আগের লেখায় যেমন বলেছিলাম যে আমাদের পরবর্তি যাত্রাস্থান হলো পুকুর পাড়া। সে কারণে বগালেক থেকে সকালে উঠে নাস্তা সেরে একটু দেরি করেই আমরা রওনা দিলাম পুকুর পাড়ার উদ্দেশ্যে। অনেকখানি হাঁটার পর পেলাম হারমেন পাড়া, সেখানে এসে একটু জিরিয়ে নিলাম। তারপর শুরু হলো আবারও হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ী পথে দেখলাম কী অপরূপ বৃক্ষ নিধন কর্মসূচী। কিছু কিছু পাহারী জংগল এক্কেবারে গড়ের মাঠ হয়ে আছে যেনো! আমি আমার পিঠের ব্যাগটাকে নিয়ে আর পারছিলাম না নড়তে, এ অবস্থা দেখে আরিফ আর রনি পালা করে আমার পাত্থর টাইপ ব্যাগটা বয়ে নিতে থাকলো। বেশ কিছুটা হাটার পর পেলাম সায়কত পাড়া। এখানে পানি খেয়ে, কিছুটা জিরিয়ে নিয়ে আবারও শুরু হলো আমাদের পথচলা। জঙ্গল-ঝিরি-পাহাড় বেয়ে বহু কসরৎ করে আমরা হেঁটে চলতে থাকলাম। আরো অনেক অনেক হাঁটার পর পেলাম আনন্দ পাড়া, সাথে পেলাম এক সুন্দরী আদিবাসী ললনা, আহা কী আনন্দ! কিন্তু কিছুতেই একটা ছবি তুলতে সে রাজী হলোনা। কি আর করা আশে-পাশের ছবি তুলে, পানি খেয়ে, একটু বিশ্রাম নিয়ে আবারও শুরু করলাম হাঁটা। মাগার এইবার জান শেষ অবস্থা, কারণ প্রচন্ড খাড়া এক পাহাড় পারি দিতে হচ্ছে আমাদের, স্থানীয়রা বলে - কুত্তা মারা পাহাড়। এতই জঘন্য টাইপ পাহাড় এটি। যেমন খাড়া ঢাল বেয়ে উঠলাম, ঠিক তেমন খাড়া ঢাল বেয়েই নামতে হলো আমাদের। নেমেই পেলাম রুমা ঝিরি, যে যার মতো জামা কাপড় খুলে নেমে গেলাম ঠান্ডা পানিতে গোসল করতে। আহা, শান্তি, শান্তি, শান্তি! বিস্কুট, খোরমা, স্যালাইন পানি, গ্লুকোজ, টাইগার ইত্যাদি দিয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে রওনা দিলাম আবারও। কিন্তু অনেকক্ষন বিশ্রাম নেয়াতে শরীর আর ঠিক মতো সাপোর্ট দিচ্ছিলো না, একটু উঠা-নামা করতেই আমাদের ত্রাহী মধুসূদন অবস্থা! যাই হোক, কোনো ভাবে হেঁচড়ে-পেঁচড়ে আমরা শেষ পাহাড়টির উপরে উঠলাম, আর নীচে দেখতে পেলাম বিশাল পুকুর সহ পুকুর পাড়া। আনন্দে কিছুক্ষন হৈ হৈ করে আবার নামতে লাগলাম। পুকুর পাড়া এসেই একটি ঘরে ব্যাক প্যাক রেখে আর্মি ক্যাম্পে গেলাম এন্ট্রি করাতে। সেখানকার ক্যাম্পের ইন-চার্জ একজন টিপিক্যাল মাথামোটা আর্মি [সেই গল্প আর করলাম না!]; আমরা সুর্যাস্ত দেখে, পুকুর পাড়ার বিশাল পুকুরে গোসল করে ঘরে ফিরে বিস্কুট -চানাচুর দিয়ে হালকা নাস্তা সেরে নিলাম আর আমাদের গাইড বিকাশ লেগে গেলো রান্না-বান্নায়। রাতে এক আকাশ তারার নীচে আমরা আড্ডাফাইং করে কাটিয়ে দিলাম বেশ অনেকটা সময়। তারপর রাতের খাবার খেয়ে ঘুম!
