ভালোবাসার শহীদেরা (সন্ত ভ্যালেন্টাইন ও আরো ১৩ জন)

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি
লিখেছেন অনিন্দ্য রহমান (তারিখ: রবি, ১৪/০২/২০১০ - ২:০৪পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

প্রস্তাবনা

সত্যিকার অর্থে ইতিহাসের কোনও মূল্যায়ন হয় না। ইতিহাস স্বকালের মূল্যায়ন। করতে পারলে ইতিহাস, নয়তো যেমন যাচ্ছে যাক। তাই, আমি খুব একটা মে ৬৮’র ফল কিংবা অফল কোনোটা নিয়েই ভাবি না। মে ৬৮ সফল না বিফল। ক্ষণস্থায়ী না দীর্ঘস্থায়ী। কিচ্ছু না। কোথায় কোন ফরাসি দেশে ছাত্রজনতার পাগলামি, বুনো কীর্তিকলাপ। বুনো বেড়ালপনাও বলতে পারেন, ওয়াইল্ড-ক্যাট প্রটেস্টের তর্জমায়।

১৯৬৮ সনের ছাত্র-শ্রমিকের যে মিলিত বিক্ষোভ ফ্রান্সে হয়েছিল, তার সাফল্য খুঁজে পেতে কিছুটা পরিশ্রম করতে হবে। এখানে সে-পরিশ্রম নয়। মাস্টার গদার, আমি তাকে তাই ডাকি, একটা ছবি তৈরি করেছিলেন জঁ-পিয়েরে গরিনের সহযোগে, তু ভা বিয়েঁ। মানে সব ঠিক হ্যায়। বা 'আল ইজ ওয়েল'। এই ছবিটা আমাকে এমন এক চটকনা দিয়েছিল যে তারপর থেকে আমি মে ৬৮ ভুলতে পারিনি। কিন্তু আশ্চর্য হচ্ছে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে এসে কেন যেন আমি সেটা অনুভব করি।

ছবির মধ্যখানে প্রায় দশমিনিটের অসহনীয় লম্বা একটা শট ছিল। ছবিটা যে বিক্ষোভ নিয়ে, পশ্চিমা পুঁজিবাদকে শত্রু মেনেই সে বিক্ষোভটা হয়েছিল। এখন ভাবুন, ছবিটা শেষ হলো একটা সুপার মার্কেটে। দীর্ঘ, দীর্ঘ ক্লান্তিকরভাবে একটানা একটা ট্রলিশটে। ‘ট্রলি’ শব্দটা কৌতুককর, সুপার মার্কেটের প্রেক্ষাপটে। শত শত মানুষ ঐ অতিকায় সুপার মার্কেটে। কিনছে। পিঁপড়ের সারির মত, মন্ত্রাহত মানুষের মতো, অ্যাসেম্বলি লাইনে ভেসে আসা যন্ত্রাংশের মতো। কিনছে। মার্কেটের এই মাথা থেকে ঐ মাথা পর্যন্ত ট্রলিও যাচ্ছে, আস্তে আস্তে। তারপর, নীরবতা ভেঙে কতিপয় ন্যালাক্ষ্যাপার বৈপ্লবিক চিৎকার : মাগনা, সব মাগনা। মার্জারের দল ঢুকে পড়ে। এবার পিঁপড়েগুলো, মানুষগুলো, যন্ত্রাংশগুলোর মাথা বিগড়ে যায়। পাগলের মতো জিনিসপত্র বোঝাই করতে থাকে। ট্রলিতে। ক্যামেরাঅলা ট্রলিও চলছে। 'পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে' যথারীতি পুলিশের আগমন। তারপর মারপিট। ভাঙচুর। ‘বিশৃঙ্খলা’। বিক্ষোভ ফিরে আসে পণ্যের কাছে। আর মানুষ, ক্ষোভ থেকে লোভে। মে ৬৮’র ঘটনায় শার্ল দ্য গল পুননির্বচন ডাকতে বাধ্য হন। এবং আশ্চর্য, আরো শক্তি নিয়ে জেতেন।

তারপরও যখন যেটা ঠিক, তখন সেটাই ঠিক। আমি আপনি যা খুশি ভাবি না কেন। আমি আপনি ভাবব, এটা নিয়ে ভাবব কেন, এটা তো কমবয়েসীদের অ্যাডভেঞ্চার মাত্র। পিটাপিটি। হাউকাউ। তাহলে, মনে করাই - ওরা বলত, ‘যে সমাজে রোমাঞ্চ নেই সে সমাজ ভাঙাটাই যে রোমাঞ্চ’।

মে ৬৮’র শিক্ষা, যদিও এই শব্দটি আপত্তিকর, আমার কাছে তা-ই। সমাজ ভাঙতে পারার আগে, সমাজ যে আসলে ভাঙা যায় এই বিষটি মনে-মগজে ঢোকানো জরুরী। এই জরুরী কাজটাই ফরাসী তরুণরা সেদিন করেছিল।

প্রস্তাবনাটা দীর্ঘ হয়ে গেল।

আমি কেন মে ৬৮ নিয়ে ভাবছি ? রাতদুপুরে ? আসলে ভাবনা প্রসঙ্গত এল।

ফেব্রুয়ারি ৮৩

মাঝে মাঝে কিছু ব্যর্থতা, মাঝরাতে দীর্ঘশ্বাসের জন্ম দিয়ে সফল হয়ে ওঠে। এমনই এক ব্যর্থতার নাম, না নাম নেই কোনো, যদি দিই তাহলে দিতে পারি ফেব্রুয়ারি ৮৩।

