- একদিন সকালবেলা পরাশর ডাক্তার নিজের প্রকাণ্ড লাইব্রেরিতে বসে চিঠি লিখছিলেন। চোরের মতো নিঃশব্দে ঘরে ঢুকে নগেন ধীরে ধীরে
- ধীরে ধীরে
- জ্বী, ধীরে ধীরে
- না না মানে একটু ধীরে ধীরে পড়ুন। কি নাম নাম বললেন ডাক্তারের?
- জ্বী, পরাশর ডাক্তার
- আর রোগী?
- নগেন
- বদলে ইসমাইল ডাক্তার আর মাহমুদ রোগী করে দিন
- জ্বী আচ্ছা, কিন্তু কেন?
- লেখা ছাপতে চান?
- চাইতো।
দূর শৈশবে ক্যালিডোস্কোপ ঘুরিয়ে নক্সা দেখতে দেখতে ঘোর লেগে যেত। আজ এই বেলা-ঢলে আসা প্রহরে জীবন-ক্যালিডোস্কোপ নিয়েও আমার এক-ই দশা, ঘোর লেগে আসে। একসঙ্গে ঝাঁক ঝাঁক স্মৃতি এসে ঘুরে যায় কাঁচকি মাছের ঝাঁক-এর মত। মনোযোগ দিয়ে দেখতে গেলে পলক ফেলার আগেই সব শুনশান, কেউ নেই। তখন আবার চুপটি করে বসে থাকা গহীন দিঘীর পারে। খুব সাবধানে। ঘোর লেগে জলে পড়ে গেলে, সাঁতার জানি না আমি, তলিয়ে যাব। আর না, সাবধানে পা টিপে টিপে জলের ধার থেকে সরে আসি। কিন্তু টের পাই, জল ও আসছে। বুকে হেঁটে, সাপের মতো। দৃষ্টিসীমার ঠিক বাইরে বাইরে। আসুক, পালিয়ে লাভ নেই। আমি মন সরিয়ে নিই।
মুছে ফেলা
----------
সমস্ত রাত জুতোর ফিতেয় বাঁধা নির্জন
বারান্দাটা আজীবন কুড়োয় অন্ধের পান্থপথ,
আমার হাড়ের ছাড়পত্র জানে
যে চোখে পাথর চোখ নামিয়ে হয় নারী,
নিরবতার দুরত্ব কমিয়ে তুমিই আমার
মুছে ফেলা কল্পনার বংশধর
বানকুড়ালি পুতুল।
স্বপ্নের শেষটুকু নিভে গেলে পরিত্রাণহীন
একটি শরীর ঠিক পাহাড়ের মাঝখানে
নেমে নেমে এখন হাওয়ার পুকুর।
মহাপুরুষ
-----------
[justify]মজিদ ঠিক বুঝে উঠতে পারেনা উহু্ শব্দটা সে কি দুঃস্বপ্নের ঘোরে নিজে করেছে? স্বপ্নের অংশ ছিলো? নাকি তার পাশে শুয়ে থাকা বউটি করলো। কিন্তু হঠাৎ এই ঘুম ভেঙে যাওয়ায় সে মনে মনে খুব বিরক্ত হয়। পৌষের হাড়কাপানো ঠাণ্ডায় আধো ছেঁড়া কাঁথার ভেতর থেকে মাথা বের করে শব্দের উৎস খোঁজারও প্রয়োজন বোধ করলোনা সে। পেপার মোড়ানোর পরও বেড়ার ফাঁক চিরে ঠিকই বাতাস ঢুকছে মজিদের বস্তির ঘরটিতে। এ যেন এক হিমঘর!
কর্মময় জীবন আর ভালো লাগিতেছে না। আসলে যে কাজ করিয়া জীবিকা নির্বাহ করিতেছি সেই কাজের প্রতি এক প্রকার অনীহা তৈরী হইয়াছে। 'কাজ' আমাকে পছন্দ করিতেছে না আমি 'কাজ'কে পছন্দ করিতেছি না। আমাদের অবনিবনার ফসল একরকমের বিবমিষা।
সেইবার শরৎকালে অসংখ্য নীলপদ্ম ফুটেছিল দহে। পদ্মের সবুজ পাতাগুলো গোল গোল রুমালের মতন বিছিয়ে ছিল দহের জলতলের উপরে মিশে, সূর্যের নরম আলো খেলা করছিল পদ্মের পাপড়িতে, পাতায়, রেণুতে। অসংখ্য মৌমাছি ও ভোমরা ব্যস্ত ছিল ফুলে ফুলে। মাঝে মাঝে কোথা থেকে অশান্ত হাওয়া ছুটে আসতো, পদ্মের পাতাগুলো উলটে উলটে যেত, সঞ্চিতার মনে হতো ওরা হাত নেড়ে নেড়ে ওকে বলছে, যেও না যেও না, যেও না।
রূপকথার নক্ষত্রের আলো পড়েছে
১।
মনসুর সাহেবের সাথে আমার পরিচয় পর্বটা ছিল বেশ অদ্ভুত।সে প্রায় বছর পনের আগের কথা।মাস্টার্স শেষ করে বেসরকারি একটা কোম্পানিতে ঢুকেছি।মোটা অংকের বেতন পাচ্ছি।মেস ছেড়ে কলাবাগানে ছিমছাম একটা দুইরুমের ফ্ল্যাট নিয়ে উঠে পড়লাম।শুধু সংসারটাই যা শুরু করা বাকি।
রাত ২ টা ৩৭ মিনিট। ঠাহর করতে পারছি না এখন ঠিক কোন জায়গায় আছি। বাস চলছে বাতাসের চেয়েও দ্রুত গতিতে। বাসের সবাই মোটামুটি গভীর ঘুমে নিমজ্জিত। আমার পাশের সিটে বসা সহযোদ্ধা বেশ আরাম করেই ঘুমাচ্ছে বলে মনে হচ্ছে। পিচের উপর দিয়ে বাসের দ্রুত ঘুর্নায়মান চাকার দ্বারা সৃষ্ট শব্দের কারনে হয়তো তার নাক ডাকার শব্দটা আমার কানে আসছে না।