১) পথে যেতে যেতে -
২) সায়কত পাড়ায় যাবার পথে দেখা হলো -
৩) সায়কত পাড়ায় এলাম আমরা -
৪) সায়কত পাড়ায় কয়টা বরাহ-
৫) যেদিকেই তাকাই খালি পাহাড় আর পাহাড় -
৬) এবার এলাম আনন্দ পাড়ায় -
৭) উনারা কাজ করছিলেন -
৮) আরো একটা -
৯) আনন্দ পাড়ায় আনন্দ নিয়ে একটু উঁকিঝুকি -
১০) তারপর আমরা হাঁটা ধরলাম -
১১) হাঁটতেই লাগলাম -
১২) পথটা সুন্দর ছিলো, তাই আমিও ছবি তুলতেই লাগলাম -
১৩) রুমা ঝিরির প্যানোরামা -
১৪) রুমা ঝিরি -
১৫) রুমা ঝিরি -
১৬) এবং রুমা ঝিরি -
১৭) আবারও রুমা ঝিরি -
১৮) পুকুর পাড়ায় সুর্যাস্ত -
১৯) পুকুর পাড়ায় সুর্যাস্ত -
২০) পুকুর পাড়ায় সুর্যাস্ত -
২১) পুকুর পাড়ার হেলিপ্যাড -
২২) সন্ধ্যায় পাহাড়ের উপর থেকে পুকুর পাড়ার পুকুর -
২৩) সন্ধ্যায় পাহাড়ের উপরে দল-বল (আমি নাইক্কা) -
২৪) তাহারা সন্ধ্যা দেখছে -
২৫) ট্যারা ফটুক (সবাই দুইডা) -
২৬) আসমান ভরা তারা দেখে আরিফ গেলো ক্ষেপে -
২৭) তারা আর তারা -
২৮) আসমান ভর্তি তারা -
২৯) তারা মেলা -
সকালে উঠে নাস্তা সেরে বরাবরের মতো দেরী করে রওনা দিলাম রাখাইন ফলস-এ। প্রায় দুই ঘন্টা পাহাড়ী রাস্তা হাঁটার পর দেখা পেলাম তার। আবারও সবাই হাফ নেংটু হয়ে ঝাপিয়ে পড়লাম পানিতে। সেখানে যব্বর আনন্দের মাঝে নোমান তার 'চাড্ডি' ধুতে গিয়ে পিছল খেলো এক বিশাল পাথরে, সবাই তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম কেবল। আর একটু হলে ওরা মাথাটা 'মুড়ি ঘন্ট' হয়ে যেতো। একটা 'ফাড়া' যেনো কেটে গেলো আমাদের! ঘন্টা দুয়েক ইচ্ছা মতো তাফালিং করে রওনা দিলাম পুকুর পাড়ার উদ্দেশ্যে। দুপুরে হালকা ঘুমিয়ে বিকেল থেকে প্রস্তুতি নিলাম সূর্যাস্ত আর রাতের লংশাটার এর জন্যে। আড্ডা মেরে ছবি তুলে রাত ১০টার দিকে ফিরলাম ডেরায়, কাল খুব ভোরে রওনা দিয়ে দিতে হবে। ভোর ৪টার দিকে উঠে আমি ঠিক করলাম যে, একাই প্রথম পাহাড়োটাতে উঠে যাবো সুর্্যো দয় এর ছবি তোলার জন্যে। এই অন্ধকারে বেরিয়েই প্রথমে পেয়ে গেলাম দক্ষিণ আকাশ বরাবর মিল্কিওয়ে, ল্যান্ডস্কেপ ভালো ছিলো না, তবুও একটা-দুটা মেরে দিলাম শাটার। তারপর ক্যাম্রা আর ট্রাইপড নিয়ে শুরু হলো আমার অন্ধকারে পাহাড় ভ্রমন আর ছবি তোলা। কিছুপর পূব আকাশ আলো করে সূর্যদেব উঁকি দিলেন। পাহাড়ে বসে একটু ঘুমিয়ে নিলাম আমি আর এরই মধ্যে বাকীরা সব এসে গেলো। শুরু হলো আবারও আমাদের হাঁটা অভিযান। কিন্তু এবার আর কুত্তা মারা পাহাড় দিয়ে উঠবো না, এবারের যাত্রা সোজা রুমা ঝিরি ধরে হেঁটে দুটি পাহাড় পেরিয়ে হারমেন পাড়া। রুমা ঝিরিতে পৌছানোর কিছু আগে আরিফ বেখেয়ালে পড়ে গেলো পাহাড় থেকে, শুধুমাত্র ভাগ্যের জোরে একটা পাথর ধরে এইবারের মতো বেঁচে গেলো সে। ওর পেছনেই ছিলো রনি, সে গিয়ে উদ্ধার করলো আরিফকে। আমরা সবাই যেনো প্রচন্ড একটা ধাক্কা খেলাম! আরো একটা 'ফাড়া' কাটলো! একটু বিশ্রাম নিয়ে নেমে গেলাম ঝিরিতে, সেই সাথে টের পাচ্ছিলাম যে আমার বুইড়া হাঁটু আর সাপোর্ট দিতে পারছে না আমাকে!
