গরম পড়ে গেছে কিছুদিন হলো। তখন শরতের শেষ প্রায়, বাতাসের হুটোপুটি চলে। আমাদের রুমের দরজা জানালা খুলে দিলে প্রচুর বেদুইন বাতাস ট্রেসপাসিং করে। আমরা অবশ্য নিজেদের সম্পত্তি বিষয়ে উদাসীন। পৃথিবীতে আরো প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে খেয়াল রাখার। বাতাসে ভিজতে ভিজতেই আমার কম্পিউটারে 'গীটারিক' একটা গান ছাড়ে। প্রথম কয়েক মুহূর্ত কিছুই শোনা যায় না। তার পরে খুব মৃদু একটা কর্ড। আমি কান খাড়া করি, সে ভলিয়্যুম বাড়িয়ে দেয়। বাতাসের ভাঁজে ভাঁজে মিশে কিছু শব্দ আমার কানে সুর হয়ে আসে। শুনতে শুনতে একটু বেখেয়াল হয়েছিলাম, মিনিট দুই কি তিন পরে দেখি বাতাসের চেয়ে তীব্র সেই সুর। ভয়ানক দুঃখী, করুণ আতঙ্ক ধরিয়ে দেয়া সুরটা আমাদের রুমের ভেতর পাক খেতে থাকে। পাক খেয়ে ভেতরের বাতাসকে ঘোলা করে দেয়। আমি শুয়েছিলাম আধশোয়া হয়ে, উঠে বসতেও ভুলে যাই। গীটার, আর নাম-না-জানা যন্ত্রের যন্তর-মন্তর ঘুরতে থাকে প্রবল আকর্ষণে আমাকে বেঁধে নিয়ে।
তারপরে ধীরে ধীরে সুরের স্রোত একটু ধীর হয়ে আসে। আমার সজাগ হয়ে ওঠা ইন্দ্রিয়ের বার্তা পাইঃ এটা হয়তো আবারও ঝড় ওঠার পূর্বাভাস। একটু পরেই খুব নীরবতার মতো কেউ একজন কোমল অথবা কাতর স্বরে বলে ওঠে,
Remember when you were young, you shone like the sun.
মনে রেখো, তুমি যখন তরুণ ছিলে, সূর্যের মত প্রখরতায় জ্বলেছিলে।
Shine on you crazy diamond.
আমার শুনতে ভুল হয়। আমি গায়কের পেছনে, সুরের পেছনে একটা হালকা হাসির আওয়াজ পাই। আমার কৌতূহল তখন তুঙ্গে! হে উন্মাদ হীরক, তুমি জ্বলো। এমন ভাবে কেউ বলে নাকি? এমন উন্মূল কাতরতা ঝরে ঝরে পড়ছে হালকা ড্রামের সাথে।
Now there's a look in your eyes, like black holes in the sky.
Shine on you crazy diamond.
আমার মাথায় ভাবনার গুটিপোকারা চলাচল শুরু করে। কার চোখে এমন দৃষ্টি, যার মাঝে কৃষ্ণগহ্বরের ছায়া! মনে হয় কোন সত্যিকারের পাগলের কথাই বলছে গানে। আমি ভাবতেই থাকি, কারণ আর কোন গান আমাকে ভেতরের মানুষ নিয়ে এভাবে আগ্রহী করে তুলেনি। গীটারিক তখন মাথা নিচু করেই শুনছে, হাতে ওর অ্যাকুয়স্টিকটা ধরে আলতো আলতো হাত বুলাচ্ছে। এটা যদি আমার আগ্রহের সীমা হয়, তবে তা মুহূর্তেই পেরিয়ে গেল পরের কথাগুলো শোনার পরে।
You were caught on the crossfire of childhood and stardom,
blown on the steel breeze.
Come on you target for faraway laughter,
come on you stranger, you legend, you martyr, and shine!
এই কথা তো বন্ধু ছাড়া কাউকে নিয়েই বলা যায় না। কাউকে এমন আপন করে না চিনলে, না জানলে কীভাবে গায়ক টাকে এমন আহ্বান করবে?
