কাদের মোল্লার বিচারের রায়: যে কথা মনে রাখা প্রয়োজন

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি
লিখেছেন অনার্য সঙ্গীত (তারিখ: বুধ, ০৬/০২/২০১৩ - ১:২৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

এটি খুবই সংক্ষিপ্ত একটি লেখা। নরপশু কাদের মোল্লার বিচারের রায় প্রসঙ্গে কয়েকটি কথা না বললেই নয়।

আজ (৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৩) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন সংগঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধে অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ায় যুদ্ধাপরাধী আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেছেন মাননীয় আদালত। কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে আনা ছয়টি অভিযোগের মধ্যে তিনটিতে সংশ্লিষ্টতা এবং দুটিতে প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ আদালতে প্রমাণিত হয়েছে [সূত্র]।

নিঃসন্দেহে, হত্যা ধর্ষণ নির্যাতনের মত যেসব পাশবিকতার দায়ে কাদের মোল্লা অপরাধী সেসব অপরাধের শাস্তি কারাদণ্ড নয় বরং মৃত্যদণ্ড হওয়া উচিত। আমরা যারা সাধারণ মানুষ, আমরা যারা স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে বাঁচি, তাদের জন্য এই রায় যথেষ্ঠ নয়। আমরা কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই। আমরা জানি, হাজারোবার ফাঁসিতে ঝোলালেও এই নরপশুর শাস্তি পূর্ণ হবে না। কিন্তু তারপরও, আমরা ফাঁসির সাজাকে অন্তত একটি গ্রহনযোগ্য দণ্ড বলে মনে করি।

কাদের মোল্লার বিচারের রায় প্রকাশের পর থেকেই সকলক্ষেত্রে মানুষের প্রতিবাদ শুরু হয়েছে। মানুষের দাবী, যাবজ্জীবন নয়, কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই।

যাঁরা কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে সন্তুষ্ট নন। যাঁরা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড নয়, বরং এই নরপশুর ফাঁসি চান তাঁদের সঙ্গে আমি আন্তরিকভাবেই একাত্ম।

কিন্তু একটি বিষয় মনে রাখা জরুরি। কাদের মোল্লার বিচারের রায়ে সরকার অথবা সরকারী দলের কিছু করার নেই। কখনো ছিলও না। বাংলাদেশের আইন-আদালতের উপর সরকারের কোন প্রভাব নেই। কেবল সরকার বলে নয়, এই রায়ে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল অথবা সংগঠনের কারোরই কোন প্রভাব নেই। সুতরাং আমরা যারা বিচারের রায়ে খুশি নই, তারা যেন মনে রাখি, সরকার এই বিচারের রায় বদলাতে পারে না। তারা এই বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে, আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের তাদের সদিচ্ছা দেখিয়েছে মাত্র। কিন্তু বিচারের রায় কী হবে, কে অপরাধী অথবা কে অপরাধী নয় সেই বিষয়ে সরকার (অথবা অন্য কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠী) কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারে না। এই সিদ্ধান্ত কেবলমাত্র স্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের।

ভুলে গেলে চলবে না, জামায়াত এবং তাদের সহযোগীরা দেশে বিদেশে তাদের ভাড়া করা প্রচার ফার্ম, ব্যক্তি, গোষ্ঠী ইত্যাদি সম্ভব সকল পক্ষকে ব্যবহার করে এই বিচার প্রক্রিয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করেছে এবং এখনো করছে। জামায়াতের অপপ্রচারের সবচে বড় যে বক্তব্য সেটি হচ্ছে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল সরকারের প্রভাব মুক্ত নয়। এই বিচার সরকারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আপনি-আমি যদি আজকে সরকারকে এই বিচারের রায় বদলাতে চাপ দিতে চাই অথবা আমাদের কথায়-কাজে কোনভাবে প্রকাশ করি যে বিচারের রায়ে সরকারের কোন প্রভাব থাকতে পারে, তাহলে সেটা জামায়াতের দীর্ঘ অপপ্রচারের পক্ষেই যাবে।

আমাদের হতাশা, ক্ষোভ, কষ্ট ন্যায্য। স্বজন হত্যার বিচারের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। এই কষ্ট মেনে নেয়া কঠিন। নিশ্চয়ই, আমরা আমাদের দাবীর কথা জানাবো, আমরা আমাদের দাবী উচ্চস্বরে প্রকাশ করব। কিন্তু আবেগের বশবর্তী হয়ে যেন আমরা সত্যকে ভুলে না যাই। আমাদের বক্তব্য অথবা আচরণ যেন জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর অপপ্রচারের পক্ষে না যায়।

আমরা উচ্চস্বরে জানাতে পারি এই বিচারের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। কিন্তু আমরা যেন কখনোই না ভাবি যে, আমাদের আন্দোলনে সরকার এই বিচারের রায় বদলাতে পারে। আমরা যেন না ভাবি যে, আমাদের অথবা অন্য কারো বক্তব্য-আন্দোলনে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ প্রভাবিত হতে পারে। আমাদের আন্দোলন যেন সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে স্বজন হত্যার বিচারের আমরা কতটা আন্তরিক। আমরা আমাদের স্বজনদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা চাই সেটা যেন আমরা প্রকাশ করি। আমরা যেন সারা দেশে এই বিচারের সুষ্ঠতার জন্য এবং সকল অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য প্রয়োজনীয় আবহ তৈরি করে রাখি।


