১. কৈফিয়ত:
আমি বিশ্বাসী না। আমি অবিশ্বাসী না। এবং এই দ্বন্দ্বের হেতু আমার অত্যন্ত অজানা।
এই কথাকাহিনী আমাকে না লিখতে হলেই ভালো হত। এই পৃথিবীতে অজস্র কিছু ঘটে। সব লেখার দায় ও দায়িত্ব আমার না। তবু আমি নিজ থেকে, নিজের থেকে, লিখতে গেলাম এই কথাকাহিনী ...
দেখ, সে অকস্মাৎ আজ ফিরে আসে, যেখানে তার ফিরে আসবার কথা - এই সমতলে, শূন্যতায়।
২. নীরবতায় রচিত স্বগতোক্তিসমূহ:
দীর্ঘ পথ আমাকে আসতে হয়েছে এই একা। একটা শূন্য ট্রেন - চালক অজ্ঞাত - আমাকে নিয়ে এসেছে এই উপত্যকায়। আমার ভাবনায় ভুল ছিল, নরতক্ হে ! দেখ, চিরকাল আমি ভেবেছি মানুষের থেকে মানুষ মানুষের দিকে ছাড়া আর কোত্থাও যায় না। একটা বেঞ্চিতে বসে, এই অমানুষের উপত্যকায় অথচ আমি খুব দেখতে পাই, আসলে কোথাও আসিনি আমি। নরতক্ শুনতে পাচ্ছ কি?
শয়তানের মতো সে মানুষকে বলে : অবিশ্বাস করো। যখন মানুষ অবিশ্বাস করে, সে বলে নিশ্চয় তোমার সঙ্গে আমার কোনো সম্বন্ধ নাই, নিশ্চয় আমি আল্লার ভয় করি, তিনি বিশ্বজগতের প্রভু।১ নরতক্ পবিত্র গ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেয়। আমরা আর কোথাও যাব না। ঘুমিয়ে আসা কণ্ঠে সে জানায়। এখন বসার বেঞ্চিতে বসে কিছুক্ষণ বসে থাকো তুমি। আমিও বসে থাকি। ভরদুপুর এখন।
মঙ্গলে সূর্যাস্ত, উইকি
৩: সন্ধ্যার আগে:
অন্ধ ভূত খেলিতেছে জলে২
নরতক্ বলত শুনো হে সুলায়মান, অন্ধ লোকের নাম। ভূত ক্রীড়া এক। জল তুমি চেন। অন্ধ খেলিতেছে। খেলার নাম ভূত। সে আরও ভেঙে বলে। তুমি পারবে।
তবু সে অন্ধ অল্প ভূতে ডুবে যায়।
সুলায়মানের এখন এই শেষবার, আলোর সহিত বিদায় ঘটে।
৪: অবিশ্বাসের সংকট:
সুলায়মান নরতক্ ছিল অবিশ্বাসী। তার সংকটও ছিল। কিন্তু এই দুই মুখোমুখি দাঁড়ায় নাই কখনো। সে নিম্নোক্ত ভাবে অন্ধকারে -
আমার পিতা জানিয়েছেন তিনি আমার পিতা নন। অতএব, আমি আমার পিতাকে খুঁজে পেতে অনেকটা সময় ব্যয় করতে পারতাম। এককালে, সামাজিক প্রয়োজনে একাজ আমার করবারই কথা। কিন্তু একালে সামাজিক ব্যবস্থাদির সংস্কার ঘটে গেছে। সেহেতু পিতৃপরিচয় আর প্রয়োজনীয় নয়। দীর্ঘকাল ধরে এই ভাবনা চাপা থাকলেও, আজ হঠাৎ মনে হচ্ছে পিতৃপরিচয়ের প্রয়োজনটি নিছক সামাজিক ছিল না কোনো কালে। আদৌ।
আমার পিতা থাকার অর্থ, পিতার থাকার অর্থ, পিতার নিজেকে পিতা বলে ঘোষণা করার অর্থ - আমি কাঙ্ক্ষিত ও প্রয়োজনীয় ছিলাম। আমার থাকার দরকার আছে। এখন আমার না-থাকার দরকার। তাই দীর্ঘ ট্রেন ধরে চলে এসেছি এই উপত্যকায়। এখানে কী ভয়াল অন্ধকার নামে। আর কী জঘন্য ঘটনা ঘটে দেখ। লেখক - সে কৈফিয়ত দেয় কারণ সে আমার গল্প লেখে। সে আড়ি পাতে। শোনে, লিখে রাখে, পড়ে শোনায় - আমারই স্বগতোক্তিগুলো।
