মুক্তিসংগ্রামের মাধ্যমে যেসব দেশের পথচলা শুরু, সেসব দেশের মানুষের কাছে স্বাধীনতা এবং বিজয় দিবস ভিন্ন অনুরণন নিয়ে আসে, প্রতিবছর। এটাও হয়ত সত্য যে সবাই সেসব উদযাপন করেন না, বা করলেও ভিন্নভাবে করেন, বা উদযাপন না করার পেছনে ব্যক্তিগত (ইমার্জেন্সি) কারণ থাকে। কিন্তু নিজে(রা) উদযাপন না করলেও বাকিদের উদযাপনে বাধা হয়ে দাঁড়ান বলে মনে হয় না। আমাদের দেশে জেনে না-জেনে আমরা সেটাই করি, খুব সুক্ষ্মভাবে।
ঘটনার সূত্রপাত অনেক আগে, কিন্তু তার আগে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা দিয়ে শুরু করি। তখন আন্ডারগ্র্যাড পড়াশোনা করি। পরেরদিন স্বাধীনতা দিবস, মানে ২৫ তারিখের কথা বলছি। সারাদিন জেলা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কাজ, সন্ধ্যার দিকে খানিকটা সময় পেয়ে ভাবলাম একটু ক্যাম্পাস থেকে ঘুরে আসি, অল্প বিশ্রাম নেয়া ভালো কারণ রাতে ফিরতে দেরী হবে। যাবার পথে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্বাধীনতা দিবসের গান বাঝছে। ক্যাম্পাসে গিয়ে শুনি ক্যাম্পাসের মসজিদ থেকে স্বাধীনতা দিবসের ওয়াজ মাহফিল। যথারীতি তারস্বরে। আশেপাশের কোনো গানই আর কানে আসছে না। যতক্ষণ ক্যাম্পাসে ছিলাম সেটা চলতে থাকলো। অগত্যা শহরের দিকে ছুটলাম।
মধ্যরাতে রুমে ফেরার পর গান ও নাই, মাহফিলও নাই। পরেরদিন ২৬ মার্চ। যথারীতি মাহফিল শুরু হয়ে গেল স্বাধীনতা দিবসের গানের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে। মাহফিলে একটা শব্দও শুনি নাই মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। তবে মাহফিলের শব্দে হারিয়ে গিয়েছিল বঙ্গবন্ধুর ভাষণ। এই যা প্রাপ্তি।
২.
ওই বছর বা পরের বছর গ্রামের বাড়িতে যাই স্বাধীনতা কিংবা বিজয় দিবসের সময়। হুবহু একই কাণ্ড। মসজিদ থেকে উচ্চস্বরে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন। স্বাধীনতা বা বিজয় দিবসের নামগন্ধও নাই।
বাবাকে জিজ্ঞেস করে জানলাম এটা নতুন কৌশল। বিষয়টা এতই স্পর্শকাতর যে এটার বিরুদ্ধে বলা সম্ভব না। কিন্তু আমি তখনও পর্যন্ত এটাকে খুব পরিকল্পিত কোন উদ্যোগ হিসাবে বিবেচনা করি নাই।
পরে অনেক বন্ধুদের জিজ্ঞেস করে জানলাম তাদের এলাকাতেও ওয়াজ মাহফিল হয় কিন্তু তারা বিষয়টাকে ভালোভাবে নিয়েছেন, কারণ তাদের মনে হয়েছে যে এর মাধ্যমে আরো বেশি মানুষকে স্বাধীনতা/বিজয়/মুক্তিযুদ্ধ ইত্যাদির সঙ্গে একাত্ম করা গেছে।
যখন জিজ্ঞেস করলাম, ওয়াজ মাহফিলে মুক্তিযুদ্ধ বা রাজাকার, জামাত, আল-বদর ইত্যাদি নিয়ে কথা হয় কি না, তখন তারাও বিস্মিত হয়ে মনে করার চেষ্টা করলেন, এবং জানালেন তেমন কিছু তাদের মনে পড়ছে না। অতএব এই ওয়াজ মাহফিল যে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বাস্তবায়নে করা হচ্ছে না, সেটা প্রায় নিশ্চিত। আমার আপত্তি, অন্তত এই ক্ষেত্রে, ওয়াজ নিয়ে না, বরং ওয়াজের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের নাম মিশায়া মুক্তিযুদ্ধ ভুলানোর প্রয়াসে।
৩.