ফেব্রুয়ারি ২০১০

কাল ‘হঠাৎ’, ফেসবুকে হাসান মোরশেদের স্ট্যাটাস মেসেজ :

দয়া করে কোন বন্ধু আমার দেয়ালে ভ্যালেন্টাইন ডে'র এই সেই গিফট ফরোয়ার্ড করবেননা। ফেব্রুয়ারী ১৪, ১৯৮৩ তে জাফর, জয়নাল, দেলোয়ার, কাঞ্চন, দিপালী সাহারা প্রাণ দিয়েছিলেন স্বৈরাচারের ঘাতক ট্রাকের নিচে। অন্ততঃ এইদিনে ভালোবাসার প্যানপ্যানানি অসহ্য লাগে...

আজ সচলায়তনে হিমুর ব্যানার :

ভালোবাসা দিবসের গুষ্টি কিলাই।
তারপরও ভালোবাসা জানিয়ে যাই সেইসব সাহসী মানুষের জন্যে।
জাফর, জয়নাল, আইয়ূব, কাঞ্চন, দিপালী ...

এরা কারা ? ভাবতেই ২০০৮ এর একটা লেখার কথা মনে পড়ল। নতুন করে কী আর লিখব।

ভালোবাসার শহীদেরা (সন্ত ভ্যালেন্টাইন ও আরো দশজন)

এক সময় প্রেম শব্দটাকে অবজ্ঞাই করতাম। একবার হুমায়ুন আজাদ বলেছিলেন পুঁজিবাদের সবচেয়ে বড়ো কুসংস্কারের নাম প্রেম। কি জানি। সেসময় হাফপ্যান্ট ছেড়ে ফুলপ্যান্ট ধরেছি মাত্র। কিছু বুঝি না বুঝি – মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় পড়ি। নিও-রিয়ালিজম। নতুন নতুন শেখা। বিশ্বাস করি, দাবীও করি। দারিদ্র মোরে তুমি করেছ মহান। সৌখিন ব্যাপার-স্যাপার আর কী। কবিতা-টবিতা। সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা জানি – প্রিয় ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য। এমনকি, আমাদের শহীদ কাদরী, কী আশ্চর্য ভাষায় লিখেছেন – না,প্রেম সে কোনো ছিপছিপে নৌকো নয় – যার চোখ, মুখ, নাক ঠুকরে খাবে তলোয়ার- মাছের দঙ্গল। তারপরও ঠোকর খেতে খেতেই বেড়ে উঠেছি, সত্য।

কিন্তু, প্রেম – এই শব্দটা কখনো টানেনি। সেই সময়। পছন্দের শব্দ ছিল ভালোবাসা। ভালোবাসা উচ্চারণ করতেও সাহস লাগত। অনেকে বলত আমি ওকে পছন্দ করি।পছন্দ?

এরপর অনেকটা সময় পেরিয়ে। পুরনো প্রেমিকারা ঝরে গেছে সূর্যমুখীর পাপড়ির মতো। কোনো এক দু:খজনক প্রক্রিয়ায়। প্রেম শব্দটার মতোই ভালোবাসা শব্দটারও একই পরিণতি হলো।

এখন বরং প্রেম শব্দটাই স্বস্তি দেয়। প্রেম- একধরনের মানবিক সম্পর্কই তো। নিজেই নিজের সংজ্ঞা। আর কোনো সংজ্ঞা নেই। খোঁজার প্রয়োজনও নেই। প্রেম মূর্ত। ভাষা বরং তারচেয়ে বিমূর্ত বিষয়। আবার যেহেতু মানবিক সম্পর্ক – সেহেতু, সমাজবিচ্ছন্ন কিছু নয়। প্রেমের পক্ষেও সমাজ, প্রতিপক্ষেও। কিন্তু, ভালোবাসা? আমাদের অতিবৈজ্ঞাপনিক ঈশ্বর আমাদেরকে এর কী সংজ্ঞা দেন?

পুঁজিবাদকে আমরা যারা গালি দিই, এবং গালি দিয়েই মনে করি দায়িত্ব শেষ – তারা বলি, ভালোবাসাশূন্যতার জগতে আমরা বেড়ে উঠছি। বাধ্য হয়েই। যেন আমরাই হত্যা করেছি ভালোবাসাকে। আমাদের আত্মস্বাতন্ত্র – >আত্মকেন্দ্রিকতা -> আত্মসর্বস্বতা -> আত্মপরতা -> আত্মবিচ্ছন্নতা আর শেষ পরিণতিতে আত্মহনন, পুঁজিবাদের এই রূপকথায় (অরূপকথা নয়, কনন্ক্রিট বাস্তবতার কথা), ভালোবাসাহীনতার দায়ে আমরা নিজেদেরই দায়ী করি। কেন?