তারপরে আমি এই গানের মানুষটিকে খুঁজতে শুরু করি। ইন্টারনেট দারুণ জায়গা, রহিম, করিম, মকবুলকেও খুঁজে পাওয়া যায়। আর আমার সামনে অচিরেই যে মানুষটা উঠে এলো, সে ধীরে ধীরে আমার চিন্তা-চেতনার জগতে একটা বড়ো ঢেউ ফেলেছে সামনের কিছু দিন।
http://pentaclerecords.net/darien3/Pink%20Floyd%20-%20Wish%20You%20Were%20Here%20-%201a.jpg
এই গানটার নামঃ Shine On You Crazy Diamond। গানের সুর রজার ওয়াটার্স, ডেভিড গিলমোর আর রিচার্ড রাইটের লেখা। কথা লিখেছে ওয়াটার্স। পুরো ট্র্যাকটির দৈর্ঘ্য মাত্র তেইশ মিনিট। প্রথমে প্ল্যান ছিল পুরোটা একসাথে রাখার। পরে ঠিক করা হলো এই একটা গান দিয়েই অ্যালবাম শেষ ও শুরু করতে হবে। তাই দুইভাগে ভাগ করে ফেলা হলো পুরো গানটিকে। মোট নয়টা অংশের মাঝে ১ থেকে ৫ নম্বর ভাগ নিয়ে হলো প্রথম অংশ। আর ৬ থেকে ৯ পর্যন্ত ভাগগুলো নিয়ে হলো দ্বিতীয় অংশ। নয়টা ভাগের ব্যাপার হলো, এক একজন এক একসময়ে কম্পোজ করেছে। পরে সেই পীসগুলোকে জুড়ে দেয়া হয়েছে। পিঙ্ক ফ্লয়েড ব্যাণ্ডের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড়ো গান। এবং এটাই সম্ভবত তাদের সবচেয়ে মহান সৃষ্টি।
কিন্তু এসব তো বইপত্রের কথাবার্তা। একটু ঘাঁটাঘাঁটি করলেই পাওয়া যায়। সেগুলো নিয়ে আজকে এই ঘোর রাত্রিতে আমি কেন ক্ষেপে উঠলাম? শাইন অন য়্যু ক্রেজি আমি যখন প্রথম শুনেছিলাম, আমি বারবার শুনছিলাম। বারবার তেইশ মিনিট করে পেরিয়ে যেতে লাগলো, আমি কিছুতেই মনস্থির করতে পারছি না। গানের সুর আর কথা আমার হৃদয়ে গেঁথে গেঁথে যেতে থাকলো। ঐ যে বললাম, "পৃথিবীতে আরো প্রচুর গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে খেয়াল রাখার।", আমি তেমনই এক গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কারের নেশায় তখন বুঁদ হয়ে গেছি। এ কোন মানুষের কথা বলা হয়েছে গানের ভেতর? তাকে বার বার বলেই যাচ্ছে তুমি জ্বলতে থাকো? কী তার কাহিনী?
You reached for the secret too soon, you cried for the moon.
Shine on you crazy diamond.
Threatened by shadows at night, and exposed in the light.
Shine on you crazy diamond.
Well you wore out your welcome with random precision,
rode on the steel breeze.
Come on you raver, you seer of visions,
come on you painter, you piper, you prisoner, and shine!
এই লাইনগুলোতে আমার সামনে ধীরে ধীরে একটা অবয়ব পরিষ্কার হয়ে উঠতে থাকে। যেন কেউ খুব আলতো করে একটা পর্দা সরিয়ে নিচ্ছে একজন মানুষের মুখের ওপর থেকে। আমার চোখে ভাসে উদ্ভ্রান্ত, খেয়ালি একটা মুখ। মনিটরে খোঁজ লাগাই, আসলেই তো! উশকো খুশকো চুলের একটা সাদা-কালো ছবি ফুটে ওঠে। ঈষৎ বসে যাওয়া চোয়ালে একজন তাকিয়ে আছে। চোখের দৃষ্টিতে রাতের ছায়ার ভয়, আবার সূর্যের আলোয় ঝলসে যাওয়া অতীত! নির্বাক চোখের ভাষা কত তীব্র, প্রচণ্ড!
