'পরিবর্তন' আসেনি। ম্যাককেইন এসেছে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: শুক্র, ০৫/১২/২০০৮ - ২:৪৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

১/
আউল-বাউল-লালনের দেশে ম্যাককেইন এলো অবশেষে। ঝটিকার সফরে? প্রজার দু:খ দেখতে,না, মুখ লুকিয়ে নয়,প্রকাশ্য পরিদর্শনে বিকল্প খুলাফা-ই-রাশিদ। বিকল্পই সই। বিশ্বক্রীড়ার দুধভাত বাংলাদেশে এসেছে রানার আপ ম্যাককেইন,কম কী!তাই মিডিয়ার মাতামাতি কম নয়।

১১ঘন্টা ছিলেন তিনি এই বাংলায়। যাওয়ার আগে বলে গেছেন,টিভিতে দেখলাম - "নির্বাচনের ফল মেনে নিন"। ও তাই নাকী? নির্বাচন হয়ে গেছে? নাকী ফখরুদ্দীনের প্রাসাদে বসে দ্বিপাক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আলোচনার ফাঁকে ফাঁকে ঠিক হয়ে গেছে নির্বাচনের ফল? নির্বাচনের ফল আমাদের পক্ষ থেকে আগাম মেনে নেয়া সম্ভব নয় - আর তাই আমরা মার্কিন মাপকাঠিতে যথেষ্ট গণতান্ত্রিক হতে পারিনি। ধিক্কার। মিডিয়ায় জানাচ্ছে,এই তো সেই ম্যাককেইন কী দারুণ পরজয় মেনে নিলেন। হাতও মেলালেন। ব্যস্ গণতন্ত্র হয়ে গেল। মজা তো। (আসুন আমরা ম্যাককেইন হই)

২/
জানি না ঠিক কত ভাগ মার্কিনী বিশ্বব্যাপী তাদের সরকারের চালানো অন্যায় যুদ্ধ ঠেকাতে ওবামাকে ভোট দিয়েছে। ‌'পরিবর্তন,আমাদের প্রয়োজন'। ক্যাচফ্রেজ। বিশ্বাসের আপ্তবাক্য। জানি না ঠিক কত ভাগ মার্কিনী গুয়ান্তানামো বের মধ্যযুগীয় কারাগারটি বন্ধের আশা নিয়ে ওবামাকে ভোট দিয়েছে। অনুপাতটা যাই হোক,তারা জেনে গেছেন,পরিবর্তন আসেনি। আসবে না। আসা সহজ নয়। উন্মাদনা আর নির্বোধ ভাবালুতার দু-চারটিদিন গড়িয়ে যাওয়ার পর অতএব হিসেব মেলাতে বসা। কতটুকু এলো পরিবর্তন? ছাগলের তিননম্বর বাচ্চা বাংলাদেশ সে হিসাবে এখনো বসেনি। (পরে ভুলে যাবো বলতে,ম্যাককেইনের এক বাচ্চা কিন্তু বাংলাদেশ থেকে দত্তক নেয়া)। আমি সেই ছাগলের লেজে বসা মাছি। গ্যাডফ্লাই? যাই হোক। হিসেব নিচ্ছি।

ওবামা তাঁর নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে ম্যাককেইনের ঘনিষ্ট মেরিন কমান্ডার জেনারেল জিম জোন্সকে নিয়োগ দিয়েছেন। যুদ্ধোন্মাদ বুশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বব গেটসকে বহাল রেখেছেন। আর মধ্যপন্থী রক্ষণশীল হিলারি ক্লিন্টনকে পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিসেবেও নিয়োগ দিয়েছেন। শেষোক্ত নিয়োগে তো আমাদের খুশি আর ধরে না। আমাদের রায়বাহাদুর ইউনূসের বান্ধবী নাকি সে? হবে। মার্কিন বাম সাংবাদিকরা তাঁর নাম দিয়েছে 'হিলারি দ্য হক' - শিকারী হিলারি।

৩/
এহেন 'পরিবর্তনের'হাওয়ায় ভেসেই এলেন ম্যাককেইন। আমাদের মিডিয়ায় খুব দারুণ করে প্রচার পেল তাঁর নসিহতনামা। নির্বাচনের ফল মেনে নিন। যেন নির্বাচন নিয়ে দুটো ভালোকথা শোনাতেই ম্যাককেইনদের এই আগমন। আমরাও ভালোকথা শুনতে চাই। খবরে প্রকাশ :আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সারা বিশ্বের মধ্যে 'সম্ভবত সবচেয়ে নিরপেক্ষ' হবে বলে আশা প্রকাশ করেছেন মার্কিন সিনেটর জন ম্যাককেইন।

