সময়গুলো উড়ে যাচ্ছে। পেছনে ফেলে স্মৃতির পালক। বছরের শেষদিনে অস্তগামী সূর্যটার দিকে তাকাতেই মন কেমন যেন করে ওঠে! ওই সূর্যটার সাথে সাথে যেন বছরের সব হাসি-কান্না-আনন্দ-বেদনা ডুব দিচ্ছে। মনে হয়, হারিয়ে যাচ্ছে, ফুরিয়ে যাচ্ছে সব। এভাবেই তো যায়...। সুখ যায়...। দুঃখ যায়...। হারায় কতকিছু। আবার পাওয়া হয় নতুন কিছু। প্রাপ্তির কথা তেমনভাবে গেঁথে থাকে না মনে, যেমন ভাবে গেঁথে থাকে অপ্রাপ্তির বেদনা।
সঙ্গত কারণেই আমার মনে হয়, জগত সংসারের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দ্বিপদ প্রানীটির নাম “শাশুড়ী”! শব্দটির ভেতরেই বাই-ডিফল্ট গেঁথে আছে জন্ম জন্মান্তরের কলিজাকাঁপান ত্রাস! হাঁটুকাঁপান আতঙ্ক! দাঁতকপাটিলাগা বিভিষীকা! একটি নারী যখন শাশুড়ী হবার প্রমোশন পান - নিচুতা, শঠতা, স্বার্থপরতা, কুটিলতা, জটিলতা, ধূর্তামি, টাউটামি ইত্যাদি যাবতীয় কর্পোরেট বৈশিষ্ট্য তখন তার আগাপাশতলা দিয়ে তেড়েফুঁড়ে বেরিয়ে আসে!
এখনকার কাচ্চা বাচ্চাগুলি ঘুমায় কখন বুঝিনা। চব্বিশ ঘন্টা কার্টুন দেখার সুযোগ থাকলে আমি দিনে কয় ঘন্টা ঘুমিয়ে নষ্ট করতাম বলা মুশকিল!
গত পরশু থিসিস এর কাজে উইকিপিডিয়ায় ঢুকে একটু থমকে গেলাম। উইকিপিডিয়ার হেডারে কালো রঙের ব্যানারে বড় বড় করে লেখা "In less than 18 hours wikipedia will be blacked out globally in protest of SOPA and PIPA"
১. গোলামের রাজত্বঃ
আমি হতভাগা প্রজন্মের প্রতিনিধি। আমার জন্ম ১৯৮০-র দশকের শুরুতে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয়ে গেছে আমার জন্মের ১১ বছর আগেই। এমন তাৎপর্যবহ যুদ্ধ শত বছরেও একবার আসে না। সেই যুদ্ধ দেখতে না পাওয়ার চেয়েও দুর্ভাগ্য আমাদের প্রজন্মের। আমি ও আমার প্রজন্ম হতভাগা, কারণ আমাদের যুগে এসে যুদ্ধের শিক্ষা হারিয়ে গেছে বাংলাদেশ থেকে।
সেটা ‘আর্লি নাইন্টিজ’, কলকাতার ভিআইপি রোডের তখন কিশোর বয়স, আর বয়সোচিত মাখনের মত ত্বক। বরিশালে আমাদের দ্যাশের বাড়ি থেকে এক কাকা এলো বেড়াতে, বাবা তাকে স্কুটারে করে ওই রাস্তায় একপাক ঘুরিয়ে আনার পর মন্তব্য এসেছিল, “Zhaকুনি লাগে!”
কুলদা রায়
এমএমআর জালাল
নদী, আপন বেগে—বদলের সুর
কদিন আগে খেমোখাতায় সুরঞ্জনার লেখায় পড়লাম বর্তমান সময়ের একঘেয়েমির কথা, যাযাবর ব্যাকপ্যাকার তার সাথেই জানাল এখন মানুষ মূলত শেয়ার বাজার, সোনার দাম, রাজনীতি ছাড়া কথা বলা প্রায় ছেঁড়েই দিয়েছে ! কি সাংঘাতিক সব কথা বার্তা। এমনতর চলছে তো চলবেই! চলুক তবে, কিছু মানুষ, আমরা যারা মুক্ত বাতাসে জীবনের উদ্দামতায় ক্ষণিকের জন্যও স্বপ্নডানা মেলতে চায়, আমরাই চলি না বিরুদ্ধ স্রোতে।
(উৎসর্গ: জয়শ্রী সেন জয়া, আমার বৌদি।)
পথের দু’ধার ঘেষে শিমুল গাছের সারি। হালকা বাতাসে শিমুল তুলো উড়ে বেড়াচ্ছে এপাশ থেকে ওপাশ। যেন দোল খাচ্ছে। মেঠোপথে পড়ে থাকা তুলোগুলো পায়ের স্পর্শে সরে যাচ্ছে এধার ওধার। যেন পথ করে দিচ্ছে। পায়ে চলার পথ। শিমুল গাছের ছায়ায় অযত্নে বেড়ে ওঠা রক্ত জবার গাছগুলোতে প্রজাপতির মেলা। মনটা কেমন যেন হালকা হয়ে যায় অলোকের।
#
ভারী পা জোড়া বয়ে নিয়ে থেমে দাঁড়াই তিনতলা বাড়িটির সামনে। রাত জানান দিচ্ছে তার উপস্থিতি নির্জনতা নিয়ে। শহুরে ভবঘুরে কুকুরটি প্রতিদিনের মতো শুয়ে আছে গেট আগলে রেখে। একঘেয়ে চাকরি, একঘেয়ে দিনশেষে বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবি আজ হয়ত ব্যতিক্রম কিছু দেখব। হয়ত কুকুরটা থাকবে না, হয়ত ফাঁকা রাস্তা পেয়ে সাঁই করে চলে আসব নিমিষে, হয়ত শৈশবের গৃহত্যাগী জোছনায় ছাদে বসে আয়েশ করে সিগারেট খাব, কেউ চা বানিয়ে এনে দিবে। ঘামে সিক্ত হয়ে সিটি বাসের ভিড়ে চিড়ে চ্যাপ্টা হতে হতে একবার ভ্রম ভাঙ্গে, কুকুরটিকে দেখে দ্বিতীয়বার আর শরীরটা যখন বিছানায় ছেড়ে দেয় তখন ব্যতিক্রম কিছু ঘটার সম্ভাবনা ঘুমের ভেতরে চুপচাপ মরে যায়। আজ কুকুরটিকে এক-ই ভাবে শুয়ে থাকতে দেখে কিছুটা ক্ষোভের উদগীরণ হলেও পাশ কাটিয়ে ঢুকে যাই ভেতরে। ক্ষোভ কখনো আমাকে কাবু করতে পারে না বরং আমি চিরকাল ক্ষোভের শিকার হই, অব্যর্থ শিকার; এফোঁড়-ওফোঁড় করে যায়, রক্ত বের হয় না।