সীড ব্যারেট। পিঙ্ক ফ্লয়েডের প্রাণ ভোমরা। রজার, সীড, নিক মেসন, আর রাইট- চারজনের দল তৈরি হয়েছিল সেই '৬৫তে। সীড একইসাথে গান লিখতো, কখনো কখনো সুর দিত, গাইতোও। মূলত সেই সাইকেডেলিক রক মিউজিককে তুলে এনেছিল পিঙ্ক ফ্লয়েডের গানের মধ্যে। সীড ড্রাগ নিতো– সাইকেডেলিক ড্রাগ বলে পরিচিত এল.এস.ডি। বিষের মত রক্তনালী বেয়ে বেয়ে সীডের মস্তিষ্কের ভেতরে ঢুকে যেত কালকূট। যে ধরনের জীবনাচরণ সীডের ছিল, খামখেয়ালিপনায় ভরা, উচ্ছৃঙ্খলতায় ঘেরা; তাতে বেশি সময় লাগলো না প্রভাব পড়তে। ড্রাগের প্রভাবে অথর্বের মত জড় হয়ে যেতে লাগলো সে। একটা সময়ে ব্যাণ্ডের বাকিদের সাথেও সমস্যা শুরু হলো। একটা গানের দলের সদস্যদের মাঝে যে সমঝোতা থাকা দরকার, তাতে চিড় ধরে গেল। শেষমেশ সীড নিজেই দলত্যাগ করলো, ঠিকমত বাজাতেও পারছিলো না যে শেষদিকে!
যে ড্রাগের প্রভাবে অপার্থিব সুর সৃষ্টি হতো, কী অদ্ভুত খেয়ালে সেই ড্রাগই কেড়ে নিলো সবঃ গান, সুর, ছন্দ, সৃষ্টি, চিন্তা। এর পরের গল্পটা সরল। সীড নীরব হলো, নিশ্চুপ হয়ে এলো তার গীটার, নিথর হলো লেখার কলম। পিঙ্ক ফ্লয়েডের যাত্রা অবশ্য থামেনি। আরেক বন্ধু ডেভিড গীলমোরকে নিয়ে ব্যাণ্ডের কাজ আবার শুরু হলো। একে একে বেশ কয়েকটি অ্যালবাম বের হলো তাদের। অবশেষে '৭৫-এ এসে মুক্তির মুখ দেখলো Wish You Were Here । এই অ্যালবামের গান মাত্র ছয়টা, যার মাঝে একটা গানই তেইশ মিনিটের "শাইন অন য়্যু ক্রেজি ডায়মণ্ড"। গানের প্রতিটি লাইন সীডকে নিয়েই লেখা। একজন বন্ধু, সহযাত্রী, সমমনা সাথী আমাদের মনে কতটা প্রভাব ফেলতে পারে। সীড ব্যারেট চলে যাবার পরে পিঙ্ক ফ্লয়েডের বাকি সদস্যেরা আর কখনই তার প্রভাব পুরোপুরি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সে ছিল তাদের বন্ধুর চেয়েও বেশি একজন, ভাবাদর্শিক নেতা!
দ্বিতীয় অংশের কথাগুলো এরকমই প্রমাণ করেঃ
Nobody knows where you are, how near or how far.
Shine on you crazy diamond.
Pile on many more layers and I'll be joining you there.
Shine on you crazy diamond.
And we'll bask in the shadow of yesterday's triumph,
sail on the steel breeze.
