ছবিব্লগঃ অপার্থিব আলোর ঠিকানা - ০৩

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি
লিখেছেন অনুপম ত্রিবেদি (তারিখ: বিষ্যুদ, ২০/০৩/২০১৪ - ৭:২৫অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

একেকটা দিন চলে যায় আর তার সাথে চলে যায় কিছু আলো, কিছু রঙ, কতগুলো চেনা-অচেনা অবয়ব। আমরা কখনও যেতে দেই, মনমরা হয়ে ভাবি – ধরে কি রাখতে পারতাম না একটু! আবার কখনও ধরেই রাখি, বেঁধে রাখি স্মৃতীতে! ঝাপসা হয়ে যাবার পরও তো তাই আমরা খুঁজে বেড়াই বার বার! এরকম হাজারো আলো আঁধারিতে মিশে যেতে থাকি, মিশিয়ে নিতে শিখে যাই নিজের স্বত্তাকে সময়ের সাথে সাথে।

কখনওবা হারিয়ে যাওয়া সময়ের কিছু আলো এসে হঠাৎ করেই সমস্ত রঙ গুলোকে আরো রাঙ্গিয়ে দিয়ে যায়, সাদা-কালো এই দুনিয়াটা তখন অপার্থিব লাগে। আমি খুব একটা স্মৃতীকাতর মানুষ না। তবুও হঠাৎ হঠাৎ কেউ কেউ এসে খুব নাড়া দিয়ে যায়, মনে হয় এইতো সেদিন চোখের সামনেই ছিলো উঠোনটা, আজ ওখানে আসতে হলে আমাকে হতে হবে পরিব্রাজক! কিন্তু আমি যে এখন ঘরকুনো!! আমার আর যাওয়া হয়ে উঠেনা কোথাও, অভিমানী স্মৃতীগুলো তাই ফ্যাকাশে হয়ে যেতে থাকে ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগে দেখা স্বপ্নের মতো। আড়ষ্ট হাতে দেয়ালে দেয়ালে কাঁচা রঙ মেখে রাঙ্গানোর বেদনা নিয়েই তাই থেকে যেতে হয় আমাকে।

কখনো ঘরে অযত্ন অবহেলায় রেখে দেয়া ফটো এ্যলবামে হাতড়ে বেড়াই, টুকরো টুকরো ফ্রেমগুলো একেকটা করে ধাক্কা দিতে থাকে মাথার ভেতর। হারিয়ে যেতে থাকি খুব সন্তর্পনে, ধীর লয়ে, নিজের অস্তিত্বের গভীরে। উঠে আসে কতোগুলো গল্প, ডালপালা ছড়িয়ে, আছড়ে পড়ে ঝড়ো হাওয়ায় দুলে দুলে। আমার ছবি তোলায় কোনো কালেই কোনো বিরক্তি ছিলো না। একের পর এক শাটার ফেলে যাওয়াটা এক চরম আনন্দের কাজ বলেই মনে হয় আজ অব্দি। কি এক অপার বিস্ময়ে দেখে যাই এক একটা ক্লিক কতো গুলো আনন্দ-বেদনার রঙ ধরে রাখে একটা যন্ত্রের ভেতরে। লালচে হয়ে যাওয়া সেই ৮০’র দশকের সাদা-কালো ছবি গুলোর রঙ্গীন স্মৃতীটুকুও হারিয়ে যায়না এতো সময় পরেও। কিছু মুখ হারিয়ে যেতে গিয়েও আবার ফিরে আসে ফ্রেমবন্দি হয়ে। কাউকে হয়তো পুরোপুরি ভুলেই গেছি, তবুও হঠাৎ মনে পড়ে – হ্যাঁ, ছিলো তো! এইতো সেদিন, বিকেলে খেলতে গিয়ে খুব হাপিয়ে উঠে বলে ছিলাম পাশের বাসায় কড়া নেড়ে – আন্টি একটু পানি খাওয়া যাবে? এইতো সেদিন... মাত্র ৩২টি বছর আগের কথা!

