২০০৪-এর একুশে ফেব্রুয়ারি ডেইলি স্টারের "একুশে স্পেশাল' ক্রোড়পত্রে মুহম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। লেখাটির কিছু অংশের সঙ্গে আমি একমত। আমি যদি ঠিক বুঝে থাকি তাহলে লেখাটির মূলভাবের সঙ্গেও একমত। কিন্তু অনেকখানি জায়গায় আমার দ্বিমত রয়েছে। এতো পুরাতন একটি লেখার ব্যাপারে হঠাৎ করে এই সময়ে কথা বলার কারণ রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে যে ব্যাপারগুলোতে আমার বিশেষ দ্বিমত রয়েছে সেটা বলি।
জাফর ইকবাল স্যার একটা বিজ্ঞানের বই থেকে দৈবচয়নের ভিত্তিতে একটি লাইনকে উদাহরণ হিসেবে নিয়ে সেটার বঙ্গানুবাদ করার চেষ্টা করেছেন।রবার্ট রেজনিক এবং ডেভিড হ্যালিডের লেখা "ফিজিক্স' বইটি থেকে উদাহরণটি নেয়া। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স সম্মান পড়ার সময় তিনি এই বইটি পড়েছেন।
লাইনটি এরকম: ""We can show that there are two kinds of charge by rubbing a glass rod with silk and hanging it from a long thread as in fig. 26-1''। স্যার দেখেন, এই লাইনটির অর্থ সবাই খুব সহজেই বুঝতে পারবে। লাইনটি এমনভাবে গঠিত যে তথ্যগুলো উপস্থাপিত হয়েছে একেবারে ঠিকঠিক ভাবে। এখানে মূলত তিনটি তথ্য রয়েছে। প্রথমত, আধান দুই প্রকারের। দ্বিতীয়ত, বর্ণিত পরীক্ষাটি করে যে কেউ সেটি যাচাই করে দেখতে পারে। এবং তৃতীয়ত, একটি চিত্রের সূত্র রয়েছে যেটি দেখা যেতে পারে যদি পরীক্ষণের বিবরণটি কারো কাছে যথেষ্ট মনে না হয়।
স্যার দেখলেন, এই বাক্যটিকে বাংলায় রূপান্তর করা খুব সহজ নয়। একবাক্যে এটার অনুবাদ করতে গেলে সেটি হতে পারে এরকম: ""একটা কাঁচের ডান্ডাকে সিল্ক দিয়ে ঘষে ২৬-১ ছবিতে দেখানো উপায়ে একটা লম্বা সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে আমরা দেখাতে পারি যে চার্জ দু'রকমের''। এই বাক্যটি ঠিক আছে। কিন্তু এখানে তথ্যগুলো ঠিক ক্রম অনুসরণ করে দেয়া হয়নি। ঠিক ক্রম মেনে এই তথ্যগুলো দিতে গেলে বাক্যটিকে তিনভাগে ভেঙে ফেলতে হয়। ১. আমরা দেখাতে পারি যে চার্জ দু'রকমের। ২. একটা কাঁচের ডান্ডাকে সিল্ক দিয়ে ঘষে একটা লম্বা সুতা দিয়ে ঝুলিয়ে রেখে সেটা দেখানো যায়। এবং ৩. ২৬-১ নম্বর ছবিেত সেটা দেখানো হয়েছে। স্যার বলেন, বাক্য ভেঙে ফেলায় এবার বিজ্ঞানের ভাষাটি ঠিকঠাক আছে। কিন্তু একটা ব্যাপার মানতে হবে যে তুলনামূলকভাবে এখানে অনেকখানি বেশি কথা লিখতে হয়েছে।
স্যার যে প্রথম সমস্যাটির কথা বললেন, সেটি হচ্ছে, একবাক্যে বিজ্ঞানের ইংরেজির অনুবাদ করে ফেলা শক্ত। এই সমস্যাটির কথা আমি আরো অনেকের কাছেই শুনেছি। কিন্তু একটি ব্যাপার আমি কখনোই বুঝে উঠতে পারিনি যে বিজ্ঞানের ইংরেজিকে কেন বাংলায় "অনুবাদ' করতে হবে! ইংরেজির ঘাড়ে চেপে বিজ্ঞানকে আমরা কেন বাংলায় নিয়ে আসব?!
আমাদের উদ্দেশ্য কি বিজ্ঞান বুঝিয়ে বলা? নাকি ইংরেজি বিজ্ঞান বইয়ের বাংলা অনুবাদ করা! কেউ ইংরেজি বিজ্ঞান বইয়ের বাংলা অনুবাদ করতে চাইলে সেটির সমস্যাগুলো নিয়ে সে ভাবুক। কিন্তু কেউ যদি বিজ্ঞানকে বাংলায় পরিবেশন করতে চায় তাহলে আমি বিশ্বাস করি ভাষা হিসেবে বাংলা অন্য কোনো ভাষার চাইতে কম সক্ষম নয় বরং বাঙালিদের জন্য বাংলায় বিজ্ঞান পাঠ অনেক বেশি সহজ এবং বোধগম্য। ইংরেজি বিজ্ঞানের বাংলা অনুবাদ না করে যদি উদ্ধৃত বাক্যটির "বিজ্ঞান'টিকে আমরা বাংলায় পরিবেশন করতে চাই তাহলে আমার কাঁচা লেখাতেও সেটা বেশ গ্রহনযোগ্য মনে হচ্ছে। পাঠক না বুঝতে পারলে জানাতে পারেন। আমার উপস্থাপনটি এরকম: ""আধান দুই রকমের। একটা কাঁচের দন্ডকে সিল্কের কাপড় দিয়ে ঘষে একটা লম্বা সুতায় ঝুলিয়ে সেটি পরীক্ষা করে দেখা যায়। ২৬-১ নম্বর চিত্রটিতে এই পরীক্ষণটি এঁকে দেখানো হয়েছে''।
বাংলায় বিজ্ঞান লিখতে গেলে যদি বেশি শব্দ খরচ করতে হয়, তবে সেটা কোনো সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে কিনা আমার জানা নেই। কেউ যদি সেটাকে সমস্যা মনে করেন তাহলেও তার সঙ্গে তর্ক করা অর্থহীন বলেই এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে। স্যার তাঁর লেখাটির প্রথমভাগে বলেছেন, আমি তোমাকে ভালোবাসি এই কথাটিকেই বাংলায় নানাভাবে বলা যায়। "তোমাকে আমি ভালোবাসি' অথবা "আমি ভালোবাসি তোমাকে' বললেও মনের ভাবটি ঠিক ঠিক প্রকাশ পেয়ে যায়। ইংরেজিতে এরকম করা যায়না। বাংলার এরকম দারুণ সক্ষমতা কি বিজ্ঞানকে প্রকাশে তার দুর্বলতা? আমার তো মনে হচ্ছে বাংলায় ভাব প্রকাশের এরকম বিস্তৃত ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ইংরেজির চাইতে বরং ভালোভাবেই বিজ্ঞানকে প্রকাশ করা যায়।
স্যার বললেন, পদার্থ বিজ্ঞানের একটি বই লিখতে গিয়ে তিনি উপলব্ধি করেছেন বাংলায় বিজ্ঞানের বই লেখা সহজ নয়। বাংলা কবিতা লেখার জন্য দারুণ কিন্তু বিজ্ঞান লেখার জন্য অসুবিধাজনক। সেটি সত্য হলে তা কি এজন্য নয় যে আমাদের বিজ্ঞানের কোনো পরিমণ্ডল নেই? আমারদের শৈশবে কৈশোরে আমাদের বাতাসে সুর-শব্দ খেলেছে ঠিক। কিন্তু সেই শব্দগুলি কেবল কবিতার অথবা গল্পের অথবা রূপকথার। আমারদের শিশুরা বিজ্ঞান নিয়ে ভাবেনি। তাদের ভাষায় ভাবনায় বিজ্ঞানের শব্দমালা, বিজ্ঞানের সত্য কবিতার মতো করে ঢুকে পড়েনি। বাংলায় বিজ্ঞান পড়তে খানিকটা যে অস্বস্থি লেগেছে সেটাও কী এই কারণেই নয়?