Come on you boy child, you winner and loser,
come on you miner for truth and delusion, and shine
কী দূর্দান্ত পংক্তি। কী অস্বাভাবিক কবিতা। আমি যতবারই পড়ি, শিউরে উঠি। একজন রক্তমাংসের মানুষের জীবন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে তার চারপাশের সবার কাছে। আমরা হয়তো কখনও খেয়ালও করি না কারা আমাদের দিকে অনুগত দৃষ্টি দিয়ে রেখেছে।
শেষে একটা অসামান্য ঘটনা না বলে পারছি না। এই গানটির স্টুডিওর রেকর্ডের সময়ে, '৭৫ সালের কোন এক পড়ন্ত বিকেলে সীড ব্যারেট এসে চুপচাপ বসেছিলো এক কোণে। সম্পূর্ণ মাথা কামানো, একটু স্থূল শরীরের জবুথবু বসে থাকা মানুষটিকে কেউই চিনতে পারেনি। বাকি সবাই তখনও বাজনা, গাওয়া এসবে মগ্ন। অনেকক্ষণ পরে রেকর্ডিং শেষ হলে তাদের ম্যানেজার জানালেন, সীডের কথা। ততক্ষণে সে চলেও গেছে স্টুডিও ছেড়ে। যাদের সাথে তার প্রায় পাঁচ-সাত বছর যোগাযোগই নাই, তাদের সাথে দেখা করতে কেন সীড ঐ দিনটাই বেছে নিলো? সেদিনে তো সকলে তাকেই মনে করছিলো, তার জন্যেই গাইছিলঃ
"কাম অন ইউ বয় চাইল্ড, ইউ উইনার, ইউ লুজার
কাম অন ইউ মাইনার ফর ট্রুথ অ্যান্ড ডিলিউশন, অ্যান্ড শাইন!"
***
- অনীক আন্দালিব
১৭.৭.৯
[দ্র. গানটির বিশাল সাইজের কারণে আপলোড করতে পারলাম না। ]
মন্তব্য
কপিরাইটেড অডিও ক্লিপ সচলায়তনে আপলোড করা নিয়ে জটিলতা আছে। আপনি ইস্নিপ্সের লিঙ্ক ব্যবহার করতে পারেন।
ধন্যবাদ হিমু ভাই, পথ বাতলে দেয়ার জন্য। কিন্তু এতে করে আরো বিপদে ফেলে দিলেন। ইস্নিপ্সে গান দুটো খুঁজতেছি। url দুটো কপি-পেস্ট করলেই হবে? এখন না হয় কমেন্টে লিঙ্ক দিয়ে দিলাম, পরে পোস্টে কোন গানের ইস্নিপ্স লিঙ্ক কীভাবে দিবো? অনেক পোস্টে দেখি পুরো প্লেয়ারটাই উপস্থিত, ওটা কেমন করে ঘটে? (প্রশ্নগুলো বুদবুদ হয়ে ছিল, আজকে সুযোগে ফাটিয়ে দিলাম)
প্রথম অংশ'টার অরিজিনাল পেলাম না। মোটামুটি চলনসই একটা কাভার দিতেছি: http://www.esnips.com/doc/fde5b87e-fb86-4fa6-aadc-37241faab807/Shine-On-You-Crazy-Diamond
দ্বিতীয় অংশটা: http://www.esnips.com/doc/307be245-87d2-4d68-bd1f-ff534feb2758/Pink-Floyd---Shine-on-You-Crazy-Diamond-(parts-6-9)