সন্ধ্যার আগে ভূত খেলা খেলতে খেলতে আমারও সন্ধ্যা হয়ে যায়। এবং ভাবি, আমার কোনো দরকার ছিল না। একদমই না।
সস্যুরের চিহ্ন, উইকি
৫: গাছের ছবি:
গাছ পদ ও গাছ পদার্থ - গাছের ছবি এঁকে জানিয়ে গেছেন পূর্বজ জ্ঞানী। এরপর কখনো গাছ সরে গেছে। কখনো গাছের ছবি। কখনো দুই-ই। এলোমেলো হতে হতে বহুদূর আসাও গেছে। এরপর আর আদৌ আসার দরকার কি ভেবে গাছ পদ, গাছ পদার্থ, গাছের ছবি, তাদের কারো কারো থাকা, কারোই-না-থাকা-সমেত রক্তবমি করেছি প্রান্তরের বিচক্ষণ শূন্যতায়।
শূন্যতা আমাদের শুশ্রূষা।
মূলত গাছ পদ ও গাছ পদার্থের না থাকায় আমরাই নাই হয়ে যাই।
শূন্যতা প্রকৃতপ্রস্তাবে আমাকে প্রতিটি মূহূর্তে হত্যা করে চলেছে। প্রভু আমাকে দোজখে নিয়ে যাও। সে কাঁদে। কাঁদতেই থাকে।
নরতক্ মুখস্ত বলে, এরাই তারা যারা তাদের অন্তরাত্মা হারিয়ে ফেলেছে। আর যা তারা উদ্ভাবন করেছিল তা তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছে।৩
৬: জরুরী সমাপ্তি:
নরতক্ সুলায়মানের অভিশপ্ত বেঁচে থাকার মূলে তার অজ্ঞানতা কিংবা জ্ঞান কোনোটাই নাই। এককালে কিছুকিছু ঘটনাকে নৈতিক কিছুকিছু ঘটনাকে অনৈতিক বলা হত। এরপর, সেই ব্যবস্থায় পরিবর্তন আসে। এরপর একদা নিন্মোক্ত ঘটনা ঘটে। সুলায়মানের জবানে শুনি।
কিয়ৎকাল আগে, এক ঘৃণিত পুরুষ, প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হয়। তখন সে নারীটির নগ্ন ছবি অঢেল মানুষকে বিলায়। প্রতিহিংসা এই ঘটনাকে সিদ্ধ করে। ঘৃণিত পুরুষ বলে, নাকি আপনার প্রতিহিংসা নাই! তাকে খুব উদ্ধত শোনায়। এবং আপনি, আমি আলবত জানি, সেই ছবি সোৎসাহে দেখেছেন। কামনা, যা ভীষণ স্বাভাবিক এবং দারুণ প্রাকৃতিক, তা এই ঘটনাকে পুনরায় সিদ্ধ করেছে, আপনার দিক থেকে। তাকে খুব বৈজ্ঞানিক শোনায়। এবং অবশ্যই যেসকল সামাজিক ভিত্তি তাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে, সেগুলো বাতিল হয়েছে বহুকাল। সামাজিক ভিত্তির ওপরে, মনে করাই, ওই ছবি তোলার ঘটনাটি ঘটেওনি। বা যদি ঘটেও থাকে, বালিকাটির উচিৎ ছিল সাবধান হওয়া। অসাবধনতা এই ঘটনাকে আরো এক দফায় সিদ্ধ করেছে। তাকে খুব আইনসিদ্ধ, সর্বোপরি খুব যুক্তিসিদ্ধ শোনায়। সুতরাং এই পৃথিবীতে আমি যা করেছি তার সব ঠিক। সব ঠিক। তাত্ত্বিক এক বলে গেছে, কোনো নৈতিকতার কাছে তোমার দায়বদ্ধতা নাই। তুমি যা পার কর।
অতঃপর, সুলায়মান জানে, ভালবাসা ও ভালবাসার ছবির প্রাথমিক সম্পর্ককে অগ্রাহ্য করলে, পদ ও পদার্থের মৌলিক সংযোগ ছিঁড়ে যায়। না, কোথাও কোনো নৈতিক বা অনৈতিক কিছু ঘটে না। কেবল, পিতা জানায় তুমি কতটা অপ্রয়োজনীয়, অনাকাঙ্ক্ষিত এই পৃথিবীতে। পৃথিবী থেকে পিতার, মাতার, সন্তানের ... সকলের প্রস্থান ঘটে।
