সীমান্তরেখা-১
সীমান্তরেখা-২
তৃতীয় অধ্যয়
সবেদ আলির মনে বেশ ফুর্তি ফুর্তি ভাব। সেদিনের মেঘলায় পাঁচু মাঝি দুপুরে ঘুমের আলস্যে পরাজিত হয়ে বিছানায় এলিয়ে পড়লেও পরদিন রেহায় দেয়নি ব্লাক মার্কেটরা। শুধু ব্ল্যাক মার্কেটই বা কেন, মেঘের অবগুণ্ঠন সরানো সূর্যের সোনাঝরা রোদে ঝিলিক দিয়ে উঠেছিল সবেদ আলি-হাবুডাগাদের গোত্রীয় মাথামুটের অন্নাভাবে মলিন মুখগুলোও। সেই ঝিলিকের চিহ্ন এখনো লেগে আছে সবেদ আলির চেহারায়। কিন্তু বউটার মন খারাপ নাকি শরীর খারাপ সেটা ঠাহর করে ওঠা তার জন্য পর্বত-লঙ্ঘনের মতো দুরাতিক্রম্য চ্যালেঞ্জ। একবার ভাবে জিজ্ঞেস করবে, পরক্ষণে একপশলা অভিমান এসে ভর করে মনে। খুব যে নতুন তাও নয়, নয় নয় করে ছয় মাস পার হলো, এই বয়সী দম্পতিরা কত আমোদ-আহ্লাদ করে, কিন্তু হুরমতি সেসবের ধার ধারে না। অথচ মুখরা রমনী সে।
ব্লগে লেখালেখি করেন এমন এক ছোটবোনের সাথে গতকাল কথা হচ্ছিল, তিনি এখনকার খিচুড়ি মার্কা বাংলার প্রচার ও প্রসার নিয়ে উদ্বিগ্ন। চেষ্টা করছেন নিজে সম্পূর্ণ শুদ্ধ বাংলায় কথা বলা ও লেখা শুরু করবেন এবং ধীরে ধীরে অন্যদেরও উদ্বুদ্ধ করবেন। আমি উনার উদ্দেশ্যকে শ্রদ্ধা করি। দেশের বাইরে থাকার কারণে আমি নিজেও এই দোষে দোষী। তবে উনার চিন্তাটা আমার ভেতরে কিছু প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আপনাদের মতামত জানার জন্য ব্লগে
অপেক্ষা
-----------
জানালা দিয়ে যতটা দেখা যায় -
ড্রেসিং টেবিলের পাশে রাখা
একপাতা টিপের মতো
রাতের আকাশ জোড়া কিছু নক্ষত্র;
আর একটু দূরে তোমার জানালা আড়াল করে
মুঠি মুঠি শিমুল ফুল; তার ফাঁক গলে
জানালার পর্দায় নকশা করা প্রজাপতি -
অপেক্ষায় থাকি;
কখন দমকা হাওয়া এসে উড়িয়ে দেবে আড়াল, দেখা যাবে
তোমার কাঁধ বেয়ে কোমরে নামা
একটা পূর্নদৈঘ্যের রাত্রি;
আমি জানি, কাল সকালেই একটা মৃত বালক এসে
হামাক জিজ্ঞাসিবে, ভাই আমারে তাইগ্রিস নদীটা দেখিয়ে দাও
আমি তাকে একটা নীল রঙের ঘুড়ার ডিম উঁচু পাহাড় থেকে গড়িয়ে গড়িয়ে ফেটে যায়
তারপর হেঁটে যায় মানবিক সমাজে তার সিন ও সিনাওয়াত্রা দেখিয়ে বলব
আরও পিছনে হটো, ঘটে যাওয়া ঘটনার মতো
তুমি এক পালঙ শাক খেকো বালক তুমাকে মানায় না তাইগ্রিস নদীতে সাঁতার কাটা
তুমি বরঙ ঝিনাই নদীতে সাঁতার কাটো
অসভ্যতার সবগুলো সীমা অতিক্রম করে ফেলেছি আমরা।
নিম্নমানের এক ভিডিও'র ট্রেইলার (ধর্মান্ধরা একে মুভি বলে, আমার রুচিতে বাঁধে একে মুভি বলতে) নিয়ে আমাদের দেশের ধর্মান্ধরা যা করল, তাতে মনের মধ্যে দেশের ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তিত হয়েছিলাম।
