চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরষ্কার ২০১২: জাদুকরী কোষ, কোষের জাদুকর

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি
লিখেছেন অনার্য সঙ্গীত (তারিখ: শনি, ২০/১০/২০১২ - ৭:৪৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কীভাবে একটা গ্রাম বানাতে হয় জানেন?

একটি গ্রামে কী কী থাকে তা নিশ্চয়ই জানেন? এই লেখাটিতে আমরা একটি গ্রাম তৈরি করার কথা বলব। এই লেখাটিতে আমি একটি গড়পরতা গ্রামের কথা বলছি। কিন্তু চাইলে আপনি নিজের মত করেও এটাকে বদলে নিতে পারেন।

গ্রামের শুরুতেই প্রয়োজন একটি ভূখণ্ড। সেই ভূখণ্ডে পর্যাপ্ত মুক্ত বাতাসের ব্যবস্থা থাকতে হবে। গ্রামের মাঝ দিয়ে যেন বয়ে যায় স্রোতস্বীনি নদী। আড়মোড়া ভাঙা পাখির মত শাখা-প্রশাখা মেলে দিয়ে মেলে সেই নদী যেন গ্রামটাকে জড়িয়ে রাখে। একটা ভূখণ্ড হল। শাখামেলা নদীও হল। নাম দেয়া যাক। আমাদের এই গাঁয়ের নামটি খঞ্জনা। আমাদের এই নদীর নামটি অঞ্জনা।

গ্রামের যে নদী, সেই নদীই হচ্ছে গ্রামের রাস্তা। নদীতে শ্রমিকেরা চলাচল করবেন। যার বাড়িতে যা প্রয়োজন তা পৌঁছে যাবে নদীপথে। এই নদীতেই আবার টহল দিয়ে বেড়াবেন যোদ্ধারা। যোদ্ধারা সভ্য। তাঁরা এই গ্রামেরই কোন বাড়ির সন্তান। এই গ্রাম তাঁদের মায়ের মতই। তাঁরা শত্রুমিত্র চেনেন। তাঁদের হাতে কখনো গ্রামের সাধারন মানুষ কষ্ট পায়না। যোদ্ধারা যদি সাধারণের শত্রু হয়ে ওঠে তখন গ্রামটাই ধ্বংস হয়ে যায়।

গ্রামে কুমোরেরা থাকবেন, কামারেরা থাকবেন, কৃষকেরা থাকবেন, তাঁতীরা থাকবেন, শত্রুর সঙ্গে লড়বার জন্য যোদ্ধারা থাকবেন। গ্রামের কখন কী প্রয়োজন তা সকলেই জানতে পাবেন সংবাদ মাধ্যমে। ঝটপট গ্রামের প্রয়োজন মেটাবেন তাঁরা।

গ্রামে আর থাকবে শিশুরা। শিশুরা তাঁতী নয়, কুমোর নয়, কামার নয়, কৃষক নয়, যোদ্ধা নয়। শিশুরা গ্রামের ভবিষ্যত। এই শিশুরাই যখন বেড়ে ওঠে তখন তারা শ্রমিক হয়ে ওঠে। কামার কুমোর তাঁতী এমনকি আগামী দিনের যোদ্ধা হয়ে ওঠে তারাই।

আপনি যদি আপনার শরীরের কথা চিন্তা করেন, তাহলে সেটাকে এরকম একটি গ্রামের সঙ্গে মিলিয়ে নিতে পারেন।

শরীরের একেক অংশে থাকে একেক রকমের কোষ। রক্তের কোষগুলো যেমন, লোহার ছোট ছোট টুকরো ধরে থাকায় যে কোষগুলোর রঙ হয়ে গেছে লাল, সেগুলোকে বলে রক্তের লোহিত কণিকা। লোহার টুকরোগুলো খুব দরকারী। কোষে কোষে অক্সিজেন পৌঁছে দিতে গেলে এসব কোষের লোহা লাগবেই। যে কোষগুলোর কোন রং নেই, আকারে বেশ বড়। এগুলোকে বলে শ্বেত কণিকা। এরা কিন্তু অনেক রকমের। কেউ কেউ আছে শরীরে জীবাণু ঢুকলে সেই জীবাণু ধরে ধরে খেয়ে ফেলে। তারপর আরো যারা রোগপ্রতিরোধী কোষ রয়েছে তাদের সংকেত দেয়। কেউ কেউ রয়েছে জীবাণুর গায়ে বিষ ছেড়ে দেয়।

রক্তের ভেতরে কয়েকটা জীবাণু ছেড়ে দিয়ে যদি মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করেন তাহলে আপনি বিস্ময়ে হতবাক হয়ে যাবেন। গিলেখাদক কোষেদের জীবাণু ধরে ধরে গিলে খেতে তো নিজের চোখেই দেখবেন। দেখবেন একটা বিশেষ কোষ আছে যারা খুব ছটফটে। জীবাণুর সংস্পর্শে এলেই থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে এরা দুম করে ফেটে মরে যাবে। ভাববেন না খুব বিপদ হলো। মরে যাবার জন্যেই এরা জীবাণুর কাছে যায়। এইসব কোষেরা মরে গেলে কোষের ভেতরে যে ডিএনএ'র সুতা থাকে সেসব বাইরে বেরিয়ে গিয়ে জালের মত জীবাণুকে আটকে ফেলে। এইসব জীবাণু তখন আর শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারেনা। অন্য জীবাণুরোধী কোষেরা এসে তখন তাদের মারে। জাল ফেলে জীবাণু ধরার এই বিষয়টি খুব বেশীদিন হয়নি আমরা জানি। এই বিষয়ে জানতে আমাদের এখনো অনেক বাকি।

জীবাণু আর রোগপ্রতিরোধী কোষ নিয়ে আমার বেশী নাড়াচাড়া বলে আমি এদের কথাই বললাম বেশি। একবার একটা কিছু বলতে থাকলে সেটা নিয়ে একগাদা কথা বলে ফেলার বদভ্যাসের জন্যেও ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। তবে আপনারা তো এমনিতেই জানেন শরীরে আছে কত কত রকমের আলাদা আলাদা কোষ। তাদের সবার কাজ আলাদা। সবার কাজ ভাগ করা। কখনো তারা একে অপরকে সাহায্য করে। একটা সুশৃংখল গ্রামের মত।

শরীরের এই যে এত এত কোষ এসব কোথা থেকে এসেছে জানেন? সব এসেছে একটিমাত্র কোষ থেকে। দারুণ না?

মানুষের শরীরের শুরু হয় মায়ের একটি ডিম্বাণু থেকে। ডিম্বাণু প্রাণের সুতিকাগার বটে কিন্তু কোষ হিসেবে অপরিপূর্ণ। একটি কোষে যতটা ক্রোমোজোম থাকা দরকার, ডিম্বাণুতে থাকে তার মোটে অর্ধেক। ডিম্বাণু থেকে প্রাণের শুরু করে দেয় শুক্রাণু। ডিম্বাণুতে যেমন কোষের প্রয়োজনীয় ক্রোমোজমের অর্ধেক থাকে, শুক্রাণুতেও তেমনি। একটি শুক্রাণু ডিম্বাণুতে প্রয়োজনীয় ক্রোমোজমের বয়ে নিয়ে আসে। ডিম্বাণু যখন শুক্রাণু থেকে প্রয়োজনীয় বাকি ক্রোমোজমগুলো পেয়ে যায় তখন একটি পূর্ণাঙ্গ কোষ হিসেবে সেটি খুব দ্রুত বিভাজিত হতে থাকে। সেই একটি কোষ থেকে শরীরের সব কোষ তৈরি হয়।