মন্তব্য

মেঘা এর ছবি

আমি একমত এই ব্যাপারে যে আমাদের অবশ্যই বিচার পক্ষপাত মূলক ভাবে হচ্ছে সেটা প্রমাণ করার এই জামাতী অপপ্রচারের অংশ হওয়া উচিত হবে না। তবে ভীষণভাবে হতাশ হয়েছি চিহ্নিত একজন রাজাকারের বিচারের রায় এভাবে দেয়ায়। আরো সাক্ষী কেন হাজির করা হলো না? আরো একটু সময় নিয়ে কেন তদন্ত করা হলো না? হাতের মুঠোয় থাকা রাজাকারের শাস্তি যাবজ্জীবন আর পলাতক বাচ্চু রাজাকারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড! সব রাজাকারের ফাঁসি চাই। কারো জন্য কোন ক্ষমা নেই। রেগে টং

--------------------------------------------------------
আমি আকাশ থেকে টুপটাপ ঝরে পরা
আলোর আধুলি কুড়াচ্ছি,
নুড়ি-পাথরের স্বপ্নে বিভোর নদীতে
পা-ডোবানো কিশোরের বিকেলকে সাক্ষী রেখে
একগুচ্ছ লাল কলাবতী ফুল নিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি

বেচারাথেরিয়াম এর ছবি

সহমত।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আরো সাক্ষী কেন হাজির করা হবে? অপরাধ তো প্রমাণিত হয়েছে!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ হল, কিন্তু সে পলাতক, কখন কিভাবে পালাল কেউ ঠিকমত কিছু জানেনা। একজন চিহ্নিত রাজাকার যার বিচার হবে সে পালানোর সুযোগ কিভাবে পায়-- জানিনা!
কাদের মোল্লার মত একজন রাজাকার, ৩৪৪ জন মানুষের হত্যাকারী, হিসেবের বাইরে না জানি কত শত ধর্ষণের ধর্ষকের রায় যদি যাবজ্জীবন হয় তাহলে কষ্ট, ক্ষোভ, যন্ত্রণা, হতাশা, রাগ রাখার জায়গা খুঁজে পাইনা।

আজ সারাদিন খুব ব্যাস্ততায় ছিলাম নেটে বসার সুযোগ পাইনি এমনকি দুপুরের আগে ফোনে কথা বলারও সুযোগ পাইনি। কিন্তু আমি নিশ্চিত ছিলাম ঐ নরপশুটার ফাঁসি হবে-- দুপুরে যখন এক বন্ধু ফোনে রায় জানাল প্রথমে বিশ্বাসই করতে পারিনি। কাদের হারামিটার ফাঁসির আদেশ হয়নাই!!! আসলে আমার ঠিক এখনও বিশ্বাস হচ্ছেনা। এত হাজার হাজার অপরাধের প্রমানিত অপরাধীদের শাস্তি যদি এমন হয় তাহলে তো বাকিরা এখন থেকেই ডুগডুগি বাজাতে শুরু করবে।
প্রচণ্ড হতাশ লাগছে। কাদের মোল্লার ভি দেখানোর কথা মনে পড়লেই শরীর জলছে রাগে, এই দিনটাও দেখতে হল!
কবে এমন দিন আসবে যেদিন সত্যি সত্যি কোন রাজাকারের ফাঁসিতে ঝুলার দৃশ্য দেখে আনন্দে হাততালি দিতে পারব, খুশীতে মিষ্টিমুখ, রাতে শান্তির ঘুম। কবে আসবে?
সকল রাজাকারের একটাই শাস্তি -- খুব দ্রুত ফাঁসি ফাঁসি এবং ফাঁসি।

আমাদের বক্তব্য অথবা আচরণ যেন জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর অপপ্রচারের পক্ষে না যায়

আপনার বক্তব্যর সাথে একমত।
সরকারকে দোষ দিচ্ছি না ঢালাও ভাবে, তবে কিছুটা ভয় কাজ করে ভিতরে,আমাদের রাজনীতিবিদদের ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনা। ক্ষমতার লোভে কে যে কখন ভোল পালটে কি ভেস ধরে বোঝা মুশকিল।
অনেক ক্ষোভ থেকেই এত বড় মন্তব্য করে ফেললাম। দুঃখিত সঙ্গীতদা।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

দুঃখ প্রকাশের কিছু নেই। আপনার ক্ষোভ হতাশা কষ্ট আমারও! ক্ষোভ প্রকাশ অব্যহত থাকুক।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

একমত হতে পারলাম না। হাসিনা টাকা খেয়ে কাদের মোল্লাকে ফাঁসি থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছে। স্কাইপে লিকে যদিও বুঝা যায় সরকার ট্রাইবুনালকে বিচার ত্বরান্বিত করতে চাপাচাপি করার পরেও বিচারপতি তাতে কর্ণপাত করেন নাই, তবুও আমি ও আমরা নিশ্চিত পুরোটাই সরকারের কারসাজি, সরকারই ট্রাইবুনাল, ট্রাইবুনালই সরকার। এখনই সরকার পতনের আন্দোলনে নামতে হবে। আওয়ামী লীগের এমনিতেই এখন জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়। নোবেল লরিয়েট (শান্তি) ডঃ ইউনুসের সাথে অভব্যতা, শেয়ার কেলেঙ্কারি আর পদ্মা সেতুর টাকা মেরে খাওয়ার পরে পাবলিক আর কয়টা ভোট দিতো! তাও এখন বিচার কেলেঙ্কারিতে হারায়া গেলো। সামনের নির্বাচনে ইনশাল্লাহ বিএনপি জামায়াত জোটকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবো। আওয়ামী লীগ সরকার খারাপ। আমাকে আবার ছাগু ট্যাগ করবেন না যেন। আওয়ামী লীগের বিপক্ষে কিছু বললেই ছাগু ট্যাগ করেন আপনারা!

