ছবিব্লগঃ আমার দেখা শাহবাগ

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি
লিখেছেন অনুপম ত্রিবেদি (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৬/০২/২০১৪ - ৪:৪০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

অফিসে বসেই শুনলাম খবরটি। তখনও লাঞ্চ করিনি। অনেকক্ষন 'হা' করে বসে থাকলাম। বুঝে উঠতে পারছিলাম না, ঠিক কি হলো বা কি হতে যাচ্ছে। অফিসের জামাতপ্রেমীদের মুখে ফিঁচেল হাসি, কেউ অবশ্য আমার সামনে পড়ছে না ভয়ে। আর লীগ-বিরোধীদের একরাশ উচ্ছাস নিয়ে জিজ্ঞাসা - ' স্যার, আপনি যে বলতেন জামাতের অনেক টাকা, আসলেই সত্যি। দেখলেন কেমন করে হাসিনাকেও কিনে নিলো!' এই বলে শুরু হলো তাদের ঘটনা ব্যাবচ্ছেদ। আমি কোনো কথা না বলে বোঝার চেষ্টা করছি, অনেকটা বোবার মতো - শুধু এদিক ওদিক তাকিয়ে। পুরোপুরি 'পাজলড' যাকে বলে, আমার অবস্থা সেই রকম!

ফেসবুকে ঢুকলাম, সবার মেজাজ বোঝার চেষ্টা করলাম, নাহ, সবাই গরম! স্ট্যাটাসে স্ট্যাটাসে ঝরে পড়ছে ক্ষোভ, রাগ আর তীব্র প্রতিবাদ। কিছু একটা করতে হবে, করতেই হবে - মনে মনে এটাই ভেবে যাচ্ছিলাম। কিন্তু তখনও পুরোপুরি পাজলড! আম্মা ফোন করলো - 'বাবা, আমরা কি বিচার পাবো না? আমাকে যারা এতিম করলো তাদের কি কোনো সঠিক বিচার হবে না? এই কষ্ট নিয়ে আর কতোদিন? কিছু একটা কর তোরা!' বাচ্চা মানুষের মতো কাঁদলাম আমি আর আমার মা। আব্বার সাথেও কথা হলো। উনি অতীতের রাজনীতিবিদ, বিশ্লেষণ করে বললেন অনেক কিছু। তার কন্ঠেও গভীর হতাশা আর নতুন প্রজন্মের দিকে আশার দৃষ্টি - তোরা কিছু একটা কর!

বুঝে নিলাম, আসলেই কিছু একটা করতে হবে। ফেসবুকেই দেখলাম কেউ একজন আমাকে একটা ইভেন্টে ইনভাইট করলো BOAN এর। শাহবাগে সবাই জড়ো হচ্ছে কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদন্ডের প্রতিবাদে, ফাঁসীর দাবি নিয়ে। মনে মনে ঠিক করেই নিলাম - যে করেই হোক, যাচ্ছি। ওখানে দেয়া নাম্বারে ফোন করে বিস্তারিত জেনে নিলাম। অফিস থেকে হুট করে বের হয়ে যাওয়াটা সম্ভব না মোটেও কিন্তু সেদিন যেনো আর কিছুরই তোয়াক্কা করতে মন চাচ্ছিলো না। শুধু মাত্র 'যাচ্ছি' বলে বের হয়ে গেলাম। ক্যামেরাটা সেদিন সাথে করে নিয়ে যেতে পারিনি, তবে মোবাইলে কিছু ছবি-ভিডিও জমা করে রেখেছি।

ছবিতে হয়তো কখনই ফুটিয়ে তোলা সম্ভব না, শাহবাগের তখনকার সেই উত্তাপ। মানুষের চোখে-মুখে ভেসে বেড়ানো তীব্র ক্ষোভ, প্রতিবাদে মুখর শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ, ছাত্র, যুবক, চাকুরিজীবি, গৃহীনি, খেটে খাওয়া মুটে-মজুর। ছবিগুলো তবুও তুলে রেখেছি, ইতিহাসের সাক্ষী রাখার জন্যে। আমি আমার মতো করেই দেখতে চেয়েছি শাহবাগের সেই উত্তাল জনসমুদ্রকে। আর ঐ সমুদ্রের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান ভেবেছি, নিজ চোখে দেখেছি একটা ইতিহাসের গড়ে উঠা ...