কিছু মনে করবেন না, এই অ্যামেচারদের ভার্সনগুলো শুনলে পিঙ্ক ফ্লয়েড আর শাইন অন ইউ ক্রেজি ডায়মণ্ড-এর উপর চুড়ান্ত অবিচার হয় - বিশেষত কেউ যদি এই প্রথম এই গানটা এখানেই শুনে থাকেন। কিছু কিছু জায়গায় গীটারের কাজ একেবারে নির্যাতনের পর্যায়ে পড়ে। ই-স্নিপস-এ আমিও আসল গানের লিঙ্ক খুঁজে পেলাম না। আমি নিজে যেটা আপলোড করলাম সেটাও কপিরাইট ভায়োলেশন বলছে আর শেয়ার করতে দিচ্ছে না। নীচের ইউটিউবের লিঙ্কগুলো অন্তত: পিঙ্ক ফ্লয়েডের নিজেদের করা কনসার্টের ভার্সন - প্রথমবারের শ্রোতাদের জন্য এইগুলো বোধহয় ভালো হবে।
ই-স্নিপস-এ আসলটা পেয়েছি:
প্রথম অংশ:
দ্বিতীয় অংশ:
যুধিষ্ঠির, মনে করার তো কিছু নাই। আমি টেকি বিষয়গুলোতে এখনও ঠিক মানিয়ে নিতে পারিনি। ইস্নিপ্স-এ নিজে মাঝে মাঝে দুয়েকটা বিরল গান খুঁজতে যাওয়া ছাড়া যাওয়া হয় না। আমি হিমু ভাইয়ের কমেন্টের পরে বেশ খানিকক্ষণ খুঁজলাম, ক্লান্তিকর নেটের লাইন গুঁতিয়ে। অ্যামেচারের ভার্সন দিতে খুঁতখুঁত তো করেছেই, তা-ও ভালো আরেকটা ইসরায়েলী ছাগলের গান দেই নাই! শুরুতে গাক গাক করে কি যে বললো, আমিই ভড়কে গেলাম!!
যদি একটু কষ্ট করে বলতেন এই উইজেট-টা কিভাবে পোস্টে অ্যাড করতে হয়। নিদেনপক্ষে একটা টিউটোরিয়াল পোস্টের দিকে আমার নাকটা ঘুরিয়ে দেন। নিজেকে অশিক্ষিত্ লাগছে
সচলায়তনের সাহায্য বিভাগে ই-স্নিপস আর ইউটিউব থেকে লিঙ্ক এমবেড করার উপায় বলা আছে।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এরপরে কাজে আসবে দু'টাই।
লেখায়
সিডের ছায়া আসলে ফ্লয়েডে শেষ দিন পর্যন্ত ছিল। গত বছর রিক রাইটও চলে গেল।
আর এটাই কি সম্ভবত তাদের সবচেয়ে মহান সৃষ্টি ? এভাবে বলা আসলে সম্ভব না।
ধন্যবাদ অমিত ভাই। সময় আসলে খুব বাজে জিনিস। সবাইকে, সব সুন্দরকে কেড়ে নেয়... ...
মহান সৃষ্টি নিয়ে দ্বিমত/বহুমত আমার মধ্যেই কাজ করে, তাই "সম্ভবত" লিখেছি। সম্ভাবনার কথা তো বলাই যায়, তাই না?
ভাইজানের লেখাটা ভালো লাগল, কিন্তু সিড ব্যারেটকে নিয়ে লেখলেন, তার আমলের গান নিয়া লিখলেন না, আবার মেডেল টপকায় উইশ ইউ ওয়ার হেয়ারে গেলেন গা বস, একটু বিভ্রান্ত হয়ে গেলাম, 'ওয়ান অফ দিস ডেজ' বা 'ইকোস' কিন্তু চরম ফাটাফাটি, আর 'ইকোস' কে কিন্তু ভাঙ্গে নাই, ২৫ মিনিটের গানটা যতবার শুনি সুরের মূর্ছনায় হারায় যাই!!
লেখায় , পিংক ফ্লয়েড নিয়ে আরো লিখুন বস!!
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সাইফ ভাই, পুরো পিঙ্ক ফ্লয়েডকে নিয়ে লেখা তো ভয়াবহ কাজ! আর এই লেখাটা মূলত শাইন অন ইউ ক্রেজি ডায়মন্ড গানটিকে নিয়ে। শুরুতেই আমার মাথা বিগড়ে দিয়েছে। এই দুই-তিন বছরে সেই বিগড়ানো মাথা ঠিকই হলো না (আর হবেও না বোধ করি)!
