দরজায় ধাক্কা, ধাক্কার শব্দ আরো প্রবাল হয়, যতক্ষন না ভিতর থেকে সাড়া আসে।ধর মড় করে বিছানায় উঠে বসতে হয় এই সকালে।মায়ের গলা, উঠো সকাল হয়ে গেছে তো।একটু বিরক্তি নিয়ে ই উঠা হতো সেই দিন গুলোতে।মায়ের কড়া আদেশ, যাও গোসল করে আসো।
আরে এই সকালে গোসল কেনো বাপ আবার। আবার গলার স্বর বদলায়, সাথে নতুন জামা নিয়ে যাও।
আমার এি নতুন জামা পড়ে সঙ সাজতে খুব ভালো লাগে না, সবাই পড়েছে , আনন্দ করছে তা দেখতে ই বেশী ভাল লাগে।আমার ভাল লাগায় কি আসে যায়, ওদের ও ভালো লাগতে হবে। আজ যে প হেলা বৈশাখ।শহরে উৎসব উৎসব আমেজ।অনেকের বাসায় দাওয়াত, অনেকের দোকানে দাওয়াত।আমাদের বাসায় ও অনেক লোকজন আসবে।এটা ই নিয়ম। আব্বা এর ই মাঝে বাজারে চলে গিয়েছে। সকাল না গেলে কিছু পাওয়া যাবে না।আজ বাজারে সব বড় বড় মাছ উঠবে।মাছের বাজারে ঢুকা ই দায়।মিস্টির দোকান গুলো তো ব্যস্ত সেই পুরা সপ্তাহ জুড়ে ই। তারা আজকের দিনের জন্য মিস্টি বানাচ্ছে।ফল পট্রী তে ও যাওয়া যায় না।হালখাতার এই দিনে।অন্য সব কেনা কাটা বন্ধ।
হাপাতে হাপাতে আমার দুই ভাই আর বাবা বাসায় ফিরে, বিশাল সাইজ এর এক রুই মাছ নিয়ে। আব্বার এমনিতে ই বাজার করার শখ, তার উপর বৈশাখ।সবার মূল আকর্ষন এই মাছের উপর ই। বাজারের টুকরিতে থাকে বিভিন্ন রকম ফল, গোস্ত, সব পদের সবজি,আর মৌসুমী সব ফল। তাও বাবা র মন খারাপ, কাতলা মাছটা তার বেশ পছন্দ হয়েছিলো, দম দর করতে করতে আরেক জন এসে নিয়ে নিলো।সাথে বড় চিংড়ি ও নিয়ে আসলো কিছু।দুধ কিনে রাখছে আগের দিন ই।আজ তো বাজারে দুধ ই নেই। যাও আছে সব পানি মিশানো।বাজের এখন আগুন, অনেকে পয়সা দিয়ে ও মন মতো জিনিস পাবে না। দোকানের হালখাতার মিষ্টি র অর্ডার আগে থেকে ই দেয়া আছে। সময় মতো গিয়ে নিয়ে আসবে। বৈশাখে পিঠা বানানো হতো না। কারন পিঠা বানানো হতো চৈত্র সংক্রান্তি আর পৌষ সংক্টান্তিতে।বন্ধু আত্মিয় বাড়িতে কার্ড ও চলে গেছে।
মা সব গুছিয়ে রান্না বান্না শুরু করে দেয়। রান্না শেষ হতে হতে দুপুর।তার পর গোসল সেরে কাল রাতে মায়ের জন্য আনা নতুন শাড়ি পড়ে ই বের হয়েছে।মাথায় তেল দিতে আমার ভাল লাগে না, কিন্তু জোর করেই মাথায় তেল দিয়ে দেয়া হয়েছে। আজ মাথার চুল পরিপাটি হয়ে থাকলে, পরের খনে খেতে ধান ও এমনি হয়ে থাকবে।
সারা দিন এ বাড়ি ও বাড়ি, এই দোকান ঐ দোকান করে , রাস্তায় বসা মেলায় ঘুরে ই দিন শেষ হয়।এমনি করে নরসিংদীতে করা বৈশাখ গুলো কেটে যেত।প্রথম যেবার ধাকায় বৈশাখ করি, অনেক টা শখের বশে ই থেকে যাই। খুব শুনি, এখানে বৈশাখে অনেক মজা।বাবা মা রাগ করেন, বৈশাখে বাড়ির বাইরে থকা, অপছন্দ। তাই অনেক কারন খারা করে থেকে যাই, হল এ।হল এ শাড়ি পরার হিরিক পড়ে যায়। সবাই রমনায় যাবে পান্তা ইলিশের সাথে। একটু অবাক হই। পান্ত ইলিশ খাওয়ার জন্য রমনা যাবে কি করতে।