কিছু ফ্রেমে খুব তাড়া ছিলো মনে হলো, খুব হুল্লোড় করে সবার ছবি তোলা! ঠিক কি কারনে জানি না, এই হুল্লোড়ের মাঝেও আমার মুখটাই একটু গম্ভীর! ছোটোবেলা থেকেই কি আমি ক্যামেরার সামনে দাঁড়াতে লজ্জা পেতাম? জানিনা! কিন্তু খুব একটা বেশী ছবি খুঁজে পাইনা নিজের। কারো কারো মুখ গুলো এতো মায়ায় ঢাকা, একটু ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে করে। কিন্তু আঙ্গুল আর উঠেনা, বয়স বেড়ে গেলে মানুষ বড় স্বার্থপর হয়ে যায়! স্মৃতীগুলো কাছে টেনে ধরে রাখলেও সেই বাঁধনটা কেমন যেনো আলগা হয়ে পড়ে বার বার, অসহায়ের মতো আকড়ে ধরতে চাইলেও কেবল দূরে সরে যেতে যতে ঝাপসা হয়ে পড়ে সব! ভুলেও তো গেছি কতো কিছু! কেউ হঠাৎ করে বলে – আমার এই ছবিটা তোমার তোলা, মনে আছে? আমি হাতড়ে বেড়াই পিছে ফেলে আসা সেই সময় গুলো - কি যেনো! তবে মনে আছে, নীল শাড়ীটার কথা, চুড়ি পরেছিলে হাতে!! হুম, ঠিক ওভাবেই ঐ দিনের রং-রূপ-গন্ধটাও বন্দি হয়ে আটকে আছে ফ্রেমে। আমরা মুক্ত পাখির মতো উড়ে উড়ে শুধু ফিকে হয়ে যাচ্ছি, ভেবে ভেবে বুড়ো হয়ে যাচ্ছি!

কিন্তু আমি যে সেই কবেই ঠিক করে নিয়েছি আমি বুড়ো হবো না, আমি বড়ই হবোনা ... তাহলে? হুম, সমস্ত পাগলামী গুলোকে সঙ্গী করে আমি আরো অনেক আলোকে আটকে দেবো ফ্রেমে। আরো অনেক অনেক রঙ মেখে দেবো মাঠের পর মাঠে, আমি চেয়ে দেখবো অপূর্ব এই জীবনটাকে আরো গভীর কোনো কম্পোজিশনে, আরো ভিন্ন কোনো এঙ্গেল অব ভিউ-এ! আমি রেখে যাবো আরো অনেক স্মৃতীর টুকরো, একের পর এক সাজিয়ে যাবো জীবনের এক বিচিত্র প্যানারোমা। আমার নিজস্ব স্বর্গে ফিরে ফিরে যাবো অচেনা আলোর চেনা সুরগুলো তুলে নিয়ে আসতে। হ্যাঁ যাবো, অনেক দূরের পথে যাবো ... যেতে যে আমাকে হবেই!

১) একটা অপার্থিব ভোর ছিলো এটা -

২) বিকেলে -

সন্ধ্যের শেষ আলোর যাদু -

৩)

৪)

৫)

৬)

৭) আমি পোর্ট্রেইট পারিনা, তার উপর আবার ৩৫ মিমি ল্যান্সের ফিল্ড অব ভিউ আমার কাছে কেন জানি আজগুবি লাগে। তবুও মেরে দিলাম (লগে নগদে ফ্রি এক্সট্রা গ্রেইন মাইচ্চি) -

কয়টা পোকা-মাকড় দিলাম -

৮)

৯)

১০)

১১)

একটা স্টার ট্রেইল -

১২)


মন্তব্য

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আমরা সবাই অপার্থিব আলোগুলোকে খুঁজে বেড়াই, আপনি হয়ত ঠিকানাটা জানেন।

শুভেচ্ছা হাসি

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ধন্যবাদ, মেঘলা মানুষ।
আলো গুলো আসলে আশে-পাশেই থাকে, আমরাই কেবল অনেক দূরে গিয়ে খুঁজে বেড়াই।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

কল্যাণ এর ছবি

জট্টিল পোস্ট। তবে একটা অভিযোগ আছে, ১ থেকে ৬ বেগুনী না হলে দারুণ হত অনুপমদা।

_______________
আমার নামের মধ্যে ১৩

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ধন্যবাদ।

আসলে আমি এবারের পুরো কিশোরগঞ্জ ট্যুরটা সকাল-সন্ধ্যার লালচে আলোতে ND ফিল্টার আর কুল হোয়াইট ব্যালেন্স দিয়ে এই রঙ্গটা আনার এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করেছি। ব্যাক্তিগতভাবে এই বেগুনীটা কেনো যেনো খুব ভালো পাই।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

অতিথি লেখক এর ছবি

আপ্নে কাছে স্যুরোলেস্টিক ফটোগ্রাফির (প্রসেসিং সহ) কিলাশ করতাম চাই । কবে লইবেন কন .....

