ক্লিনিক-এ-আরিফগ্রাফিঃ পোস্ট প্রসেসিং কারিকুরি - ২

অনুপম ত্রিবেদি এর ছবি
লিখেছেন অনুপম ত্রিবেদি (তারিখ: বুধ, ২৪/১২/২০১৪ - ৪:২০অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ব্যাপারটা কিছুই না, জাস্ট প্রেসেন্টেশন। আপনার ছবিকে কম্পোজিশন, লাইট, কালার সব দিক থেকে পার্ফেক্ট করে উপস্থাপন করবেন আপনিই, অন্যকেউ এসে এটা করে দিয়ে যাবে না। সুতরাং আপনার ছবিকে ধরে পোস্ট প্রসেস করে উপস্থাপনের ক্ষেত্রে কে কি বললো এগুলো নিয়ে চিন্তা করে অযথা সময় নষ্ট করার কোনোই মানে হয় না। সেই আদী কাল থেকে 'পাছে লোকে সর্বদাই বলে।' সুতরাং ঝাঁপিয়ে পড়ুন আপনার নিজস্ব ক্রিয়েটিভিটি নিয়ে।

তবে একটা কথা মারাত্বক সত্য, সেটা হলো - ভালো কম্পোজিশন না হলে যতোই আটা-ময়দা মাখুন না কেনো, ছবি কখনই 'সুন্দর' তকমাটা পাবে না। কম্পোজিশনে প্রচুর মনোযোগী হতে হবে সবাইকে (আপুগ্রাফারদের এই কষ্টটা না করলেও চলবে)। আর RAW ফরমেটে ছবি তোলার চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে, যেনো পরবর্তীতে লাইট আর কালার নিয়ে খেলা যায়। কিন্তু এক্কেবারে ক্লিপড শ্যাডো বা বার্ণ হাইলাইটের ছবি RAW কেনো, TIFF ফরম্যাটে তুললেও কিছুই করা যাবে না। এই দিকেও খেয়াল রাখতে হবে সর্বদা। ছবির প্রাণই হলো লাইট, সৌন্দর্য হলো কম্পোজিশন। কালার বা সাদা-কালো হলো পরবর্তি উপস্থাপনের ব্যাপার। নীচের ছবিটি নিয়ে আজ একটু এই পোস্ট প্রসেসিং বিষয়ক আলোচনা করবো -

২০০৮ এর ডিসেম্বরে এই ছবিটি বান্দরবানের সাঙ্গু নদীর কূল থেকে তোলা, সময় দুপুর ১টা। সুতরাং বোঝাই যাচ্ছে যে, এখানে আলোর কনট্রাস্ট মারাত্মক বেশী। সেই কারনে প্রথমে সিদ্ধান্ত নিলাম তিনটা Exposure Bracketed ছবি নিবো, কিন্তু সাবজেক্ট তো দৌড়াচ্ছে! তাই একটা RAW ফাইল নিয়েই সন্তষ্ট থাকলাম। খেয়াল করলে দেখবেন যে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি আকাশ বা পুরো ফ্রেমের কোথাও যেনো হাইলাইট বার্ণ না করে আর সেই সাথে কোনো বেদম ক্লিপড শ্যাডোও যেনো না থাকে, তাহলে একে নিয়ে কাজ করাটা খুবই মুশকিলের ব্যাপার হয়ে যাবে। এখানে একটু ছবির EXIF টা দিয়ে দেই -