কেন বলছেন এইসব ম্যাককেইন। কেন এইসব খেজুড়ে আলাপ ('খেজুড়ে আলাপের সংজ্ঞা দিচ্ছে বাংলা অ্যাকাডেমী :সময় অপচয়কারী বিরক্তিকর মিষ্ট আলাপ!)? আমাদের মিডিয়া মনে করিয়ে দেয়ার প্রয়োজন মনে করল না ম্যাককেইনের আচমকা বাংলাসফরের প্রোক্ষাপট। বোধকরি এই প্রেক্ষাপট থেকেই হেতুটা বোঝা যাবে। ম্যাককেইন যে তিনসদস্যের দলে এসেছেন তার নাম 'ইউনাইটেড স্টেটস সিনেট কমিটি অন আর্মড সার্ভিসেস', মার্কিনসাম্রাজ্যের সমরনীতিনির্ধারণী পরিষদ। মার্কিন দখলদারী আর যাবতীয় যুদ্ধবাজীর অভিভাবকও এই কমিটি। এই দলে আরো ছিলেন জোসেফ লিবারম্যান আর লিন্ডসে গ্রাহাম। কারা এরা?

এরা কারা সেটা বুঝতে হলে সিনেট কমিটি অন আর্মড সার্ভিসের গঠনটা বুঝতে হবে। মিলিটারি থেকে পরমানু বোমা -জাতীয় নিরাপত্তায় কখন কোনটি কীভাবে ব্যবহার করতে হবে সেটি এই কমিটির বিবেচ্য । সিনেট কমিটি অন আর্মড ফোর্সেসে ২৫ জন সদস্য থাকেন। এদের দুই দলে ভাগ করা হয়। বিজয়ী পার্টির সিনেটররা 'মেজরিটি'। আর বিজিত 'মাইনরিটি'। এ মুহুর্তে ঐ কমিটিকে মাইনরিটি হচ্ছে রিপাবলিকানরা। ম্যাককেইন হচ্ছেন তার র‌্যাঙ্কিং মেম্বার - মানে মাইনরিটির শীর্ষ নেতা। এই শীর্ষ নেতা এসেছেন। কিন্তু মেজরিটর শীর্ষনেতা যিনি এই কমিটির ডেমোক্রেট সভাপতিও, তিনি আসেননি। এসেছেন আরেক ম্যাককেইনতোষক লিবারম্যান। বারবার ডেমক্রেট মনোনয়ন না পেয়ে একাই 'স্বতন্ত্র' প্রার্থী হিসেবে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন যিনি। আরেকজন,লিন্ডসে গ্রাহাম, আলগোরের রানিং হয়ে নির্বাচন লড়েছিলেন -কিন্তু নির্বাচনে হেরে আজ তিনিও ম্যাককেইনের সাফাই গেয়ে বেড়াচ্ছেন। দলবদলের আর মতবদলের এই দুই পরাকাষ্ঠাকে নিয়ে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছেন ম্যাককেইন। বাংলাদেশকে গণতন্ত্রবিষয়ে সদুপদেশ দিতে। এ বড় আনন্দের। (আসুন আমরা ম্যাককেইন হই)

৪/
ওবামার বিজয়ের পর বাংলাদেশের মিডিয়া যে চরম আদিখ্যেতার পরিচয় দিয়েছে, সেটির প্রধান কারণ নব্যসাম্রাজ্যবাদের রণকৌশল সম্পর্কে প্রয়োজনীয় ধারণা না থাকা। আর ঠিক একই কারণে, ম্যাককেইনের ঢাকা সফরকেও আমরা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছি।


মন্তব্য

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আপনার লেখা ভাল হয়েছে।

আর ঠিক একই কারণে, ম্যাককেইনের ঢাকা সফরকেও আমরা সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয়েছি।
কিন্তু সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী টা কী সেটা যদি একটু খোলাসা করে লিখতেন তো ভাল হ'ত। পোস্টে মন্তব্য পড়ার জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করেছিলাম। ভেবেছিলাম কেউ হয়তো আলোচনা শুরু করবে। তা না হওয়ায় আমিই প্রশ্ন দিয়ে মন্তব্য শুরু করলাম।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

