বউ কি সেবা যত্ন করে?
আমার এক আত্মীয়া বিয়ের পরপরই ফোন দিয়ে আমাকে উৎকণ্ঠিত স্বরে জিজ্ঞেস করলেন, বউ কি সেবা যত্ন করে? আমি কাঁচুমাচু গলায় বললাম, বউ কি সেবা যত্ন করার জন্য? তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে বললেন, নয়তো কি? আমার কত বয়স হয়েছে কিন্তু এখনও তোমার চাচাজিরে রান্না করে খাওয়াই প্রতিদিন। বউকে লাই দিবা তো বউ মাথায় উঠবে। তখন বাকি জীবন তোমার সেবা করে যেতে হবে। বিষয়টা নিয়ে ঠিকমতো চিন্তাভাবনা করার আগেই মনে হয় আমার বউ লাই পেয়ে মাথায় উঠে গেল। তাই একদিন সে চা বানালে পরদিন আমাকে বানাতে হয়। একদিন সে আমার সেবা করলে, আরেকদিন আমাকে তার সেবা করতে হয়। সে রান্না করলে, আমার বাসন কোসন ধোয়া থেকে থেকে শুরু করে কাটাকুটির সব কাজ করে স্যু শেফের দায়িত্ব পালন করতে হয়। সে মেইন কোর্স বানালে, ডেসার্টটা আমাকে বানাতে হয়। সে ঘর ঝাড়ু দিলে, আমাকে ঘর মুছতে হয়। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে উল্টাটা সত্যি হয় না। আমি রান্না করলে সে বাসন কোসন ধোয় না। আমি ঘর ঝাড়ু দিলে সে সোফায় শুয়ে ঠ্যাঙ নাচায়। আমি চা বানিয়ে এনে দিলে চোখ সরু করে বলে, চা দিলা বিস্কুট দিলানা এইডা কেমন ভদ্রতা? সে যাই হোক। কালে কালে বুঝতে পারলাম আত্মীয়ার কথামত প্রথম রাতে বিড়াল মারতে ব্যর্থ হবার কারণেই আমার এই করুণ পরিণতি।
১.
আমার মেয়েটা ফ্রকের ফিতে বাঁধতে পারে না, নিজে জামা পড়তেও পারে না। জামা পাল্টাবার সময় হলেই চিৎকার করে, ‘মা, জামা পাল্টে দাও।’ আমি ওকে বকতে বকতে বলি, ‘এত্ত বড় মেয়ে কিছুই পারে না! খালি এই করে দাও, ওই করে দাও।’ মেয়েও পাল্টা রাগ করে গলা উঁচু করে প্রতিউত্তর দেয়,‘ নিজেই বলে আমি বড় হই না, আবার নিজেই বলে আমি বড় হয়ে গেছি!’
অক্ষমের অপারগতার স্বীকারোক্তি:
এই লেখাটা ঠিক নারী সপ্তাহ কে উদ্দেশ করেই নয়। সচলে বাল্যবিবাহঃ বাবামায়েরা কি জানেন তারা কী করছেন? লেখাটি পড়ে মনে এলো, এই ধরণের ঘটনা যে সকল কিশোরীর জীবনে ঘটেছে অথচ যারা লিখতে-পড়তে জানেনা, এরকম কত-শত কিশোরী/বালিকার মনঃপীড়ার কথা আমরা কোনদিনই জানবোনা।
আমার দেখা/জানা এমনই এক কিশোরীর জীবনের কিছু কথা:
প্রচন্ড গরম। হাতে নোটখাতা, প্রশ্নতালিকা অনবরত হাতড়াচ্ছি। সামনে উতসুক চেহারা নিয়ে বসে আট-দশজন মহিলা। অভিভাবকের ভঙ্গি নিয়ে বসে আছেন একজন পুরুষ, মহিলাদের কারো স্বামী হবেন। ইন্টার্ভিউ যদিও শুধুমাত্র মহিলাদেরই নেবার কথা ছিল, বেশিরভাগ উত্তর দেবার দায় স্বপ্রণোদিত হয়ে তিনিই নিচ্ছিলেন।
প্রথম ঘটনাটা বেশ কয়েক বছর আগের। ২০০৮/৯ এর দিকে হবে। বাসে করে ক্লাসে যাচ্ছিলাম সকাল সকাল। পুরো বাস অফিসগামী মানুষ আর ক্লাসগামী ছাত্র দিয়ে বোঝাই। কোনমতে সামনের দিকে একটু জায়গা করে দাঁড়িয়ে খেয়াল করলাম মহিলা সিটে দুইজন ছেলে বসা। বাসে কোন মহিলা দাঁড়িয়ে নেই দেখে ভাবলাম থাকুক বসে। কেউ উঠলে নিশ্চয়ই সিট ছেড়ে দিবে।
ভুল ছিলাম আসলে।
ইচ্ছে করে ইজেল দাঁড় করাই একটা। তারপর তাতে তুলির কোমলতা আর ব্রাশের বলিষ্ঠ টানে - না, না, পিকাসো কি মাতিসে নয়, আমি, একান্তই আমার নিজস্ব এমন একটা ছবি উপহার দিই তোমাকে যে, বুঝতেই পারছো!
ছোট্ট একটুকরো বাগান বানাতে পারি কি! চমৎকার সব জিনিয়া কি নাইন ও’ক্লক এ ওর গায়ে ঢলে ঢলে হেসে গড়িয়ে যাবে। আর তাদের সে আলো দুলতে থাকবে তোমার চোখের তারায়, তোমার নিজের বাগান দেখে।
একটা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করে। একটা মেয়ে রেপড হলে আমরা খুব চেঁচামেচি করি, কেন করি? মেয়েটির সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয় বলে নাকি তার দেহ ও মন ক্ষতবিক্ষত হয় বলে? যদি মনে করি সামাজিক মর্যাদা নষ্ট হয়, তবে আরও একটা প্রশ্ন এসে যায় যে অন্যায় মেয়েটি করে নাই, তার জন্য সে কেন মর্যাদা হারাবে? কেন সে লজ্জিত হবে? আর যদি মনে করি তার তার দেহ-মন ক্ষতবিক্ষত হয় বলে প্রতিবাদ করি, তবে এই আমরাই কী করে ১২/১৩ বতসরের মেয়েদেরকে বিয়ে দেই? তাও আবার সমাজকে সাক্ষী রেখে? একজন রেপিস্ট তো চুপিসারে কাজ সারে, আর একজন লাইসেন্সধারী রেপিস্ট তো সমাজের অনুমতি নিয়ে দিনের পর দিন অতটুকুন শরীরের ওপর নির্যাতন চালায়! তখন কেন সবাই মুখ টিপে মজা দেখে? কেন মেয়েটির ক্ষতবিক্ষত দেহ আমাদের মনকে নাড়া দেয় না?
[নারী সপ্তাহ উপলক্ষ্যে]
বাঙালির যৌনজীবন নিয়ে প্রিয় লেখক হুমায়ুন আজাদের একটা লেখার অংশ:
মেয়েটির জন্মের সময় সমস্ত পরিবার মুখ অন্ধকার করে বসেছিল- কেউ হাসেনি, কেউ কেউ -'আহা রে। আবার মেয়ে!' বলে দীর্ঘশ্বাস ফেলেছে! জন্মের মুহূর্তে একটি মেয়েকে যে সমাজ এমন ভয়াবহ আমন্ত্রণ জানায় পৃথিবীতে- সেই সামাজিকতায় মেয়েটিকে প্রতিটি পদক্ষেপে যে অপমানিত, নিগৃহত, নির্যাতিত হতে হবে তার তো আর বলে দিতে হয় না!
মেয়েদের মধ্যে এলাকাভিত্তিক ঐক্যের অভাব চোখে পড়ার মতো। আমাদের বন্ধুত্ব বা আড্ডা হয় শুধুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কেন্দ্রিক। ছেলেদের প্রায় সবারই এলাকায় বন্ধু বান্ধব থাকে, এবং অন্য এলাকায় গেলেও তারা পরিচিত বন্ধুদের কাছ থেকে হেল্প নিতে পারে। একই এলাকার বাসিন্দা মেয়েদের মধ্যে একই রকম নেটওয়ার্কিং গড়ে তুলতেই আমাদের শক্তি আইডিয়ার জন্ম।
শক্তি গ্রুপ এবং নেটওয়ার্ক কারও একার নয়, প্রত্যেক শক্তি এখানে সমান, সবাই সবার বন্ধু। শক্তিকে কর্মক্ষম এবং সুন্দর রাখতে শক্তির সকলের মতামত, ইচ্ছে, পরামর্শ অথবা অভিযোগকে সমান গুরুত্ব দেয়া হয়।