এইসব কোষ তৈরি হলেই সব শেষ নয়। এসব কোষেরা মরেও যায়। শরীরে কোষের মৃত্যু হয় আরেক চমকপ্রদ উপায়ে। স্বাভাবিকভাবে মৃত কোষ ফেটে যায় না ভেঙে যায় না। ছোট ছোট থলিতে পরিণত হয়। একটি বড় ময়দার বল ভেঙে অনেকগুলো ছোট ছোট ময়দার বল তৈরি করলে যেমন হয় সেরকম। ছোট ছোট থলির মত কোষের মৃত টুকরোগুলোকে রক্তের শ্বেত কণিকারা খেয়ে ফেলে। বর্জ্য নিষ্কাষণের মত। (ঠিক ধরেছেন। যেসব কোষেরা জীবাণু খেয়ে ফেলে, তারাই শরীরের মৃত কোষের টুকরো খায়।)

কোষেরা মরে গেলেই সব শেষ নয়। মৃত কোষের জায়গা দখল করে নতুন কোষ।

এইতো। যে কথাটি বলতে চেয়েছিলাম এইমাত্র তার ভূমিকা শেষ করা গেল।

আপনারা জানলেন, শরীরে দুটি খুব চমকপ্রদ ব্যপার ঘটে। প্রথমটি হচ্ছে, একটিমাত্র কোষ থেকে শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। আরেকটি হচ্ছে, শরীরের অনেক কোষই একটা সময় পরে মরে যায়। তখন নতুন কোষ এসে তাদের জায়গা নেয়। নতুন সেই কোষেরা তো আকাশ থেকে পড়ে না। তাদের তৈরি হতে হয়।

এই যে কোষেরা শরীরের সব অঙ্গপ্রত্যঙ্গ আর বিশেষায়িত কোষে (বিশেষায়িত কোষ মানে বিশেষ কোন কাজের জন্য তৈরি কোষ। রক্ত কোষ, পাকস্থলীর কোষ এসব।) পরিণত হতে পারে তাদের বলে স্টেম সেল। ২০১২'তে এসে স্টেম সেলের নাম না শুনে থাকার উপায় নেই। স্টেম সেল সব কোষের প্রাচীন অবস্থা। স্টেম সেলের দুটো প্রধান ভাগ। একটা হচ্ছে সোমাটিক স্টেম সেল। অনেকে এডাল্ট স্টেম সেলও বলেন। এরা নিজেরা বিভাজিত হয়ে নির্দিষ্ট কিছু কোষ বানাতে পারে। যেমন ধরেন যার কাজ পাকস্থলীর কোষ বানানো সে সেটাই কেবল বানায়। হেমাটোপোয়েটিক স্টেম সেল বলে একটা দল আছে তারা জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করবার জন্য প্রয়োজনীয় রক্ষী কোষ বানায়। এডাল্ট স্টেম সেল অনেক কিছুই পারে, কিন্তু সব পারে না। সব পারে যারা তাদের বলে এমব্রায়োনিক স্টেম সেল। স্টেম সেলের দুটি মূল প্রকারের মধ্যে এটি একটি।

তারমানে শুরুতে বিশেষ যে এমব্রায়োনিক স্টেম সেল ছিল তারা তৈরি করল শরীরের সবকিছু। তাদেরকে বলা যাক শরীরের প্রাথমিক কোষ। অথবা শিশু কোষ।
প্রাথমিক কোষেরা যে কোষে রূপান্তরিত হয়ে সব অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বানালো তারা হলো বুড়ো কোষ।
প্রাথমিক কোষেরা সোমাটিক স্টেম সেল নামের আরেক ধরনের আধবুড়ো কোষেও রূপান্তরিত হলো। কিন্তু এদের ক্ষমতা সীমিত। এই লেখায় এদের নিয়ে আলোচনা নেই।

এমব্রায়োনিক স্টেম সেল নিয়েই খানিক বকবক করব। এমব্রায়ো মানে জানেন তো? মায়ের পেটে একেবারে প্রথম কয়েকদিন আপনি গোটাকয়েক কোষের যে ছোট্ট একটা দলা হয়ে খাবি খাচ্ছিলেন সেটা হচ্ছে এমব্রায়ো। এমব্রায়োতে যে গোটাকয়েক কোষ ছিল সেগুলো থেকেই আপনার হাত পা নাক মুখ চোখ এবং ভুঁড়ি তৈরি। এমব্রায়োর যে কোষগুলো ভবিষ্যতে সবরকমের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ইত্যাদি তৈরি করতে পারে এদেরকে এমব্রায়োনিক স্টেম সেল বলে। এরাই প্রাথমিক কোষ, যাদের কথা বললাম।

এমব্রায়োনিক স্টেম সেল এক জাদুর কোষ। এটাকে চাষ করা একটু শক্ত। কিন্তু ধরে বেঁধে চাষ করে ওদের ভাষায় যদি বলতে পারেন হৃদপিণ্ড হয়ে ওঠো তাহলে এরা সংখ্যায় বেড়ে গিয়ে একটা আস্ত হৃদপিণ্ড হয়ে উঠবে। যদি বলতে পারেন যকৃত হও, তাহলে এরা যকৃত হয়ে যাবে। এদের ভাষাটা একটু কঠিন। আমরা একটু একটু করে শিখছি। আর তাছাড়া এরা যে পরিবেশে বেড়ে ওঠে সেরকম পরিবেশ দেয়া একটু কঠিন। কিন্তু ভেবে দেখুন এমব্রায়োনিক স্টেম সেলের ক্ষমতা। ধরুন আপনি মূর্খের মত প্রেমে পড়ে প্রেমিকার হাতে হৃদয়ের দফারফা করিয়েছেন, অথবা কোন দূর্ঘটনায় আস্ত যকৃত ভর্তা করে ফেলেছেন, অথবা সংক্রামক রোগে স্নায়ুতন্ত্রের অর্ধেকটা ধ্বংস করে ফেলেছেন। এরকম দূঘর্টনায় এমনিতে আপনাকে খুঁজতে হবে আপনার সঙ্গে মেলে এরকম কারো অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা যায় কিনা। কিন্তু সেরকম কাউকে পাবেন কোথায়? কাউকে পেলেই তো আর হবে না। একশোভাগ একইরকম অংগ তো পাওয়া সম্ভব নয়। অন্য কারো অঙ্গ লাগালেই আপনার শরীরের রক্ষী কোষেরা বলবে এ অঙ্গ আমরা চিনিনা। এটা নিশ্চয়ই শত্রুর অংশ। মারো একে। এই অবস্থা থেকে বাঁচতে অষুধ দিয়ে আপনার শরীরের রক্ষী কোষেদের নির্জিব করিয়ে রাখতে হবে। সেইখানে আরো বড় বিপদ। আপনার শরীরের যতটা কোষ আছে তারচে দশগুণ আছে জীবাণু। শরীরের রক্ষীরা নির্জিব হয়ে পড়লে এইসব জীবাণু একেকটা আপনাকে একশোবার নরক দেখিয়ে আনবে। সবশেষেও সেই অঙ্গ কাজ করবে কীনা কে জানে! ইত্যাদি ইত্যাদি আরো অসংখ্যা জটিলতার কথা তো আমি নিজেও জানিনা! শুধু জানি এ এক দারুণ কঠিন ব্যপার।

অন্যদিকে একটি এমব্রায়োনিক স্টেম সেলকে যদি বলা যায়, যাও বাবা, ওমুকের হৃদপিণ্ড ছাতু হয়ে গেছে, তোমরা আরেক কপি বানাও জলদি। আর তারাও যদি আপনার কথা শুনে আরেক কপি আপনারই হৃদপিণ্ড বানিয়ে দেয়? অথবা যকৃত, অথবা আর যেটা প্রয়োজন। তাহলে নিজেরই হৃদপিণ্ড নিজে লাগিয়ে নিলেন। হৃদয়ের অনেক কপি করে অনেককে হৃদয় দিতে পারলেন। (আমি কয়েকজনকে চিনি যাঁরা হৃদয় দেয়ার বিষয়ে খুব উদার। উন্মুক্তভাবে তাঁরা হৃদয় বিলান। আমার ধারনা তাঁরা প্রাথমিক কোষ গবেষণার ওস্তাদ লোক। নিজেদের রান্নাঘরে তারা গোপনে অতিরিক্ত হৃদপিণ্ড তৈরি করেন।)

