১.
আবার সেই চুল। গরম হলদে খিচুড়ির মধ্যে আমাজনের অ্যানাকোন্ডার মতো শুয়ে আছে চুল। লম্বা চুল। কোত্থেকে আসে এই চুল! আমাদের এই নারীরহিতনিবাসে এতো লম্বা চুল আসেই বা কি করে। শুধু নিবাস নয় কর্মক্ষেত্রেও আমাদের নারী ভাগ্য নেই। অফিসে পুরো ফ্লোরে যে একজন সবেধন নীলমণি আছেন তিনি আবার এইচআর ম্যানেজার। স্বয়ং আমার অন্নদাত্রী। তার চুল সংগ্রহ করতে গেলে আমার চাকরির মূল ধরে টান পড়বে। এই মেসে অন্য যে কজন আছেন তারাও মোটামুটি নারীবিহীন অফিসে কর্মরত।
০২
ঠিক আমাদের বাসার উল্টোদিকে ছিলোও বিঘা খানিকের একটা খালি জায়গা ডি.এস.পি. চাচাদের বাউন্ডারি ওয়ালের সাথে লাগানো। আমরা বলতাম ছোট মাঠ। ২৫শে মার্চের বিকালে আমরা ছেলে-মেয়েরা ছোট মাঠে সাতচারা খেলছিলাম। তখনও মাগরিবের আজান দেয়নি, মাগরিবের আজান ছিলো আমাদের ঘরে ফেরার হুইসেল। সন্ধ্যার ঠিক আগে আগে হঠাৎ খেয়াল করলাম, ডি.এস.পি. চাচাদের বাসার সামনে অনেক লোকের জটলা, আব্বাও ছিলেন তাদের মাঝে, তাঁরা ঊচ্চস্বরে কথা বলছিলেন, আমরা খেলা বাদ দিয়ে দৌড় লাগালাম কী হচ্ছে জানবার জন্য। জানলাম, বঙ্গবন্ধুকে বিট্রে করে ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গিয়েছে।
নেয়ামত যখন মেট্রিক পাশ করে গ্রাম থেকে শহরে আসে তখন সে পাজামা-পাঞ্জাবীর সাথে কেডস পরে এসেছিল বলে কলোনিতে একটা হাসাহাসি হয়েছিল। নেয়ামত যে গ্রাম থেকে উঠে এসেছে সেখানে কেডসের সাথে জিন্স কিংবা পাজামার সাথে স্যান্ডেল পরতে হবে সেরকম কোন নিয়মকানুনের বালাই ছিল না।
গতকাল টাইগারপাস মোড়ে একটা বাজে ঘটনা দেখলাম।
তিনজন চলিশোর্ধ্ব লোক একটা বাইকে করে মোড় ক্রস করছিল। কারো মাথায় হেলমেট নাই। এক ট্রাফিক কনস্টেবল বাইকটা আটকালো। ওমনি তিনজনের খিস্তি খেউড় শুরু। বারবার তারা একটা কথাই বলছে, কাদের গাড়ি আটকাইছ জানো, আমরা ছাত্রলীগ-
কিন্তু ওই তিনজনের মধ্যে ছাত্রসুলভ কোন অভিব্যক্তি নেই। বয়সও অধ্যয়ণকালসীমা অতিক্রম করেছে বলেই মনে হয়।
[justify]আমরা তিন বন্ধু একসাথে হলেই একযোগে দস্তয়েভ্স্কিকে দেখি। ব্যাটা গোগলের রঙওঠা একটা ওভারকোট পরে থাকে সবসময়। এটা নিয়ে আমরা প্রায় হাসাহাসি করি। ঢাকায় গরম শীত সবকালেই তার গায়ে এই একই ওভারকোট দেখে আমরা তার নাম দেই শীতল রক্তবিশিষ্ট দস্তয়েভ্স্কি। আমাদের মধ্যে আজম দস্তয়েভ্স্কির প্রায় সব লেখাই পড়েছে, খালি ব্রাদার্স কারমাজভ ছাড়া। রবি বড় ও জটিল উপন্যাস পড়তে ভালোবাসে। দস্তয়েভ্স্কির ছোটোখাট লেখাগ
[justify]১
গালে হাত দিয়ে তন্দ্রা মন খারাপ করে বসে আছে সোফায়। পাশে আম্মু। আব্বু আর ভাইয়া উঠে গেছে নিজনিজ ঘরে। এত্ত মনখারাপ হয়েছে যে কী করবে তন্দ্রা খুঁজে পাচ্ছেনা। মন খারাপ হবেই না বা কেনো। কী চমৎকার একটা নতুন পর্ব দিয়েছে আজ টম এন্ড জেরির; আর আম্মু এসে বলা নেই, কওয়া নেই, খুট করে দিলো চ্যানেল বদল করে। আম্মু, আম্মু কিংবা না, না, বলে চিৎকারের সময়ও পায়নি সে। তার আগেই আম্মু বললো, লক্ষীসোনা, রাতে খাওয়ার সময় দেখো বাকিটুকু। এখন আমি নাটক দেখি। নাস্তা ঝটপট খেয়ে গিয়ে ততক্ষণে হোমওয়ার্ক সেরে নাও। আর নাস্তা খাওয়া। তন্দ্রা গাল ফুলিয়ে বসে থাকলো কিছুক্ষণ।
আমি মনে হয় একেবারে মুক্ত পাগল হয়ে যাচ্ছি, বদ্ধ পাগল স্টেজ পার হয়ে গেছে। আমাদের এক দিদিমণি আমাদের বোঝাতেন পাগল নানাপ্রকার- দিব্যোন্মাদ ভাবোন্মাদ বীভৎসোন্মাদ। এক সুরসিকা ছাত্রী বলেছিলো "না না দিদিমণি, শুধু এগুলো না, আরো দু'খানা আছে, বদ্ধোন্মাদ আর মুক্তোন্মাদ। " তারপরে কী হইলো জানে শ্যামলাল।