অভিশপ্ত সুলায়মানের গল্পটারও ইতি ঘটে। সে কেবল বেঞ্চে ব’সে নরকের অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু নরকেও সে আর প্রয়োজনীয় নয়।
ত্রিলোক সিদ্ধ হয়েছে সুতীব্র ঘৃণায় ...
------------------------------------------------------------------------------------
__প্রথম ছবি, লেখকের
১. পবিত্র প্রত্যাদেশ। ৫৯:১৬
২. বাক্যটি ধার করা। কবি, হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
৩. পবিত্র প্রত্যাদেশ। ১১:২১
মন্তব্য
ধর্মগ্রন্থের ভাষায় লেখা মনে হল, তাই কি?
বিমূর্ত জয়যুক্ত হউক।
ধন্যবাদ হে ...
এটা একটা প্রথাগত অস্তিত্ববাদী রচনা। ধর্ম ও নৈতিকতার যোগ এবং বিয়োগ এর আবছা বিষয়বস্তু। যদিও আমি এই চৌহদ্দিতে ভিন্ন ইরাদা নিয়ে ঘুরপাক খাচ্ছি।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
দুর্ধর্ষ
ধন্যবাদ জানবেন।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ইনগ্রেডিয়েন্ট সব তৈরি দেখতে পাচ্ছি,
রেসিপিও তৈরির পথে। ডিশটা কি হতে যাচ্ছে?
কোনো আলামত?
shafayet
অনুসন্ধান চলছে ...
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
!!!
???
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
পদ ও পদার্থের প্রাথমিক ধারণা না থাকলে বোঝা মুশকিল।
১
এই বাতেনি গদ্য লিখতে ক্যান গেলাম? এইখান থেকে আলোচনার শুরু হতে পারে। সেটাকে বাইপাস করে, অন্য গুরুত্ব প্রসঙ্গে আসি। যে পয়েন্টটা আপনি তুললেন।
২
আমাদের চিহ্নের জগতে বাস। এর বাইরে কোনো জগত আমাদের পক্ষে কল্পনা করা কঠিন। তবে তার মানে এই না যে সেরকম জগত নাই। আমাদের জগতে সিগনিফায়ার ও সিগনিফায়েডের মধ্যে অদল বদল ঘটে অহরহ। কিন্তু সিগনিফায়ার ও সিগনিফায়েডের সম্পর্কটা ধ্রুব। মানে চিহ্নের যে কাঠামো : দাগের উপরে আর দাগের নিচে। উপরের মাল, নিচের মাল সবই বদলায়, কিন্তু দাগ থাকতে হবে। আপনার বা আমার দেয়া ছবিতে যেটা কাটা আছে। 'দাগ' একটা ধ্রুব সম্পর্ককে নির্দেশ করে। কোনো কিছুই (যেমন নৈতিকতা) ধ্রুব না বলে আমরা এই সম্পর্কের বিনাশ ঘটাতে পারি না। কারণ, এতে আমাদের অস্তিত্বেরই আর কোনো অর্থ থাকে না।
৩
আমরা এইসব দাগ ভাঙতে গিয়ে অতএব শূন্য হয়ে যাই। এখানে কোনো প্রগতি নাই।
পুনশ্চ : 'প্রগতি'র ধারণাটাকেও দাগভাঙা উত্তরাধুনিকেরা মেটান্যারেটিভ বলে অবজ্ঞা জানায়। আমি এই ব্যাপারে সচেতন। একদা আমাদের নৈতিক-অনৈতিক নির্দেশের দায়িত্ব নিত ধর্ম। এখন ধর্ম নাই, তাই নৈতিকতাও নাই এই কথা চলবে না। নৈতিকতার দায়িত্ব এখন আমাদের কাঁধে। এই দায়িত্ব অস্বীকার করার প্রচুর তাত্ত্বিক অজুহাত আছে।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আহা অপূর্ব!