৩০) পুকুর পাড়ায় সকালের নাস্তা -
৩১) নাস্তা করে চুরুট ধরাতেই এই বান্দা হাজির -
৩২) স্থানীয়দের পুকুর-কর্ম -
৩৩) পুকুরের প্যানোরামা -
৩৪) রাখাইন ফলস -
৩৫) রাখাইন ফলস -
৩৬) এবং রাখাইন ফলস -
৩৭) পুকুর পাড়ার জীবন যাত্রা -
৩৮) পুকুর পাড়ার জীবন যাত্রা -
৩৯) পুকুর পাড়ার জীবন যাত্রা -
৪০) পুকুর পাড়ার জীবন যাত্রা -
৪১) আসমানেতে মিল্কিওয়ে আর সাথে অনেক তারা -
৪২) পাহাড়ের কোলে ভোরের আলো ফুটছে -
৪৩) আরো একটু স্পষ্ট হলো আলো -
৪৪) সুর্যটা ঘুম ভেঙ্গে উঠেই গেলো -
৪৫) ভোরের রঙ নিয়ে ইচ্ছে মতো খেলা -
আর পারছিলাম না, হাঁটুর তীব্র ব্যাথায় এক পা'ও ফেলতে পারছিলাম না। এরই মধ্যে পেয়ে গেলাম একটি ট্রাক, যেটি হারমেন পাড়া পর্যন্ত যাবে, বাকী সবাইকে বিদায় জানিয়ে উঠে গেলাম আমি। মধ্যে পথে একটা ছোট্ট একসিড্যান্ট করে পাহাড়ের বাইরে ছিটকে গেলো ট্রাকের অর্ধেকটা, সামনের অংশের টায়ার গেলো খুলে। মহা কসরৎ করে প্রায় আধা ঘন্টার পরিশ্রমে সেই ট্রাকটিকে জায়গামতো তুললো শ্রমিকরা। আমিও যেনো আরেকবার নতুন জীবন ফিরে পেলাম! কিন্তু যেই খাড়া রাস্তায় উঠা-নামা করছিলো ট্রাকটি, আমি শুধু ভাবছিলাম টিমের বাকি সদস্যদের কী ভয়াবহ অবস্থা! হারমেন পাড়ায় পৌছে বিশ্রাম নেয়ার মধ্যেই বাকীরা চলে এলো আর বললো মাঝ রাস্তায় ট্রাকের খোলা চাকা দেখে তারা ভেবেছিলো যে, ট্রাক সহ আমি পাহাড়ের নীচে পৌছে গেছি! সবাইকে ঘটনা বলার পর আমরা বুঝলাম যে, আরো একটা বিশাল ফাড়া কাটলো আমাদের। এবার আমাদের বগা লেক পৌছানোর পালা। ভাঙ্গা পা নিয়ে ভয়াবহ কষ্ট করে হাটতে লাগলাম। কিছু পাতায় পিছল খেতে পারি, সেই কারণে নোমান তার হাতের লাঠি দিয়ে আমার আসার পথ ঝাড়ু দিয়ে দিচ্ছিলো, একটু উঁচু-নীচুতে আরিফ, রনি হাত ধরে ধরে সাপোর্ট দিচ্ছিলো, কুমার আর রাব্বি সব সময় এক্কেবারে ছায়ার মতোই পাশে হাঁটছিলো আর স্যালাইন পানি, খোরমা দিচ্ছিলো যেনো একটু স্টামিনা পাই! বেশ ইমোশনাল হয়ে গেলাম! হঠাৎ করে প্রায় অচেনা কিছু মানুষকে নিজের পরিবারের মতোই মনে হচ্ছিলো। শেষ বিকেলে গিয়ে পৌছলাম বগা লেক, কোনো মতে গোসল করে ঘরে এসে খাবার খেলাম। সন্ধ্যার পর তীব্র ব্যাথা আর সহ্য করতে পারছিলাম না। সেদিকে আবার বারবিকিউ এর ব্যাপক প্রস্তুতি চলছিলো। স্থানীয় একজনের পরামর্শে তাদের একটি