যে আপাত প্রতিবন্ধকতাগুলো আমরা দেখি বিজ্ঞানের বাংলায় সেগুলো দূর করার উপায় কী? কেউ কেউ সমাধান দিয়েছেন শিক্ষা অথবা ভাবনার ভাষা হিসেবে বাংলাকেই বাদ দিয়ে দেয়ার। সমাধানটি অভিনব। এই সমাধানটি দেখে আমার মনে হয়েছে, আধুনিক, সভ্য, উন্নত এবং প্রগতিশীল হওয়ার জন্য আমরা কী ঝটপট আমাদের দেশের নাম বদলে, আমারদের পরিচিতি বদলে, আমাদের সংস্কৃতি বদলে অন্য কোনো উন্নত জাতির একজন হয়ে যেতে পারি! সহজ সমাধান! পাসপোর্ট বদলে উন্নত জাতির একজন হওয়ার সুযোগটি হাজার হাজার বাঙালি গ্রহন করেছে, হাজার হাজার গ্রহন করার চেষ্টা করছেন আর লক্ষ লক্ষ বাঙালি গ্রহন করতে চাইছে। এই ব্যাপারটিকেই একটা জাতিগত প্রচেষ্টা হিসেবে নেয়ার ইচ্ছে চমকপ্রদ তাতে সন্দেহ নেই!
জাফর ইকবাল স্যার তাঁর রচনার শেষভাগে যে কথাগুলো বলেছেন সেগুলোর সঙ্গে একমত পোষণ করছি। তিনি বলেছেন, আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা এই মুহূর্তে বিশৃংখল একটা অবস্থায় আছে। আমােরকেই এটা ঠিক করতে হবে। আশা করি সবাই বুঝতে পারবে যে মৌলিক বিজ্ঞান আমরা কেবল আমাদের মাতৃভাষাতেই শিখতে পারি।
স্যারের সম্পূর্ণ লেখাটির আরো কিছু বিষয়ে আমার স্পষ্ট দ্বিমত রয়েছে। কিন্তু লেখাটি এখনই যথেষ্ট বড় হয়ে গেছে। সেসব বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশের চাইতে নিজের মতগুলো আরেকটু স্পষ্ট করলে সেটা ভালো হবে বলে মনে হচ্ছে।
জাফর ইকবাল স্যােরর এই লেখাটি দীর্ঘ পুরোনো। এই সময়ে এটি নিয়ে কথা বলছি আমার সাম্প্রতিক একটি লেখার সূত্রে বিষয়টি সামনে এসেছে বলেই। বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর-এ ""বিজ্ঞানের ভাষা ইংরেজি নয়'' শিরোনামে সম্প্রতি আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছিল। মূল বিতর্কটি অবশ্য তারও কিছু আগে শুরু হয়েছে। বেশ কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে পরবর্তীতে এসব লেখা আর বিতর্কের সূত্রে। কয়েকটি বিভ্রান্তি এখানে স্পষ্ট করার চেষ্টা করি।
আমরা যখন বলেছি, আমাদের বিজ্ঞান পড়া, শেখা এবং চর্চা করার জন্য বাংলাই সর্বোত্তম। সর্বক্ষেত্রে বাংলায় বিজ্ঞানকে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আরো জোরদার করা উচিত। তখন প্রশ্ন উঠেছে, বর্তমান যুগে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞানকে নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে আমাদের প্রবেশ/মিথস্ক্রিয়া সম্ভব কিনা!
জবাব হচ্ছে, না। সম্ভব নয়। প্রশ্নের জবাবটি এককথায় দেয়া যায় কিন্তু এই প্রশ্নটি যখন ওঠে তখনই বুঝতে পারি, আমাদের বক্তব্যটি সবার কাছে স্পষ্ট নয়।
একটি বিষয় স্পষ্ট হওয়া প্রয়োজন, আমরা কখনোই ইংরেজি শেখার বিপক্ষে নই। বরং ভাষা হিসেবে ইংরেজি ভালোমত শেখা দরকার। ১২ বছর ধরে ইংরেজি শিখেও আমাদের ইংরেজির দশা বেহাল কেন সেটা খুঁজে বের করা দরকার এবং সেটার সমাধানও করা দরকার। কিন্তু যদি বিজ্ঞান চর্চার কথা আসে, তখন আমাদের জন্য বাংলাই সেরা। আমরা বলছি, কেবল বাংলায় নয়, "সহজ বাংলায়' বিজ্ঞানকে সবার কাছে পৌঁছে দেয়ার কথা। একটি ব্যাপার নিশ্চিত, সবাই বিজ্ঞানে আগ্রহী হবে না। আমাদের শিশুরা বিজ্ঞানে যেমন, তেমনি সঙ্গীত, সাহিত্য অথবা অন্যান্য বিষয়েও আগ্রহী হবে। যার যে বিষয়টিতে আগ্রহ সেটিই তার ভবিষ্যতের বিষয়ে হবে। কিন্তু আগ্রহ তৈরি হওয়ার সময়টি যখন তখন কী আমাদের শিশুরা বিজ্ঞানকে জানে? আমাদের শিশুরা কি আইনস্টাইন হতে চায়? আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং? যে ছেলেটি জানেই না বিজ্ঞানের জগৎটি কীরকম দারুণ, কীরকম চমকপ্রদ তার আগ্রহ কীভাবে বিজ্ঞানে তৈরি হবে!