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

রাজিব মোস্তাফিজ এর ছবি

আচ্ছা একটা প্রশ্ন করি -- কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে এতগুলো অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও সে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড পেলো -- এখন আর যাদের বিরুদ্ধে রায় দেয়া বাকি আছে তারাও যদি একই ধরনের শাস্তি পায় -- মানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, কাউকেই ফাঁসি দেয়া হলো না -- সে রায় কি আপনি মেনে নিবেন? মানতে পারলে তো আর কথা নাই, যদি মানতে না পারেন তাহলে কি করবেন?

----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

এনশাল্লাহ হাসি


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

লেখাটা সকালে কোন কারণে চোখ এড়িয়ে গিয়েছে। এখানে বলা একটা কথা আজ সারাদিন ভেবেছি; শেষ পর্যন্ত আমার চিন্তার অনুরূপ বক্তব্য দেখে ভালো লাগলো। আমরা যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইছিলাম, তারা বারবার বলেছি বা প্রমাণ করার চেষ্টা করছি সরকার বিচারকে নিয়ন্ত্রণ করছে না। এখন যখন বিচারের রায় আমাদের পছন্দ হচ্ছে না (অস্বীকার করবো না, এ রায় আমার কাছে অকল্পনীয় ছিল), তখন সরকারকে গাল দিলে কিন্তু আমাদের আগের অবস্থানটা মিথ্যে প্রমানিত হয়ে যায়। প্রতিবাদ অবশ্যই হবে, কিন্তু আবেগের বশে যেন প্রতিবাদ করতে গিয়ে একটু একটু করে গুছিয়ে শুরু করা বিচারটাকে চরম ভাবে প্রশ্নবিদ্ধ ও ক্ষতিগ্রস্ত না করে ফেলি। আমাদের প্রতিবাদ এবং বক্তব্যে তাই সাবধানী হওয়া জরুরী।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

ধন্যবাদ।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

জামাতের যে দাবী যে এই ট্রাইবুনাল সরকারের ক্রীড়নক মাত্র, দমননীতির অস্ত্র - এই রায় সম্পর্কে আমাদের ক্ষোভগুলো যাতে সেটাকেই সমর্থন না যোগায়, এই ব্যাপারে প্রোটেকশনিস্ট অবস্থান থেকে আপনার এই পোস্টটা দেওয়া, সেটা বুঝতে পারছি। কিন্তু আফসোস, সেটা 'ছাত্রলীগের অপকর্মের নিন্দা করা যাবে না কারণ তা শিবিরের বক্তব্যকে সমর্থন যোগায়' লাইনের হয়ে যাচ্ছে।

লেখাটায় আরো সমস্যা আছে, কিন্তু সেগুলোয় যাবার আগে একটা প্রশ্ন করি - ধরে নিলাম জামাত বিলিতি দুনিয়ার কাছে এটা প্রমাণ করে দিল যে যুদ্ধাপরাধীদের এই বিচারে (ও রায়ে) আওয়ামী লীগের স্বার্থ ও প্রণোদনা আছে। বস্তুত, প্রমাণ করার কিছু নেই, একাত্তরে যারা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিল সেই দলের যে উৎসাহ থাকার কথা এমনটা সবাই এমনিতেই জানে। কিন্তু তাতে কী এসে গেল? বাংলাদেশ সরকার কি আমেরিকা-ইংল্যান্ডের সরকারের কাছে এতটাই নির্ভর এবং নতজানু যে ওদের গোঁসায় তার বিরাট কিছু এসে যাবে? বাংলাদেশের গণহত্যার আভ্যন্তরীণ বিচারে ওদের মনোভাবে বিরাট কিছু এসে যাওয়া উচিত? আর পলাতক বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির রায়েই তো তারা ইতিমধ্যেই বিরাগ প্রকাশ করে ফেলেছে।

আপনি বলছেন, "বাংলাদেশের আইন-আদালতের উপর সরকারের কোন প্রভাব নেই।"
'প্রভাব' শব্দটার অর্থ অনেক বিস্তৃত হতে পারে। যদি বলেন, এই রায় মূলার্থে সরকারই লিখে দেয়, যা জামাত দাবি করছে, সেই কথা এখানে সমমনা কিন্তু বিক্ষুব্ধ জনেরা (যাদের উদ্দেশ্যে আপনার পোস্টটা লেখা) বলছেন কি?
কিন্তু প্রশস্ত অর্থে, সরকারের প্রভাব আছে অবশ্যই। সরকার উদ্যোগ নিয়ে এই ট্রাইবুনাল গঠন করেছে। এর বিচারপতিরাও সেভাবেই নিযুক্ত হয়েছেন। পাবলিক প্রসিকিউটরও সরকারের নিযুক্ত। সাক্ষীদের সাক্ষ্য দেওয়ার সমস্ত আয়োজন করা, তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা, এগুলোও সরকারই করেছে।
এবং স্কাইপ কথাবার্তা, যেটায় সরকারের দ্রুত রায় দেওয়ার চাপে অবিচল থাকার জন্য আপনারা পদত্যাগী বিচারপতিকে প্রশংসাই করেছিলেন এক সময়, সেটা এই ইঙ্গিত করে যে সরকার সে ধরনের বাহিরপথের 'অনুরোধ' ট্রাইবুনালকে করেই থাকে। করবে এটাই স্বাভাবিক, দুনিয়ার সব দেশের সরকারই করবে।

