সারা বিশ্বের যতগুলো যুদ্ধের ময়দানের নাম মানুষের মুখে প্রত্যহ উচ্চারিত হয় ( যেমন- পলাশী, পানিপথ) তার মধ্যে নিঃসন্দেহে ওয়াটার লু সবচেয়ে বিখ্যাত। ফরাসী সম্রাট নেপোলিয়ন আর ডিউক অফ ওয়েলিংটনের ঐতিহাসিক যুদ্ধ আর নেপোলিয়নের পরাজয়, সেই সঙ্গে তার সাম্রাজ্যের যবনিকাপাত, সবকিছু মিলিয়েই ওয়াটার লুকে পরিচিত করেছে এক বিশ্ববিদিত নামে।
সারারাত আধো ঘুম, আধো জাগরন আর কানে ক্রিস রিয়া, অ্যাল ষ্টুয়ার্ট, পিঙ্ক ফ্লয়েডের মধুর গুঞ্জনের পর বুড়িমারি সীমান্তে যখন পৌছলাম তখন ভোর হয়ে গেছে। বাস দাড়ালো শ্যামলী কাউন্টারে। কন্ডাক্টর অবশ্য তার আগেই সবার কাছ থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করে রেখেছে। ট্রাভেল ট্যাক্স আর কাষ্টমস্ ক্লিয়ারেন্স পরিবহন হিসাবে সিস্টেম করা আছে, টাকা দেয়া ছাড়া যাত্রীদের আর কোন ঝামেলা পোহাতে হয়না। বাক্স পেটরাও ওপারে অপেক্ষারত বাসে পৌছে দেয়া বাস কতৃপক্ষের দায়িত্ব। পোর্টারকে বখশিস হিসাবে কিছু দেয়া অপশনাল। শ্যামলীর এই ব্যাপারটা নির্ভার করে সবসময়ই। সারারাত জার্নি করে ভোর বেলা এতসব লাগেজের দিকে খেয়াল রাখা আসলেই মুশকিল। আমার আবার হারানোর বাতিক আছে, কোন ট্যুর কিছু না হারিয়ে শেষ করতে পারিনা।
#
গলিটির নাম কানাগলি, যদিও নামটি অস্বাভাবিক কিন্তু এলাকার লোকজনের ভেতর নাম নিয়ে কোনো অসন্তোষ ছিল না। পূর্বে এর নাম কী ছিল, শহর থেকে দূরে এই এলাকায় মানুষ কবে থেকে বসবাস করতে শুরু করে সে ব্যাপারে কোনো নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায় না। অনেকে বলেন, শহর থেকে বিতাড়িত কিছু লোকজন এখানে এসে বসবাস করতে শুরু করে এবং তখন তারা এর কোনো নাম দিতে ব্যর্থ হয় কিংবা দেয়ার ব্যাপারে কোনো উৎসাহ পায় না। কেউ কেউ এই যুক্তিকে ফুঁ মেরে উড়িয়ে দেয়, উড়িয়ে দিয়ে বলে লোকজন কেন এখানে এসে বসবাস করতে আসবে হঠাৎ করে? মানুষ আগে থেকেই থাকত ; কিন্তু তারাও পেছনে কোনো শক্ত যুক্তি দেখাতে ব্যর্থ হয়।
