[১]
আনন্দবাজারিপনা বি. ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের বুদ্ধিবৃত্তিক সাফাই। বিণ. উক্ত সাফাইয়ের লক্ষণ নির্দেশক।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে বাংলাদেশের একজন 'গ্রাম্য' ও 'দরিদ্র' তরুণের নৃশংসভাবে নিগৃহিত হওয়ার দুর্বহ অশান্তিকর চিত্র বাতাসের আগে ছড়িয়েছে অন্তর্জালে পাঁচ দিন হল। এনডিটিভি নামক ভারতের যে জাতীয় প্রচারমাধ্যমে এর 'প্রথম প্রকাশ' ঘটে সেখানে, সন্দেহ নাই, ঐ ঘটনার বর্ণনা প্রধানত নিন্দাজ্ঞাপক ছিল। কিন্তু ভারতের বাংলা দৈনিক আনন্দবাজার এই খবরটা প্রথম ছেপেছিল এই শিরোনামায়: 'বিএসএফের অত্যাচার নিয়ে মুর্শিদাবাদে আলোড়ন'। কীয়ৎকাল গেলে তারা অনুধাবন করে এই ঘটনা মুর্শিদাবাদ মাপের না। ত্বরিৎ নিন্দাজ্ঞাপনে সামিল হয়ে তারা ছেপে ফেলে সম্পাদকীয় ধিক্কার; এতে অস্বাভাবিকতা নাই। আবার এটাও অস্বাভাবিক না, ঠিক তিন দিনের মাথায় এই পত্রিকা নিন্দাজ্ঞাপনের সাময়িক ভণিতা ঝেড়ে ফেলে তাদের বর্ণাশ্রমিক এবং সাম্প্রাদায়িক চরিত্রানুগ মন্তব্য প্রতিবেদন ছাপবে। 'মারের ছবি প্রচারে পাক-হাতই দেখছে নয়াদিল্লি' শিরোনামার ঐ জল্পনায় নয়া দিল্লির গোয়েন্দা রিপোর্টের বরাত দিয়ে যে উদ্বেগের প্রকাশ ঘটেছে সেটা 'মার' নিয়ে না, স্পষ্টতই 'মারের ছবি প্রচার' নিয়ে। একটা নিম্ন-মাঝারি মানের প্রাদেশিক পত্রিকার প্রায়-অসমর্থিত প্রতিবেদন নিয়ে আমাদের না ভাবলেও চলত যদি না সেটা সাম্রাজ্যবাদী ভারতের সাম্প্রতিক লক্ষণগুলিকে ফুটিয়ে না তুলত।
একথা অসত্য না, ভিডিওর প্রচারে ভারত-বাংলাদেশে তথাকথিত 'সম্পর্ক' যথেষ্ট বিচলিত হয়েছে। এবং এই বিচলন সীমান্তে নতুন করে উত্তেজনার সঞ্চার ঘটিয়েছে। পাকিস্তান, পাকিস্তানের নিয়ন্তা গোয়েন্দাসংস্থা ও তাদের পোষা ইসলামি জঙ্গিদের পক্ষে এই ঘটনা অনুকূল, একথাও অগ্রহণযোগ্য না, বিশেষত যখন, বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারকাজ চলমান। এমনকি আনন্দবাজারের প্রতিবেদন অনুযায়ী এই ভিডিও 'প্রচারে' তাদের 'পাক-হাত' থাকার বিষয়টাও অপ্রমাণিত কিন্তু নিতান্তই অসম্ভাব্য না। কিন্তু এই আনুমানিক সাংবাদিকতা (?) বাদ রেখে আমরা যদি সহজবোধ্য বিষয়গুলিতে নজর দিই, তাহলে দেখব, অদৃশ্য হাত বিষয়ক এই আস্ফালনে যা আড়াল করে তা হল বিএসএফের 'দৃশ্যমান' হাত। যদিও বিএফএফের হস্ত (ও দণ্ডের) প্রতি প্রতিবেদকের মুগ্ধতার উপহার হিসেবে শুয়ে আছে এই বাক্য: 'বিএসএফের জওয়ানরা কাউকে মারলেও,তা সকলের সামনে করবেন না'। প্রতিবেদনের সবচেয়ে তাৎপর্যবহ অংশ হল এই যে, সেখানে পাকিস্তানের পাশাপাশি সন্দেহ জানানো হয়েছে 'বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠনগুলি'র প্রতিও। নিরীহ বিচারে,এমনকি এই সন্দেহও (অর্থাৎ 'বাংলাদেশের মৌলবাদী সংগঠন' ভারত-বাংলাদেশের সম্পর্ক 'বিনষ্টে' সক্রিয়) ভিত্তিহীন না। কিন্তু এই জ্ঞান আামাদের আনন্দবাজারের কাছ থেকে নেয়ার প্রয়োজন নাই। আমরা কেবল দুইটা জরুরি বিষয় সোজাসাপটা বলতে চাই।
ক. নির্যাতন যাকে আঞ্চলিক পত্রিকার আঞ্চলিক ভাষার কল্যাণে অথবা গুরুতর অপরাধকে লঘু করে তুলবার আকাঙ্ক্ষায় 'মার' বলে ডাকা হচ্ছে সেটার দায় 'সংস্থা' বিএসএফ-এর। আনন্দবাজার বুঝানোর চেষ্টা করছে বিএসএফের 'নিচুতলার কর্মী'দের দিয়ে এই কাজ 'করানো হয়ে থাকতে' পারে। আমরা মনে করি না, এইধরণের অশালীন আনন্দবাজারিপনা 'সংস্থা' বিএসএফকে বাঁচানোর পক্ষে ন্যূনতম ভূমিকা রাখে।
খ.আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, এবং যে বিষয় নিয়ে প্রধানত এই পোস্ট – অনেকখানি পাকিস্তানের সঙ্গে অল্প একটু বাংলাদেশ ঢুকিয়ে দেয়ার চেষ্টা ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের একটা প্রধান লক্ষণ। কিছুদিন আগে পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন 'বাংলাদেশ পাকিস্তানের সীমান্তে'। এই বিভ্রান্তির হেতু ইংরেজির দুর্বলতা এইরকম মানা যায় না এই কারণে যে বাংলাদেশ','পাকিস্তান' এবং 'সীমান্ত' এই তিন শব্দ যতরকম সঠিক ইংরেজিতেই সাজানো যাক না কেন সেটা সত্য বাক্যের জন্ম দিবে না। বাংলাদেশ বিষয়ে অজ্ঞানতা অথবা নির্জ্ঞানে (unconsciously) বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অনুবর্তী ভাবা উভয়ই সাম্রাজ্যবাদী আত্মম্ভরিতার উদাহরণ। কিন্তু আমরা দেখব, আত্মম্ভরিতার ছাড়াও এতে আরো কিছু গুরুতর সাম্রাজ্যবাদী লক্ষণের প্রকাশ ঘটেছে।
[২]
বিএসএফ এর মতন রাষ্ট্রীয় বাহিনী, আনন্দবাজারের মতন প্রাদেশিক দৈনিক এবং মমতা বন্দোপাধ্যায়ের মতন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী (এবং বিশ্বব্যাপি ছড়ানো ভারতীয় পুঁজির অপরাপর কর্মচারিকুল/ পরোক্ষ অংশীদার) - সকলের ভাষায় যে সাযুজ্য খুঁজে পাওয়া যায় তার গোড়ায় বৃহৎ এই রাষ্ট্রের সাম্রাজ্যবাদী দর্শন। বাংলাদেশের সাপেক্ষে এই দর্শনের তাৎপর্যপূর্ণ দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করতে হলে সাম্রাজ্যো সামগ্রিক ধারণা নিয়ে কিছুটা ভূমিকার প্রয়োজন আছে। (প্রায় সকলের জানা বিষয়গুলিই পুনরায় বলছি গুরুত্ব বিবেচনায়; আশা করি ধৈর্যচ্যুতির কারণ হবে না।)
সাম্রাজ্যের ধারণা দিয়ে শুরু করাটা কঠিন কারণ সাম্রাজ্যের ধারণা অতি 'ব্যাপক'। ঠিক সেই ব্যাপকবিধ্বংসী মারণাস্ত্রের মতন, যেগুলি খোঁজার নাম করে বর্তমান শতকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অন্তত দুইটা দেশ দখল করেছে,এবং আরো কয়েকটা দখলের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরাকে ইরানে উত্তর কোরিয়ায় মারণাস্ত্র খুঁজে ফিরেছে বা ফিরছে,কারণ যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্রদের রাষ্ট্রভাবনার একেবারে বীজের ভিতরে মারণাস্ত্র ও তৎসম্পর্কিত ধারণাবলীর অবস্থান। সুতরাং, দাবি করি,সাম্রাজ্যের অতি ব্যাপক ধারণার একটা দিক অন্তত এই: সাম্রাজ্য তার শত্রুকে নির্মাণ করে নিজের আদলে। শত্রুকে সংজ্ঞায়িত করে তারা 'সন্ত্রাস' দিয়ে কারণ, তাদের কাছে ক্ষমতা জানান দেয়ার সর্বোৎকৃষ্ট পরিভাষার নাম সন্ত্রাস।
চলতি শতকে সাম্রাজ্যের ধারণায় কিছু নতুন দিক অবশ্যই যোগ হয়েছে কিন্তু পুরাতন ধারণাগুলির বিলোপ ঘটে নাই। ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদের নতুন পুরাতন উভয় বৈশিষ্ট্যই বিদ্যমান। পুঁজিবাদের সর্বোচ্চ স্তর হিসাবে সাম্রাজ্যবাদকে চিহ্নিত করে গেছেন লেনিন। তার ধারণায় সাম্রাজ্যের কাঠামো শাঁস ও বাহ্যসীমার অন্বয়ের ভিতর দিয়ে নির্মিত। সাম্রাজ্য,সরল প্রস্তাবে, বাহ্যসীমার বৃদ্ধি ঘটায়, সম্পদ শুষে এনে শাঁসকে আরো শাঁসাল করে তুলে। ভৌত অর্থে, ভূমি দখল অর্থে, বাহ্যসীমার বৃদ্ধি ঘটানোর দিন গত হয় নাই সত্য, কিন্তু প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। বাজার সম্প্রসারণ এই সেই কাজ সুলভে করে দেয়। সুতরাং বাজার সম্প্রসারণের নির্দয়নীতি, অপর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের মতনই ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদেরও একটা কেন্দ্রীয় ধারণা।
নতুন শতকে মার্কিন সাম্রাজ্যের বিশ্বস্ত অনুচর হিসেবে নিজেকে উপস্থাপন করে ভারত। 'যুক্তরাষ্ট্র' হিসেবে আগে থেকেই অভ্যন্তরীণ সাম্রাজ্যবাদে হাত পাকিয়ে তোলা ও আশপাশের ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলির প্রতি উচ্চার/অনুচ্চার সাম্রাজ্যবাদী অভিলাষ এই বৈষম্যপ্রবণ রাষ্ট্রটিকে মার্কিন অনুচর হিসেবে উপযুক্ত করে তুলে। স্বাধীনতার অর্ধশতকে ভারতকে পারি দিতে হয়েছে জোটনিরপেক্ষতার শৈশব ফ্যান্টাসি ও রাষ্ট্রায়ত্ত অর্থনীতির কৈশোর। ভারতের সবলত্ব্ এর অন্যথায়-উদযাপিত (otherwise celebrated?) সামরিকানা ও সাবালকত্ব এর ক্রুর মুক্তবাজারিতায় নিহিত। এই সবলত্ব ও সাবালকত্ব ভারতের নতুন পরিচয় গড়ে দেয়। ভারত একাধারে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তরফদার এবং স্বতন্ত্র সাম্রাজ্য।
এই প্রেক্ষাপট মাথা রেখে আমরা ভারতের সাম্রাজ্যবাদী দর্শনের তিনটা দিক নিয়ে আলোচনা করব। এতে সীমান্তনীতির প্রশ্নটা ঘুরেফিরে আসবে। বাংলাদেশের সাপেক্ষে ভারতের সীমান্তনীতির আলোচনায় মূল ভাবনার যোগান দিয়েছেন মার্কিন ভূগোলবেত্তা রিস জোনস। জোনস পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সীমান্তব্যবস্থাপনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বিশদে কাজ করছেন। ভারতীয় সীমান্ত নিয়েও তার একাধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ রয়েছে। তবে জোনসের গবেষণা যে বিশেষ কারণে প্রণিধানযোগ্য সেটা হল তিনি তত্ত্ব ও তথ্য দিয়ে সীমান্তনীতি ও সাম্রাজ্যবাদী অভিলাষের সম্পর্ককে খোলাসা করতে সাহায্য করেন।
[৩]
সাম্রাজ্যবাদী দর্শন ১: ভাল বনাম খারাপের দুনিয়া (বাংলাদেশ কোথায়?)
