নারী-পুরুষ বৈষম্য -১

অপ্রিয় এর ছবি
লিখেছেন অপ্রিয় [অতিথি] (তারিখ: মঙ্গল, ১৭/০২/২০০৯ - ২:৫৫পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

[একটি তাৎক্ষণিক লেখা কবিতার সুত্র ধরে তৈরী হয় বিতর্ক। সেই সুত্রেই স্নিগ্ধা কিছু প্রশ্ন করেন। মনে হয় আমার নিজেকে বোঝাবার জন্যই বিস্তারিত লেখা দরকার। তাই শুরু করলাম। স্নিগ্ধার প্রশ্ন ও তার উত্তর নিচে দিলাম, দেরীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থী।]

বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যদি যদি প্রশ্ন করা হতো “আপেল কেন মাটিতে পড়ে?”, পদার্থবিজ্ঞানের বেশীরভাগ গুরুগম্ভীর অধ্যাপকেরা মুচকি হেসে খচাখচ এক লাইনের এক সমীকরণ লিখে বিদ্রুপের দৃষ্টিতে প্রশ্নকর্তার দিকে তাকাতেন, যেন প্রশ্নের ধরণই প্রশ্নকর্তার নির্বুদ্ধিতার পরিচয় বহন করে। কিন্তু ঐ সময়ের পদার্থবিজ্ঞানের তরুন কিছু ছাত্র, কিংবা পেটেন্ট অফিসের কোন কেরানী বা উত্‌সুক কিছু নব্য চিন্তায় উত্সাহী ব্যক্তিবর্গের কাছে বিষয়টি এত সরল ছিল না। তত্কালীন কিছু নতুন উদ্ভাবন, কিছু অসমধিত সমস্যা এই সংকেত দিচ্ছিল যে জগতটা নিউটনের ধারণামত একটা সুক্ষ ঘড়িবিশেষ নয় যাকে কেউ (ঈশ্বর) সুনিপুণভাবে তৈরী করে চাবী দিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন এবং তা সরল যান্ত্র্রিক নিয়মেই চলছে।

গত মিলেনিয়ামের শেষ চতুর্থাংশের অনেক তাত্বিক ও তাদের তত্ব এই অতি যান্ত্রিকতা দোষে দুষ্ট। ডারউইন, ফ্রয়েড, মার্কসের মত তাত্বিকদেরও অনেক ধারনা আজ পুনর্লিখন করতে হচ্ছে কারণ তা বাস্তবতার সাথে মেলে না। এই “অতি যান্ত্রিকতা” কেন? অনেকে বলে থাকেন নিউটনের “যান্ত্রিক বিশ্ব মডেল” ঐ সময়ের মানুষদের এত প্রভাবিত করেছিল যে বহুদিন মানুষ এর বাইরের কিছু গ্রহণ করতে চাননি। আবার অনেকে বলেন এই “অতি যান্ত্রিকতা” বাইবেলে বর্ণিত ঈশ্বর নির্দেশিত সরল কার্য্যকারণবাদ ও নিয়তি নির্ভর দর্শনে দীর্ঘ দিনের বিশ্বাসের ফসল।

মোটামুটিভাবে বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকে নারীবাদ বা নারী-পুরুষ বৈষম্য নিরসনে যে পশ্চিমা মডেল সারা পৃথীবিময় ছড়িয়ে যাচ্ছে তা এই অতি যান্ত্রিকতা দোষে দুষ্ট। নারী-পুরুষ সম্পর্ক একটি অতি জটিল বিষয়। এর সাথে উভয়ের আবেগ, যৌনতা এবং প্রজাতীর বংশধারা রক্ষার সম্পর্ক জড়িত। য়ার ফলস্রুতিতে সমাজ, পরিবার ইত্যাদী গঠিত। বিষয়টিকে অত্যন্ত সূক্ষভাবে এবং বিজ্ঞানসন্মত পন্থায় বিশ্লেষণ করা উচিৎ। অন্ধভাবে রাজনৈতিক বিপ্লবের তত্ত্ব এখানে প্রয়োগ করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে, যা হয়েছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে।

নারী-পুরুষ বৈষম্যের চাইতেও অনেক সরল এক সমস্যা হচ্ছে অর্থনৈতিক বৈষম্য। কারও অগাধ অর্থ ও আর্থিক ক্ষমতা থাকবে আর কারও দুবেলা খাবার কেনার পয়সা থাকবে না – তা তো হতে পারে না। এই সমস্যার মার্কস যে ব্যাখ্যা ও সমাধান দিলেন তা অতি চমৎকার এবং সরলতার দিক থেকে তা নিউটনের মহাকর্ষ সমীকরণকেও হার মানায়। মার্কস ভরা-পেট পুঁজিপতির পদতলে পিষ্ট শুন্য-পেট প্রলেতারিয়েতের মনবাসনা অনুধাবন করতে পারলেও বিপ্লব পরবর্তি ভরা পেট প্রলেতারিয়েতদের মনবাসনা মোটেও আঁচ করতে পারেন নি। মার্কস মানুষের মনকে অর্থনীতির একটি স্ট্যটিক ফাংশন ধরে নিয়েছিলেন। নারী-পুরুষ বৈষম্যের ক্ষেত্রেও পশ্চিমের এই অতি সরলিকরণ এবং অতি যান্ত্রিকতা লক্ষ্যনীয়। যেন পুরুষের ছাঁচে ফেলে নারীকে গড়ে তুললেই নারী-পুরুষে সমতা আসবে, নারী স্বাধীন হবে। পশ্চিমের এই অতি যান্ত্রিক ধারণা এত প্রবল কেন? আগে বলা ঐতিহাসিক কারণ ছাড়াও আর একটি কারণ হচ্ছে ট্রাডিশনাল পশ্চিমা ধারণায় মানুষ একটি ফাংশনাল এনটিটি। এবং তাদের শিক্ষাব্যবস্থা এই ধারণা প্রতিষ্ঠার মুল কারণ।