আমরা তো ভালোবাসাশূন্য নই। আমরা ভালোবাসাকে ধারণ করেছি। কিন্তু, কী শোচনীয় দুর্ভাগ্য – আমরা একটা শূন্যতাকেই শেষপর্যন্ত ভালোবাসা বলে আঁকড়ে ধরেছি। আর এই শূন্য চিহ্নায়ক কে পূরণ করতে ছুটে এসেছে অতিবৈজ্ঞাপনিক দেবতারা। এই প্রক্রিয়ায়, আমরা যদিও বা শব্দটার মালিক, কিন্তু শব্দার্থের মালিক হয়ে গেছে অন্য কেউ। কে বলে দেয় ভালোবাসা কী। কে আমাদের ভাষায় ঢুকিয়ে দেয় – নকল এক বিশ্ব, যা কোথাও ছিল না – নেই, আত্মঘাতী এক ভালোবাসা, আর কী ভীষণ অ্যাবসার্ড এক দিবস। কার বিশ্বে কে পালন করে ভালোবাসা দিবস?

চাইনি, সন্ত ভ্যালেন্টাইনকে অযথা এই আলোচনায় টেনে আনতে। যদি কেউ থেকে থাকে, তাকে আনতে হলো কেন এই প্রসঙ্গে একটা প্রায়-নীরস জোক মনে পড়ে গেল।

শিক্ষক বলছেন, অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচে না। ১৭৭৪ এ এটি আবিস্কৃত হয়। ছাত্রের প্রশ্ন, তার আগে মানুষ কী করে বাঁচত?

তারপরও শব্দের মতোই উৎসব ভাষারই অংশ। চিহ্নায়নের ওই একই প্রক্রিয়া দিয়েই তার, জন্ম বেড়ে ওঠা আর মৃত্যু। কবে কোন পৌত্তলিক প্রাক-রোমান শস্যের উৎসবকে নতুনভাবে চিহ্নায়িত করতে ভ্যালেন্টাইনস ডে-র শুরু হবে, মহাত্মা ভ্যালেন্টাইন নিশ্চয়ই তা আঁচ করতে পারেননি। মরবার আগে।

ভ্যালেনটাইনের উৎস নিয়ে রয়েছে বিবিধ সত্য। তবু কোনোটাই ধ্রুব নয়। যখন যেভাবে প্রয়োজন, অধিপতিরা শব্দার্থ নির্মাণ করেছেন, আর সেইসাথে নির্মাণ করেছেন রীতি-রেওয়াজ (কখনো কখনো যা উৎসবের মর্যাদা পায়)। শব্দার্থ নিয়ত বদলায়। ইতিহাসও। তবু, ইতিহাস সম্পর্কে একটি ধ্রুব সত্য যদি বলতে চাই?

হ্যা, সন্ত ভ্যালেন্টাইন শহীদ হয়েছিলেন। একবার, দুবার বা বহুবার। ভালোবাসার পক্ষে।

কিন্তু, এতেই কি পুরোটা বলা গেল? হ্যা, বারবার শহীদ হয়েছিলেন তিনি, স্বৈরতেন্ত্রের সাথে লড়তে গিয়ে। আমি মানি, এখানেই এর গুরুত্ব।

কিন্তু চালু সাময়িকপত্রের মেধাবী সম্পাদক, বিচার করেছেন- ভালোবাসা কী , আমাদের হয়ে। ফি বছর ঐ সম্পাদক লেখেন ভ্যালেন্টাইনস ডের ইতিহাস।

“পশ্চিমে এ দিনটি পালন হয়ে আসছে অনেক বছর ধরে। বর্তমানে বাংলাদেশেও উল্লেখযোগ্য হারে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এ দেশে ভালোবাসা দিবস উদযাপনের প্রচলন শুরু হয় ১৯৯৩ সালে যায়যায়দিনের ভালোবাসা সংখ্যা প্রকাশের মাধ্যমে। শোক দিবস, ঘৃণা দিবস, হত্যা দিবস কিংবা নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের পাশাপাশি যাযাদি একটি দিনকে প্রতীক ধরে নিয়ে ভালোবাসার বাণী প্রচার শুরু করে। মাত্র এক যুগের ব্যবধানে বাংলাদেশে বেসরকারি পর্যায়ে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিনে পরিণত হয়েছে ১৪ ফেব্রুয়ারি এবং ভালোবাসা দিবস।”

শোক দিবস, ঘৃণা দিবস, হত্যা দিবস কিংবা নির্যাতন প্রতিরোধ দিবসের পাশাপাশি ? পাশাপাশি শব্দটির অর্থ কি? পত্রিকা আরো বলছে -

“১৪ শতক বা তার কাছাকাছি সময়ে প্রথম ভ্যালেন্টাইনস ডে পালনের কথাও শোনা যায়। শুরুর দিকে শুধু গ্রিটিংস কার্ড বিতরণই ছিল উৎসব উদযাপনের মুখ্য বিষয়।”

তাই নাকি?

১৯৯৩ সালে এসে, নিজেদের সকল রাজনৈতিক বন্ধ্যাত্বকে পরিহাস করার সাহস হয়তো আমাদের ছিল।কী জানি।

এখন, সত্যিকার অর্থে সে-সাহস পাই না। স্কুলবালকের রোমান্টিসিজম নেই। জানি সত্যটা কী। আমি কে। কেন। কীভাবে টিকে আছি – কারা টিকিয়ে রেখেছে এই সমাজে। তবু, সুবিধাভোগী/সুবিধাবাদী লুম্পেন হয়েও অতিবৈজ্ঞাপনিক মহাবয়ানের প্রতি আজকাল আর বিশ্বস্ত থাকতে পারছি না। নিজের ভুত দেখার মতো তাই মাঝে মাঝে চমকে উঠি। এ কীসের আলামত?

