মাসরুর আরেফিন ইলিয়াডের অনুবাদকের নোটে এক জায়গায় লিখছেন হোমারকে আক্ষরিক অনুবাদ করতে চাওয়ায় তাকে 'আত্মা হাড়গোড় ছেড়ে গেল' — এমন একটা অভিব্যক্তি লিখতে হইছে, যেটা বাংলাসুলভ না।
আত্মা দেহ ছাইড়া গেলে অধিক বাংলা হইত কিন্তু হোমারের অক্ষর পালন হইত না, যেহেতু গ্রীকে যা লিখছে, তাতে হাড্ডিই বুঝায়। as his spirit left his bones।
আমরা বলতে পারি, আত্মা হাড্ডি ছাইড়া গেলেও তাহা বাংলাই থাকে। 'হাড়েরও ঘরখানি' রুদ্র মুহম্মদ কবিতার নাম দিছেন। এত অবিচারের মধ্যে হাড্ডিসার মানব টিকা আছে, রুদ্রের আপত্তি।
"আমি কি চেয়েছি এতো রক্তের দামে
এতো কষ্টের, এত মৃত্যুর, এতো জখমের দামে
বিভ্রান্তির অপচয়ে ভরা এই ভাঙা ঘরখানি?
আমি কি চেয়েছি কুমির তাড়ায়ে বাঘের কবলে যেতে?"
গোয়ালপাড়িয়া গানে আছে 'হাড়েরও ঘরখানি, চামেরও ছাউনি, বন্ধে বন্ধে তার জোড়া'। এই হাড্ডি কি নেয়াহেৎই হাড্ডি, নাকি মেটাফোর সেইটা বলা কঠিন। কারণ, ঐ গানেই -- দিনে দিনে খসিয়া পড়িবে রঙ্গীলা দালানের মাটি -- এই রঙ্গীলা দালান, মাটি ইত্যাদি দিয়া দেহই তো বুঝায়।
কিন্তু দেহ, কলিম খানের আবদারে, দিহ্ ক্রিয়ামূল থাইকা জন্মাইছে। অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া। দেহ বাড়ে। শরীর আসছে শৃ ক্রিয়ামূল থাইকা। মানে শীর্ণ হওয়া। ইংরাজীতে শি্রংক্-ও বটে। তাই আমরা শরীরের খোঁজ নেই, দেহর খোঁজ নেই না। মঈন চোধুরী এই ক্রিয়াভিত্তিক ভাষাতত্ত্ব উড়ায়া দিছেন। ভালই করছেন। তার কথা হইল, তাইলে বুড়া লোকরে জিগাইতে হবে, আপনার শরীর কেমন। পোলাপাইনরে বলতে হবে দেহ কেমন। আবার মানুষ মরলে পরে বলতে হবে শরীর রাখছেন। মৃতদেহ বলা ঠিক না। মৃতদেহ কি বাড়ে? চৌধুরীর টিপ্পনী।
কলিম খান ব্রহ্মার দেহরে চূড়ান্ত মানেন বইলা মনে হয়। ব্রহ্মার দেহ হইতে মনুর উদ্ভব। মনু হইল মানুষের আদি। ব্রাহ্মণের ভাষে তাই দেহ বড় পোক্ত জিনিস। তার উত্তরোত্তর বৃদ্ধি কাম্য। রঙ্গীলা দালানের মতন খইসা পড়লে মুশকিল।
তাইলে, আবার ভাবি, রঙ্গীলা দালান কী আসলে মাত্রই দেহ। বডি? নাকি, উহাতে দালানও বুঝায়। সমাজের উঁচালোকের দালান? গরীবের গানে তার বৃদ্ধি নাই।
গান শুনি (এই গান বিখ্যাত করছেন প্রতিমা বড়ুয়া পাণ্ডে কিন্তু 'আধুনিক' কারবারটাও ভাল হইছে)
× ইলিয়াড: হোমার (ভূমিকা, অনুবাদ, পাঠ-পর্যালোচনা - মাসরুর আরেফিন), পাঠক সমাবেশ, ২০১৫
× বাংলা ভাষার বানান সংস্কার: কলিম খান মঈন চৌধুরী বিতর্ক (শওকত হোসেন সম্পাদিত), লোক-নালন্দা প্রকাশন, ২০০৭
মন্তব্য
উপভোগ করলাম
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
I think we are in rats' alley
Where the dead men lost their bones
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ইলিয়াডের এই কপি যতবার হাতে নিছি, ততবার আমার আত্মাই জিন্দা হাড্ডি ছাইড়া ছুট লাগাইছে। আর হোমার এই বই হাতে নিলে তাঁর আত্মা মনে হয় হাড্ডি লইয়াই ছুট দিত।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হোমার যা করছে মুখে মুখে করছে। এইবার আরেকবার ভাবেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আচ্ছা, হোমার কি আসলেই পুরাটা করছিল? নাকি হেতে কেবল কাহিনী বানায়া গপ্প শোনাইত, পরে সংকলক বাহিনী আপডেট করছে??