"কেবল সরকার বলে নয়, এই রায়ে কোন ব্যক্তি, গোষ্ঠী, দল অথবা সংগঠনের কারোরই কোন প্রভাব নেই।"
'প্রভাব' শব্দটার প্রশস্ত অর্থে ধরলে বলতে হয়, তাহলে আইসিএসএফ সহ কারোরই কোনো অবদান নেই এই বিচারপ্রক্রিয়ায়।

"সুতরাং আমরা যারা বিচারের রায়ে খুশি নই, তারা যেন মনে রাখি, সরকার এই বিচারের রায় বদলাতে পারে না।"
সরকার এই বিচারের রায়ের ফাইলটা খুলে যাবজ্জীবন কেটে ফাঁসি লিখে দিক, এমন শিশুসুলভ দাবী মনে হয় কেউই করছেন না। এই রায়কে বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ফাঁসিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা সরকার করুক, এটাই সবার দাবী। সেটা তো সরকার পারে? কিন্তু এই রায় বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী/প্রসিকিউটারদের বক্তব্যের নানা খবর যে নিউজ মিডিয়ায় ঘুরছে, তাতে কী অবস্থা বুঝছেন?

"আমরা যেন না ভাবি যে, আমাদের অথবা অন্য কারো বক্তব্য-আন্দোলনে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ প্রভাবিত হতে পারে।"
আচ্ছা, সরকার এই রায় বদলাতে পারে না। বিচারক নিজে থেকেও "আচ্ছা, কালকের রায়টা কেমন-কেমন লাগছে, যাই কেটে ফাঁসি করে দিই" এমনটাও করতে যাবেন না। তাহলে কী আইনসঙ্গত উপায় পড়ে রইল? তাহলে যারা শাহবাগে বা অন্যত্র ফাঁসি চাই বলে দাবী করছেন, এবং তাঁরা আইনসঙ্গত পদ্ধতিতেই ফাঁসির রায় চাই বলে দাবী করছেন, তাদের দাবী তাহলে অনর্থক?

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

আফসোস, সেটা 'ছাত্রলীগের অপকর্মের নিন্দা করা যাবে না কারণ তা শিবিরের বক্তব্যকে সমর্থন যোগায়' লাইনের হয়ে যাচ্ছে।

বুঝতে একটু ভুল করছেন। ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগ-সরকার সকলেরই সমালোচনা/নিন্দা করা যাবে। সেই প্রসঙ্গে কোন আপত্তি নেই। কিন্তু অভিযোগ যদি বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা সংক্রান্ত হয় তাহলে সেখানে সমস্যা রয়েছে।

সরকার ভুল করতে পারে, তাদের সদিচ্ছার অভাব থাকতে পারে, রাজনীতিবিদদের মূর্খতা থাকতে পারে, সরকারের যথেষ্ট পৃষ্ঠপোষকতা না থাকতে পারে! এই প্রসঙ্গে সোচ্চার হতে কোন আপত্তি নেই, বরং সোচ্চার হওয়া জরুরি। কিন্তু আজকে যদি কোন পক্ষ বিচার বিভাগের নিরপেক্ষতা নিয়ে অপপ্রচার চালায় (যেটা জামায়াত তাদের আন্তর্জাতিক লবিং ফার্ম দিয়ে বছর ধরে জারি রেখেছে) এবং সেই অপপ্রচার যদি প্রতিষ্ঠা পায় তাহলে এই আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের আর কোন আশাই থাকবে না। এই রায় এবং এর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল রায়ও তখন 'অগ্রহনযোগ্য' হয়ে দাঁড়াবে। আজকের এই ট্রাইবুনাল বাদ রেখে যদি পঞ্চাশ বছর পরে আরেক ট্রাইবুনাল এদের বিচার করার চেষ্টা করে তখনও সেই বিচারের গ্রহনযোগ্যতা থাকবে না।

এই রায় গ্রহন না করতে কোন আপত্তি নেই। ক্ষোভ-হতাশা জানাতে কোন আপত্তি নেই। বরং সোচ্চার হওয়া দরকার। কিন্তু সরকার চাইলে এই রায় বদলাতে পারত বলে কোন অপপ্রচার করা হলে সেই অপপ্রচারের বিপক্ষেই সবসময় অবস্থান নেব।

আপনার দ্বিতীয় প্যারায় আপনি যা বলেছেন তার সঙ্গে আমার দ্বিমত নেই। আন্তর্জাতিক মতামতের জবাব দেয়ার প্রয়োজন আছে কিন্তু সেই 'চাপ' নেয়ার প্রয়োজন আছে বলে ব্যক্তিগতভাবে মনে করিনা। কিন্তু একইভাবে, 'আইনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া পাত্তা দেয়ার কিছু নাই, কোনমতে ঝুলিয়ে দাও' মতের সঙ্গেও একমত নই।