মুসলিম মাত্রই ওয়াজ পছন্দ করবেন, এটা যে সত্য না- সেটা মূল পরিকল্পনাকারীরা ঠিক-ই জানেন। তাই তাদের জন্য বিকল্প ভেবে রেখেছেন তারা। সেটার নাম বিজয় দিবস পিকনিক বা ভাষা দিবস হাউজি জাতীয় কিছু। ২০১৩ সালের দিকে দুম করে 'গেট টুগেদার' জাতীয় ফেইসবুক পেইজের প্রাদুর্ভাব দেখা যায়, যেমন: "জামানত আলী আধুনিক ইংলিশ মিডিয়াম প্রি-ক্যাডেট প্রাথমিক মাদ্রাসা ১৯৭৬ ব্যাচ"। দলে দলে সবাইকে 'ইনভাইট' করা হয়। শুরুতে দেশের দুস্থ মানুষের জন্য শীতবস্ত্র বা পাঠ্যপুস্তক সংগ্রহের আয়োজন করা হয়। প্রবাসী ছাত্র/জনতা/কমলারা বেশি করে আগায়া আসেন। মূল টাকা যায় জামাতের রগ-কাটা কর্মসূচীর পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নে। কিন্তু আমাদের আলোচ্য বিষয় অন্যখানে।
এইসব গ্রুপ থেকে প্রায়শই পিকনিক জাতীয় কর্মসূচিও হাতে নেয়া হয়। এবং এসব পিকনিকের তারিখ ঠিক কোনো না কোনো জাতীয় দিবসে (কারণ ওই দিনগুলো সরকারী ছুটি)। ঢাকার অদূরে তারা বউ-স্বামী-বাচ্চাসহ পিকনিক করেন। স্বাধীনতা/বিজয়/ভাষা দিবস গুলে খান বিরিয়ানি আর বোরহানি দিয়ে।
অনেকদিন ধরে পর্যবেক্ষণ করে যেটা দেখলাম, কোনো ধর্মীয় ছুটির (ধরেন শব-এ-বরাত) দিনে ইনারা পিকনিক করতে যান না। প্রায়শই এসবের আয়োজনে থাকে ল্যাঞ্জাঅলা বা গুপ্তল্যাঞ্জাযুক্ত রাজনীত-বিমুখ গোলগাল বন্ধুটি। এরকমই বিম্পি-দশমিক-পাঁচ (মানে প্রায়-জামাত) এক সহপাঠীকে জিজ্ঞেস করসিলাম ভাষা দিবসের পিকনিকে ভাষা দিবসের কোনো আকার-ইঙ্গিত থাকবে কি না, সে আমারে ধুইয়া দিসিলো এই বৈলা যে আমি নাকি বেশি বেশি।
কথা সত্য। হয়তো আমি/আমরা বেশি বেশি। স্বাধীনতা বা বিজয় দিবস আসলে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে বিরিয়ানি আর বোরহানি দিয়ে না গিলে জয় বাংলা দিয়ে অনুভব করা যদি বেশি বেশি হয়, তাইলে জয় বাংলা। আর বেশি বেশি যদি না-হয়, তাইলেও জয় বাংলা।
মন্তব্য
গুরুত্বপূর্ণ এবং ভালো অবজার্ভেশন। ধন্যবাদ।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ! এ তো ভয়াবহ ব্যাপার। শিরোনাম ব্যাঙ্গার্থে ভেবেছিলাম, এমনটা ভাবি নি। যাকবাবা, আমাদের এলাকায় (এখন পর্যন্ত) এমনটা খেয়াল করিনি।
পুনশ্চঃ এইজন্যই শাহাবাগে আইসা এরা খালি বিরানী খুঁজে বেড়ায়?