আপনি যে গানগুলোর কথা বলছেন, সেগুলো এবং আরো অনেক গান নিয়েই কথা বলা যেতে পারে। আমি কেবল শাইন অন'র জন্ম আর সংশ্লিষ্ট ইতিহাস নিয়েই বললাম।
জাঝা পেয়ে খুশি লাগছে, আপনাকে ধন্যবাদ।
বিশেষ করে মেডল কেন ? সিড কে বাদে এর আগেও তো অ্যালবাম আছে অথবা এরপরেও উইশ ইউ অয়্যার হেয়ার এর আগে ডার্ক সাইড অফ দা মুন নামে একটা বিশাল জিনিস আছে।
সেটাই বলতেসি, তবে মেডেল (১৯৭১) ডার্ক সাইড অফ দা মুনেরও (১৯৭৩) আগে, উইশ ইউ ওয়ার হেয়ার (১৯৭৫) আর ওয়াল ১৯৭৯, জ্ঞান দেবার জন্যে নয়, কারো কনফিউশন থাকলে তআ দুর করার জন্যই সাল গুলো দিলাম।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আর মেডেলেরও আগে হল অ্যাটম হার্ট মাদার, উমাগামা -যে দুটা পুরোপুরি সিডকে বাদ দিয়ে করা।
ইকোস বাদে এই দুইটা গানও বেশ লাগে মেডল অ্যালবামের।
একমত, পুরা মেডেল অ্যালব্যামটাই জটিল, আসলে তাদের সব অ্যালবামই তাই, কিন্তু মেডেল এর জন্যে আমার হৃদয়ে কেন যেন একটু বেশী জায়গা আলাদা করা :)। তবে ব্যারেট থাকতে করা অ্যালবাম গুলো আমার বেশী ভালো লাগেনি, হয়ত বোঝার ক্ষমতা হয় নি এখনও, তবে আমি একটু কনফিউজড, পাইপারস, রেলিকস আর সসার ফুল অফ সিক্রেটস নিয়ে।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সীডের একটা মজার বিদায়ী গান আছে। মজার ব্যাপারটা হচ্ছে গানটা আদ্যোপান্ত inconsistent. কিন্তু শুনলে আপনার মন খারাপ হয়ে যাবে। গানের নাম 'Jugband Blues'। লিরিক দিয়ে দিলাম। শুনে না থাকলে খুঁজে বের করে শুনে নিয়েন।
Its awfully considerate of you to think of me here
And Im much obliged to you for making it clear
That Im not here.
And I never knew we could be so thick
And I never knew we could be so blue
And Im grateful that you threw away my old shoes
And brought me here instead dressed in red
And Im wondering who could be writing this song.
I dont care if the sun dont Shine
And I dont care if nothing is mine
And I dont care if Im nervous with you
Ill do my loving in the winter. and the sea isnt green
And I love the queen
And what exactly is a dream
And what exactly is a joke.
ওমরের ব্লগ
অনেক ধন্যবাদ গানটির জন্য। এই গানটি দেখলাম "এ সসারফুল অফ সিক্রেটস" অ্যালবামের। আমার কাছে এই অ্যালবামটা নাই, তাই ইউটিউব থেকে সংগ্রহ করে নিচ্ছি।
আজকে অবশ্য মন-মেজাজ ভালোই আছে। আর পিঙ্ক ফ্লয়েডের বিষণ্ণ গানগুলো তো অসাধারণ সৃষ্টি! আপনাকে আবারও ধন্যবাদ এই গানটির জন্য।
সুন্দর লেখা। অসাধারণ গান। গানটা বোধহয় এইরকম আবেগের প্রকাশই দাবী করে। প্রথম যেদিন শুনি, শুরুর দিকটায় আমিও ভলিউম বাড়িয়ে দিচ্ছিলাম বারবার, আসলেই কিছু বাজছে কি না বুঝতে পারছিলাম না।
একটা মজার ব্যাপার। সীডকে নিয়ে এত মাতামাতি, এতগুলো চমৎকার গান পিঙ্ক ফ্লয়েডের। আমার কাছে কিন্তু সীড থাকা অবস্থায় পিঙ্ক ফ্লয়েডের অ্যালবামগুলো খুব একটা ভালো লাগে না। কেন যেন ওগুলোর সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারি না।
ভলিউম বাড়িয়ে দেয়ার ঘটনা সত্যি। আমি যখন প্রথম শুনছিলাম, বন্ধুটিকে আমিও বলছিলাম "ঐ সাউন্ড দে, কিসু শুনি না"!
