__নিয়ম জানা আছে? বগা, নিয়ম জিগায়। জানোস নিহি? কইয়া দে জানি ।
দুইটা লোক চলে যায়। একজনের নাম বগা।
__যেতে হবে আমারও, যেতে যেতে এক পর্যায়ে বেরিয়ে যাব। ওই দূরে। হলের পর হল, দরজার পর দরজা। যেতে যেতে পেরিয়ে যাব। ওই দূরে মাঠ। রোদ খাবি খায়। গরু ঘাস। এইখানে না। এইখানে মিউজিয়ামে থকথক করে সবুজ বাতি। নিভে যায় সময়-সময়। পরিত্যক্ত পাবলিক টয়লেটের মতো। ঘিরে থাকে। ঘাড় চেপে ধরে দেখায় একেকটা ইউরিনাল। কতগুলা ন্যাপথলিন মার্বেলের মতো ঘুরে। ক্ষয়ে ক্ষয়ে ঘুরে। একসময় গলে বের হয়ে যাবে। দূরে মাঠে রোদের সঙ্গে মিলে যাবে। আর আছে একটা ম্যাচের বাক্স। সে নশ্বর নয়। তবে সামান্য ভচকানো।
__আমি একটা লম্বা লোক। নিয়মটিয়ম জিজ্ঞাসা করি। বেতন পাই মাসে। কাজ করি তাই মিউজিয়ামের দরজায়। একথায় দ্বিমত নাই, ডাক আসলে একদিন আমাকেও যেতে হবে। তো, এইখানে অনেক কিছু লেখা। সব নাকি পড়ে শুনাতে হয়। যারা যারা যেতে চায়, তাদের। নানান সাবধানবাণী। আচরণবিধি। ইত্যাদি। আজকে একটা লোক আসল। সে বলল নিয়ম নাকি সব জানে। বললাম, জানলে বলেন দুয়েকটা। সে বলে, পশুদের থিয়েটারে একটাই এক্সিট থাকে। - ফায়ার এক্সিট। বলে কী! এমন নিয়ম তো পড়ি নাই!
__আমি বললাম খুঁজেন। লম্বা লোকটা তার নিয়মের খাতা খুলে বসে গেল। আর আমি এই ভিতরে। গলে গলে বেরিয়ে যাব। দূরে মাঠে। রোদ খাবি খায়। গরু ঘাস। ঘাস ফড়িংকে উড়তে শেখায়। বলে - যাও, যেখানে-সেখানে যাও। এইখানে না। এইখানে টানা ৭০টা হল পার হয়ে তারপর আসে এক্সিট। নির্জন শীতল সেইসব ঘর। আমি প্রথম মানুষের দেখা পাই ৫৫ তে গিয়ে। সে বলল, কি দাদা ম্যাজিক রিয়াজম নাগচে। তাই বুঝি? হ, ২ ট্যাহা দিয়া মেজিক দ্যাহন যায়, হেইডাই তো মেজিক রিয়ালিটি। আমি ২ টাকা দিয়ে ঢুকি নাই। নশ্বর থেকে ঈশ্বর হতে হলে এই মিউজিয়ামের ভেতর দিয়ে ওই মাঠে যেতে হয়। এই মাত্র।
__লম্বা লোক বাইরে দাঁড়িয়ে থাকি। বিকাল ৫ টায় মিউজিয়াম বন্ধ করে দেই। বাড়ি চলে যাই। আমার দেখা আর পাবেন না। সবশেষ সংবাদ - মিউজিয়ামের ভিতরে ২ মানুষ কথাটথা বলে। তারা ২জন লম্বমান খর্জুর বৃক্ষের সামনে ফিসফিস করে হয়তোবা। এইখানে বৃক্ষকে জারানো হয়।
__বিকাল ৫টা হবে। আলো একবারে গেল। এখন ভালো লাগে। হল নম্বর ৫৯। আলো আসছে কোথা থেকে এই প্রশ্নের উত্তর পাচ্ছি না। হে গোলাপের উপর শুয়ে থাকা বিষণ্ণ সাপ, তোমার চামড়া থেকে বিচ্ছুরত কি?