মূল কথায় ফিরে আসি। এমব্রায়োনিক স্টেম সেল এক অমিত সম্ভাবণা। এদেরকে বলে প্লুরিপটেন্ট সেল। আমার ভুল না হয়ে থাকলে, Plural এবং Potential শব্দদ্বয় থেকে এসেছে Pluripotent। মানে যাদের রয়েছে অনেক সম্ভাবণা।

এতক্ষণে কী বলেছি আরেকবার মনে করিয়ে দেই। জীবণের প্রথম পর্যায়ে "এমব্রায়োনিক স্টেম সেল" অথবা প্রাথমিক কোষ থেকে সকল অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরি হয়। এই কোষগুলোর রয়েছে অমিত সম্ভাবণা। এদেরকে যদি ঠিকঠিক পরিবেশে ঠিক ঠিক ভাবে সংকেত দেয়া যায়, (মানে এদের ভাষায় এদেরকে আদেশ দেয়া যায়) তাহলে এরা যেকোন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ তৈরি করতে পারে। এরা এমনকি একটা আস্ত মানুষও তৈরি করে ফেলতে পারে।

Untitled drawing (1)

চিকিৎসা বিজ্ঞানে সেইজন্য স্টেম সেল, বিশেষত প্লুরিপটেন্ট কোষ এক হিরের খনি। আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচে সেক্সি বিষয়গুলোর মধ্যে এটি একটি। প্লুরিপটেন্ট কোষ যাকে বলে জীব বিজ্ঞানের অ্যাঞ্জেলিনা জোলি, নাটালি পোটর্ম্যান, কেইরা নাইটলি, আলবার্ট আইনস্টাইন, রবার্ট কখ, লুই পাস্তুর। যোগ্যতার হিসেবে এরা একেকটা নিকোলা টেসলা, লিওনার্দো দ্য ভিঞ্চি!

এবার যে চিকিৎসায় নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে। তা দেয়া হয়েছে শরীরের এই প্রাথমিক কোষ নিয়ে গবেষণার জন্য। স্যার জন বি. গর্ডন এবং শিনয়া ইয়ামানাকা পেয়েছেন এই পুরষ্কার। কী করেছেন তাঁরা?

সহজে বলার চেষ্টা করি।

শরীরের প্রাথমিক কোষকে দিয়ে জুতো সেলাই থেকে চণ্ডীপাঠ করানো যায়। সে তো জানলেন। কিন্তু সেই কোষ পাবেন কোথায়? আপনার শরীরে স্টেম সেল আছে বটে কিন্তু সেসব তো সোমাটিক বা অ্যাডাল্ট। তাদের ক্ষমতা রয়েছে বটে কিন্তু তা সীমাবদ্ধ! (এসব কোষ নিয়েও কিন্তু দারুণ সম্ভাবণাময় গবেষণা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের উদ্দেশ্য প্রাথমিক কোষ পাওয়া)।

আগে বিজ্ঞানীদের ধারনা ছিল কোষের বৃদ্ধি একমুখী। কোষ একবার বিশেষায়িত হয়ে গেলে সেই কোষকে আর প্রাথমিক কোষে রুপান্তরিত করা যায় না। মানে যে কোষ চাষবাসে লেগেছে তাকে দিয়ে আর তবলা বাজানো যাবে না। যে তবলা বাজাতে শুরু করেছে সে কার কখনো গান গাইবে না।

১৯৫২ সালে রবার্ট ব্রিগস আর থমাস কিং নামের দুজন বিজ্ঞানী একটি কোষের নিউক্লিয়াস (মানে কোষের নিয়ন্ত্রণের সব উপাদানের থলি) একটি ডিম্বাণুতে ঢুকিয়ে দিয়ে দিতে সফল হন। (নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপনের এই ধারনাটি অবশ্য প্রথম দেন নোবেল বিজয়ী জার্মান বিজ্ঞানী হান্স স্পেমান)। ডিম্বাণুর সাধারণ গুণাবলী তো আপনারা জানেনই। এটি উপযুক্ত সংখ্যাক ক্রোমোজম এবং উপযুক্ত সংকেত পেলে বিভাজিত হয় একটি নতুন প্রাণ তেরি করে। সাধারণভাবে একটি ডিম্বাণুতে যথেষ্ঠ ক্রোমোজম পৌঁছে দিয়ে সেই সংকেতটি দেয় একটি শুক্রাণু। কিন্তু পরীক্ষাগারে ব্রিগস এবং কিং ডিম্বানুতে আগে থেকেই যে ক্রোমোজম ছিল সেগুলো আল্ট্রোভায়োলেট রশ্মি দিয়ে নষ্ট করে দিলেন (আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মি ডিএনএ'র স্বাভাবিক গঠন নষ্ট করে দিতে পারে)। তারপর সেই ক্রোমোজমহীন ডিম্বানুতে অন্য কোষ থেকে আস্ত নিউক্লিয়াস এনে ঢুকিয়ে দিলেন। উদাহরণ দেই, ডিম্বানু হচ্ছে একটা এক চাকা ওয়ালা সাইকেলের মত। শুক্রাণু ওই সাইকেলের অন্য চাকাটির যোগান দেয় আর সাথে চলতে শুরু করার জন্য একটা ধাক্কাও দিয়ে দেয়। ব্রিগস আর কিং এক চাকাওয়ালা সাইকেল থেকে চাকাটা খুলে নিয়ে সেটাকে একেবারে মুড়ো করে দিলেন। তারপর দুটো নতুন চাকা এনে জুড়ে দিলেন। তারপর তাতে দিলেন ঠেলা।

ক্লোন করা ভেড়া ডলির কথা মনে আছে আপনাদের? ডলির ক্লোন করা হয়েছিল এভাবে। একটি ডিম্বানুতে তার একটি কোষের নিউক্লিয়াস ঢুকিয়ে দিয়ে তাকে তৈরি করা হয়। আপনার কোষের একটি নিউক্লিয়াস নিয়ে যদি সেটি একটি ডিম্বানুর মাঝে ঢুকিয়ে দিয়ে বড় করা যায় তাহলে আরেকটি আপনি তৈরি হবেন। সেটাকে আপনার ক্লোন বলবে (কখনো কখনো সামান্য ব্যতিক্রম হতে পারে তবে সেই আলোচনায় আজকে যাবো না)।

রবার্ট ব্রিগস আর থমাস কিং একটি কোষের নিউক্লিয়াস নিয়ে ডিম্বাণুতে ঢুকিয়ে সেই একই কোষ তৈরি করতে গিয়ে ব্যর্থ হন (এই কথাটি খুব মোটাদাগে বলছি এজন্য যে পুরো বিষয়টা ব্যাখ্যা করা এই লেখায় সম্ভব নয়)। তখন কোষের একমূখী নীতি আরো শক্ত হয়। মানুষ জেনে যায় হাতির মাথা কেটে ঘোড়ার মাথা বসিয়ে দিলেই সেটা ঘোড়ার মত ভাবতে শেখে না। ফাঁকা ডিম্বাণুতে একটা কোষের নিউক্লিয়াস ঢুকিয়ে দিলেই সেটা ওই কোষ হিসেবে বেড়ে ওঠে না।