সীড থাকাকালীন অ্যালবামগুলো অনেক লাউড, প্রকৃত সাইকেডেলিক রক। আর সীডের নিজস্ব একটা eccentric আচরণ আছে গানগুলোর মাঝে। কিছু কিছু গান কিন্তু শুনতে শুনতেই একটা ঘোর চলে আসে।
আর সীডের পরের অ্যালবামগুলো কিছুটা মেলো। এটা গীলমোরের প্রভাব। ভিএইচ১-এ সীডকে নিয়ে একটা লম্বা অনুষ্ঠান করেছিলো, সেখানে ওয়াল-এর "কমফর্টেবলি নাম্ব" গানটা নিয়ে কথা হচ্ছিল। ডেভিড এবং রজার আলাদা সাক্ষাৎকারেই বলছিলেন যে দুজনের মতপার্থক্যের কথা। ডেভিড চাইছিলেন "এনাদার ব্রিক"-ধাঁচের গান গাইতে, আর রজার চাইছিলেন অপেক্ষাকৃত "ডার্ক", "মেলাঙ্কলিক" সুর করতে (এই বিরোধ থেকেই পরবর্তীতে ভাঙন)।
আমার কাছে এই পর্যায়ের গানকে পরিণত লাগে। আপনার মতোই, আমি সহজে কমিউনিকেট করতে পারি।
আপনার যোগ করা ভিডিওগুলোর জন্য ধন্যবাদ, যুধিষ্ঠির।
আহা, ফ্লয়েড! জীবনের একটা বিরাআআট অংশ খরচ করছি ওদের গান শুনে। ডার্ক সাইড অফ দ্য মুনের থেকে ভালো কোন রক এলবাম ৭০-এর দশকে হইসে কি না সন্দেহ। এক সময় কম্পিউটারে সেই গান ছাড়া আর কিছুই বাজতো না। দুঃখের বিষয় যে Spotify-তে এখনো ফ্লয়েডের গান স্ট্রীমিং-এর কোন ব্যবস্থা হইলো না, রাইটস পাওয়া যায় নাই।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
আহ, ফ্লয়েড! আপনার আবেগটুকুর সাথে আমিও সহমত। একটা ভয়াবহ বাজে সময়ে শুধু এই গানগুলোই ছিল আমার সারাদিনের হাইলাইট! আমি তার আগে কখনও ভাবিনি যে সুরের ক্ষমতা এত বেশি হতে পারে।
লেখাটা তেমন "জুতের" না হওয়ার পেছনে হয়তো এই বেহিসেবি, ছন্নছাড়া আবেগটাই দায়ী।
ব্যারেটের হোক, কী ওয়াটার্সের হোক, কী গিলমোরের হোক - সর্বযুগেই পিন্ক ফ্লয়েডই সেরা। সাইকেডালিককে পিন্ক ফ্লয়েড যেই পর্যায়ে নিয়ে গেছে, তার ধারেকাছে কেউ না আসছে না আসবে।
উত্তম লেখা!
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
-----------------------------------------------------------------------------
সোনা কাঠির পাশে রুপো কাঠি
পকেটে নিয়ে আমি পথ হাঁটি
ব্যাণ্ডটা পিঙ্ক ফ্লয়েড বলেই হয়তো, একটা গানের সাথে সীড, গীলমোর, রজার, বা পুরো ব্যাণ্ডই জড়িয়ে গেছে। এজন্যেই বলছিলাম পুরোটা নিয়ে কথা বলাটা কতটা দুরূহ!