মার্কিন ও মার্কিন-ধাঁচের সাম্রাজ্যবাদ দুনিয়াকে স্পষ্টভাবে দুইভাগ করে দেখে। এক ভাগ তারা নিজে। আরেক ভাগ বাদবাকি দুনিয়া, যা তারা দখল করতে চায়। এই দখল গায়ের জোরে করে ফেলা অসম্ভব না। কিন্তু কাজটা সহজ দখলদারিত্বকে মতাদর্শিক মোড়কে মুড়ে দিতে পাররে। তারা আদর্শের বিচারে দুনিয়াকে দুইভাগ করে। তাদের বিচারে এ্ই দুইভাগের একভাগে ন্যায় প্রতিষ্ঠিত ও অন্য ভাগে অন্যায়। 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' সুতরাং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও একটি সন্ত্রাসী কাঠামোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। তারা এই যুদ্ধকে ন্যায় ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ হিসেবে প্রচার করে এসেছে। ১১ সেপ্টেম্বরের টুইন টাওয়ার হামলার পরদিন যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার বলেন, 'এই হামলা পৃথিবীর সর্বত্র, মুক্ত ও গণতান্ত্রিক পৃথিবীর উপর'।এর কয়েকমাস পরে টেলিভিশন ভাষণে ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারি বাজপায়ি বলেন 'প্রিয় দেশবাসী,সন্ত্রাসীরা আরো একটা হামলা চালিয়েছে – যুক্তরাষ্ট্রের উপর,মানবজাতির উপর,সভ্য জীবন যাপনের উপর। ভারতকেও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বৈশ্বিক যুদ্ধে সামিল হতে হবে'। কৌতুককর বিষয় হল এই, সভ্যতা/অসভ্যতার ভেদ নির্ধারণ করে দেন সেই দলের প্রধানমন্ত্রী যেই দলের 'সভ্য' গুজরাট গণহত্যার হোতা নরেন্দ্র মোদী।
উল্লেখ্য উগ্র হিন্দুত্ববাদ এবং ভারতের ধর্মনির্বিশেষে বৃহৎ পুঁজিপতিরা একে অপরকে সমর্থন যুগিয়ে যান।গুজরাট গণহত্যার পরের সময়টাকে অরুন্ধতী রায় বর্ণনা করছেন এইভাবে:
Meanwhile, the killers, police as well as civilian, have been embraced, rewarded, promoted. This state of affairs is now considered “normal.” To seal the “normality,” in 2004 both Ratan Tata and Mukesh Ambani, India’s leading industrialists, praised Gujarat as a dream destination for finance capital
যদিও ভারতের একুশ শতকী উগ্র হিন্দুত্ববাদের সাথে মানবিকবোধবিবর্জিত নির্দয় পুঁজিবাদের সরাসরি সম্পর্ক আছে কিনা এই বিষয়ে ম্যাক্স ওয়েবারের প্রটেস্টান ইথিকস আ্যান্ড দ্য স্পিরিট অফ ক্যাপিটালিসমের মতন প্রভাববিস্তারি কোনো কাজ হয় নাই – এই কথা নির্বিঘ্নে বলা যায় মানবিকবোধবিবর্জিত নির্দয় পুঁজিবাদ হালাল করতে একুশ শতকী উগ্র হিন্দুত্ববাদ যথেষ্ট কার্যকর। সাম্রাজ্যবাদ হালাল করতেও সুতরাং উগ্র হিন্দু মতাদর্শের ব্যবহার অপ্রত্যাশিত না।
কৌতুহলের বিষয় হল,বাংলাদেশের 'ধর্মীয়' পশ্চাৎপদতা 'উন্মোচনে' অসুস্থকর আবিষ্টতা (obsession) বিজেপি বা তুলনীয় হিন্দুত্ববাদী রাজনৈতিক গোষ্ঠির সাথে প্রকাশ্য সম্পৃক্ততাবিহীন ব্যক্তিদের মধ্যেও লক্ষণীয়। ভারতের 'প্রগতিশীল' কবি লেখক ব্লগারদের মধ্যেও পাওয়া যায় (আমরা কোনো সাধারণীকরণ করতে চাই না, কেবল একটা বিশেষ দ্রুতবর্ধনশীল প্রবণতার উপস্থিতি নির্দেশ করতে চাই)। তাদের সুপ্ত আনন্দবাজারিপনা সমৃদ্ধ রচনায় দেখা যায়, তারা বাংলাদেশে এসে মূলত ধর্মান্ধতা দেখেছেন, মুসলিম নারীদের উপর নিপীড়ন দেখেছেন, দেখেছেন হিন্দুদের ধর্মান্তরকরণ, পীরবাদের রমরমা। এইসব লক্ষণ তাদের 'আশ্বস্ত' করে। আশ্বস্ত হওয়াটা জরুরি। এভাবেই 'পিছিয়ে থাকা' ভূখণ্ডের উপর 'এগিয়ে থাকা' ভূখণ্ডের আধিপত্য নায্যতা পায়। একই অবসেশনের উদাহরণ হয়ে আছেন তসলিমা নারসিন। তসলিমা বাংলাদেশের ধর্মান্ধগোষ্ঠীর হিংস্র আক্রোশের স্বীকার এই কথা যেমন সত্য, তেমনই সত্য তসলিমা বাংলাদেশের সর্বোচ্চ মানের লেখক না। দীর্ঘ সময় ধরে কেবলই তসলিমাকে নিয়ে আনন্দবাজারিপনা বাংলাদেশের বিস্তারিত সাহিত্যেজগতের প্রতি স্বেচ্ছা অবজ্ঞান নিদর্শনই না কেবল, বরং এরও প্রমাণ, যে বাংলাদেশের ততটুকই তাদের জন্য প্রাসঙ্গিক যতটুকুতে বাংলাদেশের সমাজের ধর্মান্ধতার প্রতিষ্ঠা পায়। (দুঃখজনক এই, বাংলাদেশের নিরীহ, নচেৎ 'বিষয়বুদ্ধিতে খাটো' মানুষেরা সাম্রাজ্যবাদী অজাচারকে মাথা পেতে উদযাপন করেন। বাংলাদেশের মানুষের স্বভাবসুলভ আতিথেয়তার বদলে ঐ ভারতীয় বিদ্বৎজনেরা দিয়ে যান শ্লেষ, কপট আশীর্বাণী। এই দীনতার উৎস খুঁজতে আরো একটা দীর্ঘ রচনার প্রয়োজন।)
প্রশ্ন করা যায় বাংলাদেশে কী ধর্মান্ধতা নাই? বাংলাদেশে কী সাম্প্রদায়িক নির্যাতন নাই? আছে। কিন্তু কুশিক্ষিত এইসব বুদ্ধিধর্ষকেরা কী উদ্দেশ্যে এই বিষয়গুলি অতিশয় মোটাদাগে 'নথিবদ্ধ' করে, পরবর্তী কোন ব্যবহারের জন্য আমাদের জানার বিষয় সেটা। আমাদের জানার বিষয় ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশকে ন্যায়/অন্যায়, গণতান্ত্রিক/অগণতান্ত্রিক, সভ্য/অসভ্য, (চূড়ান্ত বিচারে দখলি/অ-দখলি) ইত্যকার দ্বিমাত্রিক বৈপরীত্যের কোন পক্ষে রেখেছে। দাবি করি,বাংলাদেশের অবস্থান সেই পক্ষেই থাকবে যে পক্ষে যেকোনো 'অ-দখলি' সম্পদ থাকে। একটা অস্বস্তিকর সত্য হল মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠতা বাংলাদেশকে অন্যায়/অগণতান্ত্রিক/অসভ্যের কাতারভুক্ত হওয়ায় সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। বাংলাদেশে ধর্মান্ধতা কতটা অন্যায়কে নায্যতা দেয়, কিংবা গণতন্ত্রের বিপক্ষে যায়, বাংলাদেশের মানুষ আসলেই কতটা ধর্মপরায়ণ, অথবা কতটা সাম্প্রদায়িক এই সকল প্রশ্নই এক্ষেত্রে অবান্তর। একমাত্র ধর্তব্য 'বাংলাদেশ কেমন' না, বরং 'বাংলাদেশকে কেমন ভাবলে' ফায়দা।
সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে মার্কিন যুদ্ধে ভারতের সামিল হওয়ার পর ভারতে যতগুলি সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার প্রত্যেকটিতেই ভারতীয় প্রচারমাধ্যম বাংলাদেশকে জড়ানোর চেষ্টা করেছে। কোনোক্ষেত্রেই বাংলাদেশের সরাসরি সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পারে নাই। দুইএকটা ক্ষেত্রে পরোক্ষভাবে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থাপন করতে সক্ষম হয়েছে। এই বাংলাদেশের ভূমি ব্যবহার কিংবা বাংলাদেশের সীমান্ত দিয়ে ভারতে প্রবেশ ইত্যাদি পরোক্ষ সম্পৃক্ততার অভিযোগকে আমলে না নেয়ার উপায় নাই। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের প্রতি পাকিস্তানের সমান বৈরিতা প্রদর্শন যৌক্তিক কিনা। মুম্বাই হামলায় বাংলাদেশি কেউ জড়িত এমন প্রমাণ না পাওয়া গেলেও, ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদাম্বরম বলেন,'ভারতের আশা বাংলাদেশ সন্ত্রাসী দলগুলোর জন্য অভয়ারণ্য গড়ে দিবে না। কংগ্রেসি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষা বিজেপি নেতা এল কে আদভানীর থেকে দূরবর্তী না। একই ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় আদভানি বলেন,'আমরা স্পষ্টই দেখতে পাই,পাকিস্তান ও বাংলাদেশ আমাদের সাথে কী করছে। কেউ ভারতের সামরিক শক্তির সাথে তুলনীয় না। কিন্তু সীমান্ত অতিক্রম করে উভয়ই আমাদের হুমকি দিচ্ছে'। রাষ্ট্র পর্যায়ে বাংলাদেশকে পাকিস্তানের কাতারে ফেলে দেয়া বাংলাদেশকে মার্কিন দৃষ্টিভঙ্গির অনুকরণে 'গণতন্ত্রের বৃহত্তর স্বার্থে দখলযোগ্য' দেশের কাতারে ফেলে দেয়।
রিস জোনস রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের বিবিধ বক্তব্যের উদাহরণ টেনে বাংলাদেশের এই পাকিস্তানীকরণের প্রবণতা নির্দেশ করেছেন। জোনস একই সাথে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের 'সাধারণ' মানুষের মতামতও নিয়েছেন। এইসব 'মতামত' বাংলাদেশের প্রতি পশ্চিমবঙ্গের জনগণের গড় মনোভাবের 'প্রমাণ' না। কিন্তু তার সাক্ষাৎকারমালা নির্দেশ করে বাংলাদেশকে বৈরি-ভূখণ্ড হিসেবে দেখার বিষয়টা রাষ্ট্রনিয়ন্তাদের মতন 'সাধারণ' মানুষের ভিতরেও সুলভ। নিচের দুই্টা উদাহরণ দেয়া গেল:
৪৬ বছর বয়স্ক পুরুষ দোকানদারের বক্তব্য :