লোকজ চিকিৎসা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম! গনগনে গরম আগুনে দা এর মাথা একেবারে টকটকে লাল করে আমার দুই হাঁটুর প্রত্যেকটিতে প্রায় ১২-১৩ টি কোপ দেয়া হলো। আমি রনিকে শক্ত করে ধরে গগণ বিদারি চিৎকার দিচ্ছিলাম। এবং অনেকটা ম্যজিকের মতোই প্রায় ঘন্টা খানেক পর আমি বেশ ভালো ভাবেই হাঁটতে পারলাম! তারপর ভোরে উঠে রুমা বাজার হয়ে বান্দরবান শহর পৌছে রাতের বাসে ঢাকা। ট্যুর শেষ!!!
৪৬) আবারো কোনোদিন জঙ্গলে মঙ্গল করতে আসতে প্রস্তত হাট্টিমাটিম টিম -
মন্তব্য
ছবিতেই পুরা কাহিনী বলা হয়ে গেল
হুম, সারাক্ষন ক্যামেরা গলায় ঝুলিয়ে ঘুরেছি আর কুটুস কাটুস ক্লিক মেরেছি।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
অপূর্ব সুন্দর! আপনার ঘোরাঘুরি জারি থাকুক।
শুভেচ্ছা
অনেক ধন্যবাদ। এই ট্যুরের পর আরো ৪-৫টা ট্যুর মেরেছি, লিখতে আলসেমি লাগে
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
নতুন করে ছবি নিয়ে বা লেখা নিয়ে কিছু বলার নাই।
পরবর্তী ঘুরাঘুরির পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
__________
সুপ্রিয় দেব শান্ত
উক্কেই ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
চমৎকার। বাচ্চাদের সাথে বসে দেখলাম ছবিগুলো। ওরা খুব খুশি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
জেনে ভালো লাগলো। অনেক ধন্যবাদ।
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
সোহেল লেহস
-------------------------------------------------------
এইটা কি লেখলেন ভাই! গল্পের ট্যুইস্ট দেইখা পেটে কেমন জানি একটু মোচড় দিল
ভাইজান ফাটাফাটি সব ছবি। ফাঁড়াগুলার কথা শুনে একটু কেঁপে গেসিলাম। দা চিকিৎসা ভয় পাইছি।
একটা কুশশেন ছিলো।
১০, ১১, ১৭ এই তিনটা ছবি এইচডিআর করার পর লাইটিং একটু স্কিউড হয়ে গেছে। ধরেন মাঝখান ব্যাপক ধলা, কিনারগুলি কালা কালা। এই সমস্যা থেকে মুক্তির উপায় কি? নাকি এইটা ইচ্ছা কইরা ইফেক্ট দিসেন?
আমার ধারণা ইহা কোন সমস্যা নহে, ইহা ইচ্ছাকৃত। তবে ছবি তুলক ই ভাল বলতে পারবেন।
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
অদ্ভুদ সুন্দর ছবিগুলো! যাওয়া হয়নি! কখনো হবে কী না জানিনা
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
নতুন মন্তব্য করুন