আমি মনে করি ট্রাডিশনাল পশ্চিমা জ্ঞানব্যবস্থা (Knowledge System) একটি অর্ধ মস্তিস্ক চর্চাক্ষেত্র। এটি মস্তিস্কের বাম গোলার্ধ (Left Hemisphere of the Brain) নিয়েই প্রধাণত কাজ করে। সেই কারণে বাম মস্তিষ্ক ব্যক্তিরাই (Left Brained Persons) শিক্ষায়তনগুলোতে ও বিভিন্ন প্রতিযোগীতায় ভাল করে ও সমাজকে চালিত করে। নারী পুরুষের মস্তিস্কের বাম গোলার্ধের গঠন ও কার্যপ্রণালীতে উল্লেখযোগ্য তেমন কোন বিভেদ নেই। বিভেদটা মুলত ডান গোলার্ধ এবং মস্তিস্কের দুই গোলার্ধের আর্ন্তসংযোগে। সেই কারণে সমাজকে আমরা যদি “বাম মস্তিস্কের রণক্ষেত্রে” পরিণত করি তবে নারী পুরুষের বিভেদ মেটানো নিউটনের অভিকর্ষের সূত্রটির মতই সহজ। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে প্রকৃতি তা মেনে নেবে কি না।

গত বিশ থেকে ত্রিশ বছরে আধুনিক মনোবিজ্ঞানের অনেক উন্নয়ন হয়েছে। মানুষের ব্যক্তিত্ব তত্ত্বের অগ্রগতি হয়েছে অনেক। নতুন আবিস্কৃত ফাংশনাল এম আর আই (f-MRI) যন্ত্রের সাহায্যে সজ্ঞান ব্যক্তির মস্তিস্কের ক্রিয়ার মানচিত্রও তৈরী সম্ভব হচ্ছে। এখন ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে যে সংস্কৃতি এবং প্রথা আমাদের ব্যাক্তিত্ব এবং নিজস্ব স্বত্ত্বা (Self) নির্মাণ করে। এর ভিত্তিতেই আমরা “সাংস্কৃতিক মানুষ (The Cultural Human)” হিসাবে আত্মপ্রকাশ করি। এর ভিত্তিতেই আমরা হই “সাংস্কৃতিক পুরুষ” এবং “সাংস্কৃতিক নারী”। “সংস্কৃতিহীন” মানুষ একটি রক্ত মাংশের ফংশনাল ইক্যুইপমেন্ট মাত্র।

(চলবে)

[ স্নিগ্ধার প্রশ্ন ও তার উত্তর]

প্রিয় অপ্রিয়,
অনেকখানি রয়ে এবং বেশ খানিকটা সয়ে কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই। প্রথমেই বলে নিচ্ছি আপনার লেখার একটা ট্যাঞ্জেন্সিয়াল বক্তব্য বা পয়েন্ট আমার ভালো লেগেছে, সেটা হলো পশ্চিমা ধ্যান ধারণাকে বিনা প্রশ্নে মেনে না নেয়া। ভালো কথা, আমিও এটা মানি। কিন্তু, কোন কিছু পশ্চিম থেকে উদ্ভূত বা আগত হলেই তাকে নাকচ করে দিতে হবে, সেটা মানি না। ধরে নিচ্ছি, আপনি আপনার মতামত/আদর্শ/যুক্তি ইত্যাদি অনুসারে নারী সম্পর্কিত এই ধারণায় পৌছেছেন, এটা পশ্চিমীয় বলেই যে এটাকে খারিজ করছেন তা নয়। খুবই ভালো কথা। এবার আমার প্রশ্নগুলো -

১। আপনি পশ্চিমা কর্পোরেট বেনিয়াদের মুনাফালোভী, পশ্চিমী নারী 'স্বাধীনতা' বা 'সমানাধিকার' এর ধারণাকে কে রিজেক্ট করছেন - এই পরিপ্রেক্ষিতে 'আপনার' নারী অধিকার বা সমাজে নারীর অবস্থান কি বা কিরকম হওয়া উচিত?

