এই বাসায় ঘর ২টা। একপাশে আমি বসে আছি। আরেকটায় কী বলা যায় না। বেড়ার ফাঁক দিয়ে নারীকণ্ঠ বুঝা যায়। নারীকণ্ঠের সাথে কিছু রান্নার ধোঁয়া। বেড়ার ফাঁক দিয়ে এইদিকে আসে। এই ঘরে ১টা খাট। এর উপরে আমি। ১টা পড়ার টেবিল। টেবিলে কয়বছর আগের ক্যালেন্ডার। শুক্রবার ২৬ এপ্রিলে গোল দাগ কাটা। নিচে জলপ্রপাতের ছবি । এই সময়: বেড়ার ঐপাশে রান্নাঘর এই বিষয়ে আরো নিশ্চিত হই। নারীকণ্ঠ আর কাউকে জানায় পোলাউ গলে গেছে। আরেকটা নারীকণ্ঠ - কিশোরী সম্ভবত - বলে, পানি বেশি দেয়ায় এই অবস্থা।
আমি আসলে এই বাসায় মেহমান না। আত্মীয় বন্ধু কিছুই না। বিশেষ কাজে আগমন। ফরিদ উদ্দিনের এই ৫ কাঠা জমি পার্টির জন্য কিনতে হবে। কাঠায় ৫ শ করে আড়াই হাজার কমিশন দিবে ফরিদ উদ্দিন। (এছাড়াও শান্তিনিকেতন হাউজিংয়ের মাসকাবারি ১১ হাজার আমার বান্ধা)। শান্তিনিকেতন ঘিরে ধরে আছে এইরকম আরো ৮-১০ টা প্লট। এগুলো আগে আরেক কোম্পানির থেকে কিনেছিল প্লটগুলোর মালিকরা। সেই কোম্পানি এলাকা থেকে গুটানি দিয়েছে। তাদের না বেঁচাগুলো গছিয়ে গেছে শান্তিনিকেতনের হাতে। বেঁচাগুলোর জন্য এই ইমতিয়াজের ডাক পড়ে, যাকে ফরিদ উদ্দিন বাজারে বা অন্য কোথাও যাওয়ার আগে এই ঘরে বসিয়ে রেখে গেছে। অন্যঘরে পোলাউ রাঁধতে বলে।
ফরিদ উদ্দিন জানে তার পর্চা ঠিক নাই। শুধু তার না। আসলে এখানকার সবকয়টা প্লটের মালিকানাই বাতিল হয়ে যেতে পারত। সাবরেজিস্ট্রি অফিসে মালিকের নাম ভিন্ন - গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার। রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। কিন্তু জমি সরকারের। আল-হারেম হাউজিং কোম্পানির মধ্যস্থতায় এই অনাচার মিটলেও, সাবরেজিস্ট্রি অফিস মাঝেমাঝে পকেট থেকে কুমিরের বাচ্চা বের করে। অবশ্যই ফরিদ উদ্দিনের পিতা (মৃত) রইছ উদ্দিন এতো কিছু জানত না। সে জানত রাজধানী থেকে মাত্র ১ ঘণ্টার পথ। কেবল গাড়িতে (বা বিমানে) জেট ফুয়েল ভরতে হবে। রইছ উদ্দিন মরার আগে জেনেছিল আল-হারেম তাকে অনেক জেটফুয়েল ভরে ডাইরেক্ট বেহেশতে পাঠিয়ে দিচ্ছে। তিনি মরেন। রেখে যান কাকে কাকে আমি জানি না। তবে নি:স্ব (আনুমানিক) ফরিদ উদ্দিন তার একমাত্র অথবা বড় ছেলে সন্দেহ করি। আরো সন্দেহ পোলাউ রান্না করছে তার স্ত্রী। সঙ্গত দিচ্ছে কন্যা। গলা পোলাউ নিয়ে আপাতত সমস্যায়।
এইখানে শান্তিনিকেতনের সমস্যার কথাও বলি। এমনিতে কয়েকটা লাত্থি মেরেই ফরিদ উদ্দিনের মতো ‘অবৈধ’ মালিকদের তাড়ানো যায়। কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে তারা অবৈধ হলে শান্তিনিকেতনও বৈধ থাকে না। খামাখা হাউকাউ হবে। তার উপর সাংবাদিক। খরচাপাতি বাড়ে। এর চেয়ে আপোষের খেলায় সাশ্রয়। আর আমি আপোষবিদ ইমতিয়াজ মাঠে নামি। ফিমাসে ২টাকে হাড়ুড়ুড়ুড়ু করতে করতে দাগের বাইরে ফেলি। ফরিদউদ্দিনকে দিয়ে মাস-বউনি।