পৃথিবীর যেখানেই সন্ত্রাস, মুসলমানেরাই করছে। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট বুশ এ নিয়ে কিছু একটা করছে। আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দেই,কারণ আমাদেরও একই পরিস্থিতি। সন্ত্রাসবাদ এখানেও শুরু হয়েছে। আর এটা আসছে বাংলাদেশ থেকে। কিছু মনে করবেন না,আমি ঐখানেই জন্মেছি। কিন্তু ঐটা একটি মুসলিম দেশ। লাদেন হয়ে উঠছে ওরা।
৩৪ বছর বয়স্ক প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষিকার বক্তব্য:
আমি কখনো বাংলাদেশে যাইনি। কিন্তু ওটা একটা মুসলিমপ্রধান দেশ। একারণে রক্ষণশীলতা ওখানে বেশি। অর্থাৎ মর্যাদা,সংস্কৃতি আর ধর্ম বিষয়ে ওরা অনেক শক্ত।ভারত সে তুলনায় উদার। ওখানে মেয়েদের পর্দা করতে হয়। ওরা ভাল শিক্ষাদীক্ষা পায় না।এখানে শহরে রাতে অনেক মেয়েদের দেখা যায়। বাংলাদেশে এমনটা দেখেছেন কি? খুবই কম। এখানে সবাই অনেক স্বাধীন।
('উচ্চশিক্ষিত' মহলেও এই মনোভাব বিরল না। কিছুদিন আগে সুব্রামানিয়ান নামক হার্ভাডের এক খণ্ডকালীন অধ্যাপক আরও অনেককিছুর সাথে বাংলাদেশবৈরি মন্তব্য করে সমালোচনা/সমবেদনা কুড়িয়েছেন।)
আবারও বলছি, জোনস দাবি করেন নাই, বরং সতর্ক থেকেছেন এই বিষয়ে যে তার নেয়া সাক্ষাৎকারমালা পশ্চিমবঙ্গের 'মূল ধারা' নির্দেশ করে না, করতে চায়ও না। কিন্তু বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ট নাগরিকের ধর্মের বিপরীত শক্তি হিসাবে সাম্রাজ্যের পছন্দের ধারণাবলীকে (শিক্ষা,উদারতা,স্বাধীনতা ইত্যাদি)দাঁড় করানো নিছক বিচ্ছিন্ন দুর্ঘটনা না। (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাংলাদেশ-পাকিস্তান-সীমান্ত 'বাক্-বিপর্যয়' স্মর্তব্য)
যে অভিপ্রায় থেকে ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের অবাস্তব সমীকরণ উৎসাহী হয় তার একাধিক ব্যাখ্যা দেয়া সম্ভব:
১. ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের রাজনীতি একরৈখিক হিন্দুত্ববাদী। এই হিন্দুত্বের সংজ্ঞাও সংক্ষিপ্ত ও সংকুচিত। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে এই একরৈখিক হিন্দুত্ববাদের একমাত্র প্রতিপক্ষ একরৈখিক ইসলাম না। এই একরৈখিকতা অপর 'সকল' প্রকার ভিন্নতাকে দমনের চেষ্টা করে। অসংখ্য দলিত ও আদিবাসী জনজাতি, জাতিধর্ম নির্বিশেষে লক্ষলক্ষ অনাহারি মানুষ,এবং আত্মহননকারি কৃষকশ্রেণী ও ভুলে যাওয়া শ্রমিকশ্রেণীকে দমন করেই গড়ে উঠেছে এই দয়া ও দায়হীন 'মাল্টিপ্লেক্স' হিন্দুত্ববাদ। আত্মপ্রবঞ্চণা ও প্রতারণা এই হিন্দুত্ববাদের অমোচনীয় বৈশিষ্ট্য।কর্পরেট ভারতের মোটা বেতনের চাকরেরা কবজিতে কবচ, হাতে বর্ণিল আংটি, গাড়ির রিয়ারভিউ মিররে লেবু ঝুলিয়ে রেখেও নিজেদের ধর্মান্ধ বলে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়। প্রতিটা হিন্দি ছবির চিত্রায়ণের শুরুতে নারিকেল ভাঙা, প্রতিটা হিন্দি ছবির শুরুতে গণেশের প্রতীমা আর ধূপকাঠির চিত্রকল্প তাদের চোখে ধর্মান্ধতা না। ভারতের পুঁজিবাদ কর্তৃক প্রচারিত পরিবেশিত মহৎ সংস্কৃতির ধারণার সাথে এই আদিম পৌত্তলিকতার কোনো সংঘাত দেখা যায় না। দৃষ্টিভঙ্গীর এই সর্বগ্রাসী একরৈখিকতা আর অপরের (সেটা ছত্রিশগড়ের ওরাওঁ হোক আর মনিপুরের ব্যাপ্টিস্ট খ্রিষ্টান) সংস্কৃতিকে 'পিছিয়ে পড়া' বলে চিহ্নিত করা – ভারতের শোষকশ্রেণীর অবিচ্ছেদ্য বৈশিষ্ট্য । সাম্রাজ্য এই নিয়ন্তাশ্রেণী নিজের সাংস্কৃতিক শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রাখতেই এই কাজ করে এতে সন্দেহ নাই। উপরন্তু, পাকিস্তানের মত আপাদমস্তক বর্বররাষ্ট্রের প্রতিবেশিত্ব তাদের বাড়তি সুবিধা দিয়েছে। বাংলাদেশের উপর শ্রেষ্ঠত্ব জাহিরও একই একরৈখিকতার প্রয়োগ ঘটবে এটা অনুমেয়।
২.শত্রু প্রয়োজন। শত্রু কাজে দেয়। ঠিক মার্কিন সাম্রজ্যবাদের অনুকরণেই ভারতী সাম্রাজ্যবাদ শত্রুত্বের চাষবাস করে। তাদের রাষ্ট্রযন্ত্র, বাণিজ্যিক প্রচারমাধ্যম আর বুদ্ধিজীবী শ্রেণীর বিরাট অংশ শত্রুত্বের চাষবাষে উপকৃত। নিবার্চনে জিতবার জন্য জুজু নির্মাণ (তুলনীয়: বাংলাদেশেও বিএনপি-জামাত জুজুবাজী করে থাকে এই লক্ষ্যে) কার্যকর উপায়।এর সাথে যুক্ত বিশাল প্রতিরক্ষা বাণিজ্য।ভারতের জুজুবাজেরা ২০০৮ এর নৃশংস মুম্বাই হামলাকে কী নির্লজ্জভাবে লুফে নিয়েছিল, সেটা সেই সময়কার সংবাদ সম্প্রচার ঘাঁটলেই পাওয়া যাবে। অরুন্ধতী রায়কে আবার উদ্ধৃত করা যাক:
November isn’t September, 2008 isn’t 2001, Pakistan isn’t Afghanistan, and India isn’t America. So perhaps we should reclaim our tragedy and pick through the debris with our own brains and our own broken hearts so that we can arrive at our own conclusions.
কিন্তু ভারত, আমেরিকা না হলেও, আমেরিকার সস্তা নকল। শত আনন্দিবাজারিপনাতেও এটা লুকানো যাবে না।
[২য় (শেষ) পর্বে আলোচিত হবে ভারতের সাম্রাজ্যবাদী দর্শনের আরো দুই দিক।]
তথ্যসূত্র:
Jones, R. “Geopolitical boundary narratives, the global war on terror and border fencing in India”. Transactions of the Institute of British Geographers, Volume 34, Issue 3, pages 290–304, July 2009
Rohan Mukherjee. R and Malone, D.M. “Indian foreign policy and contemporary security challenges” International Affairs. Volume 87, Issue 1, pages 87–104, January 2011
Roy, A. Field Notes on Democracy: Listening to Grasshoppers. Hamish Hamilton, London: 2009.
মন্তব্য
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
অসাধারন।
..................................................................
#Banshibir.
চলুক।
এইটায় কি আমার লেখাটার দিকে ইঙ্গিত আছে? হ্যাঁ/না এটুকু উত্তর দিন তো।
বিজেপির ক্ষেত্রে কথাটা সত্যি, কংগ্রেসের ক্ষেত্রে একেবারেই নয়। মধ্যপ্রদেশ ইত্যাদি বিজেপি শাসিত রাজ্য, যেখানে গো-হত্যার বিরুদ্ধে আইন আছে, তার ক্ষেত্রে এটা একদমই ঠিক। কিন্তু কংগ্রেসের রাজনীতির মূল মন্ত্র সংখ্যালঘু তোষণ। এবং সেটা কোনো সদুদ্দেশ্য থেকে না, একেবারেই ভোটের লোভ থেকে। কারণ কংগ্রেস জানে, আমাদের মত যারা কোনোমতেই বিজেপির মত একটা ধর্মভিত্তিক দলকে ভোট দেব না, সর্বভারতীয় পরিপ্রেক্ষিতে তাদের একমাত্র অপশন কংগ্রেস-ই। মুসলিম দলিত ইত্যাদি সংখ্যালঘুদের ক্ষেত্রে তো সেটা আরোই সত্যি। অতএব বর্তমান ভারত সরকারের ক্ষেত্রে যদি এটা আপনার একটা সম্ভাব্য ব্যাখ্যা মনে হয়, সরি টু সে, আপনার (বা যদি ওই গবেষকের মতবাদ হয় তবে তাঁর) ভারতীয় পলিটিক্স নিয়ে ধারণাটা আপডেট করা দরকার।
বাকি কয়েকটা পয়েন্টের সঙ্গে সহমত। "আত্মপ্রবঞ্চণা ও প্রতারণা এই হিন্দুত্ববাদের অমোচনীয় বৈশিষ্ট্য।কর্পরেট ভারতের মোটা বেতনের চাকরেরা কবজিতে কবচ, হাতে বর্ণিল আংটি, গাড়ির রিয়ারভিউ মিররে লেবু ঝুলিয়ে রেখেও নিজেদের ধর্মান্ধ বলে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়। প্রতিটা হিন্দি ছবির চিত্রায়ণের শুরুতে নারিকেল ভাঙা, প্রতিটা ছবির শুরুতে গণেশের প্রতীমা আর ধূপকাঠি চিত্রকল্প তাদের চোখে ধর্মান্ধতা না।" ইত্যাদি।
এবার আনন্দবাজার অফিসে গিয়ে পথিক গুহ'র সাথে আনন্দবাজারের কাজকর্মের (যেহেতু উনি নিজেও একজন উপসম্পাদক) অনেক সমালোচনা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে কখনও পোস্ট দেওয়ার ইচ্ছা রাখি। আমাদের সমস্যা, জাতীয় স্তরে কংগ্রেস বা বাংলায় তৃণমূলের মত, মন্দের ভালো অপশন বলতে পত্রিকা স্তরে এখন আনন্দবাজারই। আনন্দ-গোষ্ঠীর ঔদ্ধত্যের পতন দেখতে আমরা সবাই উৎসুক, কিন্তু শীঘ্রই হবে বলে মনে হচ্ছে না।
আপনার প্রশ্নে নীরব থাকার অধিকার প্রয়োগ করলাম। আনন্দবাজার নিয়া পোস্ট দেন। সরব হবো।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ভাই অনিন্দ্য, আপনাকে সরাসরি একটা কথা বলি। আপনাকে আক্রমণ/অপমান করতে চাই না একদমই, স্রেফ একটা উদ্বেগজনক ট্রেন্ড দেখছি বলে বলছি। আমার ধারণা ভুল হলে খুশিই হব।