উ: পুরুষের পাল্লায় নারীর বিচার করাই নারীত্বের সবচেয়ে বড় অপমান। সমাজে পুরুষে পুরুষে যেমন ব্যপক বিভেদ বিদ্যমান, শিক্ষিত অশিক্ষিত, সফল বিফল সবারই গ্লানী মুক্ত বেঁচে থাকার যে সুযোগ রয়েছে তা নারীর জন্যও নিশ্চিত করতে হবে। কেউ যদি পড়ালেখা শিখে সম্পুর্ণ পেশাগত জীবন যাপন করতে চায় তাকেও যেমন হেয় করা যাবে না আবার কেউ যদি পনেরো বছর বয়সেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ঘর সংসার করতে চায় তাকেও অবজ্ঞা করা যাবে না। যে কোন নারীর গ্লানী মুক্ত বেঁচে থাকার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। সবার জন্য মৌলিক অধিকার এবং মানবাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

২। যে 'নারী সংস্কৃতির' কথা আপনি বলছেন সেটার সংজ্ঞা বা সেটা নির্ধারন করার ক্রাইটেরিয়া গুলো কি কি? অর্থাৎ কোন নারী ওই 'সংস্কৃতি'র ধারক ও বাহক হয়ে আছেন বা নেই, সেটা কিভাবে বোঝা যাবে?

উ: 'সাংস্কৃতিক নারী' বলতে আমি রক্ত-মাংশের নারীর (জেনেটিক ফিমেল) সাথে আবেগের নারী (ইমোশোনাল ফিমেল) ও সমাজের নারীর (সোশ্যাল ফিমেল) ইনটিগ্রিটি বুঝাতে চেয়েছি। সাংস্কৃতিক ইনটিগ্রিটি একটি দীর্ঘমেয়াদি নিরবিচ্ছিন্ন প্রবাহ, এর কোন শর্টকার্ট নেই বলেই আমার মনে হয়। তবে সবসময়ই ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে একটি গ্রহণযোগ্য পথ খুজে পাওয়া যায়।

কোন নারী ওই 'সংস্কৃতি'র ধারক ও বাহক হয়ে আছেন বা নেই, আমার মনে হয় এটা বোঝার কোন নিরাপদ রাস্তা নেই। প্রকৃতি এখানে জীব বিবর্তনের মতই নিষ্ঠুর। যদি মানুষ তার ‘সংস্কৃতিকে’ হারিয়ে ফেলে তবে সে জীবনের বৃহৎঅর্থই (Greater meaning) হারিয়ে ফেলে। ক্রমান্নয়ে প্রতিযোগীতা আর ইন্দ্রিয় ভোগই তার চালিকাশক্তি হয়ে দাড়ায় বলে আমার ধারণা। ফলাফল হচ্ছে পরিবার ও সমাজ ভেঙে যাওয়া ও ঐ মানুষেদের বিলুপ্তি। মানুষের নৃবৈজ্ঞানিক ইতিহাস তাই বলে।

৩। সেই নির্ধারকগুলো কারা ঠিক করবে? নারী? পুরুষ? নারী পুরুষ উভয়েই?

উ: এখানে প্রয়োজন অভিজ্ঞতার মুল্য দেওয়া। সমাজে অনেক সুখী সফল নারী আছেন যারা অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজ থেকে নারী বিষয়ে পি এইচ ডি ধারীর থেকেও এ বিষয়ে অনেক বেশী জানেন, তাদের কাছে জীবনের শিক্ষা নেওয়া। কারা ঠিক করবে, নারী না পুরুষ তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে যাদের এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান আছে। মনোবিশ্লেশন, সমাজ বিজ্ঞান, ব্যক্তিত্ব-তত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে যারা আধুনিক মানব-বিজ্ঞানে (Human Sciences) শিক্ষিত তাদেরকেই এই নির্ধারকগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।

৪। "বন্ধ কুটিরে বন্দি থেকেও সুখ আনন্দের যে হাসি ছড়াতো" আপনি এই সিদ্ধান্তে পৌছুলেন কি করে? যদি ধরেও নেই আপনার কাছে উপাত্ত আছে এরকম কয়েকজন নারীর যারা বন্দী অবস্থাতেও হাসি ছড়াতেন, তাতে কি করে প্রমাণিত হলো যে সওওওব নারীরাই তাই ছিলেন, বা থাকতে চান?

উ: আধুনিক শহুরে মানুষের স্বাধীনতা অনেকটাই “ভার্চুয়াল ফ্রিডম”। গ্রামের যে সব মানুষকে আমরা "বন্ধ কুটিরে বন্দি” বলে মনে করি তারা অনেকেই কিন্তু আমাদের চেয়ে অনেক স্বাধীন এবং সূখী। সবাই যে তাই সেকথা আমি বলিনি।

৫। আমি পশ্চিমে থাকি এবং আমার বেশ কিছু ঘনিষ্ঠ পশ্চিমা ছেলেবন্ধু আছে। তাদের কয়েকজন বাচ্চাদের জন্য যা করে সেটা আমি বাংলাদেশে অনেক মা কেও করতে দেখি নি। অর্থাৎ, অপত্যস্নেহে পুরুষ অবধারিতভাবে পিছিয়ে আছে/থাকে - এটা ঠিক নয়। তাহলে, কেন নারীকেই 'স্নিগ্ধ আদর ভালোবাসায় স্নেহের মা' হতে হবে? পুরুষ কেন স্নিগ্ধ আদর ভালোবাসায় স্নেহের বাবা হতে পারবে না?

