দুধ কলা দিয়া পুষিলাম যারে – তাহাই কি দংশিলো মোরে?

অপ্রিয় এর ছবি
লিখেছেন অপ্রিয় [অতিথি] (তারিখ: সোম, ০২/০৩/২০০৯ - ৯:৪৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কেন ঘটলো এমন ঘটনা। সেনা বিদ্রোহ পৃথিবীতে নতুন নয়, এদেশেও আগে ঘটেনি যে তা নয়। পরিস্থিতি দেখে এটুকু নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে - ঘটনার রূপরেখা যা বলে - তা শুধু সিপাহীদের বিদ্রোহ নয়, সিপাহীদের বিদ্রোহের ছত্রছায়ায় শত শত সেনা কর্মকর্তাদের নির্বচারে হত্যা করাই ছিল ঘটনার ভেতরের ঘটনা।

সেনা কর্মকর্তাদের এই নির্বচারে হত্যার আপাত উদ্দেশ্য দুটি হতে পারে। এক সিপাহিদের বিভিন্ন দাবী-দাওয়া পুরণ এবং বিডিআরের জন্য নিজস্ব অফিসার ক্যাডার চাওয়া অথবা দুই, সামরিক বাহিনীতে অসন্তোষ তৈরী করা ও সরকারকে অস্থিতিশীল করা। যে কোন সাধারণ সিপাহি বা একজন স্কুল ছাত্রও বুঝবে যে একটি ডিসিপ্লিনড্ ফোর্সের অভ্যন্তরে ব্যাপক অফিসার হত্যা যে কোন দাবী-দাওয়া পুরণের পথ সম্পুর্ণ রুদ্ধ করবে এবং তা কোন ভাবেই ব্যাপকভাবে সমর্থিত হবে না। তাই একথা প্রায় নিশ্চিত করেই বলা যায় যে সিপাহীদের বিদ্রোহকে উপলক্ষ্য করে একটি গ্রুপ সম্পুর্ণ ভিন্ন উদ্দেশ্যে এই ব্যপক হত্যাকান্ড চালিয়েছে।

কিন্তু কাদের লাভ সামরিক বাহিনীতে অসোন্তোষ তৈরী করা ও সরকারকে অস্থিতিশীল করায়?

৭৫ পরবর্তি বাংলাদেশে যে সামরিক, আধা-সামরিক সরকারগুলো এসেছে – রাজনৈতিক সুবিধা এবং প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করবার জন্য তারা সবাই কম বেশী অতি-ডান কে লালন করেছে এবং ভারত বিদ্বেষকে শিখা অনির্বানের চেয়েও অধিক যত্নের সাথে অনির্বান রেখেছে। চেষ্টা করেছে বি-রাজনীতিকরণের। আর এই অপকর্মে সব সময়ই ব্যবহৃত হয়েছে সেনানিবাস আর তাদের গোয়েন্দা দল।

১/১১ এর মাধ্যমে দেশকে বি-রাজনীতিকরণের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার পর সেনাবাহিনী যখন ব্যারাকে ফিরে গেছে, অতি-ডানেরা যখন পায়ের নিচে মাটি হারাবার ভয়ে ভীত, দুধ কলা হারাবার ভয়েই কি এই মরণ ছোবল?

যে কোন দেশের সেনাবাহিনীকেই প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই আবেগহীন এবং দার্শনিক চিন্তাবিমুখ করা হয়। এটি না করলে তারা নির্দ্বিধায় আদেশ পালন ও শত্রুনিধণ করতে পারবে না। কিন্তু এই প্রশিক্ষণ ফলস্রুতিতে তাদেরকে রাজনীতি ও দর্শন বুঝতে অপরাগ করে। ফলে রাজনীতিতে তারা মৌলবাদের ঝুঁকিতে (সাসেপ্টেবল টু) থাকে (অতি ডান বা অতি বাম)। এই কারণেই সব সু-শাসনের দেশেই সেনাবাহিনীকে প্রশাসন ও রাজনীতি থেকে দুরে রাখা হয়। দুঃখজনক হলো ৭৫ পরবর্তি বাংলাদেশে এর উল্টোটাই ছিল স্বাভাবিকতা। এবারের নির্বাচন এবং গণজোয়ার এবং তার সাথে স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির বিপুল বিজয়ে অনেকেই তাদের ভবিষ্যত অন্ধকার দেখছেন। তারাই কিন্তু অতিতে বার বার সামরিক বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন বা প্রয়োজন হলে তাদেরকে জনগনের প্রতিপক্ষ হিসাবে দাঁড় করিয়েছেন। আজ যখন তাদের আর কোন হিসাবই মিলছে না তখন এই ন্যাক্কারজনক হত্যাকান্ডের পরিকল্গনা করে আবার সেনাবাহিনীকে জনগনের মুখোমুখী দাঁড় করাতেই কি এই হীন কর্মকান্ড?