চৌঁত্রিশ বছর ধরে দেখেছি, 'চিন্তাশীল পার্টি-তাত্ত্বিক'দের বড় বড় থিয়োরি দেওয়া, আন্তর্জাতিক, দেশীয় সব বড় বড় ব্যাপারকে কত জটিল তত্ত্বের জালে ফেলে কত বড় বড় দেশি-বিদেশি লোকের জটিল জটিল বক্তব্যের আলোকে জটিল সব বিশ্লেষণ, চুলচেরা সমালোচনা। (যে তত্ত্বগুলোয় কিন্তু ভুল থাকত বেশ-ই।) আর তাদের মতের কেউ একচুল বিরোধিতা করলেই তাকে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের দালাল বানিয়ে দেওয়া। আর কেউ তাদের 'এইটা আপনারা কেন বলছেন?' 'এইটা কি আপনাদের ঠিক হল?' এই সরাসরি প্রশ্নগুলো করলেই উত্তর দেবার সৎসাহসের অভাব, বরং তাকে শত্রু পার্টির দালাল বলে মার্ক করে রাখা।
হঠাৎ করে মিল পেয়ে চমকে গেলাম। আর ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায় তো, তাই উদ্বেগও হল। আশা করছি আমার উদ্বেগ ভুল।
কৌস্তুভ সৎসাহসের অভাব আর রুচির অভাব/ ইচ্ছার অভাব/ বাজে সময় নষ্টের অনীহা ইত্যাদির মধ্যে পার্থক্য আছে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
অনিন্দ্য তোমাকে উদাহরণ হিসাবে ব্যবহার করেছেন। তুমি নিজে যদি মনে কর তুমি উদাহরণ নও তাহলে কোনো সমস্যা নেই।উনি "তুমি কেন ভাবছ" - সেটা ব্যাখ্যা করেছেন। তুমি যদি সেটা না ভেবে থাক তাহলে তোমার কোনো সমস্যা নেই।
অন্য প্রসঙ্গে আসি। আমার মনে পড়ে স্কুলে থাকতে মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ কিভাবে ভারতকে ধীরে ধীরে গ্রাস করছে তা নিয়ে পড়েছি অনেক। বেশ কিছু পয়েন্ট মনে পড়ে। কিছু পয়েন্ট ছিল মুক্ত-বাণিজ্যের ফলে ভারতের কিভাবে ক্ষতি হবে সে নিয়ে। গ্যাট চুক্তির পরে কিভাবে ভারতের ওষুধের বাজার মার্কিনদের হাতে চলে যাবে ও বিশ্বব্যাপি পেটেন্টওয়ালাদের রমরমা হবে, বা কেন নিমের দাঁতন ব্যবহার করার জন্য রয়ালটি দিতে হবে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানীকে - তাও পড়েছি। দুঃখের বিষয় স্কুলছাত্র হিসাবে অর অনেক কিছুই বিশ্বাস করেছিলাম, এখন আর করি না, কারণ এখন চোখে দেখতে পাই, তখন পেতাম না। এখনও মাঝে মাঝে ফরওয়ার্ড করা ইমেল আসে সেইরকম।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
উনি কেন ভাবছেন বিষয়টা ঠিক এমন না। কেউ কেন এইরকম ভাবতে পারে সেইটা বিষয়। দৃষ্টিভঙ্গী গড়ে দেয় বিশেষ আদর্শ। সবার ক্ষেত্রেই এইটা কমবেশি সত্য। সেই আদর্শের বিষয়ে 'অকপট' থাকাটাই আমার সংজ্ঞায় সত্সাহস।
ইন্ডিয়া আমিরিকার রাস্তায় হাটতেছে কিনা সেইটা ভারতীয়রা বেশি ভাল বলতে পারবেন হয়ত। সম্ভবত India is not against them, it IS with them.
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনার "India is not against them, it IS with them" কেইসটা আমার কাছে পরিষ্কার হইলো না। মনে হইল "with them" থাকাটা বাই ইটসেল্ফ একটা খারাপ ব্যাপার। কিন্তু আমার ধারণা "with them" বাই ইটসেল্ফ তো খারাপ হইতে পারে না, এতে অন্য কিছু একটা ঘটতেছে, যেইটা খারাপ বইলা "with them"রে আপনি খারাপ ঠাউরাইতেছেন। আমি নিজে এখানে ইন্ডিয়ার ক্ষতিটা দেখতেছি পাইতেছি না। কিন্তু আপনি নিশ্চয়ই পাইতেছেন। আপনি "with them" এর ক্ষতিটা কোথায় কোথায় দেখতেছেন সেই ব্যাপারে আমি উৎসাহী। কারণ এর ভিতরে এই অনুমানও আছে যে "with them" তত্ত্বে বাংলাদেশও ঠুয়া মারা খাবে ("ফ্রি মার্কেট ইকনমিতে নিজস্ব উৎপাদন না থাকলে যতভাবে ধরা খাওয়া যায়, বাংলাদেশে সরকার ততভাবেই ধরা খাবে")। এইভাবে দেখা যাইতেছে ভারতেও ভাবা হইছে আগে। এখনো নিশ্চয়ই হয় কোথাও কোথাও ...
এই বাক্যটার একটা হিস্টরিকাল কন্টেক্সট্ আছে। আপনি ঐটা বাদ্দিয়া পড়তে চাইলে আপনের সিদ্ধান্ত। আমি ভাল খারাপের বাইনারির মধ্যে ঢুকি নাই।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
অজানারে ভাই। বাদ্দিয়া পড়ি নাই।
উইকিতে আজিব আজিব আর্টিকেল থাকে ভাই। দেখেন এইটা পাইলাম
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
পইড়া যেইটা বুঝলাম, এইটা খোঁড়া বুলি। ফ্যালাসি অফ ফল্স ডিলেমা। তা আপনি এইটা ব্যবহার করলেন কি নিজের বক্তব্য দুর্বল করতে?
জ্বি না। সাম্রাজ্যবাদী আগ্রাসনের জাস্টিফিকেশন খোঁড়া বুলির উপ্রে দণ্ডায়মান এইটা বুঝাইতে। বুশ যখন us and them এর বিভাজন করছিল তখন সে আইডিওলজিকাল খোঁড়া বুলি দিয়ায় সামরিক আগ্রাসন জায়েজ করছিল। সুতরাং খোঁড়া বুলি আওড়ানোটা এসেনশিয়াল পার্ট এই ধরণের এগ্রেশনের।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনি নিশ্চিত? অনিন্দ্য'দা তো তেমন কিছু বললেন না। নিশ্চিত হলে জানান, এই বিষয়ে কিছু ব্যপারে স্পষ্ট হতে চাইছিলাম।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
অনিন্দ্যর বক্তব্য - "তিনি কেন সেরকম ভাবছেন --- প্রিসাইজলি এই বিষয় নিয়াই বর্তমান পোস্ট। বুঝাইতে ব্যর্থ হইলাম।"
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
সরি, এইটা কোনো স্পেসিফিক 'তিনি' প্রসঙ্গে বলি নাই। এই রচনায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গ নামক রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী, পশ্চিমবঙ্গের দুইজন সাধারণ নাগরিক, ভারতীয় লেখক, মার্কিন ভূগোল গবেষক --- বহুরকম লোকের উদ্ধৃতি আছে ...
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
দিগন্ত'র বক্তব্য "তবে আর কেউ যদি অন্যরকম ভেবে থাকে সেটার বিষয়ে ভেবে দেখা উচিত তিনি কেন সেরকম ভাবছেন।"
মন্তব্যে নিজের উদাহরণের বাইরে এমন একজন ইউনিভার্সাল 'তিনি' ব্যবহার করেও অনিন্দ্য'র বক্তব্যে তিনি=কৌস্তুভ সমীকরণ টানাটা কি ঠিক হয়?
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
"তিনি কেন সেরকম ভাবছেন" --- এইটা সরাসরি কোট করা হইছে দিগন্তদার মন্তব্য থাইকা। কোটেশন মার্ক দিলে ভালৈত
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
তিনি=কৌস্তুভ -- উদাহরণ।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
কৌস্তুভ। অনিন্দ্য রহমানের আপনাকে উদাহরণ হিসেবে ব্যবহার করে বাকি আলাপ সরাসরি আপনার সাথে চালানোতে অনীহা বোধ করায় বাতচিৎটা আধুরা রয়ে গেলো বটে। তবে সেটা নিয়ে আশা করি মন খারাপ করবেন না। কারণ পয়েন্ট আসলে তো সেটা না। পয়েন্টটা হচ্ছে, আপনি যেভাবে বঙ্গদর্শনে অন্যান্য অনেক ভালো মন্দের সাথে বাংলাদেশের ধর্মীয় প্রভাবের কথাটা উল্লেখ করলেন, সেটাতে অনিন্দ্য কী সমস্যা দেখছেন। সেই সমস্যা আপনার ক্ষেত্রে ইম্প্লাই না করলেও সেই সমস্যাগুলো আদৌ ফ্যাকচুয়াল কিনা এ নিয়ে ভ্যালিড আর্গুমেন্ট করা যায়।
তো সেই সমস্যার একটা খাসা উদাহরণ কিন্তু ক্রিস্টোফার হিচেন্স বা সেই আইকনের নিচের ধ্যান ধারণাগুলো। যেটার জঙ্গি নাস্তিকতার পয়েন্ট থেকে ধর্ম তথা ইসলাম ও ইসলামবহুল সমাজের সমালোচনামূলক বয়ান একেবারে প্রত্যক্ষভাবে সাম্রাজ্যবাদের সবচেয়ে প্রকট বিপর্যয় - যুদ্ধ - এর পক্ষে সমর্থন হিসেবে চলে যায়। কোনটা বেশি সমস্যা ছিলো? ইসলামবহুল সমাজের ধর্মান্ধতার কারণে জ্ঞানবিজ্ঞান রহিত থাকা নাকি গণহত্যার মাধ্যমে জ্ঞান বিজ্ঞানের পাঠ শেখা? এর মানে অবশ্যই এই না যে আপনার ভাবনার বিবর্তনও একইভাবে ঘটতে বাধ্য। সম্ভবত সেটা গুরুত্বপূর্ণও না। তবে ভাবনার এই অবহেলা যে ঘটে, তুচ্ছ বিষয় নিয়ে জঙ্গিভাবাপন্ন হতে গিয়ে যে বড় বিষয় চোখের আড়াল হয়, ধর্মান্ধ সমাজকে বাইরে থেকে স্বল্পদর্শনের মধ্যে কটাক্ষ করতে গিয়ে যে জাতিগত একটা হীন শ্রেয় তুলনা সৃষ্টি হয়, এবং তার ফলস্রুতিতে জাতিগত অত্যাচার ও অন্যান্য অনাচারের কাঠামোটা দাঁড়া হয়ে যায়, সেই দুশ্চিন্তা একেবারে অমূলক না।
এর মানে এই ভাববেন না যে কেবল রায়হান আবীর দেশে থাকে বলে দেশের সমালোচনা করতে পারে, আপনি বাইরে থেকে এসে স্বল্পদর্শনে এমন সমালোচনা করতে পারেন না। আপনি অবশ্যই আপনার বক্তব্য দিবেন। তবে সেটার উপর ভিত্তি করে অনিন্দ্য রহমানের বিশ্লেষণও একটা প্রায় ভ্যালিড আর্গুমেন্ট। যদিও সেটা আরেকটু পরিষ্কার ও বিস্তৃত হতে পারতো।
আর মার্ক করা তো আর্গুমেন্ট না। সেটা দুর্বল কর্ম। তারপরেও সেটা নিয়ে আর বললাম না, প্রমাণের অভাবে। ব্যাপারটা আর শোভনও হয় না। উপরে যা বললাম, সেটাকেও আশা করি অশোভন পরচর্চা হিসেবে নিবেন না। এই বিশ্লেষণটার ব্যাপারে আমার সৎ মতামত দিলাম। ঠিক ঠিক আপনি নিজে কেমন করে ভাবছেন, দয়া করে আমার বক্তব্যকে সে ব্যাপারে একেবারে অসংশ্লিষ্ট মনে করবেন।
দুশ্চিন্তার 'মূল' দেখতে পাইলেন দেইখা ভাল লাগল।
লেখার স্টাইলিস্টিক জাজমেন্টে গেলেন, এইটাও ভাল লাগল।
পরিশেষে, আমার এই লেখাটা কোনো বিশেষ ব্যক্তিস্বভাবের ক্রিটিক না। আপনি সেইভাবে পাঠ নেন নাই দেইখা ভাল লাগল। কিন্তু এই ধরণের স্বভাব-বিষয়ক লেখায় - যেখানে 'স্বভাব'এর প্রয়োগ কোনো না কোনো ব্যক্তিই ঘটায় - সেইখানে 'একজন' ব্যক্তি নিজেরে প্রাসঙ্গিক ধৈরা নিলে নিতেই পারে। অতীতেও, যদিও একেবারেই ভিন্ন প্রসঙ্গে, টেক্সটের কেন্দ্রীয় অবস্থান নিয়া 'স্বভাব' বনাম ব্যক্তির দ্বন্দ্ব উপস্থিত হইছিল। মনে পড়ল।
আমি মনে করি না, বর্তমান পোস্টে কোনো এক ব্যক্তির নিজস্ব স্বভাব (সত্য হোক বা না হোক) প্রাসঙ্গিক। বরং এইখানে বিচিত্র ধরণের ব্যক্তিস্বভাবের মধ্যে একটা আদর্শিক অন্বয় আছে সেইটা খুঁজার একটা দুরূহ চেষ্টা আছে। স্বল্পকালীন বিনিয়োগে এর চেয়ে বিস্তৃত লেখার মেধা আমার নাই। নাইলে এডওয়ার্ড সাইদের অরিয়েন্টালিজমের মতন একখান পুস্তক লেখার মশলা এই ফিনমেননের মধ্যে নাই, এমন কথা বলা যায় না।
পুনশ্চ: আমারে সিপিএমের তাত্ত্বিক হিসাবে 'মার্ক' করাটারে (যদি কৈরা থাকে তাইলে) কী মনে করেন?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
মার্ক করা তো আর্গুমেন্ট না . . . (রিপিট)
কিন্তু এর উপরে যদি বক্তব্য উৎপাদন করতে বলেন, বলা ভালো, মার্ক করা কিন্তু বিশেষভাবে কেবল উগ্র জাতীয়তাবাদী ও কম্যুনিস্টদের প্র্যাকটিস। লিবারেল হিউম্যানিস্টরা আপনার বাড়ির আশেপাশে বোমা মাইরা আপনারে কোল্যাটারাল ক্ষতির খাতে ফালাইয়া রাখবে। মার্ক টার্কের বালাই নাই। বাই দ্য ওয়ে। লিবার্টারিয়ানরা (লিবারেল হিউম্যানিস্টদের সাথে গুলাইয়েন না) কিন্তু নরম সরম মানুষ। নিরীহ। কোনোদিন কোনো দেশে ক্ষমতায়ও আসে নাই। দোয়া করেন আপনের শত্রু যেনো লিবার্টারিয়ান হয়।
কষ্টসাধ্য এ লেখার জন্য সাবাশ অনিন্দ্য।
পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
চমৎকার একটি বিশ্লেষণ। এই প্রসঙ্গে দুটি কথাঃ
১। পাকিস্তানের সঙ্গে বাংলাদেশের সরলীকরণ করে ফেলাটা ডান/বাম সকল সরকারের একটা এজেন্ডা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
২। উত্তর ভারত এবং বিস্তীর্ণ মধ্য এবং দক্ষিণ ভারতেও তথাকথিত 'হিন্দু' রাজনীতির ছোঁয়া বিদ্যমান এবং প্রকট।
৩। গুজরাট গণহত্যা কোন পৃথক ইস্যু নয়। একটা সেই উগ্র ধর্ম চাষের ফসল। ( আমার দুচারজন গুজরাতি বন্ধুকে একেবারে সরাসরি প্রশ্ন করে ওদের কাছে আমি নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করতে দেখেছি)। এর থেকে সহজে অনুমেয় যে রাজনৈতিক নেতারা সেই এনার্জি কোত্থেকে পায়।
৪। মার্কিন স্টাইলে ভারতের মধ্যে গড়ে উঠা একপ্রকার সাম্রাজ্যবাদী আস্ফালনের চেহারা প্রকট হয়, অধুনা নেপালের দিকে তাকালে।
৫। আম ভারতীয় নাগরিকের মধ্যে কোন ধরণের মানসিকতা বেশী কাজ করে তা হয়তো একটা পার্টিকুলার কোন সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব নয়। তবে এটা অবশ্যই যে এই ধরণের মানসিকতা তৈরিতে উৎসাহ দেয় মিডিয়া গুলি। এটাও এক প্রকার ব্রেন ওয়াশও বলা চলে।
৬। বিরোধী দল গুলি যখন বিরোধী আসনে থাকে তখন এর কিছু কিছু সমালোচনা করে বটে। কিন্তু যখন সেই একই দল ক্ষমতার মসনদে বসে তখন তার দাম্ভিকতা প্রকট হয়ে উঠে । ( তিস্তা জল বন্টনের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের বাম সরকার যেমন প্রায় একরোখা ছিলেন, তখন তারা সেই কাজ করেননি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের ভোট কুড়োতে বাংলাদেশের প্রতি অনেক ভাই ভাই গলাগলি ভাব দেখিয়েছেন। কিন্তু ক্ষমতার অলিন্দে প্রবেশ করেই তার চেহারার আমূল পরিবর্তন হয়ে গেছে। এখন তিস্তার জল বন্টনে উনি রাজ্যের ক্ষতি দেখতে পান।)
৭। ভারতে কেন্দ্রে জোট রাজনীতিও ভিভাজনের পক্ষে একটা ভিত গড়ে দেয়। আঞ্চলিক দল গুলো সামান্য সাপোর্ট এর বিনিময়ে তাদের ফায়দা গুলি তুলে নেন।
৮। তবে এটা ঠিক যে বিজেপির চেয়ে কংগ্রেসের ভেতর মননশীলতা একটু বেশী। তবে মনে হচ্ছে মোল্লার দৌড় মসজিদ অবধিই। কেননা ক্ষমতা ধরে রাখতে সবাই বদ্ধপরিকর।
৯। ক্যাপিটেলিস্ট ভারতের এই নব উত্থান আসলে কাদের জন্য? গত দশ বছরের একটা হিসেব নিলেই তা স্পষ্ট হয়ে উঠে। দেশে বিলিয়নীয়ার বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু গরিবি কতটা কমেছে? তার সাথে কি হারে বেড়েছে দুর্নীতি। একটা উদাহারণঃ যেহেতু মুম্বাই হামলার কথা এই লেখায় আছে তাই সেই কথাই বলি। মুম্বাই হামলায় নিহত জোয়ানদের জন্য সরকার একটা আবাসন প্রকল্প তৈরি করেছিল। কার্যকর হতে হতে দেখা যায়, অত্যন্ত নিম্নমানের কাজ এবং তার উপর দেখা যায় সেই সৈনিকদের জন্য বরাদ্দ আবাসন বাগিয়ে বসে আছেন রাজনৈতিক নেতারা।
১০। বাংলাদেশকে ছোট রাষ্ট্র হিসেবে দেখে সেই রাষ্ট্রের সাথে দাদাগিরি করাটা সাম্রজ্যবাদই বটে। কিন্ত লক্ষনীয় বিষয় সাধারণ ভারতীয়দের মধ্যে এই নিয়ে মাথাব্যাথা খুব বেশী একটা নেই। যদিও কোন ক্ষেত্রে সেটা খানিকটা উঁকি মারার চেষ্টা করে তাহলে রাষ্ট্র লালিত মিডিয়ে গুলি তা ধামাচাপা দিয়ে দেয়। বিরুদ্ধাচারণ একেবারেই বরদাস্ত করা হয়না, অথচ গণতন্ত্রের ফাকাবুলি আউরে যায় রাষ্ট্র।
১১। সীমান্তে দখলদারি সেই দাদাগিরিরই একটা অপর রূপ। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ইলিগ্যাল ব্যাপার ঘটলেও বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই নির্দোষ বাংলাদেশীদের হত্যা করা হয়। এবং সেই ক্ষেত্রে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় রাষ্ট্রের নিরপত্তা রক্ষার সাইনবোর্ড।
( এ ক্ষেত্রে আমার শুধু একটা প্রশ্ন , শুধু জানার জন্য - আচ্ছা বাংলাদেশের সীমান্ত রক্ষীরা তখন কি করেন। এত পরিমাণে হত্যা যখন হচ্ছে তখন সীমান্ত দিয়ে অবৈধ প্রবেশ গুলি আটকানোও তো সম্ভব। তাহলেই তো আর বিএসএফ তাদের এই বন্দুকলীলা চালাতে পারবেনা। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ওপারে গিয়েও তারা আস্ফালন করে আসেন । তখন বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষীরা কেন তাদের প্রতিরোধ করেনা? এটা করা উচিৎ।)
১২। শুধু মাত্র গণতন্ত্রকে পুঁজি করে এক শ্রেনীর আমলাতন্ত্রকে লালন করা 'শাইনিং ইন্ডিয়ার' একটি প্রধান বৈশিষ্ট হয়ে উঠেছে। অর্থনৈতিক রেভুলুশ্যন এর কথা বলা হয়। কিন্তু সেই উদ্ভব নিশ্চয়ই দশটা পাঁচটার ঘাম ঝরানো কিংবা রোদে পোড়া চাষির আর্থিক, সামাজিক উদ্ভব নয়।
১৩। চিন দুইদিন পর পরই অরুনাচলকে নিয়ে পাকনামি করে, পাকিস্তান করে কাশ্মীরকে নিয়ে। কিন্তু নয়াদিল্লীর পররাষ্ট্র মন্ত্রক ওদের কিছুই বলতে পারেনা। চীন এর সঙ্গে চলে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা আর পাকিস্তানের সঙ্গে সকাল বিকেল গোলাগোলি। কিন্তু পাকিস্তান থেকে একটা গ্যাপ দিয়ে দিয়ে সব সন্ত্রাসী হামলার ছক ঠিকই কষা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ভারতের বিদেশনীতি হামলার পর 'দেখে নেবো' এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
মনে হয় এই ক্ষেত্রে বড় ভাইয়াদের কাছে কাঁচুমাচু প্যাঁদানি খেয়ে ছোট ভাইকে কিল ঘুসি মারার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ বাংলাদেশকে দুর্বল পেয়ে এই রাষ্ট্রের উপর ছড়ি ঘোরানোটা দিয়ে জাহির করে যে আমিও 'বস' হওয়ার ক্ষমতা রাখি। এটা নির্লজ্জ আস্ফালন ছাড়া আর কিছুই নয়।
১৪। উপরের কথার নিরিখে আনন্দবাজারের এই নীতি নিছক বাজারবাদীদের সাপোর্ট এর একটা উপলক্ষ মাত্র। আনন্দ বাজার না করলে কোন রামবাজার বা মগবাজার তা করবে!!
১৫। ব্যাক্তিগত ভাবে আমি মনে করি বাংলাদেশের প্রতি ভারতের এই বৈমাত্রিক আচরণ এবং আগ্রাসী মনোভাবের প্রতিরোধ একমাত্র বাংলাদেশের পক্ষেই করা সম্ভব। সবার আগে নিজেদের তৈরী করা প্রয়োজন। বিদেশনীতিতে অনেক স্ট্রং হওয়া দরকার। কথা বলার ক্ষমতা অর্জনের দরকার। নিছক ভারত বিরোধীতার জন্য বিরোধীতা করা নয়, প্রতিবাদ হোক অন্যায়ের বিরুদ্ধে।
ডাকঘর | ছবিঘর
৩। গুজরাট গণহত্যা কোন পৃথক ইস্যু নয়। একটা সেই উগ্র ধর্ম চাষের ফসল। ( আমার দুচারজন গুজরাতি বন্ধুকে একেবারে সরাসরি প্রশ্ন করে ওদের কাছে আমি নরেন্দ্র মোদীকে সমর্থন করতে দেখেছি)। এর থেকে সহজে অনুমেয় যে রাজনৈতিক নেতারা সেই এনার্জি কোত্থেকে পায়। ---- তারপরও তারা 'বন্ধু' থেকে গেল কি?
যাই হোক, মমতা সবচেয়ে বড় প্রতারণা করছে 'মাওবাদীদে'র সাথে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
জ্বী না । ওরা ঠিক তথাকথিত বন্ধুও নয়। ভার্সিটিতে পড়ার সময় একই হলে থাকতাম সেই সোর্সে পরিচিত। আমার সাথে এর বাইরে ওদের কোন যোগাযোগ ছিলনা।
ডাকঘর | ছবিঘর
"চিন দুইদিন পর পরই অরুনাচলকে নিয়ে পাকনামি করে"
আচ্ছা দক্ষিন তিব্বত (ভারত যাখে অরুনাচল নামে চালায়) এর ওপর ভারত বা চীনের দাবীটা কোন ভিত্তিতে? ইউরেনিয়াম?
ভারত বা চিন কারও দাবীই যুক্তিযুক্ত নয়। ওটা তিব্বতেরই অংশ। লিখেছিলাম।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
@ দিগন্ত- আপনার লেখাটা পড়লাম। যুক্তিগুলো ভালো লেগেছে । অনেক কিছুই জানতাম না তবে লেখাটা পড়ে অনেক কিছুই পরিষ্কার হয়েছে। শেষের সমাধানটাই মনে হয় যুক্তিযুক্ত। এর বাইরে আর পথ নেই, এটাই মেনে নেওয়া দরকার। নইলে দিন কে দিন অস্থিরতা বাড়তেই থেকবে
ডাকঘর | ছবিঘর
সত্যি অসাধারান। আমি আপনার যুক্তির সাথে সহমত পোষন করি। কিন্তু আমাদের শিক্ষিতরাও এসব মাথায় আনেন না। কারণ দেশপ্রেম কি জিনিস সেটি তাদের শেখানো হয়না। শেখানো হয়, রাজনীতি করে কিভাবে একজনের মাথা অন্যজন দিয়ে ফাটানো যায়। ধন্যবাদ।
রাজনীতি ছাড়া দেশপ্রেমের ধারণা অবাস্তব ও নির্বোধ। রাজনীতি করতে হবে। প্রয়োজনে মাথাও ফাটাইতে হবে। ফাটাফাটি ছাড়া রাজনীতি হয় না। বাংলাদেশে যা ভাল কিছু হইছে রাজনীতি (যেই ফর্মেই হয়ে থাকুক) না থাকলে তার অর্ধেকও হইত না। ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
চলুক।
(ক) ভারতীয় সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে দুই/তিন পর্বের প্রবন্ধ লিখলে হবে না। উদাহরণসহ ব্যাখ্যা, কার্যকারণ, ফলাফল (স্বল্প-মধ্য-দীর্ঘ মেয়াদী) সবই আলোচনা করতে হবে। কোন্ কোন্ দর্শন এখানে ক্রিয়াশীল, কোন্ কোন্ রণকৌশল অবলম্বন করা হচ্ছে, পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য কাদের কীভাবে রিক্রুট করা হচ্ছে ......... এমন আরো হাজারোটা বিষয় আছে। তার কোনটাই বাদ দেয়া চলবে না। বইটা দাঁড়াতে দাঁড়াতে হয়তো ২০১৩ সালের বইমেলা চলে আসতে পারে। তাতে ক্ষতি কী? ততদিনে অনিন্দ্যের ঘরে ফেরার সময়ও হয়তো কাছিয়ে আসবে।
(খ) বাংলাদেশীদের একটা বড় অংশের মধ্যে বিদেশীদের বা ভারতীয়দের নিয়ে যে মানসিক দীনতা কাজ করে সেটা নিয়ে গত দুই দিনে আরো দুইজন সচলের সাথে অল্প আলাপ হয়েছে। এই বিষয়টা নিয়েও বিস্তারিত কাজ দরকার। নীরদ সি চৌধুরীর মতো অবরোহী পদ্ধতিতে না, আরোহী পদ্ধতিতে কাজটা করা দরকার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডব দা আপনার (খ) এর পরিপ্রেক্ষিতে আমার কিছু কথাঃ
নোংরামি দেখতে দেখতে, সহ্য করতে করতে মানুষ নিজেই নোংরা হয়ে যায় ? প্রতিবাদ করতে গিয়ে দেখা যায়, যার বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচার করা দরকার তাকে সামনে না পেয়ে তার এলাকার একজনকে পেয়ে তাকেই ধুয়ে দিল। স্যরি টু সে এটা প্রতিবাদ নয়, এটা উন্মাদের লক্ষণও বটে। আমরা যদি সত্যিকারের প্রতিরোধ করার কথা ভাবি তাহলে প্রতিরোধ করা উচিৎ এর 'কারণ' এর।
ডাকঘর | ছবিঘর
হ্যাঁ। মানুষ শুধু নোংরাই হয়ে যায় না, বিএসএফের খুনাখুনির সমালোচনার জবাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নুনু কত বড় সেটা ফলাও করে বলতেও আসে। চেনেন নাকি এমন কাউকে?
আমার কথাটার বিপরীত অর্থ বের করবেন না প্লীজ। আমি কি বলতে চেয়েছি সেটা আগে দেখুন।
আমি একবারই বলেছি অন্যায় অন্যায়ই হয়... বিএসএফ সীমান্তে নিরীহ বাংলাদেশীর উপর অত্যাচার চালায়, খুন করে সেটা অন্যায়। কিন্তু বিএসএফ নামক একটা রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান নিরীহদের উপর অত্যাচার চালালে এর উপযুক্ত জবাব কাকে দেওয়া প্রয়োজন - বিএসএফকে নাকি বিএসএফ যে দেশের সাথে সম্পৃক্ত একজন সাধারণ নাগরিককে? তবে যদি এমন কেউ এই কথা বলে যে - বিএসএফ যা করছে তা ঠিক করছে - তাহলে তার বিরুদ্ধেও সোচ্চার হওয়া দরকার তাইনা।
ভারত তো একটা রাষ্ট্র , বিএসএফ এই রাষ্ট্রের এক শ্রেণীর কর্মচারী । আর এর পর আছে সাধারণ মানুষ। এখন এই তিনটাকে একই সারিতে সাজালে কি ঠিক হবে।
ডাকঘর | ছবিঘর
বিএসএফের সমালোচনার জবাব দিতে যদি ভারত রাষ্ট্রের কোনো সাধারণ নাগরিক এসে ভারতীয় সেনাবাহিনীর নুনু কত বড় সেটা ফলাও করে বলে, তাহলে সে কি আর সাধারণ নাগরিক থাকে? সে বিএসএফের কর্মকাণ্ডের একজন অসাধারণ সমর্থকে পরিণত হয়।
তা আপনি ওরকম কাউকে চেনেন নাকি?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
পান্ডবদা, আপনি এক একটা মন্তব্য করেন যেটা মূল লেখাতে দারুণ একটা মাত্রা দেয়। আপনার খ) পয়েন্টে আমার মনে হয় "একটা বড় অংশ" নয়, দেশে হরে দরে সবার এই সমস্যা আছে। বিদেশী মালের প্রতি অন্ধ ভক্তি দেখতে দেখতে ঘেন্না ধরে গেলো
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
ভারতের জাতিবিদ্বেষ, দাদাগিরি আর সাম্রাজ্যবাদের স্বরূপ উদ্ঘাটন চলতে থাকুক। এর সাথে এটাও স্মর্তব্য, এর মোকাবিলা পাল্টা বিদ্বেষ দিয়ে ঘটবার নয়। এর জন্যে হিসেব করা শর্তপ্রযোজ্য বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দরকার। কোনো বিনাশর্তের কারবার নেই। থমাস জেফারসনের ভাষায়
আওয়ামী লীগের ভারতবন্ধুত্ব একটা পর্যায় পর্যন্ত সমর্থনযোগ্য। কিন্তু সেটা পার করে এখন বিনাশর্তের বন্ধুত্ব চলছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস সমস্যার অংশীদার হচ্ছে বাংলাদেশ বিনা কাজে। ভারতের টনক কীসে নড়বে? সীমানা বন্ধ করে দিয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেলে কি কাজ হবে? সেটা হবার নয়। ফলে ভারতও নড়বে না যতক্ষণ তার মালকড়িতে টান না পড়ছে। বাংলাদেশের সাথে তার হিসেবটা ওইখানেই। ওটা দিয়েই তাদের সাথে কথা বলতে হবে। দরদামের পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে হবে। গরুর ব্যবসা করলে লুকোচুরি করে নয়, সীমান্তে হাট বসিয়ে করাতে বাধ্য করতে হবে। সেই হাটে ফেন্সিডিল নিয়েও তারা বসতে পারে। বন্দুকের নলের সামনে এই লুকোচুরি ব্যবসার ঢঙ বন্ধ করাতে হবে। আর বাংলাদেশে ব্যবসা করতে হলে সীমানা নিয়েও সহনশীল, নমনীয় হতে হবে। না হলে ব্যবসা করা বন্ধ করে দিক। তারপর যতো বসাক কাঁটাতারের বেড়া। সীমান্তে কারাগারের মতো আচরণ করে বাজারে ব্যবসা ফলাতে আসলে তো হবে না।
এইটা ভারতবন্ধুত্ব না। ফ্রি মার্কেট ইকনমিতে নিজস্ব উৎপাদন না থাকলে যতভাবে ধরা খাওয়া যায়, বাংলাদেশে সরকার ততভাবেই ধরা খাবে। কেবলই আদর্শিক টার্মে এইটা বিচার করা যাবে না। ভারত বাংলাদেশে বাজার প্রত্যেক সরকারের আমলেই সম্প্রসারণ করে আসছে। জামাতি ও হাঁটু সরকারের আমলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত বৃহৎ কলকারখানা বন্ধ করে ভারতকে যে কম্পিটিটিভ এজ দেয়া হইছে সেইটা নিশ্চয়ই জামাতি ও হাঁটু সরকারের আদর্শিক অনুপ্রেরণার ফসল না। কারণ হাঁটু ও জামাতি উভয়ই ভারতবিরোধি পলিটিক্স করে টিকে থাকে।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
গত বিশ বছরে ভারত বাংলাদেশ থেকে বড় ধরনের অর্থনৈতিক বা বাণিজ্যিক সুবিধা যেগুলো পেয়েছে তার মধ্যে দুইটি বড় খাত আছে। ১. নব্বইয়ের দশকের শুরুতে সাবমেরিন কেবলের সাথে দেশকে যুক্ত না করে একটা দীর্ঘ সময় ধরে ভারতীয় আইটি কোম্পানীগুলোকে একচেটিয়া সুবিধা দেয়া (পরে বাংলাদেশ যখন যুক্ত হয়েছে ভারত তখন আইটিতে যোজন যোজন দূরত্বে চলে গেছে) ২. গত দশকের শুরুতে দেশে জাপানী পুরনো ও রিকন্ডিশন গাড়ি আমদানী দুরূহ করে তুলে নতুন গাড়ি আমদানীর নামে রদ্দি ভারতীয় গাড়িতে দেশের রাস্তা ভরে তোলা। এই দুইটা কাজই হয়েছে বিএনপি-জামাত জোটের দুই সরকারের আমলে। এবং উভয় ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট বিভাগের মন্ত্রী ছিলেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা।