১)

২)

৩)

৪)

৫)

৬)

৭)

৮)

৯)

১০)

১১)

১২)

১৩)

১৪)

১৫)

১৬)

১৭)

১৮)

১৯)

২০)

২১)

২২)

২৩)

২৪)

২৫)

২৬)

২৭)

২৮) সচলায়তনের শাহবাগ জমায়েত (নজু গান গায়, অকুতোভয় বিপ্লবী মন্দিরা বাজায় আর সিমন ফেসবুক আপডেট দেয়)


মন্তব্য

সাফিনাজ আরজু এর ছবি

গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু গুরু
শাহবাগের সেই অগ্নিঝরা দিনগুলির এক ঐতিহাসিক দলিল এই পোস্টটি।
অনেক অনেক ধন্যবাদ অনুপমদা।

__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---

অতিথি লেখক এর ছবি

ভাল লাগল। তবে সুহাশ, এইবার মনে হয় গনতন্ত্র রক্ষা করার জন্য তোদের মাঠে নামতে হবে।

তানিম এহসান এর ছবি

আহা! সেইসব সময়!

অতিথি লেখক এর ছবি

ছবিও ইতিহাস। সে ইতিহাসের হয়ে স্বাক্ষর দেয়। আপনার তোলা ছবিগুলো সেই দিনগুলোর স্মৃতি ফিরিয়ে দিল।...

-সুষুপ্ত পাঠক

অনিকেত এর ছবি

ছবিগুলো দেখে আবারো ভাষাহারা হয়ে গেলাম--
আপনি অপার সৌভাগ্য নিয়ে এসেছেন অনুপম---এমন একটা ঐতিহাসিক মুহূর্ত্তের সাক্ষী শুধু হননি, আমাদের সবার জন্যে, যারা ঐখানে ঐসময়ে থাকতে পারিনি সশরীরে তাদের জন্যে মুহূর্ত্তে গুলো বন্দী করে রেখেছেন ক্যামেরার ফ্রেমে---

আপনার ক্যামেরার যাদুতে উঠে এসেছে প্রতিবাদে সোচ্চার সেই দিনগুলোর কথকতা---

আপনাকে আর আপনার ক্যামেরার লেন্সকে স্যালুট!!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

জয় বাংলা...
ভাগ্যিস আপনার ফটোতে অডিও রেকর্ড হয় না! নইলে এই বেসুরো কণ্ঠের রেকর্ড থেকে যেতো হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

আহা, আমরা কি বঞ্চিত হলাম না বেঁচে গেলাম?

[মেঘলা মানুষ]

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

পুরাই বেঁচে গেছেন। এতোটাই যে খুশিতে মিষ্টি খাওয়াতে পারেন হাসি

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

অতিথি লেখক এর ছবি

শাহবাগের সেই বিস্ময়কর প্রাণের আন্দোলনে যারা অংশগ্রহন করতে পেরেছিলো স্ব- শীররে তারা বোধহয় অসীম সৌভাগ্যবান। ছবি কিংবা লেখা কোন কিছুই বোধহয় সেই উত্তাপ, সেই ক্রোধ, সেই প্রতিবাদী লক্ষ লক্ষ কন্ঠসর আর নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন এঁকে দিয়েছিলো শাহবাগ তা তুলে আনা সম্ভব না। তবু আপনার ছবিতে সেই ইতিহাস উঠে এসেছে অনেকটা, যা পরবর্তী প্রজন্মের কাছে উৎসাহ আর গর্বের অর্জন বলে প্রতিষ্ঠিত হবে।

একটা ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করি, শাহবাগে যতবার সবাই মিলে জাতীয় সংগীত গেয়েছি ততবার চোখে জল টলমল করেছে, কখনো বা ঝরেছে নীরবে ভীষন আবেগে। এমন তীব্র হৃদয় নিঙ্গরানো অনুভূতি শুধু শাহবাগি দিতে পেরেছে আমায়। জেগে থাকবে শাহবাগ চিরদিন ভাস্মর হয়ে হৃদয়ে আর আগামি দিনের সব আন্দোলনে।
জয় বাংলা।

মাসুদ সজীব

ঈয়াসীন এর ছবি

গুরু গুরু চলুক

------------------------------------------------------------------
মাভৈ, রাতের আঁধার গভীর যত ভোর ততই সন্নিকটে জেনো।