- অনুপম শুভ

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

মু হা হা হা হা ... কিলাশ হপে, নো পরব্লেম। মাগার নাজরাণা রেডি থাকে যেনো, হুম চোখ টিপি

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

অতিথি লেখক এর ছবি

আইচ্ছা .... নুউউউউউ ফ্রবলেম খাইছে

- অনুপম শুভ

মেঘলা মানুষ এর ছবি

ক্লাসের জন্য নাম নথিবদ্ধ করার সনির্বন্ধ অনুরোধ করে গেলাম।

তাসনীম এর ছবি

দুর্দান্ত লাগলো।

________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, তাসনীম ভাই।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

গান্ধর্বী এর ছবি

চমৎকার ছবি, তিন নম্বর ছবিটা সবচেয়ে ভীষণ সুন্দর চলুক

------------------------------------------

'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

অনেক ধন্যবাদ, গান্ধর্বী।

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার কাছে ০১ আর ০৩ নং ছবি দুটো ভাল লেগেছে। আর পোকামাকড়ের ছবিগুলোতো বলার বাইরে। চলুক একটা ম্যাক্রো লেন্স কেনার ইচ্ছা যে কতদিনের। সাধ আছে সাধ্য নাই। ওঁয়া ওঁয়া

--- কালোদিঘী

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

ধন্যবাদ। আজ পর্যন্ত আমার তোলা ছবি গুলোর মধ্যে আমার এই ১ নাম্বার ছবিটা সবচেয়ে পছন্দের।

ম্যাক্রো ল্যান্স কিনবেন? যদি ৫০ মিমি কোনো ল্যান্স থাকে তাহলে মাত্র ৩,১০০ টাকা দিয়ে একটা এক্সটেনশন টিউব কিনে নেন ১:১ ম্যাক্রো আউটপুট পাবেন। আর যদি সাথে আরো কিইছু খরচ করে রিভার্স রিংটাও কিনতে পারেন, তাহলে ২:১ ম্যাক্রো আউটপুট পাবেন। দুনিয়ার তাবৎ বাঘা বাঘা ম্যাক্রো ফটোগ্রাফারের বেশিরভাগই এই টেকনিকে কাজ করে। এতে গিয়ারের খরচ কম, শুধু নিজের মাথা আর ধৈর্যের উপর দিয়ে বিশাল একটা ঝড় যায়। এরকম একটা সেট আপ আমার আছে, ওটা দিয়ে ২.৭:১ আউটপুট পাই মাগার জানের উপর দিয়ে পুরা সাইক্লোন দৌড়ায় ... ওঁয়া ওঁয়া

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার এক্সটেনশন টিউব আছে (কিনেছিলাম যতদূর মনে পড়ে ৩ পাউন্ড দিয়ে) দেঁতো হাসি , ৫০মিমি ও আছে। ক্লোজাপ ফিল্টারও ইউজ করি মাঝে মাঝে।

কিন্তু আসল ম্যাক্রো লেন্স এর যে আউটপুট তার কাছে কি আর অন্য কিছু ঘেঁষতে পারে? চোখ টিপি আপনি যে টেকনিকগুলোর কথা বলছে সেগুলো আমি জানি। কিন্তু পুরোপুরি সন্তুষ্ট হতে পারি না। তবে ইদানিং ম্যাক্রো নিয়ে কাজ করি না কারন প্রথম প্রথম ম্যাক্রো খুব ভালো লাগতো। তারপর আগ্রহ গেল ল্যান্ডস্কেপ এর দিকে, সেখান থেকে পোর্ট্রেইট সেখান থেকে আবার ল্যান্ডস্কেপ। হাহাহা খাইছে

আপনার ল্যান্ডস্কেপ চমৎকার। চালিয়ে যান, আছি আপনার সাথে।

কিন্তু ধন্যবাদ আপনার পরামর্শের জন্য। আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

--- কালোদিঘী

অতিথি লেখক এর ছবি

একটা কথা জিজ্ঞেস করতে ভুলে গেছি। পোকামাকড়গুলোকে কিভাবে এক জায়গায় স্থির রাখেন?

--- কালোদিঘী

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

হাততালি হাততালি

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি

আপনারে অসংখ্য -ধইন্যাপাতা-

==========================================================
ফ্লিকারফেসবুক500 PX

সচল জাহিদ এর ছবি

চলুক


এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।

অতিথি লেখক এর ছবি

আমি ছবির তেমন কিছুই বুঝি না। তবে ভাল ছবি দেখলে চোখে আরাম লাগে। আপনার এই ছবিগুলো দেখে চোখে মহাআরাম লাগল!
হাততালি

সুবোধ অবোধ

অনার্য সঙ্গীত এর ছবি

অপার্থিব হইছে গো সুনা!

______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন

অতিথি লেখক এর ছবি

শুরুর ছবিগুলো দেখতে দেখতে ভাবছিলাম, আমি দেখেছি, আমি ছিলাম এ জায়গায়, এইতো সেদিন। ছবিগুলো খুব ভালো লাগলো!!!! অনেএএএএক ভালো লাগলো!!

---- মনজুর এলাহী ----

শান্ত এর ছবি

আপনি একটা অমানুষ। আপনার তোলা এইসব ছবি দেখলে আর ছবি তুলতে মন চায় না।

__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত

এক লহমা এর ছবি

সবগুলোই দুরন্ত হয়েছে। বেশী ভাল লেগেছে ৯ আর ১১।

--------------------------------------------------------

এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।

এক লহমার... টুকিটাকি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।