উ: আবার সেই যান্ত্রিক সরলীকরণ! আমি একজন একাকী পুরুষ। আর একজন মানুষের সাথে স্পর্শ ও আবেগের বিনিময় আমার খুব প্রয়োজন। একজন গড়পরতা নারী অবহেলাভরেও আমাকে যা দিতে পারবে পৃথীবির সুন্দরতম এবং সর্বাপেক্ষা কেয়ারিং পুরুষও কি আমাকে তার ভগ্নাংশও দিতে পারবে? বরঞ্চ ঘৃণার উদ্রেক করবে। মানুষের সাথে মানুষের আন্তরিক যোগাযোগে সার্ভিসটাই মুল কথা নয়, তার চেয়েও বড় রসায়ন এবং আবেগের সংযোগ। ঐ শিশু কি শুধুমাত্র সার্ভিস চায়? যে মায়ের পেটে সে নয়মাস ছিল, পেটের ভিতরে দুইমাস বয়স থেকে মায়ের প্রতিটা কথা যে শুনেছে, মায়ের হরমোন যার রক্তপ্রবাহে মিশেছে, আবেগ সঞ্চার করেছে সেই মা যে নিরাপত্তা ও আবেগ তাকে দিবে তার নিজের পিতাও কি তা কখনও দিতে পারবে?

৬। যদি বলেন, পুরুষরাও হোক - কে তাদের মানা করেছে, তাহলে এবার আসি সেক্সুয়াল ডিভিশন অফ লেবারের কথায়। মেয়েরাই গৃহলক্ষ্মী হয়ে বিরাজ না করে বরং বাইরের পৃথিবীতে 'যুদ্ধ' করুক? ছেলেরা না হয় গৃহশিব হয়ে সংসার এবং সন্তান সামলাক? সন্তানধারনের ব্যাপারটা কোন বাধাই এক্ষেত্রে হবে না, কারণ বহু কর্মজীবি নারীই শুধু জন্মদানের আগে পরে মিলিয়ে খুব অল্পদিন বিশ্রাম নেন, তারপর আবার কাজে যান।

উ: আমরা অনেক এক্সপেরিমেন্ট করতে পারি, অনেক সমাজ তা করছেও। কিন্তু ঐ যে বললাম এই এক্সপেরিমেন্টের উপর নির্ভর করবে ভবিষ্যত প্রজন্ম কেমন হবে, তাদের সন্তানেরা কেমন হবে। আমরা জানি না তারা কেমন থাকবে, তারা আদৌ টিকে থাকবে কি না।

৭। সারাদিন বাইরে যুদ্ধ করলে যদি নারীর স্বভাবে '্যোদ্ধা' ভাব আসে তাতে তার নারীত্বের সঙ্গে বিরোধীতা হয় কি করে? নারীকে বা মা কে কোমল স্বভাবা হতে হবে এই ধারণা কি প্রাচ্যের? আমাদের সাংস্কৃতিক ইতিহাসে নারীর পরূষ, অকমণীয়, দৃঢ় হবার উদাহরণ নেই?

উ: আমার মনে হয় এ প্রশ্নের উত্তর এর মধ্যেই পেয়ে গেছেন।

৮। পশ্চিমা নারীরা কেমন আছে? আমার জানা মতে প্রাচ্যের মেয়েদের মতোনই আছে। অন্তত আপনার কথিত 'নারী সংস্কৃতি'র বাইরে আসার ফলে একটুও খারাপ নেই বলেই জানি। আমার নিজের জীবন যাত্রা খুব বেশী মাত্রায় পশ্চিমা। এবং আমি একজন সিংগল প্যারেন্ট। এবং আমি ভালো আছি।

উ: এ প্রশ্নের উত্তরটা দিতে চাই না। এটা আপনার উপরেই ছেড়ে দিলাম, আপনি ভাল থাকুন, আন্তরীকভাবে তাই চাই।


মন্তব্য

তানবীরা এর ছবি

অপ্রিয়, আমি যদি আপনি হতাম তাহলে নারী - পুরুষে বৈষম্য না লিখে, লিখতাম মানুষে মানুষে বৈষম্য। একটা মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখে যতোদিন সমাজের লোকজন নারী আর পুরুষ হিসেবে দেখবে ততোদিন পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা কাগজ তত্ব তৈরীতে যাবে কিন্তু আমরা যে তিমিরে আছি সেই তিমিরেই থেকে যাবো।

ভুল দিয়ে যার গন্তব্য শুরু ভুল তার পরিনতি হতে বাধ্য। বাংলা ভাষার বহুল প্রচলিত কিছু শব্দ থেক আমি পাকাপাকি মুক্তি চাই। মেয়েদের আলাদা মেধা তালিকা সরকারীভাবে করা হয়, নারী অধিকার, নারীর আইন, নারী স্বাধীনতা, নারী কোটা, কর্মজীবি নারী ইত্যাদি ইত্যাদি। আর এই সব বোগাস শব্দ মেয়েদের নিয়ে এ ধরনের লেখার রসনা যোগায়।

আপনার কি মনে হয় আপনি সময় নিয়ে স্নিগ্ধাদির প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখেছেন????

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

অপ্রিয় এর ছবি

একটা মানুষকে মানুষ হিসেবে না দেখে যতোদিন সমাজের লোকজন নারী আর পুরুষ হিসেবে দেখবে

উভয়কেই মানুষ হিসাবে দেখে একই সাথে তাদের নিজ নিজ জগত থাকালে কেমন হয়?

আপনার কি মনে হয় আপনি সময় নিয়ে স্নিগ্ধাদির প্রশ্নের সঠিক উত্তর লিখেছেন?