২০০৮ এর চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি। সকাল থেকে লোকারণ্য বিশ্ববিদ্যালয়। উত্তাল কনসার্ট, উদ্বাহু নৃত্য।বাতাসে গোলাপ আর আকাশে হাওয়াই মিঠাই। অথচ এরই মধ্যে, আমাদের মধ্যে যারা নিজের ভূত দেখতে শুরু করেছি, দেখতে পেলাম বিবর্ণ একটা বিকেল ক্রমশ অন্ধকারের কাছে আত্মসমর্পণ করছে। আর তারই মধ্যে- বড়ো বেমানান – কারা যেন স্মৃতিখৃড়ে তুলে নিয়ে এসেছে কিছু জীর্ণ আলোকচিত্র। পেপার কাটিং। বড়ো করে ফটোকপি করা। নিচে হাতে লেখা ক্যাপশন। ফুটপাতের পাশে দড়ি টাঙিয়ে ঝুলিয়ে দেয়া। বড়ো দরিদ্র আয়োজন। হয়ত বড়ো অপ্রয়োজনীয়ও।

কারা যেন বেঘোরে মরে পড়েছিল রাস্তায়। সন ১৯৮৩। সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রথম প্রতিবাদ। তারিখটাও ওই চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি। জায়গাটাও এখানেই। পুলিশের গুলি। মৃত্যু। লাশগুম। ইতিহাসও গুম। আজ সেই অপদার্থ উজবুকদের নামও কেউ জানে না। শিক্ষা-ভাষা-সংস্কৃতি – যা বাঁচানোর জন্য লড়েছিল তারা – ভালোবাসার এই দিনে আজ তার সবই অপ্রাসঙ্গিক। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে হঠকারী লড়াই লড়তে গিয়ে, যারা রাজপথে মারা পড়লো – জানি না তাদের কজনের প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল। ভালোবাসা বলতে তারা কী বুঝত।

না, আজকের দিন শুধুই ভালোবাসার। তবু আমাদের-মধ্যে-যারা-নিজের-ভুত-দেখতে-শুরু-করেছি, তাদেরই একজন লিফলেট বিলি করছে। ভালোবাসার নিষিদ্ধ ইস্তাহার!

“যুদ্ধবাজ রোমান সম্রাট দ্বিতীয় ক্লডিয়াস ২৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমান তরুন যুবকদের যুদ্ধে মনোযোগী করতে সকল বিয়ে ও বাগদানকে বেআইনি এবং বাতিল ঘোষণা করে। সম্রাটের এই নিপীড়নমূলক আইনের বিরুদ্ধাচারণ করেই শহীদ হয়েছিলেন সেন্ট ভ্যালেন্টাইন।অথচ আজ সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের সেই প্রেম থেকে মহান সংগ্রামকে বাদ দিয়ে শুধুমাত্র “তুমি আর আমি”র মতো চরম স্বার্থপর, আত্মসর্বস্ব, সমাজবিচ্ছন্ন চেতনা যুব সমাজের মধ্যে চাপিয়ে দিতে পেরেছে শাসকশ্রেণী, … আজ পর্যন্ত যখন ব্যাপক জনগণের উপর স্বৈরতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা চেপে তখন শাসক শ্রেণী এ দিবস থেকে লাভ তুলে নিচ্ছে দুইভাবে; সমাজের সবচেয়ে প্রাণবন্ত লড়াকু অংশ যুবসমাজকে মুক্তির লড়াই থেকে বিচ্ছিন্ন করে, নির্জীব করে এবং দিনটিকে বাণিজ্যের মহোৎসবে পরিণত করে।”

... একসময় সন্ধ্যা নেমে আসে। একটি ব্যস্তদিনের পর, হয়ত হাসিমুখে ঘরে ফিরে যায় হাওয়াইমিঠাইওয়ালা। ঘরে ফেরার পথে – সোডিয়ামের আলোয় চোখে পড়ে দেয়ালে সাঁটানো পত্রিকা। পথভ্রষ্টদের ঈমানের পথ দেখানোর চেষ্টায় – হেডলাইন। আজ যারা ভ্যালেন্টাইনস ডে পালন করবে তারা কুফরী করবে। কী বিচিত্র !

বন্ধুরা, আজকের দিন তো শেষ। কাল কী হবে? প্রতিরোধ আর ভালোবাসা একসাথে চলতে পারে কি?

ক্রমঘনায়মান অন্ধকারের মধ্য থেকে কেউ একজন এই প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল। কে? আমার ভুত নয় তো? নাকি শহীদেরা কিছু বলতে চাইছে?


মন্তব্য

সুমন চৌধুরী এর ছবি

ভালোবাসার সাথে লড়াইয়ের বিরোধ নাই। ভালোবাসতে দিবস লাগে না। অন্তত আমার লাগে না। লড়তে তো নাইই...

