১
সামরিকতা
যেভাবে সামরিক বৃষ্টি নামে, সদলবলে সক্রোধে, সুশৃঙ্খল আর্টিলারির মতো, পদভারে মিশে কঠিন রাস্তার ওপরে ছিটকে ছিটকে ওঠে পানির তীর। ঝুম-ঝুম করে ঘুম ঝরে ঝরণার ঝোঁকে, ঝুলে থাকা পর্দার ঘন-আড়াল উঠে যেতে থাকে, আর নেমে যেতে থাকে আকাশ-আলোক-ভূমি, জানালার ফাঁক দিয়ে আমি থম্ মেরে তাকিয়েই থাকি, মেঘের ওপর লুকানো অদৃশ্য ধনুক থেকে অন্ধবেগে আসা তীরগুলো আছড়ে পড়ছে কাচে। "প্রতিরোধ টিঁকবে" জেনে আমার আধো-ঘুম-চোখ কালো হয়ে আসে, নির্ভার নিশ্চিন্তি পায়। ওপাশে সামরিক বৃষ্টিতে প্রবল সবুজ ভিজছে, বেসামরিক গাছ ও মাঠে, টাওয়ার ও হ্রদের মত রাস্তারা অবুঝ এবং গাঢ় হয়ে উঠছে।
এইসব বৃষ্টিজলের ইতিহাস বড়ো নির্বিকার, পুনরাবৃত্তিমূলক। জটিল মস্তিষ্ক ও হৃদয় বানিয়ে আমরা শিখেছি নানাপদের জীবনপ্রণালী- আর বৃষ্টি শিখেছে সিক্ততা। আমরা শুষ্ক হতে হতে বড়ো হয়ে উঠি গিজগিজে তত্ত্বে, তথ্যে! এজন্য আমার ভয় হয় সভ্যতা ধুয়ে যাবে, তাই আমি ছাদের নিচে থাকি, জানালা বন্ধ রাখি, নিরাপদ হই বিপদ থেকে। তুমুল বর্ষণজল আমার শংকা বাড়িয়ে তোলে চক্রবৃদ্ধিহারে। তাই বৃষ্টিও আমাদের ভুলে গেছে, মেঘের ডায়েরি থেকে কয়েক পাতা স্মৃতির জল ঝরে পড়ার সময় সবুজে ফিরে আসে।
ঠিকানাবিহীন মেঘ ও জল, বৃষ্টি বা বর্ষা, আমাদের ভুলে গেছে। আমরা সেই শোক অহরহ বুক-পকেটে নিয়ে ঘুরে বেড়াই। দেখা যায়, শার্টের আস্তিনে জমে আছে শুকনো মাটির পোড়া-ঘ্রাণ!
২
দাবাখেলার সাথী
আমার ঘুম ভাঙে না- রোজ, ঘুমের ভেতর আমি প্রতিদিন উল্টে ফেলি দাবার দান। রাজা-মন্ত্রি-সেনা-গজ সকলে গজগজ করতে করতে প্রজাপালনে যায়। হায় বেমালুম ভুলে থাকা প্রজারা পৈতে পায়, কিছুটা সময়। এরাজ্যে এখন রাজা একজন, বাকিরা সকল সভাসদ সেজে, দাঁত মেজে খুব পরিপাটি হয়েই নিমন্ত্রণে... পাওয়া, না-পাওয়া এ আহ্বানে সাড়া দেয় তারা সকলে, সদলবলে।
দেখো দাবা থেকে আমি সামিয়ানা তলে এসেছি চলে কী অবলীলে! এটা ঠিক নয় পাঠক মহাশয়, তোর জারুজুরি ফাঁস হবার ভয় (কেবলই খেলছে মনে, জানি অবচেতনে)। সে শঙ্কা ভয় আমারও হয়, তবু ঝেড়ে ফেলে মন দেই এ লেখায়, পড়তে তো বেশ লাগছে মন্দ নয়!
ভিনদেশ থেকে দু'ট্রুপ এসেছে, সামরিক সেনা কানা খোঁড়া পা-হাত নিয়ে, বইতে বইতে। বিভীষন হতে শিক্ষা নিয়েছে এযুদ্ধভার সইতে সইতে শিখেছে তারা ন্যায় অন্যায় হিসেব নিকেশ বড়ো অপচয়, ঝরে গেল কেশ, ক্যালকুলেটর, কম্পু বলেন তবেরে! পামর। হিসেব-মূর্খ গুনে দ্যাখ ফের ক'জন গেছিলো যুদ্ধে এবং ফিরে এলো সব নিয়ে প্রাণটা নিয়ে যে এই হলো ঢের!