আমাদের বিজ্ঞানী গর্ডন সেই 'হয় না, হবে না' মেনে নিলেন না। তিনি আবারো চেষ্টা করলেন। ব্যাঙাচির একটি কোষের নিউক্লিয়াস নিয়ে তিনি ব্যাঙের ফাঁকা ডিম্বানুতে ঢুকিয়ে দিলেন। তারপর সব ফেলে ব্রিটেন থেকে আমেরিকা গেলেন একেবারে অন্য বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে। চারবছর পরে তিনি যখন ফিরে এসেছেন ততদিনে তাঁর সেই তৈরি করা কোষ থেকে ব্যাঙাচি হয়ে ব্যাঙগুলো পুর্ণ হয়ে উঠেছে। একটি সাধারণ পূর্ণাঙ্গ কোষকে একটি প্রাথমিক কোষে রূপান্তরিত করার চেষ্টা তাঁর সফল হয়েছে। কিন্তু কেউ তাঁর কথা পাত্তাই দিল না। সেই গবেষণা গ্রহন করতে পৃথিবীর আরো প্রায় ১০ বছর লাগলো। এই আবিষ্কারের গুরুত্ব কতখানি সে বুঝতে লাগলো ৫০ বছর। তিনি নোবেল প্রাইজ পেলেন আবিষ্কারের ৫০ বছর পর। শিনয়া ইয়ামানাকা'র সঙ্গে যৌথভাবে।

প্রফেসর জন বি. গর্ডন (ছবি: নোবেলপ্রাইজ.অর্গ)

শিনয়া ইয়ামানাকা কী করেছেন বলি।

গর্ডনের বিষয়টাতো জানলেনই। একটা সাধারণ বুড়ো কোষ থেকে তিনি ব্যাঙ বানিয়ে দেখালেন যে বুড়ো কোষও প্রাথমিক শিশু কোষে পরিণত করা যেতে পারে। যে শিশু কোষ আস্ত প্রাণি তৈরি করতে সক্ষম। কিন্তু তার জন্য বুড়ো কোষের নিউক্লিয়াস নিয়ে ডিম্বাণুতে বসিয়ে দিতে হবে। এটা যুগান্তকারী আবিষ্কার। কিন্তু বুদ্ধিমান মানুষেরা ভাবতে লাগলেন, কাটাকাটি না করে একটা বুড়োকোষকে আস্ত রেখেই তাকে একটি শিশু কোষে পরিণত করা যায় কিনা। প্রাথমিককভাবে বৈজ্ঞানিকরা ভাবলেন, সেটি সম্ভব নয়।

প্রতিভাবানরাই বৃত্তের বাইরে ভাবতে পারেন। 'হয়না হবেনা' ইয়ামানাকাও মেনে নিলেন না। একটি বুড়ো কোষের নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন ছাড়াই তিনি সেটাকে শিশু কোষে পরিণত করতে চাইলেন। খানিকটা বৈজ্ঞানিক বিস্তারিতসহ পুরো বিষয়টি জানতে নোবেল প্রাইজ ওয়েব সাইটের এই ডকুমেন্টটি পড়ে নেয়া ভালো। ইয়ামানাকা'র গবেষণা প্রবন্ধ পড়ে ফেলা সবচে ভালো। আমি নিজে জটিল বিজ্ঞান লিখতে পারি না। আমার জানাশোনাও খুব কম। তাই জটিলতায় না গিয়ে সহজে বলছি।

আপনারা নিশ্চয়ই এতদিনে জেনে গেছেন যে, কোষের ভেতরে ডিএনএ নামের এক ধরনের সুতো থাকে। সেই সুতোতে জীবনের সব হিসেব-নিয়ম-কানুন লেখা। ডিএনএ-তে যা লেখা থাকে কোষ সেটা মেনে চলতে বাধ্য। কিন্তু আবার, ডিএনএ-তে জীবনের সকল পর্যায়ের সকল নিয়ম কানুন লেখা থাকে। সেখানে যেমন লেখা থাকে আস্তে হাঁটো। তেমনি লেখা থাকে ঝেেড় দৌড় দাও। একটি কোষ কোন সময়ে কী করবে?

খুব গোঁজামিল দিয়ে বললে, ডিএনএ-র একটি অংশ যেটি বিশেষ কোন কাজের জন্য নির্দিষ্ট সেটাকে একটি জিন বলে। একটা রান্নার বইয়ের কথা ভাবুন। বইটা একটা ডিএনএ। নির্দিষ্ট খাবার রান্নার উপর একটি অধ্যায় হচ্ছে একেকটি জিন। ডিএনএ-তে ঝেড়ে দৌড় দাও লেখা অংশ একটি জিন। লাফাতে থাকো অংশটা আরেকটি জিন। গান গাও অংশটা একটি জিন। কোন জিনটি কখন প্রকাশিত হবে (অথবা কাজ করতে শুরু করবে। expression এর বাংলা করার চেষ্টা করেছি।) সেটা নির্ভর করে অনেক বিষয়ের উপর। সেখানে যেমন পরিবেশের প্রভাব থাকতে পারে তেমনি অন্য জিন, কোষের পরিবেশ, কোষের কোন উপাদান ইত্যাদিরও প্রভাব থাকতে পারে।

ইয়ামানাকা দেখলেন, কোষগুলো যখন শিশু থাকে তখন তাদের ভেতরে "বিশেষ" অনেকগুলো জিন কাজ করে। এরকম ২৪টি জিনকে তিনি আলাদা করলেন যেগুলোকে তাঁর মনে হল যে কোষকে শিশু রাখার জন্য দায়ী। এরপর তিনি একটা বুড়ো কোষকে নিয়ে তার ভেতরে ওই ২৪টি জিন প্রকাশিত হবার ব্যবস্থা করলেন। সেই হলো শুরু। ২৪টি জিনকে প্রকাশিত করার ব্যবস্থা করে একটি বুড়ো কোষকেও প্রাথমিক কোষ বানিয়ে ফেললেন তিনি। প্রাথমিক অবস্থায় ইয়ামানাকার নির্দিষ্ট করা ২৪টি জিন ছিল একটা খসড়া হিসাব। তিনি নিশ্চিত ছিলেন না পুরো ২৪টি জিনই কোষকে শিশু রাখার জন্য জরুরি কিনা। একটি একটি করে তিনি ওই ২৪টি জিনের ভেতর থেকে সত্যি সত্যি যে জিনগুলি কোষকে শিশু বানাতে পারে সেই ৪টি জিন নির্দিষ্ট করেন। নাম মুখস্ত রাখার প্রয়োজন নেই। কিন্তু একটি অভাবনীয় তথ্য হিসেবে জেনে রাখতে পারেন। Oct3/4, Sox2, Klf4, এবং c-Myc ফ্যাক্টরগুলো (অথবা দায়ী জিনগুলো) আপনার একটি সাধারণ কোষকে একটি এমব্রায়োনিক স্টেম সেল অথবা প্লুরিপটেন্ট কোষে পরিণত করতে পারে। যাকে আমরা বলেছি শরীরের প্রাথমিক কোষ। সেই প্রাথমিক কোষটি থেকে ল্যাবরেটরিতে আপনার একটি আস্ত স্নায়ুতন্ত্র অথবা হৃদপিণ্ড বানানো যাবে। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে? আমি শুনেছি মানুষ চাঁদে গিয়েছে তা অনেকেই বিশ্বাস করে না। আমি জানি অনেকেই বিবর্তন মানে না। মানুষের প্রতিভার যেমন সীমা নেই তেমনি মানুষের গোঁড়ামি আর নির্বুদ্ধিতারও কোন সীমা নেই।


শিনয়া ইয়ামানাকা (ছবি: নোবেলপ্রাইজ.অর্গ)