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সবখানে আসলেই হয় না। যেমন নানুবাড়ির পাশে মসজিদে, বা ওই এলাকায় হওয়া কঠিন।কারণ, ওই এলাকায় আমার নানা-মামাদের সমসাময়িক প্রাপ্তবয়স্কদের বেশিরভাগ মুক্তিযুদ্ধ করেছে, ওরাই মসজিদ কমিটির দায়িত্বে, এমনকি ওই মসজিদের ইমামকে আমি নিজে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শের পক্ষে বয়ান দিতে শুনেছি। আসলে নির্ভর করে কে/কারা দায়িত্বে আছেন এসবের উপর।
তবে বন্ধুসমাজে পিকনিক বা হাউজির বিষয়টা মাথায় রাইখেন
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
গুড পয়েন্টস।
মসজিদ কেন্দ্রিক রাজনীতিটা খুব মজার আসলেই। মসজিদ্গুলাতে যে সব বয়ান হয় সেগুলা এমন না যে অ্যাপলিটিক্যাল। সেটা হলে মেনে নেয়া যেত। অনেক ক্ষেত্রেই সচেতনভাবেই এরা এন্টি বাংলাদেশ পলিটিক্সের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। মসজিদে মুস্লিম উম্মাহের জন্য যত দোয়া হয়, আরব পাকিস্তানের জন্য যত দোয়া হয় বাংলাদেশ স্পেসিফিক দোয়া তত হয় না। ছোটবেলায় মনে আছে বাসার পাশের মসজিদে পাকিস্তান নিয়েও বয়ান হত। এই হিসাবে যে, মুসলিম দেশগুলার মধ্য একমাত্র পাকিস্তানেরই আছে পারমাণবিক বোমা।
মসজিদ্গুলোকে কেন্দ্র করে কী ধরণের লোক কী ধরণের পলিটিক্যাল এজেন্ডা বাস্তবায়নের চিন্তা করে এই ব্যাপারে এলাকার মানুষজনের সচেতন হওয়া দরকার।
_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই
হ, ঠিকাছে! তয়,
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এটাই ঘটনা। তবে, এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে কীভাবে, কোন ভাষায়, কোন কায়দায় কথা বলতে হবে, সেটা নিয়ে সিরিয়াসলি ভাবা দরকার।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
অবশ্যই।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
পারমাণবিক বোমার কারণে পাকিস্তানের জন্য দোয়া করার ঘটনা ভীতিকর, তবে খুবই প্রত্যাশিত। তবে, সবাই জেনে করে এমন না। সচেতনতার যে-কথা বলেছেন, সেটা খুব জরুরি, এবং সত্যিই কার্যকর। আমাদের গ্রামে মিলাদ পড়ানোর সময় হুজুররা ঊর্দুতে ‘শায়ের’ পড়তেন। আমাদের বাসায় মিলাদ পড়ানোর সময় স্পষ্টতই বলা হলো আরবি (এটা ছাড়া ওরা পারবে না আসলেই) এবং বাংলায় মিলাদ পড়ানোর জন্য; ঊর্দু/ফারসি এসব বাদ। হুজুর মুহূর্তেই রাজি হলেন, এবং বললেন যে তিনি আসলে কখনো খেয়াল করেন নাই যে ঊর্দুতে বলা উচিত না। মাদ্রাসায় তাকে যেভাবে শেখানো হয়েছে তিনি সেগুলোই মুখস্ত পড়ে যেতে পারদর্শী হয়ে উঠেছিলেন।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
ভাল পর্যবেক্ষণ!
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
ধর্মীয় আচারের মধ্যে সবচেয়ে বেশী অপছন্দ করি ওয়াজ মাহফিলকে। তারস্বরে চৌঙ্গা মাইকের অসহনীয় ওয়াজ মাহফিল রীতিমত পীড়ন দেয়। আপনার পর্যবেক্ষন আমাদের অদূর ভবিষ্যতের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভয়াবহতার দিকে ঈঙ্গিত দেয়। মনটা খারাপ হয়ে গেলো।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ওয়াজের বর্তমান ফরম্যাট আরো দীর্ঘদিন চলবে বলে মনে হয়। উচ্চস্বরে চিৎকার করে কথা বলা আমাদের সংস্কৃতির অংশ।
