আজকাল পৃথিবী দুলছে।
প্রবল, স্থিতধী যে পৃথিবীকে খুব বন্বন্ করে ঘোরার পরেও
স্থির লাগে আমাদের, সেই অচল শরীর দুলে উঠছে।
আমরা ছোটবেলায় নানা ছেলেভুলানো বিজ্ঞান পড়ে জেনেছি
এই শরীরে কত বিলিওন বছরের তাপ-জরা-শোক
নিক্তিতে মেপে পৃথিবী চুপচাপ নির্বিকার, আছে বেশ!
এমনকি ঘুরছে প্রবল, মুহূর্তে পেরিয়ে যাচ্ছে অসামান্য দূরত্ব।
আমাদের মাঝেও হয়তো একারণেই দূরত্ব বাড়ে, নাকি!
হয়তো, হবে-ই বা কোনো অজ্ঞাত কারণে জুঁই ফুলের গন্ধের সাথে মিশে আমাদের দূরত্ব অমর হয়ে যায়। হায় অমরতা, কী আকুল করছো আমাকে, কী প্রগলভ করছে দেখো তোমাকে! তবু এমন সাদামাটা পথেও আমাদের পায়ের নিচে সব চলিত মন্থর গতি থেমেই আছে-- বহুদিন। কতদিন!
সে কারণে আমাদের মনেই পড়ে না যাপনের ক্লেশ। ঘূর্ণনের কথা বলতে গিয়ে পুরাকালীন বৈজ্ঞানিক কী আশ্চর্য তত্ত্ব দিয়েছিলেন–– 'আমরা নাকি ঘুরে ঘুরে কেন্দ্রেই ফিরে আসি, যাবতীয় শক্তিক্ষয়ের শেষে'। অন্যেরা বানচাল করে দিলো ওটা, কী জানি কী যুক্তিতে। আমি যুক্তিবোধে হোঁচট খাই বিধায় মাঝে মাঝে বেভুলে বিশ্বাস করিঃ
তিনি বোধহয় ঠিকই বলেছিলেন।
আশায় আমাদের চোখের তারায় ফুলফুল সৌরভ জমা হয়, আমরা তবে কাছাকাছি আসছি!
ঠিক তখনই পৃথিবী দুলে ওঠে, পায়ের তলে।
ঘূর্ণনের ফাঁকে সে ক্লাশের পড়া ভুলে যায়।
নিয়ম মুছে যায় পুরাণের চেয়েও পুরাতন স্মৃতি থেকে।
পৃথিবীর মনেও থাকে না এমন বেখাপ্পা নৃত্যে পুড়ে ছাই হতে পারে কয়েকটি মহাদেশ।
আমাদের, অর্থাৎ তোমার আর আমার দুটো নেহায়েত অযাচক প্রাণের হিসেব করছি না।
কেবল জরুরি হিসেবে, নতুন শিশুগুলোর অমল হাসিও ফুরিয়ে যাবে এসব বেহিসেবি কাঁপনে, কোলের ভেতরে ভয়ে শুকিয়ে যেতে পারে ঘাসের তৈরি সবুজ শিশুটিও!
তখনই আমি বুঝে উঠি এই দোলনে পৃথিবীর কী বিষম স্বার্থ। কম্পাঙ্কের হিসেবে আমাদের কোনই লাভ হবে না, তবু জানা যাবে মোটিভ। পরিষ্কার হবে তার দুরভিসন্ধি। চাই কি, আমি অথবা তুমি আমাদের অন্তর্গত ক্রূর রাজনীতির চেয়েও গভীর কোনো ষড়যন্ত্রও ফাঁস করে ফেলতেই পারি!...
***
- অনীক আন্দালিব
১৬ সেপ্টেম্বর, '০৯
মন্তব্য
অসাধারণ লাগলো।
অনেক ধন্যবাদ পিপি'দা! (আপনাকে পিপি'দা ডাকতে পারি তো? )
একটু আগেও রাত জাগার কারণে মনে হচ্ছিলো মেঝে দুলছে, পৃথিবী দুলছে। তারপরে লেখা। আপনি পড়লেন দেখে খুশি হলাম।
কোমল!! কোমল!!
--------------------------
আর এই "নাকি" টা ভালো লাগে নাই। কেমন যেন একটু হালকা হয়ে যায় হঠাৎ করে -
কান মলছি। মাফ করে দিয়েন।
কান মলার দরকার কী? তুমি তো উপকার করলে আমার! এখন আমারও মনে হচ্ছে 'নাকি' শব্দটার দরকার নেই তেমন। পরে মুছে ফেলবো ভাবছি। আরো কিছু শব্দ, বাক্য এদিক ওদিক হবে নিশ্চয়ই।
ভালো লাগলো সুদীপ। তুমি কেমন আছো?
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ধন্যবাদ সিমন। আপনার উৎসাহ ভালো লাগে!
অসাধারণ !! এত সুন্দর করে উপস্থাপন আপনাকে দিয়ে সম্ভব কবি!!
ভালো থাকুন।
"হামিদা আখতার"
পুরো চমকে দিলেন আমাকে! আপনি এখানে এসেও লেখাটা পড়লেন বলে অশেষ কৃতজ্ঞতা চিটি'পু।
আর আপনি স্নেহ করেই বাড়িয়ে বলেন। আমি তেমন লিখি বলে মনে হয় না!
অনেক অনেক ভালো থাকুন!
আপনার লেখায় আমার মুগ্ধতা রয়েছে। দারুণ লাগে পড়তে। সাধারণ ঘটনাও আপনার লেখায় অসাধারণ হয়ে ওঠে। এর আগে একটা ভ্রমণকাহিনী আর একটা পদযাত্রা (বা এ ধরনের কিছু) নিয়ে লেখা পড়েছিলাম, যেগুলো একদমই ব্যতিক্রম ছিল।
তবে ভালোলাগা বিচার করলে, এই লেখাটা অবশ্য ব্যতিক্রম নয়। কারণ ভালো লেগেছে এটাও।
একটা ভ্রমোলগ লিখতে শুরু করেছিলাম, বন্ধুদের সাথে ঘুরতে যাওয়া শেষ ভ্রমণের গল্প। ওটা শেষ করা হয়নি। আর "এই পথ আমাদেরও" নামে রাজপথে নারীদের নিরাপত্তার দাবিতে একটা পদযাত্রা নিয়েও লিখেছিলাম! আপনার মনে আছে দেখে বিস্মিত হচ্ছি এখন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আমি সবসময়েই চেষ্টা করি 'নতুনভাবে' দেখার, লেখার। একটা 'ভালো' লেখার চাইতে একটা 'নতুন' লেখা অনেক বেশি জরুরি মনে হয় আমার। আর দেখেছি, নতুন হলে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভালোলাগার পাশাপাশি মনেও থাকে সেটা।
আপনার মন্তব্য অনেক প্রেরণা দিল আমাকে, প্রহরী। শুভেচ্ছা নিবেন আমার।
নতুন মন্তব্য করুন