তাইলে পাউডা কাটাই লাগবো, ভাইজান? মেয়েটা আকুল হয়ে প্রশ্ন করে।
টিভির পর্দা থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে চেয়েছিলাম কদিন। দৃশ্যগুলো সহ্য হবার নয়। কংক্রিটের পিলারের মাঝে কোমর পর্যন্ত আটকে থাকা এক আলতাফের আকুতিভরা বাক্য 'ভাই আমারে বাঁচান' আমাকে ঘুমোতে দেয়নি দুদিন। এত শত মানুষ মরেছে নির্মমভাবে, কিন্তু আলতাফের আটকে থাকার দৃশ্যটাই আমার চোখে আটকে গেছে। কারণ পরদিন সকালে উঠে জেনেছি আলতাফ চলে গেছে।
বছর কয়েক আগে 501 Must Read Books নামের এক বই জোগাড় করেছিলাম, অলস পাঠকেরা যেমন করে আর কী, যেন সেই ৫০১টা বই পড়লেই জগতের সব সাহিত্য সম্পর্কে ঝানু হয়ে যাব, বেছে বেছে কিছু পড়া হবে আর মাঝে মাঝে ইজি চেয়ারে পা ঝুলিয়ে কপাল কুঁচকে ভাবব যে এই কয়টা বই-ই এখন পর্যন্ত পড়তে পারলাম না!
আমি সাংবাদিক না ৷ সাংবাদিকতার স ও জানিনা ৷ হয়তবা সঠিক সাংবাদিকতা বা প্রতিবেদনের সম্পর্কে আমার মুর্খতা প্রকাশ পাবে এই লেখাটির মাধ্যমে৷ তবে এতটুকু বলতে পারি যে ৩ -৪ দিন ধ্বংসস্তূপের ভিতর থেকে কোনমতে বেচে ফিরে আসার পর 'আপনার কেমন অনুভূতি হচ্ছে' প্রশ্নটি যত সুপরিচিত সাংবাদিকই করুক না ক্যান, আমার জবাব হত "যেই গর্ত দিয়ে আমাকে বের করেছে, সেটা দিয়ে আপনি ধ্বংসস্তূপের ভিতরে খাবার জল বাতাস ছাড়া, পচন ধরা
আজকে আমার একজন জার্মান বান্ধবী জুলি, যে স্থানীয় রাজনীতির অত্যন্ত প্রভাবশালী সদস্য হঠাৎ করেই সাভার ভবনধ্বস সম্পর্কে জানতে চাইল এবং কোন কোন জার্মান কোম্পানি এই কারখানা থেকে পোশাক কিনেছে তার একটা লিস্ট দেখালো। তারা ওই কোম্পানিগুলোর কাছে জানতে চেয়েছে, যে কারখানার মালিক তাদের শ্রমিক এবং ফ্যাক্টরির প্রতি এতটা দায়িত্বজ্ঞানহীন, তাদের কাছ থেকে কেন পোশাক কেনা হয় এবং অনুরোধ করেছে এমন মালিকের কাছ থেকে আর
প্রথম দুইটা দিন খুব স্বাভাবিক ছিলাম। বলতে গেলে একটু বেশিই স্বাভাবিক। এতো সব মন খারাপ করা খবরেও পেশাগত কাজে কোন বাধা পড়ে নাই। বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে কাজ কিছু করতে হইছে। স্বাভাবিকভাবেই । খুব একটা ঝামেলা হয় নাই। যা করার, যদ্দুর করার, যেইভাবে করার- করার চেষ্টা করেছি। গত কয়টা বছরে আমাকে এইরকমভাবেই ট্রেইন আপ করা হয়েছে। শারীরিক ভাবে, মানসিকভাবেও । একজন প্রফেশনাল হিসেবে এইসব ব্যপারে এখন আর কোন প্রতিক্রিয়া
ইংল্যান্ডের সাউথশিল্ড শহর থেকে আমার বন্ধুরা যখন কাজের সন্ধানে নিউক্যাসেলে চলে যায়, তখন আমি বেশ অসুবিধায় পড়ে যাই। সাউথশিল্ড ছোট শহর, চট করে ব্যাচেলারদের জন্য রুম ভাড়া পাওয়া যায় না। আমার আশ্রয় হয় এক বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্টের উপরে একটি ঘুপচি রুমে। এক পাশে রেষ্টুরেন্টের মালপত্র,অন্যপাশে তোষক পেতে আমি ঘুমাই। সেই রুমে কোন জানালা ছিলো না। ডিম লাইটের কোন ব্যাবস্থা নাই। রাতের বেলা আলো নিভিয়ে দিলে ঘুটঘুটে অন্
এ এক অসহনীয় অবস্থা! হাজার মেইল দূরে বসে কিছু করতেও পারছি না, সাভারের এক একটি ছবি দেখে, সংবাদ পড়ে সহ্য করতে পারছি না এত কষ্ট, আবার এইসব সংবাদ থেকে নিজেকে স্বার্থপরের মত দূরে সরিয়ে রাখতেও পারছি না। কেবল মনে হচ্ছে মস্তিষ্কে চিরকালের মত গভীর দাগ পড়ে যাচ্ছে, ঐ নূপুর পড়া পায়ের ছবি, ঐ মৃত যুগলের ছবি জীবনে আমি মাথা থেকে মুছতে পারব না। গোল্ডফিশের মত ২ সপ্তাহ বাদে রানা প্লাজার নাম ভুলে গেলেও বহু বছর বাদেও দুঃস্বপ্নে ওরা এসে ঠিক ঠিক হানা দিয়ে যাবে। হয়তো কিছুটা মনুষ্যত্ব এখনো ধরে রেখেছি বলেই এই ভোগান্তি। রাজনীতির নানারকম গদিতে বসে থাকা অবিশ্বাস্য রকমের পিশাচ হলে হয়ত এই যন্ত্রনা হতো না।
পুরাতন দুষ্টচক্র, নতুন দুর্ঘটনা। ধ্বসে গিয়েছে আরও একটি বহুতল ভবন, কেড়ে নিয়েছে শ’য়ে শ’য়ে তাজা প্রাণ। আবারও ক্ষমতাসীন দলের রাজনীতির ছত্রছায়ায় বেড়ে উঠেছে কিছু জানোয়ার, নিজের মুর্খামি আর লোভের জন্য মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছে অসহায় শ্রমিকদের। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সরকার এবং দলের ‘দোষ’ আড়াল করবার হাস্যকর চেষ্টায় যতখানি ব্যস্ত, উদ্ধারকাজে এবং দুর্গতদের চিকিৎসায় রাষ্ট্রযন্ত্রের ততখানিই অবহেলা। আব