জাফর, জয়নাল, আইয়ুব, কাঞ্চন, দীপালী সহ সামরিক স্বৈরাচার বিরোধী সংগ্রামের সব শহীদদের লাল সালাম।



অজ্ঞাতবাস

হিমু এর ছবি

এরশাদের বাসভবনের সামনে মানববন্ধন করতে পারবেন না যুগলেরা? ১৪ ফেব্রুয়ারি চলুন প্রতিটি তরুণ যুগল এরশাদের বাসার সামনে ১০ মিনিট হাতে হাত ধরে দাঁড়িয়ে থাকবেন। হাতে থাকবে একটি প্ল্যাকার্ড, সেখানে লেখা থাকবে নামগুলো। জাফর, জয়নাল, আইয়ূব, কাঞ্চন, দেলোয়ার, দীপালি প্রতিটি তরুণী সেদিন দীপালি সাহা, প্রতিটি তরুণ হয় জাফর, নয় জয়নাল, নয় আইয়ূব, নয় কাঞ্চন, নয় দেলোয়ার, নয় আরো না জানা সব নাম! কোনো শব্দ না, কোনো চিৎকার না, শুধু নিঃশব্দ মিছিল জমুক বেহায়াটার বাড়ির সামনে।

এরশাদ, তোর হাতে রক্ত!



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

অতিথি লেখক এর ছবি

বিপ্লব বিপ্লব করে আমরা যদি ভালবাসাকেই বাদ দিয়ে দেই, তাইলে সেটা ঠিক হবে না। সেইন্ট ভ্যালেন্টাইন সাহেব যা করেছিলেন, সেটা ছিল ভালোবাসার প্রতি আবেগ থেকে প্রতিবাদ।
আর, আমরা বোকার দল সেটাকে করে ফেলেছি মেকি প্রেমিক-প্রেমিকার নির্লজ্জ হাস্যোজ্জ্বল মুখের ফটোসেশনের ফটোকপি। আমরা ১ মাস আগে থেকেই ঠিক করি ঐ দিন প্রেমিকাকে কি উপহার দেব? পুঁজিবাদি শাসনব্যবস্থার লোভনীয় সব অফারের প্রলোভনে আমরা আমাদের জাতিসত্ত্বাকে ভুলে যাচ্ছি। আমরা সহজলভ্য আর সর্বজনগ্রাহ্য বইকে উপহারের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে হাতের ব্রেসলেট, ফিতা, ঘড়ি, কার্ডের মত কিছু অপ্রয়োজনীয় জিনিসের দিকে ঝুঁকে পড়ছি।

লেখার বিষয়ে আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা একটু বিচিত্র। একটু একটু আগাই আর মনে হয়, এই বুঝি ফ্রেঞ্চ ঘটনা নিয়ে পোস্ট, আরেকটু গেলে বিশ্বজুড়ে পুঁজিবাদের আগ্রাসন নিয়ে বুঝি কিছু কথা-বার্তা, মাঝে দিয়ে কয়েকবার বাংলাদেশের '৮৩র ঘটনার উঁকি।
বাকিগুলো মোটামুটি জানি। সেগুলোয় সমস্যা নেই, কিন্তু, '৮৩র ঘটনার বিস্তারিত জানতে আগ্রহী।

- মুক্ত বয়ান।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

মুক্ত বয়ান,

আপনার বক্তব্যের সঙ্গে আমি একমত। লেখাটি বিচিত্র, কারণ আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতাও খানিকটা তাই। স্মৃতির মধ্যে নানা ধরণে আপাত একই জাতীয় তথ্য সর্টেড হয়ে থাকে বোধয়। একপ্রকার স্মৃতি আরেকপ্রকার স্মৃতিকে উস্কানি দেয়। তাই মে ৬৮ থেকে ফেব্রুয়ারি ৮৩। আগস্ট ২০০৭ বলেও একটা পর্ব ছিল, ওটা স্কিপ করে গেছি।

আমি ইতিহাস যতটুকু জানি তা এইরকম। সচলে অনেকেই আছেন যারা ভুল-ত্রুটি শুধরে দিতে পারবেন।

৮২'র মার্চে এরশাদ ক্ষমতায় আসে। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ঐ বছরই প্রধান প্রধান ছাত্র সংগঠনগুলো ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করে। ছাত্ররা খুব স্বাভাবিকভাবেই স্বৈরাচারী শাসকের বিরুদ্ধে নানা ধরণে প্রতিবাদী কর্মকাণ্ডে নিজেদের নিয়োজিত করেন। আর সরকারের পুলিশী নির্যাতনও চলছিল সমানতালে।

তবে যে বিশেষ ঘটনাটি ছাত্রদেরকে বিশেষভাবে বিক্ষুব্ধ করে তোলে সেটি হচ্ছে, মজিদ খানের শিক্ষানীতি। ৭২ এর সংবিধানের মূলনীতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ যে শিক্ষানীতি কুদরাত-এ-খুদা কমিশন তৈরি করেছিল তা আগেই পূর্ববর্তী সামরিক জান্তার গাত্রদাহের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। এরশাদ সেই দাহ মেটাতেই শিক্ষামন্ত্রী ড. আব্দুল মজিদ খানকে দিয়ে একটি শিক্ষানীতি প্রণয়ন করান, যেটিকে নগ্নভাবে সাম্প্রদায়িক ও প্রতিক্রিয়াশীল বিবেচনায় আন্দোলনে নামেন ছাত্ররা।

ঐ শিক্ষানীতিতে যেমন ক্লাস ওয়ান থেকেই আরবি শেখানোর প্রস্তাব করা হয়েছিল। তেমনই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপর সরকারী নিয়ন্ত্রণ বাড়ানোর কথা বলা হয়েছিল। মাদ্রাসাগুলোকে শক্তিশালী করে সামরিকশাসকদের ধর্মব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার মূলভাবনার প্রতিফলনও সেখানে ছিল।