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
-----------------------------------------------------
"চিলেকোঠার দরজা ভাঙা, পাল্লা উধাও
রোদ ঢুকেছে চোরের মত, গঞ্জনা দাও'
- কী?
ধন্যবাদ জানবেন।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
একটু বেশিই আধ্যাত্মিক হয়ে গেছে।
আপনার কথাগুলো সবসময়ই অন্যরকম।
পলাশ রঞ্জন সান্যাল
সেই
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভ্রাতা অনিন্দ্য, আমি মুগ্ধ। আমি দীর্ঘদিন ধরে যাঞ্চা করি--আমাদের ভাবনাগুলোর ঝরনার মতো ঝরে পড়ুক নতুন শব্দে--নতুর ছন্দে--নতুন আঙ্গিকে। আপনার একটি গদ্যটি তাই।
আমি আশান্বিত। ধন্যবাদ।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
আঙুল পুড়ে যাওয়ায় আপাতত সংক্ষিপ্ত ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কবি হাবীবুল্লা সিরাজী ফেসবুকে জানিয়েছেন, "ভাইরে, অন্ধের তো জল-ই ভরসা !আর অদ্ভুত ছাড়া যে সব ভূতে দীর্ঘ-ঈ, তাও ভুল হয়।" বানান ঠিক করলাম। পুনরায় তার নাম, ও আমার ভুলস্বীকার করলাম।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
শৈল্পিক ছবি দেখে বোঝার জন্য যেমন নূন্যতম শিল্পজ্ঞান থাকা দরকার, তেমন সাহিত্যমানসম্পন্ন রচনা পড়ে বোঝার জন্যও নূন্যতম সাহিত্যজ্ঞান থাকা জরুরী। এই রচনাটির সাহিত্যমান কিরূপ সে প্রশ্নের উত্তর দিতে আমি অক্ষম, কারণ আমার সে যোগ্যতা নেই। তবে যে রচনা পাঠ পরিশ্রমসাপেক্ষ, ব্লগের মত ব্রাত্যমাধ্যমে তা প্রকাশিত হলে ব্রাত্যপাঠক সেখান থেকে কিছু ফল লাভের আশা করবেনই। পাঠক হিসাবে আমি ব্রাত্যকূলের আর রচনাটি ব্রাহ্মণমাধ্যমে প্রকাশিত নয় বলে আমিও ফল লাভের আশা করেছিলাম। তারপর কী পেলাম সেটা বলার চেষ্টা করি।
১. কৈফিয়ত: এমন একটা শুরু পাঠককে টানে পুরো লেখাটা পড়ার জন্য - যদিও কোনো রচনার জন্য কৈফিয়ত দেবার দরকার নেই। রচনা নিজেই self explanatory হবার কথা।
২. নীরবতায় রচিত স্বগতোক্তিসমূহ: 'নরতক্' শব্দটির মানে কী? রচনাটি আত্মজৈবনিক হলে নরতকের সাথে রচয়িতার সম্পর্ক কী? এই পর্যায়ে এসে পাঠক জিয়া হায়দারকে মিস্ করা শুরু করবেন। বিশ্বাস-অবিশ্বাস নিয়ে লেখকের আত্মদ্বন্দ্ব পাঠককে একটা প্রহেলিকার দিকে ঠেলে দেয়।
৩. সন্ধ্যার আগে: এটা পোমো কবিতা হয়ে গেল। পোমো আমার বোধের অগম্য - তাই সেখানে আর মাথা ঘামাই না।
