শেলফের একটা বড় অংশ জুড়ে আধিপত্য বিরাজ করে আছে ধর্ম শিক্ষা, ইসলামের ঐতিহ্য, ইসলামি মুল্যবোধ, দীনের আলো মার্কা বিভিন্ন বই । টিউবলাইটের এই মৃদু আলোতেও তাদের সোনালী / রুপালী রং এর জলে খোদাই করা আরবী অক্ষরগুলো যেন দম্ভ সহকারে নিজেদের অবস্থান জানান দিচ্ছে। । এদের উপরেই ভাতৃত্ব্যসুলভ সৌহার্দে অবস্থান করছে হুমায়ুন আহমেদ, ইমদাদুল আর আনিসুলেরা । শেলফের একেবারে নিচের তাকে, টিভি স্ট্যান্ডের আড়ালে প্রায় ঢাকা পড়ে যাওয়া অংশ থেকে ধুলো বালি আর অযত্নের অত্যাচার সয়ে লাজুক ভাবে উকি দিচ্ছে হুমায়ুন আজাদ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস আর গোটাকতক কবিতার বই । এই রাম রাজত্বে এরা যেন অনাকাংক্ষিত অসুর । লুকিয়ে থাকতে হয় অন্ধকারে ।
১.
ছোটবেলা থেকেই আমার বৃষ্টি খুব প্রিয়। কিন্তু আজকের বৃষ্টিটা খুব বিরক্ত লাগছে। ভাসির্টি থেকে বাড়ি ফিরছি। মুষলধারে বৃষ্টি পড়ছে। ভাসির্টি যাওয়ার সময়ও রোদ ছিল অথচ এখন এই বৃষ্টি। ছাতাও নিয়ে আসিনি। বৃষ্টি থামা পযর্ন্ত অপেক্ষাও করতে পারছি না, বাসায় ফিরতেই হবে। বাসায় সময়মত না গেলে আমার খবর আছে। কারণ আজকে আমাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। এই নিয়ে সপ্তম পাত্রপক্ষ। কোনো পাত্রকেই আমার মায়ের পছন্দ হয় না। আমি বুড়ি না হওয়া পযর্ন্ত মনে হয় কোনো পাত্র পছন্দ হবেও না।
পুরানো ক্যালেন্ডারের নীল রঙের তারিখগুলোতে লুকানো অশ্রু আর লালরঙের তারিখগুলোতে লুকানো রাগ, সব রয়ে গেছে ঐসব দিনগুলোর খাঁজে-খাঁজে ভাঁজে-ভাঁজে। নিষ্ফল অশ্রুর বৃষ্টি যা শুধু নিজের ভিতরটাকেই ভিজিয়েছে আর নিষ্ফল ক্রোধের আগুন যা শুধু নিজের হৃদয়কেই পুড়িয়ে পুড়িয়ে মরে গেছে। আজ পিছনে ফিরে দেখি সব ঐসব দিনের মধ্যেই রয়ে গেছে, নিজের সঙ্গে কিছুই নিয়ে আসিনি। কিংবা হয়তো এনেছি, হয়তো স্মৃতির পাথরে ভাস্কর্য করে গেছে ওরা
- আপনের ঘটনা কি? গদ্য না পদ্য?
কাদের তার পাশে বসা বাবরী চুলের দুখী দুখী চেহারার লোকটিকে জিজ্ঞেস করলো।
- পদ্য
- এহহে , তাইলে গেঞ্জাম বেশি। গদ্য হইলে আমি ওসি সাবরে বলে অল্পের উপর ঝামেলা শেষ করতে পারতাম। পদ্যের উপর মনে করেন রাগটা বেশি। পদ্য একটু হিন্দুয়ানী ব্যাপার না। বুঝেনই তো।
বাবরী চুল কিছুক্ষণ চুপ থেকে কাদেরকে জিজ্ঞেস করে,
- আপনার কি গদ্য?
(এক ধরনের ছোটো গল্প আছে যেগুলো বুক পকেটে দু টাকার নোটের সাথে ভাঁজ করে রেখে দেয়া যায় সাবলীল, হুট করে সকাল বা বিকেলের এক কাপ চা এর সাথেই পড়ে ফ্যালা যায় অল্প সময়েই। এই গল্পগুলোকে আমি বলি 'পকেট গল্প' এটা সেরকম ই এক পকেট গল্প )
[justify]
তেতলার চিলেকোঠা বরাবর জানালা, মুখোমুখি ছাদ।
ছাদের এক কোনে ভাঙা বালতিতে গজানো আমের চারাগাছ, জোরালো সবুজ পাতা।
গোড়ায় দু-চারটে ঘাস, রোদে পোড়া, লালচে। একটা নোংরা টিস্যুপেপার, বাতাসে উড়ে এসেছে হয়তো।
নিরিবিলি চিলেকোঠাটা আসলে রিডিংরুম।
ছেলেটার সামনে ফাইনাল, তাই রাতজাগা।
আবার সাতসকালে ওঠা।
গীতবিতান, পাড়ার গানের ইশকুল।
বাবার শখে মেয়ের শেখা, ছোটবেলা থেকেই।
চারদিকে উঁচু পাহাড়। মাঝে উপত্যকা। একটু উচুতে একটা হেলিপ্যাড। এখানে ওখানে মিলিটারির টলদারি। জলপাইরঙা সেনা ট্রাক। অনেকটা কম্পিউটার গেমস আই জি আই এর মত মনে হচ্ছে না সেটিংটা? হ্যা, ‘অনেকটা’ই লিখলাম। সেনা আছে, টহলদারিও আছে। কিন্তু সাইরেন নেই। লুকোনো শত্রুপক্ষ নেই। রক্ত নেই। ঠাঁ ঠাঁ বন্দুকবাজি নেই। তাহলে?
ব্রজেন্দ্রনাথ মল্লিক
কুড়িয়ানায় পাকবাহিনীর আক্রমণের প্রস্তুতি