১। চিৎকার করে কথা বলা:
অধিকাংশ রাজনৈতিক বক্তব্য (যেমন: ভাইয়েরা আমার, আমরা ক্ষমতায় এলে দুইটা পদ্মা বিরিজ বানা্বো) চিৎকার করে না বলে কনফারেন্স বক্তব্যের মতো করেও বলা সম্ভব। কিন্তু চিৎকার করে না বললে পাবলিক তেমন খায় না মনে হয়। তাই ওয়াজেও চিৎকার করে কথা বলার একটা কায়দা চালু হয়ে গেছে।
২। উন্মুক্ত মাইকের ধ্বনিতে সবাইকে শুনতে বাধ্য করা:
এটা হওয়া উচিত ছিলো একটা নির্দিষ্ট স্থানে, যেখানে মানুষ নিজেরা ওয়াজ শুনতে আসবে, এবং যারা শুনতে চাইবে না তারা শুনবে না। কিন্তু, আমাদের দেশে মহিলাদের জন্য সর্বত্র বিশেষ আয়োজন না-থাকার কারণে/অজুহাতে, বা তাঁদের একটা অংশ বাড়িতে বসে শুনতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবার কারণে, মাইক করে দেয়া হয় উন্মুক্ত। যাঁরা ওয়াজ শুনতে চান না, তাঁদের জন্য এটি যে শুধু অত্যাচার তা-ই নয়, অসুস্থও। যাদের হৃদরোগ আছে (বিশেষত যাঁদের পেসমেকার আছে) তাঁদের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
৩। অনিয়ন্ত্রিত সময়সূচী:
যারা ওয়াজ করে থাকেন বা এতে অংশ নিয়ে থাকেন, তাদের বেশিরভাগই মোটামুটি বেকার কিছিমের। বা অন্তত খুব সিরিয়াস সৃজনশীল কজে নিয়োজিত নন বলে ধারণা করা যায়। ফলে, তাদের পক্ষে যেকোনো পরিমাণ সময় এর পেছনে ব্যয় করা অসঙ্গত নয়, তাতে আমাদের বিশেষ অসুবিধারও কোনো করাণ দেখি না যতক্ষণ না তাদের এই ঘটনার প্রভাব বাকিদের উপরও পড়ে। কেউ নিজের বাসায় বা কোনো সাউন্ড-প্রুফ ঘরে/মিলনায়তনে বসে দিবারাতঅষ্টপ্রহর ওয়াজ করলে বা শুনলে (এবং সেই শব্দ বাইরের কাউকে আক্রান্ত না করলে) তাদের বাধা দেয়ার কিছু নাই। এ-কথা ওপেন এয়ার কনসার্টের ক্ষেত্রেও সত্য। যারা শুনতে চায় না তাদেরকে জোর করে শোনানো অপরাধের পর্যায়ে পড়া উচিত।
কনসার্টের সুবিধা হচ্ছে যে-কেউ গিয়ে একসময় বলতে পারেন বন্ধ করতে, ওয়াজ বন্ধ করার কথা হুজুররাও বলতে দ্বিধা করবেন। এই জায়গা থেকে বেরিয়ে আসার কায়দা বের করা দরকার।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
ষণ্ডচক্ষু!!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
সাক্ষীদা
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস এবং শহীদ দিবসে বিটিভির বা বাংলাদেশ বেতারের খবরে সব সময় শুনে এসেছি - 'শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মসজিদে মসজিদে বিশেষ দোয়া করা হয়, অন্যান্য ধর্মীয় উপাসনালয়েও অনুরূপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়'। মন্দির, গীর্জা বা প্যাগোডায় এমন কিছু হয় কিনা জানি না কিন্তু আজ পর্যন্ত এমন কোন মসজিদে খুতবার বয়ান বা ওয়াজ শোনার অথবা মোনাজাত করার সৌভাগ্য হয় নাই যেখানে মুক্তিযুদ্ধে বা ভাষা আন্দোলনে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয়েছে। অথচ কাশ্মীর/আফগানিস্তান/চেচনিয়া/বসনিয়া/ফিলিস্তিন/ইরাকের শহীদ মুজাহিদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করে প্রায় প্রতি সপ্তাহে দোয়া করা হয়/হতো। রেডিও-টিভির খবরে যদি বলে দিত বায়তুল মোকাররম মসজিদ ছাড়া অন্য কোন কোন মসজিদে এমনটা হয় তাহলে সেই্সব মসজিদে্র একটায় গিয়ে স্বাধীনতা দিবস/বিজয় দিবস/শহীদ দিবসের মোনাজাতে শামিল হতাম। আজ পর্যন্ত কোন জুম্মার খুতবায় বা বয়ানে অথবা কোন ওয়াজের বয়ানে জেএমবি/আনসারুল্লাহ জাতীয় জঙ্গীদের কার্যকলাপ নিয়ে কোন সমালোচনা শুনিনি, জামাত-শিবিরের কাজকারবার নিয়েও ইসলামের দৃষ্টিকোণ থেকে কিছু বলতে শুনিনি।