!!সংশোধনী!!
লিবারম্যানই ছিলেন আলগোরের রানিংমেট। এডিটে ঢুকতে পারছি না। তাই এখানেই দিয়ে দিলাম। ভুলের জন্য দু:খিত। লিন্ডসে গ্রাহামকে নিয়ে একটা তথ্য দেয়া যায়। তিনিই সম্ভবত একমাত্র ইরাকযুদ্ধফেরত সামরিক কর্মকর্তা যিনি মার্কিন সিনেটর হয়েছেন।

@ প্রকৃতিপ্রেমিক
"সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী" বলতে আসলে ফিক্সড কিছু আছে কিনা সে বিষয়ে আমি সন্দিহান।"সঠিক দৃষ্টিভঙ্গী" র্নিণয় করার মতো অথোরিটি আমার নেই। তবে আমার-আপনার জন্য যেটা বেঠিক সেটা জোর গলায় বলার অধিকার আমার-আপনার সবারই আছে। এখানে বেঠিকটা হচ্ছে পশ্চিমাদের যেকেউ বাংলাদেশে আসলেই তাকে - সে যেই হোক না কেন - সিভিলাইজিং মিশনারি বানিয়ে দেয়া হয়। টিউশন ফি ছাড়া আমাদেরকে সভ্য বানানোর মহান ব্রত নিয়ে যে সে আসেনি - সেটা মূলধারার মিডিয়ার খুব কমই আলোচনা হয়।

-------------------------------------------------------------------------
The philosophers have only interpreted the world in various ways; the point, however, is to change it.
[MARX : Theses on Feuerbach]


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

আলমগীর এর ছবি

ওবামা এখনও ক্ষমতা নেয়নি। কাজেই পরিবর্তন হয়নি বলার সময়টা এখনও আসেনি।

মার্কিন পররাষ্ট্রনীতিতে কিছু পরিবর্তন হবে, এতটুকু আশা আছে।

মাগনা মাস্টারি:
কেবল মাস্টারি বলেন কেন, সাদা যে কোন বস্তু ও মানুষের প্রতি আমাদের উদার আগ্রহ। একটা লেখায় যদি গোটা কয়েক সাদা নাম দিতে পারেন, লেখা হিট। আপনি যদি দুইএকটা ইংরেজী গান শোনেন, স্মার্ট। আপনার পছন্দের ছবি কোনটি, রোমান হলিডে- আপনি সুশীল। আপনার প্রিয় অমুক, তমুক - সব বিদেশী নাম বলা কর্তব্য। সিনেমার সুটিং হয়েছে বিদেশ, ছবি হিট। নাটকে বিদেশী চরিত্রে আসল বিদেশী, নাটক হিট।

বাংলা ফাইভ তিতা লাগে বাল। চশমার ফ্রেম বিদেশী। খাওয়া, দাওয়া, উঠা, বসা, ঘুমা, (বিদেশী টাইলস লাগানো টয়লেটে) হাগা - সব বিদেশী।

ভাই গরীব মানুষের এত দোষ ধরলে বাচুম?

দ্রোহী এর ছবি

যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ!!!!!!!

ওবামার হোগামারা খেতে পোঁদে তেল মেখে কাতারে সামিল হন অতি শীঘ্রই।


কী ব্লগার? ডরাইলা?

হিমু এর ছবি
শিক্ষানবিস এর ছবি

'ইউনাইটেড স্টেটস সিনেট কমিটি অন আর্মড সার্ভিসেস'? এই দল এই দেশে কি করে? কিছুই বুঝতে পারলাম না। আসলে তাদের আসাকে কিভাবে কাভার করা হয়েছে সেটা আমার কাছে মুখ্য মনে হচ্ছে না। কিভাবে কাভার করা উচিত ছিল সেটা না জানলে বুঝবো কিভাবে যে একজিস্টিং কাভারিংটা খারাপ হয়েছে। কেউ বুঝতে পারলে বোঝান।

নির্বাক এর ছবি

অনিন্দ্য, ধন্যবাদ আপনার এই সময়োপযোগী লেখাটির জন্য। আমাদের সাংবাদিকেরা আসল খবর জানলেও সেটা প্রকাশ করেন না সুবিধাভোগের আশায় - এই সত্যটা সবাই জানেনা, জানলেও বলতে পারেনা।

_________________________________________
তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ
আমি আজ চোর বটে!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।