'প্রভাব' কথাটার বিস্তৃত অর্থ আমার লেখার অর্থ সম্পর্কে বিভ্রান্তি তৈরি করবে সেটা তাৎক্ষণিকভাবে মনে হয়নি। প্রভাব বলতে আমি বুঝিয়েছি বিচার কার্যে সন্মানিত বিচারকদের স্বচ্ছতা বা নিরপেক্ষতার উপর কোন নিয়ন্ত্রণ। আপনি যেমন বলেছেন, প্রসিকিউটর নিয়োগ দেয়া, বিচারের ক্ষেত্র তৈরি করা সেইসব প্রসঙ্গে কোন দ্বিমত নেই। এবং সেইসব বিষয়ে সরকারের সদিচ্ছা অথবা প্রচেষ্টার কোন ঘাটতি দেখা দিলে সেটা নিয়ে সোচ্চার হওয়া জরুরি। এই বিষয়ে আমি নিজেও লিখেছি। কিন্তু 'সত্য' যেটাই হোক, বিচারের রায় সরকার অথবা কোন ব্যক্তি/গোষ্ঠীর প্রভাবে প্রভাবিত হয়েছে সেটা বললে সেখানে আপত্তি জানাবো।

এমনিতে তো আদালত ভবনটিও সরকারের। বিচারকদের বেতনও সরকার দেন। কিন্তু কে অপরাধী এবং কে অপরাধী নয়, অথবা কোন অপরাধীর কীরকম সাজা হওয়া উচিত সেই সিদ্ধান্ত কি সরকারের? সেটি নিশ্চয়ই নয়।

সরকার এই বিচারের রায়ের ফাইলটা খুলে যাবজ্জীবন কেটে ফাঁসি লিখে দিক, এমন শিশুসুলভ দাবী মনে হয় কেউই করছেন না। এই রায়কে বিচারপ্রক্রিয়ার মাধ্যমেই ফাঁসিতে রূপান্তরিত করার চেষ্টা সরকার করুক, এটাই সবার দাবী। সেটা তো সরকার পারে?

সরকার কেবল প্রসিকিউটরকে আরো বেশি সহযোগিতা করতে পারে। প্রসিকিউটর সর্বোচ্চ সাজার জন্য চেষ্টা করতে পারে আইনের ভেতরে থেকেই। এই প্রসঙ্গে আসলে কোন দ্বিমত নেই। প্রসিকিউটরের কোন দূর্বলতা প্রকাশ পেলে সেটি নিয়ে কথা বলতেও সমস্যা নেই।

কিন্তু এই রায় বিষয়ে সরকারের মন্ত্রী/প্রসিকিউটারদের বক্তব্যের নানা খবর যে নিউজ মিডিয়ায় ঘুরছে, তাতে কী অবস্থা বুঝছেন?

খানিকটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন বলে একান্তই ব্যক্তিগত মত জানাই, আমি হতাশ। আইন না জেনেই সরকারী পক্ষের লোকজন কথা বলছে! নির্বোধের দল! কিন্তু তাদের কথায় তো আর বিচার চলে না।

তাহলে কী আইনসঙ্গত উপায় পড়ে রইল? তাহলে যারা শাহবাগে বা অন্যত্র ফাঁসি চাই বলে দাবী করছেন, এবং তাঁরা আইনসঙ্গত পদ্ধতিতেই ফাঁসির রায় চাই বলে দাবী করছেন, তাদের দাবী তাহলে অনর্থক?

না অনর্থক নয়। যাঁরা শাহবাগে বা অন্যত্র গণতান্ত্রিকভাবে দাবী তুলছেন তাঁদের সঙ্গে আমি সংহতি প্রকাশ করছি। আমি দেশে থাকলে এখন শাহবাগেই থাকতে চাইতাম। কিন্তু একইসঙ্গে আমি জানি যে তাঁদের আন্দোলনে এই বিচারের রায় বদলে যাবে না। বদলে যাওয়ার উপায় নেই। বিচারের রায় বদলানোর আইন সঙ্গত উপায় খুব সামান্যই রয়েছে। তবে কিছুটা যে রয়েছে, সেটি ঠিক। কিন্তু মনে রাখা দরকার, সেই উপায় যেটুকুই থাকুক তা কোন ব্যক্তি-গোষ্ঠীর আন্দোলনের ফসল হওয়ার সুযোগ নেই।

""ফাঁসি চাই"" দাবী তুলতে সমস্যা নেই। কিন্তু যে বক্তব্য ""সরকার ফাঁসি দেয়নি"" জাতিয় মনোভাব প্রকাশ করে সেখানে আপত্তি রয়েছে। সরকার তো বিচারক নয়। বিচারের রায় কী হবে সেটাতে সরকারের কী করার আছে! সরকার কেবল বিচারের আয়োজন করেছে। সেই আয়োজনে কোন ঘাটতি থাকলে সেটার নিন্দা হোক। সেই নিন্দা আরো আগেই হওয়া দরকার ছিল।

দাবী তোলার প্রয়োজন রয়েছে। সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। মানুষের কণ্ঠস্বরই জাতি হিসেবে এই বিচারে আমাদের আগ্রহের কথা জানান দেয়া। বিচারের জন্য একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি করে। সরকারকে সংকেত দেয় যে, এই বিচারে আইনসংগত পৃষ্ঠপোষকতায় কোন দূর্বলতা দেখা গেলে সেটা মানুষ মেনে নেবে না।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

কৌস্তুভ এর ছবি

"বুঝতে একটু ভুল করছেন। ছাত্রলীগ-আওয়ামীলীগ-সরকার সকলেরই সমালোচনা/নিন্দা করা যাবে।"
বুঝতে ভুল করিনি। ওটা একটা উপমাই ছিল কেবল, নিখুঁত প্যারালাল নয়। এখানে লোকে বিচারকদের রায়ের সমালোচনা/নিন্দা করছে।
শাহবাগের আন্দোলনকারীরা ও সারা দুনিয়ার বাংলাদেশী জনতা এ রায় মানছে না। তারা ফাঁসি চায়। জামাতও এ রায় মানছে না। তারা এসব উইচহান্ট বন্ধ করাতে চায়। তাহলে জামাতের সাথে মতের মিল চলে আসছে বিবেচনায় সবাই চুপ থাকুক, জামাতের পাতে ঝোল চলে যেতে পারে কিনা।