ধর্মান্ধরা ইউটিউব বন্ধ করার জন্য আন্দোলন করল। ওরা সফলও হল। সরকার ইউটিউব বন্ধ করে দিল।
মনে পড়ল এডমুন্ড বার্কের উক্তি-
[justify]একদিন সকালে উঠে সবকিছু এলোমেলো হয়ে গেলো।
অবাক হতেও ভুলে গেলাম যখন দেখলাম এক যুবকের সামান্য একটা ফেসবুক পোস্টে ট্যাগড হওয়া নিয়ে রামুতে তুলকালাম হতে দেখলাম। আগুন লাগানো ঘরগুলোর ছবি দেখেও ঠিক বিশ্বাস হতে চাচ্ছিলো না। খুব মনে হচ্ছিলো কোথাও একটা ভুল হচ্ছে। এরকমতো হতেই পারে না। মানুষ এরকম বেকুবের মতো কাজ করে কিকরে? নিশ্চয়ই এটা ঝামেলা লাগানোর জন্য ছড়ানো খবর। পরে বুঝলাম বেকুব আসলে আমিই। দুপুর হতে হতে ফেসবুক, বিডিনিউজ২৪ এ ছেয়ে গেলো ছবিতে। পোড়ানো ঘরবাড়ির টিনের চালের ছবি, জ্বলজ্বলে গনগনে আগুনের ছবি, আয়েশে শুয়ে থাকা গৌতম বুদ্ধের শান্তি ভঙ্গের ছবি! আমার দাগী চোখ মানুষ খুঁজে বেড়াচ্ছিলো, পোড়া ঝলসানো লাশ হয়ে থাকা মানুষ, নির্জীব, অসহায়, দুই হাত তুলে আকাশের দিকে চেয়ে থাকা মানুষ! পেলাম না। কোনও মানুষের ছবি চোখে পড়লাম না। খুব আস্তে করে শব্দ নাকরে চেপে রাখা শ্বাস ছাড়লাম তখন। এখনও আশা আছে, ধর্মের নামে আমরা নরমাংস খেতে শুরু করিনি তাহলে এখনও, হালাল ভাবে জবাই করে ঘর পোড়ার আগুনে গ্রিল্ড নরমাংস এখনও তাহলে পাতে উঠেনি আমাদের!
নাম যেমন মানুষ কর্মসুত্রে পায় না, তেমন পায় না ধর্ম, দেশ, সংস্কৃতি, ভাষা। এর সবই আসে জন্মসুত্রে।
ড.ইউনূস অর্থনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট একজন মানুষ হলেও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাবার পর শান্তির একজন দূত হিসেবেই দেশ বিদেশের মানুষের কাছে পরিচিত পান। কিন্তু নিজের গ্রামীন ব্যাংক এবং হালের সামাজিক ব্যবসা ছাড়া তাকে বিশ্ব শান্তির কোন বিষয় নিয়েই সরব দেখা যায় না। বিশ্ব শান্তির কথা না হয় বাদই দিলাম দেশের শান্তি যখন বিনষ্ট তখন কেন তাকে সক্রিয় দেখা যায় না - বর্তমানে এ প্রশ্ন সবার।
সকাল।
- রাইত পোয়াইতে না পোয়াইতেই আইয়া পড়ছে ছাগলের চাক। যা, বাড়িত যা, যা কইতাছি
দুপুর।
- মাজ্ঞো মা মাজ্ঞো মা। পোলাপাইনডি কিতা গো? দুফর নাই আফর নাই, তোরার বাড়ি ঘর নাই? যা, বাড়িত যা, যা কইতাছি
সন্ধ্যা।
এই যে সকালবেলা আইয়ে হকুনের চাক, সইন্দা মইজ্যা গেলেও বাড়িত যাওনের নাম নাই। মাগো গো মা, এইডির মা বাবাও কি ডাক দোয়াই দেয় না। যা, বাড়িত যা, যা কইতাছি