আর কী বলব?
প্রফেসর গর্ডন অথবা ইয়ামানাকার জীবন বৃত্তান্ত ইত্যাদি নিশ্চয়ই আপনারা জেনে গিয়েছেন। নেটে অসংখ্য লেখা দেখেছি। গর্ডন কীভাবে সায়েন্সে পড়ার আবেদন করার মত শিক্ষার্থীও ছিলেন না, কীভাবে তাঁর শিক্ষকেরা তাঁকে একেবারে বাজে জঘণ্য শিক্ষার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়েছিল সেও নিশ্চয়ই আপনাদের অজানা নয়। একটা আবিষ্কারের ৬ বছরের ভেতরেই নোবেল পুরষ্কার পাওয়ার জন্য ইয়ামানাকার আবিষ্কারকে কত গুরুত্বপূর্ণ হতে হয়েছে তাও আপনাদের অবোধ্য নয়। (একটি ছোট্ট তথ্য দেই, ইয়ামানাকা'র সেই গবেষণাপত্রটি ৫ বছরে উদ্ধৃত হয়েছে প্রায় ৫ হাজার বার। জীববিজ্ঞানের একজন শিক্ষার্থীর জন্য আলাদীনের আশ্চর্য প্রদীপ পেয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখাও এরচে বাস্তব)।

(একটি কথা বলে রাখা প্রয়োজন। গর্ডন এবং ইয়ামানাকার কাজ একই ধারার। তাঁদের কাজের উদ্দেশ্যও একই। কিন্তু তাঁদের গবেষণার ধরণ সম্পূর্ণ ভিন্ন। ইয়ামানাকা যদিও বলেন, তাঁর কাজ নির্ভর করে আছে গর্ডনের কাজের উপর কিন্তু বাস্তবে ইয়ামানাকা কাজ করেছেন একেবারেই ভিন্নভাবে। গর্ডন যে সময়ে তাঁর আবিষ্কার করেছেন তখনকার বিজ্ঞানের ক্ষমতা আজকের বিজ্ঞানের মত ছিলনা। বিজ্ঞান তখনো আলাদা করে জিন নিয়ে কাজ করবার মত উন্নত হয়ে ওঠেনি। আর তাছাড়া, গর্ডন নিউক্লিয়াস প্রতিস্থাপন করেছেন। মস্তিস্ক বদলে দেয়ার মত। ইয়ামানাকা কেবল জিনের প্রকাশ নিয়ে কাজ করেছেন। কোষের নিউক্লিয়াস আলাদা করে ফেলেন নি।)

একটি গ্রাম তৈরির করছিলাম আমরা মনে আছে? আমরা জানতাম কৃষক শ্রমিক মজুরের ভেতরে শিশুর মনটুকু রয়েই যায়। কিন্তু সেই মনটাকে জাগিয়ে দিয়ে কৃষককেও শিশু করে ফেলা যায় তা আমাদের জানা ছিল না। গর্ডন আর ইয়ামানাকা আবিষ্কার করেছেন কীভাবে কৃষকের ভেতরে শিশুর মনটাকে জাগিয়ে তোলা যায়। কীভাবে কৃষক একটি শিশুতে বদলে যেতে পারেন। একটি খুব স্থায়ী আর সম্ভাবণাময় গ্রামের জন্য এটি কত দারুণ ব্যপার তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।

ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত।


মন্তব্য

শমশের এর ছবি

অসাধারণ বর্ণনা। গুরু গুরু

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ শমসের ভাই হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

ভ্রুণকোষের এই ক্ষমতা বিষয়ে হল্ডেনের জব্বর লাইনখানা মনে পড়ে গেল।

Woman Skeptic: Professor Haldane, even given the billions of years that you say were available for evolution, I simply cannot believe it is possible to go from a single cell to a complicated human body with its trillions of cells organized into bones and muscle and nerves, a heart that pumps without ceasing for decades, miles and miles of blood vessels and kidney tubules, and a brain capable of thinking and feeling.

Haldane: But Madam, you did it yourself! And it only took nine months.

এই স্টেম সেল গবেষণা নিয়ে আবার আমেরিকা-ইউরোপে গোঁড়া ক্রিশ্চানদের খুব হট্টগোল। এ চলবে না, এ যে খোদার উপর খোদকারি। যদ্দুর মনে পড়ে, আমেরিকায় একটা বিল এসেছিল, যে স্টেম সেল গবেষণায় কোনো পাবলিক ফান্ড দেওয়া যাবে না, কোনো পাবলিকলি ফান্ডেড সরঞ্জামও ব্যবহার করা যাবে না। তার মানে প্রতিটি ইউনিকে প্রতিটি গবেষণাযন্ত্র নতুন করে কিনতে হত। হালার্পো...

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

যুক্তি কাকে বলে সেটা সম্পর্কে এইসব যুক্তিবাদীদের কোন স্পষ্ট ধারনা নেই।

মানুষের নির্বুদ্ধিতার আসলেই কোন সীমা নেই।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তানিম এহসান এর ছবি

পড়তে পড়তে চোখের সামনে সব ছবি’র মত দেখতে পেলাম যেন। আপনার এইসব জটিল বিষয় বুঝিয়ে বলার ক্ষমতা বিস্ময়কর!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দীপু এর ছবি

দারুন।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
আমি অভিভূত হয়ে গেলাম লেখাটা পড়ে। যেহুতু আমার পড়াশুনার সাথে কিছুটা মেলে বিষয়গুলো, তাই বুঝতে পারছি আপনি কি চমৎকার ভাবে বর্ণনা করেছেন। এত সহজ, সাবলীল, সুন্দর।
সঙ্গীত ভাই, আপনার একটা বই লেখা উচিত জীববিজ্ঞান নিয়ে বাংলাতে।। প্রচুর মানুষ উপকৃত হবে। চলুক

ভালো থাকবেন। এই ধরনের পোস্ট আরও চাই। হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। বাংলা বিজ্ঞানের বই কিন্তু কম নেই বাজারে। খুঁজে দেখেছেন?

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

আসলে আপনার বলার ভঙ্গিটা খুব চমৎকার। মনে হয় যেন গল্প শুনছি। বাংলায় বিজ্ঞানের বই তো অবশ্যই আছে। কিন্তু বিজ্ঞানের বিশেষ করে জীববিজ্ঞানের জটিল বিষয়গুলো এমন গল্পের মত করে- কখনো শুনিনি, দেখিওনি কোন বইতে।

ইমরুল কায়েস এর ছবি

একটি সাধারণ পূর্ণাঙ্গ কোষকে একটি প্রাথমিক কোষে রূপান্তরিত করার চেষ্টা তাঁর সফল হয়েছে। কিন্তু কেউ তাঁর কথা পাত্তাই দিল না। সেই গবেষণা গ্রহন করতে পৃথিবীর আরো প্রায় ১০ বছর লাগলো।

এই দেরীর পিছনে কি কোন কারন ছিল?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দেরি হওয়ার পেছনে যে কী কী কারণ ছিল তা আমি সবটা জানিনা। জানার চেষ্টা করে আপনাকে পরে জানাতে পারি হয়তো।

তবে কয়েকটা কারণের কথা ধারনা করতে পারি। প্রথমত, ব্রিগস এবং কিং তাঁদের গবেষণায় যে বিষয়টি সম্ভব নয় প্রস্তাব করেছিলেন সেিট সম্ভব করেন গর্ডন। এইখানে একটা সংশয়ের সৃষ্টি হয়। গর্ডন নিজেও তাঁর গবেষণার বাস্তব ফল পান বেশ খানিকটা সময় পরে। আর সেই সময়ে এই বিষয়ে খুব কম কাজ হত বলে অন্যান্য গবেষণা থেকে আণুষাঙ্গিক প্রমাণ আসতেও অনেকটা সময় লাগে। তাছাড়া গবেষণা গ্রহন না করা মানে বাতিল বলে একেবারে ফেলে দেয়া হয়েছিল সেরকমও নয়। এই প্রসঙ্গে সেই সময়ে বিজ্ঞান পরিমণ্ডলের অবস্থান কেমন ছিল সেটি আমার জানা নেই। জানার চেষ্টা করব।

[‌গবেষণা গ্রহন করতে দেরি হওয়ার বিষয়টি আমি জেনেছি গর্ডনের একটি সাক্ষাৎকার থেকে।]