আমি সাপ। হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস হিস
হিস্ট্রি অফ ন্যাচারাল সায়েন্স মিউজিয়ামের মূল উদ্দেশ্য মানুষকে বোঝানো যে তারা শ্রেষ্ঠ। সুতরাং আমি শ্রেষ্ঠ। এইটুক বুঝে তবেই ওই মাঠে গেলে শান্তি। যেখানে রোদ খাবি খায়। গরু ঘাস। ঘাস ফড়িংকে উড়তে শেখায়। বলে - যাও, যেখানে-সেখানে যাও। ব'লে যেও না। ব'লে গেলে, চলে যাবার কোনো প্রয়োজন থাকে না।
__৬৩ তে মূলত গোল একটা ঘর। তাতে একটা কাঁচের বাক্স। প্রকাণ্ড। তাতে ফরমালিনের দ্রবণে (৫%) ভাসছে মৃত হাঙর। দ্য ফিসিকাল ইম্পসিবিলিটি ইন দ্য মাইন্ড অফ সামওয়ান লিভিং। এই নাম। ৬৪ তে একই দেখতে আরেকটা বাক্স। একই প্রকাণ্ড। তাতে কীসের দ্রবণ জানি না। ভাসে একটা কাঠের(?) হাঙর। অ্য ডেড শার্ক ইস নট আর্ট। দেকেচেন বিষয়টা। কি ঐন্দ্রজালিকতাসমৃদ্ধতাবোধসম্পন্নতাবাহী শিল্প। সহচর বকে।
এই সব পার হয়ে সবশেষে আসলাম ৬৯ এ।
__আমি ফ্রারসু। শিল্প টিল্প করি। মিউজিয়ামটা যে কোম্পানির তারা আমাকে কমিশনড করেছে ৭০ নম্বর কামরার জন্য। এখান রয়েছে একটা কুয়া। শরীরটা অনেকটা (*শর্তসাপেক্ষ) না ঝুঁকিয়ে এর ভিতরে কি আছে দেখা সম্ভব না। আর আপনি যদি শরীরটা অনেকটা (*শর্তসাপেক্ষ) ঝুঁকিয়ে এর ভেতর তাকান তবে দেখবেন এতে আছে কিছু নিরীহ জলজ পোকাটোকা। আপনি আরেকটু ঝুঁকলে - ঝুঁকতেই হবে - আপনার এই যাদুবাস্তব ভ্রমণের ইতি টানা হবে। একটা হাঙর এসে আপনার মাথাটা স্রেফ ছিঁড়ে নিয়ে চলে যাবে কুয়ার গভীরে । সেখানে প্রচুর অন্ধকারে। পোকাগুলো উদগত রক্তের দারুণ ভক্ত। আর আমি আপনার বাকি বডিটা - থাক জেনে কাজ নাই।
সমসাময়িক, একটা ছোট্ট নীল ফ্রক ভেসে ওঠে। একটা দাঁতাল ব্যঙ লাফ দেয় ছোট। আর অনেকগুলো রঙিন বুদ্বুদ। তারা নিঃশব্দে বিস্ফোরিত হয়। আর কিছু কী হওয়ার কথা?
__ফ্রারসু তো ভালোই একটা খেল দেখাইলো রে। হ্যাঁ? আমাগো ফ্রারসু বলে বিরাট কারিগর। হ্যায় কইসে, শিল্পীর কুনু দায়িত্বশীলতা নাই।
__এইভাবে আমাদের রক্ত পোকারা খেয়ে নেয়। ঘাস বলে ফড়িং, আজকের দিনটা থেকে যা না হয়।
--------------------------------------------------------------------
Damien Hirst এর ইনসটলেশনের ছবি। ইনসটলেশনটি নাম : school: the archaelogy of lost desires, comprehending infinity, and the search for knowledge. ছবিগুলো ব্যবহারের সদয় অনুমতি দিয়েছেন মার্কিন ফটোগ্রাফার Lian .
মন্তব্য
ঘুমানোর আগে একটু সচলে ঢুঁ মারতে আইলাম ঢুলু ঢুলু চোখে, আপনের এই লেখা পড়ে মাথা আউলায়া গেলো। পুরাটা পড়ি নাই, আধাটুকুতেই।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
কী অর্থে আউলাইল? ঢুঁ না দিয়া ডাইরেক ঢুঁসা দিতেন
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বুঝতেই তো পারলাম না!!
কেমন পরাবাস্তব মত লাগল।
- মুক্ত বয়ান
মুক্ত বয়ান, পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
পুরাই অ্যান্টিম্যাটার হয়া গেলাম নাকি
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ছবিগুলো না দিলে হতোনা?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ডেমিয়েন হার্স্ট আর্টিস্ট হিসেবে আমাকে মুগ্ধ করেন। তিনি মানবিক (সহজাত) নৃশংসতা ও তার প্রতি মানুষেরই কৃত্রিম অস্বীকার - এই দ্বন্দ্বকে প্রায়শই তার উচ্চমূল্যের ( উল্লেখ্য তিনি পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী আর্টিস্টদের একজন) ইনসটলেশন আর্টের বিষয় করেন।
তার একটি প্রখ্যাত কাজ, The Physical Impossibility of Death in the Mind of Someone , আমাকে বিশেষধরণের ভাবনার অনুপ্রেরণা দেয়।
দুঃখজনক হল, অনেক সময় উত্তরাধুনিক শিল্প ও তার নানা তত্ত্বীয় উপকরণ বিবিধ অমানবিক কাজ কারবারের পক্ষে সাফাই গাওয়ার অস্ত্রে পরিণত হয়ে থাকে। আমাদের দেশেও এই ধরণের উত্তরাধুনিক ঢাল ব্যবহার করে ধর্ষণকলার চর্চা হয়ে আসছে। আমার গল্পটার বিষয়ও এই।
_________________________________
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ঢ়ৈষূবাচ
---------------------------------------------------------------
অভ্র আমার ওংকার
হুঁ
_________________________________
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
গল্প না আবহ?
যাই হোক চমৎকার
মন্তব্য ভাবাল। আবহই।
অনেক ধন্যবাদ।
_________________________________
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন