অর্থগ্রাফি শব্দটায় বাংলা নাই। গ্রিক অর্থস মানে শুদ্ধ। শুদ্ধ লিখার তন্ত্র হয় অর্থগ্রাফি। গ্রিক অর্থের সাথে বাংলা অর্থের যোগ দেয়া বিপজ্জনক নাও হতে পারে। যা কিছু তন্ত্র মোতাবেক শুদ্ধ না তা কিছুই অর্থহীন এমন প্রচারে এক দল লোক সকল সমাজেই মজুদ। তারা 'বাংলা' অর্থগ্রাফি করে কি?
শ্রীযুক্ত ফারুখ আহমেদের সমস্যা লেখ্যচরিত্রের না। তিনি একটি নিরীহ ফুলের নাম কেন বাংলায় নাই এই আক্ষেপসমেত অন্যথায় চমৎকার একটা ঘুলঘুলি রচনা করেছেন দৈনিক প্রথম আলোয়। ঘুলঘুলি দিয়ে বসন্তকাল চোখে পড়ে।
চোথা:
"'রেড নোংমাংখা' ফুলটির ইংরেজি নাম। বাংলা নাম নেই। ফুলের কোনো সুবাস নেই, তবে দেখতে আকর্ষণীয়। গাছ চিরসবুজ। উপরিভাগের তীক্ষ্ম ফলার ওপর ইট-লাল চোঙাকৃতির ফুল ফোটে বসন্তকালে। দেখতে অনেকটা বাসক ফুলের মতো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের বাগানে পাশাপাশি দুটি গাছ দীর্ঘদিন দাঁড়িয়ে আছে। গাঢ় সবুজ পাতার অগ্রভাগ বর্শার মতো সুচালো।
ডুলিচাঁপা গাছে ফুল এল কি না, তা দেখার জন্য কার্জন হলের উদ্ভিদবিদ্যার বাগানে গেলে এই ফুলের সঙ্গে দেখা। সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যার শিক্ষক মোহাম্মদ জসিমউদ্দিনের শরণাপন্ন হলাম। তাঁকে ফোন করে ফুলের বিবরণ জানাতেই তিনি নাম বলে দেন। দাঁতভাঙা সেই নাম শুনে বাংলা নামের তাগিদ অনুভব করি। নিসর্গী দ্বিজেন শর্মার শরণ নিলাম। আমাদের দেশের বেশির ভাগ বিদেশি ফুলের বাংলা নাম না থাকায় তাঁর কণ্ঠেও আক্ষেপ ঝরে।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের মণিপুরে নোংমাংখার মণিপুরি নাম হচ্ছে ‘নোঙমাঙখা অঙাঙভা’। ভারতের অন্যান্য প্রদেশেও এই ফুলের নিজস্ব একটি নাম আছে। এই ফুলের উদ্ভিদবিজ্ঞানীয় নাম হচ্ছে Phlogacanthus pubinervius। এটি Acanthaceae পরিবারের সদস্য।"
চোথা শেষ।
ফারুখ মহাশয়ের সব ভাল লাগল, কিন্তু 'অর্থ'গিরি ভাল লাগল না। সুতরাং এই কোনাব্লগ। নোংমাংখা নামে (যেটাকে তিনি বিকটদর্শন করার অভিপ্রায়ে দুইখান ঙ লাগিয়ে পুনরায় পেশ করলেন?) তার আপত্তি 'আমাদের দেশে' 'বিদেশি নামে'। কোনাব্লগে বৃহৎ আলাপের সুযোগ নাই। সবিনয়ে প্রস্তাব করি, 'আমাদের দেশ' ও 'বিদেশি নাম' উভয় সম্পর্কেই তাঁর ধারণায় গলদ আছে।
মণিপুরিরা কমছেকম তিন শতক ধরে 'আমাদের দেশে' থাকে। শুনেছি, মণিপুরি তাঁতির ছেলেটা বা মেয়েটা বহুযুগের ধস্তাধস্তির পর মৈতৈ কিংবা বিষ্ণুপ্রিয়া ভাষায় অতি-সামান্য প্রাথমিক শিক্ষা পেতে শুরু করেছে। সামান্যই হোক, কিন্তু 'আমাদের দেশেই'। আর এও শুনেছি, বিষ্ণুপ্রিয়া লেখার লিপি আর বাংলা লেখার লিপিতেও অনেকটা মিল। সুতরাং, একদিন কমলগঞ্জ কি শ্রীমঙ্গলের ঐ বালক বা বালিকা সবার্ধিক প্রচারিত পত্রিকাটি কষ্টেসৃষ্টে পড়ে ফেললে অবাক কিছু নাই। আশা করি, 'বাংলা' একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত উপসম্পাদক সেইদিন ঐ বালক বা বালিকাটির জবরদস্ত মোকাবেলা করে 'আমাদের' ভাষার লাজ রাখবেন।
চলবে।
মন্তব্য
দারুন লেগেছে। চমৎকার বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের আদলে নিজেকে না প্রতিষ্ঠান নিজের আদলে ব্যক্তিকে রূপান্তর করে, জানিনা। পত্রিকাটি নিজেদের বাংলা ভাষা অভিভাবক মনে করে। নিজেদের মত করে বাংলা বানান করে।
পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
ঠিক আছে!