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হোমার পালাকার ছিল। পালা গাইত। লিখে রাখার বিষয়টা আরও কয়েক শতক পরের। হোমারেরও আগে এইসব গল্পের অনেক কিছুই মুখে মুখে ফিরার কথা।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
না না, তা জানি। আমার আগ্রহটা "এই বিশাল পালা কি হোমারের মুখে মুখেই সঞ্চালিত? নাকি লিখিত রূপদানের সময়ের পরিবর্ধিত সংস্করণ?"
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
মহাকাব্য তো একসাথে পুরাটা গাওয়া যায় না। যেহেতু অনেকটাই ভাষণ-বক্তৃতা, খণ্ড খণ্ড মনোলগ হিসাবে পারফর্ম করা হইত। আবার টেক্সট আমরা এইকালে যেভাবে সংঘবদ্ধ ভাবি, এপিক সংস্কৃতির কালে হয়ত অন্যভাবে ভাবত। হনুমান চলিসা/চল্লিশা পৃথক টেকস্ট আবার বৃহত্তর রামায়ণের অংশও। গীতা মহাভারতের। আবার সপ্তকাণ্ড রামায়ণের উত্তর-কাণ্ড বাল্মিকীর রচনা না এমন মত পাওয়া যায়।
হোমারের ক্ষেত্রে অপারাপার মহাকাব্যের মতোই ( ডিভাইন কমেডি বা মেঘনাধবধের মতো আধুনিক 'মহাকাব্য' বাদ দিলে) পরিবর্ধিত, পরিবর্তিত, পরিমার্জিত সবই হইছে। হিপার্ক (?) (Hipparch) এর সময় প্যান-এথেনীয় যে প্রতিযোগিতা হইত, সেখানে এইসব পালার রিটেন ফর্ম জমাটমার বিষয় ছিল। হোমার "কে বা কারা" সেই প্রশ্নে বির্তক তো আছেই।
অ।ট।
ভার্জিলের ঈনিডে ট্রয়ের ঘোড়ার প্রসঙ্গ আছে। ইলিয়াডের কাহিনী অনেকটাই পাওয়া যাবে। এখন যদি বলি ট্রয়ের "মিথ" তাহলে সেটা নির্দিষ্ট এপিকের সীমিত টেকস্টের বাইরে সদা রূপান্তরশীল ও সৃষ্টিশীল। আমি ঈনিডের একটা টুকরা ভাবানুবাদ করছিলাম, আট আনা ভ্যাজাল মিশায়া। আপনার সাথে কথাবার্তায় মনে পড়ল।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হোমার কি অন্ধ ছিলেন নাকি?কোথাও এরকম পড়েছিলাম যেন, নাকি স্মৃতি ভুল বলতেছে শিওর না।
তবে হোমারের সাথে লালনের কিছুটা যেন মিল লাগে। দুজনেই মুখে মুখেই তাদের সৃষ্টিকে লালন করে গেছেন।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
সব ছবিটবি ভাস্কর্যে হোমারকে অন্ধই দেখায়। অন্ধ হলেও লিখতে তো হইত না তাকে। তবে, লিখতে হইলেও অন্ধত্ব বিষয় না। মিল্টন প্যারাডাইস লস্ট অন্ধ অবস্থায় শেষ করছে। লালন আর হোমারের তুলনাটা ইন্টারেস্টিং। প্রসঙ্গত, একটাকে ফোক বলি আরেকটাকে ক্লাসিকাল। আসলে কিন্তু দুইটাই ফোক। এইটা পশ্চিমা অ্যাকাডেমিক বিবেচনার/অভ্যাসের ফল। শেক্সপিয়র ক্লাসিকাল, কিন্তু মনসামঙ্গল ফোক!
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
লালন ভাষ্যে গরীবের দেহ রঙ্গীলা দালান না, গরীবি খাঁচা। তৈরী কাঁচা বাঁশে। সেইটাও তবে রঙ্গীলা দালানের মতো খইসা পড়ে।
"ত্রিজগতে যে রায়রাঞা
তার দেখি ঘরখানা ভাঙা
হায় রে মজার আজব রঙা
দেখায় ধনি কোন ভাবে"
মঈন চৌধুরী আবার কইছেন মানুষের দেহ আসলে বিভিন্ন জ্যামিতিক বিন্যাসের সমন্বয়, নমনীয় হাড় তার।
আর আইয়ুব বাচ্চু বলছেন 'মন চাইলে মন পাবে, দেহ চাইলে দেহ'। হাড়ের গেরস্ত নাই
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
পচুর পেজগি দেখা যায়।
..................................................................
