকরণের সঙ্গে যাঁরা যুক্ত, তাঁদের তুলনায় যাঁরা প্রবন্ধ-লেখক বা চিন্তাশীল তাঁদের মিডিয়ায় আনার প্রচলন নেই।
... লিভ-টুগেদার করা ভাল কি খারাপ, সে বিষয়ে মন্তব্য করতেও একজন ম্যাজিশিয়ানকে ডাকা হয় মিডিয়ায়, কিন্তু আমাদের চিন্তাভাবনা বা আমাদের সাহিত্য নিয়ে মন্তব্য করতে কোনো বিজ্ঞানীকে কখনও ডাকা হয় না।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমাদের স্ট্যান্ডার্ট উঁচু করা দরকার বোধহয়। ঘাড় নিচু করে থাকলে আমরা আকাশ দেখব কিভাবে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আয়নামতি1 এর ছবি

আপনার প্রস্তাবটি চমৎকার। কিন্তু বাস্তবে মনে হয়না তেমন করা সম্ভব হবে। তার খানিকটা অমিত বলেছেন।

মন_মাঝি এর ছবি

এই লেখাটা পড়তে পড়তে কেন জানি মনে পড়ে যাচ্ছে অল্প বয়সে আমার অন্যতম প্রিয় লেখক ড. আব্দুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন (?)-এর কথা, তার বই 'রহস্যের শেষ নেই' বা সম্ভবত তাঁর উদ্যোগেই প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান-বিষয়ক ২ টাকা দামের ম্যাগাজিন "বিজ্ঞান সাময়িকী"-র কথা। 'কিশোর বাংলা' আর 'নবারূন'-এর পাশাপাশি 'বিজ্ঞান সাময়িকীর' নিয়মিত গ্রাহক ছিলাম একসময়।

মনে পড়ছে সেসময় সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে আসা বিপুল সংখ্যক বিজ্ঞান প্রসার বা বিজ্ঞানকে শিশু-কিশোর-তরুনদের কাছে জনপ্রিয় করার লক্ষ্যে প্রকাশিত বইপত্রের চমৎকার সব বাংলা অনুবাদের কথা।

শুভাশীষ দাশ এর ছবি

পৃথিবী তো বিজ্ঞানময়। সেই বিজ্ঞানকে একটা আলাদা পৃষ্ঠার মধ্যে ভুল বা শুদ্ধভাবে নিয়ে আসলে কতোটা লাভ?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

তাতে পৃথিবীর বিজ্ঞান আমাদের মাথাতেও কিছুটা ঢোকে। আমরা পৃথিবীর সঙ্গে মিলতে পারি। হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রু (অতিথি)  এর ছবি

হলে তো ভালই হতো!

সুহান রিজওয়ান এর ছবি

লেখাটা গোছালো হয়েছে। তবে এই নিয়ে অবস্থার পরিবর্তন চটজলদি হবে বলে আশা করিনা। পত্রিকায় বিজ্ঞানপাতা থাকে একেবারে ভেতরের কোন পাতায়, খুঁজে বের করতেই পিরিয়ড শেষ।

বিজ্ঞান পাতার লোকেদের কাছে আমার নিজের দাবি থাকবে, বিজ্ঞানী/ আবিষ্কারকদের জীবনের বিভিন্ন এনেকডোটস দিয়ে শিশুদের সেই ব্যক্তির কাজ সম্পর্কে আগ্রহী করে তোলা।

নীড় সন্ধানী এর ছবি

অনেক আগে, আজকের কাগজ বা ভোরের কাগজের আমলে একটা পাতা বোধহয় ছিল বিজ্ঞানের জন্য। বিজ্ঞান পাতা চালাবার মতো যোগ্য লোকের অভাব আছে এটা বিশ্বাস করা কঠিন। এটা এমন না যে বিজ্ঞানের মৌলিক কোন থিউরি লিখতে হবে। বিজ্ঞানের উপর প্রচুর বইপত্র আছে, সেখান থেকে কপি করা বা অনুবাদ করার মতো লোকবল না থাকলে পত্রিকাই চালানো উচিত না।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