চলুক---
আমাদের দেশের বিদেশী ফুলের নাম অধিকাংশই রবীন্দ্রনাথের দেওয়া। মোগলরা এনেছে। পর্তুগীজরাও এনেছে। ইংরেজরাও এনেছে। পর্তুগীজরা বেশী এনেছে ফলের গাছ।
রবীন্দ্রনাথ যখন ঢাকায় এসেছিলেন তখন বলধা গার্ডেনে বেড়াতে গিয়ে বেশ কিছু ফুলের বাংলা নাম রেখেছিলেন। বোগেন ভিলিয়ার নামটি করেছিলেন বাগান বিলাস। ক্রিসেন থিমামকে চন্দ্রমল্লিকা। রসুনিয়াকে পারুল। মাধবী মালতী রবীন্দ্রনাথেরই দেওয়া। যে নামটি আমাদের ভাষার অংশ হয়ে গেছে বহুকাল সেটিকে কিন্তু তিনি বদলে দেওয়ার ভাবনাটি করেন নি। হাসনু হেনা হাসনু হেনাই আছে।
বরিশালে যখন ছিলাম ঠিক সাগরের কাছাকাছি নোনা এলাকায় এক ধরনের গাছ দেখতাম। নাম ছৈলা। ছৈলা ফুলের মধু অতি মধুর। এটা নিয়ে একটি গল্পও লিখেছি। ছৈলা গাছটি লবণাম্বুজ। শব্দটি কঠিন। বাংলাদেশ এই শব্দটি গ্রহণ করে নাই। মুল ইংরেজি শব্দটি হল ম্যানগ্রুভ।
পরে ছৈলা গাছের আরেকটি নাম পাই--ওড়া। ওড়া বললে গাছটিকে বরিশালের কেউ চেনেই না। আমার এক দেবনাগরী বন্ধু বলেছিলেন--ছৈলা নামটি খ্যাত খ্যাত লাগে। লাগুক। কিন্তু বরিশালের ছৈলা নামটি ছাড়া আর কোনো নাম আমার রোচে না।
আমাদের দেশের উঁচু পাহাড়ের নাম কেও ক্রাডাং। এই নামটি তো প্রেমে পড়ার মত। এটা কি বাংলার অন্তর্গত নয়? বাবা শব্দটি আরবী। তাহলে কি এটাকে বদলে ঘরে ঘরে পিতা বলতে হবে?
মণিপুরী ভাষাটিও আমাদের। মণিপুরী শব্দও আমাদের। এটাকে যারা বদলাতে চায়--তাদেরই বদলে দেওয়া দরকার।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
ভালো লাগল।
[আমার চারপাশ]-[ফেবু]-[টিনটিন]
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। বাংলাদেশের ইতিহাস লেখা থিকাই আলুর এই বদভ্যাস হইছে। তারা ভাবে, তারা যা লিখবে, সেটাই স্ট্যান্ডার্ড হয়ে যাবে।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মতিচুরার কাছে মোটা দাগে সংবেদনশীলতা আশা করা ভুল, এইটা তো অপেক্ষাকৃত সুক্ষ্ম ছিল। পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
facebook
দারুণ!!! কিছু বিষয় আছে, তাড়াতাড়ি শুধরে নেওয়া ভাল। কারণ, বাড়াবাড়ি জিনিষটা খুব বিপদজনক।
নতুন মন্তব্য করুন