মোবাইলটা তখনও হাতে ধরাই থাকে। শুধু মনে হয়, আমার জগৎ সংসার চেনা পৃথিবী সব উল্টে গেছে। আমি শেষ হয়ে গেছি! আমার আর কিছু নাই! ভেতরের এমন হু হু করা শূন্যতা আমাকে জড়িয়ে ধরে, ভরহীনতায় টলে উঠি। তারপরও, কী এক জেদে সঙ্গাহীন হই না বা আছড়ে পড়ে যাই না। নিজের চোখের তারায় একটি মুখ জ্বলজল করে। আমি প্রবল ভাবে সে মুখকে নিজের অনুভুতিতে আনতে চাই।
মানুষের নানারকম বাতিক থাকে, আমার যেমন আছে চট করে কিছু একটা কেনার অভ্যাস। আমি ধৈর্য ধরে, যাচাই-বাছাই করে কোন কিছু কিনতে পারি না। এজন্য দেখা যায় আমি হয়ত একটা জিনিস দাম দিয়ে কিনলাম, আশেপাশের কেউ একজন সেই জিনিসটাই আস্তে-ধীরে, অপেক্ষা করে অর্ধেক দাম দিয়ে কিনে ফেলবে। তবে কিছু জিনিস আছে যেগুলো চট করে কিনতে চাইলেও অনেক সময় হয়ে উঠে না, বিশেষ করে পুরানো বই-পত্রিকা, গানের রেকর্ড ইত্যাদি।
টুকটুক করে লাগেজ গুছাই। নাহ, উইন্টার ব্রেক না, স্টেট বদলাচ্ছি। পড়াশোনার পাট চুকলো, এবার ডর্ম থেকে তো খেদিয়ে দেবেই।
দু'বছর আগে এরকম একটা সময়ে লাগেজ গুছিয়েছিলাম দেশ ছাড়ব বলে। ২৬ বছরের একটা জীবনকে দুটো স্যুটকেসে তুলে আনার গল্পটা খুব সহজ ছিলো না। দিশেহারার মতো বারবার তাকাচ্ছিলাম বুকশেলফগুলোর দিকে। এদের ছেড়ে থাকবো কী করে? কতো অসংখ্য প্রিয় বই, গান্ধর্বী কী আবোল তাবোল...বেছে নেবো কাকে, সঙ্গী করে? শেষমেশ নেওয়া হয়নি কাউকেই, ওজনবাহুল্যের গেরোয় পড়ে।
ভেবেছিলাম, থাকগে। মানুষ ছেড়ে যেতে পারছি, জড়বস্তুতে আর কী এসে যায়!