[কাঁচি হাতে বসেছিলাম, ক্ষেপাটে আপাত-আত্ম-নিন্দুক। অনেকক্ষণ কাঁচি, আঠা, গঁদে জোড়াতালি খানিক। তারপরে শেষমেশ কিঞ্চিৎ বিরক্ত, হতাশ...]
ইন্দ্রিয়াবেগ ট্র্যাফিকিং
১
... ... এ-খা-নে কো-ন-ও র-ঙ নে-ই কে-ন-না স-ব
আ-লো মু-ছে গে-ছে অ-থ-বা স-ব আ-লো জ্ব-লে আ-ছে যে-হে-তু আ-লো-তে স-ব র-ঙ মে-শা-নো সে-হে-তু
ধ-রে নি-তে পা-রি স-ব র-ঙ মি-শে গে-ছে অ-থ-বা মু-ছে গে-ছে ... ...
প্রায়ালোকিত হিমায়ন ঘর, বিছানা জুড়ে তুমি
স্টীলশরীরে পড়ে আছো
একটু মুচড়ে হাত পা, অথবা টানটান করেই!
আমি ঢেউ দেখি, নৌকা দেখি, পাল দেখি, স্রোত দেখি, ছ
ই দেখি, নৌকোজমা কুয়াশা দেখি, ছইঘেরা মেঘ দেখি, আঁধারের অভাবে আমি সংশয়ে পড়ে যাই।
হাত বাড়ালেই ধারালো ধাতবে
কেটে ছড়ে যেতে থাকে রোমকূপ
কাটাক্ষতে বয়ে চলে ভায়োলেট-মেঘ
নিবিড় হলে ইন্দ্রিয় খুব বিপন্ন হয়,
ইন্দ্রিয়োর্ধ্ব স্পর্শ জমে হীনমাছির নীলচোখ ঘিরে।
"বস্তুত আমি নীলমাছির পুঞ্জাক্ষি পছন্দ করতে শিখি
বস্তুত আমি ঝাঁঝাঁলো লাল বুদবুদ ভালোবাসতে শিখি"-
সেখানে তোমার চিহ্নমাত্র নাই!
অনায়াসে ঠেলে দিতে থাকো পর্যাবৃত্তে। যেভাবে তোমাকে
চিনেছিলো
আদিগন্ত চেনামাঠ, দু'খানা বেতার-টাওয়ার-শিশ্ন মাথায় নিয়ে।
আমি সেভাবে দূরে যেতে যেতে ক্ষীণতর হতে থাকি
অভিস্রবণ বড়ো ক্লান্তপ্রক্রিয়া, মনে হয়!
শেষেঃ
গহ্বর থেকে চোখ খুলে ফেলি;
আঙুলগুলোও একে একে, হ্যাঁচকা টানে;
ত্বক ধীরে উল্টোচলনে ফেলে দিলে
হলুদাভ মেদ আর লালরঙ মাংস চেয়ে থাকে পলকহীন;
বাকি ইন্দ্রিয়দুই - সীসা ঢেলে বন্ধ করে দেয়ার পর
আমি ধীরে ধীরে ভাগাড়ী-রথে কর্ণকে সারথি করি
মৃত্যুর চেয়ে গাঢ় কোন গান, চুমুর চেয়ে ঘন কোন গলনে
জ্বলতে থাকে তোমারারামার চারিপাশ।
***
২
বাঁশিবাদক সুর থামিয়ে থমকে দিলে ঘোর কেটে যাওয়া-
থতমত আমি তাঁহার দৃষ্টি অনুসরণ করি,
দৃষ্টির শেষরেখায় জ্বলন্ত টিউবের নিচে
সারবাঁধা মানুষের সামনে দিয়ে
এক রূপসী আগুন ছুটে আসে।
আগুনের গায়ে শাদা-শামুক মালা লেগে থাকে,
আগুনের পায়ে সূক্ষ্ণহিল বর্শা গেঁথে থাকে,
আগুনের শরীরে কোমল ধোঁয়ামেঘ,
বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ার ভয়ে শীতলতা ধরে রাখে,
আগুনের লম্বা পায়ের ঝুল-বরাবর
আমি আমার গলনাঙ্ক লিখিত দেখি।
মুহূর্তেই আমার কাছে আগুন,
দুমড়ে মুচড়ে নীলখাম-প্রেমপত্র হয়ে যায়।
মুহূর্তেই সে সর্সর্ করে ময়াল সাপের মতো,
ইনহেলারে পাফ্ নেয়ার মতো,
চুমুকে ব্ল্যাক কফি জিহ্বায় টানার মতো,
এমনকি আরো অনেক আশ্লেষ-গ্রহণের মতো
আমার চুল-ত্বক-ময়লা শরীর ভেদ করে ঢুকে পড়তে থাকে।
আমি আগুন খুলে খুলে দেখি-
বাদামী শরীরে পোশাক খুলে খুলে নিবিড় হই।
আগুনের আভরণ খসে গেলে বাদাম-ত্বক চর হয়ে জেগে ওঠে।
চরের বালিতে আমি ব্রাস্ট্র্যাপের আইল পাই,
সেখানে দুতিন-বিঘা জমিন কেনা নিয়ে
আমি পান-খাওয়া দালালের সাথে বচসা বাঁধাই!