এদেশে হত্যাকান্ডের রাজনীতি খুব বেশী কেউ করে না। ৭১এ বুদ্ধিজীবি হত্যা, ৭৫এ মুজিব হত্যা, জেলখানায় চার নেতা হত্যা, কিবরিয়া হত্যা, হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা – এসবেরই পরিকল্পনাকারী অথবা বেনিফিশিয়ারিরা একই। দেশে অতি-ডান এবং তাদের বন্ধুরা আর বিদেশে তাদের প্রভু পাকিস্তান এবং সৌদি আরব।

আশাকরি আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেই এই ঘটনার যথার্থ তদন্ত হবে, ঘটনার ভেতরের ঘটনাকে উদ্ঘাটন করা হবে এবং শুধুমাত্র কিছুসংখ্যক বিডিআর জওয়ানকে শুলে চড়িয়ে জনগনের আই ওয়াশ করা হবে না। যে বিষধর সর্প সেনানিবাসের নিরাপত্তায় এতদিন লালিত হয়েছে, জনগনের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হয়েছে, সেই সর্পই কি দংশিল আজ? সেনাবাহিনীকে সেই আত্মবিশ্লেষনেও যেতে হবে।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

সহমত ।
'৭৫ থেকে '০৯ পর্যন্তু সশস্ত্রবাহিনী বারবার বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে বিপর্যয়ের সম্মুখীন করেছে । বারবার নিজেদের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে মেতেছে । ৩ নভেম্বর '৭৫ থেকে ২৫ এপ্রিল '০৯ পর্যন্ত কতোজন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্য আভ্যন্তরীন হত্যার শিকার হলেন?
জিয়ার আমলে পাঁচ শতাধিক বিমানসেনাকে একবারে ফাঁসিতে ঝুলানো হয়েছিলো, এবার কয়শত/ কয়হাজার বিডি আর ঝুলানো হবে কে জানে?

কিন্তু ১৫ আগষ্টের খুনী অফিসারদের যদি বাংলাদেশ সেনাবাহিনী কোর্টমার্শালের সম্মুখীন করতো তাহলে হয়তো পরবর্তী এতো হত্যার আয়োজন হতোনা ।

কিন্তু সিভিলিয়ান খুনের অপরাধে বোধহয় সশস্ত্রদের বিচার হয়না । তাই মুজিব খুনের অপরাধে অফিসারদের কোর্টমার্শাল হয়না কিন্তু জিয়া খুনের কারনে হয় ।
এবারো অফিসারদের খুনের বিচার হবে, কিন্তু একজন রিক্সাওয়ালা, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র কিংবা অজ্ঞাত শিশু খুনের বিচার হবেনা ।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

বকলম এর ছবি

১। যাদের হাতে বিশ্বাস করে অস্ত্র তুলে দেয়া হয়, তারা যদি বিশ্বাস ভঙগ করে, মৃত্যু এবং মৃত্যুই তাদের একমাত্র শাস্তি । সে বিডিআর হোক, আর্মি হোক, আর পুলিশই হোক এবং অফিসার হোক, জেসিও হোক, এনসিও হোক বা সাধারণ সৈনিক হোক। সংখ্যায় একজন হোক, একশ' জন হোক আর এক হাজার হোক। যতদিন আমরা এটা নিশ্চিত করতে না পারবো, ততদিন কেউ না কেউ ফ্রান্কেন্ষ্টাইন হয়ে বার বার আসবে।

তীরন্দাজ এর ছবি

আপনার লেখার সাথে সহমত! তবে সত্যি ঘটনা জানতে পারবো আমরা, তা আমার কাছে একেবারেই দূরাশা বলে মনে হয়।

যে ভাবে কাঁদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছে, সেখানে সত্য দু'দিনেই সে কাঁদার আড়ালে তলিয়ে যেতে বাধ্য।

সরকারী তরফ থেকে যা করা হয়েছিল ঘটনাটি ঘটার পর, ও তার ক্রান্তিলগ্নে, নানক ও সাহেরা খাতুনের ভুমিকা, কিংবা প্রধানমন্ত্রীর বিভিন্ন পদক্ষেপ- কোনটাই আমার কাছে আন্তরিকতাহীন মনে হয়নি। হয়তো পদক্ষেপে ভুল থাকতে পারে, (আমার জানা বা বিচার করার ক্ষমতা নেই)- কিন্তু আন্তরিকতা অনেক সময়ে ভুলকেও প্রশমিত করে। প্রধানমন্ত্রীর আদেশ মেনে সেনাবাহিনীর ধৈর্যধারণ, খালেদা জিয়ার প্রাথমিক বক্তব্য আমার কাছে দেশের জন্যে এই কঠিন সময়েও বেশ আশাবাদী করে তুলেছিল। মনে হয়েছিল, আমরা কাঁদা ছোড়াছুড়ির বাজনীতি, নিজের অক্ষমতাকে ঢাকার প্রয়াসে অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলার রাজনীতি থেকে সরে এসেছি।

কিন্তু এখন মনে হচ্ছে, "আমরা সেই তিমিরেই!" আর সত্য বলছে, "চলো, পালাই বাংলাদেশ ছেড়ে !"
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।