সুব্রত অগাস্টিন গোমেজ কবি। তিনি ফেসবুকে একটা স্টেটাস লিখেছেন। সেখানে লিখেছেন-
১) একদিকে শাহবাগ সহ সারাদেশে আমজনতা অহিংস আন্দোলন করছে।
২) আরেকদিকে ধর্মব্যবসায়ী খুনিরা নির্বিবাদে খুন-জখম ক'রে যাচ্ছে।
৩) সরকার চুপচাপ ঘোলা পানিতে মাছ ধরছে।
এই তিন লাইনের মধ্যে কোনো কবিতা নেই। নিরীহভাবে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অবস্থার একটা বিশ্লেষণ দিচ্ছেন।
…
(১)
০৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৩, বিকেলের দিকে মোবাইলটা বেজে উঠতেই মনিটরে ভেসে উঠলো একটা সহজ-সরল যুবকের মুখ, থাবা বাবা। বেশ আগে কোন একদিন আড্ডা দিতে দিতে ছবিটা তুলে নম্বরের সাথে যুক্ত করে রেখেছিলাম।
দাদা আপনি কোথায়, অফিসে ?
হাঁ, অফিসেই।
সন্ধ্যায় আসবো দাদা ? গত দু’দিন শাহবাগে ছিলাম। হঠাৎ শরীরটা ভালো না থাকায় চলে এসেছি বাসায়। কিন্তু ভালো লাগছে না। ভাবছি আপনার সাথে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে আসবো। মনে হচ্ছে কতোদিন দেখি না আপনাকে !
অথচ মাত্র এক সপ্তাহ আগেই আমার ঘরেই কয়েক ঘণ্টা কাটিয়ে গেছে সে।
২০০৬ বাংলা ব্লগ যখন সবে চালু হতে শুরু করেছে তখন ব্লগস্পট ছাড়া বড় কোনো ব্লগিং প্লাটফরম ছিলো না। ওয়ার্ডপ্রেসও জমজমাট হতে শুরু করেছে। সোশ্যাল ওয়েবসাইট হিসেবে অর্কুট আর মাইস্পেস পড়তির দিকে। ফেইসবুক বড় হওয়া শুরু করেছ। বাংলা ব্লগ চালু হবার আগে অল্প কিছু ব্লগার ব্লগস্পটে ব্লগিং করতেন ইংরেজীতে।
রাজীব হায়দার এর খুন হবার খবর জানার পর থেকেই গা কাঁপছে: আবার কি ১৪ই ডিসেম্বর শুরু হতে যাচ্ছে? কিন্তু একটু চিন্তার পর মাথা একটু ঠান্ডা হয়েছে: আর একটা গণহারে বুদ্ধিজীবী হত্যার চেষ্টা ঠিক এখনই মনে হয় না করবে জামাত, এই চেষ্টাটা করা হবে শেষ আঘাত হিসেবে: ঠিক ৭১ এর মতই, হারাটা সুনিশ্চিত হবার পর। "হারা" মানে এ ক্ষেত্রে ধরে নিচ্ছি "নিষিদ্ধ হওয়া" (অথবা সাঈদীর ফাসী?)।
আমার বাবার নাম মো. আনোয়ার হোসেন। তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। প্রজন্ম চত্বরে ঘটে যাওয়া গণজাগরণের আগেই স্থীর হয়েছিল, বাবা ১২ই ফেব্রুয়ারী তারিখে পাবনা যাবেন সেখানে বই মেলা উদ্বোধন করতে। কিন্তু এরই মধ্যে শাহবাগ চত্বরে আমাদের নতুন প্রজন্মের নেতৃত্বে শুরু হয়ে যায় বাংলাদেশের "দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ"। আপনারা হয়ত জানেন আমার বাবার তীব্র মৌলবাদ ও শিবির-বিরোধী অবস্থানের কথা। বাবার এই অবস্থান বহু বছরের পুরনো। গণজাগরণ থেকে সৃষ্ট পরিস্থিতি থেকেই বাবা সিদ্ধান্ত নেন যে তিনি পাবনার সরকারী এডওয়ার্ড কলেজে যাবেন এবং কলেজটিকে শিবিরমুক্ত ঘোষণা করবেন। এডওয়ার্ড কলেজ শিবিরের একটি