কোন কোন গান কেমন অন্তরের ভেতরে শিকড় গেড়ে ফেলে, ভাবলে অবাক হতে হয়!
*
ছোটবেলায় বাসার সামনে একটা পাকা রাস্তা ছিলো। সেই রাস্তার পাশে পিচ আর আলকাতরা মেশানো দুয়েকটা পাথর দেখা যেতো। ঠিকমতো জোড়া লাগেনি তারা। বিকেলের দিকে আমি সাইকেল চালাতে শিখে সেই রাস্তাগুলো দিয়ে অনবরত ঘুরে বেড়াতাম। নিরাপদ, শান্ত কলোনি। কবে যেন মায়ের নিশ্চিত ঘুমের ফাঁকে বিকেল পড়ার আগেই দাউদাউ রোদে বেরিয়ে গিয়েছিলাম। পিঠের ওপর রোদকে পুড়ানোর কাজে চাকরি দিয়ে আমি বেশ আরামেই সাইকেল চালাচ্ছি। পনেরো কি বিশ মিনিটের মাথায় দমের অভাব আর ঘামের প্রাচুর্যে থামতেই হলো। রাস্তার পাশে ঘাসের ওপর সাইকেল কাত করে রেখে দিয়ে বসে পড়লাম। হাঁপাচ্ছিলাম, কিছু একটা করতে হয় বলে ঘাস টেনে টেনে ছিঁড়ছি, সেসময় চোখ গেলো খুলে আসা কিছু পাথরের দিকে। ফ্যাকাসে ধুলোর মধ্যে পড়ে আছে চুপচাপ। হাতে উঠিয়ে ঠুকোঠুকি, গোল গোল খেলা শুরু হলো। দম ফিয়ে এলে আর ঘাম শুকিয়ে গেলে, হাফ প্যান্টের পকেটে পুরলাম। সাইকেল ঠেলে বড়ো মাঠে গিয়ে ক্রিকেট কি ফুটবল দেখেছি মনে পড়ে। ছোট পকেটের ভেতর তখন পাথরে পাথরে মিলমিশ।
**
আমার গন্ধ বিষয়ে খুব আগ্রহ। কোনকিছুর গন্ধ শুঁকলে একটা অবয়ব টের পাই মাথায়, স্মৃতির খাতায় কোন একটা অব্যাখ্যাত প্রক্রিয়ায় কোন কোন সূত্র লেখা আছে সবকিছুরই!
মায়ের ঘরে গেলেই একটা আবছা কিন্তু প্রবল গন্ধ পাই! মায়ের কাঁথা জড়িয়ে নাকের কাছে ধরলে অজান্তেই চোখ বুঁজে আসে। খুব শান্তির ঘুম পায় আমার...। তেমনি জানি আমার বালিশেও একটা নিজস্ব গন্ধ ছড়িয়ে আছে। তারপরে ধরা যাক, কাঠের টেবিল বা বাসার দরজার সামনে রাখা টবের গাছগুলোর একটা মাদকভরা গন্ধ আছে, আমাকে টেনে ধরে মাঝে মাঝেই। কুড়িয়ে তোলা সেই পাথর দুটোকেও আমি প্রায়ই হাতে নিয়ে শুঁকতাম। প্রথম দিকে ধুলোমেশা পাথুরে একটা গন্ধ পেতাম। ধীরে ধীরে বাইরের ধুলো কমতে শুরু করলো, আর জমতে থাকলো আমার ঘরের গার্হস্থ্য-ধুলোর আস্তরণ। পাথুরে সেই গন্ধটা কিন্তু পুরোপুরি গেলো না। টেবিলের ড্রয়ারের কোণে রেখে দেয়া পাথরের গায়ে এমন কী গন্ধ পেতাম আমি, কে জানে!
সবকিছুই একটা সময়ে পুরনো হয়। আমার এই অকারণ গন্ধশীলনও কেমন কেমন করে অনভ্যস্ত আচরণ হয়ে গেলো। ভুলে গেছি আমি সেই পাথরদুটোকে। জীবন ব্যস্ত হয়েছে, আমি তার চেয়েও ব্যস্ত হয়েছি। ঝিনাইদহে পড়তাম, ছুটিছাটায় বাসায় আসা হতো। একেবারে চলে আসার সময়ে ও'দুটো পাথর ব্যাগে করে আমিই এনেছিলাম মনে হয়। বাসার বদলেও আমার অজান্তেই সেগুলো তল্পিতল্পার সাথে গুটি গুটি পায়ে চলাচল করেছে। আর সবশেষে আমার ঘরেই তাদের ঠিকানা হয়েছে। আমার আর পুরনো এই পাথরদুটোর কোন দরকার পড়ে না। চারপাশে কতো অসংখ্য গন্ধের উপাদান!