মোনাজাতে ভাষা শহিদদের মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মাত মাগফেরাত কামনা করে দোয়া করা হয় আমাদের এলাকার মসজিদে। আপনি বোধহয় শুধু আপনার এলাকার কথা বিবেচনা করেই এ কমেন্টটা করে ফেলেছেন।
আমিও একমত। এটি এলাকার উপর নির্ভর করে।
মুশকিল হচ্ছে, অসাম্প্রদায়িক চেতনার লোকজন মোটা দাগে মসজিদ/মাদ্রাসাসহ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান/অনুষ্ঠান বর্জন করেন। ফলে, জামাত/শিবির ইত্যাদি শক্তি ওই জায়গাটুকু নিয়ে নিয়েছে। মনে রাখতে হবে, জামাত/শিবির ইত্যাদি কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশেই ইসলামকে ব্যবহার করে। প্রায় ৯০ শতাংশ মুসলিমদের একটি দেশে মসজিদ/মাদ্রাসাসহ ইসলামিক ক্ষেত্রটা উপেক্ষা করা খাঁটি বোকামি। মুক্তবুদ্ধিসম্পন্ন মেধাবী মানুষ যখন অবসর নেবেন, সে-জায়গাটা গণ্ডমূর্খদের দখলে যাবে, এ-তো প্রমাণিত সত্য। শিল্প-সাহিত্যের উদাহরণ থেকে আমাদে অনেক কিছু শিখবার অাছে নিশ্চয়ই।
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
এইটা পর্যবেক্ষন নয়, রীতিমত ডিসকভারি। গ্রেট ব্রাদার।
আমি গত দুদিন গ্রামে কাটিয়েছি। কিছুটা আপনার মতো অভিজ্ঞতা হয়েছে। এক পাড়ায় চলছে স্বাধীনতার গান, অন্য পাড়ায় চলছে ওয়াজ মাহফিল, কোনটাই কেউ ঠিকমতো শুনতে পারছে না। মাঝখানে গ্রামে গিয়ে আমার শান্তিপূর্ণ সময় কাটানোর সাধটা ঘুচে গেল। সারারাত নির্ঘুম কাটিয়েছি আড্ডাবাজি করে। পরদিন খোঁজ নিয়ে জেনেছি ব্যাপারটা প্রতিযোগিতামূলক বা ইচ্ছাকৃত ছিল না, কিন্তু দুপক্ষের মাইক নিয়ন্ত্রণেও কেউ কাজ করেনি, কেননা সব ছেলে ছোকরাদের কাজ। আজকাল মুরব্বীরাও ছেলেপিলেদের ঘাঁটাতে সাহস পায় না। কিন্তু আমার মতে মাইক/সাউণ্ড সিস্টেম জিনিসটার ব্যাবহার বাংলাদেশে এখনো চরম অনিয়ন্ত্রিত এবং বেয়াড়া। যে কেউ রাস্তার মোড়ে বা বাড়ির ছাদে একটা মাইক বেঁধে গণতন্ত্র চর্চা শুরু করতে পারে হাজারো শান্তিপ্রিয় জনতার কানকে টার্গেট করে। সেটা মাঝদুপুর বা মাঝরাত কোন ব্যাপারই না।
এদেশে শীতকালে দুটো সবচেয়ে বড় শব্দ দুষণ হলো ওয়াজ মাহফিল এবং গায়ে হলুদের ব্যাণ্ড সঙ্গীত। এই দুটোর নির্ধারিত সময় হলো মধ্যরাত থেকে শেষরাত। এইসব অসভ্যতার বিরুদ্ধে আইনের কোন প্রয়োগ আমি কোথাও দেখিনি। কেননা শব্দ সন্ত্রাসকে এখনো অপরাধের পর্যায়ে দেখা হয় না বাংলাদেশে।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হ্যাঁ। অভিযোগ করতে গেলে অন্যেরা/অভিযোগ গ্রহণকারীরা বলবে-
আরে, আরেকদিন আপনে জোরে বাজায়ে শোধ নিয়া নিয়েন।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
গায়ে হলুদে ব্যান্ডের বিষয়টা বঙ্গদেশে আমদানীর ইতিহাস কী?
----------------------------
নয় মাসে হলো তিরিশ লক্ষ খুন
এরপরও তুমি বোঝাও কি ধুন-ফুন
নতুন মন্তব্য করুন