৮৩'র ১৪ ফেব্রুয়ারি এই আপত্তিকর শিক্ষানীতির বিরুদ্ধে স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচি ডাকা হয়। কর্মসূচিতে যোগ দিকে কেবল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নয়, আরো বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা যোগ দিতে আসেন। তাদের মিছিলটি শিক্ষাভবনের সামনে আসতেই পুলিশ গুলি চালায়। ছেলেমেয়েদের গায়ে ট্রাক তুলে দেয়ারর ঘটনাও ঘটে। বেশকয়েকজন প্রতিবাদী ছাত্র (সাধারণ মানুষও থাকতে পারেন) সেখানেই নিহত হন। পরে ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের ওপর নির্বিচারে হামলা চালায় 'আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী' বাহিনী। সেই দিনই কারফিউ দিয়ে দেয়া হয়। আসলে ১৫ তারিখও পুলিশী হত্যাকাণ্ড চলে। বিক্ষোভ ঢাকার বাইরেও ছড়িয়ে যায়। চট্টগ্রামেও একজন নিহত হন। সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে এটিই ছিল প্রথম বড় মাপের ছাত্রবিক্ষোভ।

আমি নিজেও এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ প্রামাণ্য বিবরণ পড়তে চাই। ইতিহাস বাদ দিলেও, ৮৩'র ছাত্রবিক্ষোভ নিয়ে আমার আত্মিক সংযুক্তির ভিন্ন কারণও রয়েছে। ৮৩'র ফেব্রুয়ারি আমার জন্য আরও বিশেষ কারণ ঐ বছর ঐ মাসেই আমি জন্মেছি। আমি বেড়েও উঠেছি, উঠছি, বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে। অন্তত ৩ টি অসাধারণ ছাত্রবিক্ষোভ আমার স্বচক্ষে দেখা। উচ্চমধ্যবিত্তের স্বস্তিবলয় ভেঙে অন্তত ১টিতে আমি সামান্য অংশগ্রহণও করেছি। নগন্য টিয়ারশেলের ছ্যাকা খেয়ে যখন পরাস্ত হয়েছি, তখন মনে মনে বুঝতে পেরেছি, আমাদের ইতিহাস আসলেই কতটুকু ঋণী সেইসব শহীদদের কাছে।

আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

মুস্তাফিজ এর ছবি

সেপ্টেম্বর’৮২ থেকে ধাপে ধাপে গড়ে উঠা এ আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিল চোদ্দটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ, প্রাথমিক ভাবে সংগ্রাম পরিষদে যেসব ছাত্র সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব ছিলো তারা হলো ছাত্রলীগের ৩টি অংশ (আওয়ামি লীগ, বাকশাল ও জাসদ সমর্থিত), ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্র মৈত্রী, ছাত্র ঐক্য ফোরাম, ছাত্র সমিতি (ন্যাপ সমর্থিত), বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন এবং জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন। (বাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগের কয়েকটি অংশ এবং আরো কয়েকটি ছোট সংগঠন এই ঘটনার পর পরবর্তিতে এ আন্দোলনে যোগ দিলে সংগঠনের সংখ্যা দাঁড়ায় চোদ্দটিতে।)
সরকারী ভাবে সেদিনের ঘটনায় ঢাকায় ২ জনের মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়। অন্যদের লাশ গুম করে ফেলা হয়। মার্চের প্রথম সপ্তার ভেতর সংগ্রাম পরিষদের নিজস্ব অনুসন্ধানে সেদিনের ঘটনায় মোট ১৩ জন শহীদ হয়েছেন বলে জানা যায় (ঢাকায় ৯, চট্টগ্রামে ৪ জন), এঁদের মাঝে একজন ছাত্রী দীপালী সাহা। সংগ্রাম পরিষদ থেকে পরবর্তিতে এঁদের নাম ঠিকানা সহ খুবই অল্প কিছু লিফলেট ছাড়া হয়েছিল।
সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে সেটাই ছিলো শুরু।

...........................
Every Picture Tells a Story

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ। শিরোনামে ১৩ করলাম।
: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: ::: :
'Cinema is over' - Master Godard


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

তাসনীম এর ছবি

মুস্তাফিজ ভাইয়ের সাথে আরও দুই একটা কথা যোগ করি।

দেশে তখন রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। এইটাই ছিল প্রথম আন্দোলন এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে, যেটার সম্পূর্ন ছাত্রদের দ্বারা পরিচালিত ছিল। শোনা যায় এরশাদের ডান বলে পরিচিত আব্দুর রহমান নামে এক জেনারেল এই নির্যাতন চালিয়ে ছিল। পরে আব্দুর রহমান ফ্রান্সের বাংলাদেশ এম্বেসিতে নিয়োগ পান, আরো কিছুদিন পরে রহস্যময়ভাবে
মারা যান।

আমার আম্মা তখন শিক্ষাভবনে কর্মরত ছিলেন। আর্মির ট্রাক এনে লাশগুম করার দৃশ্য শিক্ষাভবনের বহু কর্মকর্তা এবং কর্মচারী দেখেছেন।

সম্ভবত এই ঘটনার পরে জনপ্রিয় উপস্থাপক ফজলে লোহানীকে দিয়ে এরশাদ সরকার একটা অনুষ্ঠান করায় যেটা ছিল প্রোপাগাণ্ডা মূলক। রাতারাতি ফজলে লোহানী নন্দিত থেকে একজন নিন্দিত ব্যক্তিতে পরিণত হন।