৪. অবিশ্বাসের সংকট: এই রকম এক্সপেরিমেন্ট বাংলাদেশে কম হলেও পশ্চিমবঙ্গে মোটামুটি চর্চিত। এই মুহূর্তে সুবিমল মিশ্র আর নবারুণ ভট্টাচার্যের নাম বলতে পারবো। লেখার মাঝে object insertion সুবিমল হরহামেশা করেন, বাংলাদেশে হাসনাত আব্দুল হাই আর অদিতি ফাল্গুনীকে করতে দেখেছি। আপাত অন্বয়বিহীন বাক্যাংশকে জোড়া দিয়ে আস্ত বাক্য তৈরী বা বাক্যদের জোড়া দিয়ে অনুচ্ছেদ তৈরীর কাজে নবারুণের মুন্সীয়ানা প্রসংশনীয়। এই রচনার এই অংশে আপাত অন্বয়হীনতা আমাকে বিভ্রান্ত করেছে। তাই বোধগম্য ও জরুরী প্রথম প্রসঙ্গটিকে দ্বিতীয় প্রসঙ্গের সাথে মিলিয়ে interpret করতে পারিনি।
৫. গাছের ছবি: আবারও পোমো। মন্তব্য ৩-এর অনুরূপ।
৬. জরুরী সমাপ্তি: আলোচিত প্রসঙ্গটি আমাকে অনেক ভাবিয়েছে। ভাবিয়েছে এই জন্য যে, তাহলে বিশ্বাসের সীমা কতদূর হওয়া উচিত? মুহূর্তের আবেগ বা ঝোঁকের মাথায় নেয়া সিদ্ধান্ত যে বৃহত্তর পরিসরে ব্যাপক গভীরতায় ক্ষতি করে সেখানে ক্ষতির মাত্রা বিবেচনা করে 'মুহূর্তের আবেগ' বা 'ঝোঁকের মাথায় নেয়া সিদ্ধান্ত'কে কতটুকু ক্ষমা করা যায়?
অতঃপর, সুলায়মান জানে, ভালবাসা ও ভালবাসার ছবির প্রাথমিক সম্পর্ককে অগ্রাহ্য করলে, পদ ও পদার্থের মৌলিক সংযোগ ছিঁড়ে যায়। না, কোথাও কোনো নৈতিক বা অনৈতিক কিছু ঘটে না।
সংস্কৃতি বিদ্যমানকে ধ্বংস করে ঠিকই তবে তা নতুন নির্মাণের ভিত্টা বসানোর জন্য। সংস্কৃতি তাই দায়হীন, নৈরাজ্যকর নয়। মানুষের যে কাজের দায় অন্যকে বহন করতে হয়, অন্যকে মূল্য দিতে হয় তা অনৈতিকই শুধু নয় অন্যায়ও বটে। যে যুক্তি দিয়ে আজ আমার সেই অন্যায়কে ক্ষমা করা হবে সেই একই যুক্তি দিয়ে আগামীকাল আমার প্রতি সংঘটিত অন্যায়কেও জায়েজ করা হবে।
পদ ও পদার্থের আপেক্ষিক ভূমিকার পরিবর্তন হতে পারে কেবল, তাদের মৌলিক সংযোগ বিচ্ছিন্ন হবার কথা নয়। কারণ, শৃঙ্খল বা চক্র যাই বলুন সেটি প্রাকৃতিক। চক্রের নীতি বা পরিক্রমাকে অস্বীকার করে লাভ নেই, তার আবর্তন একটু বেশি সময় নিতে পারে - কিন্তু থামবেনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানবেন। লেখার বর্ণবিচার আশাকরি লেখকের বর্ণবিচার পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে না। তবে, হ্যাঁ লেখক আর লেখা আলাদা না।
১. লেখক কৈফিয়ত দিয়েছে কেন সে এটা লিখতে গেল। কৈফিয়ত জরুরি না অবশ্যই। এটাকে ভূমিকাও ভাবতে পারেন। বক্তব্য : এখানে একজন মানুষের অভিজ্ঞতা বলা হতে যাচ্ছে, যে একটা শূন্যতাবোধে আক্রান্ত। এই শূন্যতার কারণ আস্তে আস্তে খোঁজা হবে ...