কলেজের পরে এলো বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে সিঁড়ির গন্ধ আর করিডোর পেরিয়ে ক্লাসে ঢোকার পরে যে মৃদু সুবাস পেয়েছিলাম- তা খুব সহজেই মাথায় গেঁথে যায়! সেদিনই প্রথম জানলাম, "মৃদুতার তীব্রতাই বেশি!" তবে পড়ার চাপে, আর কিছুটা পরীক্ষার ভীতিতে মৃদুসুবাস উড়ে গেলো। কলমের কালি হাতের আঙুলে লেপ্টে যেতে লাগলো, সেই হাত ধোয়ার পরেও সেই গন্ধটা যায় না। একটা সময়ে পাট চুকে গেলো ওখানে। চার বছরের শিক্ষা আর এক বছরের অযথা-অলস "পরীক্ষা-পেছানো-ছুটি" কাটিয়ে পাশ করলাম। চাকরি করতে গিয়েও নতুন ধরনের ব্যস্ততা। রোজ যেতে হয়, চাইলেই অলস অনাগ্রহে এড়ানো যায় না- এ এমনই এক গ্যাঁড়াকল। ছুটির দিনগুলোতে ঘুম চেপে ধরে বিছানার সাথে। "ঘুমা ঘুমা, কালকেই আবার অফিসে যেতে হবে।"
রোজ সকালে পরিপাটি হয়ে যেতে হয় কাজে। জিন্স আর টি-শার্টের জায়গায় ঘন ঘন পড়তে হয় শার্ট-প্যান্ট-জুতো। দাড়ি কাটতে হয় দু'তিনদিন যেতে না যেতেই। বন্ধুদের উপহারের সুবাদে কয়েকটা বিদেশি পারফিউমও আমার ঘরে আশ্রয় পেলেন। মাঝে মাঝে তাদের মাথা খুলে শরীরে ছিটাই, ঝাঁকিয়ে নেই। ভুরভুরে সুবাসটুকু ভালোই লাগে। তারপরে ফেরার সময়ে রিকশা-সওয়ার হলে সারাদিনের পরে মুছে যাওয়া সৌরভের জায়গায় জেঁকে বসে ঘাম-ধুলো-ক্লান্তি। রিকশাওয়ালা প্যাডেল টানে, আমি মুছে যাওয়া আলোতে, গাঢ় আধারে নানারকম হিসাব মেলানোর চেষ্টা করি। বেশিরভাগই মিলে না। আর মিলে না বলেই অসমাপ্ত হিসাবটুকু পরের দিন চলতে থাকে। রিকশাওয়ালা কিছু টের পান না, জানা কথা। তার হিসাব আরো অনেক সরল এবং কঠিন, জবাবশূন্য এবং জ্ঞাত।
***
জীবনের নিয়মই বোধহয় এমন যে আমরা যা হারিয়ে ফেলি তার শোক ঠিকভাবে বুঝে ওঠার সুযোগ সে আমাদের দেয় না। বেশি কিছু না, নিতান্তই ব্যক্তিগত ক্ষয়ক্ষতি এটুকুই আমরা ঠিকমত মনে রাখতে পারি না। প্রাপ্তিও প্রচুর থাকে হয়তো, অন্তত আপাত-প্রাপ্তির মতো ব্যাপারগুলো উপশমের কাজ করে খুব। তাই হারিয়ে যাওয়া মানুষ, স্মৃতি বা হৃদয়-সম্পদের জন্যে শোকটাও স্তিমিত হয়ে আসে। আর সেটা আসে বলেই নতুনভাবেই আমরা আঘাত সহ্য করতে পারি!