পান্তা তো আমি এমনি খাই। পান্তা র সাথে একটা মরিচ পোড়া, একটা পেয়াজ। এই না পান্তা।যাই হোক, সকাল থেকে এি আনাড়ি আমি প্রায় ৭ জনের শাড়ি পড়িয়েছি। কিছু রমনায় চলে গিয়েছে, কিছু বের হয়েছে, আমি ও শাড়ি পড়ানো শেষ করে বের হবার পায়তারা করছি, এমনি সময়, বিকট শব্দে চার দিক, প্রকম্পিত।দৌড়ে বাইরে গেলাম, চার দিকে মানুষ ছুটছে।সবাই হল গেটের সামনে এসে থামছে নিরাপদ ভেবে। কেই কিছু বলতে পারে না। এর মাঝে আমি চিন্তিত, আমার হলের বন্ধুরা, যাদের শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছি, তারা রমনায়।কোথায় ছুটে যাব, কাকে খুজবো, কিভাবে খুজবো। একজন ক পাওয়া গেলো। বম ফুটেছে।পরিচিত মানুষ গুলো, ঘরে ফিরেছে সুস্থ ভাবে দেখে কিছু টা স্বস্থি হয়। এবার সংবাদের জন্য ছুটি।
আমার আর পান্তা ইলিশ খাওয়া হয় না।মেলায় ঘুরা হয় না।ঠিক ঢাকার বৈশাখের সাথে তেমন সখ্যতা ও আর গড়ে উঠে না।আমি বাড়ির সেই নতুন জামা, বাবার সকালে করে আনা বাজার, বন্ধুর বাড়ি যাওয়া, আর তাদের আগাদের বাড়িতে আসা খুব মিস করি। মিস করি, মায়ের পাট ভাঙা নতুন শাড়ি, তেল চুপ চুপে চুল।
মন্তব্য
ঘরোয়া আমেজে নববর্ষ উদযাপনের বর্ণনাটা খুব ভাল লাগলো।ভালোমতো সবকিছু বুঝতে শুরু করার পর থেকেই ঘরছাড়া।এমন করে খুব বেশি তাই নববর্ষ পালন করা হয়নি
সেদিনের ঐ ঘটনাটা যে কেমন ভয়ংকর ছিল। কলেজে ফ্রেন্ডরা মিলে টিভিতে লাইভ দেখছিলাম।হঠাৎ...
---------------------------
থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...
---------------------------------
বাঁইচ্যা আছি
আপনার ছোট বেলার কথা শুনে খুব ভাল লাগল, আমার ছোটবেলার ঈদের কথা মনে পরে গেল। আমি ছোট বেলায় গাজিপুরে ছিলাম, ওখানে তেমন কিছু হতনা, বৈশাখের তাই তেমন কোন স্মৃতি নেই আববু শুধু মজার মজার গল্পের বই কিনে দিত।
বোমের কথা আর কি বলব ....
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
- কাহার লগে পরিচয় কোন বৈশাখে দিদি?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ঐ ছেমরা, কার সাথে আর পরিচয় হবে।
নববর্য টা ঠিক ঈদের মতো ই ছিল।এটা শুধুই সামজিক অনুষ্ঠান ছিলো না। প্রতিটা পরিবার এতে অংশগ্রহন করতো।পান্তা -ইলিশ ট্রেডিশন মনে হয় ঢাকা থেকে ই প্রশার লাভ করছে।বৈশাখে পান্তা ইলিশ এর রেওয়াজ আমি ঢাকায় আসার আগে শুনি নাই।বা ভর্তা খাওয়ার রেওয়াজ ও আগে শুনি নাই। হাল খাতার দিন, সবাই ভালমন্দ খাবে, এটা ই রীতি।
নরসিংদী ব্যাবসায়ী এলাকা বলেই হয়তো খুব ঘটা করে বৈশাখ পালন হতো।এখন ও হয়।সাথে ঢাকার ঐ পান্তা ইলিশ যোগ হয়েছে, মেলার জন্য।
খবর কি দোস্ত! তুমি দেখি এখন মাসে একবার আসো
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
নতুন মন্তব্য করুন