আবরার আহসান এর ছবি

আলু নিয়েই কথা বলি (যেহেতু তারা দাবী অনুযায়ী সর্বাধিক প্রচলিত)। তাদের দৈনিকের কম্পিউটার পাতায় থাকে যন্ত্রাংশের দাম, বাজারে নতুন কি এসেছে, আর হাল্কা কিছু গুজব এইসব। সপ্তাহের বিজ্ঞান পাতায় থাকে কোথায় কবে অলিম্পিয়াড হবে, অলিম্পিয়াড হলে কি হবে সেইসব হিসাব (আমি অলিম্পিয়াডকে খাটো করছি না)। অথচ তাদের জ্যোতিষীর ভাগ্য গণনা সংক্রান্ত পাতা দিয়ে কাউসার টাইপের ভন্ড আজকে সেলিব্রেটি!!! বিনোদন পাতার সাফল্য দেখে উটপোদ শুভ্ররা খেলার পাতাতেও দলীয় হাল্কা পাতলা ক্যাচালকে গৃহযুদ্ধ দেখিয়ে সেমি বিনোদনের পাতা বানাতে তৎপর।

টোনা আহমেদ এর ছবি

একসময় অহরহ নামে একটি বিজ্ঞান পত্রিকা বেরুতো, সেনপাড়া পর্বতা থেকে। পড়তাম। এমন কিছু এখন আর নেই মনে হয়।

আপনার নাম লিখুন এর ছবি

আমি যা বুঝি তা হলো, বিজ্ঞানময় আমাদের জীবন। এ নিয়ে লেখালেখি, কথকতা যতবেশী হবে তাতে লাভ বই ক্ষতি হবে না। সেজন্য শুধু নেটভিত্তিক চর্চা চালিয়ে যাওয়ার মতামতের সাথে ভিন্নমত প্রকাশ করছি। আর পত্রিকা যে আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে একটি গুরুত্বপূর্ণ মিডিয়া, তাতে মনে হয় কারো সন্দেহ নেই। তাই এ বিষয়ে পত্রিকায় একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ পাতা থাকলে খুব ভাল হয় সবার জন্য।
‌‌
‌‌‌‌" তবে এই নিয়ে অবস্থার পরিবর্তন চটজলদি হবে বলে আশা করিনা। পত্রিকায় বিজ্ঞানপাতা থাকে একেবারে ভেতরের কোন পাতায়, খুঁজে বের করতেই পিরিয়ড শেষ।'

এ কথাটাও আমরা অনেকদিন ধরে বলে আসছি, শুনে আসছি, আশা করিনি, করিনা, কিন্তু হতাশ হওয়ার ও আর যেন সময় নেই। আমরা সবাই মিলে বার বার বলি। সমস্যাগুলো কাটানোর চেষ্টা করি। বাস্তবতা বাস্তবতাই। তাই বলে সম্ভব না ভাবাটা কি ঠিক? শিশুদের কে সুন্দর কিছু দেয়ার দায়িত্ব কি শুধু মা-বাবা আর শিক্ষকের?

আমাদের স্ট্যান্ডার্ট উঁচু করা দরকার বোধহয়। ঘাড় নিচু করে থাকলে আমরা আকাশ দেখব কিভাবে!

চলুক

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

১৯৯৬-১৯৯৭ সালের দিকে "অহরহ" নামের একটি বিজ্ঞান পত্রিকা হকার নিয়মিত দিয়ে যেত। পরে পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে যায়। গুগলের এই যুগে সেই প্রিয় পত্রিকাটিকে খোঁজার প্রচেষ্টায় গুগল মামা এই ব্লগে নিয়ে আসল। ধন্যবাদ লেখককে আর নিজেকে অফ যা এতদিন লেখাটি না পড়ার জন্য। যদিও সচলায়তনের সথে আমার পরিচয় ২০১০ থেকে।

তানিম এহসান এর ছবি


আমাদের শিশুরা কি প্রশ্ন করতে শিখেছে? তারা কি ভাবতে শিখছে? আমাদের শিশুদের কি প্রশ্ন করার জায়গা আছে?

চলুক চলুক

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

কে বলেছে বিজ্ঞান পাতা নাই?
এখানেএখানে টিপি দিয়ে দেখেন বিজ্ঞান পাতার গরম খবর। চোখ টিপি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।