প্রতি বছর ডিসেম্বর মাস ফিরে আসল আমার বাবার কথা খুব মনে পড়ে, ১৯৭১ সালের শেষের দিকে, বাবার বয়স তখন হয়ত ২২ ছুঁই ছুঁই, নাকি আরও কম, জমাদার কৃষকের ছেলে, লেখাপড়া করে গ্রামের স্কুলের শিক্ষক হয়েছিলেন ( তখনো উচ্চ শিক্ষার্থে শহর অভিমুখে যাত্রা করেন নি), কিন্তু ১৯৭১এর সম্মুখ সমরের মুক্তিযোদ্ধা, অনেক অনেক বার বেঁচে গেছেন শত্রুর গুলী থেকে, যুদ্ধাহত প্রিয় বন্ধুকে পৌঁছে দিয়েছেন সীমান্তের অপর পারের হাসপাতা
"বিশ্বজিৎকে ছাত্রদল মেরেছে বস, খোঁজ নিয়ে দেখেন।"
"শুধু বিশ্বজিৎকে নিয়ে সবাই মাতছে কেন? ঐদিন তো আরো ৩জন মারা গেছে হরতালের সহিংসতায়। সুশীল/মানবতাবাদীরা শুধু বিশ্বজিৎকে নিয়ে পরে আছে কেন?"
"বিশ্বজিৎকে যারা মেরেছে তারা শিবির, ছাত্রলীগে ইনফিল্ট্রেট করেছে। ছাত্রলীগের বদনাম করতে।"
টুসটাস করে কি যেন ফুটছে। আরে সাথে একটা গান চলছে ‘পাল যুগে এ এ এ...পাল যুগে এ এ এ’। ঘুম ভেঙ্গে গেল। জানালা দিয়ে এক টুকরো রোদ এসে পড়ছে গায়ে। শীতের সকালের রোদ। তাকিয়ে দেখি আমার ছোট ভাই কোত্থেকে যেন সাইকেলের চাকা মোড়ানো থাকে যেই ছোট ছোট ফোটকাওয়ালা প্লাস্টিক দিয়ে, সেটা নিয়ে ফোটাচ্ছে আর সুর করে পড়ছে, ‘পাল যুগে এ এ এ...পাল যুগে এ এ এ’। আমি ডাক দিলাম, ‘নিষাদ, কি করছ!’ সাথে সাথে ভদ্র মানুষের মত
সে ছিলো অনেক আগের এক বসন্তকাল। তখন এক চওড়া নদীর তীরের ছোট্টো শহরে থাকতাম। বসন্ত এলেই চারিদিকে কেমন একটা উল্লাস জেগে উঠতো। প্রকৃতিতে আর মানুষের সদরে অন্দরে। শীতে সব চারিপাশ কেমন ধূসর আর নীরক্ত লাগতো, সব পত্রমোচী গাছেরা তখন পাতাহীন ন্যাড়া হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতো। যেই না আকাশের দক্ষিণে হেলে পড়া সূর্য সরে আসতো অনেকটা উত্তরে, ফুরফুরে দক্ষিণা হাওয়া বইতে থাকতো, শীত বিদায় নিতো। রংবাহারী ফুলে আর মনোহর সবুজ কিশল
সালেক খোকন
এক মুক্তিযোদ্ধার পায়ের ভেতর এখনো গুলি আছে। একচল্লিশ বছর ধরে শরীরের ভেতর বাসা বেঁধেছে সে গুলিটি। জোরে হাঁটতে কিংবা সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতে গুলিটি কামড়ে ধরে মাংসের ভেতরটায়। যন্ত্রণায় তখন ছটফট করেন তিনি। পাকিস্তানিদের গুলি মুক্তিযোদ্ধার দেহে। এটা মেনে নেওয়া সত্যি কঠিন। তাই নীরবে নিভৃতে কেটে যাচ্ছে ওই মুক্তিযোদ্ধার জীবন।
[justify]দখিনের দরোজা আর জানালা নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভেতর ব্যাপক আকুলতা আছে, কিন্তু চোখ খুলে দেখার প্রয়োজন আছে সব দিক দিয়ে। আমি গত তিন বছর দখিনে থেকেও সারা বাংলাদেশে কাজ করেছি, দেখেছি সব আছে আমাদের কিন্তু মানুষের সবকিছু মেনে নেয়ার প্রবণতা বেড়ে গেছে। আর কিছু জিনিস শুধু আকার-আয়তন নয়, বরং মন্ত্রণায় বেড়ে গেছে বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ধর্মান্ধ নয়, ধর্মভীরু কিন্তু সেই ধর্মভীরুতা