"সেই অপপ্রচার যদি প্রতিষ্ঠা পায় তাহলে এই আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচারের আর কোন আশাই থাকবে না।"
কাদের কাছে প্রতিষ্ঠা পায়? বিলিতিদের কাছে? তাতে কিছু আদৌ যায়-আসে কিনা সেটা নিয়েই তো দ্বিতীয় প্যারা। ছাগুদের কাছে? তারা তো জানেই এসব ষড়যন্ত্র? সাধারণ মানুষের কাছে? তারাই তো শাহবাগে গিয়ে ফাঁসির দাবী করছে। তাহলে?

"এই রায় এবং এর পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল রায়ও তখন 'অগ্রহনযোগ্য' হয়ে দাঁড়াবে। আজকের এই ট্রাইবুনাল বাদ রেখে যদি পঞ্চাশ বছর পরে আরেক ট্রাইবুনাল এদের বিচার করার চেষ্টা করে তখনও সেই বিচারের গ্রহনযোগ্যতা থাকবে না।"
এই 'নিরপেক্ষ, সরকার-প্রভাবমুক্ত' ট্রাইবুনালের এই যাবজ্জীবনের রায় কতটা গ্রহণযোগ্য আপনার কাছে, শাহবাগের লোকেদের কাছে?

"না অনর্থক নয়। ... কিন্তু একইসঙ্গে আমি জানি যে তাঁদের আন্দোলনে এই বিচারের রায় বদলে যাবে না।"
সরকারের কাছে এই আন্দোলন করে লাভ নেই, কারণ 'তারা বিচারকে বিন্দুমাত্রও প্রভাবিত করতে পারে না'। "আমাদের অথবা অন্য কারো বক্তব্য-আন্দোলনে"ও "বাংলাদেশের বিচার বিভাগ প্রভাবিত হতে পারে" না। এটা তো সরাসরি যারা কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই বলে আন্দোলন করছে তাদের মুখের উপর বলে দেওয়া যে কোনো লাভ নেই ভায়েরা, এইভাবে আন্দোলন করে কাদের মোল্লার ফাঁসির উপর কোনোই প্রভাব আনা যাবে না। তাহলে নিরর্থক তো বটেই। জাফর ইকবাল বলেছেন ফাঁসি ছাড়া রাজপথ ছেড়ো না, তিনিও তাহলে বোকার মত ভাবছেন এই আন্দোলন কিছু প্রভাব ফেলতে পারে হয়তবা। আপনি কতটা সেলফ-কন্ট্রাডিক্টরি কথা বলছেন সেটা বোধহয় আপনি বুঝতে পারছেন না।

"বিচারের জন্য একটি ইতিবাচক আবহ তৈরি করে। সরকারকে সংকেত দেয় যে, এই বিচারে আইনসংগত পৃষ্ঠপোষকতায় কোন দূর্বলতা দেখা গেলে সেটা মানুষ মেনে নেবে না।"
ইতিবাচক আবহ তৈরি করে কী লাভ? সেটা তো কোনো প্রভাবই ফেলতে পারবে না।
আর ইশতি ভাইয়ের পোস্টে দেখলাম "found guilty beyond reasonable doubt" বলাই আছে কাদের মোল্লার অভিযোগগুলির সম্পর্কে। এর থেকে বেশি স্পষ্টভাবে তো সরকারপক্ষের উকিল কিছু প্রমাণ করতে পারত না। আইনসংগত পৃষ্ঠপোষকতা তাহলে খারাপ হয়নি। তাহলে প্রশ্ন থাকে একটাই, বিচারক এসবের পরেও কেন ফাঁসি দিলেন না। এবং আন্দোলন করে সেই ব্যাপারটাকে মানে বিচারব্যবস্থার কাজকর্ম বা সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করতে পারবে না কেউ। কেস ক্লোজড। শাহবাগের লোকজন বাড়ি যান।

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

তাহলে জামাতের সাথে মতের মিল চলে আসছে বিবেচনায় সবাই চুপ থাকুক, জামাতের পাতে ঝোল চলে যেতে পারে কিনা।

দেখুন তো আমার বক্তব্যে সেরকম মনে হচ্ছে কিনা-
""আমরা উচ্চস্বরে জানাতে পারি এই বিচারের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। কিন্তু আমরা যেন কখনোই না ভাবি যে, আমাদের আন্দোলনে সরকার এই বিচারের রায় বদলাতে পারে। আমরা যেন না ভাবি যে, আমাদের অথবা অন্য কারো বক্তব্য-আন্দোলনে বাংলাদেশের বিচার বিভাগ প্রভাবিত হতে পারে। আমাদের আন্দোলন যেন সারা বিশ্বকে জানিয়ে দেয় যে স্বজন হত্যার বিচারের আমরা কতটা আন্তরিক। আমরা আমাদের স্বজনদের হত্যাকারীদের সর্বোচ্চ সাজা চাই সেটা যেন আমরা প্রকাশ করি। আমরা যেন সারা দেশে এই বিচারের সুষ্ঠতার জন্য এবং সকল অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তির জন্য প্রয়োজনীয় আবহ তৈরি করে রাখি‍‍‌‌''।