উপরের উদাহরণটা এই জন্য দিলাম যে, বাংলাদেশকে উৎপাদন ও সুবিধাজনক আমদানীর পথ থেকে সরিয়ে একচেটিয়া ভারতীয় পণ্য ও সেবার বাজারে পরিণত করার জন্য বাংলাদেশের ভেতর নিরলস কাজ করে যাওয়া মানুষদের শক্তিশালী নেটওয়ার্ক আছে। বাংলাদেশের ক্ষমতায় মুক্তিযুদ্ধপন্থী নাকি মুক্তিযুদ্ধবিরোধী, মধ্যপন্থী নাকি উগ্রপন্থী কারা আছে সেটা খুব বেশি বিবেচ্য নয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার উদাহরণ দুটো বেশ শক্তিশালী। এবং এরা এমন দুটো কেইস, যেখানে মুক্ত অর্থনীতির ঘাড়ে পুরো দোষ বর্তায় না। বরং এখানে সরকারের হস্তক্ষেপে বদ্ধ অর্থনীতিই ঘটেছে। অন্তত যে অংশটায় সরকারি নিয়ন্ত্রণ ছিলো, সেখানটাতেই যা অপকর্ম ঘটার ঘটেছে। তো পুরো মুক্ত অর্থনীতির মধ্যেই যদি থাকতাম, তাহলে তো সরকারের কাছে হাউকাউ করে তেমন লাভ হতো না, কারণ সরকারের বাজারে হাত দেবার কোনো সুযোগই থাকতো না। কিন্তু এখানে সরকারের নিয়ন্ত্রণের সুযোগ যেহেতু আছে, ফলে আদর্শিক অবস্থানের অবশ্যই প্রভাব থাকবে। নিয়মনীতির প্যাঁচ ঘোচের মাধ্যমে ভারতকে বাজার বহির্ভূত অ্যাডভান্টেজ দেবার সুযোগ থাকলে বাজার বহির্ভূত ডিজঅ্যাডভান্টেজ দেবারও সুযোগ অবশ্যই আছে। সেখানেই আদর্শিক অবস্থানের উপযোগিতা। এখানে মুক্ত অর্থনীতির ঘাড়ে হরে দরে দোষ চাপিয়ে দেয়াটা এই ব্যাপারটাকে আড়াল করে। আর জামাতবিএনপির সরকারের ভারতবিরোধী যে অবস্থান, সেটা মোটেও আদর্শিক অবস্থান না। সস্তা স্লোগানপূর্ণ, দুর্নীতিপ্রবণ, সেনাচাটা অনাদর্শিক অবস্থান।
ফলে অর্থনীতির রকমফেরে নানা উপায়গুলোর কয়েকটি হতে পারে ১) বর্তমান মিশ্র কাঠামোর মধ্যে থেকেই সরকারি যেসব নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রগুলো আছে, সেগুলোকে নিজের সুবিধাতে ব্যবহার করে ভারতের সাথে একটা দরদামের অবস্থান তৈরি করা।
২) পুরোপুরি মুক্ত অর্থনীতি তৈরি করে দিয়ে বাজারখোদার উপর এই আশায় চেয়ে থাকা যে বাজারের নিয়মে জাপানের গাড়ি ভারতের গাড়িকে অবশ্যই খেদিয়ে দিবে। কিন্তু সেক্ষেত্রে আর দশটা ভারতের জিনিসে বাজার সয়লাব হবেই।
৩) পুরোপুরি বদ্ধ ও নিয়ন্ত্রিত অর্থনীতি তৈরি করে ভারতের সাথে হাডুডু খেলা।
এখন ২ আর ৩ অত্যন্ত তীব্র পরিবর্তন। এর মধ্যে ৩ আবার একেবারে যাকে বলে প্রগতিশীল। রক্ষণশীল মনে কি এই প্রগতি সইবে?
সমস্যাটা দুর্নীতির। দুর্নীতি না থাকলে রাষ্ট্রায়াত্ত বা মুক্ত - যেকোনো অর্থনীতিতেই বাংলাদেশ সফল হবে। থাজলে দুয়ের কোনোটাতেই হবে না। এইটা আমার মতামত।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ধ্রুব বর্ণন, মুক্তবাজার মাত্রই ইকনমিক এলিটরে *** বিছায়া দেয়। অ্যাভভান্টেজ/ ডিজঅ্যাডভান্টেজের হাডুডুর চৌহদ্দী তাদের ভিত্রেই সীমাবদ্ধ। যাউগ্গা, মুক্তবাজারের ধর্মে ঈমান আনি নাই দেইখা আপাতত নিজেকে হেদায়েতের চেষ্টা করি। আপাতত কিছু ঞলিবারল ধর্মপুস্তক পড়তেছি। কিন্তু শয়তানের বাতাস কাটতেছে না
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনি এইটা নিয়ে কিছু লেখা দিন। অন্যান্য দেশের সাপেক্ষে রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্প বাংলাদেশে গড়ে তোলার এক-দুটো পরিকল্পনা-সহ একটা সামগ্রিক লেখা।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ভারতের সাম্রাজ্যবাদী আচরণ শুধু রাষ্ট্রের না। রাষ্ট্রের নাগরিকদেরও লালন করতে দেখি অনেক সময়।
তোমার লেখার এই পর্বের সাথে হয়তো খুব বেশি যায়না।
অন্য পর্বে বলবো।
লেখাটা থামিও না
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
একটানে পড়ে যাবার মতই সুলিখিত এই পোস্ট । অধীর আগ্রহে পরের লেখটির অপেক্ষায় থাকলাম।
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
বুকমার্ক ও শেয়ার দিলাম। পরের পর্ব গুলির অপেক্ষায় থাকলাম। লেখায়
শাফি।
_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩
চলুক
এক টানে পড়ে গেলাম। জরুরি লেখা। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
একজন পশ্চিমবঙ্গবাসী ভারতীয় হয়ে এটা বলতে পারি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের বাংলাদেশ সম্পর্কে যে মনোভাব এখানে উঠে এসেছে তা অমূলক নয় । এই মানসিকতা অনেকেরই (অবশ্যই অনেকেরই নেই) আছে। আমার মনে হয় কোনকিছু গভীরে গিয়ে ভালভাবে না জেনে নিজেদের সম্পর্কে খুব সহজেই গর্বিত হয়ে যাবার একটা মানসিকতা থেকেই এর উৎপত্তি । নিজের দোষ নিজে দেখাটা কঠিন, তুলনায় নিজেকে দেশপ্রেমী করে তুলতে গিয়ে অন্যকে (এক্ষেত্রে বাংলাদেশ) ছোট করে দেখা অনেক সহজ । আমি আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি । কারণ আপনি এমন কতগুলো বিষয় উত্থাপন করেছেন যার মাধ্যমে অন্য দৃষ্টিভঙ্গি থেকে নিজেদের ভুলগুলোকে বিশ্লেষণ করা যায় । এই বিষয়ে আপনার আরো লেখার প্রত্যাশায় থাকব । অন্তত আমার মত যাঁরা ভারত থেকে সচলায়তন পড়েন তাঁদের মধ্যে একটা নিরপেক্ষ সত্যিকারের মানবতাপন্থী মনোভাব এখান থেকে তৈরী হতে পারে । সত্যি সত্যি নিজের দেশকে ভালবাসতে গেলে যে তার অন্যায় ও খারাপ দিকগুলোকে ভালো না বেসে প্রতিবাদ করা দরকার সেটা বোঝার জন্যে একটা সহনশীল উদারতা প্রয়োজন । সেটাকেই আমি মনে করি উদারতা, তা দৈনন্দিন আচার আচরণ বা বোরখা না পড়া বা রাস্তায় রাতে মেয়েদের একা বের হবার মধ্যে দিয়ে প্রকাশিত হয় না । আমি অন্তত একজন প্রকৃত ভারতীয় হিন্দুকে জেনেছি যিনি আমাকে এই শিক্ষা দিয়েছেন, অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হওয়া যায় না। সমালোচনা ও ভিন্নমতের প্রতি সহনশীলতা, নিরপেক্ষ যুক্তিসম্মত বিশ্লেষণ থেকেই একটি সভ্যতা বা দেশ বা মানুষ উন্নত হতে পারে ।তাঁর নাম স্বামী বিবেকানন্দ । তাঁকে নিয়ে মাতামাতি অনেকই হয় তবে তাঁর মতামত বা আদর্শ কজন তথাকথিত ভারতীয় বা তথাকথিত হিন্দু মানেন সন্দেহ আছে । আমার বক্তব্যে কোন অসঙ্গতি বা আপত্তিজনক কিছু থাকলে আমার ভুল ধরিয়ে দেবেন ।
প্রদীপ্তময় সাহা, স্বামী বিবেকানন্দকে নিয়ে অভিজিৎ রায়ের এই লেখাটা একটু পড়ে দেখতে পারেন। আপনি উনার ব্যাপারে আগ্রহী বলে লিঙ্কটা দেয়া।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পাণ্ডবদা আমার মনে হইছে, এইটা একটা অবরোহী রচনা। (বক্তব্যের ত্রুটি নির্দেশ করি নাই, মেথডলজিকাল লিমিটটা নির্দেশ করছি।)
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
পদ্ধতির সীমাবদ্ধতাটি আমিও লক্ষ করেছি। বস্তুত এই রকম বেশিরভাগ রচনাতেই তুমি এই প্রবণতাটি দেখতে পাবে। একটু হালকা চালে যদি বলি, তাহলে এই রকম অনেক আন্দোলনেই তুমি এই প্রবণতাটি দেখতে পাবে। পদ্ধতির এই সীমাবদ্ধতাটি ব্যক্তিকে কখনো ভ্রান্ত সিদ্ধান্তের দিকে যে ঠেলে দেয় না এমনটি নয়। বরং যারা গভীরে যেতে চান না তাদেরকে আরো ভ্রান্তির বেড়াজালে ফেলে দিতে পারে। সৎ উদ্দেশ্যে রচনা বা সৎ আন্দোলনের ক্ষেত্রে এই বিষয়গুলো উপেক্ষা না করলেই ভালো হয়।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ষষ্ঠ পাণ্ডব, আপনার দেওয়া লিংকটিতে দেওয়া প্রবন্ধটি পড়ে ভালো লাগল । আমি নিজে কোনদিনই বিবেকানন্দকে ঈশ্বর হিসেবে বা ঈশ্বরসুলভ অবতার হিসেবে দেখার পক্ষপাতি নই । এর ফলে এত ফুল-মালা জমে যে দূরত্ব বেড়ে যায় । তাঁর এই স্ববিরোধ আমার নজরে আগেও এসেছিল কিন্তু এত সুসংবদ্ধ ভাবে নয় । তিনিও আমাদের মতই একজন সাধারণ মানুষ ছিলেন । তবে আমরা আমাদের জীবনে যতটুকু অরতে পারি তিনি তার চেয়ে কিছু বেশি করতে পেরেছিলেন । এটা সকলেই মানবেন যে যেখানে যা কিছু ভালো তা গ্রহণ ও যা কিছু খারাপ তা বর্জনের মাধ্যমেই প্রকৃত উন্নতি সম্ভব । তবে সেটা করতে গিয়ে যদি পরিকল্পিত ভাবে কিছু ঘটনা অনুল্লেখিত থেকে যায় তা দুঃখের । ভাল বা খারাপ যাই থাকুক না কেন তা পুরোটা জানাটা জরুরি । ব্যক্তি বিবেকানন্দ আমার আরাধ্য কোনদিনই ছিলেন না এর পরও থাকবেন না । তবে তাঁর বলা ভালো কথাগুলো আমাকে অনুপ্রাণিত করেছে এবং করবে । আবার নিন্দনীয় দিকগুলো নিয়ে সমালোচনা করতেও পিছপা হব না । আর আমি যদি নিজেকে যুক্তিবাদী ও নিরপেক্ষ মানসিকতায় গড়ে তুলতে পারি তবে কতটুকু গ্রহণযোগ্য সেটা নিজেই ঠিক করে নিতে পারব । বিবেকানন্দ নিজেই বলেছিলেন সব কিছুকে যুক্তির আলোকে বিশ্লেষণ করতে । সেটা করতে গিয়ে যদি তাঁর ব্যাপারেও সমালোচনা করতে হয় করব । তাঁর ভালোর পাশাপাশি যা খারাপ তা নিয়েও বলব আবার তাকে কৃতজ্ঞতাও জানাব কারন তাঁর কথার ভিত্তিতেই (যুক্তিনির্ভর বিশ্লেষণ) তাঁকে অনেক ক্ষেত্রেই বর্জন করতে পারলাম । এরকম কোন ব্যাপার নেই যে কারও নিন্দা করলাম বলে সে আমার শত্রু হয়ে গেল, তার সবই খারাপ হয়ে গেল, আবার এরকমও নয় কারো কিছু জিনিস প্রচণ্ড ভালো লাগল বলেই তাঁর অন্ধ সমর্থক হয়ে যেতে হবে । সত্যের প্রতি দায়বদ্ধতাই আসল । কোন ব্যাপারেই কট্টরপন্থী হয়ে পড়লে সেই সত্যের জায়গাটা দুর্বল হয়ে যায় । তবে ওপরের মন্তব্যে আমি যে পরিপ্রেক্ষিতে বিবেকানন্দের নাম উল্লেখ করেছি তাতে তাঁর ভালো কথাগুলোরই প্রতিফলন আছে, তাই না ?