স্মৃতির স্বভাবও গন্ধের মতো হয়ে গেছে, দ্রুত ভুলে যাই সবকিছু। আজকে আমার সব অলসতার গায়ে আগুন ধরাতে সকাল সকাল মা চিৎকার শুরু করলো। "ভাদাইম্যা পুলা। কাজকাম নাই। পড়ে পড়ে ঘুমায়। ওঠ্! ঘর গুছা। দুইদিন পরে ঈদ, ঘরের কী অবস্থা! টেবিল চেয়ারে ধুলা। এই ঘরে কি মানুষ বাস করে?" গলাবাজির তোড়ে ধুপধাপ উঠে বসি। তারপরে চোখ কচলে মুখ-হাত ধুয়ে চারদিকে তাকিয়ে মনে হয় আসলেই অনেক ধুলো জমে গেছে! একটা ন্যাকড়া নিয়ে ধুলো ঝাড়া শুরু করি। বইগুলো এলোমেলো, গুছালাম। রাজ্যের সিডি, ডিভিডি পড়ে আছে খোলা, একটা একটা করে প্যাকেটে পুরে আলমারিতে ভরলাম। বিছানা-বালিশের চাদর, ওয়াড় গেলো ধোবার জায়গায়, তারপর ঘর ঝাঁট আর মোছা। একেবারে শেষে, টেবিলের ওপরে খাতা, কাগজ, হেডফোন, চার্জার -ইত্যাদি নানাপদের জিনিস গুছাতে শুরু করলাম। খুব পরিপাটি করে এনেছি, এমন সময়ে ড্রয়ার গুছাতে গিয়ে হাতে পাথরদুটো ঠেকলো।
এক মুহূর্তের থমকে যাওয়া। নিঃশ্বাস নেই। হাত টেনে বের করে আনি জোড়াভাইকে। হাতের মুঠোয় বিবর্ণ ধুলোমাখা, ধূসর পাথর! নাকের কাছে নিয়ে খুব ধীরে শ্বাস টেনে নিই। অপরিচিত গন্ধ এসে ধাক্কা দেয়। বহুদিন পরে কারো সাথে দেখা হলে যেমন মনে হয়, "কোথায় যেন দেখেছি", সামনাসামনি দাঁড়িয়ে যেভাবে আমরা অপ্রস্তুত হই কিছুটা, সেরকম একটা অনুভূতি হতে থাকে আমার। পাথর নিশ্চুপ, আমিও। নির্বাক যোগাযোগেও কোন আলোড়ন ওঠে না মনে। এরপর আমার ঠিক কী করা উচিত তা বুঝে উঠতে পারি না। দ্বিধায় দোল খেতে খেতে পাথর দুটোকে আবার ড্রয়ার-গহীনেই রেখে দেই।
ড্রয়ার বন্ধ করে দেয়ার পরে বুঝতে পারি আমি নিজের কাছেই অপরিচিত হয়ে গেছি। হাতের তালুতে করে নাড়াচাড়া করা সেই দুটো অমূল্য পাথর আসলে আমি হারিয়েই ফেলেছি! এখানে যা আছে, তা কেবল স্মৃতিভার, কেবল ক্ষয়াটে আলোর মত ভ্রম।
---
১৮ সেপ্টেম্বর, '০৯
মন্তব্য
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ধন্যবাদ সিমন!
অদ্ভূত সুন্দর লেখা।
----------------------------------------------
আমার যত অগোছালো চিন্তাগুলি,
রয়ে যাবে এইখানে অযতনে ।।
পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ রেশনুভা।
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
অদ্ভূত।
কিংকর্তব্যবিমূঢ়, ধন্যবাদ।
শরীফ হাসান, অদ্ভুত কেন?
সুন্দর স্মৃতিচারণ। সুগন্ধি মাখা কোমল।
অনেক তুচ্ছ জিনিস আমরা জমিয়ে রাখি অমূল্য রতনের মতন, তাতে ঐ সময়টুকু ধরে রাখবার জন্যে!
আমিও হয়তো তেমন ভেবেই রেখেছিলাম!
কিন্তু আজ নিজের কাছেই নিজেকে অপরিচিত লাগলো। স্মৃতিকাতর যতো না হলাম, তারচেয়ে বেশি অবাক হলাম "আমি কতটা বদলে গেছি" তা ভেবে।
ঘ্রাণ চিনি নাই, সমস্যা নাই। বিস্ময় আছে বরং!
পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ মৃত্তিকা।
এরই নাম জীবন
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
---------------------------------------------------------
ঘাস তুমি ঘাসের মতো থাকো মাটি ছুঁয়ে
যে দেখার সে নতজানু হয়ে ছুঁবে তোমার আঙুল
অবরুদ্ধ মাঠ থেকে তুমি লাফিয়ে নেমোনা প্লিজ পাথরের পথে
________________________________________
http://ahmedurrashid.
হুমম। সবকিছুর মধ্যে থেকেই ধীরে ধীরে বদলে যেতে হয়...
কঠিন লিখেছিস!
অফটপিকঃ পেভেরেল ব্রাদার্স - রিসারেকশান স্টোন, মনে পড়ে গেল...
ধন্যবাদ দোস্ত। কেমন আছিস? কেমন চলছে তোর দিনকাল??