এই সময় আর্মি ছাত্রদের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়, সম্ভবত প্রথমবারের মত আক্রান্ত হয় বুয়েট ক্যাম্পাস। আমরা যখন বুয়েটে ছিলাম (১৯৮৯ - ২০০৫), ১৪ই ফেব্রুয়ারি পালন হত নানা কর্মসূচিতে এবং কোন ক্লাস হত না ওই দিন।

রাজনৈতিক দলগুলো একটু সংগঠিত থাকলে এই সময়ে এরশাদের পতন হতে পারত বলে আমার পরে মনে হয়েছে।

+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

মুস্তাফিজ এর ছবি

ফজলে লোহানীর ঘটনা আরো পরের। সেক্রেটারীয়েট ঘেরাও এর সময়।
এটা ঠিক রাজনৈতিক দল্গুলোর সেসময় কোন কর্মসূচি ছিলনা। এমনকি ঘরের ভেতরও না।
আরেকটা বিষয়, মিছিলে ট্রাক তুলে দিয়ে ছাত্র হত্যার ঘটনা আরো পরের। সেবারে ছাত্রলীগের দুই কেন্দ্রীয় নেতা ট্রাক চাপায় শহীদ হয়েছিলেন।

...........................
Every Picture Tells a Story

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

মুস্তাফিজ ভাই, আমার ভুল না হয়ে থাকলে ছাত্র সংগঠনগুলোর নামগুলো হবেঃ

১. বাংলাদেশ ছাত্র লীগ (মুজিববাদী)
২. বাংলাদেশ ছাত্র লীগ (জাসদ-ইনু)
৩. জাতীয় ছাত্র লীগ (বাকশাল)
৪. বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন
৫. গণতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়ন (ওয়ার্কাস পার্টি)
৬. বাংলাদেশ ছাত্র সমিতি (ন্যাপ)
৭. বিপ্লবী ছাত্র মৈত্রী (ইউনাইটেড কমিউনিস্ট লীগ)
৮. বাংলাদেশ ছাত্র লীগ (বাসদ-মাহ্‌বুবুল হক)
৯. সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (বাসদ-খালেকুজ্জামান)
১০. ছাত্র ঐক্য ফোরাম (মোশারেফা মিশু)
১১. ছাত্র ঐক্য ফোরাম (অপু সারওয়ার)
১২. বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশন

বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়ন এবং জাতীয় ছাত্র ইউনিয়ন-এর কথা স্পষ্ট মনে পড়ছেনা। তবে এদের যোগ করলে কিন্তু চৌদ্দটা নাম ঠিক হয়ে যায়। আরেকটু মনে করার চেষ্টা করবেন বস্‌, এগুলোতো ইতিহাসের অংশ।



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মুস্তাফিজ এর ছবি

আমার লিস্ট ঠিক আছে। সেসময় চৌদ্দ দলীয় সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়নি। বাসদ সমর্থিত ছাত্রলীগ অনেক পরে যোগ দিয়েছে।

...........................
Every Picture Tells a Story

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

তাসনীম ভাই, পাণ্ডবদা, মুস্তাফিজ ভাই অনেক ধন্যবাদ।


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এই দিনটা এলেই মনে পড়ে নিজের ভেতরের সবচেয়ে সুকুমার অনুভূতিটাও মুক্তি পায়নি নির্লজ্জ বাণিজ্যের বাহুডোর হতে। আমরা আমাদের সবচেয়ে আদি, অকৃত্রিম, কোমল অংশটাকে তুলে দেই নিলামে, ভুল পন্থায়, ভুল কারণে।

আফসোস হয়, ভালোবাসার সংজ্ঞাটাই যারা বুঝলো না, তারাই ভালোবাসা দিবসের পত্তন করে নগরীতে। যে নগরীর কোণে এই দিনেই, ইটপাথরের দেয়ালে ডুকরে কেঁদে ফেরে ভালোবাসা বঞ্চিত পাঁচ, দশ, বিশ, শত, হাজার প্রাণ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

স্নিগ্ধা এর ছবি

জাফর, জয়নাল, আইয়ূব, কাঞ্চন, দেলোয়ার, দীপালি এবং আরো যারা মানুষকে ভালোবেসে প্রাণ দিয়েছেন - দেশকালজাতি নির্বিশেষে সেইসব মানুষগুলোর জন্য ভালোবাসা জানিয়ে গেলাম।

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

একদিনের ভালোবাসার নামে ব্যবসা নিপাত যাক। ভালোবাসা বেঁচে থাকুক চিরকাল। দেশকে, মানুষকে, ভালোবাসে যারা চিরতরে চলে গেছেন তারা থাকুক সকলের ভালোবাসায়।

সুরঞ্জনা এর ছবি


কার বিশ্বে কে পালন করে ভালোবাসা দিবস?