এই কথাগুলো বলবার কারণ হচ্ছে, একমাত্র আইনি উপায়েই অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা যেতে পারে। অন্য কোন শর্টকার্ট নেই। মানুষের সোচ্চার হবার উদ্দেশ্যও ওটাই হওয়া উচিত, আইনি উপায়ে অপরাধীর সর্বোচ্চ সাজা নিশ্চিত করা।

সাধারণের চাওয়া এবং আন্দোলনের সঙ্গে কোন দ্বিমত নেই। আমার লেখাতে বলতে চেয়েছি মানুষের বক্তব্য/আচরণ যেন জামায়াত শিবির গোষ্ঠীর পক্ষে না যায় সেদিকে সতর্ক থাকতে হবে।

কাদের কাছে প্রতিষ্ঠা পায়? বিলিতিদের কাছে? তাতে কিছু আদৌ যায়-আসে কিনা সেটা নিয়েই তো দ্বিতীয় প্যারা। ছাগুদের কাছে? তারা তো জানেই এসব ষড়যন্ত্র? সাধারণ মানুষের কাছে? তারাই তো শাহবাগে গিয়ে ফাঁসির দাবী করছে। তাহলে?

খুব সাদামাটাভাবে জবাব দেয়ার চেষ্টা করি। বিচারের মান সে কেউ না চাইলেও রক্ষা করতে হবে। এই বিচারের উপর ভবিষ্যতের অনেক কিছু নির্ভর করছে। মনে রাখতে হবে কেবল কয়েকজনকে মৃত্যুদণ্ড দিলেই সব শেষ নয়। এই গোষ্ঠীর নীতি/মনোভাব/রাজনীতি/অস্তিত্ব সবকিছুরই মৃত্যু নিশ্চিত করতে হবে। এই বিচার এবং অপরাধীর মৃত্যুদণ্ড সেই প্রক্রিয়ার কেবল প্রথম ধাপ।

এই 'নিরপেক্ষ, সরকার-প্রভাবমুক্ত' ট্রাইবুনালের এই যাবজ্জীবনের রায় কতটা গ্রহণযোগ্য আপনার কাছে, শাহবাগের লোকেদের কাছে?

আমার কাছে গ্রহনযোগ্য নয়। কিন্তু সেজন্য আমি বিচারকে প্রভাবিত বলছি না। আমি বলছি রায় পছন্দ হয়নি। সরকার যেন সম্ভাব্য সকল গণতান্ত্রিক উপায়ে মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিত করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করে। সেই লক্ষ্যে সরকারের উপর চাপ অব্যহত থাকুক।

সরকারের কাছে এই আন্দোলন করে লাভ নেই, কারণ 'তারা বিচারকে বিন্দুমাত্রও প্রভাবিত করতে পারে না'। "আমাদের অথবা অন্য কারো বক্তব্য-আন্দোলনে"ও "বাংলাদেশের বিচার বিভাগ প্রভাবিত হতে পারে" না। এটা তো সরাসরি যারা কাদের মোল্লার ফাঁসি চাই বলে আন্দোলন করছে তাদের মুখের উপর বলে দেওয়া যে কোনো লাভ নেই ভায়েরা, এইভাবে আন্দোলন করে কাদের মোল্লার ফাঁসির উপর কোনোই প্রভাব আনা যাবে না। তাহলে নিরর্থক তো বটেই। জাফর ইকবাল বলেছেন ফাঁসি ছাড়া রাজপথ ছেড়ো না, তিনিও তাহলে বোকার মত ভাবছেন এই আন্দোলন কিছু প্রভাব ফেলতে পারে হয়তবা। আপনি কতটা সেলফ-কন্ট্রাডিক্টরি কথা বলছেন সেটা বোধহয় আপনি বুঝতে পারছেন না।

কন্ট্রাডিক্টরি কি? আমি বলছি সরকার অথবা কেউ বিচারের রায় প্রভাবিত করতে পারেনা। স্বাধীন ট্রাইবুনালের উপর কারো নিয়ন্ত্রণ নেই। কখনো ছিলও না। কিন্তু বিচার কার্যক্রমে সরকারের যে পৃষ্ঠপোষকতা অথবা সরকার পক্ষের যে আন্তরিক প্রচেষ্টা সেখানে ঘাটতি থাকলে সেটা নিয়ে কথা বলা যেতে পারে, বলা দরকার। কিন্তু সবকিছুর পরেও, মাননীয় আদালত কী দণ্ড দেবেন সেটা আদালতের এখতিয়ার। লোকে চাইছে তাই ফাঁসি দিলাম' এরকম কোন আইন বাংলাদেশে নেই।
অন্যদিকে রাজপথে থাকার অনেক লাভ। এতে যুদ্ধাপরাধী গোষ্ঠীর কাছে একটা বার্তা পৌঁছবে যে মানুষ তাদের পক্ষে নেই। তাদের অন্যায় সাধারণে সহ্য করা হবে না। এই আন্দোলন সরকারের কাছে বার্তা পৌঁছবে যে সরকারের কোন গাফিলতি সাধারণ ক্ষমা করবে না। এই আন্দোলন সারা দুনিয়ায় বার্তা পৌঁছবে যে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের চাওয়া এই রায়। যুদ্ধাপরাধের বিচারের পক্ষে কাজ করা সকল সংগঠন, ব্যক্তি, দল এই আন্দোলন থেকে নতুন করে উজ্জীবিত হবে। এই আন্দোলনের অসংখ্য শুভ দিক রয়েছে।