২. মানুষটির পুরো নাম নরতক্ সুলায়মান। এই এক মানুষের মধ্যেই আবার ২ জনকে দেখা যায়। একজন সুলায়মান, যে আপাতত শূন্যতা ছাড়া কিছু অনুভব করতে পারছে না। আরেকজন, নরতক্, ধর্মগ্রন্থ থেকে উদ্ধৃতি দেয়। ধর্ম কিংবা যেকোনো (পোমো ভাষায়) গ্রান্ড ন্যারেটিভ তাকে শূন্যতাবোধ থেকে উদ্ধার করে। নর্তক শব্দটাকে ভেঙে 'নর'কে পূর্ণতা দিয়েছি। এরবেশি কিছু না।
৩. আগেই জানা গেছে নরতক্ সুলায়মান একটা শূন্য উপত্যকায় পৌঁছেছে। শূন্য প্রান্তর না। বন্ধ কাঠামো। এখন সে একটা বেঞ্চে বসে আছে। বসে বসে সে দেখে সন্ধ্যা নামছে। সে একটা অন্ধ ভূত যেন। তার চিন্তায় শূন্যতা ছাড়া, অন্ধকার ছাড়া আপাতত কিছু নাই। তবু সে খেলে যায়। খেলাটার নামই হয়ে যায় ভূত-খেলা। চূড়ান্ত অর্থহীনতায় আক্রান্ত সুলায়মান।
৪. অর্থহীনতা যে কোনো অস্তিত্বকে অপ্রয়োজনীয় করে তোলে। অর্থের প্রতি আনুগত্য তাই অস্তিত্বের সার্থকতা নিরূপণের উপায়। সুলায়মান বোঝে, যেহেতু সে কোনো নির্দিষ্ট অর্থের প্রতি দায়বদ্ধ নয় (যেমন এই কাজের অর্থ ভালো কাজ, কিংবা ওইকাজের অর্থ খারাপ কাজ, মোটাদাগে) - সেহেতু, সে নিজের কোনো প্রয়োজনীয়তা খুঁজে পায় না। সামাজিক সম্পর্ক অর্থের উপর দাঁড়িয়ে থাকে। কিছু মৌলিক অর্থের অপসারণ সম্ভব নয়। এই উপলব্ধি হয়।
৫. সেমিওটিকস এর জনক ফার্দিনান্দ দি সস্যুর চিহ্নের একটা কাঠামো দিয়েছেন। তিনি ডায়াডিক সাইন বা চিহ্নের ব্যাখ্যা দেন। একটা সাইন বা চিহ্ন হচ্ছে সিগনিফায়ার ও সিগনিফায়েডের দ্বিতল কাঠামো। এই কাঠামো থেকে আমরা অর্থ উদ্ধার করি। অর্থের ওলটপালট হলেও কাঠামো থাকবে। অস্তিত্বের অর্থোদ্ধার করতে কাঠামোতেই ফিরে আসতে হবে। ৫ মূলত ৪ এর সম্প্রসারণ।
৬. আপনার সাথে একমত।
আগোছালো রচনাটি পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন