১৯৯৬ সালের ৬ ফেব্রুয়ারীর রাত। তুর্কি বিমান সংস্থা বার্গেন এয়ারের অত্যাধুনিক বোয়িং ৭৫৭ সিরিজের যাত্রীবাহী বিমানটি (ফ্লাইট ৩০১) ডোমিনিকান রিপাবলিকের রাজধানী পুয়ের্তো প্লাটো থেকে জার্মানীর ফ্রাঙ্কফুর্টের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছিল। যাত্রীদের প্রায় সবাই জার্মান পর্যটক যারা ক্যারিবীয় দ্বীপ-দেশটিতে ছুটি কাটাতে এসেছিলেন।
আমার অস্থি যে তোমার, প্রিয়তমা,
মহিষী আমার; তোমার মাথায় দখিনা বনের পাতা,
সুগন্ধী ঘাস-মুকুট পরাই; মাটির বোনা দোপাটি ফুল,
সবুজ সম্মান, তোমারই প্রাপ্য।
তোমাকে যে ভালবাসে, সে পুরুষের মত, তুমিও এসেছ
বনভূমি-আপরিসর থেকে। যে মাটি এনেছি আমরা দুজন,
তার ঘ্রাণ আমাদের রক্তে। আমরা দুটি লোকজ মানুষ
নগরে পথ হাঁটি বিভ্রান্ত ধাঁধায়, পৌঁছনোর আগেই বন্ধ না হয় যেন হাট।
[justify]প্লেনের ছোট্ট জানালা গলে আসা রোদের ছটায় ঘুম ভেঙ্গে গেছে কিছুক্ষণ আগেই।এয়ারক্রুরা ট্রলিতে খাবার নিয়ে সকালের ব্রেকফাস্ট দিতে শুরু করে দিয়েছে ততক্ষণে।এলোমেলো ভাবে ঘুমানোতে ঘাড়, হাত পা কেমন যেন ধরে এসেছে, ঘুম ভেঙ্গে ভিভিয়ানের কথা মনে হতেই মন খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা এখন নিশ্চয় ফ্রাঙ্কফুর্টের ফ্লাইটে, একা একা না জানি কি করছে। যাচ্ছি আবুধাবি থেকে জার্মানির ডাশেলডর্ফ। এত লম্বা প্লেন জার্নি এর আগে করেছি বলে মনে পড়েনা, সব মিলিয়ে সাড়ে একত্রিশ ঘণ্টা। সস্তায় টিকেট কাটতে গিয়ে, সিঙ্গাপুর থেকে আবুধাবি আর ডাশেলডোর্ফ হয়ে নিউ ইউর্ক যেতে হচ্ছে। সীমার জন্য এই প্রথম এত বড় জার্নি, এশিয়া থেকে ইউরোপের উপর দিয়ে আমেরিকা মহাদেশের দিকে যাওয়া। একটু টেনশন লাগছিল টিকেট কেটে ফেলার পর, তবে ওর স্ট্যামিনা বেশ ভালো, সমস্যা হবে না বলেই ধরে নিয়েছিলাম।
আমার কফির পেয়ালা উল্টে নষ্ট হল খবর, আজকের খবর।
ইবলিশের জিহবার মতন কালো কফি
হামাগুড়ি দিয়ে ভিজিয়ে দিল শুষ্ক, জরাজীর্ণ অক্ষরগুলি
কালির মেদবহুল হেডলাইন।
আমি তোমাকে সত্যিকারের অসহায় মানুষের উদাহরণ দেই -
সেই মানুষটি - ডুবন্ত লঞ্চের কোণায় দাঁড়িয়ে থাকা একজন ঋত্বিক
যার দৃষ্টির সামনে শ্রাবণ মাসের সন্দিগ্ধ আকাশ, আকাশের নিচে আজ্রাইলের চোখ ঘূর্ণায়মান উদ্দাম ঢেউ
দেখতে দেখতে লোকজনে ঘর ভরে উঠতে লাগলো, গোল করে পাকানো ডায়াগ্রামের তাড়া নিয়ে সেমিনার দিতে আসা ছাত্রছাত্রীরা, সঙ্গে তাদের গাইড শিক্ষকরা বা শিক্ষিকারা, তাছাড়া এমনি দর্শক, শ্রোতা, ছাত্রছাত্রীরাও আসছে। জাজেরাও শোনা গেল এসে গিয়েছেন, তবে তাঁরা তখন অন্য ঘরে বিশ্রাম করছেন আর টিফিন খাচ্ছেন।
অন্বেষার মুখ আরো খানিক ভয়-ভয় হয়ে গিয়েছে, আমি কিছু জোকস বলে খানিকটা হাসি হাসি করে দিলাম ওকে।
অনেকদিন বনে বাদাড়ে ঘুরাঘুরি হয়না। আমেরিকা এসেছি দুই বছর হয়। তার মধ্যে একবছর হয় রকি মাউন্টেনের দেশ কলোরাডোতে। লোকজন কেন যে পাহাড়ে ওঠে সেটা এখানে এসে কিছুটা হলেও বুঝতে পারছি। পাহাড়ের আছে চুম্বকের মতো আকর্কষণ যা যে কাউকেই টানবে। এই টান পাহাড়ের যত কাছে যাওয়া যায় ততই বাড়ে। কিন্তু পাহাড়ের চেয়ে বড় টান হল জীবিকার টান। আর সেই টানের কারণেই আজ অব্দি তেমন কোথাও যাওয়া হয়নি। যাওয়ার মধ্যে ডেনভার চিড়িয়াখানায় আর বার দুয়েক রকি মাউন্টেন ন্যাশনাল পার্কে।
আমি এখন বড় হয়েছি, বেড়ে উঠেছি,
জ্ঞান বুদ্ধি পাকা হয়েছে, এইতো বেশ করে খাচ্ছি,
আমি এখন অনেক কিছু বুঝতে পারি, মা।
জানো? আমি অনেক অনেক বই পড়েছি, গান শুনেছি।
তোমার কথা এখন আমার খুব বেশি আর মনে পড়ে না।
আমার এখন অনেক কিছু করার আছে, বুঝবে না মা।
অনেক কিছু বুঝছি বলেই, জানছি বলেই,
বিশ্ব এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে, তাঁদের কথা ভাবতে হবে।
তুমি এসব বুঝবে না, মা।
-এইডা কেমায় সম্ভব, আমার মাথায় খ্যালে না, বাবা!
বৃদ্ধ মাথা নাড়াতে থাকে, ক্রম-পুঞ্জিভূত বিস্ময়ের ভার সইতে না পেরে কেমন বিহ্বল দেখায় তাকে! আশ্চর্য, এই বয়সেও শিশুর মত করে বিস্মিত হতে পারে সে!
পাশেই বসা কুড়িতে পড়া ছেলের বউ এদিকে হাসতে হাসতে শ্যাষ! কত ঢং যে জানে বুইড়া তার বুইড়া হয়ুরে!
কাজের মহিলাটা সবসময় দেরী করে আসে। ফিরোজা বেগম ভাবল আজ কাজের মহিলাটা আসলে আচ্ছা করে ধমক লাগাতে হবে। কিছু না বলতে বলতে অনেক লাই পেয়ে গেছে। ফিরোজা বেগম যখন একথা ভাবছিলেন তখনি কলিং বেলের শব্দ হল। দরজা খুলে দেখলেন কাজের মহিলা হাস্না তার চার বছর বয়সী ছোট মেয়েকে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হাস্নাকে বাইরে দাড় করিয়ে রেখেই ফিরোজা বেগম বলতে লাগলেন, ‘তোমার কি আক্কেল বলতো?
[justify]
আরাফ ছেলেটা ছোট-ই, বয়স এগার।
ও অবশ্য একটু কায়দা করে বলে-- সাড়ে এগার।
কিংবা কেউ বয়স জানতে চাইলে বাবার মতো গটমটে গলার স্বর বানানোর চেষ্টা করে বলে-- আম ইলেভেন প্লাস নাও।