না লিখিনি। স্নিগ্ধাকে বলেছিলাম সঠিকভাবে উত্তর দিতে গেলে একটি বই লিখতে হবে। স্নিগ্ধা বলেছেন সংক্ষেপে উত্তর দিলেই হবে। পরবর্তি পর্বগুলো আসলে আরও অনেক কিছু পরিষ্কার হবে আশা করি।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

স্নিগ্ধা এর ছবি

অপ্রিয় - দেরীর জন্য ক্ষমাপ্রার্থনার কিছু নেই, আপনি উত্তর যে দিয়েছেন সেটাই আসল - অনেক ধন্যবাদ!

আপনার এই পোস্ট এবং আমার প্রশ্নের উত্তরে লেখা কথাগুলো পড়ে, সত্যি বলতে, আমি আগের চাইতেও বেশী কনফিউযড! হতেই পারে তা আসলে আমারই বোঝার ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, তারপরও আমার মতপার্থক্যের কয়েকটা ক্ষেত্র (সবগুলো নয়, আরো ছিলো) তুলে ধরছি। বিশেষ করে কতগুলো কথা আমার কাছে পরস্পরবিরোধী মনে হয়েছে।

বিষয়টিকে অত্যন্ত সূক্ষভাবে এবং বিজ্ঞানসন্মত পন্থায় বিশ্লেষণ করা উচিৎ। অন্ধভাবে রাজনৈতিক বিপ্লবের তত্ত্ব এখানে প্রয়োগ করতে গেলে হিতে বিপরীত হবে, যা হয়েছে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের ক্ষেত্রে।

বলছেন 'সূক্ষ্মভাবে এবং বিজ্ঞানসম্মত' উপায়ে নারী-পুরুষ সম্পর্ক বিশ্লেষণ করতে হবে, আবার বলছেন - এখন ধীরে ধীরে পরিষ্কার হচ্ছে যে সংস্কৃতি এবং প্রথা আমাদের ব্যাক্তিত্ব এবং নিজস্ব স্বত্ত্বা (Self) নির্মাণ করে। এর ভিত্তিতেই আমরা “সাংস্কৃতিক মানুষ (The Cultural Human)” হিসাবে আত্মপ্রকাশ করি। এর ভিত্তিতেই আমরা হই “সাংস্কৃতিক পুরুষ” এবং “সাংস্কৃতিক নারী”। “সংস্কৃতিহীন” মানুষ একটি রক্ত মাংশের ফংশনাল ইক্যুইপমেন্ট মাত্র। আপনি 'বিজ্ঞান', 'সংস্কৃতি' এবং 'রাজনৈতিক বিপ্লবের তত্ত্ব' সবই নারী-পুরুষ সম্পর্কের নির্ণায়ক হিসেবে খাটাচ্ছেন, আবার সেগুলোকেই অন্ধ পশ্চিমানুকরণ বলে প্রত্যাখান করছেন!!!
ঠিক কী ধরনের 'বিজ্ঞানসম্মত' পদ্ধতি প্রয়োগ করলে আপনার মনে হবে, 'সংস্কৃতি'কে যথেষ্ট মনোযোগও দেয়া হয়েছে, আবার অন্ধভাবে কোন তত্ত্ব প্রয়োগ করা হয় নি, একটু ব্যাখ্যা করবেন কী?

আরেকটি পরস্পরবিরোধী বক্তব্য -
এখানে প্রয়োজন অভিজ্ঞতার মুল্য দেওয়া। সমাজে অনেক সুখী সফল নারী আছেন যারা অক্সফোর্ড বা কেমব্রিজ থেকে নারী বিষয়ে পি এইচ ডি ধারীর থেকেও এ বিষয়ে অনেক বেশী জানেন, তাদের কাছে জীবনের শিক্ষা নেওয়া। কারা ঠিক করবে, নারী না পুরুষ তার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে যাদের এ বিষয়ে সম্যক জ্ঞান আছে। মনোবিশ্লেশন, সমাজ বিজ্ঞান, ব্যক্তিত্ব-তত্ত্ব, নৃবিজ্ঞান ইত্যাদি বিষয়ে যারা আধুনিক মানব-বিজ্ঞানে (Human Sciences) শিক্ষিত তাদেরকেই এই নির্ধারকগুলো মানুষের সামনে তুলে ধরতে হবে।

তাহলে কি যাঁরা অক্সফোর্ড কেম্ব্রিজের পি এইচ ডি ধারীদের চাইতে 'জীবন-অভিজ্ঞতা'র দিক থেকে বেশী জ্ঞান রাখেন তাঁদের চাইতে আমরা Human science এ যাঁদের 'সম্যক জ্ঞান' আছে তাঁদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেব? নাকি উল্টোটা? কারণ, আপনি একবার একে, আরেকবার ওকে অপেক্ষাকৃত বেশী যোগ্য বলছেন!

আর 'সুখী', 'সফল' নারী মানেটা কী?? সুখী মানে তাও বুঝলাম - কিন্তু, নারীর 'সফলতা' কিভাবে নির্ধারন করা হচ্ছে? আবারও কিন্তু আপনি সেই 'ক্রাইটেরিয়ার' প্রশ্নে চলে যাচ্ছেন। কোন নারী কি নিজে বললেই সে সফল, নাকি অন্য কোন মাপকাঠিতে সেটার বিচার করা হবে? যদি আপনি আবারও বলেন, এখানে নারী-সংস্কৃতি দিয়ে বুঝতে হবে কে সফল, কে নয় - ভালো কথা, তাহলে আমাকেও আবার আগের প্রশ্নে ফেরত যেতে হচ্ছে। এতো খুবই সার্কূলার লজিক হয়ে যাচ্ছে!