অতিথি লেখক এর ছবি

শাহবাগ চমৎকারভাবে ধরা পড়েছে আপনার ক্যামেরায়। প্রচন্ড ক্ষোভ আর ক্রোধ যখন মস্তিষ্কে হাতুড়ি মারছিল তখন শাহবাগ দেখিয়ে দিয়েছিল সেই বাস্প দিয়ে রেলগাড়ি চালাবার পথ।

অসাধারণ সব ছবি, তবে ২০ নম্বর ছবিটাই আমার নজর কেড়েছে সবচেয়ে বেশি।

শুভেচ্ছা হাসি

[মেঘলা মানুষ]

চরম উদাস এর ছবি

চলুক

শাব্দিক এর ছবি

চলুক

---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।

অতিথি লেখক এর ছবি

কিছু একটা কর তোরা!'

৪টি মাত্র শব্দ। অথচ মায়ের মুখ থেকে বের হওয়ার ফলে কত শক্তিশালী।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

দুর্ধর্ষ সংগ্রহ। অভিনন্দন জানবেন

অঃটঃ প্যানোরামা করতে গেলে তার গুলা যে বেঁকে যায় এইটার সমাধান কি? আমার নিজের তোলা একটা ছবি পুরোপুরি মুচড়ে গেছে, দেখলে রীতিমত চোখ কটকট করে

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

এক বছর পর? যাক ভালোই হইছে শাহবাগের জন্মদিনের উপহার হইল এইটা।

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

অতিথি লেখক এর ছবি

শাহবাগের আন্দোলন শুরু হল, ৫ ফেব্রুয়ারীতে। আর আমি ঢাকা ছেড়ে বরিশালে গেলাম ৪ তারিখে। ৫ তারিখ দুপুরে বাসায় বসে খবরটা দেখে কিছুক্ষণ হা করেই তাকিয়েছিলাম । ওদিকে শুনতেছিলাম .... সবাই জড়ো হচ্ছে শাহবাগে। তখন কিছুতেই আর বরিশালে মন টিকছিলো না । কিন্তু কিছুই করার ছিলো না। প্রায় পুরোটা সময়ই টিভি আর ফেসবুকে চোখ রাখতাম। আর অপেক্ষা করতাম .... কখন শাহবাগে যাবো। এর মধ্যে শুনলাম .... বরিশাল শহরেও গণজাগরণ মঞ্চ তৈরী হয়েছে। কি আর করা.... গিয়ে ওখানেই পড়ে থাকতাম। অবশেষে ১২ ফেব্রুয়ারী খুব ভোরে ঢাকা পৌঁছাই। রুমে ঢুকে জাস্ট ব্যাগটা রেখে... সোজা চলে যাই শাহবাগে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিদিনই ওখানে থাকা হয়েছে .....
এমনিতেই স্বভাব আছে, ছবি তুলি আর না তুলি ক্যামেরা মোটামুটি ২৪ ঘন্টাই সাথে থাকে। তাই .... কিছু ছবি তোলারও সূযোগ হয়েছিলো..... আলাদা করে পোস্ট করতে ইচ্ছা হল না। তাই এখানেই শেয়ার করলাম।

- অনুপম শুভ

এক লহমা এর ছবি

ছবিব্লগ-এর দুরন্ত ছবিমন্তব্য। চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

ত্রিমাত্রিক কবি এর ছবি

চলুক

_ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _ _
একজীবনের অপূর্ণ সাধ মেটাতে চাই
আরেক জীবন, চতুর্দিকের সর্বব্যাপী জীবন্ত সুখ
সবকিছুতে আমার একটা হিস্যা তো চাই

এক লহমা এর ছবি

আমার কাছে এ বছরের এখন পর্যন্ত পড়া পোস্টের মধ্যে মনে-রাখা-পোস্ট এর তালিকায় এক নম্বর-এ থাকবে। চলুক

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

হাসিব এর ছবি

সিরাম! একুশে ফেব্রুয়ারির একটা প্লান করেন। ২০ শে ফেব্রুয়ারিতে ঢাবির রাস্তা, চারুকলা ইত্যাদিতে প্রস্তুতি থেকে শুরু করে পরদিন ফুল দেবার পর পর্যন্ত একটা সিকোয়েন্স। নেটে বিচ্ছিন্ন কিছু পাওয়া যায়। তবে সিকোয়েন্স ধরে পাওয়া যায় না।

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

প্রোফেসর হিজিবিজবিজ এর ছবি

সেরাম পোস্ট!!!

____________________________

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।