শক্ত ঘাঁটি। আপনারা নিশ্চই জানেন পাবনা যুদ্ধাপরাধী-রাজাকার মতিউর রহমান নিজামীর নির্বাচনী এলাকা যেখানে সে ২০০৮ সালের নির্বাচনে পরাজিত হয়। কুখ্যাত রাজাকার মাওলানা সোবহানেরও বাড়ি এই এলাকাতেই। নির্বাচনে পরাজিত হলেও শিবিরের আধিপত্য পাবনায় কমেনি। এডওয়ার্ড কলেজকে 'শিবিরমুক্ত' ঘোষণা করলে পাবনার মানুষের মাঝে আরো সাহস সঞ্চারিত হবে, এমনটাই বাবা ভেবেছিলেন। আপনারা জেনে খুশি হবেন,বাবা তাই করতে পেরেছিলেন এডওয়ার্ড কলেজে ফেব্রুয়ারী ১২ তারিখ দুপুরে। সেদিন আমিও বাবার সাথে ছিলাম। সন্ধ্যায় পাবনার গণজাগরণ মঞ্চে দাঁড়িয়ে বাবা পাবনাবাসীর উদ্দেশ্যে জামায়াত-শিবির-যুদ্ধাপরাধী-বিরোধী অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য প্রদান করেন। তার পরপরই আমরা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্দেশে রওনা হই। তখনই ফোনে খবর আসে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাওলানা ভাসানী হলের ছাত্র আব্দুল মালেকের হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অকাল মৃত্যুর দুঃসংবাদ।
[justify]হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান, ইহুদি, জৈন, শিখ, চাকমা, মারমা, গারো, লুসাই, খাসিয়া, মুরং, বম... ‘নাস্তিক’!! -- এদের দেখামাত্র শারীরিক আক্রমণ না করে-ও কেবলমাত্র মনে মনে ধ্বংস কামনা করা যদি ইসলামের মূলমন্ত্র হয়ে থাকে তবে সেই ইসলাম ছেলেবেলায় আমাদের শেখানো হয়নি, আপনি শিখেছেন নীরব পাঠক?
কেবল সহজ বাংলায় বলে রাখি, আপনারা যারা আজকে জামায়াত শিবিরের রক্ষিতার ভূমিকায় নেমেছেন, এদের নৃশংসতা যারা দেখেও দেখছেন না, যারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকের জায়গাতে বসেও নির্বুদ্ধিতার অসহ্য নাটক দেখাচ্ছেন, জামায়াত শিবিরের সঙ্গে তাদেরকেও আমরা ছেড়ে দেবনা।
কসাই কাদেরের ফাঁসির দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলো থাবা বাবা। তার সঙ্গে ছিলো আরো ব্লগার, ছাত্র, দেশের মানুষ। ফাঁসি ফাঁসি করে ১১টা দিন সবাই গলা ফাটিয়েছে। ধৈর্য দেখিয়েছে। যেদিনই আন্দোলনে ধীরে চলার ঘোষণা এলো লাশ হলো থাবা বাবা। কোথায় কোথায়? মিরপুরের কসাই কাদের মোল্লার মিরপুরেই।
জামাতের কোন পদক্ষেপই ভুল বা হঠকারী সিদ্ধান্ত না, এটা জেনে রাখুন। আজকে ব্লগার থাবা বাবার হত্যাকান্ড একটি সুপরিকল্পিত পদক্ষেপ। আর এর পেছনে কাজ করেছে জামাতের দুর্দান্ত কিছু স্ট্র্যাটেজি।
একটা জিনিস চিন্তা করুন, একটি স্বাধীন গণতান্ত্রিক দেশে একজন মানুষের মতামতের জন্য তাকে হত্যা করা আপনি কি সমর্থন করেন? যদি কোন কারণে সমর্থন করেন তাহলে এই লেখাটা আর পড়ার দরকার নেই। আর যারা সমর্থন করেন না তারা পড়ুন।