একজন গড়পরতা নারী অবহেলাভরেও আমাকে যা দিতে পারবে পৃথীবির সুন্দরতম এবং সর্বাপেক্ষা কেয়ারিং পুরুষও কি আমাকে তার ভগ্নাংশও দিতে পারবে? বরঞ্চ ঘৃণার উদ্রেক করবে।

এটা তো স্পষ্ট 'আপনার' মতামত বা মনোভাব - কোন বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে লব্ধ কোন তত্ত্ব, বা ফর্মূলা নয় - কারণ সমকামী ছেলেদের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা একদমই উলটো! তাহলে?

মানুষের সাথে মানুষের আন্তরিক যোগাযোগে সার্ভিসটাই মুল কথা নয়, তার চেয়েও বড় রসায়ন এবং আবেগের সংযোগ। ঐ শিশু কি শুধুমাত্র সার্ভিস চায়? যে মায়ের পেটে সে নয়মাস ছিল, পেটের ভিতরে দুইমাস বয়স থেকে মায়ের প্রতিটা কথা যে শুনেছে, মায়ের হরমোন যার রক্তপ্রবাহে মিশেছে, আবেগ সঞ্চার করেছে সেই মা যে নিরাপত্তা ও আবেগ তাকে দিবে তার নিজের পিতাও কি তা কখনও দিতে পারবে?

সার্ভিসের কথা বলছে কে?! আমি যাদের কথা বলেছি তারা 'রসায়ন+আবেগ+দায়িত্ববোধ+ভালোবাসা+..." কোনটাতেই কম নয়। আর মায়ের পেটে শিশুটা শুধু মায়ের হরমোনই পায় নি, তার বাবার বীর্য থেকে আগত জিন এবং সম্পর্কিত বৈশিষ্ট্যগুলোও পেয়েছে। অর্থাৎ, যদি ধরেও নেই (আমি মনে করি না) যে বায়োলজিক্যাল বন্ডিং বা ইন্সটিঙ্কট ই অপত্যস্নেহের ক্ষেত্রে প্রধান, তাহলেও তো বাবার সাথে বাচ্চার বায়োলজিক্যাল কানেকশন বাদ দেয়া যাচ্ছে না?

আধুনিক শহুরে মানুষের স্বাধীনতা অনেকটাই “ভার্চুয়াল ফ্রিডম”। গ্রামের যে সব মানুষকে আমরা "বন্ধ কুটিরে বন্দি” বলে মনে করি তারা অনেকেই কিন্তু আমাদের চেয়ে অনেক স্বাধীন এবং সূখী। সবাই যে তাই সেকথা আমি বলিনি।

বলেননি কি? আপনার যে কবিতা/পোস্টের পরিপ্রেক্ষিতে আমার ঐসব প্রশ্ন করা - তাতে তো আপনি স্পষ্টই বলেছিলেন যে আজকাল নারী বিদ্যা বুদ্ধিতে পুরুষকেও অতিক্রম করে যাচ্ছে কিন্তু ওইসব 'বদ্ধ কুটিরে বন্দী থেকেও' হাসি ছড়ানো নারী আর হতে পারছে না।


উ: আমার মনে হয় এ প্রশ্নের উত্তর এর মধ্যেই পেয়ে গেছেন।

পাই নি কিন্তু .........

উ: এ প্রশ্নের উত্তরটা দিতে চাই না। এটা আপনার উপরেই ছেড়ে দিলাম, আপনি ভাল থাকুন, আন্তরীকভাবে তাই চাই।

আপনার আন্তরিক শুভকামনার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলছি, উত্তরটা কেন দিতে চান না একটু বলবেন? আমার ওপর কী ছেড়ে দিলেন? আমি আমার উদাহরণ দিয়েছি এটা বোঝাতে যে পশ্চিমা নারীরা আপনার মতে 'তথাকথিত স্বাধীনতা' অর্জন করার পরেও প্রাচ্যের নারীদের চাইতে খারাপ নেই। কোন কোন দিক থেকে প্রাচ্যের একজন নারী মনে করবেন তিনি পশ্চিমের নারীদের চাইতে ভালো আছেন, আবার কোন কোন দিক থেকে পশ্চিমের একজন নারী ঠিক উল্টোটা মনে করবেন। এটা মাপার কোন 'বিজ্ঞান্সম্মত' পদ্ধতি নেই। তবে সার্বিকভাবে - যেহেতু আমি একজন নারী - তাই বলতে পারি, তারা 'বেশী খারাপ' বা 'কম ভালো' নেই। আর আমি মনে করি না যে একজন একা পুরুষ বা নারীর জীবন অস্পম্পূর্ণ, বা 'একা' থেকে কেউ সুখী হতে পারে না। অনেকে পারে, বেশীরভাগই হয়তো সঙ্গী চায় - সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদী - কিন্তু এটারও কোন সর্বজনগ্রাহ্য তত্ত্ব নেই।