এবার চলুন আমার ডিজিটাল ডার্করুমে। প্রথমেই ছবিটাকে আমি Nik Capture NX-এ নিয়ে দেখে নিলাম। এটা আমি সবসময়ই করি, কারণ Nikon-এ তোলা RAW ছবি ACDSee বা Photoshop-এ তেমন পার্ফেক্ট দেখি না। তারপর ছবিটাকে ধরে নিয়ে গেলাম PhotomatiX Pro তে Tonemap করার জন্যে। সব শেষে ছবিটাকে TIFF-এ সেভ করলাম। আসুন এবার দেখে নেই Tonemap উইন্ডোতে ছবির অবস্থা। উইন্ডো'র বাঁ দিকে খেয়াল করলে এর Parameter গুলো দেখতে পাবেন আর ডান দিকের নীচের অংশে Histogram টা একটু খেয়াল করে দেখবেন, এখানে হাইলাইট বা শ্যাডোর বেইল নাই করে দেয়া হয়েছে। এটা আমাকে পরবর্তি এডিটিং-এ অনেক বেশী ফ্লেক্সিবিলিটি দেবে।

ছবিটাকে এবার নিয়ে গেলাম Photoshop-এ, প্রথমেই ছবির বাঁ পাশের নীচের মরা ছোট ডালটাকে ক্লোন টুল দিয়ে পরিষ্কার করলাম। খেয়াল করলে দেখবেন যে, ছবিটাতে নানা ছোট ছোট স্পটে ভর্তি, কারণ তখন আমার ক্যামেরার ইমেজ সেন্সরে এই ময়লাগুলো ছিলো। তাই এদেরকে স্পট হিলিং টুল দিয়ে সরিয়ে দিলাম। তারপর ছবিটাকে NIK Sharpener Pro 3 দিয়ে শার্প করলাম। এখানে বলে রাখা ভালো Single RAW file HDR বা Multiple image bracketed HDR এই দুই ক্ষেত্রেই ছবির শার্পনেস বেশ dull থাকে, আপনাকে যেকোনো টুল ব্যাবহার করে শার্প করতেই হবে। এবার Ctrl+J দিয়ে নতুন লেয়ার নিলাম। নীচের লেয়ারটিতে Ctrl+B চেপে কালার ব্যালেন্স করে আকাশের নীল আর পানিতে আকাশের ছায়াটাকে মানুষ বানালাম। তারপর উপরের লেয়ারটিতে লেয়ার মাস্কিং করে শুধুমাত্র আকাশ আর পানিতে কালার ব্যালেন্সে এফেক্ট টুকু নিলাম। কাজ শেষে Ctrl+E চেপে সবগুলো লেয়ার মার্জ করলাম।

নীচের লেয়ারে কালার ব্যালেন্স করার পর -

উপরের লেয়ারে লেয়ার মাস্কিং করার পর -

এবার আমাদের কাজ হবে ঠিক এরকমই কজালার বযালেন্স করা আর সেটা হলো নীচের বাঁ পাশের বালির কালার ব্যালেন্স করা। একেত্রে আমরা হলুদ, লাল আর মেজেন্ডা চ্যানেলে কাজ করবো।

নীচের লেয়ারে কালার ব্যালেন্স করার পর -

উপরের লেয়ারে লেয়ার মাস্কিং করার পর -

এবারে খেয়াল করবো সাবজেক্টের দিকে। সাবজেক্টে মিডটোন ভর্তি, কিন্তু লাইট অনেক ডিম, তাই Dodge এবং Burn টুল ব্যাবহার করে একে আরো হাইলাইট করবো, যেনো পুরো কম্পোজিশনে সাবজেক্টের Importance টা বোঝা যায়। এছাড়াও চারপাশের সবুজে এবং পানির রিফ্লেকশনেও এই টুল দিয়ে একটু নাটকীয়তা আনা যায়।

Dodge - Burn করার পর -

এবার ছবিটিকে NIK Color efex Pro -এ ওপেন করে Gradual Neutral Density filter টা নিয়ে কাজ করলাম। নীচের অপশন গুলো থেকে BRUSH অপশনটা সিলেক্ট করলাম। কারন ছবিতে ঢালাওভাবে এই ইফেক্টটা ব্যাবহার করবো না, শুধুমাত্র আকাশ আর পানিতে আকাশের রিফ্লেকশনে এর ইফেক্ট দেবো।

NIK Color efex Pro - Gradual Neutral Density filter :

ব্রাশ করার পর ছবি -

এবার মনোযোগ দেবো দুই পাড়ের সবুজের দিকে। আমার মনে হয়েছে সবুজেরা কেমন জানি একটু ম্যাড়ম্যাড়া হয়ে আছে। আর পাড়ের বালিটাকেও আরেকটু প্রাণবন্ত করা দরকার। তাই আবারো NIK Color efex Pro -এ ছবিটা ওপেন করলাম, তবে এবার Brilliance/Warmth filter টা নিয়ে কাজ করবো। এবং অবশ্যই কাজ শেষে BRUSH অপশন সিলেক্ট করে শুধুমাত্র সবুজ অংশেই এই ইফেক্টটা ব্রাশ করবো।

NIK Color efex Pro - Brilliance/Warmth filter :

ব্রাশ করার পর ছবি -

ছবিটাতে বার্ণ টুল দিয়ে চারপাশে একটু হালকা Vignette করেছি তারপর। আর সবার শেষে Imagenomic Noiseware Pro দিয়ে নয়েজ রিম্যুভ করেছি। এখানেও বলে রাখি যে, HDR ছবিতে নয়েজ আসবেই, সেকারনেই সব কাজ শেষে আপনাকে একটা নয়েজ রিম্যুভার ফিল্টার বা সফটওয়্যার ব্যাবহার করতে হবে।

সব শেষে ছবিটা দেখতে এরকম লাগছিলো -

এখন তাহলে একটা কমপেয়ার করা চেহারা দেখেই ফেলি -


মন্তব্য

মাসুদ সজীব এর ছবি

নতুন বলে অনেক কিছুই মাথার উপর দিয়ে গেলো। বুকমার্ক করে রাখলাম, ভবিষ্যতের কোন একদিন এটা অনেক কাজে দিবে। আরিফ ভাই একেবারে নতুনদের জন্যে একেবারে ক-খ থেকে একটা সিরিজ চালু করা যায় না?

-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

বাহ, দারুণ। ইদানীং প্রসেসিং-এ মনোযোগী হচ্ছি, তাই ওয়ার্কফ্লো-টা খেয়াল করে পড়লাম। মূল ছবিটা খুবই সুন্দর।

মেঘলা মানুষ এর ছবি

আপনি তো সাংঘাতিক! একটা ভালো ছবিকে আরও বেশি বেশি ভালো বানিয়ে ফেললেন। লাইটরুমই ভালো মত শিখতে পারি নি।
নিজেকেই বলি, "দেখিস, একদিন আমরাও . . . "

মরুদ্যান এর ছবি

চলুক এসব কিছু পারিনা মন খারাপ

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

আয়নামতি এর ছবি

আহা রে ভাইয়া, আপনি আজ এখন আমার এদিকে থাকলে ফটুক তুলে ফাটিয়ে দিতেন।
বাইরে স্নো পড়েছে সেইরাম। ক্রিসমাসের আলো নিয়ে এখনো কিছু বাড়ি দাঁড়িয়ে আছে নেবার হুডের।
চাঁদের আলো আর সাজানোর বাতির আলো এসে চারদিক সাদা হয়ে যাওয়া পরিবেশটাকে এত মায়াবী একটা টাচ্ দিয়েছে না কী বলবো রে! আপনাদের মত তো পারিনা ফটুক তুলতে, তাই অযথা ক্যামেরা নিয়ে ছুটাছুটি না করে চেয়ে চেয়ে দেখলেম কেবল মন খারাপ
পোস্টখান বুকমার্ক করে রাখলেম যদি কিছু শিখতে পারি। অনেক থেংকুশ আপনাকে। নতুন বছরের শুভেচ্ছা থাকলো।

ইয়াসির আরাফাত এর ছবি

এই পোস্টটা প্রথম দিনেই পড়সি, কিছুই বুঝি নাই। পুরা ফকফকা এক্কেবারে।

আজকে আবার পড়ে দেখলাম। অনেক কিছু পরিস্কার। বুঝা যাচ্ছে আমি ঠিক লাইনে আছি হাসি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।