পেভেরেল ব্রাদার্স - রিসারেকশন স্টোন চিনতে পারি নাই। তারপরে সার্চ দিয়ে বুঝলাম, "যার মনে যা ফাল দিয়ে ওঠে তা" কথাটা মিথ্যা না! হ্যারি পটারের ঘটনা এখনও পড়া হলোই না আমার। (শুনলাম শেষ পর্বে মারা গেছে, ভাবলাম মরেই যখন গেছে, কাহিনী জেনে আর কী হবে? )
ওহ, মাই ব্যাড... তুই যে পড়িস নাই এটা তো জানতাম! - খেয়াল ছিল না।
আমার চলতেসে ভালই।
একেই বলে মনের মিল! আমারও!
---------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড় ।
ধন্যবাদ নিবিড়।
খুব ভালো লাগলো লেখাটা... ধন্যবাদ অনীক...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পড়ার জন্য আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ নজরুল ভাই। ভালো থাকুন!
আমরা বারবারই ড্রয়ার বন্ধ করে নিজেদের কাছেই নিজেদের অপরিচিতি বাড়িয়ে তুলি। অসাধারণ ভালো লেগেছে লেখাটি!
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!
**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব
আপনার কথাটাও ঠিক। এখন মনে প্রশ্ন জাগছে, কেন আমরা নিজেদের কাছেই এভাবে অপরিচিত হয়ে যাই? সারাজীবন চেষ্টা করি - "নো দাইসেল্ফ", অথচ শেষমেশ নিজেরাই নিজেদের সবচেয়ে কম চিনতে পারি কেন?
এত এত প্রশ্নের জবাব কোথায় পাই?
আপনাকে ধন্যবাদ তীরন্দাজ! শুভেচ্ছা নিন।
অদ্ভূত সুন্দর !!
এবারে বুঝেছি। ধন্যবাদ অনেক অনেক শরীফ হাসান!
- দারুণ লাগলো।
এই গন্ধ দিয়েই আমার চেনা হয় একেকটা সময়কে। রাস্তা থেকে তুলে আনা অদ্ভূত আকারের কয়েকটা পাথর আমিও তুলে রেখেছিলাম সেই স্কুলের বেলা থেকে। এখনও আছে। মা রেখে দিয়েছে। রাস্তা থেকে এটা সেটা তুলে আনার স্বভাবটা এখনো আছে। বেশ কিছুদিন আগে একটা শুকনো চিকন গাছের ডাল তুলে এনেছিলাম, এখনও আছে সেটা আমার টেবিলে...! কখনো হাতে নিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখি। পুরনো সময়টা ফিরে আসে নাকের সামনে...।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আরে! আপনার সাথে তো স্বভাবে মিলে গেলো। রাস্তা বা মাঠ থেকে এরকম তুলে আনার বদভ্যাস আমারও। কত ফুল আর পাতা যে কুড়িয়ে আনতাম! শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবার পরেও অনেকদিন রেখে দিতাম।
মনে করায়ে দিলেন অনেক অনেক স্মৃতি! ধন্যবাদ আপনাকে।
ভালোই তো লিখেছেন
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
ভালোই তো বললা দেখা যায়!
লেখাটা অসম্ভব ভালো লাগল, অনীক।
আমার নিজেরও স্মৃতি সংরক্ষণের এমন 'বদভ্যাস' আছে।
এই বদভ্যাস'টা খুবই ভালো জিনিশ। অনেক মধুর মধুর স্মৃতি জমা পড়ে থাকে!
আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা চমৎকার, বর্ণনাভঙ্গীও সুন্দর-সাবলীল। চালিয়ে যান, থামবেন না। আর এই লেখাটার সময়-পর্বগুলোর মাঝের সময়-পর্বগুলোকে সাথে নিয়ে আরো বড় বা কয়েক পর্বের লেখা লিখে ফেলতে পারেন। আমাদের তা ভালো লাগবে বলেই মনে হচ্ছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এভাবে বললে ভীষণ উৎসাহ পাই সত্যি! অনেক ধন্যবাদ ষষ্ঠপাণ্ডব আপনাকে।
মাঝের পর্বগুলো নিয়ে লেখাটা আমার জন্য একটু কঠিন। শৈশব বা কৈশোরের শুরুটা যত প্রিয়, তার পরের সময়টুকু অতটা প্রিয় না। আর সে কারণেই দেখা যায় লেখাতে সেসময়টা অনুপস্থিত কিছুটা।
তবে চেষ্টা করবো, অবশ্যই।
আপনি আমার অনেক শুভেচ্ছা নিবেন!
সুন্দর গন্ধমাখা স্মৃতিকথা। খুব ভাল লাগলো।
নৈশী।
অনেক ধন্যবাদ নৈশী। ভালো থাকুন...
