অফিসের মেসেঞ্জার ইসলাম ভাইকে যখনি ব্ল্যাক কফি আনতে বলি একবারে আনতে পারেনা। প্রথমবারে দুধ-চিনি মিশিয়ে আনবে, বলবে 'অহ! ভুইলা গেছি', অথবা শুধু চিনি মিশিয়ে বলবে 'খাইয়া ফালান, এরম তিতা জিনিস মাইনষে খায়।' আজ সকালেও তাই হয়েছে। গলার ভেতর থেকে তিতকূটে একটা স্বাদ মুখকে বিস্বাদ করে রেখেছে। অফিসে কাজের চাপও খুব বেশি। তাই বিষে বিষক্ষয় পদ্ধতি। ঘনকালো তেতো কফির মগে চুমুক দিতে দিতে কাজ করেছি। সমস্ত অনুভূতিকে ভোঁতা করার একটা ব্যর্থ চেষ্টায়।
দিগন্ত থেকে ছুটে আসে ঢেউয়ের পর ঢেউ, তার চূড়ায় চূড়ায় সুর বসাই, কথা বসাই। বসিয়ে যাই হাসিকান্না, চুম্বন-অশ্রু, গরমভাত ও ক্ষুধার গল্প। বসিয়ে দিই জলপাই বনের হাওয়া, জ্বরের ঘোর, ঘুম, স্বপ্ন। যত্ন করে বসাই বৃষ্টিবিন্দুদের, বসাই চিকমিকে বিদ্যুৎ ও বাজের হুঙ্কার। অসীম একখানি গানের মধ্যে মিশে থাকা কথা সুর ছন্দ তাল লয়ের মতন ওরা থাকে, ওদের শুরু নেই, শেষ নেই কোনো। কেজানে কোথা থেকে আসে অবাক হাওয়া-তারারা দপদপ করে,
পর্ব এক
একটা মানুষের প্রাণের সাথে একটা সবুজ সাপের প্রাণ এর তফাৎটা কোথায়? কিংবা চলতে গেলে পায়ের তলে পড়ে পিষে যাওয়া পরিশ্রমী, চঞ্চল পিঁপড়া; ঘাসের ডগা থেকে খপ করে ধরে এনে ডানা ছিঁড়ে ফেলা হয় যে ঘাসফড়িংয়ের, অথবা দেয়ালে রক্তের দাগ নিয়ে চ্যাপ্টা হয়ে থাকা মশাটির সাথে মানুষের মোটা দাগে পার্থক্যটা কোথায়? ট্রিলিয়ন-বিলিয়ন মানুষের ভেতর সলোমন দ্বীপের একটা জেলে মরে গেলে আমি কি তার কথা ভেবে আকুল হই?
পুরী’তে গিয়ে জগন্নাথ দর্শন না করা যেমন নাকি মহাপাপ, তেমনই মনোভাব আমার বাগানের বিষয়ে। লন্ডনে গতবার অল্পদিনের জন্য এসেও কিউ বোটানিকাল গার্ডেনে ঢুঁ মেরে গিয়েছিলাম, কিন্তু তখন ছিল মার্চ মাসের শুরু, গাছপালা ন্যাড়া ন্যাড়া, গাইড ভদ্রমহিলা আমাকে পরামর্শ দিয়েছিলেন এপ্রিল-মে মাসে যখন বসন্তের জোয়ার আসে তখন আসতে। সেবছর তো উপায় ছিল না, এবার এসে বাড়িটাড়ি খুঁজে গুছিয়ে বসে’পরেই মে-র মাঝামাঝি নতুন ডিএসএলআর’খানা নিয়ে হানা দিলাম ওই বাগানে।
‘মহুয়া-মিলন’ স্টেশনে পৌঁছুবো বলে
ঝোলাভর্তি চারুময় রোদের স্বপ্ন নিয়ে
আমরা আচ্ছন্ন সেতারের মতো
ট্রেনের কামরায় উঠে বসেছিলাম...
আমাদের চারদিকে সোনালি চিলের মতো
অমলকান্তি দিনের উড়াল...
বাতাসে ছড়ানো নির্মল আগুনের ফুলকি...
আমাদের বুকপকেটে আকাশভর্তি নক্ষত্রের মতো
জোনাকির ঝিকিমিকি আলো...
তাজা কৃষ্ণচূড়ার মতো
রক্তের বুদবুদে প্রেম মাখামাখি হয়ে আছে।
দিন আসে...দিন চলে যায়...
... যাইবার কালে নিয়তি এমন এক দান দিল। কেউ ভাবেও নাই। প্রথমে প্রচুর ধুয়া দেইখা বাইর হইলাম, বিয়াপক আনন্দের সহিত। দেখলাম তারা ভাগছে। তারপর দেখলাম, নাহ, একটারে রাইখা গেছে। সিনন। সে কয়, তারে নাকি তার লোকেরাই বলি দিতে চাইছিল, যেহেতু সে লুকাইতে পারছে, জীবিত এখন। ওকে। কিন্তু ঐটা কী!