ভাইরাস জ্বরে আক্রান্ত হইয়া শয্যাশায়ী ও। সাথে নিজেরও কেমন ভার ভার লাগিতেছে মাথা, জ্বর হইবার পূর্ব লক্ষণ। পুত্রকে কহিলাম, “বাবা, আজ একটু নিজ হাতে খেয়ে নে? শরীরটা খারাপ লাগছে খুব, আমি একটু শুই গিয়ে?” ‘বাবা’ তখন কম্প্যু গেমে মত্ত। মহাজগতের আর কোথায় কী ঘটিতেছে, তাহা সম্পর্কে ভাবিবার বিন্দুমাত্র রুচি বা ফুরসত সেই মুহূর্তে তাহার নাই। অনুরোধ তাই পুনরাবৃত্তি করিতে করিতে শেষমেশ তৃতীয় বারের মাথায় তাহার কর্ণপটে আঘাত হানিতে সক্ষম হইল এবং তৎক্ষণাৎ রেডিমেড জবাব আসিল, “উঁহু, হবে না”।
আমাকে সবাই কাব্য বলে ডাকে। নামটা আমার ছোটমামার দেওয়া। মামা ছড়া-কবিতা লেখে। আমাকে নিয়েও লিখেছে কয়েকটা। সবাই বলে, আমিও নাকি মামার মতো হয়েছি।
অসাবধানে যেই না ছুঁলো আমায় তোমার আংগুলে,
কে যে আমায় খাইয়ে দিলো চরম নেশার ভাং গুলে।
প্রেম জগতের আংগিনাতে ছিলাম বড়ো নিঃস্ব রে,
কোন পূণ্যে তোমায় দিলেন মিলিয়ে আমায় ঈশ্বরে।
হৃদয় আমার একটি কথা বলছে প্রতি নিঃশ্বাসে,
এই জীবনের, এই শরীরের, এই আত্মার হিস্যা সে।
বাতাস যখন জমায় খেলা তোমার কালো কুন্তলে,
আমার সকল হৃদয় জুড়ে প্রেম রাগিণীর ধুন তোলে।
তোমার ঠোঁটের কূল ভাংগলে আনন্দে কি উচ্ছ্বাসে
বর্ষা নামলেই
অভব্যের মতো কাব্য করতে বসে যায়
ওরা-
কেন ! বৃষ্টি তো নিজেই কাব্য !
অন্ধকার এসে বসেছে পাতায়, মনে হলো অভিমান,
খানিক আগে সংসারে দেখেছি। ঢেকে যাবে রাত ধীরে
এই গাঢ় সবুজ, ধুয়ে দেবে শিশির। তার আগেই পাতাগুলো
মাথা ঝাকিয়ে বলল তপ্ত-ধরণী, পথিকও ক্লান্ত বুঝি ; এতদিন
পর মনে পড়লো? যেমন বলেন এই অর্ধেক সংসারের- অধিষ্ঠাত্রী,
অন্ধকার করে মুখ। কে কতটুকু পারে, কাকে কতটুকু দেওয়া যায়?
মহাক্ষুদ্রসময়! আসলে আমি বলতে এসেছিলাম- হে ধরিত্রী নিষিক্ত হও।
....
বাদলের কথা
হাবিব ভাইকে আমরা সবাই খুব পছন্দ করতাম। অন্তত তার মাথা খারাপ হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত।
মাঝেমধ্যে সন্দেহ হয়, হাবিব ভাইয়ের এই পাগলাটে স্বভাব উত্তরাধিকারসূত্রে বিলুও খানিকটা পেয়েছে। আজ সকালে সন্দেহটা আবার একটু পানি পেয়েছে হালে। নির্বিকার নিরুত্তেজিত গলায় ছোকরা ফোন করে বলে, "বাদল মামা, বাসায় চলে আসো। বাবা মনে হয় মারা গেছে।"
ঈশ্বর তাকিয়ায় হেলান দিয়া পান চিবাইতেছিলেন কচরমচর করিয়া। মাদার সুপিরিয়র রুষ্ট কণ্ঠে কহিলেন, "আর তো পারি না। স্বর্গযাজিকাদের লইয়া বিষম বিপদে পড়িয়াছি।"
ঈশ্বর পিকদানিতে পানের পিক ফেলিয়া বিগলিত রসসিক্ত কণ্ঠে কহিলেন, "কেনু? তাহারা কি দুষ্টামি করিয়া বেড়ায়? লিখাপড়া করে না?"