আমরা একটি বিজ্ঞানের পরিমণ্ডল তৈরির কথা বলি। আমাদের চারপাশে সঙ্গীত যেমন আছে, সাহিত্য আছে থাকবে, থাকবে, তেমনি বিজ্ঞানও থাকুক! আমাদের শিক্ষার ব্যাবস্থাটি আমাদের ভাষা হিসেবে ১২ বছর ধরে ইংরেজি যেমন, তেমনি গণিত, এমনকি বাংলাও ঠিকঠাক শেখাতে পারেনি। আমরা নম্বর পেতে শিখেছি কেবল। আমরা বলছি, আমাদের শিশুরা যেন বিজ্ঞান-গণিতের মতো চমকপ্রদ বিষয়গুলো কৌতুহল নিয়ে চিন্তা করতে শেখে। আমরা প্রতিবছর কত কত সেরা শিক্ষার্থী পাই। পত্রিকায় তাদের চমৎকার সব সাক্ষাৎকার ছাপা হয়। আমার দূর্ভাগ্য আমি তাদেরকে সবসময় অনূজ শিক্ষার্থীদের জন্য পরামর্শ হিসেবে কীভাবে ভালো নম্বর পাওয়া যায় সেটা বলতে শুনি! আমি কেবল পড়ি তারা কীভাবে সময়কে ঠিক ঠিক ব্যাবহার করে ভালো নম্বর পেয়েছে! আমার দূর্ভাগ্য আমি আমাদের সেরা শিক্ষার্থীদের কাউকে বলতে শুনিনি, বিজ্ঞানের কোন বিষয়টি তার কাছে কীরকম চমকপ্রদ লেগেছে! আমি শুনিনি সারাদিন কারো ইচ্ছে হয়েছে বিজ্ঞানের কোনো বিষয় পরীক্ষা করে দেখার, কোনোকিছু নিয়ে ভাবার! বিজ্ঞান যে গান গাওয়ার মতো দারুণ আনন্দের একটা বিষয়, একটা সমস্যার সমাধান করা যে ১০০ মাইল দৌড় প্রতিযোগীতায় ১০০ জনকে পেছনে ফেলে ১০০ বার প্রথম হয়ে যাওয়ার মতো কৃতিত্ব আর আনন্দের বিষয় সেটি কী আমরা বুঝতে শিখেছি! বিজ্ঞান ভালোবাসার এই বোধটি একেবারে কাঁচা বয়সে তৈরি করে দেয়ার জন্যেই আমরা বিজ্ঞানের একটি পরিমণ্ডল তৈরির কথা বলি।
একটি দেশের সবাই বৈজ্ঞানিক হবে না। খুব কম জনই হবে। কিন্তু বিজ্ঞানের প্রাথমিক ধারণাটি সবার মধ্যেই থাকুক, আমরা সেটা চাই। সবাই যখন বিজ্ঞানকে দেখবে, চিনবে, জানবে, বুঝবে তখন তাদের মধ্যে কারো কারো বিজ্ঞান খুব ভালো লেগে যাবে! ১৬ কোটি মানুষের একটি দেশের থেকে "কেউ কেউ' যখন বিজ্ঞান ভালোবাসবে আর উচ্চতর বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে কাজ করতে চাইবে তখন সেই সংখ্যাটি একটি বড় সংখ্যা হবে তাতে কী কারো সন্দেহ রয়েছে?
এই সময়ের বিজ্ঞান চর্চায় বাংলার ব্যবহার কীভাবে হতে পারে সেই প্রশ্নটি অনেকেই করেছেন। একটি ব্যাপার মনে রাখা দরকার, বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা করতে বলা মানেই রাতারাতি সবকিছু ঝেড়ে মুছে বাংলা করে ফেলা নয়! আমরা বলছি, বিজ্ঞানকে বাংলায় নিয়ে আসার চর্চাটি ভালোমত শুরু করা প্রয়োজন। এই সময়ের বিজ্ঞানকে বাংলায় চর্চা করায় যে প্রকিবন্ধকতাগুলো রয়েছে সেগুলো দূর করার চেষ্টা করা দরকার। আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করিনা, বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা করার সিদ্ধান্ত নিলেই একলাফে আমরা উন্নত বিশ্বের সমকক্ষ হয় যাবো। বরং আমরা যে শত শত বছর ধরে থেমে আছি সেই স্থবির অবস্থাটি থেকে আমাদের উন্মোচন ঘটবে। আমরা একটি জাতি ধীরে ধীরে বিজ্ঞানমনস্ক হয়ে উঠলে আমাদের মধ্য থেকে উচ্চতর বিজ্ঞান চর্চাকারীও উঠে আসবে। বিজ্ঞানের পৃথিবীর সঙ্গে সম্পর্কের কথা আমরা তখনই ভাবতে পারব।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের বিজ্ঞানকে উপস্থাপনের জন্য প্রয়োজনীয় ভাষাটিও আমরা নিশ্চয়ই শিখব। আমাদের বিজ্ঞানকে আমরা সেই ভাষাতেই উপস্থাপন করব। ইতিহাস বলে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্তর্জাতিক ভাষা, সংস্কৃতি, এবং সাহিত্য-সভ্যতা-বিজ্ঞানের কেন্দ্র বদলেছে। ভবিষ্যতেও বদলাবে না কে বলতে পারে! সময়ের সঙ্গে মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমটি বদলে গেলে কী আমাদের বিজ্ঞানের বোধও বদলে যাবে? আমাদের জাতির একটি সামগ্রিক বিজ্ঞান বোধ চাই আমরা। এবং আমাদের কোনো সন্দেহ নেই একটি জাতির বিজ্ঞান বোধ কেবল সেই জাতির মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা করেই গড়ে উঠতে পারে!
কেউ বলতে চেয়েছেন, আমরা নিজেরা যেভাবে ইংরেজি শিখে ইংরেজি মাধ্যমে উন্নত দেশে এসে পড়াশোনা করছি সেই পরামর্শটি কেন সবাইকে দিচ্ছি না?
এরকম মন্তব্যের কারণ সম্ভবত এটা যে, আমি নিজে এবং আমার মতো আরো অনেকেই দেশের বাইরে পড়তে এসেছেন। আমাদের সবাইকেই ইংরেজি শিখতে হয়েছে। নিজেদেরকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে মানিয়ে নেয়ার মতো করে প্রস্তুত করতে হয়েছে। সেটিতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যাঁরা এখন দেশের বাইরে এসেছেন, উচ্চতর শিক্ষা নিচ্ছেন, তাঁরা কেন এসেছেন? বাধ্য হয়ে নয়কি? আমরা কি একটি জাতির সব শিক্ষার্থীকে বিদেশে আসার প্রস্তুতি নিয়ে দেশের বাইরে চলে আসতে বলব? সেটি কী বাস্তব? অন্য কোনো দেশ/জাতি কী আমাদের একটি জাতির সব শিক্ষার্থীর জন্য গবেষণা বা শিক্ষার সুযোগ তৈরি করে রেখেছে অথবা রাখবে? আমরা যারা দেশের বাইরে এসেছি তারা আসলে অন্য দেশ/জাতির দেয়া একটুখানি সুযোগ অনেক পরিশ্রম করে অর্জন করে এখানে এসেছি! আমি এসেছি ঠিক, কিন্তু কোনো সন্দেহ নেই, আমার চাইতে অনেক বেশি মেধাবী হাজারো ছেলেমেয়ে সেই সুযোগ পায়নি! না পাওয়াটাই স্বাভাবিক। যারা এই সময়ে বিশ্বের বড় বড় সব ল্যাবে/প্রতিষ্ঠানে কাজ করতে চায় তাদের জন্য শুভকামনা। তারা সুযোগ পাক সেটাই চাই। কিন্তু আমরা সবাই জানি, সেই সুযোগটি পাবেন নিতান্তই অল্প কিছু ভাগ্যবান শিক্ষার্থী! বাকিদের কী হবে?