অদ্ভুত সুন্দর লেখা !
মানুষ আসলে কখনোই শৈশবকে ছাড়িয়ে যেতে পারে না। বয়েস বাড়ার সাথে সাথে শৈশবের কাছে হাতপাতার হারও বাড়তে থাকে। এই শৈশবটা আমাদের বুকের কোণায় লুকিয়ে থাকে। আজকের আমি যে আসলে আমার শৈশবের কাছে ঋণী, সবারই তাই। আমরা তো মূলত শৈশবেরই গড়া !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
খুব চমৎকার একটা কথা বললেন রণ'দা। আমি ভাবতাম, খালি আমিই বুঝি এমন শৈশব-স্মৃতিকাতর। এখন ধীরে ধীরে ভুল ভাঙছে। মনে হচ্ছে আমরা সবাই নিজস্ব স্মৃতি বুকে পুষে ঘুরে বেড়াচ্ছি!
ভালো লাগলো খুব, আপনার মন্তব্যটা!
স্মৃতি নূতন কাপড়ের মত, আমরা থরে থরে আলমিড়াতে সাজিয়ে রাখি। প্রয়োজন হলে বেড় করি, ঘ্রাণ নেই।
আপনার লেখাটা স্মৃতি কাতর করে দিল। ধন্যবাদ।
আপনাদের সবাইকে অগ্রীম ঈদ মোবারক।
দলছুট।
===========
বন্ধু হব যদি হাত বাড়াও।
ড্রয়ারভর্তি স্মৃতির কাপড়। আপনার মন্তব্যটা পড়ে এই কথাটা মাথায় এলো! মাঝে মাঝে আমি অপ্রয়োজনেও সেই ভাঁজ করা 'কাপড়'গুলো বের করে আনি, গন্ধ নেবো বলে।
অনেক ধন্যবাদ দলছুট, আপনার মন্তব্য পেয়ে খুশি হলাম। আর আপনাকেও ঈদের শুভেচ্ছা জানাই।
জানোইতো আমি মহা স্মৃতিকাতর মানুষ! এরকম পাথর, ঝিনুক, চিঠি মেশানো স্মৃতি জাগানিয়া বাক্স আছে আমার একটা! যদিও আমার স্মৃতির গন্ধগুলোও বিষন্নতা মাখানো থাকে অনেক বেশি!
তোমার লেখা মহা পাংখা আমি প্রথম থেকেই, তাই আর আহা উহু করবোনা! [যদিও দুখ পাই দেইখা যে তুমি আমার আব্জাব আর পড়োনা! ]
---------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
আবজাব সকলই পড়ি। কিন্তু সব লেখায় সরব হওয়ার মতো কথা পাই না। পুরো লেখা উদ্ধৃতি দিতে ইচ্ছা করে, সেটা তো সম্ভব না তাই নীরবেই পড়ি।
আমার কিন্তু আরেকটা জমানো স্বভাব আছে। ছেলেবেলা থেকে যতো কার্ড পেয়েছি, সব জমিয়ে রেখেছি। বাসা থেকে দূরে থাকার কারণে বাবা-মা-বোনের পাঠানো কার্ডও আছে বিস্তর। সেগুলোও রেখে দিয়েছি, মাঝে মাঝে উল্টে দেখার জন্য!
লেখায় যে আহা উহু না করে স্মৃতি শেয়ার করতেছো, সেটাই আমার জন্য বিশেষ পাওয়া। তোমাকে অনেক ধন্যবাদ বালিকা।
সেই ছোট্টবেলা থেকে, যখন বোনকে চিঠি লিখতাম প্রতিদিন, [বাবা অফিস যাবার সময় নিয়ে যেত আর খালা বোনের চিঠি দিত বাবাকে] সেই কাল থেকে জমানো চিঠির বাক্সটা মা কিছুদিন আগে ফেলে দিয়েছে ফালতু কাগজ ভেবে, উল্টেপাল্টে কিছু না দেখেই!
স্মৃতির সেই বাক্সটার জন্যে দুঃখ লাছে কখুব, হঠাৎ করেই!
কার্ড জমানোর নেশাতো আমারও ছিলো! এখনও আছে!
--------------------------------------------
আয়েশ করে আলসেমীতে ২৩ বছর পার, ভাল্লাগেনা আর!
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
অদ্ভুত সুন্দর লেখা!
মনের বাক্সে টুকরো রঙিন কার্ড আমিও জমাই,
নাড়িচাড়ি...খুলি, মেলি ,
ভাঁজ করি...
--------------------------------------------------
"সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে..."
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
নতুন মন্তব্য করুন