আপনাকে আবারও ধন্যবাদ ঐ লিংকটি দেবার জন্যে । আমাকে আরেকটু নির্মোহ দৃষ্টিলাভে সাহায্য করার জন্যে । ভালো থাকবেন ।
বিঃ দ্রঃ
(প্রবীর ঘোষের আরেকটি বই আমি পড়েছি । বইটির নাম "আমি কেন ঈশ্বরে বিশ্বাস করি না"(দে'জ)।
আশা করি আপনিও পড়েছেন । নাহলে পড়বেন । ভালো লাগবে ।)
আপনার এই উদারতান্ত্রিক অবস্থানকে 'অ্যাকনলেজ' করলাম। ধন্যবাদ।
... a batsman is as good as his last innings
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনাকেও ধন্যবাদ অনিন্দ্য ভাই । ভালো থাকবেন ।
ধন্যবাদ তৌফিক ভাই ।
আপনার লেখা নতুন বোধ আর দৃষ্টিভঙ্গি দিলো। এভাবে চিন্তা করিনি। শ্রমসাধ্য লেখার জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
রাষ্ট্র যখন শনৈ শনৈ উন্নতি করতে থাকে (হয়তো তার নিজেরই একটা বড় অংশকে অন্ধকারে রেখে) তখন কি ঐ রাষ্ট্রের নাগরিকদের মধ্যে পাশের অপেক্ষাকৃত অনুন্নত বা নির্ভরশীল দেশগুলো নিয়ে উন্নাসিকতা তৈরি হয়? অনুন্নত রাষ্ট্রে যেমন উন্নত রাষ্ট্রের প্রতি হিংসা আর ক্ষোভ দেখা যায়, (ধরুন, পৃথিবীর একটা বড় অংশের মানুষের আমেরিকা প্রতি ক্ষোভের কথা, যে ক্ষোভের অনেক ক্ষেত্রেই যথাযথ কারণ থাকলেও কিছু ক্ষেত্রে যুক্তিবিহীন "ওরা-কেন-বেশী-ভাল-থাকবে" জনিত ক্ষোভ) সেরকম উন্নত রাষ্ট্রেও কি পার্শ্ববর্তী দেশের (বা পৃথিবীর অন্য সকল দেশের) প্রতি একধরনের নাকউঁচু ভাব কাজ করতে শুরু করে? আপনার এ লেখাটা ভারত আর আমাদের সম্পর্ক নিয়ে, কিন্তু ভারতের সাথে সাথে পৃথিবীর অন্য যেসব দেশ হুহু করে ছুটছে পুঁজিবাদের ঘাড়ে চেপে, তাদের আচরণের কি অবস্থা জানতে চাচ্ছিলাম।
পরের পর্বের অপেক্ষা করছি।
দীপ্ত, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। আসলে অন্যদের সাপেক্ষে ভারতের অভিজ্ঞতা একজন ভারতীয়ই ভাল লিখতে পারবেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আপনার ১, ২ ভাল লাগল - অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমি একমত। ৩-এ এসে ব্যাখ্যা ১,২ এর মধ্যে ২ সঠিক, ১ হয় বুঝতে পারিনি অথবা ঠিক নয়।
আমি বাংলাদেশ যাবার আগে অবধি বাংলাদেশ সম্পর্কে যা জানতাম সেটার বিষয়ে আপনার পর্যবেক্ষণ সত্য। তবে যাবার ফলে আমার ঠিক উলটো অনুভূতি হয়েছিল। বাংলাদেশ সম্পর্কে যেরকমটা বলা হয় সেটার তুলনায় আলাদা। তবে আর কেউ যদি অন্যরকম ভেবে থাকে সেটার বিষয়ে ভেবে দেখা উচিত তিনি কেন সেরকম ভাবছেন। সেই প্রচেষ্টা আপনার মধ্যে দেখলাম না।
পরের পর্বের অপেক্ষায় ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
তিনি কেন সেরকম ভাবছেন --- প্রিসাইজলি এই বিষয় নিয়াই বর্তমান পোস্ট। বুঝাইতে ব্যর্থ হইলাম।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
না, এবার বুঝলাম। আমিও এককালে এরকমই ভাবতাম। তবে আপনাকে বলতে পারি, ইন্টারনেটের যুগে এগুলো পরিবর্তন হতে বিশেষ একটা সময় লাগে না।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
প্রবাসে ভারতীয়দের যতজনের সাথে মিশেছি, অধিকাংশের মধ্যেই ব্যক্তিগত পর্যায়ে অপছন্দের কিছু পাই নি। ব্যতিক্রম হিসেবে ২ জনকে মনে পড়ে। একজনের ধারণা ছিলো বাংলাদেশ মানে সারাক্ষণ বন্যায় ডুবে থাকা দেশ। এছাড়া পশ্চিম বাংলার এক দাদা ছিলেন খুব মজার মানুষ, আমাদের সাথে বাংলায় কথা বলতে চাইতেন না, ইংরেজিতে চালাতেন। আমি অবশ্য প্রথম থেকেই তার সাথে ইংরেজি না বলার অভ্যাস করি। দাদা বলেন ইংরেজিতে, আমি বলি বাংলায়। তিনি শেষমেশ বাংলা বলতে বাধ্য হন। এর পেছনের কারণটা কি জানা হয় নাই।
তবে
পোস্টের এই কথাটা সত্য। যেমন, ক্রিকেট ফোরামগুলোর কল্যাণে বোঝা যায়, বাংলাদেশ সম্পর্কে তাদের 'মিডিয়া'য় কি প্রচার চলে।
এই জেনারেলাইজেশনও মিডিয়ার ওই 'বাংলাদেশকে কেমন ভাবলে ফায়দা' টাইপের ফসল। মুসলমান মানেই সম্ভাব্য লাদেন, এটা শুনতে কোলকাতার স্কুল শিক্ষিকা পর্যন্ত যাওয়ার দরকার নেই, সচলেই এই জাতীয় জেনারেলাইজড বয়ান অনেকবার শুনেছি।
এখানেই মূল সমস্যা আইডেন্টিফাই করেছেন। ভারত তার স্বার্থ দেখবে। এজন্য বাংলাদেশকে পাকিস্তানের সাথে একই কাতারে দাঁড় করাতে হলে, তাই করবে। এক দিক দিয়ে দেখলে এটা অপ্রত্যাশিত নয়। কিন্তু আমাদের উচিত এই বিদ্বৎজনের কথায় মাথা নাড়িয়ে 'মুই তো পঁচা' বলে কান্নাকাটি না করে একটু মাথাটা খাটানো। কোন কথার শানে নুযূল কি, এটা একটু হিসাব করে দেখা। যেমন, আমাদের কর্মঠ হওয়ার যেমন দরকার আছে, তেমনিই সিলেক্টিভ পরিসংখ্যানের ওপর বেইজ করে 'বাংলাদেশী মানে অলস' ট্যাগায়িত করে বৈশ্বিক চাকুরির বাজারে চালু করা প্রোপাগান্ডায় বিভ্রাণ্ত না হওয়াও জরুরী। বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্য (গরু, গাড়ি থেকে শুরু করে হিন্দিতে ডাবিংকৃত ইংরেজি কার্টুনতক) - এর নির্বিচার বাজার বানালে ক্ষতি কি, এটা আমাদেরই বুঝা দরকার।
পাঁচতারা পোস্ট।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
----------------------------------------------------------------------------
একশজন খাঁটি মানুষ দিয়ে একটা দেশ পাল্টে দেয়া যায়।তাই কখনো বিখ্যাত হওয়ার চেষ্টা করতে হয় না--চেষ্টা করতে হয় খাঁটি হওয়ার!!
চলুক!
চমৎকার
বেচারী ভুগোলে কাঁচা, মমতা ব্যানার্জির জন্য করুণা।
বাংলা একাডেমীকে আনন্দ পুরষ্কারে ভুষিত করতে চাওয়ার মধ্য দিয়ে দাদাগিরির যে সূচনা হয়েছিল তা তসলিমা নাসরিনের পিঠে সওয়ার হয়ে উৎকৃষ্টতা পেয়েছিল। তবে তসলিমা নাসরিন ও হুমায়ুন আহমেদের মতো দুই বিপরীত ধর্মী সাহিত্যিককে আনন্দবাজারের অবস্থানটা বেশ মজার। এটা আনন্দবাজারের ধর্ম-দর্শন-বাণিজ্য মানস বুঝতে বেশ সাহায্য করে।
"আনন্দবাজার প্রগতিশীল মুখোশ পরা একটি মৌলবাদী পত্রিকা।" বহুবছর আগে আশির দশকে করা আমার এক বন্ধুর এই এখনো কানে বাজে। তাকে আমি অবিশ্বাসী/সন্দেহপ্রবন বলে তিরস্কৃত করেছিলাম।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
"ধর্ম-দর্শন-বাণিজ্য মানস" বুঝতে হবে। অবশ্যই।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
বিশ্লেষণের ঋদ্ধতা আর সেই সাথে ভাষার ঠাসবুনন যুগপত শিক্ষিত ও আনন্দিত করে তুলল।
বেশ গোছানো লেখা অনিন্দ্য। ভালো লেগেছে।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
লেখাটা টেনে নেয়া দরকার। বড় পরিসরের লেখা এটা। ধাম করে একটা পোস্ট দিলেই শেষ হয়ে যায়না।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
শেয়ার দিলাম। বড়সড় সিরিজের অপেক্ষায়
-------------------------------------------------
ক্লাশভর্তি উজ্জ্বল সন্তান, ওরা জুড়ে দেবে ফুলস্কেফ সমস্ত কাগজ !
আমি বাজে ছেলে, আমি লাষ্ট বেঞ্চি, আমি পারবো না !
আমার হবে না, আমি বুঝে গেছি, আমি সত্যি মূর্খ, আকাঠ !
নতুন মন্তব্য করুন