বলছি না, আজকেই আমাদের দেশটিতে বিরাট পরিবর্তন এসে যাবে! এখনতো এমনকি আমরা প্রতিযোগিতায় নামারও যোগ্য নই! কিন্তু আমরা কি ভবিষ্যতের জন্যেও প্রস্তুতি নেব না? জাতিগত একটি পরিবর্তন কি এক মুহূর্তে সম্ভব! বিজ্ঞানে এই মুহূর্তে আমাদের সত্যিকারের কোনো আশা আমি দেখি না! আগামী দশ কি বিশ বছরেও বিজ্ঞানের বাঙালি জাতির জয়জয়কার পড়ে যাবে সেই আশা করি না। কিন্তু আমাদের ভবিষ্যতের কথা আমাদেরকে এখনই ভাবা উচিত, যে কথাটি ১০০ বছর আগে আমাদের পূর্বপুরুষেরা ভাবলে আমরা হয়তো আজকে অন্য অবস্থানে থাকতে পারতাম!
আমরা কি আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি পরিকল্পিত অতীত তৈরি করছি? নাকি ১০০ বছর পরে গিয়েও আমাদের উত্তর প্রজন্মকেও একটি বিজ্ঞান বোধসম্পন্ন জাতি হিসেবে বেড়ে ওঠার কথা ভাবতে হবে!
জাফর ইকবাল স্যারের মূল লেখাটি ইংরেজিতে রচিত। আমার দেয়া বাংলা উদ্ধৃতিগুলো ইংরেজি থেকে ভাবানুবাদ করা হয়েছে। অনুবাদে অর্থ বদলে যেতে পারে সেরকম সংশয় থাকলে অথবা মূল লেখাটি বিস্তারিত পড়তে চাইলে সেটি পাওয়া যাবে এখানে: Doing science in Bangla
মন্তব্য
দুর্দান্ত একটি লেখা । প্রায় প্রতিটা বাক্যের সাথে একমত !
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
কিছু বিষয় চোখে আঙ্গুল দিয়ে বুঝিয়ে দেবার জন্য ধন্যবাদ। অন্য জাতির ঘাড়ে চড়ে আর কত দিন!!!
অসাধারণ অনার্য'দা।
আমরা ধরেই নিয়েছি যে বিজ্ঞানের ভাষা শুধুমাত্র ইংরেজি। প্রচলিত না হওয়ায় অনেক প্রতিশব্দই আমরা 'খটমটে' বলে বাতিলের খাতায় রেখে অন্য ভাষায় তা হৃদয়ঙ্গম করতে আগ্রহী হই এবং বলতে দ্বিধা নেই সেটাতে অনেকেই হয়তো স্বস্তি বোধ এবং গর্ব অনুভব করেন এবং সেই সাথে প্রবন্ধ ঝাড়েন বিজ্ঞানের ভাষা তমুক! আমরা এখনো শুরুই করলাম না আর সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি বাংলার 'ফ্লেক্সেবেলিটি' কম!
love the life you live. live the life you love.
(Y)সহমত।
স্পট অন।
বাংলা আর ইংরেজি আলাদা ভাষা। দুই ভাষার মধ্যে মিলও আছে, পার্থক্যও আছে, বিশেষ করে ব্যাকরণে এবং অভিব্যক্তিতে। এজন্য আক্ষরিক অনুবাদ করতে গেলেই ভাষা ছন্দ হারাবে, বক্তব্য আকর্ষণ হারাবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
ঠিক বলেছেন। আমি কখনোই বুঝতে পারিনা, বাংলায় বিজ্ঞান বলতে সবাই কেন বিজ্ঞানের ইংরেজি বইগুলোর অনুবাদ ধরে নয়!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
দারুণ!
_________________
[খোমাখাতা]
অসাধারণ লেখা।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা সম্পর্কিত সাম্প্রতিক যে বিতর্ক চলছে সেটা যদি বিজ্ঞানসম্মত হয়, তাহলে তো দেখা যাচ্ছে যে বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা সম্ভব। বিতর্কটা তো বাংলাতেই হচ্ছে, নাকি?
হিট বিষয়ে ফিট লেখা।
বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা বলতে আসলে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে সেটা প্রথমে সংজ্ঞায়িত করা দরকার। বিজ্ঞান চর্চার পরিধীটা কতটুকু। এই মূহুর্তে সেই বিশাল অংশের কতটুকু বাংলায় হৃদয়াঙ্গম করার যোগ্য অবস্থায় আনা সম্ভব, আর কোন অংশটিতে পৌঁছানোর জন্য আরো ২০, ৫০ বা ১০০ বছর প্রয়োজন সেটাও জানা দরকার।
আমার কাছে: কোয়ান্টাম বলবিদ্যা, প্লাজমা -- এই দুইটার উপরে বাংলা একাডেমী প্রকাশিত দুইটা বাংলা বই আছে ... ... ওগুলোর জ্ঞানগুলোকে কী বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত ধরে নেয়া যায়?
হতে পারে বিজ্ঞান হিসেবে পাঠ্য যেই বিষয়গুলো আমরা পড়ি সেগুলো অধ্যয়ন করাটাকে বিজ্ঞান চর্চা হিসেবে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ সেক্ষত্রে পলিটিক্যাল সায়েন্স/রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি কিংবা সোশাল সায়েন্সও আসলে বিজ্ঞান ভিত্তিক বিষয়। ওগুলো ছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত পদার্থ, রসায়ন, জীববিজ্ঞান বিষয়ক বাংলায় অনেকগুলো ভাল পাঠ্যবই রয়েছে। এমনকি যারা ডিপ্লোমা প্রকৌশলী, তারাও এই ফলিত বিজ্ঞান (এপ্লাইড সায়েন্স) বাংলাতেই লেখাপড়া করেন। ---- বাংলায় বিজ্ঞান বিষয়ক প্রশ্ন উঠলে প্রথমেই তাই মনে হয়, "তবে কি এই বাংলায় পঠিত বিষয়গুলো বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত নয়?' "তবে কি এই পঠিত বিষয়গুলো কলা কিংবা সাহিত্যের অন্তভুক্ত?'
আবার সঠিক উপায়ে গবেষণা মানেই বিজ্ঞান, অর্থাৎ প্রচলিত মতবাদকে প্রশ্ন করতে হবে --- উত্তর না পেলে প্রচলিত মতবাদকে সন্দেহ করে বিকল্প নতুন ধারণা বের করতে হবে, তারপর সেটাকে আবার বিভিন্ন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা করতে হবে; পরীক্ষায় পাশ করলে সেটা হবে নতুন মতবাদ। -- -- বৈজ্ঞানিক চক্রটা তো অমনই বলে জানতাম। তাই রাষ্ট্রবিজ্ঞান, অর্থনীতি, সামাজিক বিজ্ঞান থেকে শুরু করে কোন অঞ্চলের সাহিত্যিকগণ কোন ধরণের বিষয়ে বেশি লেখে এর সূত্র বের করা হলেও সেটা বিজ্ঞান।
বিজ্ঞানের সংজ্ঞা কী? এটার পরিধী কতটুকু? কতটুকু ইতিমধ্যেই বাংলায় আছে? এগুলোর উপরে আলোকপাত করা দরকার।
যা হোক ইদানিং বিডিনিউজে বন্ধু ফারসীম মান্নানের ব্লগপোস্টের সূত্র ধরে বিপক্ষে ও পক্ষে অনেকগুলো লেখা এসেছে ... ... আমি নতুন করে কিছু তাই আর বলছি না। শুধু সচলায়তনেই আলোচিত আমার একটা পুরাতন লেখার বিজ্ঞাপন দিয়ে যাই: বাংলায় বিজ্ঞানচর্চা: আবিশ্যিকতা ও প্রস্তাবনা। অবশ্য এই ২০১১ সালের শেষে আমার নিজের ধ্যান ধারণা ২০০৭ সালের শুরুর সময়ের ধারণা থেকে অনেক পরবর্তীত ও পরিবর্ধিত হয়েছে।
________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।
বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চার কাজটা ছোট পরিসরে হলেও শুরু করা উচিত। যেটা যার অধীত বিষয়, সে বিষয়ে বাংলায় লেখার মাধ্যমে শুরুটা করা যেতে পারে। এই শুরুর লেখাগুলো কীভাবে আমাদের শিশুদের হাতে পৌঁছুবে, এ বিষয়ে আলোচনা হওয়াটাও জরুরি।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
বিজ্ঞানের "ইংরেজি" জার্গনগুলো কেন বঙ্গানুবাদ করা যাবে না, তা আমি কিছুতেই বুঝতে পারি না। ভাষা নিজে কোন বাস্তবতা না, ভাষা স্রেফ বাস্তবজগত সম্পর্কে তথ্য আদান-প্রদান করার একটা উপকরণ। আমরা সবাই যদি একই বাস্তবতায় বাস করি, তবে সেই বাস্তব ঘটনাগুলো আমরা ঠিকই আমাদের ভাষাগুলোর মাধ্যমে অর্থের বিকৃতি না ঘটিয়েই প্রকাশ করতে পারব, আমাদের ভাষাগুলো যতই ভিন্ন হোক না কেন। consciousness শব্দটার কথাই ধরুন। পৃথিবীর সব মানুষেরই consciousness আছে। এখন ইংরেজিভাষীরা যদি এই ফিনোমিননকে নির্দেশ করার জন্য একটা শব্দ ব্যবহার করতে পারে(যা আবার খুব সম্ভবত লাতিন conscius থেকে এসেছে), তবে আমরা কেন এই ফিনোমিনন নির্দেশ করার জন্য আমাদের ভাষা থেকে একটা শব্দ নির্বাচন করতে পারব না? খুব সম্ভবত হিমু ভাই ফেসবুকে "অবধারণ" প্রস্তাব করেছিলেন। আমরা যদি এভাবে প্রকৃতিজগতের প্রত্যেকটি ফিনোমেননের জন্য বাংলা শব্দ নির্ধারণ করে দিই, তবে বাংলা ভাষায় বিজ্ঞন চর্চা বেশ ভালভাবেই সম্ভব এবং তা বেশ শ্রুতিমধুরও হবে।
আমি মনে করি বাংলায় বিজ্ঞান চর্চা করার জন্য বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী ও চর্চাকারী এবং ভাষাবিদদের মাঝে কল্যাবরেশন গড়ে তোলা দরকার, যেখানে বিজ্ঞানীরা বৈজ্ঞানিক ফিনোমেননগুলো ব্যাখ্যা করবেন এবং ভাষাবিদরা সেগুলোকে নির্দেশ করার জন্য উপযুক্ত শব্দ নির্ধারণ করবেন। ভাষা খুবই নমনীয়। এখন হয়ত প্রত্যেকটি বৈজ্ঞানিক ফিনোমেননকে নির্দেশ করার মত উপযুক্ত শব্দভান্ডার বাংলা ভাষায় তৈরী হয়নি, কিন্তু ব্যবহারের ফলে এক সময় হয়ত ঠিকই তৈরী হবে। কথ্য ভাষায় work যে অর্থে ব্যবহার করা হয়, পদার্থবিজ্ঞানে সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থে শব্দটি ব্যবহৃত হয়। একই শব্দ যেহেতু বিভিন্ন অর্থ প্রকাশ করতে পারে, তাই আমি মনে করি বাংলা ভাষায় বিজ্ঞান চর্চা চালিয়ে গেলে এক সময় বাংলার প্রচলিত শব্দভান্ডারও বিজ্ঞানকে পূর্ণভাবে ধারণ করতে সক্ষম হবে।
আর বিজ্ঞানের ইংরেজি বই যদি অনুবাদ করতেই হয়, তবে আক্ষরিক অনুবাদ না করে ভাবানুবাদ করা উচিত। কেউ যদি ভাবানুবাদ করতেও অক্ষম হয়, তবে আমি বলব সে নিজেও জানে না সে আসলে কি অনুবাদ করতে বসেছে। এক ভাষা থেকে আরেক ভাষায় আক্ষরিক অনুবাদ শুধু বিজ্ঞান কেন, শিল্প-সাহিত্যের ক্ষেত্রেও সম্ভব বলে আমার মনে হয় না।
কেউ কি আছেন sal khan এর মতো কিছু একটা বাংলায় করে দেবার মতো?