ধন্যবাদ ভুতুম। আপনাকে অনেক শুভেচ্ছা।
পোস্টটা অনেক ভালো লাগলো। আসলে গান যখন শুনি, তখন শুনিই কেবল। পেছনের এতো এতো কথা জানা হয় না।
আমার জ্ঞানগম্যি খুব কম... খালি আশায় আশায় বসে থাকি, আপনারা কখন এরকম পোস্ট নামাবেন। আমরা বাঁধিয়ে রেখে দেবো।
পিঙ্ক ফ্লয়েড নিয়ে একটা সিরিজ নামায়ে ফেলেন না...
(এইটা আপাতত অনুরোধ, এই সিরিজ শেষ হইলে পরের অনুরোধ আসিবেক)
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই। আমি খুব গান শুনি, তবে যখন এমন কোন গল্প বেরিয়ে আসে গানের পেছনে, সেটা আমাকে আরো বেশি মুগ্ধ করে! প্রতিটা গানের পেছনেই এক একটা গল্প লুকিয়ে আছে।
পিঙ্ক ফ্লয়েডের গান, আদর্শ, সামাজিক চেতনা অনেক বড়ো অবদান রেখেছিল তখনকার সমাজে। ব্রিটিশ বেশিরভাগ ব্যাণ্ডই রাখে। বীটলস, লেড জেপ্লিন এদের মতোই পিঙ্ক ফ্লয়েড একেবারে ভিন্নরকমের একটা সামাজিক বদল ঘটিয়ে ফেলেছিল। আর সেটা ঘটেছিল আমেরিকার ভিয়েতনাম যুদ্ধ চলাকালীন ও যুদ্ধপরবর্তী সময়ে। আমি টুকরো টুকরো ইতিহাস জানি। সেখান থেকে যতটা পারি, নিশ্চয়ই শেয়ার করবো।
------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
চলুক তাহলে! ধন্যবাদ শাহেনশাহ।
দারুণ লাগল!
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
'
=========================================
নিজেকেই নিজে চিনি না, পরকে চেনার মিছে বাহানা
খুব ভাল লাগল, ভাইয়া!
--------------------------------
কাঠবেড়ালি! তুমি মর! তুমি কচু খাও!!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
অতন্দ্র প্রহরী, মৃন্ময় আহমেদ, সবাইকে পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। গানটির সাথে আমার অপরিসীম আবেগ-আনন্দ শেয়ার করতে পারছি, এবং তা আপনাদের ভালো লাগছে জেনে আমি বেশ আপ্লুত।
দুষ্ট, তোমারেও থ্যাঙ্কু।
অসম্ভব পছন্দ হল লেখাটি। একেবারে হৃদয় ছুঁয়ে গেল।
হৃদয় ছুঁতে পারা তো বিরাট কৃতিত্ব। আমার তেমনটা নেই বলেই সন্দেহ করি। আপনার পাঠক হিসেবে আত্মীকরণটাকেই শুভেচ্ছা জানাই!
ধন্যবাদ উজানগাঁ।
রক মিউজিকের ইশ্বরদের একজন। Scream thy last scream, Vegetable man এর মত অপ্রকাশিত ট্র্যাক গুলো ও যে কোনো আধুনিক ২ পাওয়ার কর্ড বিশিষ্ট multi-platinum status এর অল্টার-রক ব্যান্ড এর পুরো discography'র চেয়ে সৃজনশীল।
সংসপ্তক
পিঙ্ক ফ্লয়েড নিয়ে যে কোন কিছু পড়তেই ভাল লাগে। লেখাটি বিশেষ ভাল লাগলো তার কারণ সম্ভবত তথ্যের আড়ালে আপনার আবেগ হারিয়ে যায় নি। তাছাড়া আরেকজনের অনুভূতির সাথে নিজের গুলোর মিল খুঁজে পেতেও তো ভাল লাগে। ধন্যবাদ আপনাকে! জয়তু পিঙ্ক ফ্লয়েড।
রাহিন
নতুন মন্তব্য করুন