২০১২ শেষ হতে আর কয়েক ঘন্টা। একটা একটা করে দিন খতম হতে থাকলে একসময় সপ্তাহ-মাস পেরিয়ে বছর হবে এইটাই স্বাভাবিক। বয়স বাড়তে থাকার বেদনাও একসময় গা সওয়া হয়ে আসে। নববর্ষে গলা বাড়িয়ে গোষ্ঠমামাকে খুঁজতে থাকি অন্তত নতুন কোন ফাঁদে চমৎকৃত হতে।
১.
মাস কয়েক আগে মা কিছুটা অভিযোগের সুরেই মুঠোফোনে বললে- তোমার সব বন্ধুরাই সেটল হয়ে গেছে, বুঝলা!
ক্রিসমাস আর নববর্ষ মিলিয়ে প্রায় দুসপ্তাহের কাছাকাছি ছুটি ছিলো। ইদানীং বই পড়া বেড়েছে আমার। আসল লক্ষ্য ছিলো ইংরেজী পড়ার গতি বাড়ানো। সেটা করতে এসে বই পড়ার পুরোনো নেশাটা ফিরে এসেছে আবার। ইচ্ছে ছিলো এই দুই সপ্তাহে ছ'টার মতো বই শেষ করব। সে আশার গুড়ে বালি দিয়ে সপ্তাহটা এমনি এমনিই কেটে গেলো। ভাবলাম যে কয়টা বই পড়েছি সেটা নিয়ে এবেলা দুচার লাইন লিখি।
বাতাসে শীতের গন্ধ । প্রকৃতিতে রংয়ের উৎসব শেষ করে পাতাদের ঝরে পড়াও শেষ । বাদামী রংয়ের শুকনো পাতা মাড়িয়ে বাড়ি ফেরার পথে কোথা থেকে ভেসে এল অনেক দিন আগের এই রকম শীতের কোন ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতার গন্ধ...নজরুলের সমাধির পাশে লাইব্রেরীর গেইটে লাল রঙ্গা বাস থেকে নেমে কলা ভবন পর্যন্ত হেঁটে আসতে আসতে মাটি থেকে কুড়িয়ে নিতাম ইউক্যালিপটাসের শুকনো পাতা । একটু ছিড়লেই সেই পাতা থেকে বের হ’ত অদ্ভুত এক সৌরভ...কোথা হতে ভেসে এলো ফেলে আসা দিনের গায়ে লেগে থাকা সেই সৌরভ...আর তার হাত ধরে চলে এল বন্ধুর মত বন্ধুদের স্মৃতিরা...
কুতবেতিন বারানের সাথে আমার প্রথম দেখা ইউনিভার্সিটির ল্যাবে, ২০০৩ সালের বসন্ত তখন। গলায় মোড়ানো লাল-সাদা আরব স্কার্ফ, হাতে ভারী ভারী দুখানা বই, মুখে উচ্ছল হাসি আর চোখে খাঁটি মানুষের সারল্য। দেখেই খুব আপন মনে হয় এমন এক ব্যক্তিত্ব সে, (যদিও আরবদের সাথে মেশার অভিজ্ঞতা খুব সুবিধার না হওয়ায় সহসা এগোনো হয় না )। জিজ্ঞাসা করলাম নাম কী বড় ভাই( আমার চেয়ে ঢের বড় বয়সে)? বাড়ী কোন দেশে?
সময়টা সম্ভবত ১৯৬৪ সালের শেষাংশ। দক্ষিণ বঙ্গের খুলনা শহর। আমরা তখন ২০-২৫ জন ছাত্র, স্কুলের ছুটির পর আবার কোন কোন দিন টিফিন পিরিয়ডের সময় রাস্তায় মিছিল করতাম। আমাদের নেতা কিন্তু আমাদের স্কুলের ছাত্র ছিলেন না। তিনি আমাদের স্কুলের সিনিয়র ছাত্রদের সাহায্যে কিছু ছাত্র যোগাড় করে মিছিলের নেতৃত্ব দিতেন। আমরা বিভিন্ন মহল্লায় সরু সরু রাস্তায় মিছিল করতাম। মিছিলের পুরোভাগে থেকে নেতা শ্লোগান দিতেন, 'ভোট
যেই দেশে প্রাণহানি ঘটে রোজ বোমাতে
প্রশাসন নিজে থাকে নিয়মিত কোমাতে
বোমা ফাটে মসজিদে, বাসে, সেনা সদরে
জঙ্গী হামলা হয় রাষ্ট্রীয় কদরে
যেই দেশ ভুল করে, ক্ষমা নিয়ে ভাবে না
সেই দেশে আমাদের দল যাবে? যাবে না!
কথা যদি সত্যিই দিয়ে থাকে লোটাসে
সেটা হলো তার দায়, বুঝে নিক ওটা সে
সেই দায় কেন নেবে মুশফিক, রিয়াদে?