http://www.khanacademy.org/
অনুবাদ করতে বলছি না। আপনি আপনার মতো করেই করেন। করে দেখান। তর্ক করে লাভ নাই। নিঃশব্দে সবার সামনে হাজির করেন। এই দেখো বাংলাদিয়ে কত কি করা যায়। বাংলা কত সহজ। একটা গ্রুপ মিলে হলেও করে দেখান প্লীজ।
খান একাডেমি বাংলায়
"যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি॥
দেশী ভাষা বিদ্যা যার মনে ন জুয়ায়।
নিজ দেশ তেয়াগী কেন বিদেশ ন যায়॥"
১৬শ শতাব্দীর কবি আবদুল হাকিম এরকম একটি সুস্পষ্ট ঘৃণা মিশ্রিত কবিতা লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন কারণ খুব সম্ভবত সে সময়কার কিছু বেজন্মা বাংলা ভাষাকে 'ছোড-লোকের' ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে এটাকে শিক্ষার ভাষা হিসেবে অযোগ্য বলার চেষ্টা করেছিল। তারা হয়তো সে সময় অতি উচ্চ মাত্রার শ্রুতি মধুর, তলাহীন(অসীম) জ্ঞানের খনির ধারক, আরবি বা ফার্সি ভাষাকে এদেশের শিক্ষার ভাষা হিসেবে প্রচলিত করার চেষ্টা করেছিল। এরপর আরো কিছু বড় রকমের বিপদের পর শুধু মাত্র বাংলার গর্বিত সন্তানদের দৃঢ়তার কারণে যখন আমাদের মনে হচ্ছিল শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা এখন বিপদ মুক্ত, এখন এ ভাষার আরো প্রস্ফুটিত হবে, পৃথিবীর শত বৈচিত্রের মধ্যে বাংলা একটি সুন্দর বৈচিত্রের ধারক হিসেবে টিকে থাকবে আরো হাজার বছর, তখন আমরা দেখতে পাচ্ছি আবদুল হাকিমের বলে যাওয়া বেজন্মাদের আবার পুনর্জন্ম হয়েছে! ওরা আমাদের মাতৃভাষাকে শুধুমাত্র আমাদের 'প্রথম ভাষা' বলে হেয় করতে চায়, বর্তমান কালের নতুন-তথাকথিত-তলাহীন-জ্ঞানের-খনি ইংলিশ ভাষাকে আমাদের শিক্ষা ভাষা করার জন্য বাস্তবতার দোহায় দেয়(ভাবছি ওরা ওদের মাকে ওদের জীবনের 'প্রথম নারী' ভাবে কিনা যাকে বাস্তবতার খাতিরে রেখা আসা যায় নির্বাসনে [বমি])। তা ওরা ওদের মাকে যা খুশি ভাবুক আর ওদের ভাষা নিয়ে যা খুশি করুক তাতে আমাদের কিছু যায় আসে না, আমরা আমাদের মাকে 'মা'ই ভাববো, আমাদের ভাষাকে মাতৃভাষার সম্মানই দেবো; মা যেমন আমাদের জন্য সমস্ত পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় তেমনি আমাদের মাতৃভাষা আমাদের বিকাশের সর্বশ্রেষ্ঠ মাধ্যম। কারো খোঁড়া যুক্তিতে আমরা আমাদের এ অবস্থান থেকে সরে আসবো না...
দ্বিমতের অবকাশ নাই!
বাংলায় ভালো বিজ্ঞান বই রচনা করা সম্ভব কিনা কোন লেভেল পর্যন্ত সম্ভব সেটা উচ্চতর বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ুয়া লোকরা বলুক। আমার বিজ্ঞান পড়ার একাডেমিক দৌড় বারো ক্লাস, ব্যক্তিগত দৌড় আরো সাত আট বছর। বাচ্চাকালে আমার বই কেনার প্রথম নেশা ধরিয়েছিল আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিনের বাংলা বিজ্ঞান বই। সেই সময়ে যাত্রা শুরু করে বাংলা একাডেমীর বিজ্ঞান বইতে এসে আমার যাত্রা সমাপ্ত হয়। অগণিত বাংলা বিজ্ঞান সংক্রান্ত সাধারন জ্ঞানের বই পড়ে আমার ধারণা হয়েছে, বিজ্ঞান জিনিসটা সুস্বাদু বাংলায়ও পরিবেশন করা সম্ভব যদি লেখকটি হন আবদুল্লাহ আল মুতী শরফুদ্দিন। আবার খটমটো ভাষায়ও প্রকাশ হতে পারে যদি লেখকটি হন ড.মুহম্মদ ইব্রাহীম। (কাউকে খাটো করা উদ্দেশ্য নয়, স্রেফ ব্যক্তিগত দর্শন থেকে বলা। এই দুজনের বই আমি সবচেয়ে বেশী পড়েছি বলেই হয়তো)। তারপর আমি যখন আরজ আলী মাতুব্বরের সহজ বাংলায় লেখা সাধারন বিজ্ঞান পড়ি তখন মনে হলো, এই বইটা আমি ক্লাস এইটে পেলে বিজ্ঞানে অনেক বেশী নম্বর পেতাম। সম্প্রতি অনার্য সঙ্গীতের অনুবিজ্ঞানের রচনা পড়ে ধারণা পোক্ত হলো যে চাইলে উচ্চতর বিজ্ঞান বইও সহজ বাংলায় রচনা করা সম্ভব এবং এসব রচনা আমি ইন্টারে পড়তে পারলে বায়োলজিতে পয়তাল্লিশ পেয়ে হোচট পাশের চেয়ে লেটার মার্কস নিয়ে পাশ করতাম।
আবারো বলি উপরের সকল অভিজ্ঞতা কিন্তু সাধারন বিজ্ঞান পঠন জনিত। সুতরাং মুহম্মদ জাফর ইকবাল কতোটা সঠিক সেটা বলা মুশকিলই আমার পক্ষে। তবে অনার্য সঙ্গীত যখন বলেছে সম্ভব, আমি তাতেই সুর মেলাই। কারণ অনুজীববিজ্ঞানে ওনার চেয়ে ভালো বাংলা আবদুল্লাহ আল মুতীও লিখতে পারতেন কিনা জানি না।
১১০% সহমত
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
একমত, সহমত
শুধু অনুবাদ নয়, আমরা চাই কেউ যেন বিজ্ঞান গুছিয়ে পরিবেসন করেন। সরল আনন্দময় ভাবে ...
জাস্ট অসাধারণ একটি লেখা। পূর্ণ সহমত। অনার্য দা আপনাকে হ্যাটস অফ
সেই ছোটবেলা থেকে শিক্ষকদের পিটনা খেতে খেতে যেটা বুঝেছি সেটা হলো কোনো কিছু 'হুবহু' মুখস্থ করার চেয়ে 'ভালো করে' বুঝতে পারাটা সবচেয়ে বেশি দরকারী। এই 'ভালো করে বুঝতে পারা'টা ঠিকঠাক সম্পন্ন করতে পারলে যে কেউ তার আয়ত্বের ভেতরের যে কোনো ভাষায় সেটা সুন্দর করে ব্যাখ্যা করতে সক্ষম।
আংরেজীতে বিজ্ঞান বুঝে যেমন বাংলাতে সেটা বুঝিয়ে, গুছিয়ে ব্যাখ্যা করা সম্ভব [যাঁরা বাংলায় বিজ্ঞানের বই লিখবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে], তেমনি আবার বাংলাতে বিজ্ঞান ভালো করে বুঝে নিয়ে সেটাকে আংরেজীতেও ব্যাখ্যা করা অসম্ভব কিছু না [যাঁরা ভবিষ্যতে বিজ্ঞান নিয়ে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বিচরণ করবেন, তাঁদের ক্ষেত্রে]।
আর, একটা কথা কেনো আমরা ভুলে যাচ্ছি, বাংলায় বিজ্ঞানের চর্চা করার কথা তো বলা হচ্ছে সর্বসাধারণের কথা মাথায় রেখে। বাংলাদেশের সর্বসাধারণশিক্ষার্থী এখনও আংরেজীর চেয়ে বাংলাতেই সবকিছু বুঝে। যখন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার পরিবর্তন হবে, সমগ্র বাংলাদেশ যখন বাংলার পাশাপাশি বাংলার মতো করে আংরেজীতেও সবকিছু বুঝতে সক্ষম হবে, তখন নাহয় আংরেজীতেই বিজ্ঞান চর্চা করা যাবে! এখন আপাতত চর্চাটা বাংলাতেই হোক, যদি সবাইকে বিজ্ঞানের আলো দেখানোর সদিচ্ছা আমাদের থেকে থাকে আরকি!
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
facebook
সহমত
সম্পূর্ণ ভাবে একমত। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, মাতৃভাষায় যে কোনো বিষয়ই আয়ত্ব করা অন্য ভাষার চেয়ে সহজ। নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও দেখেছি ব্যাপারটা। বিষয়টি যখন সহজে আয়ত্ব করার, তখন অন্য কোনো যুক্তি আসে না।
অনন্ত
আমার ধরতে একটু খানি সমস্যা হচ্ছে। আমার যত দূর মনে পরে এইচ এস সি পর্যন্ত বিজ্ঞান বাংলা ভাষাতেই ছিল,
এখন কি এই বিষয়গুলি ইংলিশে পরানো হয়?
বানান পড়ানো*
একটি প্রশ্ন ছিল। আমাদের দেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা মাধ্যম কি বাংলা নাকি ইংরেজী? বুয়েটের মাধ্যম ইংরেজী জানি। অন্তত প্রশ্নপত্র ও উত্তরপত্র গুলো ইংরজী মাধ্যমেই হয়। মেডিকেল কলেজেও কি এরকমই? বিশ্ববিদ্যালয় সবগুলোই কি ইংরেজী মাধ্যম? নাকি বাংলা মাধ্যমও আছে?
এখানে কি একটি লিস্ট করা যায় দেশের কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে লেকচার এবং পরীক্ষা মাধ্যম কোন ভাষাতে করা হয় তা? যে যে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন বা জানেন তারা এখানে তাদেরটি যুক্ত করে দিতে পারেন।
উদাহরণ স্বরূপঃ বুয়েটঃ লেকচার দেওয়া হয় মূলত বাংলাতে, কিন্তু লেকচার নোট, মেটেরিয়াল সব হয় ইংরেজীতে, পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হয় ইংরেজীতে, উত্তর পত্র লিখতে হয় ইংরেজীতে।
ঢাকা/চট্টগ্রাম/... মেডিকেল কলেজঃ
ঢাকা/চট্টগ্রাম/জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
রুয়েট/ডুয়েট/চুয়েটঃ
টেক্সটাইলঃ
ইত্যাদী...
বুয়েটে কোন ক্লাসে বিদেশী (মূলতঃ নেপালী) ছাত্র ছাত্রী থাকলে ইংরেজীতে লেকচার দেওয়া হয়
শাবিতে বুয়েটের মতই
এবং
যতদিন পর্যন্ত না তাঁরা বাংলটা শিখে ফেলে
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
ঢাবি আর মেডিকেলে কি একই রকম চিত্র?
ঠিক করে জানি না আসলে -- তবে ধারণা করছি এরকমই হওয়ার কথা!
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
রাজিব মোস্তাফিজ ভাই, জাফর স্যারকে লেখাটা পড়ানো যায়?
পাঠিয়ে দিয়েছি সাফি। এত দেরি করে ফেলার জন্য দু:খিত।
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
জাফর স্যার একটা রিপ্লাই দিয়েছেন, যদিও এটা আমার আর স্যারের ভেতরকার ব্যক্তিগত ইমেইল, তাও প্রাসংগিক বিবেচনা করে এখানে দিচ্ছি কারণ স্যার শুরু করেছেন tell your friend দিয়ে --
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
শাফি ভাই, আমার দেখা অভিজ্ঞতা হল, নেপালী থাকলেও অনেক স্যারই আসলে বাংলায় লেকচার দেন। আমাদের ক্লাসে একজন নেপালী ছাত্র ছিল। আমার বেশ ভাল বন্ধু। বেচারা বাংলায় ক্লাস করতে করতে শেষ পর্যন্ত খুব ভাল বাংলা শিখে যায় এক বছরের মধ্যেই। এখনও ওর সাথে কথা হলে বাংলাতেই হয়
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা বোধহয় বিষয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। অনেক বিষয় বাংলাতেই পড়ানো হয়। সেই বিষয়গুলোতে আমরা অনেকটা সমৃদ্ধ।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ঢাবি- প্রধানত ইংরেজি।
তবে স্যাররা বোঝানোর সময় / লেকচার দেবার সময় বাংলা ব্যবহার করে থাকেন।
"বাংলায় বিজ্ঞান" এই বিষয়টিকে আমাদের বাস্তবায়নযোগ্য করা সম্ভব। তার জন্য আমার কিছু নিজস্ব ভাবনা আছে।
১. বিভিন্ন ইউনিভাসির্টিতে অধিকাংশ লেকচারগুলোই বাংলায় হয়। আমাদের ছাএদের সেক্ষেত্রে এগুলো নোট করতে পারে বাংলায়। প্রকাশ করতে পারে বিভিন্ন মিডিয়ায়।
২. বঙ্কিম চন্দ্রের কথা মত ভাষার প্রান্জলতার দিকে খেয়াল বেশি রাখতে হবে। যে শব্দগুলো বাংলা করা সম্ভব নয় তা ইংরেজী উচ্চারনে থাকলে তাতে আমি কোন সমস্যা দেখি না। তাতে বরং আমাদের কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়।
৩. সত্যি কথা বলতে কি বাংলা ভাষায় অনুবাদ করা যতটা সহজ মনে করা হচ্ছে ততটা সহজ নয়। পরিভাষার অপ্রতুলতাকে এক্ষেত্রে দায়ী করা যেতে পারে।
৪. দেশে বিজ্ঞান বিষয়ক কর্মশালা গুলো বাংলা করা হলে তাতে আমরা বেশ এগিয়ে যেতে পারতাম।
৫. সর্বোপরি টাকার জন্য লিখতে হবে এই মন মানসিকতা থেকেই আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। তাহলেই উইকিপিডিয়াকে আরও স্বমৃদ্ধ করা সম্ভব হবে। ফেসবুকে আমরা যে পরিমান সময় বের করি তা দিয়ে প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে তিনটি নিবন্ধ লিখা যায়।
মাতৃভাষায় বিজ্ঞান চর্চা কোন অলীক স্বপ্ন নয়, অন্তত আমার কাছে তাই মনে হয়।
বাংলাতে বিজ্ঞান চর্চা অতি অল্প পরিসরে অবশ্যই সম্বব। কিন্তু আমাদের ভেবে দেখা উচিত, বাংলাতে বেশি সুবিধা নাকি ইংরেজিতে বেশি সুবিধা হবে। বিজ্ঞান চর্চা মানে শুধু মাত্র পাঠ্যপুস্তক পড়া নয়। বিজ্ঞান চর্চার জন্য পাঠ্যপুস্তকের বাইরেও অনেক বই রিফারেন্স হিসাবে পড়ার প্রয়োজন। এসব লক্ষ লক্ষ বই বাংলাতে কে অনুবাদ করবে?? প্রতি বছর হাজার হাজার যেসব পেপার পাবলিশ হয় সেগুলো কে অনুবাদ করবে??
বাংলাদেশে ক্লাস ১২ পর্যন্ত বিজ্ঞানের যেসব বই পড়ানো হয়, সেগুলো থেকে বিজ্ঞানের কেবল প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যায়। সম্মান শ্রেণীতে ধারণা গুলো আরো পাকাপোক্ত হয়। এর পরের ধাপগুলোতেই শুরু হয় বিজ্ঞান চর্চা। আমি যদি আমার থিসিস পেপার বাংলায় লিখি, বিশ্বের কয়জন তা বুঝবে?? বিজ্ঞান চর্চা মানে তো শুধু নিজে পড়াশোনা কারা নয়, বিভিন্ন গবেষণার ফলাফল বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধারও বিজ্ঞান চার্চার অংশ।
সবদিক বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, বাংলা নাকি ইংরেজি, কোনটাতে বিজ্ঞান চার্চা আমাদের জন্য সুবিধাজনক এবং ফলপ্রসূ।
নিশ্চয়ই। আমাদের ভেবে দেখা উচিত বাংলাতে বেশি সুবিধা নাকি ইংরেজিতে বেশি সুবিধা!
ইংরেজিতে বিজ্ঞান পাঠের সুবিধা হচ্ছে, আগামী বছর থেকেই উচ্চশিক্ষার্থে বিদেশগামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়বে! যারা বিদেশে যাবে তাদের সম্ভবত খানিকটা সুবিধা হবে! এখন যে হারে আমরা উচ্চতর গবেষক পাই (বেশিরভাগই দেশের বাইরে), সেই হারও সম্ভবত খানিকটা বাড়বে! বাদবাকি পরিস্থিতি একই থাকবে।
বাংলায় বিজ্ঞান পাঠের সুবিধা হচ্ছে, বিজ্ঞানের ধারনা সাধারণের কাছে পৌঁছবে। তাতে আগামী ১০ বছরে কিছুই হবে না। কিন্তু একটা সময়ে সাধারণের মাঝে একটা বিজ্ঞানবোধ তৈরি হয়ে যাবে। বিজ্ঞান সাধারণের কাছে আসবে। সেই সময়ের বাংলাদেশের বিজ্ঞান শিক্ষার্থীর সংখ্যা এবং মান নিন্ম/উচ্চ সব স্তরেই কীরকম হবে বলে আপনার মনে হয়?
বিজ্ঞান চর্চার জন্য হাজারে হাজারে রেফারেন্স/জার্নাল পড়া প্রয়োজন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু সেটা কারা পড়বে? বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের ১০০ শিক্ষার্থীর মধ্যে কতজন উচ্চতর গবেষণায় আসতে চায়/আসে বলে আপনার ধারনা? ১০ জন? সেই ১০ জনের জনের জন্য আপনি অবোধ্য বিজ্ঞান সবার ঘাড়ে চাপাবেন?
বলে রাখি, বিজ্ঞানের ভাষা কিন্তু ইংরেজি নয়।
আমি ভালোরকম ইংরেজিও শিখতে বলছি। যার ভেতরে বিজ্ঞানের স্পষ্ট ধারনা রয়েছে। আর যে ভালো ইংরেজি জানে, তারজন্য প্রয়োজনে ইংরেজিতে বিজ্ঞানপাঠও কষ্টকর নয়।
আমরা কিন্তু একটি জাতির সার্বজনীন বিজ্ঞান পরিমণ্ডলের কথা বলছি। আপনার মতামত শুনতে আগ্রহী।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ডঃ ইকবালের মূল লেখাটির ভুলগুলো চোখে পড়ে দুঃখিত হলাম। আমি নিশ্চিত ভুলগুলো অনিচ্ছাকৃত বা অসাবধাণতাবশতঃ এসেছে। তবু একজন অনুকরণীয় ব্যক্তির লেখায় এতোগুলো ভুল চোখে পড়ার মতো। নিশ্চিতভাবে প্রুফরিড করা হয়নি মনে হয়েছে।
প্যারা ১:
"believe it or not, it is" হবে।
উদাহরন দিতে like এর পরিবর্তে such as ব্যবহার বেশী গ্রহণযোগ্য।
প্যারা ৫:
প্রথম ক্ষেত্রে প্রেজেন্ট টেন্স ব্যবহার অর্থ বদলে দিয়েছে। মনে হচ্ছে discover টা নিয়মিত ঘটে থাকে। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে than হবে।
প্যারা ৮:
that বাদ পড়েছে।
সর্বশেষ বাক্যটির দুটো অংশ প্যারালাল নয়। প্রথম অংশে "আমাদের --- করতে হবে" -- বর্তমান এর সাথে "আমাদের ভাষা --- হয়ে যাবে" -- ভবিষ্যত। একটি সঠিক সমাধাণ এরকম হতে পারে:
We have to keep writing science books using Bengali and thus, albeit very slowly, we can expect our language to become science-ready.
প্যারা ৯:
সাবজেক্ট ভার্বের সাথে মেলে না। সঠিকটা এরকম হবে:
So the terminologies ---- are not in Bengali.
প্যারা ১০:
can বাদ পড়েছে।
প্যারা ১১:
where অতিরিক্ত ব্যবহৃত হয়েছে। দুটো where ই কোন স্থান নির্দেশ করে না।
জটিল জিনিস লক্ষ্য করেছেনতো!!!
মন্তব্যের জন্য সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
নতুন মন্তব্য করুন