***
- অনীক আন্দালিব
২৩ আগস্ট, '০৯
[*শিরোনাম-মাজেজাঃ পোস্টের আলাদা শিরোনাম পাচ্ছিলাম না। লেখা তো দু'টো, আলাদা করে শিরোনামে দেয়ারও মানে নেই। তাই মনে হলো লেখাদুটো কিসের কথা বলছে, শব্দের পেছনে কোন ছবির স্মিতহাসি দেখছি!... ]
মন্তব্য
পড়ার পরে মুখ থেকে কষ্ট বা অন্য কিছুর জন্য 'ধ্যাৎ' বেরিয়ে গেলো।
কষ্ট করে পড়ে, বিনাকষ্টে কষ্টের দিকে ধ্যাৎ বলতে পারার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ সিমন!
সামরিকতাটা খুবই ভালো লাগলো। এরকম লেখা আমাকে খুব টানে। দ্বিতীয়টাও ভালো হয়েছে, তবে প্রথমটা বেশী।
ধন্যবাদ প্রকৃতিপ্রেমিক। দ্বিতীয়টা আমাকেও তেমন টানছে না, মাধ্যাকর্ষণ কম মনে হয়, দেখি কোনোভাবে এটাকে পিটিয়ে মানুষ করা যায় কী না!
পড়িচ্চি... ভালৈচ্চে...
গুড করিছো। খুশি হইচি।
মেঘের ওপর লুকানো অদৃশ্য ধনুক থেকে অন্ধবেগে আসা তীরগুলো আছড়ে পড়ছে কাচে।
প্রিয় একজন মানুষের কথা মনে করিয়ে দিলেন আপনি। বৃষ্টিকে সে বর্শা-র আকারে দেখতো।
ভালো লেগেছে লেখাটা। তবে প্রথম লেখাটা পড়া শেষ করে দ্বিতীয়টাতে এসেই ধাক্কা খেলাম। দুইটা দুই মেজাজের লেখা। প্রথমটা যেভাবে হৃদয় স্পর্শ করে গেল দ্বিতীয়টা ঠিক সেভাবে নয়।
আপনার কাছ থেকে আরো লেখা আশা করছি।
হুম। দুটো লেখা পাশাপাশি দেবার সময়ে এই ঝুঁকিটা থাকছেই। তুলনা চলে আসে।
আসলে লেখার সময়ে পরপর দুটো লিখে ফেলেছি। তাই ভাবছিলাম একসাথেই থাকুক তাহারা। গঠনের দিক দিয়ে দু'টো একইরকমের, তবে মেজাজ অনেকটাই ভিন্ন।
এমন মন্তব্য পেলে আরো লেখা তো আসবেই! অনেক ধন্যবাদ উজানগাঁ!
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
অনেক কঠিন ভাবে জীবনের কথা বলা হয়েছে। ভালো লাগলো পড়ে। ধন্যবাদ সুন্দর পোষ্টের জন্য।
ভালো লাগল। আপনার লেখা বরাবরই ভাল লাগে, তবে বলা হয় নি বোধহয় আগে কখনো।
আমি নিয়মিত আপনার ব্লগস্পটে যাই; কিন্তু লেখা এত অনিয়মিত কেন?
এখানেও; ব্লগস্পটেও।
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
ব্লগস্পটে আমি ঠিক নিয়মিত নই। সেটা মূলত সকল লেখার একটা সংগ্রহ। মাঝে মাঝে একবারে সবলেখা আপডেট করা হয় আরকি। আর সচলে আমি অফলাইনে সচল থাকি।
আমার লেখার মাঝে সব লেখাকে সচলায়তনে পোস্ট করা হয় না, এটা ঠিক। হয়তো আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারি না, কোন লেখা পোস্ট করা হলেই প্রথম পাতায় আসবে কী না। যেহেতু অতিথি-সচল, সেহেতু, না আসলে সেই লেখাটা পুনরুদ্ধার করাও সম্ভব না। এ'কারণে একটু দ্বিধায় থাকি মাঝে মাঝে।
এই লেখাটা সেসব জড়তা পেরিয়ে সামনে এলো, আপনার এই মন্তব্যটা পেলো দেখে ভালো লাগছে।
শুভেচ্ছা রইলো রাফি।
নতুন মন্তব্য করুন