সবজান্তা এর ছবি
অপ্রিয় এর ছবি

সত্যি বলতে, আমি আগের চাইতেও বেশী কনফিউযড

স্বাভাবিক। আমি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বক্তব্য ও প্রসঙ্গ তুলে আনছি যা আজকাল সচরাচর মানুষ করে না। বিশেষজ্ঞদের এই যুগে কেউই নিজের বিষয় ছাড়া আর কিছু পড়তে চান না। এ ছাড়া বিষয়টি জটিল এবং এর অনেক কিছুই আমাদের সজ্ঞান মনের আওতার বাইরে। অনেক ক্ষেত্রেই অ্যাবস্ট্রাক্ট রিজনিংও ব্যবহৃত হয়েছে।

পরস্পরবিরোধী বক্তব্য

হ্যা, একদিকে আমি বলছি আমাদের সনাতন জীবনব্যবস্থার উত্কর্ষের কথা আবার আরেক দিকে বলছি Human science এ যাঁদের 'সম্যক জ্ঞান' আছে তাঁদের বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কথা। এ বিষয়টি পরের পর্বে পরিষ্কার হবে।

আর 'সুখী', 'সফল' নারী মানেটা কী

"আমি দোজখের আগুনে বসিয়া হাসি পুষ্পের হাসি"
দেখুন 'সুখ' হচ্ছে একটি ব্যক্তিগত বোধ। আপনি সুখী কি না এ বিষয়ে আপনার মতামতই শেষ কথা। কিন্তু 'সুখ'মানব জীবনের সম্পূর্ণতা নয়। 'সফল'বলতে আমি ব্যক্তির বাহ্যিক (External) অর্থপূর্ণতা (Meaningfulness) বুঝাতে চেয়েছি। য়ার মধ্যে অপরের দুঃখের কারণ না হওয়া, সুস্থ পরবর্তী প্রজন্ম তৈরী, বেসিক ইন্সটিংট কে অতিক্রম করে নিজের চিন্তাধারায় জীবনকে পরিচালিত করতে পারা ইত্যাদী।

আপনার বাকী প্রশ্নগুলোর উত্তর সবশেষে দিতে চাই। অনেক কিছু এমনিতেই এসে যাবে।

ধন্যবাদ।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

স্নিগ্ধা এর ছবি

সত্যি বলতে, আমি আগের চাইতেও বেশী কনফিউযড

স্বাভাবিক। আমি মাল্টিডিসিপ্লিনারি বক্তব্য ও প্রসঙ্গ তুলে আনছি যা আজকাল সচরাচর মানুষ করে না। বিশেষজ্ঞদের এই যুগে কেউই নিজের বিষয় ছাড়া আর কিছু পড়তে চান না।

হায়রে! আপনার দু'দুখানা এ প্রায়রি এসাম্পসনই ঠিক নয় - আমার নিজের একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডই মাল্টিডিসিপ্লিনারী, এবং যদিও কোনদিকেই আমি এখনও বিশেষজ্ঞ নই, কিন্তু নারীবাদ আমার প্রধান বিষয় নয়, বরং কয়েকটি বিষয়ের মধ্যে একটি।

অতএব আমার 'কনফিউশন' আপনার মাল্টিডিসিপ্লিনারি 'যুক্তি'র অবতারণার জন্য মোটেই নয়, বা 'নারীবাদ' এর বাইরের বা বিপরীতের যুক্তি সম্পর্কে আমি অনবহিত বলে নয় - বরং অ-পরস্পরবিরোধী, সলিড-রিজনিং (এবস্ট্রাক্ট রিজনিং জিনিষটি কী? এখানে কোনগুলো সে আওতায় পড়ে?) এর অভাবে হাসি

আপনার মতে 'সুখ' মানব জীবনের সম্পূর্ণতা নয়, বরং সম্পূর্ণতা আসবে 'সফল' মানুষ হতে পারলে। এবং 'সফল' হবে তখনই যখন একজন মানুষ তার 'বাহ্যিক অর্থপূর্ণতা' নিশ্চিত করতে পারবে, যার মধ্যে বেসিক ইন্সটিঙ্কটকে অতিক্রম করে নিজস্ব চিন্তাধারায় জীবন পরিচালিত করতে পারাটাও পড়ে, তাই তো?

ঠিক আছে, এবার বলুন কারো নিজস্ব চিন্তাধারা যদি এমন হয় (কারো ক্ষতি করছে না, সুস্থ প্রজন্মও তৈরী করছে) - যে সে মনে করলো সেক্স চেঞ্জ করে ছেলে থেকে মেয়েতে পরিণত হবে এবং আরেকটি ছেলেকে আইনত বিয়ে করবে এবং সন্তান উৎপাদন করবে, অথবা - একজন একা মেয়ে স্পার্ম ব্যাঙ্ক থেকে স্পার্ম এনে মা হবে, অথবা - দুজন ছেলে এবং একটি মেয়ে মিলে একটি পরিবার গঠন করলো যেখানে মেয়েটির দু'জনের সাথেই যৌন সম্পর্ক থাকবে, অথবা - একজন বাবা মনে করলেন যে তার মেয়েদের ছোট থেকেই পর্দা করানো উচিত, সেক্ষেত্রে তাদের পূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা উচিত কী?