সে বাজার থেকে ফিরে। বগলে কোকাকোলা হাতে শসা। আরেক হাতে কাগজপত্রের ফটোকপি। খাওয়ার পরে খোলা হবে। এখন ভিতর থেকে একটা মেয়ে এসে শসা আর কোকাকোলা নিয়ে যায়। এরপর আরেকটা মেয়ে এসে ছোট গ্লাসে কোক ঢেলে দিয়ে যায়। ফরিদ উদ্দিন জানায় তার দুটি কন্যা। দুইটাই ইন্টার পাশ। একটার বিয়ে ঠিক। আরেকটার জন্য খোঁজা হচ্ছে। জমিটা ছেড়ে দিলে কাজটা সহজ হয়। আমি একটু ভাবি। (মৃত) রইছ উদ্দিনের যদি এই প্লট কেনার টাকা থাকতে পারে (খুব কম না সেটা), তবে তস্য পুত্র ফরিদ উদ্দিনের এই দুরবস্থা কেন? প্রশ্নটা আমার চোখে দেখতে পেয়েই সম্ভবত ফরিদ উদ্দিন বলে, সবই নসিব। তার উপর আমার স্ত্রীও মরে গেল, ফরিদ উদ্দিন যোগ করে। কোক দিয়ে যাওয়া মেয়েটা, যার নাম রিফাত (ছদ্মনাম), তার বিয়ের জন্য পাত্রের খোঁজ, কথাপ্রসঙ্গে পুনরায় জানা যায়। কিছুক্ষণ পরে তারাও গলা পোলাউ খেতে যোগ দেয়। টেবলটা সরিয়ে আনা হয়েছে খাটের আরেক পাশে। অন্যদিকে ২টা চেয়ার জোড়া দিয়ে ডাইনিং টেবিল। রিফাত দরিদ্রঘরের বিপদাপন্ন যুবতী। আমি উচ্চশিক্ষিত অতিথি। নানা চিন্তা জোড়া লাগাই মাথায়। আপনারও লাগান। ভাবতে ভাবতে ফরিদ উদ্দিনকে (রুটিন) জিজ্ঞাসা করি জমি বেঁচতে হবেই? সে বলে এছাড়া উপায় নাই। রিফাত অনেকক্ষণ কোনো কথা বলে নাই। এইবার বলে, করম শেখের কাছে অনেক দেনা। করম শেখ!
ক্লাইমেক্সের বদলে:
দেখতেই পাচ্ছেন গল্পটা শেষে দিকে। এইখানে আমরা ক্ষিপ্রগতিতে স্ক্রল করে এন্ডিংয়ে চলে যাচ্ছি। তার আগে, করম শেখ কে এই বিষয়ে ধারণা দেয়া দরকার। সে স্থানীয় বাজারের বড় মহাজন। কেবল জুয়ারিদেরকেই টাকা ধার দেয়। তাও ছোটখাট জুয়ারিদের দেয় না। আসলে ছোটখাট জুয়ারিরা তাকে চিনেই না। আমি চিনি, কারণ জমির দালালকে (যদিও এলএলবি) এইসব লোকের খোঁজ রাখতেই হয়।
মাসখানেক পর, ফরিদ উদ্দিন ও তার যুবতী কন্যাদ্বয়ের ফলোআপ করি। এরমধ্যে ফরিদকে জুয়ার আড্ডা থেকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। কেস শক্ত কারণ একটা মার্ডারও হয়েছে ঐখানে। রিফাত চা বানায়। ঠুকঠুক ঠুকঠুক শব্দ হয়।
প্লটটা ভালোয় ভালোয় হাতে আসে। ক্লাইমেক্স ছাড়াই ...
মন্তব্য
শালার মারাত্মক!
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
একেবারে ঠিক কইছেন অনার্যদা।
অলস সময়
তোমাগো এই জেন্ডার বায়াসটা কি ভালু?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
খারাপ হইলে খারাপ। গল্পেরা আন্দোলন করে না
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
জুয়া???হাহাহা............