আমার এক গুরজন একদিন আচমকা একটা প্রশ্ন করলেন। তিনি প্রায়ই আচমকা প্রশ্ন করে আমাকে ভড়কে দেন। ভড়কে যাই, কারণ তার প্রশ্নগুলো একটু ভিন্ন ধাঁচের। তাই আপত দৃষ্টিতে প্রশ্ন সহজ মনে হলেও উত্তরটা তত সহজে দিলে চলে না। প্রশ্নের নিরীহ-দর্শনের আড়ালে গভীর কোনো তাৎপর্য লুকিয়ে থাকে, তেমনি উত্তরের ভেতরেও ওই তাৎপর্যের প্রতিফলন চান।
যাক, যে কথা বলছিলাম। তাঁর এদিনের প্রশ্নটা ছিল, ‘বলো তো দুনিয়ার সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী কোনটা?’
এই প্রশ্নটা আমাকে বিব্রত করতে পারে নি। ভাবতে হয় নি এক মুহূর্তও। কারণ, তিনি যে উত্তর আশা করেন, তা আমিও বহুকাল থেকে নিজের ভেতরে পুষে রেখেছি। কী জানি, কবে আমার মনে প্রথম উদয় হয়েছিল মানুষই দুনিয়ার সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী? অনেকের হয়তো দ্বিমত থাকতে পারে, তবু সবকিছুর বিচারের শেষ রায় কিন্তু মানুষের বিপক্ষেই যায়।
।।১।।
গত কয়েক বছর হল হরতালের দিনটা বেশ ফুরফুরে হয়ে আসে।
এলার্মবিহীন একটা সকাল, প্রতিদিনের ছক ছাপিয়ে আরেকটু বেশি আরাম, আরেকটু বেশি আলসি, আরেকটু বেশি সময় নিয়ে নাশতা, আরেকটু বেশি পেপারে নাক গুঁজে থাকা, কেতাবী পোশাকের ধার না ধেরে গ্রামীণের ফতুয়া আর ঘিয়ে রঙ্গা গ্যাভার্ডিনেই অফিসমুখো হওয়া, নিত্যদিনের বাস ভুলে বাসার সামনেই বসে থাকা রিকশায় চড়ে বসে কানে ইয়ারফোন- চুপচাপ শহরে ঘুমন্ত শহর দেখতে দেখতে এগিয়ে যাওয়া, এর আকর্ষণ অন্যরকম।
ছোটখাটো জমে থাকা অগোছালো কাজগুলো গুছিয়ে নেয়ার একটা দিন, একেকরকম অভিজ্ঞতায় ভরা ছোটখাটো গল্পগুলো শুনে ফেলার দিন অথবা খালি হয়ে থাকা ফ্লোরে শাহানা বাজপেয়ী’র গলায় ‘তোমার খোলা হাওয়া লাগিয়ে পালে আমি ডুবতে আছি’ আর অর্ণবের গলায় ‘কোন পুরাতন প্রাণের টানে’ গার্ন্ধবলোক অর্কেস্ট্রার সাথে বন্যার গাওয়া ‘আনন্দধারা বহিছে ভূবনে’ গুনগুনানোর দিন।
গতকাল মাত্র ৫ মিনিটের মধ্যে একটি ঘটনা ঘটিয়েছে সরকারদলীয় ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগ। প্রকাশ্য দিবালোকে শত শত মানুষ এবং টিভি ক্যামেরার সামনে তারা কুপিয়ে পিটিয়ে মেরে ফেলছে বিশ্বজিৎ দাস নামের এক যুবককে। এখন প্রযুক্তির যুগ।তুমুল গতিতে এ সংক্রান্ত ছবি এবং ভিডিও বাংলাদেশের আনাচে কানাচে, সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়তে দেরী হয়নি।