ইতিবাচক আবহ তৈরি করে কী লাভ? সেটা তো কোনো প্রভাবই ফেলতে পারবে না।

প্রভাব কথাটার অর্থ বোধহয় আপনি বেশি বিস্তৃতভাবে নিচ্ছেন। বিচার কার্যে বিচারের আয়োজন এবং তাতে আন্তরিকতার যে প্রভাব সেটা তো থাকবেই। কিন্তু মাননীয় আদালত অপরাধীর দণ্ডের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেবেন তাতে আন্দোলনের কোন প্রভাব নেই।

আইনসংগত পৃষ্ঠপোষকতা তাহলে খারাপ হয়নি। তাহলে প্রশ্ন থাকে একটাই, বিচারক এসবের পরেও কেন ফাঁসি দিলেন না।

এই প্রশ্নটির জবাব দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব নয়। দুঃখিত।

কেস ক্লোজড। শাহবাগের লোকজন বাড়ি যান।

না। কেস ক্লোজড নয়। আমাদের পথ এখনো খোলা রয়েছে। আপনাদের কাছে অনুরোধ হচ্ছে সেই পথকে আরো সংকীর্ণ করে তুলবেন না। আপনাদের প্রতিবাদের ভাষা যেন জামায়াত শিবিরের ভাষার সঙ্গে মিলে না যায়। আবেদন কেবল এটুকুই। প্রতিবাদে সোচ্চার হতে মানা নেই। বরং প্রতিবাদে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন।

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

কসাই কাদেরের ফাঁসি চাই।

তুহিন সরকার।

দ্রোহী এর ছবি

ট্রাইবুনাল দীর্ঘজীবী হোক।

আপাতত উৎসব কইরা লই কয়দিন।

সাত দিন পর পর বিপ্লবের খোঁজ নিমু। চোখ টিপি

নীড় সন্ধানী এর ছবি

ফাঁসি হলো নগদ শাস্তি।
ফাঁসি না হওয়া মানে কসাই কাদের বেঁচে গেল। যাবজ্জীবন সংক্ষেপ হতে রাষ্ট্রপতির সামান্য দয়াই যথেষ্ট। সরকার বদল হলে আগামী বছরেই হয়তো কসাইটা দুইটা ভি দেখাতে দেখাতে জেল থেকে বের হয়ে ফুলের মালা গলায় দেবে। আমরা এখন সেরকম কিছুরই অপেক্ষা করতে পারি।

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

অনিক এর ছবি

আমার দাবি একটাই। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। এবং তা আইনি প্রক্রিয়াএ সম্ভব বলে মনে করি। কারন আপনি আমি সবার কাছে এদের স্বঘোষিত যুদ্ধাপরাধের দালিলিক প্রমান আছে। এমতাবস্থাএ ফাশির বদলে অন্য কোন রায় হলে তাতে বিচার প্রভাবিত ছিল বলেই মনে হয়।

tribunal এর কাজকর্ম পূর্বে যথেষ্ট নিরপেক্ষ মনে হবার কারনে এবং জামাতি দের দাবি ও যুক্তি দুর্বল মনে হওয়ায়ে tribunal এর পাশেই ছিলাম। তাই বলে কি মানে এই দাড়ায় যে tribunal এর ভুল সিদ্ধান্তও মেনে নিতে হবে? দৃশ্যতই শেষ মুহুরতে এসে tribunal এর বিচারকরা জামাতিদের ভয়ে ভীত অথবা সরকার এর দারা কোন ভাবে প্রভাবিত হয়েছে।

সরকার এর দারা tribunal প্রভাবিত এই কথা বললে তা জামাতিদের দাবির সাথে মিলে যাবে তা আমার মনে হয় না। জামাতিদের দাবি সরকার tribunal কে শুরু থেকেই জামাতের বিরুদ্ধে প্রভাবিত করেছে। আমার বক্তব্ব সরকার tribunal কে জামাতের পক্ষে প্রভাবত করেছে শেষ মুহূর্তে।

আমাদের দাবি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি। এই tribunal না পারলে অন্য কোন tribunal তা করবে কিংবা সরকার এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে।

tribunal নিরপেক্ষ - আমাদের এই দাবি ছিল তখনকার প্রেক্ষিতে। এমন কি হতে পারে না যে রায় এর আগ মুহুরতে tribunal সরকার এর দারা প্রভাবিত হয়েছে? এমন্ হলে আমাদের আগের দাবি থেকে সরে আসতে সমসসা কোথায়ে? মানুষের যৌক্তিক অবস্থান ত সময়ের সাপেক্ষে/ পারিপার্শ্বিকতার সাপেক্ষে পরিবর্তনশীল। বাকি যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দিলেও কি কাদের মোল্লার রায় কথা আমারা মেনে নিতে পারব?

অমি_বন্যা এর ছবি

লেখায় সহমত।
আমাদের ক্ষোভ যেন যুদ্ধাপরাধীদের অসৎ উদ্দেশ্য সাধনে কোন ইন্ধন না হয় সে ব্যপারে সজাগ থাকতে হবে। এই রায়ে সারা দেশ আজ ক্রুদ্ধ। কিন্তু এটাকে পুঁজি করে যেন কোন মহল অন্য কোন উদ্দেশ্য সাধন না করতে পারে সে ব্যপারে সজাগ থাকতে হবে।

অনেক বছরের জমানো ক্ষোভ, আবেগ আর প্রত্যাশার পরিপূর্ণ প্রাপ্তি লাভে যে হতাশা আজ সৃষ্টি হয়েছে তার বহিঃপ্রকাশ চলছে চলুক ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।