আগুন আমাকে টেনে টেনে তার ভিতরে নিতে থাকে,
গভীরে
আরো গভীরে
আমি গলে গলে, থাকি।
সেখানে নিমগ্ন চৈতন্যের জল এসে পাড় ভিজানো তাল ঠুকে ঠুকে
চরের জমিন ভিজিয়ে দেয়।
ওখানে চিরহরিৎ তিল জেগে থাকে
আর নৌকায় কালোকাঠে খাঁজ, খাঁজ পলি জমা পড়ে,
প্লাবিত-উপকূল জুড়ে আমি জমিহারা আর্তনাদ গুনি।
সবশেষে ঘনোচাঁদঘোনোকাশফুলঘনোবাঁশবন প্যান্টিলাইনের চেয়ে গাঢ় হয়ে জেগে থাকে।
***
- অনীক আন্দালিব
নভেম্বর/'০৮
মন্তব্য
কবিতা জিনিসটাই আমার জন্য আউট-অফ-সিলেবাস। আরো কয়েকবার পড়ে নেই, বুঝে মন্তব্য জানাবো নে। শিরোনামটা দারুণ পছন্দ হয়েছে, সেটা জানানোর জন্যই এই দফা কমেন্টানো।
কয়েকবার পড়ে মন্তব্য জানাইস। শিরোনাম পছন্দ হওয়ার জন্যে তোকে ধন্যবাদ।
শিরোনাম অসাধারণ।
কবিতাও দারুণ লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ অতন্দ্র প্রহরী।
আমি ইশতিয়াক রউফের সাথে সহমত, কবিতা বুঝতে আমার ও কষ্ট হইতেসে।
শব্দশিল্পী, কবিতা বুঝা, না বুঝার অবস্থানটিকে নিয়ে আমার কিছু প্রশ্ন আছে। বুঝে ওঠার সাথে যুক্তি, কার্যকারণ ইত্যাদির সম্পর্ক থাকে। কবিতাতে সেরকম বক্তব্য দেয়ার পরিসর খুবই কম, যা বুঝে ওঠা যায়। এমনকি এক এক জন পাঠকের কবিতা-পাঠানুভবও আলাদা।
গদ্যরচনার প্রক্রিয়ায় কি কবিতা পাঠ করা যায়?
আর আমি শিরোনামটাই বুঝিনি! ইন্দ্রিয়াবেগ ট্র্যাফিকিং মানে কি?
আদৌ কি পরিপাটি হয় কোনো ক্লেদ?ঋণ শুধু শরীরেরই, মন ঋণহীন??
শিরোনাম: ইন্দ্রিয়াবেগ ট্র্যাফিকিং। আমাদের যাবতীয় ইন্দ্রিয়ের ভেতরে বাইরে যেমন চলাচল ঘটে, রাসায়নিক অণু-পরমানুর চলন ঘটে। আমরা সেগুলোকে নানারকম নাম দিয়ে বুঝাই। হিংসা, ঘৃণা, রাগ, কাম, লোভ, আনন্দ, পুলক ইত্যাদি। আমরা কি খেয়াল করি সেগুলো কীভাবে চলাচল করে? কীভাবে একটি অনুভূতি পাল্টে আরেকটি অনুভূতির চর জেগে ওঠে।
হেসে উঠেও আমরা বিষণ্ণ হই, কেঁদে ফেলেও হালকা বোধ করি। চরম তৃপ্তির সঙ্গম শেষেও অবসাদ অনুভব করি। এসবের ট্র্যাফিকিং কীভাবে ঘটে?
মনে হয় আমারই ব্যর্থতা এ-সকল "বুঝিয়ে" দিতে না পারার!
আপনার কবিতা বুঝিনি।
বেশিরভাগ কবিতাই বুঝিনা।
শুধু কিছুকিছু কবিতা পড়ে একটা ঘোর ঘোর তৈরী হয়।
খুব ভালো লাগে এই সন্ধা সন্ধা্যা ঘোরটা।
এই ঘোর আনার জন্যই আবার পড়ি। বারবার পড়ি।
আপনার কবিতা সেই ঘোরটা এনে দিল।
কিছু কিছু শব্দ একটু দ্বিধায় ফেলে দিয়েছে।
মনে হয়েছে প্রতিশব্দ ব্যাবহার করা যেতো।
কাটাক্ষতে বয়ে চলে ভায়োলেট-মেঘ
কবিতায় ইংলিশ শব্দ নিয়ে আমার শুচিতা নেই।
কিন্তু এখানে কেন যেন মনে হচ্ছে বাংলাটাই ভালো লাগতো।
ভালো থাকুন। এরকম লিখুন আরো
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
অনেক ধন্যবাদ রানা মেহের। আসলে এগুলো নিরন্তন কাটাকুটির কবিতা। মূলত বার বার পাঠেই এধরনের খটকাগুলো বেরিয়ে আসে। ভায়োলেটের জায়গায় বাংলা শব্দ ব্যবহার করাই যায়। পরবর্তী এডিটিংয়ের সময়ে অবশ্যই আপনার কথাটা মাথায় রাখবো।
তবে এই যে বললেন, "বেশিরভাগ কবিতাই বুঝি না।" এটা তো ভালো ব্যাপার। কবিতাকে পুরো বুঝতে শুরু করলেই সেরেছে!
valo kobita
নতুন মন্তব্য করুন