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ক্লোন৯৯ এর ছবি

চলুক চমৎকার

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি এর ছবি

হুম, কারণ ছিল । প্রথম প্রথম বিজ্ঞানীদের খুব বড় একটা দল মনে করত (এখনো অনেকে মনে করেন) ইয়ামানাকা নতুন আইপিএস (ইন্ডিউসড প্লুরিপটেন্ট সেল) তৈরী না করে ক্যান্সার কোষ তৈরী করে ফেলেছেন। যেটার পরিণতি হবে মারাত্নক। মনে করার কারনও আছে।খুব ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ কারন বলি । বিশেষ করে c-myc ফ‌্যাক্টরটিকে এখনও অনেকে বিশ্বাস করতে পারেননা, কারন ক্যান্সার কোষের মধ্যে এটি বেশ ভালভাবে প্রকাশিত(expression) হয় । পরে অনেকেই c-myc ছাড়া ips কোষ তৈরী করে দেখিয়েছেন (তেমন এফেক্টিভ না), তারপরেও বিশ্বাস করেনি লোকে। এখনো যে করে তাও না। কিন্তু আস্তে আস্তে এই ধারণাটা পরিবর্তন হচ্ছে। ইয়ামানাকা সম্ভবত গতবারেও লিস্টে ছিলেন, তাকে দেয়া হয়নি শেষ পর্যন্ত।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

(আপনি সম্ভবত ইমরুল কায়েসের প্রশ্নের জবাব দিতে চেয়েছেন। মন্তব্যের নিচে যে "জবাব" অপশনটি রয়েছে সেটা চেপে জবাব দিলে তা মন্তব্যের জবাব হিসেবে একসঙ্গে থাকে।)

একটা বিষয় কিন্তু নিশ্চিত, ক্যান্সার কোষ এবং প্লুরিপটেন্ট কোষ যেভাবে বৃদ্ধি পায় তাতে অনেক মিল রয়েছে। একই ধরনের একাধিক প্রভাবকের উপস্থিতি সেজন্য দুই ধরনের কোষেই দেখা যাবে। এটা আমার মনে হয় স্বাভাবিক, তাইনা?

আপনার মন্তব্য ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সুমন্ত  এর ছবি

ভাই অনেক সুন্দর হয়েছে লেখাটা। স্টেম সেল নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে আমার। দুর্দান্ত একটা বিষয় কিন্তু এর সফল প্রয়োগের জন্য আমাদেরকে আরও কয়েক দশক অপেক্ষা করতে হবে। এই বছরের শুরুর দিকে নেচার সাময়িকীতে স্টেম সেল নিয়ে একটা গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছিল। হয়তো এই গবেষণার জন্য ভবিষ্যতে কোন এক সময়ে প্রফেসর জনাথন নোবেল পুরষ্কারে ভূষিত হবেন।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আপনি আপনার কাজ নিয়ে লিখতে পারেন। নেচারের প্রবন্ধটি নিয়েও লিখতে পারেন। অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারেক অণু এর ছবি

অসাধারণ লেখনী! দারুণ! হাততালি

রতন ভাই নতুন কিছু আবিস্কার করলে তাকে নিয়ে লেখার কপিরাইট আমার।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ।

আমার দুটো মহান আবিষ্কারের কথা মনে পড়ছে এই মুহূর্তে। এই দুটো নিয়ে লেখা শুরু করেন।
একটি হচ্ছে গুলি ফিরিয়ে দেয়ার যন্ত্র। আয়না যেভাবে আলো ফিরিয়ে দেয়, সেরকম। একটা একশো ওয়াটের নষ্ট ফিলিপস বাল্ব জানালার সঙ্গে লাগিয়ে এটা বানাতে হত। তাতে আমার শত্রুপক্ষ আমার বাড়ির দিকে গুলি করলে সে ফিরে গিয়ে তাদের গায়েই লাগতো।(এখানে প্রতিফলনের সূত্রের ব্যতিক্রম হওয়া সম্ভব ছিল)। ষাট ওয়াটের বাল্ব একটু দূর্বল ছিল। বড় বন্দুকের গুলি ফেরাতে পারত না।

দ্বিতীয় আবিষ্কার হচ্ছে শিমের শুকনো দানা ভর্তা করে বানানো দাঁতের মাজন। নামে মাজন হলেও তার বহুমূখী ব্যবহার ছিল। এটা খেলে বিভিন্ন রোগ সারত। সহজ রেসিপি। শিমের শুকনো দানা নিয়ে হাতুড়ি দিয়ে ভর্তা করতে হত। একটা কাপড়ে বেঁধে ভর্তা করলে ভালো, নয়তো গুলির মত ছিটকে যায় হারামীগুলা!

বাকি আবিষ্কারের তালিকা দেব আস্তে ধীরে। কাজ শুরু করেন। তবে ক্লাস এইটের পরের আবিষ্কারগুলোর কথা প্রকাশ করা যাবে না। ফাঁসি হয়ে যেতে পারে। শয়তানী হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারেক অণু এর ছবি
সত্যপীর এর ছবি

কুফরী পোস্ট, নিন্দা জানাই প্রথমে।

এইবার কুশ্চেনঃ

একশোভাগ একইরকম অংগ তো পাওয়া সম্ভব নয়। অন্য কারো অঙ্গ লাগালেই আপনার শরীরের রক্ষী কোষেরা বলবে এ অঙ্গ আমরা চিনিনা। এটা নিশ্চয়ই শত্রুর অংশ। মারো একে।

ইয়ামানাকা যেরকম কাজ করছেন কৃষকের মন শিশু করে ফেলতে সেরকম সিপাইয়ের মনও কি শিশু করে ফেলা যায় না? তাইলে নতুন হৃদপিণ্ড তৈরি করার বদলে অন্যের চালু হৃদপিণ্ড বিনা বাধায় বসানো যেত।

..................................................................
#Banshibir.

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

যদিও আপনার প্রশ্নের অংশ নয় তবুও বলি, অন্য হৃদপিণ্ড আপনি পাবেন কোথায়? একটি হৃদপিণ্ড দেয়ার জন্য সুস্থ (অন্তত হৃদপিণ্ড ভালো রয়েছে এমন) কাউকে মারা যেতে হবে, মারা যাওয়া আগে তাঁকে অনুমতি দিয়ে যেতে হবে সেটি নেয়ার জন্য, সেটি নেয়ার মত উন্নত ব্যবস্থা থাকতে হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। রক্তের মত জিনিস, যা সুস্থ থেকেই দান করা যায়, সেটাই পাওয়া যায় না। সবার উপরের সমস্যা হচ্ছে অর্গান ম্যাচিং। এর তুলনায় বাকি সমস্যাগুলো নস্যি।

এবার আপনার প্রশ্নে আসি। শরীরের রোগপ্রতিরোধী কোষ কিন্তু একটা নয়। আর তাছাড়া তা প্রতিমুহূর্তে নতুন করে তৈরি হয়। সমস্ত শরীরের রোগপ্রতিরোধী কোষ আপনি কীভাবে বদলে দেবেন? সেটা তো সম্ভব নয়। যেটা সম্ভব সেটা হচ্ছে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থাকে দূর্বল করে ফেলা। কিন্তু তাতে তো বললামই, খুব সাধারণ রোগে মৃত্যুর ঝুঁকি তৈরি হয়। প্রাকৃতিক যে রোগে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা দূর্বল হয়ে যায় সেটা সেটার নাম এইডস। মোটাদাগে বললে, অঙ্গপ্রতিস্থাপনের জন্য শরীরে কৃত্রিমভাবে এইডস তৈরি করতে হয়।

ইয়ামানাকার আবিষ্কারটি আমি সম্ভবত পরিষ্কার করে বোঝাতে পারিনি। কোষকে বদলে দেয়ার এই কাজটি হয় ল্যাবরেটরিতে। শরীরের সাধারণ কোষ নিয়ে সেটাকে প্রাথমিক কোষে বদলে দেয়া হয়। প্রাথমিক এই কোষগুলো বিভাজিত হয়ে অন্য অঙ্গ তৈরি করতে পারে।

রোগপ্রতিরোধী কোষ তৈরি হয় যে স্টেম সেল থেকে সেগুলো শরীরে এমনিতেই থাকে। নতুন করে তৈরি করার প্রয়োজন হয়না। এদেরকে বলে হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল। তবে প্রাথমিক কোষের মত এদের ক্ষমতা অনির্দিষ্ট নয়, নির্দিষ্ট। এরা কেবল বিশেষ নির্দিষ্ট কিছু কোষই তৈরি করতে পারে। লেখায় একটা ছবি আছে দেখুন। সোমাটিক বা অ্যাডাল্ট স্টেম সেল (যেমন, হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল ইত্যাদি) তৈরি হয় প্রাথমিক কোষ থেকে। এগুলো সারাজীবন শরীরে থাকে।

বোঝাতে পেরেছি কি?

