সরকারের নীতিনির্ধারকদেরকে সহজ বাংলায় বলে রাখছি...

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি
লিখেছেন অনার্য সঙ্গীত (তারিখ: শনি, ১৬/০২/২০১৩ - ৩:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

জামায়াত শিবিরের তাণ্ডব রুখতে সরকারের ব্যর্থতা আমাদের নজর এড়ায়নি। স্পষ্টতই এই উগ্রমৌলবাদীদের দলটি গণতন্ত্রে বিশ্বাসী নয় এবং রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলে এরা নিঃশঙ্কোচে সকল ঘৃণ্য কাজই করবে, করতে পারে! একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে এরকম উগ্রপন্থী কোন দল কীভাবে রাজনীতি করছে সেটি আমাদের বোধগম্য নয়। কোন দেশের স্বাধীনতার বিরোধীতা করে, সেই দেশের মানুষকে হত্যা করে, লুণ্ঠন করে, সম্ভাব্য সকল মানবতাবিরোধী অপরাধ করেও কোন দল সেই দেশে রাজনীতি কেন করবে সেই প্রশ্নের জবাব পৃথিবীর কোন সভ্য নাগরিকের কাছেই নেই!

জামায়াত শিবির কীভাবে এই দেশের রাজনীতিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেই ইতিহাস আমাদের জানা। মানবিক বোধহীন সামরিক শাসকের ঘৃণ্য রাজনীতির সেই কলঙ্কের ইতিহাস জাতি হিসেবে আমাদেরকে চিরকালই গ্লানিতে ভোগাবে। আমরা আশা করছি বাংলাদেশ সরকারের নীতিনির্ধারকদেরও সেই ইতিহাস জানা রয়েছে। জামায়াত শিবির কীভাবে এই দেশের শাসনতন্ত্রের শিরায় শিরায় প্রবেশ করেছে সেই ঘটনাও আমাদের অজানা নয়। এই দেশের সামরিক বাহিনী, আইনশৃংখলারক্ষী বাহিনী, গোয়েন্দাবাহিনী থেকে সরকারের তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সুকৌশলে নিজেদের ঘুঁটি পুতেছে এই দলটি দীর্ঘদিন ধরে। আজকের যদি সরকার এই সত্য না জেনে থাকে তাহলে সরকারী দলের রাজনৈতিক প্রজ্ঞা নিয়েই বড়সড় প্রশ্ন উঠবে!

অতীতেও যখন জামায়াত শিবিরের নৈরাজ্য রুখতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে তখন আমরা সরকারের নীতিনির্ধারকদের স্মরণ করিয়ে দেয়ার চেষ্টা করেছি, কেন শাসন ব্যবস্থায় এরকম দূর্বলতা দেখা যাচ্ছে! জামায়াত শিবিরের মৌলবাদী পুতুলেরা যখন সামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা চালিয়েছে, তখনও, সাধারণের কাছে যে তথ্যই আসুক, সরকারের উচ্চপর্যায়ে ঘটনার শেকড় কোথায় সেটি স্পষ্ট হয়েছে বলেই বিশ্বাস করি। যদি তা না হয়ে থাকে, তাহলে সেটি আপনাদের অযোগ্যতা। আপনাদের এই অযোগ্যতা আমাদের নজরে নেই ভাববেন না। এর জবাব দিতেও আমরা প্রস্তুত আছি। জামায়াত শিবিরের সঙ্গে সঙ্গে এদের রক্ষিতাদেরকেও জনসমুদ্রের তোড়ে নিশ্চিহ্ন করে ফেলার মত মুক্ত মানুষ বাংলাদেশে রয়েছে। সহজ বাংলায় বলছি, আশা করছি যতটা নির্বোধ আপনাদেরকে মনে হয় ততটা নির্বোধ আপনারা নন।

৩০ লক্ষ লাশ কাঁধে নিয়ে ৪২ বছর দাঁড়িয়ে আছি বিচারের জন্য। অগণিত মায়ের লজ্জার ঋণে নত হয়ে আছি। আর আজকে উগ্র মৌলবাদী গোষ্ঠীর খুনিরা আমার ভাইয়ের গলায় ছুরি বসাচ্ছে আপনাদের নির্বুদ্ধিতা আর অযোগ্যতার সুযোগে। তীব্র নেশার ঘোরেও ভাববেন না ভাইয়ের লাশ কাঁধে করে কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি চলে যাবো। মানবতার শত্রু উগ্রমৌলবাদী জামায়াত শিবির গোষ্ঠীকে এই পূণ্যভূমি থেকে নিশ্চিহ্ন করার গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা আপনারা এখনই না নিলে, রাজপথ থেকে আমরাই সেই ব্যবস্থা করব। জামায়াত শিবিরের পোকারা কোন মায়ের পেটে জন্মায় না। এদের নিশ্চিহ্ন করতে জনরোষের যে জোয়ার অপেক্ষা করে আছে, সেটিকে আপনারা কী নামে ডাকবেন আমাদের জানা নেই। কেবল সহজ বাংলায় বলে রাখি, আপনারা যারা আজকে জামায়াত শিবিরের রক্ষিতার ভূমিকায় নেমেছেন, এদের নৃশংসতা যারা দেখেও দেখছেন না, যারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকের জায়গাতে বসেও নির্বুদ্ধিতার অসহ্য নাটক দেখাচ্ছেন, জামায়াত শিবিরের সঙ্গে তাদেরকেও আমরা ছেড়ে দেবনা।

শাহবাগ আন্দোলন চলবে। চোখে পানি থাকবে, কিন্তু খুনীকে মুক্ত রেখে ভাইয়ের লাশ নিয়ে আমরা ঘরে ফিরব না!


মন্তব্য

হাসিব এর ছবি

বল এখন আওয়ামী লীগের কোর্টে। প্রশ্ন হলো তারা সেইটা কীভাবে খেলবে। তারা সংসদে পূর্ণ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে আছে। রাস্তাও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির দখলে। খেলতে না পারলে কোন অজুহাতেই ভবিষ্যতে কোন কাজ হবে নারে মমিন!

নিয়াজ মোর্শেদ চৌধুরী এর ছবি

সরকারকে বলবো, জামাতকে নিয়ে রাজনীতি করবেন না। বরং জামাতকে নিয়ে রাজনীতি না করলেই আপনাদের লাভ। এই বর্বর, পিশাচ দলটাকে নিশ্চিহ্ন করুণ, নিষিদ্ধ করুন, নিয়ন্ত্রণ করুন তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে। যদি সেটা করেন, খোলামেলা জানিয়ে যাচ্ছি আগামী নির্বাচনে আপনাদের ভোট দেব। কিন্তু না করে বরং রাজনৈতিক কারণে তাদের টিকিয়ে রাখলে নির্বাচনের ফল আপানাদের অনুকূলে যাবে - এমনটা ভুলেও ভাববেন না।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

সামনের ইলেকশনে রাজনীতির পট পরিবর্তন হলে কী ঘটবে, ব্লগার থাবা বাবা'র হত্যাকাণ্ড সেটার শুরুর দৃশ্যের একটা মঞ্চায়ন মাত্র। রাজনীতির মাঠে আওয়ামী লীগ হয়তো ভুলে গিয়ে থাকতে পারে মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে জামাতের নৃশংসতার কথা, বুদ্ধিজীবী নিধনে তাদের নীলনক্সা বাস্তবায়নের ইতিহাস, কিন্তু জামাত ভুলে নাই। ৪২ বছর আগেও জামাত যা ছিলো, নৃশংসতার মাপকাঠিতে আজও তাই আছে। এখন সরকার বুঝে দেখুক, জামাতের মতো হিংস্র, জিঘাংসায় লিপ্ত কোনো দলকে দ্বিতীয় সুযোগ দিবে কিনা! বাংলাদেশের মানুষকে দ্বিতীয়বারের মতো খুন হবার অবস্থায় ঠেলে দিবে কিনা!

ন এর ছবি

আমারা পরছি উভয় সঙ্কটে। আওয়ামী লীগ জামাতকে নিষিদ্ধ না করলে তাদের আমি আর ভোট দিব না, বিএনপি জামাতকে কোলে নিয়ে আছে যেভাবে এরা তো বাতিলই। এই ভোটের রাজনীতি ভাবলে বমি পায়।

PaMaALe এর ছবি

লেখাটির জন্য অন্তর থেকে ধন্যবাদ। আমার পর্যবেক্ষণে সরকার এবং বিরোধী দু'পক্ষকেই ইতিমধ্যে নূতন প্রজন্মের দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধকে হিসাবে নিতে বাধ্য হয়েছে। সরকার দু'একটি দাবী ইতিমধ্যেই মেনে নিতে এবং বিরোধীরা এ মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে শ্রদ্ধা রেখে কথা বলতে বাধ্য হয়েছে। এটা যে তারা স্বেচ্ছায় করেছে তা নয়। বরঞ্চ তারা বাধ্য হয়েছে। কোন কিছু করার জন্য সরকারের কাছে আহব্বান জানিয়ে কোন লাভ হবে না। পোস্টটিতে যেসব আহব্বন জানানো হ'ল তা সরকার কোনদিনই করবে না। কিন্তু যদি আন্দোলনের তীব্রতা বাড়ানো হয় তবে সকরার পোস্টটিতে উল্লেখিত অতি ‌ন্যায্য বিষয়গুলোর প্রতিটিই করতে বাধ্য হবে। দেশের সকল এলাকার মানুষকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধে সমৃক্ত করার সুবিধার্ধে প্রতিটি উপজেলায় না হলেও অন্তত প্রতিটি জেলায় যদি ঢাকার প্রজন্ম চত্বরের আদলে এক একটি আন্দোলন গড়ে তোলা যায় তবে সরকার অবশ্যই পোস্টটিতে উল্লেখিত প্রতিটি দাবী মেনে নিতে বাধ্য হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। আসুন আমরা প্রতিটি জে‍লায়, উপজেলায়, ইউনিয়নে আর গ্রামে শীগ্রই আরও প্রবলভাবে নূতন মুক্তিযুদ্ধ করি।

- পামাআলে

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।