উত্তরের এই শহর যখন ছাড়ি তখন অনেককিছু বাকি। সুলতানি আমলের সুবিখ্যাত মসজিদ। এখানকার কুখ্যাত সীমান্ত। সুমিষ্ট ফলের বাগান। ছয়মাসে দেখা হয় নাই অনেক কিছুই। হবেও না আর। খালি ভোরবেলা ছাদে উঠে দেখলাম একটা বিরাট পুকুর এই বাড়িটার ঠিক পিছনেই। কখনো জানি নাই। কয়েকটা হাঁস ভাসে সেইখানে। শেষদিন ভোরবেলায়।
টোস্টারটা টিং শব্দ করে পাউরুটি বের করে দিল। পত্রিকা আসতে ১০টা বাজে। গতকালের পত্রিকা দেখতে দেখতে মাখন লাগাই। চিনি। কয়েকটা দানা বাসী হেডলাইনের উপর পড়ে।
ব্যাগ গুছাতেই দুপুর হয়ে যায়। ছয়মাসে অনেক কিছু জমে গেছে। বেশিরভাগই বইপত্র। নিতে হবে। একটা ব্যাগ নিয়ে আসছিলাম, এখন যাওয়ার সময় কিছুই আঁটে না। জামাকাপড় কিছু ফেলে যাব ভাবলাম। রমিজের গায়ে লাগতে পারে। ওর ছেলেটার অবশ্য গায় গতরে বড়। তার গায়েও লাগতে পারে।
দুপুরে দাওয়াত। পোলাউ। মুরগির মাংস। লোকাল ডিলার সন্তুষ্ট রাখতে চায়। দাঁতের নিচে কিচকিচ করে উঠে এলাচির দানা। বিরক্তি নিয়ে ফেরত আসি। রমিজ বেবিট্যাক্সি নিয়ে আসছে। স্টেশন পর্যন্ত।
ছয়মাসে কাজের কাজ কিছুই হয় নাই। অফিসও জানত হবে না। শাস্তি বলা যায়। শাস্তিই তো। একটা লোকও নাই যার সাথে কথা বলা যায়। ইন্টারনেটে আমি তেমন ভালো না। রাত জাগতেও পারি না। তাই বিকাল বেলা বের হয়ে হাঁটতে হাঁটতে গ্রামের দিকে চলে যেতাম। ইঁটভাটা আছে কয়েকটা। তারপর আরো কয়েকটা। কখনো এর বেশি যাই নাই।
রমিজকে কয়েকশ টাকা দিলাম। পুরান জামাটামা, আর একটা জুতা। ব্যাগে জায়গা হয় নাই। বিকাল ৫টার সময় স্টেশনে। ট্রেন লেটে নাই। ভালো কথা। প্লাটফর্মের শেষ স্টেশনের গেট। বের হতে গেলে টিকেট দেখাতে হয়। ফ্রিতে ট্রেন চড়া একজনের সাথে টিকেট চেকারের লেগে গেছে।
সময়মত ট্রেন আসে। অন্ধকার নেমে যাওয়ায় চলন্ত ট্রেন থেকে চোখে পড়ে না কিছুই। সুলতানি আমলের সুবিখ্যাত মসজিদ। এখানকার কুখ্যাত সীমান্ত। এবং সুমিষ্ট ফলের বাগান।
এই বাজে জায়গায় আর কখনো আসা হবে না। এখানে নিজের সঙ্গে ছয় মাস কাটাই আমি।
মন্তব্য
সুন্দর হয়েছে।
আপনার লিখাটা পড়তে পড়তে কেন জানি জহির রায়হানের সময়ের প্রয়োজনে গল্পটার কথা মনে পড়ে গেল।
ভালোই শাস্তিকাল গেলো তবে আপনার! লেখাটা পড়ে কেন জানি মনটা উদাস হলো
-আয়নামতি
চমৎকার আত্মকথন!
------------------------------------------------------------------------------------------------------------------------
আমি এক গভীরভাবে অচল মানুষ
হয়তো এই নবীন শতাব্দীতে
নক্ষত্রের নিচে।
আমি দিনলিপির মত পড়লাম। ভালো লেগেছে। বেশ ঝরঝরে লেখা
______________________
হামিদা রহমান
দেরিতে পড়লাম। কিন্তু ছোট্ট স্মৃতিচারণের মত অণুগল্প সুন্দর লাগল।
দেরিতে পড়লাম।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
ধন্যবাদ সব পাঠককে। কিসু লিখতে হবে, লিখতেই হবে তাই লিখসি। একটা ব্লকের মধ্য দিয়া যাইতেসি। বাস্তবতা কোনো কিসু কল্পনা করতে দিতেসে না।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বাহ!!
নতুন মন্তব্য করুন