বলেছেন, আমার অন্য প্রশ্নগুলোর উত্তর সামনের পর্বে আসবে। অপেক্ষায় আছি।

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আপনার পোস্টের প্রথম অংশের ব্যাপারে (মানে ব্লগার স্নিগ্ধার প্রশ্নের উত্তরের আগ পর্যন্ত অংশের ব্যাপারে)

ইন্টারেস্টিং চিন্তা!
মোটাদাগে যা বুঝলাম, আগেকার সমাজে পুরুষদের সেটকে x,নারীদের সেটকে yধরে, আর এদের অবস্থাকে f(x), f(y) ধরলে,
আপনার বক্তব্য হচ্ছে,
পশ্চিমা কর্পোরেট কালচারের ধ্যানধারনায় f(x)>f(y) -- এই প্রপোজিশনের উপর ভিত্তি করে x=yকরার চেষ্টা করা হয়েছে।
কিন্তু ব্যাপারটা উল্টো করা উচিত ছিলো বলে আপনি মতামত দিচ্ছেন, মানে এগন করা উচিত ছিলো যাতে f(x) = f(y) হয়। তাহলে অটোমেটিকালি x=y হয়ে যেত।

ঠিক আছে, মানলাম। আমিও সেটাই মনে করি। তা নাহলে ইতিহাসের অনেক নারীদেরকেই ছোট করা হয়ে যেতে পারে। অথবা এভাবে বলতে পারি, আমার মা হাঁড়ি ঠেলেছে আর বাবা চাকুরী করে পয়সা কামিয়েছে বলে মায়ের চেয়ে বাবা বেশী মর্যাদার, সেটা আমি মনে করিনা।

কিন্তু প্রশ্ন হলো (এই প্রশ্নটা স্নিগ্ধাকে দেয়া আপনার ১ নং উত্তরের সাপেক্ষেও খাটে),

১। এই f(x) = f(y) করার জন্য কি মেকানিজম আপনি প্রস্তাব করেন?

২। উপরের প্রশ্নের সাপেক্ষেই সম্পুরকভাবে জিজ্ঞেস করা যায়, যে পুঁজিবাদী পরিবেশে আজকের গোটা দুনিয়া পরিচালিত, সেখানে সরাসরি অর্থের যোগান আসা অবস্থা (যেমন বাবার চাকুরী) আর অর্থের সরাসরি সংকুলান করতে না পারা অবস্থা (যেমন মায়ের হাঁড়ি ঠেলা) -- এই দুটোকে যখন আপনি নারী-পুরুষ নির্বিশেষে কারু সামনে তুলে ধরে বলবেন একটা বেছে নিতে, তখন কিভাবে আপনি আশা করেন যে সামর্থ্য থাকলেও একজন অর্থের সংকুলানের অপশনটিকে বেছে নেবেনা? মানুষই যদি বেছে নেয় পুঁজিবাদী অপশনকে, তাহলে সংস্কৃতি কি সেখানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে বদলাতে বাধ্য না?

৩। এখন আরেকটা প্রশ্নও আসে, পুঁজিবাদ কি কারো চাপিয়ে দেয়া মন্ত্র নাকি একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া যেটাকে আসলে অগ্রাহ্য করার উপায় নেই?

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অপ্রিয় এর ছবি

১। x=y করার চেষ্টা বাদ দিয়ে xএবং y উভয়েরই মানোন্নয়নের চেষ্টা করা, নিজ নিজ চরিত্র বজায় রেখে।

২। হ্যা, তখন পুঁজিবাদকে বদলানোর চেষ্টা করতে হবে। পুঁজিবাদও বিবর্তিত হয়। না হলে নতুন কিছুর চিন্তা করতে হবে।

৩। আমার মনে হয় পুঁজিবাদ একটা প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া কিন্তু অবশ্যই একে অতিক্রম করে যেতে হবে।

ধন্যবাদ।

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

+++++++++++++++++++++++++++++
ঈশ্বরে বিশ্বাস নেই এই পাপীর, তবে বিশ্বাস করি এই আমি বিশ্বাসীদেরই প্রার্থনার ফসল

পুরুজিত এর ছবি

কেউ যদি পনেরো বছর বয়সেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে ঘর সংসার করতে চায় তাকেও অবজ্ঞা করা যাবে না।

!!!!
পনেরো বছর বয়সে কিসের সংসার?

s-s এর ছবি

প্রশ্নোত্তর ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই।
কিন্তু আপনার কবিতার ব্যাপারে আছে।
এই লেখাটা একটু চিন্তা ভাবনা করে লেখা মনে হচ্ছে , কিন্তু কবিতাটি পড়লে মনে হয় বলিহারি যাই - এই কবিতাটা সজনীকান্ত যুগের শনিবারের চিঠিতে দিলেই বেশি মানাতো বোধ করি - অচল আনি মনে হচ্ছে - মানে আমি "পনেরো বছর বয়সে ঘর সংসার করা নারী" বা "বন্দিনী হয়েও সুখের হাসি ছড়ানো" নারী পর্যন্তও মানলাম। কিন্তু হেটেরোসেক্সুয়াল কনটেক্সটের মার্জিনাল সরলীকরণে এসে আমার আ্যন্টেনা আর নিতে পারলোনা ! না ভাই, আপনার সাথে মিলবে না! আপনি তো সমকামীদের ব্যাপারে পুরোই একচক্ষু হরিণীর মতো আচরণ করলেন!

জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।