মুছে ফেলা
----------
সমস্ত রাত জুতোর ফিতেয় বাঁধা নির্জন
বারান্দাটা আজীবন কুড়োয় অন্ধের পান্থপথ,
আমার হাড়ের ছাড়পত্র জানে
যে চোখে পাথর চোখ নামিয়ে হয় নারী,
নিরবতার দুরত্ব কমিয়ে তুমিই আমার
মুছে ফেলা কল্পনার বংশধর
বানকুড়ালি পুতুল।
স্বপ্নের শেষটুকু নিভে গেলে পরিত্রাণহীন
একটি শরীর ঠিক পাহাড়ের মাঝখানে
নেমে নেমে এখন হাওয়ার পুকুর।
মহাপুরুষ
-----------
[justify]মজিদ ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা উহু্ শব্দটা সে কি দুঃস্বপ্নের ঘোরে নিজে করেছে? স্বপ্নের অংশ ছিলো? নাকি তার পাশে শুয়ে থাকা বউটি করলো। কিন্তু হঠাৎ এই ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে মনে মনে খুব বিরক্ত হয়। পৌষের হাড়কাপানো ঠাণ্ডায় আধো ছেঁড়া কাঁথার ভেতর থেকে মাথা বের করে শব্দের উৎস খোঁজারও প্রয়োজন বোধ করলোনা সে। পেপার মোড়ানোর পরও বেড়ার ফাঁক চিরে ঠিকই বাতাস ঢুকছে মজিদের বস্তির ঘরটিতে। এ যেন এক হিমঘর!
কর্মময় জীবন আর ভালো লাগিতেছে না। আসলে যে কাজ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেছি সেই কাজের প্রতি এক প্রকার অনীহা তৈরী হইয়াছে। 'কাজ' আমাকে পছন্দ করিতেছে না আমি 'কাজ'কে পছন্দ করিতেছি না। আমাদের অবনিবনার ফসল একরকমের বিবমিষা।
সেইবার শরৎকালে অসংখ্য নীলপদ্ম ফুটেছিল দহে। পদ্মের সবুজ পাতাগুলো গোল গোল রুমালের মতন বিছিয়ে ছিল দহের জলতলের উপরে মিশে, সূর্যের নরম আলো খেলা করছিল পদ্মের পাপড়িতে, পাতায়, রেণুতে। অসংখ্য মৌমাছি ও ভোমরা ব্যস্ত ছিল ফুলে ফুলে। মাঝে মাঝে কোথা থেকে অশান্ত হাওয়া ছুটে আসতো, পদ্মের পাতাগুলো উলটে উলটে যেত, সঞ্চিতার মনে হতো ওরা হাত নেড়ে নেড়ে ওকে বলছে, যেও না যেও না, যেও না।
রূপকথার নক্ষত্রের আলো পড়েছে
১।
মনসুর সাহেবের সাথে আমার পরিচয় পর্বটা ছিল বেশ অদ্ভুত।সে প্রায় বছর পনের আগের কথা।মাস্টার্স শেষ করে বেসরকারি একটা কোম্পানিতে ঢুকেছি।মোটা অংকের বেতন পাচ্ছি।মেস ছেড়ে কলাবাগানে ছিমছাম একটা দুইরুমের ফ্ল্যাট নিয়ে উঠে পড়লাম।শুধু সংসারটাই যা শুরু করা বাকি।
রাত ২ টা ৩৭ মিনিট। ঠাহর করতে পারছি না এখন ঠিক কোন জায়গায় আছি। বাস চলছে বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে। বাসের সবাই মোটামুটি গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। আমার পাশের সিটে বসা সহযোদ্ধা বেশ আরাম করেই ঘুমাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পিচের উপর দিয়ে বাসের দ্রুত ঘুর্নায়মান চাকার দ্বারা সৃষ্ট শব্দের কারনে হয়তো তার নাক ডাকার শব্দটা আমার কানে আসছে না।
ভাবছি।
অলস দুপুর, টুপটাপ বৃষ্টি পড়ছে বাইরে, এখানে যেমন পড়ে অনেকটা সেরকম টুপটাপ। বৃষ্টির ছাট থেকে কাচে লেগে যাওয়া পানির ফোঁটা খুব সন্তর্পনে জানালার কাচ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অভিকর্ষের টানে। আমি তাকিয়ে আছি সেই অনিবার্য পতনের দিকে, তাকিয়ে আছি জানালা দিয়ে বৈশিষ্ট্যহীন একলা আকাশের দিকে। চিৎ হয়ে শুয়ে আছি, আর ভাবছি। আমি বেশ ভাবি, মাঝেসাঝে, এই আবজাব, অর্থহীন, অলস, বৈশিষ্ট্যহীন, অমৌলিক আর এলোমেলো সব ভাবনা।
(শুরুতেই নিজের পরিচয় দিয়ে নিই- এই অধমের নাম মাসরুফ হোসেন, আমি বাংলাদেশ পুলিশের একজন ছোটখাটো চাকুরে। "উর্দিপরা লোকগুলো ইন্টেলেকচুয়ালি নানারকম সীমাবদ্ধতায় ভোগে"- এই কথাটি আমার জন্যে সর্বাংশে সত্য।তবুও,বিচিত্র পু্লিশ জীবনের নানা ঘটনা আপনাদের সাথে ভাগাভাগি করে নেয়ার উদ্দেশ্যেই খানে লেখার দুঃসাহস করছি।উল্লেখ্য,এখানে লেখা মতামতগুলো একান্তই আমার ব্যক্তিগত, এর সম্পূর্ণ দায়দায়িত্ব আমার নিজের।)
এই নতুন চিড়িয়াখানায় বদলি হয়ে আসার পর থেকে বদরুল হুসেনের মন খুব খারাপ। “ এ কোথায় এসে পড়লাম রে বাবা!” বদরুল মনে মনে প্রায়ই এই কথা ভাবে। এই একমাস আগেও বদরুল দেশের সবচেয়ে বড় চিড়িয়াখানার জু-কিপার ছিল। বদরুল নিজে হাতে চিড়িয়াখানাটা গড়ে তুলেছিল তিলে তিলে। কত ত্যাগ তিতিক্ষা কত পরিশ্রম সে দিয়েছিল ওইখানে। কত নতুন নতুন সব প্রাণী সে সংগ্রহ করেছিল গত পনের বছর ধরে!