১৬ তারিখ সন্ধ্যার একটা কথা মনে পড়ল।
ভালৈসে। জবানী জটিল লাগছে।
অলস সময়
গল্প বলার ভঙ্গি দারুন
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ধন্যবাদ
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
জটিল হইছে!
"ক্লাইমেক্স ছাড়া প্লট", নামটা একেবারে যথার্থ হয়েছে। ভালো লাগলো।
সিরাম হইছে
------------------------------------------------------------------
এই জীবনে ভুল না করাই সবচেয়ে বড় ভুল
রু, আয়ানামতি1, আব্দুর রহমান ধন্যবাদ
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
তুমুলৈছে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ক্লাইমেক্স নাই কে বললো!
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আগাগোড়া তো ক্লাইমেক্সেই রাখলেন।
মাথার ভেতরে সকাল থেকে ঘুরতেছিল আরেক ক্লাইমেক্স, সাথে এটা যোগ হয়ে দুর্ধর্ষ লাগলো !!!!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনি খুবই ভালো গল্পকার, খুবই। নানারকম এক্সপেরিমেন্টের পর আপনার একটা সিগনেচারস্টাইল আসুক দ্রুত... পাঠক হিসেবে এটাই কামনা।
আমাদের রেলগাড়ির ইতিহাসের চাইতে এটা বেশি ভালো লেগেছে।
সুহান আমার সিগনেচারের থেকে গল্পের নেচারটা বেশি ইম্পর্ট্যান্ট। নাকি?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আমার কাছে সিগ্নেচারটাও কম ইম্পর্ট্যান্ট না।
তর্কের খাতিরে বলতেছি, সুহান। সিগনেচারের চিন্তাটা কিছুটা ব্যক্তিকেন্দ্রিক প্রবণতা নির্দেশ করে। এখন বলতে পারো, তাইলে, ব্যক্তি বাদ্দিয়া লেখক হয় কি? হয় না। কিন্তু লেখায় লেখকের চাইতে ইম্পর্ট্যান্ট আরো কিছু থাকা উচিৎ। মানে আমার উচিৎ মনে হয় আরকি।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভাষা নিয়া খেলছেন, ভালো।এই খেলাটা ভালো লাগে। কিন্তু অভ্যাসের ভেতর ঢুকিয়েন না।
গল্প ভালো। এসব বিষয় বা প্লট সবার মাথায় খেলে না। আমারতো কোনদিনই খেলে না। আমি খালি ঘরের ভিত্রের প্যানপ্যানানি দেখি। দেখার চোখটা আর বড় হলো না। আপনে দেখতে থাকেন। লেখতে থাকেন। আমি আপনার লেখা পড়ে দেখতে শিখি।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
ভাষাই সম্বল, নাকি?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আচ্ছা
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
প্রথমে (ঐ) এর ব্যবহার, তারপর বগলে কোকাকোলা হাতে শসা , গলা পোলাউ - এইসব ছোট জিনিস গল্পের প্রাণ।
ফাটায় দিছেন, জা ঝা - ইত্যাদি ইমো ব্যবহার করতে পারতাম। করলাম না।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ ফাহিম।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
লেখার এই ধরনটা আমার খুবই পছন্দ। রেললাইন, ট্রাফিক সিগন্যাল ইত্যাদি না মেনে এদিক-সেদিক দৌঁড় দেয়, মজা লাগে। লেখকের কাছে প্রশ্ন, এটা কি কেয়ারফুলি কেয়ারলেস হওয়া ?
দারুণ গফ।
কেয়ার?
আজকের যুগে কে আর?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনার নজর অসম্ভব শার্প, খুঁটিনাটি জিনিসও দৃষ্টি এড়ায়না। এই ব্যাপারটা ভাল লাগে।
--------------------------------------------
যদ্যপি আমার গুরু শুঁড়ি-বাড়ি যায়
তথাপি আমার গুরু নিত্যানন্দ রায়।
উদার মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞতা।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ওরে রে! পড়ে একেবারে মুগ্ধ হয়ে গেলাম!
ধন্যবাদ স্যর
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
হুম, এইরকম তোমার মতন... ঐ যেমনটা আনন্দী, ফাহিম হাসান, আলবাব ভাই বললো (ঐ) ... ভালো লাগলো।
ও, আর নামকরণটায় -
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ধন্যবাদ (ঐ)
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
নতুন মন্তব্য করুন