কুফরী পোস্টের গুণাহ মাফের জন্য জন্য দুইটা কেরামতি ছবিতে লাইক/শেয়ার দিচ্ছি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি এর ছবি

অযাচিত ভাবেই সত্যপীরের প্রশ্নের উত্তর দিয়ে যাচ্ছি। উত্তর হলো, না।করা যায় কিন্তু উচিত হবেনা, এর পরিণতিটা ভয়ংকর। যেমন ধরুন, আপনার বাসার পাহারায় ষন্ডামার্কা দারোয়ানটিকে সরিয়ে একটা শিশুকে কখনোই দারোয়ানিতে নিয়োগ দিবেননা। কারন সেই শিশুটি সবাইকেই বাসায় ঢুকতে দিবে।

শরীরের প্রতিরক্ষা সিস্টেমের ভাষায় এই শিশু করে ফেলাকে বলা হয় সাপ্রেসড ইমিউন সিস্টেম। সেপাই কোষগুলির মন শিশু করে ফেললে এই কোষগুলি নতুন উপকারী কোষ এর ব্যাপারে নমনীয় হবে, সেইসাথে রোগ সৃষ্টিকারী জীবানুদেরকেও ঢুকতে দিবে। ফলে আপনার শরীরে নতুন নতুন ইনফেকশন তৈরী হবে। সেজন্যই এটা করা হয়না। ব্যাপারটা মনে হয় একটু জটিল হয়ে গেল। অনার্যকে অনুরোধ করছি এটা আরেকটু ব্যাখ্যা করার জন্য।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

প্রশ্নের উত্তর আপনি অযাচিতভাবে দেননি। ব্লগে সবাই কথা বলবেন সেটাই নিয়ম হাসি । এটাই ব্লগের সৌন্দর্য।
আপনি ঠিকই বলেছেন। এই বিষয়ে একটা পূর্ণ ব্লগ লিখবো সময় করে।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

১। অকাল প্রয়াত সায়েন্স ফিকশন লেখক আহসানুল হাবীবের 'ছোট মামা দি গ্রেট' বইয়ের প্রথম গল্পে কেওক্রাডং-এর চূড়া থেকে পড়ে ছোট মামা তার দু'পা হারিয়ে ফেললে বিজ্ঞানী কেরামত বিশ্বাস পুনরুৎপাদন ইঞ্জেকশন দিলে ছোট মামার দুটো পা'ই আবার গজিয়ে যায়। যেমন গজায় টিকটিকির লেজ অথবা চিংড়ির ঠ্যাঙ। ১৯৭৮ সালে কেরামত বিশ্বাস সম্ভবত গর্ডন আর ইয়ামানাকার ফর্মুলা অনুযায়ীই পুনরুৎপাদন ইঞ্জেকশন বানাতে পেরেছিলেন।

২। একটা নয়, দুইটা অনুরোধ করি। এক, জীবনে বড় চাকুরী বা ব্যবসার চেষ্টা না করে শুধু গবেষণায় লেগে থাকার চেষ্টা করো - আমার শুভকামনা সব সময় তোমার জন্য থাকবে। দুই, বছরে অন্তত একটা মাস বাংলাদেশের স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞানের দরকারী বিষয়গুলো নিয়ে তোমার নিজের ভাষায় বক্তৃতা (প্রেজেন্টেশনসহ) দেবে। ঐ বয়স থেকেই বিজ্ঞানমনস্কতা গড়ে ওঠা জরুরী*। বুড়া হাবড়াগুলোকে নিয়ে কাজ করে লাভ নেই - ওদের অন্তরে মোহর মারা।

* এই ব্যাপারে একটা পরিকল্পনা মাথায় এসেছে সেটা নিয়ে কয়েকদিনের মধ্যে একটা পোস্ট দেবার কথা ভাবছি।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

সাফিনাজ আরজু  এর ছবি

চলুক

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

টিকটিকির লেজ গজানোর মত ক্ষমতা কিন্তু স্বল্প পরিসরে আমাদেরও রয়েছে হাসি কেটে ছিঁড়ে গেলে যে ঠিক হয়ে যায় সেসব তো নতুন কোষ তৈরি হয়েই হয়।
আপনি অনুরোধ কেন করবেন! আপনি উপদেশ দেবেন। আমি গবেষণা এবং শিক্ষকতাতেই থাকতে চাই। আমার জীবনের লক্ষ্য হচ্ছে একটা স্কুল বানানো এবং সেখানে ছেলেপেলেকে বিজ্ঞান পড়ানো হাসি
আপনার পরিকল্পনা জানার অপেক্ষায় আছি।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

চলুক


_____________________
Give Her Freedom!

স্যাম এর ছবি

অসাধারণ !!!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ স্যাম হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রাজীব এর ছবি

অসাধারণ, চমৎকার, সহজ, সাবলীল, সুন্দর।

'সাফিনাজ আরজ'-এর সাথে একমত হয়েই বলছি - আপনি বাংলায় জীববিজ্ঞান নিয়ে বই লিখুন। বিজ্ঞান যে নীরস বিষয় নয় সেটা আপনি তুলে ধরতে পারবেন। রবীন্দ্রনাথের 'বিশ্বপরিচয়' এবং জগদীশ চন্দ্র বসুর 'অব্যক্ত'-ই প্রমান।

'বাংলা বিজ্ঞানের বই কিন্তু কম নেই বাজারে।' বই কম নেই সে ঠিক আছে কিন্তু মানসম্পন্ন কয়টি? আমি প্রাণরসায়নের ছাত্র আর আমার সংগ্রহে এ বিষয়ে কিছু বইও আছে। তাই জীববিজ্ঞানের কয়েকটি বাংলা বইয়ের নাম দিতেন তাহলে আমার ব্যক্তিগত সংগ্রহটিকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারতাম।

ধন্যবাদ।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

জীববিজ্ঞানের বই বাংলায় আমি নিজে খুব বেশি পড়িনি। সেটা পাঠক হিসেবে আমার নিজের দূর্বলতা। আবেদ চৌধুরির 'মানব জিনোম' নামের ছোট্ট একটা বই আছে, কলেজে থাকতে পড়েছিলাম। পড়ে দেখতে পারেন। বন্যা আহমেদের 'বিবর্তনের পথ ধরে' অসাধারণ একটা বই। অভিজিৎ রায়ের অনেকগুলো বই রয়েছে। এর মধ্যে দুটি বা তিনটি জীববিজ্ঞান বিষয়ক। দেবীপ্রসাদ চট্টোপাধ্যায়ের "যে গল্পের শেষ নেই" স্কুলে থাকতে পড়েছিলাম। অতি অসাধারণ। পুরনো বই বলে তথ্য হয়তো হালনাাদ করা হয়নি, কিন্তু তবুও এই বইটা আমি আরো অনেকবার পড়তে চাই। আলাদা করে বাংলা জীববিজ্ঞানের বইয়ের নাম এই মুহূর্তে আর মনে পড়ছে না। মনে পড়লে জানাতে চেষ্টা করব। হাসি

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মৃত্যুময় ঈষৎ এর ছবি

কী চমৎকার ভাবেই না লেখেন!!!

ইয়ামানাকা কে গুরু গুরু


_____________________
Give Her Freedom!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দ্রোহী এর ছবি

কী অসাধারণ বর্ণনা! মুগ্ধ হয়ে পড়লাম।

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

গুরু গুরু ধন্যবাদ দ্রোহীদা। আপনার মন্তব্যের জবাব পাইনা সাধারণত।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

আব্দুল্লাহ এ.এম. এর ছবি

যাদুকরী কোষ নিয়ে যাদুকরী লেখা! আর কিছুদিন পর জীবকোষ বিজ্ঞানীরা যাদুকরী কোষ দিয়ে শরীরের নষ্ট হয়ে যাওয়া পার্টস বিনির্মান করবেন, আরও পরে পুরাতন পার্টস বদলে নতুন পার্টস বানাবেন। তারপর একসময় বুড়ো/বুড়ীদের শরীরের তাবৎ পুরানা পার্টস বাতিল করে দিয়ে ঝাঁ চকচকে নতুন শরীর বানিয়ে দিবেন, তারপর আবার বুড়ো হলে আবার নতুন করে.............। আহা রে! একটুর জন্য অমরত্বের ট্রেনটা ধরতে পারলাম না।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

হাসি
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রাব্বানী এর ছবি

চলুক চমৎকার লেখা

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

প্রৌঢ় ভাবনা এর ছবি

আহা, কি সুন্দর করে একটি গ্রামের ছবি আঁকলেন আর তার কর্মতৎপরতা বর্ণনা করলেন!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

পরমার্থ এর ছবি

উপমাসমৃদধ আলোচনা ভালো লাগলো ..

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

দিগন্ত এর ছবি

আপনার লেখার গুণে শুরু করলে শেষ না করে পারা যায় না, পথিমধ্যে গুগল ঘেঁটে আরো পড়াশোনা হয়ে যায়। বই কবে পাচ্ছি আপনার হাতে লেখা?


পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রু এর ছবি

এতো অসাধারণ করে কিভাবে যে লেখেন সেটা শুধু আপনিই জানেন!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

Zahid এর ছবি

অসাধারন এক বর্ননাভঙ্গি আর তাতে আপনার কল্পনার চমৎকার মিশেল। আশা করি সামনে এরকম আরো লেখা পাব আপনার কাছ থেকে।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ। এই বিষয়ে পুরনো লেখাও রয়েছে। ইচ্ছে হলে পড়তে পারেন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

রাশেদুল ইসলাম রনি এর ছবি

অসাধারণ !!!!!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

এত সুন্দর, সহজবোধ্য দৃষ্টান্ত দিয়ে, আকর্ষনীয় ভঙ্গিতে আপনি লেখেন!! হাসি

আসমা খান

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ভালো মানুষ এর ছবি

খুবই ভাল লেগেছে । আপানার লেখার বিষয় নতুন করে কিছু ব্লার নাই । একদম অসাম ! হাসি

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

লাফানো মন্তব্য!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আমি আর কত বড় হব! আপ্নাদের বৌমাতো এখনো কোন যোগাযোগ কল্ল না

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

মারভিন এর ছবি

বরাবরের মতোই সহজবোধ্য ঝরঝরে লেখা। আপনি যদি কোনদিন বিজ্ঞানভিত্তিক বই লেখেন সেটা লাইন ধরে দাঁড়ায় কিনবো।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

ভালো মানুষ এর ছবি

ভাইয়া যে গবেষনাপত্রটি ৫ হাজার বার সাইটেশন হয়েছে সেটার কি লিংকটা দিতে পারবেন একটু?
ধন্যবাদ!

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

PMID: 16904174 হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

তারানা_শব্দ এর ছবি

অসাধারণ ভাই। গুল্লি লেখা!!
[প্লিজ আমার বান্ধবীদের কথা জিগাইয়েন না। ] ওঁয়া ওঁয়া

"মান্ধাতারই আমল থেকে চলে আসছে এমনি রকম-
তোমারি কি এমন ভাগ্য বাঁচিয়ে যাবে সকল জখম!
মনেরে আজ কহ যে,
ভালো মন্দ যাহাই আসুক-
সত্যেরে লও সহজে।"

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

খালি ফাঁকা মন্তব্য ছুঁড়তেছেন, বান্ধবীদের বিষয়ে তো কোন উচ্চবাচ্য করেন না!
[পাগলকে সাঁকো নাড়া দিতে মানা করতে নেই চোখ টিপি ]

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সজল এর ছবি

নিজেকেই ছাড়িয়ে যাচ্ছেন দিন দিন। দারুণ!

---
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ হাসি

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

শামীম এর ছবি

গত সপ্তাহে হঠাৎ NHK চ্যানেলে এটার উপরে একটা ডকুমেন্টরি দেখাচ্ছিলো। যতই দেখছিলাম মুগ্ধ ও বিষ্মিত হচ্ছিলাম। শুধুমাত্র ঐ ডকুমেন্টারীর কথাগুলো বাংলা করলেই সেটা পড়ে সব কিছু বোঝা যাবে। তাই আজকে সচলায়তনে ঢুকে বিজ্ঞানে ঢু দিলাম -- আর খুঁজে পেলাম এই লেখাটি --- আহ আমাকে বাউন্ডারীর বাইরের বিষয়ে লেখার কষ্ট করতে হল না।

আপনার বর্ণনাশৈলী অসাধারণ। গুরু গুরু

________________________________
সমস্যা জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ; পালিয়ে লাভ নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

আপনার বর্ণনাশৈলীতে মুগ্ধ হয়েছি- লাজবাব। হাততালি

উদাহরণ দেই, ডিম্বানু হচ্ছে একটা এক চাকা ওয়ালা সাইকেলের মত। শুক্রাণু ওই সাইকেলের অন্য চাকাটির যোগান দেয় আর সাথে চলতে শুরু করার জন্য একটা ধাক্কাও দিয়ে দেয়। ব্রিগস আর কিং এক চাকাওয়ালা সাইকেল থেকে চাকাটা খুলে নিয়ে সেটাকে একেবারে মুড়ো করে দিলেন। তারপর দুটো নতুন চাকা এনে জুড়ে দিলেন। তারপর তাতে দিলেন ঠেলা

অনবদ্য উপমা!

হার্ট,লাংস,ব্রেইন, লিভার, কিডনী, হাত-পা ছাড়াও আরেকটি অঙ্গের প্রতিস্থাপনও কিন্তু খুব জরুরী। সেটি হল নাড়ী-ভুঁড়ি ও পায়ুপথ। পার্মানেন্ট কলোস্টমি একটা মানুষের জীবনযাত্রার মানকে অনেক নিচে নামিয়ে দেয়। অথচ প্রতিস্থাপনযোগ্য রেকটাম বা এনাস তৈরী করা গেলে মানুষকে এই যন্ত্রণা থেকে বাঁচানো যেত।

আপনার পড়াশোনা ও রিসার্চের বিষয় কী, আর ব্যাকগ্রাউন্ড কোন বিষয়ের?

নির্ঝর অলয়

রিপন মজুমদার এর ছবি

বিভিন্ন ভাষায় এ লেখাগুলোর অনুবাদ করা, লেখাগুলোর আর্কাইভ করা বড় বেশি দরকার।

রিপন মজুমদার এর ছবি

কাঠখোট্টা বিজ্ঞানকে পাঠকের প্রিয় ছোট গল্পের মত লেখার সুপারন্যাচারাল পাওয়ার!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।