#Banshibir.
মঈন চৌধুরী কই?
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
কতদিন পর লিখলেন ভাইসাহেব?
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ব্লগ পারি না। পুরান বাড়িতে বেড়াইতেই আসলাম মনে করেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
আমি পারতপক্ষে শব্দের রূপে মোহিত হই না বা তার ফাঁদে পা দেই না। কারণ, এই তৈলাধার পাত্র আর পাত্রাধার তৈলের আলোচনা অনিঃশেষ। শব্দের উৎপত্তি কোথা থেকে? ক্রিয়ামূল, ধাতু ইত্যাদি বলে কি পার পাওয়া যায়! তারও তো মূল আছে। সৃষ্টি শুরু নাকি নাদ বা শব্দ দিয়ে। সেটা সত্য হলে শব্দই পরম। ওঁ ব্রহ্মায় নমঃ!
একবার দেহ আর মনের গুরুত্ব, অবস্থান ইত্যাদি নিয়ে চিন্তাভাবনা করে কূল কিনারা করতে না পেরে এই লেখাটা লিখেছিলাম।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
অর্ধেক খাওয়া আপেল নিয়াও অনিঃশেষ আলোচনা আছে। অর্ধেক যখন খাইছেনই, পুরাটাই খাবেন, নাকি, বাকিটা স্টিভ জবসের মতন রাইখা দিবেন? (আপনার পোস্টে মোর্শেদ ভাইয়ের কমেন্ট দ্রষ্টব্য)
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
ফয়সালা হয়েই আছে। মন নিয়তই বহুগামী, সদাচঞ্চল। সমাজ সংসার (তথা আইনকানুন, সামাজিক অবস্থান, শেখানো নীতিনৈতিকতাবোধ, ধর্ম ইত্যাদি) বিবেচনা করে মন তার তরলমতিত্ব সচরাচর প্রকাশ করেনা মাত্র। দেহের আকাঙ্খা তো মনেরই তাড়নায়, তাই দেহও বহু'র প্রত্যাশী। আগে বলা প্যারামিটার অথবা ফ্যাক্টরগুলো দেহকেও বেঁধে ফেলে। যাদের এলেম, তাকত আর হিম্মত আছে তারা প্যারামিটার অথবা ফ্যাক্টরগুলোকে পরোয়া না করে আকাঙ্খা মেটায়। আর যারা পারে না তারা অন্য জীবনে ৭০ নাকি ৭২-এর প্রত্যাশা করে থাকে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
গানের লিঙ্কটার জন্য অসইঙ্খ্য ধন্যবাদ। দারুন! এই লিঙ্কের সুবাদে কোক স্টুডিওর আরও কিছু ইন্টারেস্টিং গানেরও সন্ধান পাইলামঃ
https://www.youtube.com/watch?v=QnOK_hcHN5o&spfreload=10
https://www.youtube.com/watch?v=FnDmg-cBVsA
https://www.youtube.com/watch?v=m3wAFGeuUNw
https://www.youtube.com/watch?v=qVjn_hIfaEE&list=RD5KT2D-L283k&index=7
****************************************
৪ নম্বরের ঝুমুর গানটা সাব্লাইম
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
গানটার লুপে পড়লাম
আপনি "গোয়ালপাড়িয়া" শব্দটা উল্লেখ করেছেন বলে একটা বোকার মত প্রশ্ন - এই "গোয়ালপাড়িয়া" কি ও কোথায়? খায় না পিন্দে? এখানে যে ভাষায় কথা বলা হয় সেটা কি বাংলা নাকি অন্যকিছু? "সুন্দরী কমলা" গানটার ক্ষেত্রে নেটে এক বিতর্কে দেখলাম অসমীয়ারা অত্যন্ত জোরগলায় দাবী করছেন যে এই গানটা কোনভাবেই "বাংলা" না! এটা নাকি আসামের গোলপাড়িয়া অঞ্চলের ভাষা ও গান - বাংলার সাথে কিছু মিল থাকলেও আসলে ভিন্ন ভাষা। এই বিষয়টা বুঝলাম না। আপনার (বা অন্য কোন পাঠকের) কিছু জানা থাকলে বুঝিয়ে দেবেন প্লিজ?
****************************************
এইখানে দেখেন, অল্পস্বল্প কিছু বলা আছে। একটু কষ্ট করে পড়লে এখানেও কিছু পাবেন। আরও কষ্ট করলে এই আবেদনটাও পড়ে দেখতে পারেন।
এখানে গোয়ালপাড়িয়া গানের শিল্পী প্রতিমা বরুয়া* পাণ্ডে সম্পর্কে কিছু কথা আছে।
* বড়ুয়া'রা বৌদ্ধ, বরুয়া'রা অহমীয়া হিন্দু।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
নতুন মন্তব্য করুন