কারা যেন বেঘোরে মরে পড়েছিল রাস্তায়। সন ১৯৮৩। সামরিক শাসকের বিরুদ্ধে ছাত্রদের প্রথম প্রতিবাদ। তারিখটাও ওই চৌদ্দই ফেব্রুয়ারি। জায়গাটাও এখানেই। পুলিশের গুলি। মৃত্যু। লাশগুম। ইতিহাসও গুম। আজ সেই অপদার্থ উজবুকদের নামও কেউ জানে না। শিক্ষা-ভাষা-সংস্কৃতি – যা বাঁচানোর জন্য লড়েছিল তারা – ভালোবাসার এই দিনে আজ তার সবই অপ্রাসঙ্গিক। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে হঠকারী লড়াই লড়তে গিয়ে, যারা রাজপথে মারা পড়লো – জানি না তাদের কজনের প্রেমিক-প্রেমিকা ছিল। ভালোবাসা বলতে তারা কী বুঝত।

মনে গিয়ে লেগেছে।
চলুক
.....................................................................................................
জগতে সকলই মিথ্যা, সব মায়াময়,
স্বপ্ন শুধু সত্য আর সত্য কিছু নয় ।

............................................................................................
এক পথে যারা চলিবে তাহারা
সকলেরে নিক্‌ চিনে।

তিথীডোর এর ছবি

হাসান মোরশেদ ভাইয়ের স্ট্যাটাস পড়ার আগে এ ব্যাপারটা জানাই ছিলো না আমার...
গুরু গুরু
শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা! শ্রদ্ধা

--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

ষষ্ঠ পাণ্ডব এর ছবি

এই বৈশ্যযুগে সবকিছুকেই পণ্যায়ণ করা হয়েছে। ভালোবাসাকেতো বহু আগেই বাজারে বিকানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর পকেট কাটার জন্য বৈশ্য দুর্বৃত্তরা নিয়মিতই নানা রঙের আয়োজন করে থাকে। রাজ্যের অপ্রয়োজনীয় দ্রব্য আর অনুষ্ঠানের পেছনে পকেট উজাড় করে মানুষ ভাবে বড্ড আনন্দ হল। আর ওদিকে লুটেরার দল গোঁফ চুমড়ে হাসে।
------------------------------------------
ভালোবাসার মানুষকে ভালোবাসার কথা জানানোর জন্য বিশেষ দিন-ক্ষণ লাগেনা। সবাইকে ভালোবাসতে হবে বৎসরের প্রতিটি দিনই। একদিন ভালোবাসা দিবস আর ৩৬৪ দিন কি খারাপবাসা দিবস?
------------------------------------------
কুখ্যাত স্বৈরাচার এরশাদশাহীর দুঃশাসনের বিরূদ্ধে আজকের দিনসহ ২৪শে মার্চ, ১৯৮২ থেকে ৬ই ডিসেম্বর, ১৯৯০ পর্যন্ত যাঁরাই চূড়ান্ত ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাঁদের পূণ্যস্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা।
------------------------------------------
ভালোবাসা দিবসের বেসাতী যারা করেন, তারা যদি সত্যি সত্যি ভালোবাসায় বিশ্বাস করেন তাহলে একবার জাফর-জয়নাল-আইয়ূব-কাঞ্চন-সেলিম-দেলোয়ার-দীপালী সাহাদের জন্য ভালোবাসা সশব্দে প্রকাশ করে দেখান!



তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।


তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।

মনামী এর ছবি

প্রতিরোধ আর ভালোবাসা একসাথে চলতে পারে কি?

ভালবাসার জোরই সবচেয়ে বড় জোর - প্রয়োজন কেবল ঠিক খাতে প্রবাহ। ভালোবাসার জোর ছিল বলেই এমন প্রতিরোধ গড়তে পেরেছিলেন জাফর, জয়নাল, আইয়ূব, কাঞ্চন, দেলোয়ার, দীপালি এবং আরো শহীদের। আজকের ভালোবাসার ফেরিওয়ালাদের কি সেই জোর আছে?

জি.এম.তানিম এর ছবি

ভালোবাসার তীব্রতম প্রকাশ সেদিনের সেই শহীদরা করে গেছেন নিজের জীবনের বিনিময়ে।

আজ ভোটের দিন এলে জয় পরাজয়ের হিসেব মেলাতে আমাদের বড়ো বড়ো দলগুলো লিপ্ত হয় বিশ্ববেহায়ার সাথে অশ্লীল সহবাসে।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

ব্যাধ [অতিথি] এর ছবি

জানতা্ম না বলে নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে।
ধন্যবাদ অনিন্দ ভাই।

উচ্চমধ্যবিত্তের স্বস্তিবলয় ভেঙে অন্তত ১টিতে আমি সামান্য অংশগ্রহণও করেছি। নগন্য টিয়ারশেলের ছ্যাকা খেয়ে যখন পরাস্ত হয়েছি, তখন মনে মনে বুঝতে পেরেছি, আমাদের ইতিহাস আসলেই কতটুকু ঋণী সেইসব শহীদদের কাছে।

কাঁদছিনা, কিন্তু কেমন যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

দুঃখিত, আমি আন্তরিকভাবে দুঃখিত আমার অজ্ঞতার জন্য। জাফর, জয়নাল, দেলোয়ার, কাঞ্চন, দিপালী সাহা এওবং আরো যাদের নাম আমি জানি না,আপনাদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।

---নীল ভুত

পরিবর্তনশীল এর ছবি

গত বছর এই দিনে সম্ভবত হিমু ভাই দীপালি সাহাদের নিয়ে লিখছিলেন।

আপনার লেখাটার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

আনন্দী কল্যাণ এর ছবি

লেখার ধরণটা ভাল লাগল.....

------------------------------------------------------
আকাশে তোর তেমনি আছে ছুটি
অলস যেন না রয় ডানা দুটি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।